কবিতাগুচ্ছ ১০

কবিরা


Nov. 19, 2024 | | views :885 | like:0 | share: 0 | comments :0

হায়, ধর্ম!

- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


মাঠে মাঠে রবিশস্য বােনার কাজ চলছে সারাদিন নামলাে সন্ধ্যা

পাতলা অন্ধকারের চাদর মুড়ি দিয়েছে দূরের পাহাড়

পাখিরা ফিরছে, বাতাস বইছে বিপরীত দিকে এখন ঘরে ফেরার সময়

যাদের ঘর নেই তারাও ফেরে

ওদের ক্লান্ত পা, গলায় গুনগুনে স্বর, মাথায় জড়ানাে গামছা

পাম্প হাউজে এসে টিউবওয়েলের জলে ধুয়ে নিল হাত মুখ

আঃ কী নির্মল, ঠাণ্ডা জল, ধরিত্রীর স্নেহ

জুড়িয়ে দেয় শরীর

একটা বিড়ির সুখটান, তারপর উনুন ধরাবার পালা কয়েকজন রুটি পাকাবে, দু-একজন রাঁধবে অড়হড় ডাল,

ভেণ্ডির সবজি

আর একজন না-সাধা গলায় গাইবে গান ;

"হােইহি সােই জো রাম রচি রাখা

কো করি তর্ক বঢ়াবৈ সাখা..."

যে গায় এবং যারা শােনে, তাদের এক ঝলক মনে পড়ে

সুদুর পূর্ণিয়া জেলার গ্রামের বাড়ি, ঘরওয়ালী ও

বাল-বাচ্চার মুখ ওরা এখন পঞ্জাবের ভাড়াটে চাষী

অন্যের জমিতে এক মৌসুমের ঠিকা

দিনভর সূর্য পােড়ায় মাথা, নিঙড়ে নেয় মজ্জা সন্ধেবেলা পেটের মধ্যেই জ্বলে উনুন, চোখ দিয়ে খাওয়া

ডাল-রুটি

তারপর খােলা আকাশের নীচে খাটিয়ায় চিৎপটাং বিড়িতে টান দিতে দিতে ঘুমােবার আগেই দেখা দু-একটা স্বপ্ন

জীবন এর চেয়ে বেশি কিছু দাবি করেনি...

রুটি সেঁকা হয়ে গেছে, ফুটন্ত ডালে যেই দেওয়া হলাে লঙ্কা

ফোড়ন

তখনই এলাে দুই আগন্তুক, হাতে সাব মেশিনগান ছদ্মবেশ ধরার কোনাে চেষ্টাই নেই, চোখে নেই দ্বিধা কেউ কারুকে চেনে না, এদের পূর্বপুরুষদের মধ্যেও শত্রুতা ছিল না

সেই দুই কাল্পনিক দেশপ্রেমিক ছেলেখেলার মতন চালিয়ে দিল গুলি

উল্টে গেল ডালের গামলা, ছড়িয়ে গেল বাসনা-নিশ্বাস লাগা

রুটি রাশি

জানলােই না কেন তারা মরছে , বুঝলােই না মৃত্যুর রূপ কেমন

পঁচিশজন সেখানেই শেষ, বাকিদের ছিন্নভিন্ন হাত-পা

এবার ছুটে আসবে শকুন-শেয়ালের পাল...


দুই আততায়ী অস্ত্রের নলে ফু দিয়ে ধীর পায়ে উঠে গেল জিপে

গ্রামের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা

কোনাে বাড়িতে শ্বেত শ্মশ্রু এক বৃদ্ধ পাঠ করছেন গ্রন্থসাহেব:

"সাধাে মন কা মান তিআগউ

কাম ক্রোধু সংগতি দুরজন কী তাতে অহিনিস ভাগউ..."

জমির ফসলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সুবাতাস এই মাত্র চাঁদ উঠে ছড়িয়ে দিল জ্যোৎস্না


তুলসীদাসের দোঁহায় রামের গুণগান করছিল যে শ্রমিকটি

তার কণ্ঠ এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেছে,

রামচন্দ্রজী, তােমার ভক্তদের তুমি রক্ষা করলে না? যারা অযােধ্যায় মসজিদ ভেঙে রামমন্দির বানাবার জন্য উন্মত্ত

তারাও কেউ এইসব মানুষদের বাঁচাতে আসবে না কোনােদিন

গুরু নানক, আপনি দেখলেন আপনার রক্তপিপাসু ভক্তদের

এই লীলা

গুরুজী, গুরুজী, আপনার নামে ওরা জয়ধ্বনি দিয়ে গেল?


জম্মু থেকে এই শনিবারই একটা বাস ছাড়লো সকাল সাড়ে আটটায়, যাবে কাঠুয়া

ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, শােনা যাচ্ছে মিশ্র কলস্বর মায়েরা সামলাচ্ছে বাচ্চাদের, এক কিশােরীর হাতে

জিলিপির ঠোঙা জানলায় থুতনি-রাখা তার ছােট ভাইটির চোখে বিশ্বজোড়া বিস্ময়

আকাশ আজ প্রসন্ন নীল, উপত্যকায় উড়ছে কুসুম রেণু

যাত্রীরা কেউ ফিরছে গ্রামের বাড়িতে, একজন যাচ্ছে বিয়ে করতে

আপন মনে বাসটা যাচ্ছে ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে

একটা বাঁক পেরুবার মুখেই বজ্রপাতের মতন বিস্ফোরণ

উড়ে গেল জিলিপির ঠোঙা ধরা কিশােরীর হাত বালকটির ছিঁড়ে যাওয়া মুণ্ডুতে চোখ দুটো নেই সন্তানকে বুকে জড়ানাে জননী আর্ত চিৎকারেরও সময় পেলেন না

কালাে বােরখা পরা আর একটি রমণীর নিস্পন্দ শরীর

এই প্রথম উন্মুক্ত হলাে প্রকাশ্যে বলশালী পুরুষদেরও শেষ হয়ে গেল সব নিশ্বাস মােট সতেরাে জন, বাকিরাও মৃত্যুর অতি কাছাকাছি দগ্ধ

কেউ একজন যেন কৌতুক করে রেখে গিয়েছিল একটা পেনসিল বােমা

সেই হত্যাকারী আল্লার সেবক, ধর্মের ঝাণ্ডা তোলার জন্য

রক্তনদী বইয়ে দিতেও দ্বিধা নেই যারা প্রাণ দিল তারাও আল্লার সন্ততি

পাঁচ ওয়ক্ত নিত্য নামাজ পড়া দুই প্রৌঢ়ও নিস্তার পায়নি

এক মৌলবী সাহেবের ডান পা অদৃশ্য হয়ে গেছে হায় আল্লা, হে খােদাতালা, হে খােদাতালা...

মনরােভিয়া, ডেট লাইন একত্রিশে অক্টোবর কোথায় গেল সেই পাঁচজন আমেরিকান নান? আজীবন ব্রতচারিণী, তারা শরীর-মন নিবেদন করেছিল যীশুকে

আর্তের সেবায় গিয়েছিল দেশ ছেড়ে অমন সুদূরে কোথায় তারা? না, হারিয়ে যায়নি, পাওয়া গেছে পাঁচটি শরীর

লাইবেরিয়ায় যুযুধান দু পক্ষের গােলাগুলির মাঝখানে পড়ে

ভূলুণ্ঠিত, বেআব্রু, রক্ত-কাদায় মাখামাখি

পরম করুণাময় যীশু কি সেই সময় চোখ বুজে ছিলেন?


বােসনিয়া-সারবিয়াতে শুরু হচ্ছে গ্যাস যুদ্ধ এতকালের প্রতিবেশী, শুধু ধর্মভেদের জন্য এত ঘৃণা?

পশুরাও তাে এমন ধর্মে বিশ্বাস করে না মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীদের পুড়িয়ে মারছে যে বর্ণগর্বী হিন্দুরা

তারাই বাড়িতে বসে শ্লোক আওড়ায়, সব মানুষেরই মধ্যে রয়েছেন নারায়ণ!


অন্য কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম, কলম সরছে না আমার

না, কবিতা আসছে না, ইচ্ছে করছে না ছন্দ মেলাতে

খবরের কাগজে, বেতারে, দূরদর্শনে শুধু মৃত্যুর নির্লিপ্ত ধ্বনি

অসহায় বিরক্তিতে ছটফট করছে আমার সমস্ত শরীর

ধর্মশাস্ত্রগুলির মহান বাণী টুকরো টুকরো মনে পড়ে, তাতে আরও কষ্ট হয়

'হায় ধর্ম, এ কী সুকঠোর দণ্ড তব?'

আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ি, কয়েক পা গিয়েই মনে হয় কোথায় যাচ্ছি?

কেন উঠলাম, কেনই বা ফিরে গিয়ে বসবাে টেবিলে কবিতা হবে না, তবু লিখে যাচ্ছি এই পঙক্তিগুলি, না, ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকদের জন্য নয়, উন্মাদ জল্লাদদের জন্যও নয়।

শুধু আগামী শতাব্দীর দিকে ছুঁড়ে দেওয়া এই সামান্য দীর্ঘশ্বাস

মানুষকে ভালােবাসা ছাড়া মানুষের আর কোনাে ধর্মই থাকবে না

তখন, তাই না?

কাব্যগ্রন্থ

' রাত্রির রঁদেভু '


মহাধার্মিক

-জামাল আনসারী


আদা,রসুন আর পেঁয়াজ খেলে

তুমি অধার্মিক,জগতের মহাপাপী!

নরকেও তোমার হবে না ঠাঁই!

গরুর গু আর মুত সে যে  উৎকৃষ্ট খাদ্য !

খাও, আরো খাও হে মহাধার্মিক!

স্বর্গে হবে তোমার অনন্ত ঠাঁই।


এ দেশ, ধার্মিক শ্রেষ্ঠ দেশ ―

কোনটা ধর্ম আর কোনটা অধর্ম

এখানে বিচার করে বলা বড় দায়.

রসুন খাওয়া পাপ, ঘুষ খাওয়া তো নয়!

নেতা, মন্ত্রী  থেকে আমলা - গামলা

কে আর সাধু ! কম বেশি সবাই ঘুষ খাই।



দলিত, অস্পৃশ্য বলে যাদের নেই অধিকার,

ধর্ম থেকে, কর্ম থেকে সমাজ থেকে তারে

যুগ যুগ ধরে নির্মম ভাবে করে যাও বহিষ্কার!

ধর্মের কি মহিমা! মানুষ বলে তারে করেনি স্বীকার,

তারা অস্পৃশ্য! কিন্তু ধর্ম মতে তাদের দেহ অস্পৃশ্য নয়।

তাই তুমি মহাধার্মিক!  সুযোগের করো সৎ ব্যবহার।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929