কবিতাগুচ্ছ ৭

কবিরা


Nov. 18, 2024 | | views :124 | like:0 | share: 0 | comments :0

অজ্ঞের রাজ

-প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল


কিছু মানুষ আজো বড়ো বেইমান,

হিংসা দ্বন্দ্বে প্রায় সকলেই সমান।


ধর্মের ধ্বজা করে যারা বহন,

তাদের‌ সবার হয় কলুষিত মন।


ধর্মের বিরোধিতায় মানুষ ব্যাজার,

সমাজটা তাই আজ  হলো ছারখার।


ধর্মের ধোঁয়ায় অন্ধকারে এই দেশ,

বক ধার্মিকরা করছে শুধু আয়েশ।


সত্যের গলায় পড়েছে দড়ির ফাঁস,

সত্যের তাই আজ হয়েছে বনবাস।


দেশে অন্ধ ভক্তের  ভীষণ ত্রাস,

মানবতা তাই এখন হচ্ছে হ্রাস।


অন্ধ বিশ্বাস মোদের মানতেই হবে,

সত্য বললে আজ জীবন নাহি রবে।


কবির কলম থেমে গেছে তাই,

অকারণে কে জেলে যেতে চাই।


অন্ধের কুশাসনে  অন্ধের এই দেশ,

অন্ধ ভক্তর ধরে শুধু সাধুর  বেস।


ধার্মিক ভণ্ড লাঠি হাতে খাড়া,

কুসংস্কার প্রচার করে তারা।


প্রতিবাদের ভাষা কণ্ঠেই যে রয়,

কলম ধরতে লাগে বড়ো ভয়।


অন্ধের দেশে শুধু ধর্মের বিকাশ,

এটাই হবে আগামীর ইতিহাস।


মহা অজ্ঞ যুক্তি যে মানে না,

অজ্ঞ কে দেখলেই যাবে চেনা।


অন্ধ পণ্ডিত অনেক আছে দেশে,

তারা রয় অন্ধ কে ভালো বেসে।


নির্বোধেরা মহাসুখে অন্ধের স্বর্গে,

যুক্তি প্রিয় না মরেও রয়  মর্গে।


সমাজ পতি সমাজের ঠিকাদার,

ধর্মানুভূতিতে ছাড়ে  হুংকার।


ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্ব আমি নাহি চাই?

দলিতরা পাক মানুষের বুকে ঠাঁই।


সকল ধর্মে যদি শান্তি খুব রয়,

ধর্ম নিয়ে লড়াই  কেন তবে হয়?


সৃষ্টির সেরা জীব পৃথিবীর মানুষ,

আজো তারা হয়ে আছে বেহুঁশ।


সকল কর্মের মাঝেই ধর্ম খুঁজি,

কর্ম‌ হয় যে সকল ধর্মের পুঁজি। 


শিক্ষক-বন্দনা

-শ্রেষ্ঠী দে

শিক্ষক মানে আলোর দিশারী,

জীবনের পথপ্রদর্শক।

শিক্ষার মহাসাগরে তিনি,

জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্জ্বলক।

শিক্ষক জাগান রুক্ষ পাহাড়ে,

সবুজ প্রাণের সাড়া।

তাঁরই স্পর্শে চূর্ণ হয়,

অজ্ঞানতার বদ্ধ কারা।

শিক্ষক মানে ধূসর মরুতেও ----

অমৃতের সন্ধান,

তাঁরই আশ্রয়ে বাঁচে অবহেলিত -

হাজারও কোমল প্রাণ।

শিক্ষক হলেন নৈতিকতা-আদর্শের

সমাহার,

তিনিই পার্থিব জগতে আজও

পরম জ্ঞানের আধার।

শিক্ষক মানে জীবনের পথে

সকল সমস্যার সমাধান,

আনেন জীর্ণ নদীর বুকেও

মিষ্টি মধুর কলতান।

শিক্ষক হলেন আলোর পথের

সত্য নির্ভীক যাত্রী,

তাঁরই নির্দেশিত জীবনাদর্শে চলেছে

সহস্র ছাত্রছাত্রী।

শিক্ষক মানে শ্রদ্ধার পাত্র

শিক্ষার অতি সুজন,

ভালোবাসার আবরণে করেছেন

উকিল-ডাক্তার সৃজন।

জন্ম থেকে মায়ের কাছে

শুরু শিশুর শিক্ষা,

জীবনে চলার পথে শিক্ষক দিলেন

সততার ব্রতে দীক্ষা।



সংক্রমণের কড়চা

-সাবিত্রী দাস

সকল বিপদ  করতে কাটান হাঁকেন তারা নিদান,

কবচ তাবিজ হোম-যজ্ঞের হরেক বিধি-বিধান।


বাক্ -সিদ্ধ,দিক-সিদ্ধ, সু-সিদ্ধের শঙ্কা,

ডুবলো এবার তরী নাকি বাজলো মৃত্যু-ডঙ্কা!


দিন ফুরিয়ে সিঁধেল আঁধার এবার বুঝি নামে,

নীরবতার ঢল নেমেছে গৌরবময় ধামে।


সত্যি নাকি অস্তাচলে সিদ্ধ রবি-শশী!

সেবা-যজ্ঞের দিব্যারতি, বচন এখন বাসি।


বিশ্বজোড়া মৃত্যু-মিছিল কাঁপছে জীবন-ছন্দ,

তাহলে কী সংক্রমণে ব্যবসা এবার বন্ধ!


অষ্টোত্তর শতনামের হরেক কিসিম বাবা,

জননীরাও কম যান না বেড়াল বগল দাবা!


আস্থা তবে শেষ হলো কী, চলছে গজব আড্ডায়।

পঞ্জিকাদির অর্থনীতি সংক্রমণের গাড্ডায়!


বাকসিদ্ধা  জননীদের কণ্ঠ এখন রুদ্ধ,

লক-ডাউনে তারাও নাকি বেজায় আছেন ক্রুদ্ধ।


যেতে যেতেও যায় নারে ভাই  এমন ইমপ্রেশন!

অতিমারির জাস্টিফাই এর দারুণ এক্সপ্রেশন!


পুরুষ্টু ঐ শিখার বাহার গায়ের নামাবলী

বিংশোত্তরী মতে এখন পাড়ছে তারা গালি।


কোন তরীতে মিলবে এখন কে কোন মোহনায়,

সংক্রমণেও  বিশ্বায়নের আকাশ ছুঁয়ে যায়।


নিতে হবে সাম্যের পাঠ

-প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল


দাম বাড়াতে ধর্ম গ্রন্থ

রাখো সবাই ঘরে;

দামী জীবন রক্ষা করো

বিজ্ঞানের বই পড়ে।


ধর্ম গ্রন্থে ডুবে থেকে

বড়ো হলো কেবা?

বিজ্ঞান পড়ে ডাক্তার হয়ে

জীবের করো সেবা।


ধর্ম গ্রন্থে ভেদাভেদি

লিখে নিজের মতো;

দ্বন্দ্ব সদাই লাগেই থাকে

হিংসা অবিরত।


বিজ্ঞান শেখায় সাম্যের নীতি

সব মানুষই সমান;

ভিন্ন জাতের এক‌ই রক্ত

বিজ্ঞান করলো প্রমান।


ধর্ম গ্রন্থ পড়ে মানুষ

যদি ভদ্র হতো;

ধর্মের নামে খুনোখুনি

এতো নাহি হতো।


ছোটো থেকে শিশুর মনে

জাগাও বিজ্ঞান কথা;

জীবন যুদ্ধে জয়ী হবে

কমবে মনের ব্যথা।


অন্ধ জনে ধর্ম গ্রন্থে

ডুবে সদা থাকে;

নিজের মতো ধর্মের বাণী

শুনায় যাকে তাকে।


মনে রেখো বিজ্ঞান পড়লে

সভ্য হয়ে যাবে;

সবার মাঝে থাকবে তুমি

পরম আদর পাবে।






















কত বিলাসিতার অভাব।

-ঋতম সাহা

ধর্ম হোক বা বিজ্ঞানের নাম, হোক কুসংস্কারের দাপট বা প্রযুক্তির খাম,

একলা মানুষ হোক বা গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র, বাড়িয়েছে বারবার প্রকৃতির অভিমান,


করে ধ্বংশ, প্রকৃতি একাংশ, মেতেছে মানুষ একপ্রকার নিজেরই হত্যালীলায়,

এভাবেই চললে সংকটে ভবিষ্যত, জানিনা কীভাবে থাকবে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায়।


এই সৃষ্টির সৌন্দর্য্যের অনেক তত্ত্ব, আদি থেকে অভিনবত্ব,

কেও বিশ্বাসী যুক্তি তর্কে বিজ্ঞানী পন্থায়,

কারো মতে মানব সৃষ্টি নাকি আডাম ইভের ভালোবাসায়।

নানা মানুষের নানা মত, নানা বিশ্বাসের নানা পথ।


কোনোটা মিথ্যা, কোনোটা সত্য,

কোনোটা আগামী কোনোটা অতীত বৃত্তান্ত,

পরিবেশের সুস্থতাই শেষকথা এখন, নয়তো আগামীর অপেক্ষায় ভয়ংকর ভবিতব্য।


প্রকৃতির যে সকল সম্পদ দূষিত আজ,

আনতে হবে সেই  ক্ষতিপূরনের নতুন পথ,

হবে দূর প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে কলুষতার ভাঁজ,

সকলের সামনে এখন আগামীর নতুন শপথ।


আমাদের অভ্যাসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, বন্য জীব বা পতঙ্গ ক্ষুদ্য,

করতে হবে সুরক্ষিত তাদের অস্তিত্ব,

সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের কারিগর আমরা সকলে,

প্রত্যেকের জীবনের রয়েছে প্রকৃতির সমান গুরুত্ব।


ফেরাতে হবে ধোঁয়াশা মুক্ত আকাশে শুদ্ধ সমীরন, ফেরাতে হবে বর্জ্যমুক্ত স্নিগ্ধ শীতল নদীর জল,

ফেরাতে হবে দূষনমুক্ত শস্য শ্যামলা উর্বর ভূতল, ফেরাতে হবে মহীরূহে ঘেরা সবুজ সম্বল।

যুব সমাজ

-জামাল আনসারী


একবিংশ শতাব্দীর যুব সমাজ মেরুদণ্ডহীন,দুর্বল,

প্রতিবাদহীনতায়,ভেঙেছে তাদের যুগ যুগান্তরের সঞ্চিত মনোবল।

সাম্প্রদায়িক  বিষবাষ্পে,পৃথিবী  দিশাহারা,

দ্রুত থেকে দ্রুততম বেগে ধাবিত,

হিংসার লেলিহান শিখা।

বিশ্বের কেউই আজ আর সুরক্ষিত নয়,

ক্রমবর্ধমান বাক্ স্বাধীনতার কণ্ঠরোধে__

সবাই  ভীত, সন্ত্রস্ত,

ঘোষিত মানবতাবাদীরাও বর্তমানে বাক্ হারা।

প্রাণ চঞ্চল যুব সমাজ তবে কি নীরব দর্শক?

না, তা হয়তো নয়..

বহু দলে আজ তারা ছন্নছাড়া।


পৃথিবীর কোনায় কোনায় দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে

পৌঁছে গেছে উগ্রবাদের রণংদেহি হুংকার।

দৈনিক খবরের কাগজে,টিভির পর্দায়,

এখন চোখ রাখলেই শোনা যায়,

অসহায় মানুষের গগনস্পর্শী বুকফাটা  করুণ আর্তনাদ।


ধর্মের জন্য, কল্পিত প্যুণ্যফলের আশায়,

কত প্রানচঞ্চল, তরুণ তরুণী,

না বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়ে,

ধর্মের ষাঁড়েদের পাতা  ফাঁদে।

হাজার হাজার কুকর্ম করেও

তারা স্বর্গে যাওয়ার জন্য অঝোরে কাঁদে।

হায় রে দেশের যুব সমাজ!

অসীম নীল মত্ততার টানে,বিকৃতরুচির  উত্থানে,

ক্রমশ অবক্ষয়িত  যুব সমাজ।

যারা গোটা পৃথিবীকে উল্টে পাল্টে,

দেওয়ার অসীম ক্ষমতা রাখে,

তারা কেন আজ ভয়ে কাঁপে?

এই যুব সমাজের দুর্দশা  দেখে,

বসুন্ধরাও  আজ নীরবে কাঁদে।


এ যুব সসমাজের ঘুম ভাঙবে  আর কবে?

তারা খুলে ফেলবে কবে নিজের চোখের ঠুলি?

অদৃশ্য বিভেদের মায়াজাল  ছিন্ন করে,

মানুষের সাথে মানুষের হবে কি কোলাকুলি?

এ ধরাতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই শ্রেষ্ঠ নয়,

আমরা সবাই মানুষ....

এটাই হোক আমাদের একমাত্র পরিচয়।












লকডাউন -৮

-জামাল আনসারী

করোনা এসে মানুষে মানুষে বাড়িয়ে দিল অবিশ্বাস,

মানবিকতা যতটুকু বেঁচে ছিল, সেটারও হবে বিনাশ।


মানুষের বিপদ হলে, মানুষ সাহায্যের জন্য যেত ছুটে,

প্রতিবেশীর দুঃচিন্তায়, অনেকের রাতের ঘুম যেত টুটে।


সেই সব সুখের দিন আর নেই। সব কিছু হয়েছে অতীত।

ভবিষ্যতে ধংসের দোরগোড়ায় মানুষ হয়েছে  উপনীত।


দয়া, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, বিশ্ব থেকে নিচ্ছে বিদায়।

পিতা মাতার করোনা, নিজের সন্তান এড়িয়ে যাচ্ছে  দায়।


এতো সুন্দর পৃথিবীটা ভর্তি হচ্ছে স্বার্থপর আর স্বার্থপরে।

করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ― পড়ে থাকছে অন্ধকার ঘরে।


যে সন্তানকে কুড়ি বছর ধরে লালন পালন করে মাতা,

সেই সন্তান অকৃতজ্ঞ, যে দায়িত্ব পালনে ধরে না ছাতা।


ধীরে ধীরে লুপ্ত হচ্ছে মানবিকতার প্রশস্ত ডাল- পালা,

যারা ফুটপাটবাসী,যাদের  মাথা গোঁজারও নাই  চালা।


লকডাউনে ওরা কেমন আছে? খোঁজ নিচ্ছে না কেউ,

আবার শুনছি আসতে চলেছে, করোনার তৃতীয় ঢেউ।

কত মানুষ না খেয়ে মরছে দেশে? সঠিক হিসাব তার নাই,

করোনার মরছে কত? মিনিটে মিনিটে তার হিসাব পাই।


করোনায় মরুক আর না খেয়ে মরুক, দুটো মৃত্যুই সমান,

সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে, কমবেই  মৃত্যুর ব্যবধান।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929