কবিতাগুচ্ছ ১৪

কবিরা


Nov. 20, 2024 | | views :88 | like:2 | share: 1 | comments :0

চোরের মায়ের বড় গলা

-সুকমল সরকার।


পচামাল আছে আমার দোকানে,

তবুও খদ্দেরে যদি নেয় কিনে,

তবে আমার দোষ কোনখানে?

আমার দোকানে যদি গু বিক্রি করি,

খদ্দেরে কিনে যদি করে কাড়াকাড়ি!

আমার দাপট তো চলবেই বাড়াবাড়ি।

যে গুরু রা, সবাইকে দেয় দীক্ষা,

তাদের নিজেদেরই নাই সুশিক্ষা,

কেউকেউ তো দেখি করে ভিক্ষা,

তবুও সবাই তাকে খুব সযতনে,

ঘটা করে বাড়িতে ডেকে এনে,

দীক্ষা নিয়ে লুটিয়ে পড়ে চরণে,

পা চেটেপুটে খায় ধার্মিক গনে,

পিতার চেয়েও তাকে বড় মানে,

গৌরবে বলে আমি দীক্ষিত এখনে,

আমার বেশি দুঃখ সেইখানে।

এরচেয়েও বেশি যাবেনা বলা,

কারণ চোরের মায়ের বড় গলা।

লেখক

-জামাল আনসারী


এই তো কিছু দিন আগের ঘটনা―

চোখ রাঙিয়ে পাঁচ পয়সার রাজনৈতিক নেতাটিও

তর্জনী উঁচিয়ে বলে গেল―

"এই লেখক!রাজনীতি নিয়ে কিচ্ছুটি লিখবি না!লিখলে ভাল হবে না!"

―ঠিক আছে! তাই হবে।তাই হবে।


এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে,

দুদিন পর, ধর্মের বর্জ্য পদার্থস্বরূপ ধর্মগুরু নামধারী,

আপাদমস্তক ভন্ড,লোভী লোকটিও

সর্বাঙ্গে নামাবলি জড়িয়ে কর্কশ ভাবে বলেছিল―

"এই লেখক !ভালো করে শুন ! ধর্মের কথা!

ধর্ম নিয়ে,জাতপাতের ভেদাভেদ নিয়ে একটিও শব্দ লিখবি না!  লিখলে কিন্তু ভালো হবে না।"

―আচ্ছা, ঠিক আছে বাবা,লিখব না। ...লিখব না।


পাড়ার জেলখাটা মস্তান  দলবল নিয়ে এসে,খিস্তি মেরে,

হুমকি দিয়ে এইমাত্র চলে গেল।

ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে জানিয়ে দিল―

"এই লেখক! কান খাড়া করে শুন! অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালাবি না।

ভুল করেও যদি কলমে হাত দিস,ঐ হাত কেটে জগন্নাথ বানিয়ে দেবো।"

ঠিক আছে বাবা। তাই হবে ।আর লিখব না।


সেদিন পাশের গ্রামের কোটিপতি দেশ বিদেশ খ্যাত বিচারপতিটিও কানে কানে বলে গেল...

"ভারতের বিচার ব্যবস্থার দিকে প্রশ্ন তুলবি না।আর ধর্মনিরপেক্ষতা,গণতন্ত্র নিয়ে কিছু বলবি না।

আর যদি প্রশ্ন করিস,তার ফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে।"

―আচ্ছা, ঠিক আছে। প্রশ্ন করব না।


যার গোপ-দাড়ি এখনও গজায় নি,তবুও পাড়ায় সমাজ-বিপ্লবী বলে পরিচিত,সেই কমিউনিস্ট ছেলেটি বড় বড় চোখ পাকিয়ে প্রকাশ্য রাস্তার মোড়ে জানিয়ে দিল―

"এই লেখক। কি সব লিখছিস?  সমাজের অসাম্য নিয়ে কিচ্ছুটি লেখবি না।কথাটা মনে থাকে যেন!নইলে...

সমাজের সর্ব স্তরের কাছ থেকে হুমকি, ধমকি, চোখ রাঙানি

সহ্য করতে করতে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া লেখকটি মুখের উপর প্রশ্ন ছুড়ে মারে, কেন? কেন লিখব না??

কমিউনিস্ট ছেলেটি ভুরু কুঁচকে বলে, "সমাজ বিপ্লব করা লেখকের কাজ নয়। "

―ও আচ্ছা।ঠিক আছে। লিখব না।


কেন লিখব? কাদের জন্য লিখব?

রাস্তার ফুটপাতের উপরে বসে থাকা ভদ্রলোকটির থেকে উত্তর এলো―"কলম থামাবে না।লিখে যাও। আমাদের জন্য লিখো।"

সাইকেল চালিয়ে যে শ্রমিকটি রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিল, সেই শ্রমিকটি জানিয়ে দিয়ে গেল― "আমাদের জন্য লিখো।"

রাস্তার পাশ থেকে সাফাইওয়ালা দাদু বলে ওঠে―

"লিখে যাও লেখক।আমরা তো আছি।আমাদের জন্য লিখো।"

স্কুলব্যাগ পিঠে নিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা হেঁটে হেঁটে স্কুল যেতে যেতে বলে গেল, ―কাকু ভয় পেয়ো না।আমরা আছি।আমাদের জন্য লিখো।''




সঠিক

-প্রদীপ চক্রবর্তী


কুষ্ঠী দিয়ে মানুষ বিচার

পাথর দিয়ে ভাগ্য,

কালো চামড়া,সাদা চামড়া

কে বেশী যোগ্য?


ধর্ম গ্রন্থে আছে সব-ই

শুধু খুঁজে নাও,

রোগ হলে ধর্ম কোথায়?

হাসপাতালে যাও।


বন্যা-ভূকম্পে সম্পত্তি ক্ষয়

যতই ডাকো ভগবান,

প্রকৃতিকে ভালবাসো

সে যে মাতৃসমান।


মুক্ত মনের মানুষেরা

সদাই সুখী হয়,

কুসংস্কারকে বিদায় করার

এটাই সঠিক সময়।


ওর চোখ নাই নাক নাই

-মোহাম্মদ আল্লারাখা


যে দেশে রাজনৈতিক নেতা

অন্য জাতের মেয়েদেরকে

ধর্ষণ করতে উৎসাহ দেয়

কবর থেকে অন্য জাতের

মেয়েদের মৃতদেহ তুলে ধর্ষণ করতে বলে

যে দেশে ঈশ্বরের উপাসনালয়ে

অন্য জাতের নেহাত এক বালিকাকে

আটকে রেখে সাতদিন ধরে ধর্ষণ করা হয়

মৃতপ্রায় মেয়েটিকে অসহ্য যন্ত্র‌ণা দিয়ে নরপশুর দল ধর্ষণ করতে করতে একটি মাংসের পিণ্ডে পরিণত করে মেরে ফেলে

যে দেশে ধর্ষকদের সমর্থনে জাতীয় পতাকা হাতে

মিটিং মিছিল হয়, বিক্ষোভ দেখানো হয়

যে দেশে দাঙ্গার সময় মেয়েদেরকে ধরে ধরে

ধর্ষণ করা হয় ঘরে বাইরে রাস্তা ঘাটে পার্কে

সে সব দৃশ্য আবার ভিডিও করে ছাড়া হয়

যারা দাঙ্গার ধর্ষণে অংশ নিতে পারেনি

তারা দাঙ্গার ধর্ষণের ভিডিও দেখে উপভোগ করে।

এসব নেতা মন্ত্রী জজ ব্যারিস্টার প্রশাসন বুদ্ধিজীবিদের সামনে ঘটে, সবাই দেখে, সবাই শোনে, সবাই নির্বিকার।

যে দেশে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তার দু পা টেনে দেহ চিরে ফেলা হয়, যেখানে অপরাধীদের বিচারের দাবীর চেয়ে শাসক ও বিরোধীদের রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে, কে কতো ফায়দা তুলতে পারবে ঘটনা থেকে।

যে দেশে রাজনৈতিক নেতা সভার মাঝে ঘোষনা করে অন্য রাজনীতির লোকদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার, তাদের মেয়েদেরকে ধর্ষণ করার

যে দেশে ধর্ষণে বাধা দিলে হাত পা হাড়গোড় ভেঙে দেওয়া হয়, জিভ কেটে নেওয়া হয়, গলায় দড়ি ওড়না পেঁচিয়ে মেরে মৃতদেহকেই ধর্ষণ করা হয়

তারপর ধর্ষক ঘটনা স্থলেই দেহ জ্বালিয়ে দেয়

কখনো পুলিশ গিয়ে রাতের আঁধারে জ্বালিয়ে দেয়।

যে দেশে নিম্ন শ্রেনির নারীদেহ মানেই উচ্চ শ্রেণির

লোকদের মুফতে ভোগের অধিকার ভাবা হয়।

যে দেশে নারীকে মানুষ নয় কেবল সন্তান উৎপাদনের পালিত প্রাণী ও ভোগের বস্তু ভাবা হয়।

যে দেশে ধর্ষকদের নয়, ধর্ষিতা নারী ও তার পরিবারের লোকদের সাজা হয়।

যে দেশে ধর্ষকদের জাত দেখে রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী মিডিয়া পুলিশ এমনকি নেটিজেনরাও সরব নীরব হয়।

যে দেশে ধর্ষকদের সমর্থনে কলেজ ছাত্র ছাত্রীরাও

মিছিল করে, উচ্চকণ্ঠে শ্লোগান দেওয়ার সাহস পায়!


সে দেশে ধর্ষণ হবে না তো কোথায় হবে?

সে দেশে মানুষ নয়, সব মনুষ্যরূপী পশু বাস করে

তুই তোরা কি মনে করিস ধর্ষণকারীদের উৎসাহ দেবো অপছন্দের জাতের, অপছন্দের লোকদের মেয়েদের দেহের উপর ধর্ষণ চালাতে?

আর সব তোদের ঘরের মেয়েরা নিরাপদে থাকবে?

ওরে! লিঙ্গের চোখ নাই নাক নাই

ওটা চোখে দেখে না গন্ধ শুঁকে না

নারী দেহের মধ্যাংশের ওই ছেঁদা টুকু পেলেই এঁফোড় ওঁফোড় করে দেয়।

পৃথিবীর চরম পরম সেরা আনন্দময় আদরের বস্তুকে

আজ যারা ঘৃণা বিদ্বেষ হিংসা দিয়ে জাগাচ্ছিস

পাশব প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে

অন্যদের নারীদেহ ধর্ষণ করতে

সে কালই তোর, তারই নিজের মা বোন স্ত্রীকে

পশুর চোখ নিয়েই এঁফোড় ওঁফোড় করবে।

ওর চোখ নাই নাক নাই

ওটা চোখে দেখে না গন্ধ শুঁকে না

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929