প্রার্থনালয়
– হুমায়ুন আজাদ
ছেলেবেলায় আমি যেখানে খেলতাম
তিরিশ বছর পর গিয়ে দেখি সেখানে একটি
মসজিদ উঠেছে।
আমি জানতে চাই ছেলেরা এখন খেলে
কোথায়?
তারা বলে ছেলেরা এখন খেলে না, মসজিদে
পাঁচবেলা নামাজ পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বুড়িগঙ্গার ধারে
বেড়াতে গিয়ে
যেখানে একঘন্টা পরস্পরের দিকে নিষ্পলক
তাকিয়ে ছিলাম আমি আর মরিয়ম,
গিয়ে দেখি সৌদি সাহায্যে সেখানে একটা লাল
ইটের মসজিদ উঠেছে।
কোথাও নিষ্পলক দৃষ্টি নেই চারদিকে
জোব্বা আর আলখাল্লা।
পঁচিশ বছর আগে বোম্বাই সমুদ্রপারে এক
সেমিনারে গিয়ে
যেখানে আমরা সারারাত নেচে ছিলাম আর পান
করেছিলাম আর নেচে ছিলাম,
১৯৯৫-এ গিয়ে দেখি সেখানে এক মস্ত মন্দির
উঠেছে।
দিকে দিকে নগ্ন সন্ন্যাসী, রাম আর সীতা,
সংখ্যাহীন হনুমান;
নাচ আর পান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ফার্থ অফ ফোর্থের তীরের বনভূমিতে
যেখানে সুজ্যান আমাকে
জড়িয়ে ধ’রে বাড়িয়ে দিয়েছিলো লাল ঠোঁট,
সেখানে গিয়ে দেখি মাথা তুলেছে এক গগনভেদি
গির্জা।
বনভূমি ঢেকে আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত
ঝুলছে এ ক্রুদ্ধ ক্রুশকাঠ।
আমি জিজ্ঞেস করি কেনো দিকে দিকে এতো
প্রার্থনালয়?
কেনো খেলার মাঠ নেই গ্রামে?
কেনো নদীর ধারে নিষ্পলক পরস্পরের দিকে
তাকিয়ে থাকার স্থান নেই?
কেনো জায়গা নেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধ’রে
চুম্বনের?
কেনো জায়গা নেই নাচ আর পানের?
তারা বলে পৃথিবী ভ’রে গেছে পাপে,
আসমান থেকে জমিন ছেয়ে গেছে গুনাহ্'য়
তাই আমাদের একমাত্র কাজ এখন শুধুই
প্রার্থনা।
চারদিকে তাকিয়ে আমি অজস্র শক্তিশালী
মুখমণ্ডল দেখতে পাই,
তখন আর এ কথা অস্বীকার করতে পারিনা।
রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র(?)
-জামাল আনসারী
করোনা অজুহাত আর তুমি দিও না।
শিক্ষাকে এভাবে আর ধ্বংস করো না।
মাথাটা ঠান্ডা রেখে একটু ভেবে দেখো―
চোখ- কান খুলে তুমি একটু হলেও শেখো।
লেখা পড়া ছেড়ে শিক্ষার্থী করোনাতঙ্কে মরে!
করোনা-ভাইরাস কি শুধুই স্কুলে বাস করে?
চলছে মিটিং, চলছে মিছিল, করোনা তো নাই
চলছে বাস, চলছে ট্রেন, ভাইরাসের ভয় নাই―
হাটে- বাজারে ভিড়, খোলা আছে শপিংমল!
শুধু স্কুলে প্রবেশ নিষেধ! চলছে সিনেমা হল।
সব তো স্বাভাবিকই আছে। শুধু স্কুলটা ছাড়া,
তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খোলার নেই কো তাড়া!
ভোটের পর ভোট আসছে, ঢেউ এর পর ঢেউ
কত যে ঢেউ আছে! বোঝেই না মানুষ কেউ।
করোনা ভাইরাস, তবে কি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র (?)
করোনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ব্যবসার মূলমন্ত্র!
ঢেউ উঠলেই কেন বন্ধ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?
যুব সমাজকে মূর্খ বানানো সরকারেরই ধ্যান।
শিক্ষা-ছাড়া ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত অন্ধকার
শিক্ষার্থীর স্বার্থে স্কুল-কলেজ খোলা দরকার।
ছিল ব্রিটিশ যেমন
-রবীন্দ্র নারায়ণ তালুকদার
কতো বড়ো পাল্টি বাজ
একটু ভাবুন বসে
কতো বড়ো কালো হাত
হিসেব করুন দেখে!
মায়ের গয়না চুরি করেছে
১৮ বছর বয়সে
নিজের দাদাই বলে দিয়েছে
প্রচারসভায় এসে!
৩৫ বছর অবধি ভিখারী ছিল
নিজের মুখের কথা
কখন আবার পড়াশোনা করল
বসুক বিচারের সভা!
স্টেশন ছাড়া চায়ের দোকান
কলেজে লাগিয়েই পড়া
ডিজিটাল পিন্ট মেশিনের আগে
হয়েছে মানপত্র গড়া!
বহুরূপী সেজে বলেছিল
২ কোটি চাকরি দেবে
কেমন সুন্দর ঘুরে দাড়াল
চাকরি গেল জলে!
বাড়লো বেকারত্ব-ক্ষুধার্ত
কমল শিক্ষিতের হার
জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া
দেখ গরীবের দিনকাল!
কর্পোরেট কতো আয় বাড়ালো
আবার তাদেরই টাক্সে ছাড়
গরীবের কোনও সুবিধা নেই
শুধু ভিক্ষে নিয়ে খাও!
গরীবকে গরীব একেজো করছে
নানান কুপথের সড়যন্ত্রে
ভোটে ২০লক্ষ্য ইভিএম হারিয়ে
কতো সুন্দর মসনদে!
বিচার শুধু নামেই আছে
বিচারকের দায়িত্ব কম
সুন্দর ইশারায় দেশ চলছে
ছিল ব্রিটিশ যেমন!!
কফিনবন্দী
-প্রদীপ চক্রবর্তী
হিজাব পরবো ? নাকি গেরুয়া পরবো ? ------------
শপথ নাও হাতে হাত রেখে, শুধু বই পড়বো।
ধর্ম নিয়ে অনেক তো হল, এবার জীবনের কথা বলো,
যুক্তির ইন্ধন নিয়ে মনুষ্যত্বের পথে চলো।
জাতপাতের নির্লজ্জ ধ্বজা এবার নামিয়ে নাও,
ভয়কে জলাঞ্জলি দিয়ে; সামনে এগিয়ে যাও।
ভাগ্যিস ভাগ্যটা নেই; জ্যোতিষের দাবি মতো,
পাথরের আংটি রোগ সারালে; কী কাণ্ডটাই না হতো।
করোনা সারাতে কোন্ পাথর?
জ্যোতিষের দাবি মতো,
কফিনবন্দী করে ফেল তাই
অন্ধ কুসংস্কার যত।