সমস্ত লেখাগুলি

কবিতাগুচ্ছ ২৫ -
কবিরা
Dec. 3, 2024 | কবিতা | views:776 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বিলাসিতা

লি খে ছে ন – স জ ল  কা ন্তি  টি কা দা র


দিব্যি আছি সুখেই আছি

ভালো মন্দে দিন চলে যায়

ঘরে আছে দুটো গোরু

এদের নিয়েই দিন

কেটে যায়।


দশ বছরের ছেলে আমার

শাকসবজি বেচে আসে---

রোজ:

সকাল দুপুর বিকেলবেলায়।


রাজনীতির ছাই বুঝিনা কিছু!

ভোটটা তবু দিয়েই আসি

ভোট চলে গেলে পরেই

গলায় ঝোলে

ক্ষুধার ফাঁসি।


নুন আনতে পান্তা ফুরায়

কাঁচা লঙ্কা তাও জোটেনা!

এরই মাঝে ছেলে আমার

পড়াশুনায় মন দিতে চায়

ধমকে উঠি কান্ড দেখে

কেমন করে ছেলে আমার

বিলাসিতায় ডুব দিতে যায়!


যে ঘরেতে পেট চলেনা

সেই ঘরেতে পড়ালেখা?

বিলাসিতা ছাড়া কি আর

অন্য চোখে যায়রে দেখা?

শুনিসনি কি কোন এক নেতা

নামটা তো পড়ছেনা মনে

শিক্ষিতদের চাকরী মেরেই

আছে এখন জেলের কোণে।

তাইতো বলি বই গুটিয়ে

চলনা এবার মাঠে যাই

পড়া শিখে চাকরী পাবি?

আমার যে অত টাকা নাই





লাল

লি খে ছে ন – প্র দী প  চ ক্র ব র্তী


জাতের নামে বজ্জাতি

আর কতদিন চলবে?

ধর্মের ধ্বজাধারীরা

আর

কবে সত্যি কথাটা বলবে?

মিথ্যাচারের ফানুসটাকে

নামাতে হবে তাই,

পৃথিবীটা সব মানুষের

মানুষ মানুষের-ই ভাই।

রক্তদান শিবিরেতে

রক্ত দিলাম কাল,

শিবির শেষে দেখতে পেলাম,

সবার রক্তই লাল।



আস্তিক ও নাস্তিক

লি খে ছে ন - বিপ্লব সেন


বাস্তব অবস্থার বিরোধিতা করেই

আস্তিক যে ভাব বাদী,

ঠিক উল্টো কাজ করেই

নাস্তিক মানুষ বস্তুবাদী।


প্রশ্ন করার অধিকার নেই

কোনো সংকীর্ণতার মধ্যে,

তাই আপনার করা প্রশ্ন এড়িয়ে যায়

আঁধারের সান্নিধ্যে।


ওরা মানে না অন্য ঈশ্বর

শুধুই নিজের কাল্পনিক সর্বশক্তিমান,

প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি আলাদা ঈশ্বর

আলাদা ধর্মে মহান।


এই যুক্তি প্রশ্নের কোনো

উত্তর তাদের নেই,

তারা শুধু আনুগত্য নিয়ে

ভজে চলে তাই।


এই প্রশ্ন করলেই বলবে

নাস্তিক বিধর্মী,

নাস্তিক কথাটার মানেই জানে না

তারা তো মানব ধর্মী।


দ্বিচারিতা নিয়ে চলে

যেটা বোঝে ভালো,

অন্ধ বিশ্বাসের উন্মাদনায়

তাদের চেতনা কালো।


যুক্তি বুদ্ধি সব বাদ যায়

শুধুই পড়ে থাকে বিশ্বাস,

কোনো প্রশ্ন কাজ করে না

বোঝে না কেনো নাস্তিকের অবিশ্বাস।




এ কীসের বিবর্ণতা?

লি খে ছে ন – প্রি ন্সি  বে রা


একদল পুরুষ বিচার বিবেচনা করেছে রপ্তানি

আমদানি করেছে শুধুই মিথ্যে দম্ভ,

বৈবাহিক সম্পর্কের মানরেখেছে তলানিতে,

সদা ব্যাস্ত দিতে বিচার বিভাগীয় দন্ড।

তবে একখানা সরকারি চাকরি যদি জোটে নারীর কপালে

বররূপী বহুরূপী করে একাডেমী শিক্ষার খানিক কদর;

নয়তো শিক্ষা নাকি বালের।


হয়েছিল তো সাতজন্মের বন্ধনে আবদ্ধ

তবে কেনো একজন্মেই সমস্ত পাবার বাসনায় পরিকরবদ্ধ।

শুনতে চায়না নারীর ইচ্ছা,জানতে চায়না তার খুশি।

নারীদেহ শুধুই ভোগের প্রসাদ,

প্রাপ্য ভেবেই,রাজার রাজা বেজায় সুখী।



নারী স্বাধীনতা চাইলে,শুনতে হয় মাগী,

গুনতে হয় চামড়ায় মারের দাগ,

পুরুষ ভাসিয়ে দেয় সব রোমান্টিক আবেগ

খোরপোষ আর কর্তৃতের ঝর্ণায়।


অন্যায়ের অন্যায় আজও প্রতিবাদহীন

গর্জেওঠা দুএকজন,হারছে;করছে পুনরায় মাথা নত।

তাই দেখে সোকোল্ড স্বামী নিচ্ছে বাহবা

দিচ্ছে হুংকার,করছে নিজস্বার্থ জারি।


এখনও তবু একদলের দাবি

তারা নিষ্ঠা বিচারদাতা,

তাহলে সমাজে আজও নারীর

এ কীসের বিবর্ণতা?

ধন্যবাদান্তে

রমা বেরা, শ্রীচন্দা, উস্থি




ভীতির পুঁজি আনুগত্যের মুনাফা

লি খে ছে ন – বি প্ল ব  সে ন


ভীতি যেখানে পুঁজি সেথায়

বিশ্বাস হয় মুনাফা,

মুনাফা নয় ডাকাতি চলে

করতে পকেট সাফা।


নানা রকম কায়দা কানুন

সাথে অন্ধবিশ্বাস,

বিশ্বাসের পুঁটুলি চেতনায় ঝোলে

মরার পর "স্বর্গবাস।"


লড়াই করে টিকে থাকা

ইহ জগতের সমাজে,

অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান এর যোগান

জীবনের চেষ্টা মাঝে।


মৃত্যুর পর কি হবে ভেবে

ভীতির অন্ধকার,

জীবনের শেষে মৃত্যুর আবেশ

চেতনা মৃত্যুর পারাবার।


বস্তু হয়ে যাবে শরীর

জীবনের পরিসমাপ্তি,

পৃথিবীতে বেঁচে থাকা

জীবনের পরম প্রাপ্তি।


সেই বেঁচে থাকা যাতে হয়

ললিত সুকোমল,

তার জন্যে চাই যে

অর্থের সম্বল।


সেই ভীতি পুঁজি তখন

যখন রমরমা কারবার,

বিরাট মুনাফা অর্থের ঝনঝন

পুরুত পাদ্রী,মৌলভীর পকেট ভরাবার।


অসভ্য বটেই ধূর্ত শয়তান

এটাই কারবারের বহিঃপ্রকাশ,

সত্য চাপা দিয়ে চেতনার

করা সর্বনাশ।



কবিতাগুচ্ছ ২৪ -
কবিরা
Nov. 26, 2024 | কবিতা | views:33 | likes:2 | share: 3 | comments:0

ভরসা

লি খে ছে ন – প্র দী প  চ ক্র ব র্তী



মানুষ যখন বুদ্ধিভ্রষ্ট

হারায় চিন্তা শক্তি,

তখনই  আসে ধর্মগ্রন্থ

বাড়ে অন্ধ ভক্তি।


যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে

বাড়ে সমাজের মান,

বিপদ থেকে রক্ষা করতে

আসবে না ভগবান।


মানবতাই পারে শুধু

করতে মন পরিষ্কার,

বিজ্ঞানেতে ভরসা রাখো

দূর করো কুসংস্কার।



থাকুক নির্ভয়ে

লি খে ছে ন – প্রি ন্সি  বে রা



মানবজাতি বড়ই অসহায় আজ

মানসিক ঝড়ের কবলে।

কতক আমফান, ফনী, ইয়াশ নামক

বনমানুষের আচরণে।

তুমি আমি প্রার্থনা করি

অভিমুখ পরিবর্তিত হোক

যাক অপরপানে।

শুধু বলি আমরা যেন বেঁচে থাকি,

প্রভাব ফেলুক ভিনরাজ্যে।

ভুলেও ভাবি না গতি হারাক,

এ ভয়ানক রাক্ষস,

ধ্বংস হোক শয়তানের কারবার।

আমার মতই বাঁচুক সবাই,

সবাই থাকুক নির্ভয়ে।।


ধন্যবাদান্তে,

রমা বেরা, শ্রীচন্দা, উস্থি



বিষয় - রাজনীতি

লি খে ছে ন – প রি ণী তা


লাল, সবুজ, কমলা রঙের ছড়াছড়ি

সব মিলে পা চাটে, নেতাদের পায়ে পড়ি।

শহীদের বেদিতে যত জমা পরে ফুল

তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষ দু'টাকার চালে মশগুল।

ধর্ষণ যখন হচ্ছে তখন এনজয় করা হোক

এই বলে নেতাদের মুখ বাঁচিয়ে নেওয়া হোক।

যখন তার মেয়ে বৌ ও ধর্ষণ হবে

তখন যেন আদালতে দেখা যায় না তবে!

তখন বিচার চাইলে আমরাও বলি?

ধর্ষণ তো কি হয়েছে? এনজয় করি!

বিখ্যাত শিল্পীর সিনেমা নন্দনে শো না পায়

এদিকে জামা খুলে মডার্ন শিল্পী কোমর নাচায়।

এ দেশে শিক্ষা নিয়ে দিনরাত চলছে ব্যবসা

ওদিকে এক্সাম এলেই বাড়ছে করোনা।

পেটের দায়ে শরীর বেচা বেশ্যাকে ঘৃণা করি

ফেসবুকে "শাড়িতেই নারী" নামে স্তন এর ভাঁজকে লাইক করি।

লাল, সবুজ কমলা রঙের ছড়াছড়ি

সব মিলে পা চাটে, নেতাদের পায়ে পড়ি।



নিখিলেশ

লি খে ছে ন – রা জু  দ ত্ত


নিখিলেশকে মনে আছে?

লম্বা ছিপছিপে পাঞ্জাবি পরা ছেলেটি...

এলোমেলো চুল, গালে খোঁচা দাঁড়ি

গোঁফের ফাঁকে প্রসারিত ঠোঁটে

লেগে থাকা স্নিগ্ধ‌ হাসি....


নিখিলেশ.. ওরও হিস্ট্রি ছিল।

তবে দখলটা ছিল সকলের বিস্ময়

অথবা ঈর্ষার।


দুনিয়ার বিকৃত ইতিহাসটাকে দুমড়ে মুচড়ে

নতুন করে গড়বার নেশায় মশগুল

মফ:স্বলের ছেলেটার অতীত জানতে চায়নি কেউ।


নিখিলেশ ছিল হরপ্পা লিপির মত,

আমাদের সমবেত প্রচেষ্টায়

যার পাঠোদ্ধার হয়নি আজও।

আমাদের কলেজ দিনের স্মৃতিতে

শুধু রয়ে গেছে অবিন্যস্ত নিখিলেশ

ওর এলোমেলো অবিন্যস্ত চুলের মত।


জিনসটি শার্ট পরা সেদিনের আমরা,

সেন্ট পাউডারে সুরভিত আমরা

ছিলাম আধুনিকতার মলাটে

কুসংস্কারের নতুন সংকলন।

আর আমাদের নিখিলেশ!

যুক্তির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কুসংস্কারগুলো

ওর তর্জনির ইশারায় জমেছে আবর্জনার স্তুপে।


প্রতিবাদে মুখর নিখিলেশই

ছিল নীরব আন্দোলন।

ঝোলাব্যাগ ঢোলা প্যান্ট পাঞ্জাবি

এলোমেলো চুল না কামানো খোঁচা দাঁড়ি

ঘুণ ধরাতে পারেনি ওর চেতনায়।

মাদুলি তাবিজ পরা ফিজিক্সের অর্ক মধুরিমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে হিস্ট্রির নিখিলেশ..

একা একলাই....


আমরা চিনিনি ওকে

পাগল বলেছে লোকে

আজকে দীর্ঘশ্বাস

প্রগতির গতি রোধ করে বিকৃত ইতিহাস,

নিখিলেশদের প্রয়োজন আজ

প্রতিদিন বারোমাস।

রচনাকাল :- ১২/০৯/১৯

প্রকাশকাল :- ২৭/০৩/২১




জ্যোতিষ বুজরুকি

লি খে ছে ন – ত ন্ম য়



টিয়া পাখি,ল্যাপটপ জ্যোতিষী মহাঢপ

দুর্বল মানুষদের ধরে ওরা খপাখপ,

হাত দেখে বলে দেয় ভাগ্যেতে কী লেখা

হাত যার নেই তবে পাবে কোথা তার রেখা,

শিম্পাঞ্জি,ওরাংওটাং,ওদেরও রেখা থাকে

কেউ কেন পড়ে না তবে ওদের ভাগ্যটাকে।

গ্রহের কোপে পড়লে চলে না জারিজুরি

রাহু, কেতু গ্রহ নাকি? মিথ্যের ফুলঝুরি,

সূর্য, চন্দ্র এসব গ্রহ আবার হল কবে?

ইউরেনাস নেপচুনের নাম কেন বাদ তবে?

আসলে পুরোটাই মিথ্যার বেসাতি

ফন্দিফিকির করে ঠকানোর কেরামতি।

সময়, লগ্ন, রাশি কতসব কায়দা

ফাঁদ পেতে বসে থেকে ওরা তোলে ফায়দা,

জন্ম মুহূর্ত এক হলে সমান ভাগ্যবান

জ্যোতিষীরা পারে না দিতে এরূপ কোনও প্রমাণ।

গ্রহরত্ন পরলে নাকি ভাগ্য বদলে যায়

ছেদ পড়ে কখনো কি শোষণ বঞ্চনায়?

সবার কর্ম জোটে? দারিদ্র্য যায় ঘুচে?

হয় না এসব কিছুই আসলে সবই মিছে।

অনিশ্চিত জীবনে অনেকের করে ভয়

জ্যোতিষীরা সেই দুর্বলতার সুযোগ নেয়,

জ্যোতিষ বিজ্ঞান নয়,পুরোটাই বুজরুকি

প্রতারণার বিরুদ্ধে চলো প্রতিরোধ গড়তে থাকি।

কবিতাগুচ্ছ ২৩ -
কবিরা
Nov. 25, 2024 | কবিতা | views:295 | likes:2 | share: 2 | comments:0

মুক্তি

লি খে ছে ন- প্র দী প  চ ক্র ব র্তী


শিক্ষা নিয়ে গর্ব করে

করছ সময় নষ্ট,

কুসংস্কার বাড়ছে রোজ-ই

বাড়ছে মনোকষ্ট।


শিক্ষিত হওয়ার আগে

হতে হবে যোগ্য,

কর্মফল-ই শেষ কথা

চুলোয় যাক্ ভাগ্য।


মহাকাশের দুনিয়াতে

আছে কার্য - কারণ,

অলৌকিকের ধ্বজাধারীদের

সেথায় প্রবেশ বারণ।


ধর্মগ্রন্থ তাকেই বলে

যেথায় আছে যুক্তি,

মানবতাই দিতে পারে

ভিক্ষা থেকে মুক্তি।




চেতনা

লি খে ছে ন - বি প্ল ব  সে ন




নিজের শিক্ষা নিজের চেতনা

কি এই কথা কয়,

কান পেতে শুনুন দাদা উত্তর আছে সেথায়।

যদি বিবাহ করেন কাউকে

করুন পরীক্ষা রক্ত,

ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবন তাতে

হবে যে শক্ত।


বিজ্ঞানে ভরসা রাখুন

মানুষের সাথে বন্ধন,

মাঙ্গলিক কাল্পনিক ব্যাপার

ব্রাহ্মণের ব্যবসার মন্থন।

ছুঁড়ে ফেলে দিন সামন্ত তান্ত্রিক

এমন চিন্তা ভাবনা,

মানুষ শুধুই মান হুশ জ্ঞানে

এটাই হলো চেতনা।

বিজ্ঞানের কথা বলি আপনাকে

একটু ভেবে দেখুন,

পরিবর্তনের এই পৃথিবীতে ভরা

দ্বন্দ্ব আর ঘূর্ণন।


কারুর সাথে সম্পর্ক নয়

অন্য কিছু দিয়ে নিয়ন্ত্রন,

সমাজের মধ্যে মানুষের মধ্যে

সম্পিরখে দ্বন্দ্বের সমাগম।

একসাথে থাকতে থাকতে

হতে পারে কিছু অনৈক্য,

সমস্যা থাকলে আছে সমাধান

এভাবেই হয় ঐক্য।

কার্য থাকলে থাকবে কারণ

কারণ থাকলে কার্য,

এটাই হলো সুস্থ চিন্তা

মাঙ্গলীক সব কিছু বর্জ্য।

সুস্থ্ থাকতে পরীক্ষা করুন

রক্ত বিয়ের আগে,

জিন গঠিত রোগ যাতে

আটকে যায় আগে ভাগে।

বৈজ্ঞানিক চিন্তা করুন

এটাই চিন্তা মুক্তি,

প্রত্যেক ঘটনার কার্য কারণ

বাড়ায় বাস্তব শক্তি।




যুক্তিবাদের জয়

লি খে ছে ন -  বি প্ল ব   সে ন



সংঘর্ষ চলুক চলুন নির্মাণ

ভেঙে পড়ুক অবক্ষয়,

মুক্ত চিন্তা যুক্তির আলোয় হোক

বস্তুবাদের জয়।

তর্ক থাকুক থাকুক বিতর্ক

থাকুক সংশয়,

দ্বন্দ্ব থাকুক চেতনার মাঝে

জ্ঞানের আপেক্ষিকতায়।

কার্য থাকলে থাকবে কারণ

এটাই সহজ কথা,

কারণ থাকলেও থাকবে কার্য

এভাবেই চেতনার দেখা।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা সৃষ্টি করে

সিন্ধু,

ওই সিন্ধুর একক কিন্তু

একটি জল বিন্দু।

প্রগতির পথে চলমান বিজ্ঞান

যুক্তিবাদী মন,

উঠুক ঝড় ভাঙুক বিশ্বাস

সংশয় নিয়ে চলুক" চেতনার অন্বেষণ।"

সবেতেই বিশ্বাস সবেতেই আনুগত্য

অদ্ভুত অন্ধকার,

বিচ্ছিন্ন নয় সামগ্রিক ভাবে

দরকার চিন্তা ভাবনার।

প্রতি ঘটনা জড়িত যে

অন্য ঘটনার সাথে মিশে,

পরিবর্তনের এই পৃথিবী পাক খেয়ে চলে

এই দ্বন্দ্বের পরিবেশে।

ভাবুন, ভাবুন, ভাবার অনুশীলন

করুন এটাই অনুরোধ,

বিশ্বাস নয় সংশয় নিয়ে

চেতনায় আসুক মূল্যবোধ।


 

আলোর দিকে যাত্রা

লি খে ছে ন – দে ব ব্ৰ ত   হা তী



অন্ধকারে হালকা আলোক রেখা

সাম্যের চেতনা গভীরে প্রোথিত

মুক্তমনা সমাজে সবাই শাসক।

জীবন যখন বিপর্যস্ত মরুভূমি

মনন সৃজনশীল ও চিন্তাশীল করা।

রাজনীতির নানা দ্বন্দ্ব, অসহিষ্ণুতা

মনের মাধুরী মেশানো কথা নয়

আদর্শের কন্টকিত পথ ধরে চলা।

ভাঙা হৃদয়ে গান গাওয়া

স্বাধীনতা,গণতন্ত্র ও মুক্তি

মুক্তির জন্য বৃহত্তর সত্য

সেই সত্যের কাছে আসা।

সত্যই সুন্দর,জীবনের শ্বাশ্বত সত্য,

মানুষের জীবনযুদ্ধ অবিরাম চলা

ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়ে সত্য ভাষ্য

চশমার কাঁচটা বড়ো ঘোলা ঘোলা

মনে হয় সব যেন ঝাপসা ঝাপসা

ঝাপসা থেকে আলোর দিকে যাত্রা।






উপেক্ষিতা

লি খে ছে ন – স জ ল  কা ন্তি  টি কা দা র



ভারতবর্ষকে আমরা সবাই

জননী বলেই জানি---

আবার এই সমাজই মা বোনের

করে যে মান হানি!

ধর্ষণ আর বধূ নির্যাতন

প্রতিদিনই ঘটে--

চার বছরের শিশু সেও

ছাড় পায় না মোটে!


সরস্বতী পূজোয় পুষ্পাঞ্জলি

দেয় যে ভক্তি ভরে---

কেমন করে এরাই আবার

ভ্রুণ হত্যা করে!

তখন বিবেক কোথায় থাকে

দেখাও তো একটু দেখি--

এমন পূজোয় লাভ নেই বন্ধু

এগুলো সব মেকী!


এই সমাজেই ঘটছে বন্ধু

নির্ভয়া কামদুনি

হাজার হাজার ঘটছে এমন

কতটুকু তার শুনি?

যে সমাজ পারে না দিতে

নারীর সন্মান অধিকার

তেমন সমাজ রেখে বন্ধু

আমাদের কি দরকার?


নতুন শিশু আসবে যখন

এই সমাজের মাঝে---

কি জবাব দেবে তুমি?

শুনি তোমার কাছে!

আগুন জ্বালাও সমাজ বুকে

আর তোমার মনের ঘরে---

নতুন সমাজ তবেই বন্ধু

উঠবে আবার গড়ে। 

কবিতাগুচ্ছ ২২ -
কবিরা
Nov. 25, 2024 | কবিতা | views:292 | likes:0 | share: 0 | comments:0

পাপীর কান্না

লি খে ছে ন – অ শো ক  দা স  চা র্বা ক 




পাপীসব করে রব 

রাতি পোহাইল,

নরকের ভয়ে মরি 

দেবীকে ডাকিল। 


মন্দিরে কাঁসর ঘন্টা 

উঠিল বাজিয়া,

জোটে যত পাপীগণ 

ছুটিয়া ছুটিয়া। 


কীর্তন করিয়া  ওরা 

নাচিতে লাগিল,

দেবনামে ধরাধাম 

বিষিয়া উঠিল। 


যার পাপ বেশী যত,

বেশি যার লোভ পরিমাণ,

গলা ফাটে তার তত 

তেজী  নেচে যায় যে পরান। 


নরকের ভয়ে মরে 

যত ভক্তগণ,

করে তাই ইষ্টনাম 

করিয়া যতন। 


স্বরগের লালসায় 

দেবে ফুল ছুঁড়ি,

দান ধ্যান করে তারা 

পাপে ভরা ভুঁড়ি। 


শত টাকা চুরি করি 

দুই টাকা দান, 

ভক্ত ভাবে হলো বুঝি

পাপ সমাধান। 


কানদিতে লাগিল যত 

ভীত সাধুগণ,

"নরকে নিও না মোরে 

স্বর্গ দাও পণ। "


এটা দাও ওটা দাও 

(এট্যাং দেহি ওটাং দেহি)

গাহি লোভীগন,

দেবতার চরণেতে 

কান্দে অনুখন। 


দেবতা বলেন,"ওরে 

পাপী বাছাধন,

উৎকোচ পাইয়া পাপ 

না করি খণ্ডন।"


আমি নেতা আমলা নই 

ভাংগিব নিয়ম,

পূজা পেয়ে দিব বর 

ত্যেজিয়া ধরম। 


প্রকৃতির নিয়মেতে 

পৃথিবীটা ঘোরে,

কোন ভগবান সেটা 

থামাতে না পারে। 

 

ঘুষ দিয়া দেবগনে 

কেনা নাহি যায়,

বৃথা দাও অঞ্জলী 

ভুলি নিজ দায়। 


নিয়মের দাস আমি 

বড় অসহায়,

স্বরগে আনিতে নারি 

চাতুরী সহায়। 


যে যার কর্মের ফল 

সবে ভোগ কর,

বৃথা পূজা চাটুকারী 

ঘুষদান ছাড়। 


কর্মমত পাওনা সব 

নিয়মেতে পাও,

প্রাপ্যবেশী লভিবেনা 

যত পূজা দাও। "


গাহিল চার্বাক ঋষি 

শুন মন দিয়া,

ধান্দা ধর্ম ছাড়ি দাও 

মানবধর্ম নিয়া।


রচনা কাল ২০০১ বেলেঘাটা সুভাষ সরোবরে ভোরের নাচ কীর্তন দেখতে দেখতে।

সমালোচনা সম্পাদক / asokdas.godless@gmail.com







মিসাইল

লি খে ছে ন – সা ম্য


সন্ধ্যা নামার পরে,

কলকাতা শহরে,

পার্কস্ট্রিট উড়ালপুলের নীচে,

কাপড় বিছিয়ে,

ঘোড়ার গু আর মানুষের পেচ্ছাপের পাশে শুয়ে,

অন্ধকারে ভয় পেয়ে,

নাঙ্গা শিশু বড় রাস্তার দিকে ছুটে যায়।

তখনই হঠাৎ প্রায়,

আকাশেতে আলো জ্বেলে,

তুচ্ছ বিষয় দূরে ঠেলে,

ঔষধ চাইল ডাইল -

উড়ে যায় মিসাইল।


অবরোধ হবে আজ,

মানুষের নাই কাজ!

কোথায় এ শীতের বেলা -

নন্দন বইমেলা -

নতুন প্রেমিক আশ,

কবিতা লেখার প্রয়াস,

এর মাঝে যত সব,

"কাজ চাই" তোলে রব!

চাই নিরিবিলি ঘর,

নিয়ন আলোর স্বর।

আলো জ্বালে মহানীল,

নিউক্লিয়ার মিসাইল।


দুর্নীতি শিখরে,

পথ জুড়ে ভুখা রে,

তোদের জন্যে আজ

সেজেছি যুদ্ধ সাজ!

ভোট ভোট ভারী মজা,

মরে শুধু কিছু প্রজা।

বিধানসভার বিপরীতে,

জনগণকমিটিতে

জড়ো হয় এই বেলা,

বেস্পতি বারবেলা

কোন ভূতে মারে ঢিল?

কাহাদের মিসাইল?


দুঃসময়

লি খে ছে ন – স জ ল  কা ন্তি  টি কা দা র 


মায়ের চোখে জল কেন আজ

জানিস কি কেউ তোরা?

চারদিকেতে গোলা বারুদ

চলছে ছুরি ছোরা!

স্বাধীনতার এই বকলমে

স্বেচ্ছাচারই চলছে

নেতারা সব কালো টাকায় 

গাড়ী বাড়ী করছে!

ছোট্ট শিশু দুধের শিশু

ফুট পাতেতে ঘুরছে

দাদারা সব তাদের বাড়ী

টাইলস দিয়েই মুড়ছে।


ধর্ম নিয়ে চিৎকার শুধু

ধর্ম কোথায় আছে!

চারদিকেতে আঁধার দ্যাখো

ধর্ম পিশাচ নাচে--

উন্মত্ত আজ তোমার ছেলে

উদ্ধত পতাকা নিয়ে

মানুষ মেরে হাত যে রাঙায়

ধর্ম দোহাই দিয়ে!!


পুলিশকে আজ সততার কথা

বলতে মুখে বাধে

খেলার পুতুল তারা যে সব

দেশ নেতাদের হাতে।

মাকে আজ বোকা বানিয়ে

শিশু চুরি হচ্ছে

নেতারা সব মঞ্চে উঠে

মিথ্যে ভাষণ বলছে!


মনুষ্যত্ব আজ কোথায় গেলো

দ্যাখোতো কেউ খুঁজে

আইনও তো দেখছি আজ

আছে সে চোখ বুজে।


এদলকে ওদলেরা যদি

মাখায় কালি চুন

এদলও কম যায় না

বলে যে শতগুন

আসলে রাজনীতি হয়েছে

আজ সার্কাসেরই অঙ্গ

দেখে শুনে লাগছে ব্যথা

তাই কাঁদছে পশ্চিম বঙ্গ।




পৈতা টিকির ছদ্মবেশ

লি খে ছে ন - অ শো ক  দা স  চা র্বা ক


[ নাতির উপনয়ন উপলক্ষে কবিগুরুর "এস ব্রাহ্মণ শুচি করি মন" এবং বিদ্রোহী কবির "জাতের নাম বজ্জাতি সব। ..." ভাবনাদ্বয়কে আশ্রয় করে পাঠকগণকে একটি ছন্দহীন কবিতা  নিবেদনের প্রচেষ্টা ]


নিজেকে তুঙ্গে তুলি

জনমের উৎস ভুলি

বামুন হইবে তুমি আজ,

পরিয়া পৈতা টিকি

জনচোখে দিবে ফাঁকি

ধরিবেক পুরুতের সাজ।

প্রতারনা করি তুমি

হইবে শূদ্রের স্বামী

শুষিবেক যত যজমান,

নরকের ভয়ে তারা

স্বরগের লোভে ওরা

করিবেক সিধা সোনা দান। 

পরজীবী ব্রাহ্মণ

লুটিবে শূদ্রধন

ধর্মের ছুরিতে দিয়া সান,

মনুগপ্পো ফাঁদি তারা

করি সবে দিশাহারা

সাজিবেক যেন ভগবান।

হবে নাকি ব্রহ্মচারী,

শুনিয়া হাসিয়া মরি

ভিক্ষান্নে রাখিবেক দেহ!

দেখি তব মতিগতি

ছলনায় ভরা অতি,

সত্য বলি মানিবেনা কেহ।

পদধূলি চাটি তব

পূন্যি করে বৃদ্ধ নব

সৌভাগ্য হইবে তার অতি,

ছলনায় ভুলি সবে

তোমারে পুজিবে এবে

কৃতার্থ হইবে নিচু জাতি।

করিয়া পুতুল কেলি

মানুষেরে পায়ে ঠেলি

দেখাইবে পূজা অভিনয়,

শুনি নিজ বংশকথা

লাজে পাও বড় ব্যাথা

স্বীকার করিতে করো ভয়।

আফ্রিকার হনুমানী

সবারই ঠাকুমা জানি

ইহা তব জন্ম ইতিকথা,

সে 'লুসির'* সাথী শুনি

বলে ডারউইন জ্ঞানী

সবাকার আদি কুলপিতা।

বামুনের জন্ম হল

একই বীর্য্যে শূদ্র এল

জন্মিল  হনুর ঔরসে,

হোমিনিড আদি পিতা

সাথী তার আদি মাতা

শুনিয়া বামুন কাঁপে রোষে।

অর্ধপশু ছিল তারা

নানা মাংসে পুষ্ট  ওরা

পশুরক্ত বহে তার দেহে,

তাহারাই তব মাতা

হনুজাতি তব পিতা

ভুলে থাক গরবের মোহে।

তাদের শোনিত বহে

বামুনেরও অঙ্গ দেহে

লাখো লাখো যুগযুগ ধরিয়া,

চণ্ডাল শরীরে দেখি

একই রক্ত, জীন একই

গোপন করিতে হও মরীয়া

একই পিতার সন্তান

আদি গোত্র  হনুমান

ম্লেচ্ছ চণ্ডাল তব ভাই,

জন্মসত্য গোপন করি

বামুনের ভেক ধরি

দেবতার পাশে মাগ ঠাঁই।

ইথিওপ আফ্রিকান

প্রকৃতির ফরমান,

বিবর্তন নিয়ম মেনে  হনু হলো স্যাপিয়ন;

ইরানীরা তুতোভাই

বাঙালিনী তার বোন.

রক্ততুতো ভাই বোন হিন্দু মুসলমান।

একই বীর্য্যে সৃষ্টি সব বামুন কি চণ্ডাল

হনুবীর্য্যে জন্ম তব ইতিহাস আদিকাল।

ব্রহ্মার মুন্ড হতে বামুন জনম

শুনি সে কপট শাস্ত্র না হয় হজম।

ব্রহ্মপদ অংশে যদি শূদ্রদেহ হয়,

কেমনে সে দেবঅঙ্গ অচ্ছুৎ রয়??

যেমতি রক্ত তাঁর মাথাপানে ধায়

তেমতি চণ্ডালরক্ত বামুন মাথায়।

ব্রহ্মপদ  পূজে যদি পূণ্যবৃদ্ধি হয়,

শুদ্রপদ চুমে কেন স্বর্গপ্রাপ্তি নয়?

এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন সবাকার হাত ধর,

জাতির নামে বজ্জাতি সব জাল জালিয়াতি ছাড়।

কেটে ফেল টিকি ছিঁড়ে ফেল সুতা,

কেউ উঁচু নয়, এক পিতামাতা।

ডোমের পরশে শুদ্ধ হইয়া অমৃত বরণ কর।



উপনয়ন শেষে নাতির প্রতি উপদেশ


নাতি হলো ব্রহ্মচারী

ভিক্ষা দিল যত বুড়ি,

নাটক দেখিয়া শেষে

করে ভোজ ভুরি ভুরি।

নাতী খেল কাঁচকলা

আতপ চালের ভাত,

অতিথিরা মুরগী পাঁঠা

চেটেপুটে সাফ পাত।

পৈতা দেখিয়া হাবা

নেয় তব পদধূল,

শূদ্রদিদা পূন্যলোভে

হইল ব্যাকুল।

ষাষ্টাঙ্গে শুয়ে পড়ে

মাথা তব পায়,

দেখিয়া জগৎবাসী

লাজে মরে যায়।

শূদ্র বলি দাদুমুখ

দেখিবেনা নাতি,

বামুনত্ব কেঁচে যাবে

হেরি নিচু জাতি।

বামুনের  ভবিষ্যৎ

জানিবারে চাই,

কালে কালে বড় হয়ে

কি করিবে ভাই।

মানস চোখেতে দেখি

পশিছে সে গৃহীঘরে

করিয়া নানান ভঙ্গি

দেবপূজা নাট্য  করে।

প্রণামী ট্যাঙ্কেতে পুরি

চালকলা ব্যাগে ভরি

পুরুত ফিরিছে গৃহে

মাথা তার নিচু করি।

দেখি সে লালসদৃশ্য

সবে দেয় গঞ্জনা,

দাদু কি সহিতে পারে

নাতির সে যন্ত্রনা?

পদধূলি চাটে বটে

দখিনাও ছুঁড়ে দেয়,

নরকের ভয়ে গৃহী

অভিনয় করে হায়।

পুরুতকে সম্মান

করে যত যজমান,

বেচারা আড়ালে গেলে

পিছে করে গালিদান।

উপরে দেখায় ভক্তি

অন্তরে ঘৃণা,

নাতির ভবিতব্য দেখি

হয় মনে যন্ত্রনা।

কানে কানে বলি তারে

পুরুত হয়োনা ভাই,

সৎ কোন পেশা ধরে

খেটে খুটে খাওয়া চাই।

পুরুতের হীন পেশা

ধরোনাকো তুমি,

বাঁচাও ক্ষত্রিয় হয়ে

নিজ জন্মভুমী।

অথবা বাণিজ্য করো

বৈশ্যের মতন।

চাকুরিও ধরিতে পার

শুভ্র যেমন।

ঘন্টা নাড়িয়া তুমি

আরতির ঢং করি

উঞ্ছবৃত্তি করোনাকো

পরধন নিয়া কাড়ি।

স্টেজ থেকে নেবে এস

নাটক হয়েছে শেষ,

অভিনয় আর নয়

ছেড়ে ফেল ছদ্মবেশ।

ছিঁড়ে ফেল পৈতা

কেটে ফেল টিকি,

বিশুদ্ধ মানুষ হও

হয়োনাকো মেকি।



ক্ষয়িষ্ণু চেতনা

লি খে ছে ন – বি প্ল ব  সে ন



ভয়টা কোথায় প্রশ্ন করা সমাজের

চেতনার কাছে,

যদি বাস্তব দেখতে হয়

যদি কল্পনা হয় মিছে!

ধর্মের আবর্তে ঘুরে চলা

সামগ্রিকতায় দেখা

যেখানে চোখ ধাঁধানো মুক্ত বাজার

অথচ চেতনা ফাঁকা।

বাস্তবতার কাপড়ের তো নেই

চাকচিক্য

খোলা বাজার ঝকঝকে দোকান

পিছনের দৈন্যতার ভরা ঐক্য।

এই বাস্তবতা এড়িয়ে চলতে

ভয়ের আয়োজন

যাতে মানুষের চোখে থাকে

ধর্মের সন্মোহন।

সামগ্রিক ভাবে চেতনায় আসে

সম্পূরক পরিপূরকের ধারণা

কার্য কারণ মূল্যবোধে

শুধুই চেতনার তাৎক্ষণিক উন্মাদনা |

বিচ্ছিন্ন ভাবে নয় এটা

সামগ্রিক বিষয়

শোষণের এই পরাকাষ্ঠা

পুরোটাই অন্ধকার সময় |

মানুষের চেতনায় আঘাত করে

পঙ্গু করে দেওয়া

পিছনে লম্বা শক্তিশালী হাত

আছেই আছে ছোঁয়া!

বিজ্ঞান চেতনা প্রতিনিয়ত

করা চাই অনুশীলন

প্রগতির এই চলমান পক্রিয়া

সেটাই করা বর্ণন!

পরিবর্তনের এই পৃথিবীর বুকে

হচ্ছে বিকৃত বিকাশ

পরিপূর্ণতার বদলে ক্ষয়মান

অবকাশ।

তাই একবিংশ শতাব্দীর বুকে দাঁড়িয়েও

প্রচার মাধ্যমে সাধু মৌলবী আর ধর্মের রমরমা

বিজ্ঞানের প্রচার চাকচিক্য হীন

অদ্ভুত বিকৃতির মূর্ছনা।

সারা পৃথিবী আঁধারে ঢাকা

চেতনা অপসৃয়মান

আপেক্ষিকতায় চেয়ে দেখা

কেন মানুষের এমন অবস্থান।

ভীতি কাজ করে শাসন শোষণের

মধ্যে

ব্যাক্তি নয় ভয় তা দেখা সমাজের

ব্যবস্থার সান্নিধ্যে।

কবিতাগুচ্ছ ২১ -
কবিরা
Nov. 25, 2024 | কবিতা | views:621 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ধর্মের চাকা ঘুরছে আজও

- অ শো ক দা স  চা র্বা ক


খুব অতীতে 'হিন্দু' বলে

ছিলনা কেউ আগে,

সবাই তখন  ' মানুষ ' ছিল

আদিম সেসব যুগে।


সব মানুষের জন্ম একই

লুসি* মাতার পেটে,

জানতোনা তাই কি কার ধরম

প্রাচীন পৃথিবীতে।


লুসির রক্ত সবার শিরায়

বইছে পরম্পরা,

তাহার সাথীর বীর্যে সৃজন

মানব দেহের ধারা।


ছিলোনা তাই জাতের বিভেদ

সেই ভায়েদের মাঝে,

জড়িয়ে ধরতো পরস্পরে

নাচে গানে কাজে।


মানবধর্ম ছিল শুধু

সবার সাদা মনে,

ছিলোনা তাই দেবদেবীরা

ধরার কোন কোনে।


সত্যি স্বর্গ ছিল সেথায়

নয়কো সে দেশ মায়া,

নরকভয়ে কাঁপতোনা কেউ

কল্পে যমের কায়া।


কালে কালে ঠগবাজেরা

দেবের জন্ম দিলো,

স্বর্গলাভের লোভ দেখিয়ে

ধর্ম সৃজন হলো।


সেই সময়ে জন্ম নিল

চতুর পুরুত যত,

ধরা জুড়ে এলো তখন

ধর্ম শত শত।


হিন্দু হলো, জৈন হলো

হলো খিরিস্তান,

শাস্ত্র গুজব ফেঁদে হলো

সৃষ্টি ভগবান।


মানবধরম হারিয়ে গেল

কপট ধর্ম এলো,

বিলোপ হলো মানবজাতি

ধর্ম হলো কালো।


জিজ্ঞাসিলে কেউ বলিল

"হিন্দু আমি", কেউবা "মুসলমান"

বললোনা কেউ "মানুষ আমি -

পঞ্চভূতের প্রাণ"।


এক ধর্মী উঠলো বলে

তার ভগবান সেরা,

অন্য সাধু বলে "ওটার

মাথাটা কর ন্যাড়া,


পরের ধর্ম ভয়াবহ

ওদের করো আড়ি,

আপন ধর্ম রাখতে ওদের

মাথায় মার বাড়ি।”


কেউবা আবার বলে দেখি

সেজে বামুন কায়া,

“অব্রাহ্মণ নিচু জাতি

ছুঁইনা ওদের ছায়া।”


সরল মানুষ ধর্মমোহে

ভায়ের গলা কাটে,

সেই সুযোগে শাসক পুরুত

ব্যবসা করে হাটে।


সেই ট্রেডিশন চলছে আজও

ভিন ধর্মী মরে,

শাসক পুরুত রক্ত চোষে

ধর্মের কল ঘোরে।


" Religion was invented when the first con man met the first fool" -    Mark Twain

(ধর্মের  আবিষ্কার  হয়েছিল  যখন প্রথম ঠগবাজ  প্রথম  বোকা মানুষের  সাক্ষাৎ  পেয়েছিলো)

অশোকদাস চার্বাক, হনলুলু, আমেরিকা ৭/১৭/১৮

* এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব চেয়ে প্রাচীন সাড়ে তিন মিলিয়ন বছর পূর্বের মানবীর ফসিল - বর্তমান পৃথিবীর সব দেশের সব মানুষের আদি ঠাকুমা - সূত্র "LUCY OF ETHIOPIA" Google




মানুষ হও

স জ ল  কা ন্তি  টি কা দা র

আমাকে তোমরা হিন্দু বোলোনা

বোলোনা মুসলমান

বোলোনা আমায় বৌদ্ধ জৈন

বোলো না গো খ্রীষ্টান।

তোমরা শুধু আমাকে একটু

মানুষ নামেতে ডেকো

তাতেই আমি বেশী খুশী হবো

এটুকু মনেতে রেখো।

ধার্মিক হতে চাই না বন্ধু---

মানুষ হতেই চাই।

“সবার উপড়ে মানুষ সত্য

তাহার উপড়ে নাই।”

এই কথাটি জেনেও আমরা

তবু যে বিভেদ করি

ধর্ম জাতি আর বর্ণ নিয়েই

হিংসা প্রাচীর গড়ি।


ভগবানকে আমরা দেখিনি কখনো

কোথায় থাকেন তিনি?

মানুষকে কিন্তু দেখেছি বন্ধু

মানুষকেই আমি চিনি।

মন্দির মসজিদে ওড়ে যে টাকা

গীর্জা ভরে শুধু উপহারে

এদিকে দেখি পথের শিশু

পচে মরে অনাহারে!


ধর্মের নামে রক্তের খেলা

মানুষ যে পায় ভয়

আমরা আজও মানুষ হইনি

এতে অবাক হতেই হয়!

তাইতো বন্ধু এসব দেখেই

বড্ড খারাপ লাগে

ধার্মিক যদি হতে চাও তুমি

মানুষ হওগো আগে।



নিয়ম

 প্র দী প   চ ক্র ব র্তী



আকাশের  সূর্য -তারা

এক নিয়মেই চলে,

ছন্দোবদ্ধ জীবন যাপন

যুক্তির কথাই বলে।


মহাকাশের দুনিয়াতে

নেই ভাগ্যের হাত,

নিয়ম মেনেই দিন কেটে যায়

কেটে যায় কত রাত।


পৃথিবীর হোমো সাপিয়েন্স

বানায় যত নিয়ম,

ধর্ম নিয়ে নৃত্য করে

দেখায় কত-ই ভড়ং।



আমার ধর্ম

 সু ম ন  বি শ্বা স



জীব, জড়েতে ধর্ম আছে; ধর্ম বিহীন কিচ্ছু নাই,

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম মানে— হিংসা, বিভেদ, বিবাদ চাই।

মানুষ বানায় উঁচু, নীচু; জাত ভেদাভেদ রয় যে তাই,

গোনার বেলায় দলে আছে; বাস্তবে অচ্ছুত পাই।


স্বজনপ্রীতি কাকে বলে, ধর্ম দেখে যায় শেখা,

সবাই সমান নাই সেখানে; গ্রন্থে এমন পাই লেখা।

লোভ আর ভয়ে কাজ করে সব, পরকালের চিন্তাতে,

মূলে ভবে ধন গড়ে যায়; মানুষ পথে হাত পাতে।


ধর্মঢালে গুষ্টিসুদ্ধ, লুটেপুটে খায় ঢপে,

সকল মন্দকাজে থাকে; ফের সারাদিন নাম জপে।

এইপারে না ওইপারে সুখ; এই বলে বয়ান ব্যাচে,

ভণ্ডের হয় বিলাস জীবন; বোকা নাচে তার প্যাঁচে।


ভিক্ষে দিয়ে পুণ্যি কেনে; ছবি শোয়ায় রাজখাটে,

প্রাসাদসম ‘স্রষ্টার ঘর’; পরজীবী সেই হাটে।

পরের ভাতে বেগুন দিয়ে, খায় চিরকাল পালজুটে,

তবু আসন বজ্জাতে পায়; শ্রমজীবী হয় মুটে।


অভিশাপ আর আশির্বাদের ভাণ্ড মেলে ধর্মতে,

দ্বিচারী হয় ধর্মধারী; তফাৎ কথায়, কর্মতে।

আমার ধর্ম কৃত্রিম নয়; কোত্থাও তার নাই ফাঁকি,

আমার ঈশ্বর শৃঙ্খলে নাই; যখন-তখন তাই ডাকি।


সুমন বিশ্বাস, হিদিয়া (৯২১০), অভয়নগর, যশোর।

কবিতাগুচ্ছ ২০ -
কবিরা
Nov. 23, 2024 | কবিতা | views:293 | likes:0 | share: 0 | comments:0

দেশের কথা

-জা মা ল  আ ন সা রী


সততার কোনো মূল্য নেই মিথ্যের কারাগারে

নির্দয়ে সে একটু একটু করে গলা টিপে মারে।


দুর্নীতি যেখানে আকাশচুম্বী,চোর ডাকাতে ভরা

সুবিচারের আশা, সে যে শুধুই কষ্টকল্পনা করা।

কল- কারখানায়, হাটে- বাজারে যেখানেই যান

দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মস্তানদের ইয়া― সন্মান।


নীতি-আদর্শ অক্ষুন্ন রেখে চলা বড়ই কঠিন কাজ

দেশ হাঁটছে অন্ধকারে, নেতা গুলোও  দূর্নীতিবাজ।

কি আর বলল দেশের কথা? লিখে শেষ হবে নাই

বড় ফুল আর ছোট ফুল চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।








নষ্ট ধর্ম

স জ ল  কা ন্তি  টি কা দা র


ভগবান বলে নাইতো কিছুই

কর্মে জগৎ চলে---

তবে কেন তাকে পাবার আশায়

ভাসছো চোখের জলে?

মন্দির মসজিদ গীর্জাতে গিয়ে

অঢেল টাকা ঢালি

ভাবছো তোমার পূন্য হয়েছে

সেই গুড়েতে বালি!

সেইসব টাকা খায় পুরোহিত

খায় বামুনের দল;

পূজোআচ্চা সব লোক দেখানো

পৈতেধারীর ছল।

তোমার টাকাতে পান্ডারা সব

করছে গাড়ী বাড়ী

তবু কি তুমি বোকার মতন

ছুটবে পিছন তারই?

অং বং চং মন্ত্র তাদের

বোঝা যায়না কিছু!

ভন্ড এসব ধর্মের কাছে

কোরোনা মাথা নীচু।


যতটাকা তুমি খরচা কর

ধর্মের নাম নিয়ে

সিঁকি ভাগ তার দাও যদি

ফুটপাতেতে গিয়ে

দেখবে তাদের মুখেতে হাসি

চোখেতে খুশীর আলো

ওরা তোমাকে আপন ভেবে

বাসবে কতই ভালো।

ফুটপাতেতে থাকে যারা সব

পেটেতে আগুন জ্বলে

এসব দেখেও কেন গো তুমি

মিশছো ভন্ড দলে?


মানুষের রক্ত থাকে যদি তোমার

গায়েতে একটু খানি---

মানুষ হয়ে কোরো নাগো আর

সত্যের মান হানি!

ধর্মের এই নোংরামি দেখে

বেঁধোনা কাপড় চোখে---

বজ্রের মতো কঠিন হয়ে

দাঁড়াও এবার রুখে---





বৃথা

প্র দী প  চ ক্র ব র্তী


দেশের একটা আইন আছে

সেটাই দেবে বিধান,

দেশপ্রেমিক হতে চাইলে

পড়ো সংবিধান।


গাছ কাটলে পস্তাতে হবে

সবুজ হবে ক্ষয়,

সত্যি কথা জোর দিয়ে বলো

দূর করো সব ভয়।


মানুষ আগে? নাকি ধর্ম আগে?

কে বলতে পারে?

যুক্তিবাদের ঔষধেতে

ধর্ম রোগ সারে।


বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে

সবকিছু করো যাচাই,

নইলে পরে কাঁদতে হবে

জীবনটা যাবে বৃথাই।

কবিতাগুচ্ছ ১৯ -
কবিরা
Nov. 21, 2024 | কবিতা | views:64 | likes:2 | share: 2 | comments:0

আশ্চর্য ভাতের গন্ধ

-বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


আশ্চর্য ভাতের গন্ধ

রাত্রির আকাশে

কারা যেন আজো ভাত রাঁধে

ভাত বাড়ে, ভাত খায়।

আর আমরা

সারা রাত জেগে থাকি

আশ্চর্য ভাতের গন্ধে

প্রার্থনায়, সারা রাত


শাশ্বত

-অনার্য

ঊষার আলোর আহ্বানে নতুনের জাগরণ,

তৃণের শীশে শোভিত জীবন ক্ষণিকে স্খলন।

মায়ার পৃথিবী ভুলে যায় মায়া। একাকিনী জননী

খুঁজে ফেরে তার নয়ন মনি দিবস- যামিনী।

ভগবান, সকলই করিয়া থাকো মঙ্গল সাধনে!

পরম যতনে কাছে টেনে লও অমৃত বন্ধনে।

দয়ার সাগর প্রেমের আধার পুরুষোত্তম সত্য,

সকলই তোমার অধিন যবে তুমিই নিয়ন্তা নিত্য,

তবে কোন দোষে, কোন আক্রোশে সাঁজা দাও নির্দোষে?

আসলে তুমি, তুমি বলে কিছু নাই, চরম সর্বনেশে।

তবু ভিখ্ মাগে শতবার যত নির্বোধ দুর্বল,

সর্বজনীন কুসংস্কারে ভরসা অবিচল।।


এখানে সৃজন জীবন-প্রেম, মানুষ ও মনন,

এখানেই সব আনন্দ- হাসি রিক্তের বেদন।

সব দিয়ে সব কেড়ে লয় এই জগৎ-ঈশ্বর,

এই শাশ্বত-সত্য জানি তুমি-আমি- আর আর!




হৃদকুণ্ড

-মিঞোরেগা


ভীষণ ভারী পাদুকায় হাটছি

আপন মনে—পৃথিবীর বুকে,

শক্ত হাতে আঁকা তুফানের বর-পরঙ গল্পের পেইন্টিংয়ের মত

দুঃখগুলোকে অবশেষে রেখে।


ব্যস্ত রাস্তায় অবরোধ করে আছে

ট্রাফিক পুলিশের মত—আমার হৃদকুণ্ড

সাজের বৃষ্টিজলে, দূরে ঠিকানা ঘোলাতে

এই সবুজ যথাকালে, ঠিকানা সিদ্ধান্ত করে

সে বসে থাকত নীরবে, ভাবুক অথচ কী যেন খুঁজছে—।

এই দশকে বেশি আর হয়তো এগোনো যাবে না

আলো বিষণ্ণতায় মিশে গেছে

নাগরদোলার গানগুলো আঁধারে ভাসে

গাইতে গিয়ে ক্লান্তি চলে আসে

চেষ্টা করেও হয় না, হৃদকুণ্ড কম্প তৈরি করে

এ যাত্রা এভাবে থেমে যাবে।

রেঙ্গুন, মিয়ানমার



ওঠরে ওঠ দলিত সমাজ

-সজল কান্তি টিকাদার

ছোট্টো শিশুর প্রাণ যে গেলো

বর্ণবাদের বিষ নজরে

নয়নে এবার বহ্নি জ্বালা

থাকিসনা আর চুপটি করে।

ওঠরে ওঠ দলিত সমাজ

পুড়িয়ে দে সব মনুর বিধান

নইলে কিন্তু এই আগুনেই

যাবে আরো শিশুর প্রাণ।

যতই বলুক বামুনরা সব

আমরা সবাই সমান মানুষ

আসলে ওসব লোক দেখানো

ওসব কথা মিথ্যে ফানুস।

মানবিকতা নাইকো ওদের

জাতকে রাখে সবার আগে

কত যে দলিত প্রাণ হারালো

সেসব খবর কে আর রাখে?

ভুলিসনেরে ওদের কথায়

দেব দেবী সব ফেলনা ছুড়ে

দেওয়ালে পিঠ  ঠেকেই গেছে

লড়াই কর এবার ঘুরে।

জল ছুঁলে যে প্রাণ নিয়ে নেয়

এমন ধর্ম চাইনা আর

বর্ণবাদের মধুর কথায়

ভুলিসনে আর খবরদার।

বাঁচার মতই বাঁচরে তোরা

পায়ের তলায় থাকিসনে

এই ভারতেই জন্ম তোদের

ভয়টা মনে রাখিসনে।

দুটি কবিতা পর্ব ১৮ -
কবিরা
Nov. 21, 2024 | কবিতা | views:732 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ও হে শিক্ষিত সমাজ

-সোমনাথ সেন


ও হে বঙ্গ "সমাজ" কাকে বলে?

সবই নাকি সমাজের দোষ।


আমাদের নিয়েই সমাজ গড়া, আর আমরাই নির্বোধ !

মোড়ে মোড়ে নেশার দ্রব্য কলো পট্টি পরা চোখে,

প্রকাশ্যে গিলছি আমরা একে-অপরের স্বচক্ষে;


ও হে বঙ্গ সমাজ

সব কিছুই লোক দেখানো সবার ভালো চাই,

ভেবে দেখেছো আমাদের ভবিষ্যতটা কোথায়?

দামী-দামী পোশাক গায়ে হাতে সবার বিজ্ঞান,

মেতেছে সবাই আধুনিকতায় বেড়েছে মানবিকতাহীন জ্ঞান।

"মা-বাবাকে বাসবো ভালো" শিক্ষক দেন শিক্ষা;


আমাদের ভুল-ত্রুটি সব শুধরে গেল,

কিন্তু এই শিক্ষিত সমাজে মা-বাবা ই করেন ভিক্ষা?

সমাজ সমাজ বলি আমরা আমরাই সমাজের মুখ,

এই সুশিক্ষিত সমাজে সমালোচনায় মানুষের সুখ


অন্যের সফলতা দেখে বাড়ে নিজের দ্বেষ,

এই শিক্ষিত সমাজেই বেঁচে আছি বেশ ৷৷

মানবশক্তি

-প্রদীপ চক্রবর্তী


আমার ধর্ম  মানবতা,

তোমার ও কি তাই?

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের কাছে,

কিছুই মিলবে না; ভাই।


উঁচু জাত; নিচু জাত,

সাম্রাজ্যবাদের লম্বা হাত।

যুক্তিবাদের শক্ত দাঁত,

করবে যে আজ কিস্তিমাত।


ধর্ম স্থানে লাগলে আগুন,

নেভাতে আসে দমকল।

সর্বশক্তিমানের দেখা নেই,

মানবতাই সম্বল।


ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান,

এতেই আছে সব নিদান।

চাষের জমি; খনির খাদান,

মনুষ্যত্বের গাও সবে গান।

কবিতাগুচ্ছ ১৬ -
কবিরা
Nov. 20, 2024 | কবিতা | views:458 | likes:0 | share: 0 | comments:0

আরোগ্য

-প্রদীপ চক্রবর্তী


ধর্ম নিয়ে অনেক লড়াই

ধর্ম নিয়ে অনেক ভাষণ,

ধর্ম ধর্ম  কর কেন ?

ধর্ম  মানেই চরম শোষণ।


প্রকৃতির রোষাণলে

যখন আসে বিপর্যয়,

ধর্ম খায় গড়াগড়ি

ধার্মিকরা পায় যে ভয়।


বিজ্ঞানকে মেনে চল

পাবে মনে অনেক আরাম,

যুক্তিবাদী হলে পরেই

সেরে যাবে ধর্ম ব্যারাম।







যেমন কর্ম তেমন ফল

-জামাল আনসারী


কি যে বইল্যব ভাই, গরিবলকের জন্মটাই বৃথা,

সকাল থ্যেইকা বেলাডুবা তক্কো বাবুঘরে খাইটে খাইটে

কমর-কাখ্যাল ধরাই দিলে কপালে জুইটবেক সাতকুড়ি টাকা।

ত,এই টুকু টাকায় কি হবেক? নুন-তেল-চাল-ডাল! কিনতেই কুলাই নাই

ইদিকে নুনুর মাই, মুখটা ফুঁল্যাই আছে, ছুটু বিটিটারও দমে রাগ...

কালী পূজায় নুতন শাড়ি চাই।নতুন জামা কাপড় চাই।


টাকা পয়সা তো হাতে নাই,তাও নুনুর মাই-কে বলি,আর দিনা দুয়েক সবুর কর!

বাবুঘরের টাকাটা একবারে হাতে পালেই সবই কিনে দিব।টুকু ধর্য্য ধর।

ই জামানায় লিখাপড়ার কানাকড়িও দাম নাই হে।যতই ডিগ্রি থাকুক।

দাম আছে ঐ ন্যেতা-মন্ত্রী গুল্যানের।আর দাম আছে বাবাজি- মাতাজিদের।

শালা সব ভন্ডের এক রা। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।সে যতই লকে দেখুক।

ন্যেতা গুল্যানের লাজ-লজ্জা, হাইয়া-শরম কিছুই না। সব শেষ।


কেউ কেউ আবার বলে, "যেমন কর্ম তেমন ফল।"

ত, বলছি ফলটা কি শুধু ন্যেতা-মন্ত্রীদের ঘরেই ধরে? গরিব লকের ঘরে নাই কেনো?

নেতামন্ত্রীরা মিনিটে মিনিটে পেঁদা কথা বল্যে, দেশের লকগুল্যানকে ভুল বুঝায়।

সেই জন্যই কি উহারা কোটি কোটি টাকার মালিক? গাড়ি বাড়ি, টাকা কড়ির পাহাড় জমায়।

আর গরীব লক সকাল থ্যেইকা বেলাডুবা তক্কো বাবুঘরে খাইটে খাইটে

মাথার ঘাম পায়ে ফেইল্যে, কমর-কাখ্যাল ধরাই দিলেও ফল নাই।

গরিব গরিবেই থাকে।কুনু পরিবর্তন নাই।খাইটে খাই আর  ছিঁড়া খাইতে ঘুমায়।

কর্মের কি পরিহাস! তাথেও ধর্মের সেই এক কথা, , "যেমন কর্ম তেমন ফল !"


হবে তোমার সর্বনাশ

-রবিন তালুকদার


মেয়ের বাবা চিন্তায় আছে,

নুতন জামাই তার মাস্টার!

জামাইয়ের চাকরিটা থাকবে,

কোর্টের দেখছি যা'হাবভাব !!

পুরুত মশাই চিন্তায় আছেন,

এবার বিয়ের বাজার মন্দা!

হাইকোর্টের অর্ডার গুলো আসুক,

বিয়ের মরসুমের বাদ'টা !!

মুদির দোকানদার হিসেব কষছে,

কজন মাস্টারকে দিয়েছে ধার!

গাড়ির শোরুমে নোটিস ঝুলিয়েছে,

'বঙ্গের চাকুরে' লোনের থেকে বাদ !!

শশুর মশাই হিসেব কষছেন,

জামাইয়ের চাকরির বয়স কতো!

শাশুড়ি বলে শুধু দেখো জামাইয়ের,

চাকরি 'মমতার সরকারের' নয়তো !!

আগের জামাইরা বেচে যাবে,

তবে নুতন জামাইদের হবে কি!

জমি বেচে-বন্দক দিয়ে-লোন করে,

"পার্থর" থেতে চাকরি কিনেছি !!

খাটলো জামাই গতর দিয়ে,

এবার চাকরিটা যাওয়ার পালা!

তারসাথে আবার ফেরাতে হবে-

"বেতন" নয়তো জেলে ভাত খাওয়া !

হে বঙ্গরানী তুমি করলে কতনা কি,

সারদা-নারদা-সরকারি চাকরি!

সাথে টাটানেনো'কে ঝুলালে ফাঁস,

এবার তোমার হবেই সর্বনাশ !!

আমাদের ভদ্র হতে হবে

-শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়


গায়ে পরার মত কাপড় না জুটলেও

শব্দের গায়ে কাপড় পরানো চাই,

আমাদের ভদ্র হতে হবে।

আমাদের শালীনতা বজায় রাখতে হবে।

খেতে না পেলেও, খিদে পেয়েছে বলা চলবে না।

খিদেয় গা পাকিয়ে উঠুক, বেরিয়ে যাক নাড়ি ও ভুঁড়ি,

তবু আমাদের শব্দ যেন ন্যাংটো না হয়।

হ্যাঁ, প্রয়োজনে অনুস্বারের মাথায় দিতে হবে মাত্রা,

বর্ণনির্বিশেষে ঘোমটা পরিয়ে রাখতে হবে,

চন্দ্রবিন্দু লেখা পর্যন্ত।

আমাদের ভদ্র হতে হবে।

আমাদের সভ্য হতে হবে।

সভ্যসমাজে কেউ এমনি এমনি কাপড় খোলে না।

যাকে দেখে মনে হচ্ছে, উলঙ্গ, নির্লজ্জ,

কে জানে হয়তো সে জন-সমুদ্রের সৈকতে

স্বর্ণালী রৌদ্রস্নানে ব্যস্ত আছে!

তাকে 'ন্যাংটো' তো বলাই যায় না,

বড়জোর একটু ভালো শব্দ ব্যবহার করে বলতে পারেন,

উলঙ্গ।

কিন্তু তাহলেও ভদ্রতাবোধে,

বাতানুকূল কামরার যাত্রীদের মত,

খুব আস্তে করে বলতে হয়।

এখানে কেন্দ্রীয় বাতানুকূল‌ তন্ত্রে,

একটিও প্রতিকূল কথা বলবার জো নেই।

আমাদের ভদ্র হতে হবে।

আমাদের মৌন হতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের বুদ্ধি উলঙ্গ করে,

তার কোমরে দড়ি পরিয়ে,

লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে,

দাস কেনাবেচার হাটে বেচে দেয়ার মধ্যে

কোনো অশ্লীলতা নেই।

শুধু আমাদের বিনয়ী হতে হবে।

আমাদের ভদ্র হতে হবে।

কারণ, ভদ্রলোক দুটো কথা শোনাতে পারে না।

তাদের তো একটাই কথা,

আমাদের ভদ্র হতে হবে।

আমাদের সহ্যশক্তি বাড়াতে হবে।

উপার্জনের সব রাস্তা এক এক করে বন্ধ হয়ে গেলেও,

আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে,

নিষ্পলকে তাকিয়ে থেকে দেখতে হবে বিক্রি হ‌ওয়া।

লোকাল ট্রেনে সামুদ্রিক মাছের মত,

একদিন শেষ প্যাসেঞ্জারটার‌ও কশেরুকা বেচা হয়ে যাবে।

আমাদের সহ্য করা শিখতে হবে।

কারণ আমাদের টিকে থাকতে হবে,

সূর্য যতক্ষণ না পৃথিবী গিলে খাচ্ছে,

ঠিক ততদিন পরিপূর্ণ মমি হয়ে।

আমাদের ভদ্র হতে হবে।





হুল দিবস

- সুমন বিশ্বাস


সিধু কানু চাদ ভৈরব শক্তি দিয়ো আজ।

লাচতে যাবক হুল দিবসে গুছিয়ে ঘরের কাজ।

মাথায় নিয়ে কলসী ঘটি রংবেরং-এর ফুল;

মাদল তালে লাচতে যেন হয়না মোদের ভুল।

এদিনটোতে বাপ ঠাকুরদারা ভগনাডিহিতে;

দাঁড়িয়ে ছিল তীর ধনুক আর বল্লম নিয়ে হাতে।

ভয় পেয়ে যায় কামান গোলাও যদি বাঁধা যায় জোট।

মারাংবুরুর শক্তিতে আজ আবার জেগে ওঠ।

জেগে উঠল সিংভুম আর সান্তাল পরগনা।

সেদিনটোকে ভুলতে যে মোরা পারবোক না।

মহাজন, জোতদার দিখু আর ইংরেজ;

সবাই সেদিন দেখে ছিল সাঁওতালদের তেজ।

কামান গোলায় প্রাণ দিয়েছি - দিইনি মোদের মান।

হারিয়ে গেছে সর্বস্ব - হারায়নি সম্মান।

শিখিয়েছিল সিধু কানু প্রতিবাদের ভাষা।

সেটাই মোদের বেঁচে থাকার একমাত্র আশা।

কবিতাগুচ্ছ ১৪ -
কবিরা
Nov. 20, 2024 | কবিতা | views:88 | likes:2 | share: 1 | comments:0

চোরের মায়ের বড় গলা

-সুকমল সরকার।


পচামাল আছে আমার দোকানে,

তবুও খদ্দেরে যদি নেয় কিনে,

তবে আমার দোষ কোনখানে?

আমার দোকানে যদি গু বিক্রি করি,

খদ্দেরে কিনে যদি করে কাড়াকাড়ি!

আমার দাপট তো চলবেই বাড়াবাড়ি।

যে গুরু রা, সবাইকে দেয় দীক্ষা,

তাদের নিজেদেরই নাই সুশিক্ষা,

কেউকেউ তো দেখি করে ভিক্ষা,

তবুও সবাই তাকে খুব সযতনে,

ঘটা করে বাড়িতে ডেকে এনে,

দীক্ষা নিয়ে লুটিয়ে পড়ে চরণে,

পা চেটেপুটে খায় ধার্মিক গনে,

পিতার চেয়েও তাকে বড় মানে,

গৌরবে বলে আমি দীক্ষিত এখনে,

আমার বেশি দুঃখ সেইখানে।

এরচেয়েও বেশি যাবেনা বলা,

কারণ চোরের মায়ের বড় গলা।

লেখক

-জামাল আনসারী


এই তো কিছু দিন আগের ঘটনা―

চোখ রাঙিয়ে পাঁচ পয়সার রাজনৈতিক নেতাটিও

তর্জনী উঁচিয়ে বলে গেল―

"এই লেখক!রাজনীতি নিয়ে কিচ্ছুটি লিখবি না!লিখলে ভাল হবে না!"

―ঠিক আছে! তাই হবে।তাই হবে।


এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে,

দুদিন পর, ধর্মের বর্জ্য পদার্থস্বরূপ ধর্মগুরু নামধারী,

আপাদমস্তক ভন্ড,লোভী লোকটিও

সর্বাঙ্গে নামাবলি জড়িয়ে কর্কশ ভাবে বলেছিল―

"এই লেখক !ভালো করে শুন ! ধর্মের কথা!

ধর্ম নিয়ে,জাতপাতের ভেদাভেদ নিয়ে একটিও শব্দ লিখবি না!  লিখলে কিন্তু ভালো হবে না।"

―আচ্ছা, ঠিক আছে বাবা,লিখব না। ...লিখব না।


পাড়ার জেলখাটা মস্তান  দলবল নিয়ে এসে,খিস্তি মেরে,

হুমকি দিয়ে এইমাত্র চলে গেল।

ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে জানিয়ে দিল―

"এই লেখক! কান খাড়া করে শুন! অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালাবি না।

ভুল করেও যদি কলমে হাত দিস,ঐ হাত কেটে জগন্নাথ বানিয়ে দেবো।"

ঠিক আছে বাবা। তাই হবে ।আর লিখব না।


সেদিন পাশের গ্রামের কোটিপতি দেশ বিদেশ খ্যাত বিচারপতিটিও কানে কানে বলে গেল...

"ভারতের বিচার ব্যবস্থার দিকে প্রশ্ন তুলবি না।আর ধর্মনিরপেক্ষতা,গণতন্ত্র নিয়ে কিছু বলবি না।

আর যদি প্রশ্ন করিস,তার ফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে।"

―আচ্ছা, ঠিক আছে। প্রশ্ন করব না।


যার গোপ-দাড়ি এখনও গজায় নি,তবুও পাড়ায় সমাজ-বিপ্লবী বলে পরিচিত,সেই কমিউনিস্ট ছেলেটি বড় বড় চোখ পাকিয়ে প্রকাশ্য রাস্তার মোড়ে জানিয়ে দিল―

"এই লেখক। কি সব লিখছিস?  সমাজের অসাম্য নিয়ে কিচ্ছুটি লেখবি না।কথাটা মনে থাকে যেন!নইলে...

সমাজের সর্ব স্তরের কাছ থেকে হুমকি, ধমকি, চোখ রাঙানি

সহ্য করতে করতে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া লেখকটি মুখের উপর প্রশ্ন ছুড়ে মারে, কেন? কেন লিখব না??

কমিউনিস্ট ছেলেটি ভুরু কুঁচকে বলে, "সমাজ বিপ্লব করা লেখকের কাজ নয়। "

―ও আচ্ছা।ঠিক আছে। লিখব না।


কেন লিখব? কাদের জন্য লিখব?

রাস্তার ফুটপাতের উপরে বসে থাকা ভদ্রলোকটির থেকে উত্তর এলো―"কলম থামাবে না।লিখে যাও। আমাদের জন্য লিখো।"

সাইকেল চালিয়ে যে শ্রমিকটি রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিল, সেই শ্রমিকটি জানিয়ে দিয়ে গেল― "আমাদের জন্য লিখো।"

রাস্তার পাশ থেকে সাফাইওয়ালা দাদু বলে ওঠে―

"লিখে যাও লেখক।আমরা তো আছি।আমাদের জন্য লিখো।"

স্কুলব্যাগ পিঠে নিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা হেঁটে হেঁটে স্কুল যেতে যেতে বলে গেল, ―কাকু ভয় পেয়ো না।আমরা আছি।আমাদের জন্য লিখো।''




সঠিক

-প্রদীপ চক্রবর্তী


কুষ্ঠী দিয়ে মানুষ বিচার

পাথর দিয়ে ভাগ্য,

কালো চামড়া,সাদা চামড়া

কে বেশী যোগ্য?


ধর্ম গ্রন্থে আছে সব-ই

শুধু খুঁজে নাও,

রোগ হলে ধর্ম কোথায়?

হাসপাতালে যাও।


বন্যা-ভূকম্পে সম্পত্তি ক্ষয়

যতই ডাকো ভগবান,

প্রকৃতিকে ভালবাসো

সে যে মাতৃসমান।


মুক্ত মনের মানুষেরা

সদাই সুখী হয়,

কুসংস্কারকে বিদায় করার

এটাই সঠিক সময়।


ওর চোখ নাই নাক নাই

-মোহাম্মদ আল্লারাখা


যে দেশে রাজনৈতিক নেতা

অন্য জাতের মেয়েদেরকে

ধর্ষণ করতে উৎসাহ দেয়

কবর থেকে অন্য জাতের

মেয়েদের মৃতদেহ তুলে ধর্ষণ করতে বলে

যে দেশে ঈশ্বরের উপাসনালয়ে

অন্য জাতের নেহাত এক বালিকাকে

আটকে রেখে সাতদিন ধরে ধর্ষণ করা হয়

মৃতপ্রায় মেয়েটিকে অসহ্য যন্ত্র‌ণা দিয়ে নরপশুর দল ধর্ষণ করতে করতে একটি মাংসের পিণ্ডে পরিণত করে মেরে ফেলে

যে দেশে ধর্ষকদের সমর্থনে জাতীয় পতাকা হাতে

মিটিং মিছিল হয়, বিক্ষোভ দেখানো হয়

যে দেশে দাঙ্গার সময় মেয়েদেরকে ধরে ধরে

ধর্ষণ করা হয় ঘরে বাইরে রাস্তা ঘাটে পার্কে

সে সব দৃশ্য আবার ভিডিও করে ছাড়া হয়

যারা দাঙ্গার ধর্ষণে অংশ নিতে পারেনি

তারা দাঙ্গার ধর্ষণের ভিডিও দেখে উপভোগ করে।

এসব নেতা মন্ত্রী জজ ব্যারিস্টার প্রশাসন বুদ্ধিজীবিদের সামনে ঘটে, সবাই দেখে, সবাই শোনে, সবাই নির্বিকার।

যে দেশে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তার দু পা টেনে দেহ চিরে ফেলা হয়, যেখানে অপরাধীদের বিচারের দাবীর চেয়ে শাসক ও বিরোধীদের রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে, কে কতো ফায়দা তুলতে পারবে ঘটনা থেকে।

যে দেশে রাজনৈতিক নেতা সভার মাঝে ঘোষনা করে অন্য রাজনীতির লোকদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার, তাদের মেয়েদেরকে ধর্ষণ করার

যে দেশে ধর্ষণে বাধা দিলে হাত পা হাড়গোড় ভেঙে দেওয়া হয়, জিভ কেটে নেওয়া হয়, গলায় দড়ি ওড়না পেঁচিয়ে মেরে মৃতদেহকেই ধর্ষণ করা হয়

তারপর ধর্ষক ঘটনা স্থলেই দেহ জ্বালিয়ে দেয়

কখনো পুলিশ গিয়ে রাতের আঁধারে জ্বালিয়ে দেয়।

যে দেশে নিম্ন শ্রেনির নারীদেহ মানেই উচ্চ শ্রেণির

লোকদের মুফতে ভোগের অধিকার ভাবা হয়।

যে দেশে নারীকে মানুষ নয় কেবল সন্তান উৎপাদনের পালিত প্রাণী ও ভোগের বস্তু ভাবা হয়।

যে দেশে ধর্ষকদের নয়, ধর্ষিতা নারী ও তার পরিবারের লোকদের সাজা হয়।

যে দেশে ধর্ষকদের জাত দেখে রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী মিডিয়া পুলিশ এমনকি নেটিজেনরাও সরব নীরব হয়।

যে দেশে ধর্ষকদের সমর্থনে কলেজ ছাত্র ছাত্রীরাও

মিছিল করে, উচ্চকণ্ঠে শ্লোগান দেওয়ার সাহস পায়!


সে দেশে ধর্ষণ হবে না তো কোথায় হবে?

সে দেশে মানুষ নয়, সব মনুষ্যরূপী পশু বাস করে

তুই তোরা কি মনে করিস ধর্ষণকারীদের উৎসাহ দেবো অপছন্দের জাতের, অপছন্দের লোকদের মেয়েদের দেহের উপর ধর্ষণ চালাতে?

আর সব তোদের ঘরের মেয়েরা নিরাপদে থাকবে?

ওরে! লিঙ্গের চোখ নাই নাক নাই

ওটা চোখে দেখে না গন্ধ শুঁকে না

নারী দেহের মধ্যাংশের ওই ছেঁদা টুকু পেলেই এঁফোড় ওঁফোড় করে দেয়।

পৃথিবীর চরম পরম সেরা আনন্দময় আদরের বস্তুকে

আজ যারা ঘৃণা বিদ্বেষ হিংসা দিয়ে জাগাচ্ছিস

পাশব প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে

অন্যদের নারীদেহ ধর্ষণ করতে

সে কালই তোর, তারই নিজের মা বোন স্ত্রীকে

পশুর চোখ নিয়েই এঁফোড় ওঁফোড় করবে।

ওর চোখ নাই নাক নাই

ওটা চোখে দেখে না গন্ধ শুঁকে না

কবিতাগুচ্ছ ১২ -
কবিরা
Nov. 19, 2024 | কবিতা | views:110 | likes:0 | share: 0 | comments:0

প্রার্থনালয়

– হুমায়ুন আজাদ


ছেলেবেলায় আমি যেখানে খেলতাম

তিরিশ বছর পর গিয়ে দেখি সেখানে একটি

মসজিদ উঠেছে।

আমি জানতে চাই ছেলেরা এখন খেলে

কোথায়?

তারা বলে ছেলেরা এখন খেলে না, মসজিদে

পাঁচবেলা নামাজ পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বুড়িগঙ্গার ধারে

বেড়াতে গিয়ে

যেখানে একঘন্টা পরস্পরের দিকে নিষ্পলক

তাকিয়ে ছিলাম আমি আর মরিয়ম,

গিয়ে দেখি সৌদি সাহায্যে সেখানে একটা লাল

ইটের মসজিদ উঠেছে।

কোথাও নিষ্পলক দৃষ্টি নেই চারদিকে

জোব্বা আর আলখাল্লা।

পঁচিশ বছর আগে বোম্বাই সমুদ্রপারে এক

সেমিনারে গিয়ে

যেখানে আমরা সারারাত নেচে ছিলাম আর পান

করেছিলাম আর নেচে ছিলাম,

১৯৯৫-এ গিয়ে দেখি সেখানে এক মস্ত মন্দির

উঠেছে।

দিকে দিকে নগ্ন সন্ন্যাসী, রাম আর সীতা,

সংখ্যাহীন হনুমান;

নাচ আর পান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ফার্থ অফ ফোর্থের তীরের বনভূমিতে

যেখানে সুজ্যান আমাকে

জড়িয়ে ধ’রে বাড়িয়ে দিয়েছিলো লাল ঠোঁট,

সেখানে গিয়ে দেখি মাথা তুলেছে এক গগনভেদি

গির্জা।

বনভূমি ঢেকে আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত

ঝুলছে এ ক্রুদ্ধ ক্রুশকাঠ।

আমি জিজ্ঞেস করি কেনো দিকে দিকে এতো

প্রার্থনালয়?

কেনো খেলার মাঠ নেই গ্রামে?

কেনো নদীর ধারে নিষ্পলক পরস্পরের দিকে

তাকিয়ে থাকার স্থান নেই?


কেনো জায়গা নেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধ’রে

চুম্বনের?

কেনো জায়গা নেই নাচ আর পানের?

তারা বলে পৃথিবী ভ’রে গেছে পাপে,

আসমান থেকে জমিন ছেয়ে গেছে গুনাহ্'য়

তাই আমাদের একমাত্র কাজ এখন শুধুই

প্রার্থনা।

চারদিকে তাকিয়ে আমি অজস্র শক্তিশালী

মুখমণ্ডল দেখতে পাই,

তখন আর এ কথা অস্বীকার করতে পারিনা।





রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র(?)

-জামাল আনসারী


করোনা অজুহাত আর তুমি দিও না।

শিক্ষাকে এভাবে আর ধ্বংস করো না।


মাথাটা ঠান্ডা রেখে একটু  ভেবে দেখো―

চোখ- কান খুলে তুমি একটু হলেও শেখো।


লেখা পড়া ছেড়ে শিক্ষার্থী করোনাতঙ্কে মরে!

করোনা-ভাইরাস কি শুধুই স্কুলে বাস করে?


চলছে মিটিং, চলছে মিছিল, করোনা তো নাই

চলছে বাস, চলছে ট্রেন, ভাইরাসের ভয় নাই―


হাটে- বাজারে ভিড়, খোলা আছে শপিংমল!

শুধু স্কুলে প্রবেশ নিষেধ! চলছে সিনেমা হল।


সব তো স্বাভাবিকই আছে। শুধু স্কুলটা ছাড়া,

তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খোলার নেই কো তাড়া!


ভোটের পর ভোট আসছে, ঢেউ এর পর ঢেউ

কত যে ঢেউ আছে! বোঝেই না মানুষ কেউ।


করোনা ভাইরাস, তবে কি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র (?)

করোনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ব্যবসার মূলমন্ত্র!


ঢেউ উঠলেই কেন বন্ধ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?

যুব সমাজকে মূর্খ বানানো সরকারেরই ধ্যান।


শিক্ষা-ছাড়া ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত অন্ধকার

শিক্ষার্থীর স্বার্থে স্কুল-কলেজ খোলা দরকার।



ছিল ব্রিটিশ যেমন

-রবীন্দ্র নারায়ণ তালুকদার


কতো বড়ো পাল্টি বাজ

একটু ভাবুন বসে

কতো বড়ো কালো হাত

হিসেব করুন দেখে!

মায়ের গয়না চুরি করেছে

১৮ বছর বয়সে

নিজের দাদাই বলে দিয়েছে

প্রচারসভায় এসে!

৩৫ বছর অবধি ভিখারী ছিল

নিজের মুখের কথা

কখন আবার পড়াশোনা করল

বসুক বিচারের সভা!

স্টেশন ছাড়া চায়ের দোকান

কলেজে লাগিয়েই পড়া

ডিজিটাল পিন্ট মেশিনের আগে

হয়েছে মানপত্র গড়া!

বহুরূপী সেজে বলেছিল

২ কোটি চাকরি দেবে

কেমন সুন্দর ঘুরে দাড়াল

চাকরি গেল জলে!

বাড়লো বেকারত্ব-ক্ষুধার্ত

কমল শিক্ষিতের হার

জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া

দেখ গরীবের দিনকাল!

কর্পোরেট কতো আয় বাড়ালো

আবার তাদেরই টাক্সে ছাড়

গরীবের কোনও সুবিধা নেই

শুধু ভিক্ষে নিয়ে খাও!

গরীবকে গরীব একেজো করছে

নানান কুপথের সড়যন্ত্রে

ভোটে ২০লক্ষ্য ইভিএম হারিয়ে

কতো সুন্দর মসনদে!

বিচার শুধু নামেই আছে

বিচারকের দায়িত্ব কম

সুন্দর ইশারায় দেশ চলছে

ছিল ব্রিটিশ যেমন!!



কফিনবন্দী

-প্রদীপ চক্রবর্তী


হিজাব পরবো ? নাকি গেরুয়া পরবো ? ------------

শপথ নাও হাতে হাত রেখে, শুধু বই পড়বো।

ধর্ম নিয়ে অনেক তো হল, এবার জীবনের কথা বলো,

যুক্তির ইন্ধন নিয়ে মনুষ্যত্বের পথে চলো।


জাতপাতের নির্লজ্জ ধ্বজা এবার নামিয়ে নাও,

ভয়কে জলাঞ্জলি দিয়ে; সামনে এগিয়ে যাও।

ভাগ্যিস ভাগ্যটা নেই; জ্যোতিষের দাবি মতো,

পাথরের আংটি রোগ সারালে; কী কাণ্ডটাই না হতো।


করোনা সারাতে কোন্ পাথর?

জ্যোতিষের দাবি মতো,

কফিনবন্দী করে ফেল তাই

অন্ধ কুসংস্কার যত।

দুটি কবিতা পর্ব ১১ -
কবিরা
Nov. 19, 2024 | কবিতা | views:122 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বিজ্ঞান কংগ্রেসের কমেডি শো

-জামাল আনসারী


দু হাজার ঊনিশ, ভারতের বিজ্ঞান কংগ্রেস সম্মেলন,

বিজ্ঞানীরা পৌরাণিক কাহিনীতে করলেন অবগাহন।।


বিজ্ঞান কংগ্রেসের বলছি সংক্ষেপে কিছু পন্ডিতের কথা,

তাদের মহামূল্যবান কথা শুনে অনেকের ধরবে মাথা।।


প্রজাপতি ব্রহ্মা করেছিল ডাইনোসরের আবিষ্কার,

মনু থেকে একে একে বিশ্বে মানুষের হল আবির্ভাব।।


ভারতের বিজ্ঞানীরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল বিবর্তনবাদ।

বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের আর থাকল না কোন বিবাদ।।


গণেশের হাতির মাথা প্লাস্টিক সার্জারির উদাহরণ,

হাতির মুন্ডু চাপিয়ে দিলে হবেনা কেন তার মরন!


মহাভারতের যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার অবশ্যই ছিল,

ঘরে বসে সঞ্জয়, যুদ্ধের পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর কিভাবে দিল!


নির্বিচারে বৃক্ষ ছেদন! ভারতের ক্ষতি নেই  তা-তে

পাতি হাঁসগুলিই তো, অক্সিজেন ছাড়ছে মাঠে ঘাটে।।


রামায়ণের যুগে শ্রীলঙ্কাতে অনেক বিমানবন্দর ছিল,

বিমানে(পুষ্পক রথ) করেই রাবন সীতাকে হরণ করিল।।


ভারতের বিজ্ঞান কংগ্রেসের আরো আছে অবদান,

জ্যোতিষীরা হাত দেখেই বলে গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান।।


বিজ্ঞানীদের দাবি,আধুনিক প্রযুক্তির কিবা প্রয়োজন!

ভারতেই পারে গো মূত্রে মরণব্যাধি ক্যন্সার নিবারণ।।


বিশ্বে যা কিছু আবিষ্কার, সবই নাকি ভারতের অবদান!

বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র,আধুনিক মিসাইলের উৎকৃষ্ট প্রমাণ।।


বিজ্ঞান কংগ্রেসের কমেডি শো দেখে কি যে হাসি পায়!

বিদেশিরা বলে বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিজ্ঞানেরই দেখা নাই।।


বিলাপ

-প্রদীপ চক্রবর্তী


ধর্ম নিয়ে বড়াই করো,

সত্যিকারের মানুষ নও।

জাতিভেদের ভাইরাস কে,

বলো সবাই;তফাত যাও।


আমি-তুমি মানুষ যখন,

ধর্ম হল মানবতা।

আমাদেরই হৃদয় পুষ্পে,

ভালবাসার মালা গাঁথা।


সূর্য যখন গগণ মাঝে,

পৃথিবীতে আলো ছড়ায়।

সাম্যবাদের ইস্কুলেতে,

যুক্তিবাদী পাঠ পড়ায়।


ধর্ম নিয়ে রাজনীতি,

বন্ধ হোক্ চিরতরে।

মানসিকতাটা সুস্থ হলেই,

ধর্মান্ধরা বিলাপ করে।

কবিতাগুচ্ছ ১০ -
কবিরা
Nov. 19, 2024 | কবিতা | views:885 | likes:0 | share: 0 | comments:0

হায়, ধর্ম!

- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


মাঠে মাঠে রবিশস্য বােনার কাজ চলছে সারাদিন নামলাে সন্ধ্যা

পাতলা অন্ধকারের চাদর মুড়ি দিয়েছে দূরের পাহাড়

পাখিরা ফিরছে, বাতাস বইছে বিপরীত দিকে এখন ঘরে ফেরার সময়

যাদের ঘর নেই তারাও ফেরে

ওদের ক্লান্ত পা, গলায় গুনগুনে স্বর, মাথায় জড়ানাে গামছা

পাম্প হাউজে এসে টিউবওয়েলের জলে ধুয়ে নিল হাত মুখ

আঃ কী নির্মল, ঠাণ্ডা জল, ধরিত্রীর স্নেহ

জুড়িয়ে দেয় শরীর

একটা বিড়ির সুখটান, তারপর উনুন ধরাবার পালা কয়েকজন রুটি পাকাবে, দু-একজন রাঁধবে অড়হড় ডাল,

ভেণ্ডির সবজি

আর একজন না-সাধা গলায় গাইবে গান ;

"হােইহি সােই জো রাম রচি রাখা

কো করি তর্ক বঢ়াবৈ সাখা..."

যে গায় এবং যারা শােনে, তাদের এক ঝলক মনে পড়ে

সুদুর পূর্ণিয়া জেলার গ্রামের বাড়ি, ঘরওয়ালী ও

বাল-বাচ্চার মুখ ওরা এখন পঞ্জাবের ভাড়াটে চাষী

অন্যের জমিতে এক মৌসুমের ঠিকা

দিনভর সূর্য পােড়ায় মাথা, নিঙড়ে নেয় মজ্জা সন্ধেবেলা পেটের মধ্যেই জ্বলে উনুন, চোখ দিয়ে খাওয়া

ডাল-রুটি

তারপর খােলা আকাশের নীচে খাটিয়ায় চিৎপটাং বিড়িতে টান দিতে দিতে ঘুমােবার আগেই দেখা দু-একটা স্বপ্ন

জীবন এর চেয়ে বেশি কিছু দাবি করেনি...

রুটি সেঁকা হয়ে গেছে, ফুটন্ত ডালে যেই দেওয়া হলাে লঙ্কা

ফোড়ন

তখনই এলাে দুই আগন্তুক, হাতে সাব মেশিনগান ছদ্মবেশ ধরার কোনাে চেষ্টাই নেই, চোখে নেই দ্বিধা কেউ কারুকে চেনে না, এদের পূর্বপুরুষদের মধ্যেও শত্রুতা ছিল না

সেই দুই কাল্পনিক দেশপ্রেমিক ছেলেখেলার মতন চালিয়ে দিল গুলি

উল্টে গেল ডালের গামলা, ছড়িয়ে গেল বাসনা-নিশ্বাস লাগা

রুটি রাশি

জানলােই না কেন তারা মরছে , বুঝলােই না মৃত্যুর রূপ কেমন

পঁচিশজন সেখানেই শেষ, বাকিদের ছিন্নভিন্ন হাত-পা

এবার ছুটে আসবে শকুন-শেয়ালের পাল...


দুই আততায়ী অস্ত্রের নলে ফু দিয়ে ধীর পায়ে উঠে গেল জিপে

গ্রামের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা

কোনাে বাড়িতে শ্বেত শ্মশ্রু এক বৃদ্ধ পাঠ করছেন গ্রন্থসাহেব:

"সাধাে মন কা মান তিআগউ

কাম ক্রোধু সংগতি দুরজন কী তাতে অহিনিস ভাগউ..."

জমির ফসলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সুবাতাস এই মাত্র চাঁদ উঠে ছড়িয়ে দিল জ্যোৎস্না


তুলসীদাসের দোঁহায় রামের গুণগান করছিল যে শ্রমিকটি

তার কণ্ঠ এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেছে,

রামচন্দ্রজী, তােমার ভক্তদের তুমি রক্ষা করলে না? যারা অযােধ্যায় মসজিদ ভেঙে রামমন্দির বানাবার জন্য উন্মত্ত

তারাও কেউ এইসব মানুষদের বাঁচাতে আসবে না কোনােদিন

গুরু নানক, আপনি দেখলেন আপনার রক্তপিপাসু ভক্তদের

এই লীলা

গুরুজী, গুরুজী, আপনার নামে ওরা জয়ধ্বনি দিয়ে গেল?


জম্মু থেকে এই শনিবারই একটা বাস ছাড়লো সকাল সাড়ে আটটায়, যাবে কাঠুয়া

ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, শােনা যাচ্ছে মিশ্র কলস্বর মায়েরা সামলাচ্ছে বাচ্চাদের, এক কিশােরীর হাতে

জিলিপির ঠোঙা জানলায় থুতনি-রাখা তার ছােট ভাইটির চোখে বিশ্বজোড়া বিস্ময়

আকাশ আজ প্রসন্ন নীল, উপত্যকায় উড়ছে কুসুম রেণু

যাত্রীরা কেউ ফিরছে গ্রামের বাড়িতে, একজন যাচ্ছে বিয়ে করতে

আপন মনে বাসটা যাচ্ছে ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে

একটা বাঁক পেরুবার মুখেই বজ্রপাতের মতন বিস্ফোরণ

উড়ে গেল জিলিপির ঠোঙা ধরা কিশােরীর হাত বালকটির ছিঁড়ে যাওয়া মুণ্ডুতে চোখ দুটো নেই সন্তানকে বুকে জড়ানাে জননী আর্ত চিৎকারেরও সময় পেলেন না

কালাে বােরখা পরা আর একটি রমণীর নিস্পন্দ শরীর

এই প্রথম উন্মুক্ত হলাে প্রকাশ্যে বলশালী পুরুষদেরও শেষ হয়ে গেল সব নিশ্বাস মােট সতেরাে জন, বাকিরাও মৃত্যুর অতি কাছাকাছি দগ্ধ

কেউ একজন যেন কৌতুক করে রেখে গিয়েছিল একটা পেনসিল বােমা

সেই হত্যাকারী আল্লার সেবক, ধর্মের ঝাণ্ডা তোলার জন্য

রক্তনদী বইয়ে দিতেও দ্বিধা নেই যারা প্রাণ দিল তারাও আল্লার সন্ততি

পাঁচ ওয়ক্ত নিত্য নামাজ পড়া দুই প্রৌঢ়ও নিস্তার পায়নি

এক মৌলবী সাহেবের ডান পা অদৃশ্য হয়ে গেছে হায় আল্লা, হে খােদাতালা, হে খােদাতালা...

মনরােভিয়া, ডেট লাইন একত্রিশে অক্টোবর কোথায় গেল সেই পাঁচজন আমেরিকান নান? আজীবন ব্রতচারিণী, তারা শরীর-মন নিবেদন করেছিল যীশুকে

আর্তের সেবায় গিয়েছিল দেশ ছেড়ে অমন সুদূরে কোথায় তারা? না, হারিয়ে যায়নি, পাওয়া গেছে পাঁচটি শরীর

লাইবেরিয়ায় যুযুধান দু পক্ষের গােলাগুলির মাঝখানে পড়ে

ভূলুণ্ঠিত, বেআব্রু, রক্ত-কাদায় মাখামাখি

পরম করুণাময় যীশু কি সেই সময় চোখ বুজে ছিলেন?


বােসনিয়া-সারবিয়াতে শুরু হচ্ছে গ্যাস যুদ্ধ এতকালের প্রতিবেশী, শুধু ধর্মভেদের জন্য এত ঘৃণা?

পশুরাও তাে এমন ধর্মে বিশ্বাস করে না মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীদের পুড়িয়ে মারছে যে বর্ণগর্বী হিন্দুরা

তারাই বাড়িতে বসে শ্লোক আওড়ায়, সব মানুষেরই মধ্যে রয়েছেন নারায়ণ!


অন্য কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম, কলম সরছে না আমার

না, কবিতা আসছে না, ইচ্ছে করছে না ছন্দ মেলাতে

খবরের কাগজে, বেতারে, দূরদর্শনে শুধু মৃত্যুর নির্লিপ্ত ধ্বনি

অসহায় বিরক্তিতে ছটফট করছে আমার সমস্ত শরীর

ধর্মশাস্ত্রগুলির মহান বাণী টুকরো টুকরো মনে পড়ে, তাতে আরও কষ্ট হয়

'হায় ধর্ম, এ কী সুকঠোর দণ্ড তব?'

আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ি, কয়েক পা গিয়েই মনে হয় কোথায় যাচ্ছি?

কেন উঠলাম, কেনই বা ফিরে গিয়ে বসবাে টেবিলে কবিতা হবে না, তবু লিখে যাচ্ছি এই পঙক্তিগুলি, না, ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকদের জন্য নয়, উন্মাদ জল্লাদদের জন্যও নয়।

শুধু আগামী শতাব্দীর দিকে ছুঁড়ে দেওয়া এই সামান্য দীর্ঘশ্বাস

মানুষকে ভালােবাসা ছাড়া মানুষের আর কোনাে ধর্মই থাকবে না

তখন, তাই না?

কাব্যগ্রন্থ

' রাত্রির রঁদেভু '


মহাধার্মিক

-জামাল আনসারী


আদা,রসুন আর পেঁয়াজ খেলে

তুমি অধার্মিক,জগতের মহাপাপী!

নরকেও তোমার হবে না ঠাঁই!

গরুর গু আর মুত সে যে  উৎকৃষ্ট খাদ্য !

খাও, আরো খাও হে মহাধার্মিক!

স্বর্গে হবে তোমার অনন্ত ঠাঁই।


এ দেশ, ধার্মিক শ্রেষ্ঠ দেশ ―

কোনটা ধর্ম আর কোনটা অধর্ম

এখানে বিচার করে বলা বড় দায়.

রসুন খাওয়া পাপ, ঘুষ খাওয়া তো নয়!

নেতা, মন্ত্রী  থেকে আমলা - গামলা

কে আর সাধু ! কম বেশি সবাই ঘুষ খাই।



দলিত, অস্পৃশ্য বলে যাদের নেই অধিকার,

ধর্ম থেকে, কর্ম থেকে সমাজ থেকে তারে

যুগ যুগ ধরে নির্মম ভাবে করে যাও বহিষ্কার!

ধর্মের কি মহিমা! মানুষ বলে তারে করেনি স্বীকার,

তারা অস্পৃশ্য! কিন্তু ধর্ম মতে তাদের দেহ অস্পৃশ্য নয়।

তাই তুমি মহাধার্মিক!  সুযোগের করো সৎ ব্যবহার।

কবিতাগুচ্ছ ৯ -
কবিরা
Nov. 19, 2024 | কবিতা | views:885 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বিদ্রোহের দিন

-ঋতম সানা


বাতাসে ভাসছে আজ দেখি মুক্তির সুবাস

ভেঙে সকল বিভেদের শেকল, উঠছে গড়ে মানববন্ধন

জীবনের পঙক্তি যারা লিখবে নতুন করে

ছুয়েও যেতে পারে রামধনু আকা ঐ মুক্ত গগণ


যেই শোষকের শেষকথা ওদের নিকট ভাগ্যের পরিহাস

শুরু থেকে শেষ তাদেরই কব্জায় যখন বদ্ধ জীবন

মৌনতার ব্রত ভেঙে আজকে দেখি নিদ্রাহীন সব চোখ

প্রতিবাদের উন্মাদ সুরে নেচে উঠেছে দেখি সকল মন কেমন


আজ দূর থেকে দেখি পরিবর্তনের পদধ্বনী

একত্রিত সকল অস্তিত্বের নতুন করে লড়াইয়ে নামা

মিছিল স্লোগান প্রতিরোধের আহবান চারিপাশে

রণহুংকারী ঐ লাল চোখ, ভাঙা চোয়াল, শীর্ণ কলেবর, কীভাবে দিচ্ছে হানা

মানবে না বাধা, হাটাও সকল মন ভোলানো কথা

জ্বেলে স্পর্ধার মশাল, ছিড়ে গোলামির দড়ি

এগিয়ে আসে সংকল্প, ফেলে সকল বাহানা


রোজ রোজ দেখি ভাঙছে জীর্ণ সংস্কার

দুর্লভ রুটি অন্নও আজ দু’হাতে মেটাচ্ছে আহার

আজ চকিত ঐ সিংহাসন, ছিন্নভিন্ন রাজশাসন

কোথায় বড়বাবুদের সাহসী ভাষণ

আজ গুটিয়েছে পাত্তারি শোষনের কারবার



আজ নাকি বিদ্রোহের দিন, চলছে মহোতসব ক্লান্তিবিহীন

সকল ব্যর্থতা ভুলে এই সমাজের প্রকৃত মানে, আজ নতুন ছন্দে আসীন

জড়োসড়ো প্রথা, মিথ্যা রীতিনীতি ভুলে সকল নবীন

আজ মেটাবে বঞ্চিত সকল জঠরের ঋণ


চলে যাবো দেখে শেষ পরিণতি, এই শেষ রজনীর

শুনি বিদ্রোহীদের মহাভাষ্য, দেখি বিকৃত সভ্যতা ধ্বংসের কাহিনী

আমি দেখি এবার বদলের ইতিহাসে,

উঠবে নতুন ভোরের শপথে রাঙা সূর্য আগামীর



তখন প্রতিটা দিন শিশুদিবস প্রতিটা অসহায় শিশুর জন্য

ক্ষুধা, অস্বাস্থ্য, অশিক্ষা, দারিদ্রের মহামারী মুক্ত

সকল মাতৃক্রোড় হতে তখন, এক নতুন সভ্যতা নেবে জন্ম



দধীচির ন্যায় যে গরিবগুলোর জ্বলেছিল হাড়

আজ এই নতুন সমাজের শেকড়ে সাড়, ওদেরই ছাইভস্ম

শোনা যাবে শব্দ সকল ক্ষমতাধারীর আত্মসমর্পণ অতন্দ্র,

ঝোকাবে মাথা এদের সামনেই এই বিছিন্ন বিশ্বসমগ্র

আড়ি


-প্রদীপ চক্রবর্তী



কৃষকের লাঙ্গল-কাস্তে,

শ্রমিকের হাতুড়ি।

রাজমিস্তিরির হাতের কলায়

গড়ে ওঠে ঘরবাড়ি।



আমরা বসে মৌজ করি,

পাওনা গন্ডার হিসাব।

সভ্যতার মুখে ছড়াই,

অসভ্যতার তেজাব।



ওরা কাজ করে নগর প্রান্তরে,

আমরা খাচ্ছি মাখন,

চুনকালির দাগ তুলব বলে

মুখে ঘষছি বেসন।



সর্বহারা ঘোরায় চাকা,

আমরা চড়ি গাড়ি।

ভগবানের দোহাই দিয়ে

যুক্তির সঙ্গে আড়ি।

কবিতাগুচ্ছ ৮ -
কবিরা
Nov. 18, 2024 | কবিতা | views:485 | likes:0 | share: 0 | comments:0

দেরি

-প্রদীপ চক্রবর্তী


দুনিয়া চলে নিয়ম মেনেই

ভাগ্যের স্থান নেই,

নিজের উপর বিশ্বাস হারালে

ভয় চেপে বসবেই।


মানবধর্ম সেখায় যে প্রেম

তুমি-আমি একাকার,

যুক্তিবাদীরাই আসল ধার্মিক

দূর করে অনাচার।


আমরা সবাই হোমো স্যাপিয়েনস

রক্তের রং লাল,

আজকেই শোধরাও; করেছ যে ভুল

দেরি হয়ে যাবে কাল।


দুর্গা-কোরান

-অমিতাভ ভট্টাচার্য


একটা পুতুল একটা আরবি বই

ঠেকলে পরে কী ভীষণ হৈ চৈ!

রোজের জীবন এমনিতে জেরবার

"ধর্মতে হাত দিও না খবরদার ।"

পেট না ভরুক ধর্মরক্ষা হোক,

খরচা হবে খুচরো কিছু লোক ।

লাশের আবার জাতের বিচার চাই,

কে দুশমন কোনটা আমার ভাই?


একটা পুতুল একটা আরবি বই

ঠেকলে পরে কী ভীষণ হৈ চৈ!


রক্তখাকি ধর্মরা সব নাচে

ওপার তোমার, এপার আমার আছে ।

সীমান্ততে কঠিন কাঁটাতারে

ঘেন্নাকে কি ঠেকিয়ে রাখতে পারে?

দুগ্গি ঠাকুর এবং আল্লা মিঞা--

কোনটা ক্রিয়া কোনটা প্রতিক্রিয়া?

আসুন, এবার সূক্ষ্মবিচার হোক

খরচা হলো খুচরো কিছু লোক ।


একটা পুতুল একটা আরবি বই

ঠেকলে পরে কী ভীষণ হৈ চৈ!



এই যে তুমি মস্ত মুমিন, মুসলমানের ছেলে

-আখতারুজ্জামান আজাদ


"এই যে তুমি মস্ত মুমিন, মুসলমানের ছেলে;

বক্ষ ভাসাও, ফিলিস্তিনে খুনের খবর পেলে।

রোহিঙ্গাদের দুঃখে তুমি এমন কাঁদা কাঁদো;

ভাসাও পুরো আকাশ-পাতাল, ভাসাও তুমি চাঁদও!

অশ্রু তোমার তৈরি থাকে— স্বচ্ছ এবং তাজা;

হ্যাশের পরে লিখছ তুমি— বাঁচাও, বাঁচাও গাজা।

কোথায় থাকে অশ্রু তোমার— শুধোই নরম স্বরে,

তোমার-আমার বাংলাদেশে হিন্দু যখন মরে?

মালেক-খালেক মরলে পরে শক্ত তোমার চোয়াল;

যখন মরে নরেশ-পরেশ, শূন্য তোমার ওয়াল!

তখন তোমার ওয়ালজুড়ে পুষ্প এবং পাখি,

কেমন করে পারছ এমন— প্রশ্ন গেলাম রাখি।

তোমরা যারা দত্ত-কুমার, মৎস্য ঢাকো শাকে;

কবির লেখা পক্ষে গেলেই ভজন করো তাকে।

মুসলমানের নিন্দে করে লিখলে কোথাও কিছু;

তালির পরে দিচ্ছ তালি, নিচ্ছ কবির পিছু।

কিন্তু তোমার অশ্রু, আহা, কেবল তখন ঝরে;

বাংলাদেশের কোথাও কেবল হিন্দু যখন মরে!

পুড়লে তোমার মামার বাড়ি, জীবন গেলে কাকুর;

তখন তোমার কান্না শুনি— রক্ষে করো, ঠাকুর!

কালীর ডেরায় লাগলে আগুন তখন কেবল ডাকো,

রহিম-করিম মরলে তখন কোথায় তুমি থাকো?

বাংলাদেশে সুশীল তুমি, ভারতজুড়ে যম;

মুসলমানের মূল্য তখন গরুর চেয়ে কম!

বাংলাদেশের কস্তা-গোমেজ— যিশুর দলের লোক;

বোমায় ওড়ে গির্জা যখন, তখন কেবল শোক।

বস্তাভরা শোকের রঙে কস্তা তখন রাঙে,

যিশুর নামে মারলে মানুষ নিদ্রা কি আর ভাঙে!

মরণ হলে মুসলমানের, হয় না কাঁদার ইশু;

গভীর ঘুমে থাকেন তখন বাংলাদেশের যিশু!

খেলার ওপর চলছে খেলা— টমের সাথে জেরি;

বঙ্গদেশের সন্তানেরা এমন কেন, মেরি?

তোমরা যারা কস্তা-গোমেজ কিংবা রোজারিও;

মুখের ওপর মুখোশ খুলে জবাব এবার দিয়ো।

রোহিঙ্গাদের রক্তে যখন বার্মা মরণ-কূপ;

বাংলাদেশের বৌদ্ধ যারা, মড়ার মতোন চুপ!

ভিক্ষু যখন বলছে হেঁকে— রোহিঙ্গাদের কাটো;

তখন কেন, হে বড়ুয়া, ওষ্ঠে কুলুপ আঁটো?

এমন করেই মরছে মানুষ ধর্ম নামের ছলে;

বাংলাদেশের বৌদ্ধ কাঁদে, বুদ্ধ যখন জ্বলে।

যখন জ্বলে বৌদ্ধবিহার, যখন রামুর পাহাড়;

সব বড়ুয়ার জবানজুড়ে শান্তিবাণীর বাহার!

শান্তিবাণীর এমন বাহার তখন কোথায় থাকে,

রোহিঙ্গারা যখন মরে নাফের জলের বাঁকে?

পাগড়ি দেখি, পৈতা দেখি, আকাশজুড়ে ফানুশ;

চতুর্দিকে চতুষ্পদী, হচ্ছি কজন মানুষ!

জগৎজুড়ে সৈয়দ কত, কত্ত গোমেজ-বসু;

খতম কজন করতে পারি মনের মাঝের পশু!

মরণখেলায় হারছে কে বা, জিতছে আবার কে রে;

মরছে মানুষ, দিনের শেষে যাচ্ছে মানুষ হেরে।

হারার-জেতার কষতে হিশেব মগজ খানিক লাগে,

একটুখানি মানুষ হোয়ো কফিন হওয়ার আগে।

রক্তখেলা অনেক হলো, সময় এবার থামার;

বিভেদ ভুলে বলুক সবে— সকল মানুষ আমার।

বন্ধ ঘরের দরজা ভাঙো, অন্ধ দু-চোখ খোলো;

মরছে কেন আমার মানুষ— আওয়াজ এবার তোলো।"




জ্যোতিষ শাস্ত্র ও দেশসেবা

-নির্মল

[দুই বন্ধু, একজন আরেকজনকে দেখে ডাকছে]


১ম বন্ধু :এই বন্ধু শোননা শোন শোন,

কি হলো, পালাস কেন!

আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?


২য় বন্ধু :তুই বড্ড পিছনে লাগিস,

অবান্তর প্রশ্ন করা তোর অসুখ।


১ম বন্ধু : যাব্বাবা! প্রশ্ন ছাড়া নতুন কিছু জানা যায় নাকি!

বিনা প্রশ্নে অন্ধের মতো মেনে নিলে,

জীবনটা তো হয়ে যাবে ফাঁকি।


২য় বন্ধু :এটাই তো তোর দোষ।

ছাড় ধুর!

শুনিস নি শাস্ত্রে বলা আছে,

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।

সেই বিশ্বাসী তোর নাই।


১ম বন্ধু : তুই ঠিক বলেছিস ভাই,

অন্ধবিশ্বাস কিছুই আমার নাই।

শোননা,  আজ নতুন কথা বলব।

প্রমিস করছি, পিছনে লাগবোনা তোর।


২য় বন্ধু : মনে থাকে যেন, করছিস প্রমিস।


১ম বন্ধু: একদম, আয় না একটু গল্প করি,

তোর জন্য একটা ভালো কথা আছে।

তোর সাথে দেখা হল ভাগ্যিস।


২য় : আমার জন্য ভালো কথা!

চল ওই গাছ তলাতেই বসি।


১ম: চল তাই চল।


[দুই বন্ধু গাছ তলাতে গিয়ে বসলো]


২য়: বল এবার কী বলবি বল?


১ ম: আমি এতদিন জ্যোতিষ নিয়ে তর্ক করে,

করেছি ভুল খুব

তুই আসলে সঠিক ছিলি,

আমিই বেয়াকুব।


তুই কি জানিস, বিজ্ঞান ইতিহাস ভূগোলের মত

জ্যোতিষশাস্ত্রও  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হবে ;

জ্যোতিষ যদি ভুলিই হতো

সরকার কি এমন সিদ্ধান্ত নেয় তবে!


২য় : আবার তুই ঠাট্টা করছিস!

হেঁ হেঁ,

জ্যোতিষ শাস্ত্র সিলেবাসে -

ইম্পসিবল!


১ম : বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা,

পেপারে দিয়েছে দেখ তবে;

এইবার থেকে ইগনু বিশ্ববিদ্যালয়ে

জ্যোতিষ নিয়ে বছর দুয়ের

মাস্টার ডিগ্রি করা যাবে।


২য় : বলিস কি !

দেখি দেখি,

এমন হয় নাকি !

সে কি!


১ ম: এমনি হয়েছে বন্ধু আমার।


২য় : তাহলে,

খুব তো জ্ঞান মারতি আমায়,

আদিম  কুসংস্কার।

স্বার্থপর মানুষ ব্যবসা

সব জ্যোতিসি ভন্ড বলে,

বল বল এবার।


১ম : বললাম তো,

অন্যায় হয়েছে সরি

দেখ না!

কান ধরেছি দেখ,


২য় : থাক আর অভিনয় করতে হবে না,

তোর বিশ্বাস ফিরেছে,

এটাই অনেক।


বল তাহলে এরপর?


১ম : মাথায় একটা প্ল্যান আছে জব্বর।


দেখ তুই আর আমি ছাত্র ভালো।

ডিগ্রি কি আছে কম!?

ভাগ্য খারাপ, তাই বেকার বসে

চেষ্টা চলছে হরদম।


চল বন্ধু,

এবার জ্যোতিষ পড়ি,

ভাগ্য যাবে বদলে।

দেশে সেবার এই তো সুযোগ

হারাবি পায়ে ঠেললে।


২য় : অ্যাঁ! কি বলছিস যা্তা!

দেশসেবার সঙ্গে জ্যোতিষ, কি সম্পর্ক?

গেছে নাকি তোর মাথা।


১ম: আরে পাগল, আমার মাথা ঠিকই আছে।

একটু ভাবনা চিন্তা কর।

জ্যোতিষ পড়াচ্ছে কি এমনি এমনি,

সরকারের কোন দরকার!


দু'বছর পর দেখবি, কর্মক্ষেত্রে বড় বড় বিজ্ঞাপন -

অমুক বিভাগে মাস্টার ডিগ্রি জ্যোতিষ চাই।

এসসি ৩০, এসটি ১০, জেনারেল ৫০

মোট নব্বই জন।


সচিবপদ বিলুপ্ত হবে।

জ্যোতিষ হবে পরামর্শদাতা।

আরে পৌরাণিক যুগে যেমন হত।

জ্যোতিষীই শেষ কথা।


২য় : বন্ধু তোর অনেক ট্যালেন্ট,

আমি তাতো জানি।

কিন্তু,

জ্যোতিষশাস্ত্র পড়ার আগেই,

শুরু করে দিলি ভবিষ্যৎবাণী!


১ম : হ্যাঁ, তুইও শুরু কর প্র্যাকটিস।


২য় : আমায় ছাড়,

তুইই জ্যোতিষের চাকরি নিস।


১ম: সে তো নেবই,

তলার পর তলা হাঁকিয়ে বাড়ি বানাবো।

ইনকাম ট্যাক্সহীন কোটি কোটি টাকা কামাবো।

আর, বিদেশী সব গাড়ি তো আছেই,

নেতা মন্ত্রী পুলিশ উকিল সব পকেটে পুরে,

সারা জীবন কাটাব মহা রঙ্গে।

চিন্তা নেই প্রিয় বন্ধু।

প্রমিস করছি,

তোকেও নেব সঙ্গে।


২য় : ছাড়, ওসব ছ্যাবলামি ছাড়!

আসলে গল্পটা তোর খারাপ লাগছে না,

ওটাই শুধু বলনা ভালবেসে।

জ্যোতিষের সঙ্গে দেশসেবা

কোনখানেতে মেশে।


১ম : দেশসেবা!

শোন তবে,


জ্যোতিষের কিছু সাধারন ক্ষমতায় আসি।

ভুল যদি কিছু বলি

তবে তোকেই,

ধরিয়ে দিতে হবে।


২য় : ঠিক আছে বল তবে।


১ম : জ্যোতিষী তো আয়ু বলতে পারে

হাত দেখে বা কুষ্টি বিচার করে।


২য় : তাতো পারেই।


১ম: আবার দুর্ঘটনা বা মৃত্যুযোগও

কাটিয়ে দেওয়া যায়।

পাথর শেকর বেঁধে,

আঙুল, বাহু, মাজায়।


২য় : হ্যাঁ, তাও হয়।


১ম: আবার দেখি  বিজ্ঞাপনে,

জ্যোতিষীরা সিদ্ধহস্ত শত্রু দমনে।

বানমারা বিদ্যারও জ্ঞান রয়েছে,

পটু সব বশীকরণে।


২য় : এসব তো পারেই,

আসল কথায় আয় না -


১ম : বলতো প্রতিবছর আমার দেশে,

শহীদ হয় কত বীর সেনা।

কত মা সন্তান হারায়,

কত নারী স্বামী,

কত সন্তান পিতৃহারা হয়,

যারা আমাদের রক্ষা করে ;

তাদের জীবনটা এত কমদামী!

এদের জীবন রক্ষা করতে চাই,

জ্যোতিষের ক্ষমতা দিয়ে।

সরকারেরও হয়তো সেই ইচ্ছে

উন্নত জ্যোতিষী তৈরি করবে,

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে।


২য় : মানে কি?


১ম : মানে অতি সহজ কথা,

প্রথমত, সেনা রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে

থাকবে জ্যোতিষী পরামর্শদাতা।

হাত দেখে বা বিচার করে কুষ্টি

আয়ু তার কতদূর আছে দেখে,

তবেই নিযুক্ত করা হবে;

যদি জ্যোতিষীর হয় সন্তুষ্টি।

আয়ু যাদের কম আছে,

তারা প্রথমেই হবে রিজেক্ট,

মৃত্যুহার এমনিতেই কমবে,

রিক্রুটমেন্ট হবে পারফেক্ট।


২য় : কথায় তোর যুক্তি আছে,

বলে যা তারপর।


১ম : তারপর ধর যাদের আছে,

দুর্ঘটনা বা মৃত্যুযোগ,

অথবা যাদের উপর শনির দৃষ্টি,

ঘাড়ে চেপে রাহু কেতুর গুষ্টি,

তাদের ধরে -

নীলা গোমেদ ক্যাটসাই গুঁজে দেবে।

ব্যাস খেল খতম,

সবাই দুর্ঘটনা বা মৃত্যুযোগ থেকে রক্ষা পাবে।

শনি রাহু সব নিপাত যাবে,

শত্রু ছোড়া গুলি বোমা,

তখন অকেজো হবে।

বড়জোর থার্টি ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে,

কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবে।


২য় : বাবা!

এরপরও কি আছে কোন প্ল্যান?


১ম: আর, শত্রু দমনের স্পেশালিষ্টদের,

বসিয়ে দেওয়া হবে বর্ডারের ধারে।

শত্রু সব বিনাশ করবে,

আধুনিক সব বাণ মেরে।

আর আনাচে-কানাচে যত আছে সব জঙ্গী,

যত আছে তাদের সঙ্গী,

এমন বশীকরণে বশ হবে সব যাতে;

ফ্রেন্ডশিপডে তে গোলাপ দেয় সব,

জনতার হাতে হাতে।


২য় :বন্ধু,

লজিক তোর পারফেক্ট আছে,

যতই করিস না ব্যাঙ্গার্থ।

জ্যোতিষের যখন এতই ক্ষমতা,

তখন এইসব তাদের পারা উচিত,

যাতে বাঁচবে জীবন, বাঁচবে দেশের অর্থ।


ধন্যবাদ বন্ধু,

এতদিন সত্যিই ছিলাম অন্ধ।

তোর লজিকেই কেটে গেল,

মনের সব দ্বন্দ্ব।

সত্যি, শিক্ষিত হলেই হয়না শুধু,

চাই যুক্তিবাদী মন,

যুক্তি দিয়ে বিচার করে

তবেই,

সত্যি-মিথ্যা করতে হয় গ্রহণ।

বুঝেছি এবার জ্যোতিষ শিক্ষা,

কেন চালু হল,

কি আসলে ওদের তাল,

দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে,

দেশটাকে লুটে পুটে খেয়ে,

পিছিয়ে  দেবার চাল।


১ম : ধন্যবাদ তোকেও বন্ধু,

তুই এত সহজেই গ্রহণ করেছিস সত্যযুক্তি।

সমাজটাকে এগোতে চাই,

এই সমস্ত কুসংস্কার থেকে মুক্তি।

চল আজ ওঠা যাক তবে,


[হাতের আংটিগুলো খুলে বন্ধুর কাছে এগিয়ে দিয়ে]

২য় : সে নয় হল,

কিন্তু, এই সোনা বাঁধানো লালনীল পাথরগুলোর কি হবে,

এই বাঁধন গুলো বিক্রি করে চল,

কার্শিয়াং ঘুরতে যাই।

মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেব,

কুসংস্কারকে করে বাই বাই।

আইডিয়াটা কেমন বল ,

কি বলতে চাস?


১ম : চল তবে,

ডাকছে আকাশ ডাকছে বাতাস,

মুক্ত বাতাসে নেবই শ্বাস।

কবিতাগুচ্ছ ৭ -
কবিরা
Nov. 18, 2024 | কবিতা | views:124 | likes:0 | share: 0 | comments:0

অজ্ঞের রাজ

-প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল


কিছু মানুষ আজো বড়ো বেইমান,

হিংসা দ্বন্দ্বে প্রায় সকলেই সমান।


ধর্মের ধ্বজা করে যারা বহন,

তাদের‌ সবার হয় কলুষিত মন।


ধর্মের বিরোধিতায় মানুষ ব্যাজার,

সমাজটা তাই আজ  হলো ছারখার।


ধর্মের ধোঁয়ায় অন্ধকারে এই দেশ,

বক ধার্মিকরা করছে শুধু আয়েশ।


সত্যের গলায় পড়েছে দড়ির ফাঁস,

সত্যের তাই আজ হয়েছে বনবাস।


দেশে অন্ধ ভক্তের  ভীষণ ত্রাস,

মানবতা তাই এখন হচ্ছে হ্রাস।


অন্ধ বিশ্বাস মোদের মানতেই হবে,

সত্য বললে আজ জীবন নাহি রবে।


কবির কলম থেমে গেছে তাই,

অকারণে কে জেলে যেতে চাই।


অন্ধের কুশাসনে  অন্ধের এই দেশ,

অন্ধ ভক্তর ধরে শুধু সাধুর  বেস।


ধার্মিক ভণ্ড লাঠি হাতে খাড়া,

কুসংস্কার প্রচার করে তারা।


প্রতিবাদের ভাষা কণ্ঠেই যে রয়,

কলম ধরতে লাগে বড়ো ভয়।


অন্ধের দেশে শুধু ধর্মের বিকাশ,

এটাই হবে আগামীর ইতিহাস।


মহা অজ্ঞ যুক্তি যে মানে না,

অজ্ঞ কে দেখলেই যাবে চেনা।


অন্ধ পণ্ডিত অনেক আছে দেশে,

তারা রয় অন্ধ কে ভালো বেসে।


নির্বোধেরা মহাসুখে অন্ধের স্বর্গে,

যুক্তি প্রিয় না মরেও রয়  মর্গে।


সমাজ পতি সমাজের ঠিকাদার,

ধর্মানুভূতিতে ছাড়ে  হুংকার।


ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্ব আমি নাহি চাই?

দলিতরা পাক মানুষের বুকে ঠাঁই।


সকল ধর্মে যদি শান্তি খুব রয়,

ধর্ম নিয়ে লড়াই  কেন তবে হয়?


সৃষ্টির সেরা জীব পৃথিবীর মানুষ,

আজো তারা হয়ে আছে বেহুঁশ।


সকল কর্মের মাঝেই ধর্ম খুঁজি,

কর্ম‌ হয় যে সকল ধর্মের পুঁজি। 


শিক্ষক-বন্দনা

-শ্রেষ্ঠী দে

শিক্ষক মানে আলোর দিশারী,

জীবনের পথপ্রদর্শক।

শিক্ষার মহাসাগরে তিনি,

জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্জ্বলক।

শিক্ষক জাগান রুক্ষ পাহাড়ে,

সবুজ প্রাণের সাড়া।

তাঁরই স্পর্শে চূর্ণ হয়,

অজ্ঞানতার বদ্ধ কারা।

শিক্ষক মানে ধূসর মরুতেও ----

অমৃতের সন্ধান,

তাঁরই আশ্রয়ে বাঁচে অবহেলিত -

হাজারও কোমল প্রাণ।

শিক্ষক হলেন নৈতিকতা-আদর্শের

সমাহার,

তিনিই পার্থিব জগতে আজও

পরম জ্ঞানের আধার।

শিক্ষক মানে জীবনের পথে

সকল সমস্যার সমাধান,

আনেন জীর্ণ নদীর বুকেও

মিষ্টি মধুর কলতান।

শিক্ষক হলেন আলোর পথের

সত্য নির্ভীক যাত্রী,

তাঁরই নির্দেশিত জীবনাদর্শে চলেছে

সহস্র ছাত্রছাত্রী।

শিক্ষক মানে শ্রদ্ধার পাত্র

শিক্ষার অতি সুজন,

ভালোবাসার আবরণে করেছেন

উকিল-ডাক্তার সৃজন।

জন্ম থেকে মায়ের কাছে

শুরু শিশুর শিক্ষা,

জীবনে চলার পথে শিক্ষক দিলেন

সততার ব্রতে দীক্ষা।



সংক্রমণের কড়চা

-সাবিত্রী দাস

সকল বিপদ  করতে কাটান হাঁকেন তারা নিদান,

কবচ তাবিজ হোম-যজ্ঞের হরেক বিধি-বিধান।


বাক্ -সিদ্ধ,দিক-সিদ্ধ, সু-সিদ্ধের শঙ্কা,

ডুবলো এবার তরী নাকি বাজলো মৃত্যু-ডঙ্কা!


দিন ফুরিয়ে সিঁধেল আঁধার এবার বুঝি নামে,

নীরবতার ঢল নেমেছে গৌরবময় ধামে।


সত্যি নাকি অস্তাচলে সিদ্ধ রবি-শশী!

সেবা-যজ্ঞের দিব্যারতি, বচন এখন বাসি।


বিশ্বজোড়া মৃত্যু-মিছিল কাঁপছে জীবন-ছন্দ,

তাহলে কী সংক্রমণে ব্যবসা এবার বন্ধ!


অষ্টোত্তর শতনামের হরেক কিসিম বাবা,

জননীরাও কম যান না বেড়াল বগল দাবা!


আস্থা তবে শেষ হলো কী, চলছে গজব আড্ডায়।

পঞ্জিকাদির অর্থনীতি সংক্রমণের গাড্ডায়!


বাকসিদ্ধা  জননীদের কণ্ঠ এখন রুদ্ধ,

লক-ডাউনে তারাও নাকি বেজায় আছেন ক্রুদ্ধ।


যেতে যেতেও যায় নারে ভাই  এমন ইমপ্রেশন!

অতিমারির জাস্টিফাই এর দারুণ এক্সপ্রেশন!


পুরুষ্টু ঐ শিখার বাহার গায়ের নামাবলী

বিংশোত্তরী মতে এখন পাড়ছে তারা গালি।


কোন তরীতে মিলবে এখন কে কোন মোহনায়,

সংক্রমণেও  বিশ্বায়নের আকাশ ছুঁয়ে যায়।


নিতে হবে সাম্যের পাঠ

-প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল


দাম বাড়াতে ধর্ম গ্রন্থ

রাখো সবাই ঘরে;

দামী জীবন রক্ষা করো

বিজ্ঞানের বই পড়ে।


ধর্ম গ্রন্থে ডুবে থেকে

বড়ো হলো কেবা?

বিজ্ঞান পড়ে ডাক্তার হয়ে

জীবের করো সেবা।


ধর্ম গ্রন্থে ভেদাভেদি

লিখে নিজের মতো;

দ্বন্দ্ব সদাই লাগেই থাকে

হিংসা অবিরত।


বিজ্ঞান শেখায় সাম্যের নীতি

সব মানুষই সমান;

ভিন্ন জাতের এক‌ই রক্ত

বিজ্ঞান করলো প্রমান।


ধর্ম গ্রন্থ পড়ে মানুষ

যদি ভদ্র হতো;

ধর্মের নামে খুনোখুনি

এতো নাহি হতো।


ছোটো থেকে শিশুর মনে

জাগাও বিজ্ঞান কথা;

জীবন যুদ্ধে জয়ী হবে

কমবে মনের ব্যথা।


অন্ধ জনে ধর্ম গ্রন্থে

ডুবে সদা থাকে;

নিজের মতো ধর্মের বাণী

শুনায় যাকে তাকে।


মনে রেখো বিজ্ঞান পড়লে

সভ্য হয়ে যাবে;

সবার মাঝে থাকবে তুমি

পরম আদর পাবে।






















কত বিলাসিতার অভাব।

-ঋতম সাহা

ধর্ম হোক বা বিজ্ঞানের নাম, হোক কুসংস্কারের দাপট বা প্রযুক্তির খাম,

একলা মানুষ হোক বা গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র, বাড়িয়েছে বারবার প্রকৃতির অভিমান,


করে ধ্বংশ, প্রকৃতি একাংশ, মেতেছে মানুষ একপ্রকার নিজেরই হত্যালীলায়,

এভাবেই চললে সংকটে ভবিষ্যত, জানিনা কীভাবে থাকবে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায়।


এই সৃষ্টির সৌন্দর্য্যের অনেক তত্ত্ব, আদি থেকে অভিনবত্ব,

কেও বিশ্বাসী যুক্তি তর্কে বিজ্ঞানী পন্থায়,

কারো মতে মানব সৃষ্টি নাকি আডাম ইভের ভালোবাসায়।

নানা মানুষের নানা মত, নানা বিশ্বাসের নানা পথ।


কোনোটা মিথ্যা, কোনোটা সত্য,

কোনোটা আগামী কোনোটা অতীত বৃত্তান্ত,

পরিবেশের সুস্থতাই শেষকথা এখন, নয়তো আগামীর অপেক্ষায় ভয়ংকর ভবিতব্য।


প্রকৃতির যে সকল সম্পদ দূষিত আজ,

আনতে হবে সেই  ক্ষতিপূরনের নতুন পথ,

হবে দূর প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে কলুষতার ভাঁজ,

সকলের সামনে এখন আগামীর নতুন শপথ।


আমাদের অভ্যাসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, বন্য জীব বা পতঙ্গ ক্ষুদ্য,

করতে হবে সুরক্ষিত তাদের অস্তিত্ব,

সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের কারিগর আমরা সকলে,

প্রত্যেকের জীবনের রয়েছে প্রকৃতির সমান গুরুত্ব।


ফেরাতে হবে ধোঁয়াশা মুক্ত আকাশে শুদ্ধ সমীরন, ফেরাতে হবে বর্জ্যমুক্ত স্নিগ্ধ শীতল নদীর জল,

ফেরাতে হবে দূষনমুক্ত শস্য শ্যামলা উর্বর ভূতল, ফেরাতে হবে মহীরূহে ঘেরা সবুজ সম্বল।

যুব সমাজ

-জামাল আনসারী


একবিংশ শতাব্দীর যুব সমাজ মেরুদণ্ডহীন,দুর্বল,

প্রতিবাদহীনতায়,ভেঙেছে তাদের যুগ যুগান্তরের সঞ্চিত মনোবল।

সাম্প্রদায়িক  বিষবাষ্পে,পৃথিবী  দিশাহারা,

দ্রুত থেকে দ্রুততম বেগে ধাবিত,

হিংসার লেলিহান শিখা।

বিশ্বের কেউই আজ আর সুরক্ষিত নয়,

ক্রমবর্ধমান বাক্ স্বাধীনতার কণ্ঠরোধে__

সবাই  ভীত, সন্ত্রস্ত,

ঘোষিত মানবতাবাদীরাও বর্তমানে বাক্ হারা।

প্রাণ চঞ্চল যুব সমাজ তবে কি নীরব দর্শক?

না, তা হয়তো নয়..

বহু দলে আজ তারা ছন্নছাড়া।


পৃথিবীর কোনায় কোনায় দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে

পৌঁছে গেছে উগ্রবাদের রণংদেহি হুংকার।

দৈনিক খবরের কাগজে,টিভির পর্দায়,

এখন চোখ রাখলেই শোনা যায়,

অসহায় মানুষের গগনস্পর্শী বুকফাটা  করুণ আর্তনাদ।


ধর্মের জন্য, কল্পিত প্যুণ্যফলের আশায়,

কত প্রানচঞ্চল, তরুণ তরুণী,

না বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়ে,

ধর্মের ষাঁড়েদের পাতা  ফাঁদে।

হাজার হাজার কুকর্ম করেও

তারা স্বর্গে যাওয়ার জন্য অঝোরে কাঁদে।

হায় রে দেশের যুব সমাজ!

অসীম নীল মত্ততার টানে,বিকৃতরুচির  উত্থানে,

ক্রমশ অবক্ষয়িত  যুব সমাজ।

যারা গোটা পৃথিবীকে উল্টে পাল্টে,

দেওয়ার অসীম ক্ষমতা রাখে,

তারা কেন আজ ভয়ে কাঁপে?

এই যুব সমাজের দুর্দশা  দেখে,

বসুন্ধরাও  আজ নীরবে কাঁদে।


এ যুব সসমাজের ঘুম ভাঙবে  আর কবে?

তারা খুলে ফেলবে কবে নিজের চোখের ঠুলি?

অদৃশ্য বিভেদের মায়াজাল  ছিন্ন করে,

মানুষের সাথে মানুষের হবে কি কোলাকুলি?

এ ধরাতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই শ্রেষ্ঠ নয়,

আমরা সবাই মানুষ....

এটাই হোক আমাদের একমাত্র পরিচয়।












লকডাউন -৮

-জামাল আনসারী

করোনা এসে মানুষে মানুষে বাড়িয়ে দিল অবিশ্বাস,

মানবিকতা যতটুকু বেঁচে ছিল, সেটারও হবে বিনাশ।


মানুষের বিপদ হলে, মানুষ সাহায্যের জন্য যেত ছুটে,

প্রতিবেশীর দুঃচিন্তায়, অনেকের রাতের ঘুম যেত টুটে।


সেই সব সুখের দিন আর নেই। সব কিছু হয়েছে অতীত।

ভবিষ্যতে ধংসের দোরগোড়ায় মানুষ হয়েছে  উপনীত।


দয়া, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, বিশ্ব থেকে নিচ্ছে বিদায়।

পিতা মাতার করোনা, নিজের সন্তান এড়িয়ে যাচ্ছে  দায়।


এতো সুন্দর পৃথিবীটা ভর্তি হচ্ছে স্বার্থপর আর স্বার্থপরে।

করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ― পড়ে থাকছে অন্ধকার ঘরে।


যে সন্তানকে কুড়ি বছর ধরে লালন পালন করে মাতা,

সেই সন্তান অকৃতজ্ঞ, যে দায়িত্ব পালনে ধরে না ছাতা।


ধীরে ধীরে লুপ্ত হচ্ছে মানবিকতার প্রশস্ত ডাল- পালা,

যারা ফুটপাটবাসী,যাদের  মাথা গোঁজারও নাই  চালা।


লকডাউনে ওরা কেমন আছে? খোঁজ নিচ্ছে না কেউ,

আবার শুনছি আসতে চলেছে, করোনার তৃতীয় ঢেউ।

কত মানুষ না খেয়ে মরছে দেশে? সঠিক হিসাব তার নাই,

করোনার মরছে কত? মিনিটে মিনিটে তার হিসাব পাই।


করোনায় মরুক আর না খেয়ে মরুক, দুটো মৃত্যুই সমান,

সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে, কমবেই  মৃত্যুর ব্যবধান।

কবিতাগুচ্ছ ৬ -
কবিরা
Nov. 18, 2024 | কবিতা | views:885 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বিধর্মীর ধর্মকথা

-ঋতম সাহা


অবিশ্বাসী আমি সেই সকল কাল্পনিক চরিত্রের প্রতি,

করে নত মাথা যাদের পদতলে মানুষ ব্যস্ত জীবনের প্রতিটি নিশ্বাসে।

মিথ্যা বিশ্বাসের বিভেদে, মানুষের বানানো ধর্মের ভীড়ে,

মিথ্যা নিয়মের নীচে পড়ে চাপা যুক্তিতর্কের অস্তিত্ব, অদূরেই।


সংস্কারের আদর্শ যেখানে হয় বিক্রিত ধর্মের বাজারে,

সেখানেও পায়নি খুঁজে ঈশ্বরকে কোনোদিন, তার পথ চেয়ে থাকা আর্তের হাহাকারে।


অনেকে রাখে তুষ্ট ঈশ্বরকে মেটাতে বৃহত্তর স্বার্থের স্বাদ,

তো কেও চায় ঈশ্বরকে পাশে কাটাতে সংসারের সামান্য অভাব।


তবুও পাইনি খুঁজে তাকে,

পাইনি খুঁজে আত্মহত্যা করা চাষির পরিবারে,

পাইনি খুঁজে দিনমজুরি করা শ্রমিকের অভাবের সংসারে,

পাইনি তাকে কাতর স্বরে চাওয়া ধর্ষিতা মেয়ের শেষ বিচারে।

যুগ যুগ ধরে চলা রাষ্ট্রের হাতে প্রতারিতদের ভাগ্য লেখেনি সে,

পাইনি খুঁজে তাকে যখন একলা শিশু যখন করে ব্যয় শ্রম গোটা পরিবারের মুখ চেয়ে,

খুঁজে পাইনি তাকে বুড়ো ভিখারির ক্ষুধার জ্বালায় অনিশ্চিত জীবন সংশয়ে।


ঈশ্বর যদি সকল মানুষকে সন্তানসম সমান ভালোবাসে,

তাহলে কীভাবে হয় একশ্রেনী শোষক , আরেকশ্রেনী শোষিত ভাগ্যের পরিহাসে।


সবাই বলে চেঁচিয়ে নাকি তাদের ধর্মের শেখানো ভালোবাসা প্রধান,

তর্কে জড়ালে ধর্মের আড়ালে ,তারায় আবার বোঝায় মানুষের চেয়ে ধর্ম মহান।


করলে অপমান কোনো ধর্মবিশ্বাস, আসে তেড়ে সকলে নাকি ধর্মরক্ষায়,

এতই দুর্বল নাকি তাদের আস্থা,  এই সহজেই কি ভাঙার ভয়?

তাহলে কোনো মানুষ কীভাবে নেয় বেছে সেই বিশ্বাসে নিজের জীবনের আশ্রয়।


মন্দির মসজিদ গির্জা, ভাঙো কিমবা গড়ো, নেই তাতে আমার আগ্রহ,

কিন্তু যেদিন ধর্মের নামে করলে ধ্বংস নালন্দার মত হাজার শিক্ষাগৃহ,

সত্যই সেদিনে হয়েছিলো ঠুনকো তোমাদের আস্থার বিগ্রহ।


সকল ধর্মস্থান, ধর্মপ্রাণ আদর্শ হয়ে ওঠে অচেনা অপ্রয়োজনীয়,

যখন দেখি মানুষ মরে মানুষের হাতে,

সেখানে ঈশ্বরের নামের অস্তিত্ব হয়ে ওঠে সত্যই অসহনীয়।


কোনো ধর্মতেই শ্রেষ্ঠত্ব খুজিনা আমি, সবাই নিজের স্বার্থে বাঁচে,

যতই বলুক মহান নিজেদের, অপর ধর্মে ঠিক গাফিলতি খোঁজে।


কবি যখন লিখেছিলেন, ধর্মকারার প্রাচীরে হেনে আঘাত এই অভাগা দেশে জ্ঞ্যানের আলোক আনো,

ভাবেননি তিনি এই সত্য রয়ে যাবে কেবল কবিতায় গাঁথা, আসল আদর্শ অন্ধবিশ্বাসে চাপানো।


এ হৃদয়ে নেই ধর্মের ভয়, নেই জাতপাতের কোনো সংশয়,

বুঝি কেবল মানুষের ভালো অথবা খারাপ,

তাই বিশ্বাসের প্রতি প্রশ্ন হোক সকলের

গরিবের জীবনভর দুর্দশা ঠিক তার কত জনমের পাপ।


সে যদি নাই জানে তার পূর্বজন্মের স্মৃতি, কি করেছিলো সে ঠিক না ভুল,

তাহলে পাপপূণ্যের নামে কেন ঠকানো হয় তাদের,

কেন সারাজীবন ধরে গুনবে তারা বঞ্চিত অধিকারের মাশুল।


পৃথিবীতে হাজার ধর্মের নামে হাজার রকম প্রথা,

হাজার বিশ্বাসের ভীড়ে কেবল নিজেকেই তুষ্ট রাখার চেষ্টা।

যেখানে ধর্মের বেড়াজাল গড়েছে বারবার মানুষের সম্পর্কে বাধা,

সেখানে তবুও আমি দেখেছি , দেখতে চাই বারবার ,

মানুষ থাকুক মানুষের পাশে পেড়িয়ে হাজার ধর্মের মাথাব্যাথা।


ধর্ম খেয়ে ভরেনা পেট, জাত কি দেখা যায় চোখে,

ধর্মীয় রোষ গড়েছে প্রতিরোধ এক সুস্থ সমাজের সম্মুখে,

সঠিক শিক্ষা, সাথে যুক্তি ব্যয়

আনে জগত চেনার নতুন উপায়,

আঁধার হতে দেখো চেয়ে,  বিভিন্নতার  সৌন্দর্য্য কত এই ভেদাভেদ পেরিয়ে

হবে তৈরি এক নতুন সমাজ, চেতনায় গড়বো প্রতিরোধ সকল গোঁড়ামির বিরুদ্ধে,

বিশ্বাস থাকুক নাহয় তোমার অন্তরে, স্থান দিওনা তাকে উগ্রতারে আড়ালে,

দেখো ফুটবে কত নতুন কুড়ি সকল বাধা পেরিয়ে, এই সুস্থ সমাজের অন্তরালেই।


রক্ষাকবচ

-প্রদীপ চক্রবর্তী


জীবনের কথা বলো

মৃত্যুর নয়,

যুক্তির সাথে থাকো

দুর করো ভয়।


ৠণী মোরা প্রকৃতির কাছে

কর তাই শোধ,

সোজা কথায় প্রকাশিত

নিজ মূল্যবোধ।


ঝড়-তূফান-বজ্রপাত

পশ্চাতে বিজ্ঞান,

পরিস্থিতির বিচারে

বাড়াও নিজ জ্ঞান।


নিজেই রক্ষা কর

নিজের-ই প্রাণ,

বিপদ থেকে বাঁচাতে

আসবে না ভগবান।


লকডাউন ৩

-জামাল আনসারী

মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে যমদূত দাঁড়িয়ে দুয়ারে

লকডাউন। আবালবৃদ্ধবনীতার গৃহবন্দী জীবন।

মাক্স, ছাড়া রাস্তা ঘাটে চলাফেরা নিরাপদ নয়,

অসাবধানে চলে যায় প্রাণ, কাঁদে আপনজন।


নিউজ চ্যানেলে, রেডিওতে এখন মুখ্য খবর

আতঙ্ক, উদ্বেগে জড়সড় ,বেলাগাম মৃত্যুহার ।

কর্মহীন দিন মজুরের হেঁসেলে পড়ছে টান―

করোনার উর্ধমুখী গ্রাফে পতন শেয়ার বাজার।


সোশ্যাল ডিসটেন্স। লাগু আদর্শ আচরণবিধি

অজ্ঞতার কারণে বাড়ছে পারস্পরিক অবিশ্বাস।

সমাজতান্ত্রিক, ধনতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক সব দেশে

দাপিয়ে বেড়াছে শুধু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস।


ঘরে ঘরে মৃত্যু ভয়, কড়া নাড়ছে করোনা ভাইরাস

কি হবে? কি খাবে মানুষ? তাড়া করছে আতঙ্ক ―

ডাক্তার ,নার্স বিজ্ঞানী দিন রাত এক করে ব্যস্ত

পরিষেবা দিতে, তবুও মিলছে না কোরোনার অঙ্ক।


হিংসা নয়, ঘৃণা নয়। চাই সবার একটু সহযোগিতা।

কোরোনাকে হারাতে হলে, মানুষের সচেতনতা চাই।

আসুন,সকলে মিলেমিশে একসাথে লড়াই করি ―

জিতব আমরা। হারবে কোরোনা। ভয় নাই,ভয় নাই।



লকডাউন ৫

-জামাল আনসারী


একুশটা রজনী  কবেই কেটে গেছে,দেশে লকডাউন চলছে..

বাবুইপাখির বাসার মত হৃদয়ের মণিকোঠায় অঙ্কিত স্বপ্নগুলি

আকুল পাথারে একে একে বিলীন...

কথা ছিল, একুশটা দিবানিশি অতিক্রম শেষে

আসমুদ্রহিমাচলে উঠে যাবে সোশ্যাল ডিস্ট্যান। লকডাউন।

নীল আকাশে উদিত হবে দুর্যোগ-মুক্ত প্রভাতের নবারুণ।

বদ্ধ ঘরের আগল ভেঙে মানুষ গুলি আবার পথে ঘাটে মাঠে...

রৌদ্র ঝলমলে ভিজে মাটির গন্ধ মেখে  স্বস্তির শ্বাস নেবে।

কিন্তু না। এই পোড়া দেশে আর মীরাক্কেল ঘটল না।

একুশটা রজনী কেটে গেলেও লকডাউন উঠল না।


পাড়ার দর্জি কাকু অমলের মতো জানালার খিড়কি খুলে

দুচোখ ভরা অনাবিল আশার নিশ্বাস ফেলে বলেছিলেন

আর দুই দিন। আর মাত্র দুই দিন আমাদের কষ্ট!!

তারপর। শহরের কোনায় ওই দর্জি দোকানটা খুলতে পারব।

জানিস, ঐ ছোট্ট দোকানটায় আমার সংসারের রেলগাড়ি।

অনেক কাজ। কাজের পাহাড় জমে আছে।

আর না খেয়ে অনাহারে মৃত্যু  যন্ত্রনা আর সইতে হবে না।

কিন্তু সেই দুই দিনও গুটি গুটি পায়ে বিদায় নিল।

দোকান খুলল না। লকডাউন । লকডাউন ।

চলছে গোটা দেশে বেঁচে থাকার কঠিন সংগ্রাম।

বারংবার প্রশ্ন বানে বিদ্ধ হচ্ছি.. দর্জিকাকু এখন কি করছে?

বেঁচে আছে তো! যুদ্ধ শেষে কি আবার দেখা হবে??

না। দেখার কোনো উপায় নাই। ঘরবন্দি।

দেশে লকডাউন। রাস্তায় পা ফেললেই বিপদ।


ছোট কাকিমা, সেদিন হাস্য মুখেই সুখবরটা জানিয়েছিল..

এই লকডাউন শেষ হলেই আসবে ...

জ্যোৎস্না আর আকাশের চার হাত এক হবে।

মনে পড়ে, ঘড়ির কাঁটার ছন্দে পা মিলিয়ে চলতে পারলে


বহুদিন পূর্বেই সুখের সাগরে জলকেলিতে মগ্ন হত দুই তরী।

কিন্তু এখন লকডাউনের অদৃশ্য দেওয়াল হৃদয় জুড়ে

জ্যোৎস্না ও আকাশের সীমারেখা।

একুশটা রজনী কেটে গেল, দেশে  লকডাউন চলছে।

আরো কতদিন চলবে?? কারো নেই জানা।


কথা ছিল, করোনা যুদ্ধে একুশ দিনেই জয়ী হবে আমার দেশ।

অন্তর্দাহ সহ্য করে হাসিমুখে কোটি কোটি কৃষক শ্রমিক দিনমজুর

অক্ষরে অক্ষরে মান্য করেছে সরকারি নির্দেশিকা...

একুশ দিনে কত প্রান্তিক মানুষ অভুক্ত থেকেছে?

লক্ষ লক্ষ কৃষক হয়তো পায়নি উৎপাদিত শস্যের ন্যায্য মূল্য

পরিবহনের অপ্রতুলতা, মাঠেই পচেছে তাজা ফসল।

তবুও দাঁতে দাঁত চেপে মেনেছে লকডাউন...জানে অন্তর্যামী।

অতীত পর্যালোচনা, করোনার ইতিহাসে চোখ মেলি...

কার দোষে? নভেল করোনা ভাইরাস উড়ে এল দেশে?

অচিরেই  মহামারীর শাখা প্রশাখা মেলেছে সারা ভারতজুড়ে?

এটা কি ভারত সরকারের নির্বুদ্ধিতা নয়?

প্রশ্ন অনেক। উত্তর পাওয়ার নাই অবকাশ।


তবুও আশার প্রদীপ হাতে নিয়ে দুচোখে  সুদিনের প্রত্যাশা দেখি

জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে মানুষ মিলিয়েছে কাঁধে কাঁধ

চলছে আসমুদ্র হিমাচল জুড়ে তুমুল কোরোনা সংগ্রাম

আশা রাখি,জয়ী হবেই একদিন মানুষ। মৃত্যু ঘটবেই করোনার।




বন্দীর আশা

-শ্রেষ্ঠী দে


হোক আমার বদ্ধ জীবন

হই না আমি খাঁচার পাখি,

নতুন পথেই চলবে জীবন

এই আশাতেই কেবল বাঁচি।

বছর শেষে বছর ঘোরে

আসে দিনের শেষে রাত্রি,

সুখের পাশেই দুঃখ বাঁচে

জীবন তো নয় স্বপ্নপুরীর যাত্রী!


চোখ গুলো আজ ধাঁধিয়ে ওঠে

হাতছানি দেয়, রংবেরঙের স্বপ্ন,

পড়ন্ত বেলায় ঘুম ভেঙে যায়

দেখি জীবন শুধু হতাশাতেই মগ্ন।

আজ আকাশ ভরা কালো মেঘ

আর জীবন ভরা বিষাদ,

সঙ্গে দোসর মাতাল বাতাস

মানুষ কেবল ঠুটো জগন্নাথ।

সময় চলে নিজের তালে

হাপিয়ে ওঠে জীবন,

পায়ের শিকল ছিন্ন হবে

এই আশাতেই বাঁচে মন।।





অবক্ষয়

-তারা কয়াল


কোথায় শিক্ষা, কোথায় সমাজ

কোথায় বা আমাদের বিপ্লব!

আস্তরনে ঢাকা পড়ে গেছে,

অহংকারের কালো ছাপ।

স্বপ্নের ঘুমে তলিয়ে গেছে

বিশ্ব বাংলা জুড়ে।

নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সর্বক্ষণ

কল্পনার, আশার সমুদ্রে।

আসছে সেই গভীর জোয়ার,

তলিয়ে দিতে বিশ্বজুড়ে।


কোথায় শিক্ষা, কোথায় সমাজ

কোথায় বা আমাদের বিপ্লব!

ভাবনার জগতে মেতে আছি সবাই,

মধুর আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দে।

পরিবর্তনটা কি শব্দ?

ভুলে গেছি বহুদিন আগে।

মূর্খের মতো সান্তনা দিচ্ছি

বেশ!...দিব্যি!... চলে যাচ্ছে বলে।

ভবিষ্যত প্রজন্ম উচ্ছন্নে যাচ্ছে

কি হবে তা চিন্তা করে!


কোথায় শিক্ষা, কোথায় সমাজ

কোথায় বা আমাদের বিপ্লব!

লজ্জা লাগে বলতে আমার

বাচ্ছি শিক্ষিত সমাজে?

যে মাটিতে বিপ্লবীরা

ডাক দিয়েছিল শিক্ষার ব্যাখ্যা তুলে।

ভুলে যাচ্ছে সবাই

কষ্টে গড়া সেই অধিকার।

কঠোর পরিশ্রম ও পরাজিত হচ্ছে

বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে।


কোথায় শিক্ষা, কোথায় সমাজ

কোথায় বা আমাদের বিপ্লব!

স্বার্থপর ওহে মানব সমাজ

লজ্জা কি আছে তোমাদের?

কষ্টে পাওয়া এই জগত

মূল্যহীন হয়েছে তোমাদের কাছে।

উল্টে দেখো পাঠ্যের পৃষ্ঠা

সংগ্রাম করেছে কতো।

শিক্ষার আলো তুলতে গিয়ে,

শহীদ হয়েছে কত-শত।

কোথায় শিক্ষা, কোথায় সমাজ

কোথায় বা আমাদের বিপ্লব!



গৌতমের প্রতি

-ঋতম সাহা

লিখতে বসেছি এক সন্ন্যাসীরাজার পরিচয়

জগতে এরূপ চরিত্রের হবেনা কোনোদিন বিকল্প,


সংসারের অমানিশায় সে এনেছিলো আলো

বোঝা তাকে সত্যিই জটিল, যেমন আমিও বুঝেছি তাকে অল্পস্বল্প।


দেয়া হয়েছিলো তাকে শৈশবেই রাজত্বের লক্ষ্য অব্যর্থ,

নামকরণে মুখর রাজমহল, পিতা দিলেন নাম সিদ্ধার্থ।


রাজা-রাজত্ব সকল বিলাসিতা হতেই সে ছিলো অধিক দূরত্বে

রাজকুমার হয়েও কিনা বারবার বলতেন কথা যুদ্ধ বিনা মনুষ্যত্বে।


শুরুর জীবনেই ঘটলো সমাপ্তি মা মহামায়ার জীবনী,

নামে জুড়লো গৌতম, গৌতমী হয়ে উঠলেন তার প্রকৃত জননী।


পিতা চেয়েছিলেন ফেরাতে বিশ্বাস বালকের রাজতন্ত্রে,

শৈশবেই দক্ষ বালক গনিত, বিজ্ঞ্যান আর বেদমন্ত্রে।


শিক্ষকরা পেলেন দায়িত্ব, হলো গৌতমের শিক্ষা শুরু,

শিশুরূপে আচার্য্য পেয়ে হলেন অবাক, ধন্য সকল গুরু।


দেখিয়েছিলে পশুপ্রেম, তীরবিদ্ধ হংস বাঁচিয়ে আপন জেদে,

করলে বিয়ে যশোধরাকে, ভালোবেসেও শেষে কিনা যুদ্ধ জিতে।


ভেবেছিলো পরিবার পুনরায় মহলে দেবে মন

ফিরবে তোমার সংসারে আস্থা,

তবুও তুমি সেই উদাসীনই, ছাড়লে সংসার,

অনুভবে জনজাতির দূরাবস্থা।


গুরু কালামা ও রামাপুত্তা হতে কঠোর যোগ তপস্যায় হলে পুরুষ সিদ্ধ,

ভাঙলে জীর্ন সন্ন্যাস চক্র, গড়লে নতুন তুমি, তুমিই বুদ্ধ।


জটিল রোগে বৃদ্ধ স্পর্শে, ভেঙেছিলে ভ্রান্ত ধারণার বিভীষিকা,

তুমিই করেছিলে চিহ্নিত সকল মানবজীবনের মরীচিকা।


তুমি উদ্ধারে জাগতিক সত্য,

শিখিয়েছিলে রাখতে বিশ্বাস অন্তর্হিত সত্যের অস্তিত্বে,


জীবনের ঝটিকাসফরে শিখেছি ভালোবাসা,

ভক্তিতে নিমজ্জিত কেবল আমি বোধিসত্ত্বে।


পতিতাকে দিলে স্নিগ্ধতা, বিশ্বাস তার মাতৃত্বে,

বিষন্ন মন এখনো পায় বিশ্বাস তোমার অস্তিত্বে।


সিদ্ধিলাভে চিনলো জগত তোমারে, আর্তপীড়িত হলে তোমা দ্বারে আগত,

তুমি হলে পরিত্রাতা তাদের, জীবন চেতনায় তোমাকে পেলাম তথাগত ।


নাস্তিকতায় বিশ্বাসীদেরও পছন্দের তুমি,

নিজের ধর্ম বাঁচাতে ব্যবসায়ীরা বানিয়েছে তোমাকেই দেবতা,

শিখিয়েছো ত্যাগিতে অন্ধবিশ্বাস, জীবনে যুক্তি প্রধান

জরাজীর্ন সকল ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে চলেছে তোমার যুদ্ধ সর্বদা।


শত শত আঘাতের পরেও, লক্ষ্যে অবিচল তোমার আদর্শে চলা শিষ্য,

তোমার দর্শনে অটূট তারা, এখনো বিঘ্নিত হতে দেয়নি তোমার উদ্দেশ্য।


কত রাজা ছাড়ে রাজত্ব, আপন করে তোমায় কাটিয়েছে যুদ্ধের কান্তি,

তোমার রাজত্বেই ফলেছে দেশমাটির সীমানা পেড়িয়ে  কেবল শান্তি।


শিখিয়েছো উপায়, দমাতে অশান্ত হৃদয় অন্তরের সকল যুদ্ধ,

অষ্টাংগিক মার্গ দিয়েছো আমাদের, কেবল এক এবম অদ্বিতীয় বুদ্ধ।

কবিতাগুচ্ছ ৫ -
কবিরা
Nov. 16, 2024 | কবিতা | views:493 | likes:2 | share: 2 | comments:0

কফি কাপটা

-সুক্রোমণি


হ্রদে ভেসে থাকা জেলেরা আনন্দে খুশি

যেখানে ইচ্ছে ডুব দেয়,

উন্মত্ত হাওয়ায় তোমার চুলগুলো উড়তে থাকে

প্রত্যেকে কাউকে খুঁজে বেড়ায়

কিন্তু এখানে আমি একা

বেঞ্চে বসে জীবনের কথা ভাবছি

কেন কঠিন হয়ে কেটে যাচ্ছে আর দ্রুত

দেখতে দেখতে কফি কাপটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।



নাচার

-প্রদীপ চক্রবর্তী


থালা - ঘটি - বাটি বাজাও

কিছু লাভ হবে না,

বিজ্ঞানের সাহায্যে

দূরে রাখ করোনা।


মূত্র পানে স্বাস্থ্য হানি

আমরা নাচার,

যুক্তির তেজেতে

বধ কুসংস্কার।


গ্রহ-তারা আকাশেতে

দেখেছি সবাই,

ভাগ্যের সাথে তার

যোগাযোগ নাই।


কর্মের হাত ধরে

আসে যে সুফল,

যুক্তিবাদী হলে পরে

হবেই সফল।



শুভ বুদ্ধির উদয় হোক

-জামাল আনসারী


ধর্মের উনুনে নিজেদের রুটি সেঁকে রাজনৈতিক দলের নেতা,

ইতিহাস একমাত্র নীরব সাক্ষী, গুজরাট, দিল্লির হিংসা দেখা।

ধর্ম খাই না মাথায় মাখে? জানে না দেশের প্রান্তিক লোকজন,

তবুও হিংসার লেলিহান শিখায়,পুড়ে তাদেরই আত্মীয় স্বজন।


ঝোপ বুঝে কোপ মারে শয়তান নেতা, বর্ণ চোরা আমের মতো

অরন্যের দাবালন সম  হিংসার বহি শিখা বাড়তে থাকে তত।

ধর্ম এক আফিম! মুহূর্তে গলাগলি পরিণত হয় গোলাগুলি তে,

মানুষ শ্রেষ্ঠ প্রাণী বিশ্বমাঝে! বিস্মৃত হয় এই কান্ড জ্ঞান দেখে।


মানুষকে নিঃস্বার্থ  ভালোবাসার চেয়ে মহান আর কিছু কর্ম নাই

দেখো  মানুষের বুকের রক্ত নিগড়ে, রাজনৈতিক নেতারা খাই।

ধর্ম আর পঙ্কিলময় সর্বনাশা রাজনীতির কূটচালে পড়ে  মানুষ,

আজ বন্ধক রেখেছে তাদের নিজ নিজ বিবেক বুদ্ধি মান- হুশ।


ধর্ম কি মানুষকে খেতে দেয়?পরতে দেয়?তবুও মোদের গর্ব কত?

ধর্মের ঠিকাদার খুলছে ব্যবসাকেন্দ্র দেখো--ব্যাঙের ছাতার মতো।

মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, ভারতে জ্ঞানের আলো আসুক।

ধর্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে, মানুষ শুধু মানুষ পরিচয়ে  বাঁচুক।




ভারতবর্ষ আজও

-সঞ্চারী মজুমদার


আমার নীল হয়ে যাওয়া মৃতদেহের পাশে

বাঁচার উষ্ণতায় মাথা তুলেছে সবুজ দুটি পাতা।

চারিদিকের কলহ সত্বেও আমায় নিয়ে,

সবাই চুপ, রয়েছে শুধুই উদাস নীরবতা।

ভোটের যুদ্ধে শিতলকুচির মাটি, ভিজে উঠেছে

স্বজনহারাদের কান্নায়।

তাইতো এবার আওয়াজ ওঠাও

"বন্ধ শোষণ! আর নয়!!"

উপবাসী শিশুর চোখের জলে আজও

কোনো প্রতিশ্রুতি বাঁধ দিতে পারেনি ;

আজও বিচার পায়নি কত

ধর্ষিতা দলিত তরুণী।

ঘরে ঘরে  উঠুক জ্বলে

প্রতিবাদের আগুন আজ!

জনজাতি, গায়ে ওঠাও

যুদ্ধে যাওয়ার রণসাজ।।




রক্ত গোলাপ

-শুভায়ূ রুডান


তোমার অমানবিক শূন্য হৃদয়ে গোলাপ হয়ে ফোঁটার কথা ছিলো,

আমি সেই গোলাপ নিয়ে প্রত্যেকটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখন হয়ে উঠবো‌, কথা ছিলো।

তুমি শ্লোগান হবে, আমি চিৎকার

তুমি হাত রাখবে, আমি ব্যারিকেড

আমরা প্রতিবাদের তীব্রতা মেপে দেখবো শাসকের থার্মোমিটারে, কথা ছিলো।

একদিন ক্ষমতা, তার অহংকার ত্যাগ করতে বাধ্য হবে, হবেই

এই বিশ্বাসে ভর করেই এগোচ্ছিলাম আমরা, হার না মানা দূর্বার গতিতে।

কিন্তু একদিন পাল্টে গেলাম আমরা

আমরা ক্ষমতা হলাম

আমরাও অহংকারী হলাম

আমরা শাসক হয়ে উঠলাম

আমরাও শোষণ করলাম

আমরা বিক্রি হলাম, লোভের কাছে

আরো চাই এর নেশায় আলাদাও হলাম একদিন

আমাদের সৃষ্টিশীলতা আমাদের ত্যাগ করলো

ফলে মৃত হলাম, বোঝার আগেই।

কিন্তু জেনে রেখো প্রিয়তমা কেউ আবার গোলাপ হবে, দেওয়ালে লিখবে প্রতিরোধ

কেউ আবার রক্ত গোলাপ হবে,  নেবে সব অন্যায়ের প্রতিশোধ।

ক্ষমতা একদিন ঠিক ক্ষমতাহীন হবে, হবেই।

ক্ষমতা একদিন রাস্তার সস্তা ধুলোবালি হবে, হবেই।।

কবিতাগুচ্ছ ৪ -
কবিরা
Nov. 16, 2024 | কবিতা | views:609 | likes:23 | share: 2 | comments:0

ভোটের গ্রাসে

-দেশব্রত বিশ্বাস


ভোট আসে, ভোট যায়, গনতন্ত্রের পরবে

গনতান্ত্রিক গালিচা সাজে আমজনতার শবে।

লাল নেতা, সবুজ নেতা,গেরুয়া কিম্বা নীল

নেতাদের আয় বাড়তে থাকে, বন্ধ হয় মিল।

তোমার নেতা, আমার নেতা উৎসবে বাজে শ্লোগান,

ভোটপর্ব মিটে গেলেই নেতারা দেন পিঠটান।

কেউ বা জেতে, কেউ বা হারে, কেউ বা করে আপস

হেরো নেতার কিস্যু হয় না, সমর্থক পোহায় রোষ।

যেই মা আজ হারালো সন্তান, তার দুঃখ বুঝবে কে?

সব নেতারাই ঘুরে যাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

চারদিক জুড়ে মুষ্ঠিমেয়কে ক্ষমতায় আনার দায়ে

গনতন্ত্রের অজুহাতে কেন সাধারণ প্রান হারায়?

জনগনের সেবায় নাকি আকূল যাদের 'দিল'

কিস্যু কাজ না করেও তাদের বাড়ছে তহবিল।

গনতন্ত্র আসলে স্বৈরতন্ত্রই, মুখোসটাই কেবল ভিন্ন

নির্বাচন নামের নাটকের আড়ালে আমরা জরাজীর্ণ।

আর কত মা সন্তানহারা হলে ভোটদেব হবে তুমি শান্ত?

অনেক হয়েছে, আর না থামুক ভোটের বাঈজী নেত্য।


গণতন্ত্রের চাবিকাঠি

-জামাল আনসারী


রাস্তা কেটে ,পেরেক পুঁতে, ভাবছো তুমি কি?

ধমকে, চমকে, চোখ রাঙিয়ে, হবে না কিছু।

দেশ সবার। নয়, তোমাদের বাপের  সম্পত্তি।

কৃষকের দাবি না মানলে হটছে না দেশ পিছু।

অন্নদাতার বুকফাটা কান্না, হবে নাকো ব্যর্থ

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীরা,উত্তাল প্লাবন

বলছে সবাই, ফ্যাসিবাদী সরকার অপদার্থ।

কার সাথে যুদ্ধ?কৃষকরাই দেশের জনগন।

কৃষক আন্দোলনের পাশে ফেসবুক, টুইটার

কৃষকের সমর্থনে হাত তুলেছে গোটা দেশ ।

কান পেতে শুনে রাখো ফ্যাসিবাদী হিটলার,

বেশি দিন নেই তোমার জামানা হবেই শেষ।

কৃষক আন্দোলন লিখছে এক নতুন ইতিহাস

তুমি যদি কেড়ে নাও অন্ন দাতার ভাতের বাটি।

জেনে রেখো, অহঙ্কারই পতন। হবেই সর্বনাশ।

অন্নদাতার হাতেই আছে গণতন্ত্রের চাবিকাঠি।



চোরে চোরে মাসতুতো ভাই

-জামাল আনসারী


এক সময় যারা চোর ছিল, এখন তারা সাধু

সুযোগে কাক কোকিল হয়,যদি থাকে জাদু।


উভচরের স্বভাব যেমন জলে- স্থলে বসবাস।

বর্ণচোরা আমগুলি যেন সোনার রাজহাঁস―


মরসুমী বিহঙ্গম যত প্রতি শীত কালে আসে

এই সময়েই ভোটের গন্ধ গ্রাম গঞ্জে ভাসে।


কালো টাকা, সাদা টাকা ― টাকার ছড়াছড়ি,

ভোট ভিখারি বাবুরা সব করে দৌড়াদৌড়ি।


গণতন্ত্র আর ধনতন্ত্রে নেইকো  বিশেষ ব্যবধান

মুখে গণতন্ত্র আর কাজে ধনতন্ত্রের জয়গান।


নীতি,আদর্শ, বলে রাজনীতিতে কিছুই নাই ঠাঁই

সবার উপরে ভোট সত্য, ভোট বড়োই বালাই ―


মারপিট, গোলাগুলি,দাঙ্গা,গণহত্যা― কিছুই নয়,

গণতন্ত্রের মহান উৎসব। তাই একটু আধটু হয় !


রাম,শ্যাম যদু মধু, রাজনীতিতে পার্থক্য নাই―

অদ্ভুত মিল। "চোরে চোরে মাসতুতো ভাই" ভাই।












শ্রাদ্ধে চুল ফেলা!

- রাজা দেবরায়


শ্রাদ্ধে ফেলতে হবে,

মাথার সব চুল!

চুল না ফেললে তবে,

সব শিক্ষা ভুল?

চুল ফেলে বোঝাতে হবে,

মনের অবস্থা!

না ফেললে সমাজ নেবে,

তোমার ব্যবস্থা!?










কেউ খোঁজ রাখেনি

-শুভায়ূ রুডান


এই পাড়ায় যখন মহাসমারোহে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে হরিনাম সংকীর্তন চলছে

ঠিক সেই সময়ে ও পাড়ার রহমত বই খাতাকে বিদায় জানিয়ে কাজ নিয়েছে সবজির আড়তে

মাধ্যমিকে অঙ্কে একশোতে একশো পেয়েছিল ছেলেটা।

প্রথম প্রথম অনেক সংবর্ধনা পেয়েছিল

তারপর কালের নিয়মে ভুলেছে সবাই

কেউ খোঁজ রাখেনি।


ও পাড়ায় যখন বিরাট আয়োজনে

চলছে বিশাল ঐতিহাসিক ইসলামীক জলসা

বিখ্যাত বক্তাদের বক্তব্যে ওয়াজ জমে উঠেছে।

ঠিক তখন এ পাড়ার অসীম হাতে তুলে নিয়েছে বেলচা,

একসময় হাতে থাকতো রংতুলি

এই এলাকার সেরা আঁকিয়ে,

নিজের দক্ষতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগও পেয়েছিল ছেলেটা।

তারপর যা হয়,পেটের টান তুলির টানকে হার মানাল,

কেউ খবর রাখেনি।

আগামী বছর ওরাও হয়তো বিশ পঞ্চাশ, যা পারবে চাঁদা দেবে,

কীর্তন হবে আরও জাঁকজমকপূর্ণ, জলসা হবে আরও বিশাল, ওয়াজ করতে আসবেন সেরা বক্তা।

এভাবেই চলবে,

যাদের অঙ্কের গবেষক হবার কথা ছিল, কথা ছিল যারা আর্টিস্ট হবে!

তারা সবাই অর্থের অভাবে আড়ালে রবে।


কেউ খোঁজ রাখেনি, কেউ খবর দেয়নি

কেউ খোঁজ নেবেনা, কেউ খবর দেবেনা।।


বিজ্ঞানের দিনরাত্রি

-প্রদীপ চক্রবর্তী।


বিজ্ঞানীসম্মত হলেও 'ধর্ম '

বিজ্ঞানসম্মত নয়,

ঈশ্বর বিশ্বাস এর মূলে আছে

অজ্ঞতা;লোভ;ভয়।


মঙ্গলেতে যান নেমেছে

তবু মুখ ভার,

দুর্দশার মূলে আছে

অন্ধ কুসংস্কার।


আঙুলেতে পলা-নীলা

মুখেতে ভাষণ,

সেই দেশে হবে নাকি

'আদিত্য মিশন' !


মানুষের জাত নাই

সবাই সমান,

মানুষই বানাতে পারে

দেশকে মহান।


বিজ্ঞানের  দরবারে লহ তাই শরণ,

সব ফলের পিছনেতে বৈজ্ঞানিক কারণ।










জালিয়ানওয়ালাবাগ

-রীতা বসু 


হে জালিয়ানওয়ালাবাগ!

এখনো  তোমার  দেহে তো দেখি কালো রক্ত  ও বুলেটেরদাগ!

১০৮ বছর  আগে, এই দিনে ই এক শান্তি পূর্ণ  সমাবেশে,

যোগ দান করে ছিলে ওই মাঠে,

একটা ই ছিল  প্রবেশের দ্বার,

কেউ  কোথাও নেই  আর,

হঠাৎ  উপস্থিত হল  দস্যু  আয়ার,

ঢুকে ই সে আদেশ করল, "ফায়ার "!

বাস্।১৬০০ রাউন্ড গুলি  চললো, শিশু থেকে  নারী  সবাই কে  ওরা  হত্যা করলো,

শতশত লোক  কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে  প্রাণ  বিসর্জন দিল।

পৃথিবীর  জঘন্যতম  গণহত্যা  ঘটে  গেল!

সারা  বিশ্ব হল স্তম্ভিত,

এত ভয়াবহ, এত উন্মত্ত,

রবিঠাকুর  ত্যাগ করলেন  " নাইট  উপাধি,

এন্ডরূজ বললেন, "a massacre, a butchery "......

এত পাশবিক, এত মর্মান্তিক,

বুক  জ্বলে যায়, বৃটিশ কে ধিক্।অফিসার  ডায়ার!আদেশ দিয়ে ছি লে যে ডায়ার,

কি শাস্তি  তুমি  পেলে,

এক পাঞ্জাবী বিদ্রোহী র এক গুলিতেই তো মাটিতে  লুটিয়ে  পড়লে!

এভাবে কি  অন্যের দেশ দখল করে  থাকা যায়?

তাই তো  বাধ্য  হলে এদেশের পাততাড়ি  গুটিয়ে  চলে  যেতে,

মরি হায় হায়!!!






মা , তোমার জন্য

- মৌমিতা দে


মা মানে পরম আদরের

অন্তহীন স্নেহ ,

সুখ দুঃখের সঙ্গী সাথী

ভালোবাসার মোহ।


মা মানে ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে

দেখায় পথের দিশা,

সারাজীবন সকলকে

আগলে রাখার আশা।


মা মানে সব দুঃখ বুকে চেপে

সদাই হাসিমুখ,

সব কষ্ট মুছে দিয়ে

ভরিয়ে দেওয়া সুখ।


মা মানে সকল অন্যায় মেনে নিয়ে

বুকে দেয় স্হান

যার কোলেতে মাথা রেখে

স্বস্তি পাই প্রাণ।


অনাধুনিক

- উদয় নন্দী


সন্তানহারা অশ্রু শ্রাবণে ,

প্রস্তরীভূত মা।

অধরা, অন্ধ প্রেমে,

পাথুরে প্রতিধ্বনি ধনী ।

পৌরাণিক হলেও তবে

অনভিপ্রেত নয় ।

ফুল জমে জমে পাথর হওয়ার সুভাষিত ।

তেমনি সুন্দর-সত্য বুঝি , পাথরে যখন ফুল ফোটে ।

পাথরের বুক চিড়ে বেরিয়ে আসে জীবনানন্দ জল।


তবুও প্রশ্ন থেকে যায় ,

অজন্তা ইলোরায় কি মেলে

রক্তমাংসের উম ?

জুড়ায় বোশেক জ্বালা ?

যদি তাই হয় ,

তবে কেন বোবা হয়ে যায়

"অগ্নিবীণার”-এর কবি ?

কেন স্ফটিকজল ডাকতে ডাকতে

রাজকুমারের সামনে লুটিয়ে পরে স্কাইলার্কের মত ---

স্ব-সৃজন মাধুরীমূর্তির সামনে নিথর নিথর হয়তো কোনো রামকিঙ্কর ।

কবিতাগুচ্ছ ৩ -
কবিরা
Nov. 13, 2024 | কবিতা | views:301 | likes:5 | share: 5 | comments:0

সমঝোতা

- বিমুক্তি

দশ টাকার দুটো নোট হাতে নিয়ে বেরিয়েছি,

আজ একটা দফা-রফা করতেই হবে!

আজ দশ টাকার দুটো নোট নিয়ে আমি যাচ্ছি,

রাষ্ট্রের সাথে একটা সমঝোতায় আসতে।


আমি একটা মস্ত বড়ো পাহাড় বেয়ে রাষ্ট্রের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম,

আমার হাতে থাকা দশ টাকার নোট দুটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে ততক্ষণে,

সেই দুমড়ানো কাগজগুলো ছুঁড়ে মারলাম রাষ্ট্রের মুখে

রাষ্ট্রের নাকের সামনে ঘুষি বাগালাম,

চোখ দুটি বড় করে বললাম,

''জানো তুমি! জানো! গত তিনদিন ক্রমাগত ভাবতে ভাবতে

তোমার দুরবস্থা নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলাম।

আমার তিনদিনের পরিশ্রম তোমার কোনো পত্রিকা ছাপাতে চায় নি।

অতঃপর একটি অনলাইন ম্যাগাজিন বিনামূল্যে সেই গল্প ছাপালো।

একটা পয়সাও না নিয়ে, তিনদিনের ভালোবাসা দিলাম,

আর তোমার পুলিশ কি-না আমাকে জেলে পুরার কথা ভাবছে,

তোমারই দুরবস্থা নিয়ে গল্প লেখার কারণে!

তাই নিজের একমাত্র সম্বল দশ টাকার দুটো নোট নিয়ে এসেছিলাম,

তোমার মুখে ছুঁড়বো বলে!"


আমার হাতে মার খেয়ে রাষ্ট্র তখন পুরো নেতিয়ে পড়েছে,

ওর উপরের পাটির অগ্রদন্ত্য দুটি উড়ে গেছে আমার ঘুষিতে।

ফোকলা দাত নিয়ে হাসতে হাসতেই রাষ্ট্র বললো,

"আমি তো নিজে নিজেকে চালাই না।

আমার মানুষেরাও আমাকে চালায় না,

এবং লেখক তুমিও চালাও না।

আমাকে মেরে কি লাভ বলো?"


আমি কথা হারিয়ে রাগে দুঃখে,

দশ টাকার নোট দুটি ওর দাতের ফাঁকে গুজে দিয়ে দৌঁড় দিলাম।

পুলিশ আমাকে খোঁজছে।


মুখোশ খোলার শপথ

-শুভায়ূ রুডান

ক্লান্ত চোখে দিনের শেষে ফিরেছি যখন অবশেষে,

দেখেছি আমি চাপা কান্নারা অপেক্ষারত দিনের শেষে।

মুখগুলো সব মুখোশ পরা ভিড়ের মাঝে হাস্যরত,

মুখোশ খুললেই উলঙ্গ রাজা চরিত্রগুলো রাবারের মত।

এসেছে সময় মুখোশ খোলার হাসি গুলো সব মিলিয়ে যাক,

উলঙ্গ রাজা ছুটে পালাক কাপড় খুঁজুক ঢাকতে লাজ।

এবার যখন মিছিলে যাবে সময় নিয়ে দুটো প্রশ্ন কোরো,

তোমাকে যারা স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্নগুলো কি যাচাই করো?

এবার যখন মিছিলে যাবে সত্য মিথ্যার হিসেব নিও,

তোমাকে যারা শুধুই ঠকায় এবার তাদের চিনতে শেখো।

যেই মিটিংয়ে ভিড় বাড়াও, মঞ্চে খোঁজো তোমার তুমি,

সেই তুমি কি রেখেছে কথা? নিয়েছে তোমার খোঁজখবর।

সত্তর বছরে তোমার তুমিরা দিয়েছে শুধুই প্রতারণা,

যে দলেই তুমি আস্থা রেখেছ, জুটেছে শুধুই বিরম্বনা।

তাই এবার কোন দলের নয়,দাবী আদায়ের মিছিল হোক,

তাই এবার শেখানো স্লোগান নয়,দাবী গুলোই স্লোগান হোক।

তাই এবার শপথ রক্তে রাঙ্গা,তাই এবার যুদ্ধ হার না মানার,

তাই এবার মগজ দিয়ে মগজ ধোলাই,এবার যুদ্ধ পালটে দেওয়ার।









ফুলের রাজনীতি

-জামাল আনসারী


বঙ্গের ডাঙায় ফুটেছে দুটি ফুল, পদ্ম আর ঘাস।

দুই ফুলের সুগন্ধে আমজনতার উঠছে নাভিশ্বাস।।


কোন ফুল ছোট আবার কোনটা একটু বড়োসড়ো।

ফুলের রাজনীতিতে রাজ্যবাসী ভয়েই জড়োসড়ো।।


ছোট ফুলের নাম শুনলেই বড়ো ফুলের গাত্রজ্বালা হয়।

চোখ বন্ধ করলেও দেখছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে  আছে উন্নয়ন।


বড় ফুলটাও নাকি ভাল নয়, গায়ে তীব্র সাম্প্রদায়িক গন্ধ!

বাম-রাম- অতিবাম, ফুলের রাজনীতিতে লাগিয়েছে দ্বন্দ্ব।।


গণতন্ত্র উৎসব নয়, বাংলায় বসেছে গণতন্ত্রের নিলাম

কেউ বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকায়, কারো হাজার টাকা দাম।


কোথায় গেল বাঙালির তেজ, আত্মসন্মান, বিবেকবোধ?

বেনিয়াদের কাছে শিরদাঁড়া বেচে গড়ে তুলছে প্রতিরোধ।


ফুলে ফুলে মারামারি, কাটাকাটি চলছে দেশের সমাজসেবা,

রাজনীতিতে দারুন লাভ,ফুলে ফেঁপে উঠছে নেতাদের ব্যবসা।


রাজ্যের কোথাও চলছে গোলাগুলি,কোথাও পড়ছে লাশ।

দুই ফুল মিলেমিশেই  রাজ্যবাসীকে দিচ্ছে আচুলা বাঁশ।।





মাদুলি তাবিজ ঝাড়ফুঁক

-জামাল আনসারী

খুড়া ও খুড়া... টিনের আগুড় টা খুল ন চাঁড়ে কইরে,

খুড়া ও খুড়া... টিনের আগুড় টা খুল ন চাঁড়ে কইরে,

তোর ছুটু কাকী বিনা চিকিৎসাই যাবেক রে মইরে।

টিনের ঠকঠ্কানি আর ডাকা হাঁকার তরে

ধড়ফড়াইয়ে কাঁচা ঘুমেই চইখ কচল্যাই উঠে নিমাই ওঝা,

আগুড়ের ঠিনে আইসে গলার আওয়াজ আন্দাজ কইরে বলে―

এতো রাইতে কে কচ্চি রে আমার নাম ধইরে ডাকাহাকা??

আগুড়ের উল্টো দিকে হাঁপাতে হাঁপাতে  সে বলে,

আমি বঠি রে, নামোও কুহলির তোর মদনা কাকা।

খুল ন, কপাট টা একটু তাড়াতাড়ি,

তোর কাকী কেমন কেমন কইরছে রে,

চাঁড়ে চঅ ন,আমাদের বাড়ী।


মাদুলির ব্যাগটা বগলদাবা কইরে হন্ত দন্ত  হইয়ে ছুটে নিমাই ওঝা,

মদনকাকার বাড়িতে ঢুইকেই রোগীকে নাইড়ে চাইড়ে বিজ্ঞের মতো বলে,

মদনা কাকা, একে লতাপাতাই ছুঁইয়াছে,,

মুখের থ্যেইকে ফেনা বাইরাচ্ছে,,

আর পায়ের উপরে দুটি দাগ থ্যেইকে রক্ত বেইরাছে।

আর শুন, বলিস না কাউকেই এই লতাপাতার  কথা

আমি যখন আইসেছি তখন হবেই ঠিক ব্যবস্থা।


মদন কাকা ভইয়ে কাঠ,কপাট ধরেই থরথর কাঁপে

মাথায় দুই হাত নিয়ে বলে, কি হবে এবার !

ওঝা তড়িঘড়ি বলে ,ভাগ্যে যা আছে তাই হবে তুমার।

তবে চিন্তা করো না মদন কাকা―

আমি যখন আইসেছি,চেষ্টা কইরছি, ঝাড় ফুঁক কইরে,

"হে মনসা, হে কালী― কাকী যেন না যায় মইরে।

অং বং  চং ক্যং বকের ঠ্যাং এ নমো নমোও,

সাপের বিষ ঝটপট শরীর থ্যেকে নামো নামোও।"

মাদুলি, তাবিজ, জল পড়া, তেলপড়া কত কান্ড!

ঝাড়ফুঁক― শত মন্ত্রেও বিষ আর নামে না,

মুখের ফেনাটা কিছুই কমে না।

রোগীর অবস্থা যখন কাহিল, বাড়িতে কান্নার রোল ওঠে,

মদন কাকা তখন কাকীকে নিয়ে হাসপাতালের পথে ঝড়ের গতিতে ছোটে।

ডাক্তার যখন দেইখল্য রোগীকে,নাড়িটা টিপে টিপে, হাই হাই....

পরীক্ষা কইরে ডাক্তার জানাইলো, রোগী আর বেঁচে নাই।

পুনশ্চ: বিষাক্ত সাপে কাটলে ওঝার`পরে ভরসা করো না।

তুক- তাক, ঝাড়- ফুঁক, করে আর রোগীকে মেরো না।


অভেদ

-প্রদীপ চক্রবর্তী।


জলের ধর্ম প্রবাহমানতা

মানুষের মানবতা,

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম কলে

পিষ্ট আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা।


হিন্দুর রক্ত লাল হলে

মুসলমানেরও তাই,

জগত জুড়িয়া মানব জাতি

কোনো ভেদাভেদ নাই।


কর্ম করলে ফলও মিলবে

বিজ্ঞান শেখায় তাই,

যুক্তিবাদী দার্শনিক মোরা

একে অপরের ভাই।


শোষনমুক্ত সমাজটা চাই

মাথা তুলে বাঁচতে,

শ্রমিকের হাতে হাতুড়ি নাচে

কৃষকের সাথে কাস্তে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929