ভোটের গ্রাসে
-দেশব্রত বিশ্বাস
ভোট আসে, ভোট যায়, গনতন্ত্রের পরবে
গনতান্ত্রিক গালিচা সাজে আমজনতার শবে।
লাল নেতা, সবুজ নেতা,গেরুয়া কিম্বা নীল
নেতাদের আয় বাড়তে থাকে, বন্ধ হয় মিল।
তোমার নেতা, আমার নেতা উৎসবে বাজে শ্লোগান,
ভোটপর্ব মিটে গেলেই নেতারা দেন পিঠটান।
কেউ বা জেতে, কেউ বা হারে, কেউ বা করে আপস
হেরো নেতার কিস্যু হয় না, সমর্থক পোহায় রোষ।
যেই মা আজ হারালো সন্তান, তার দুঃখ বুঝবে কে?
সব নেতারাই ঘুরে যাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
চারদিক জুড়ে মুষ্ঠিমেয়কে ক্ষমতায় আনার দায়ে
গনতন্ত্রের অজুহাতে কেন সাধারণ প্রান হারায়?
জনগনের সেবায় নাকি আকূল যাদের 'দিল'
কিস্যু কাজ না করেও তাদের বাড়ছে তহবিল।
গনতন্ত্র আসলে স্বৈরতন্ত্রই, মুখোসটাই কেবল ভিন্ন
নির্বাচন নামের নাটকের আড়ালে আমরা জরাজীর্ণ।
আর কত মা সন্তানহারা হলে ভোটদেব হবে তুমি শান্ত?
অনেক হয়েছে, আর না থামুক ভোটের বাঈজী নেত্য।
গণতন্ত্রের চাবিকাঠি
-জামাল আনসারী
রাস্তা কেটে ,পেরেক পুঁতে, ভাবছো তুমি কি?
ধমকে, চমকে, চোখ রাঙিয়ে, হবে না কিছু।
দেশ সবার। নয়, তোমাদের বাপের সম্পত্তি।
কৃষকের দাবি না মানলে হটছে না দেশ পিছু।
অন্নদাতার বুকফাটা কান্না, হবে নাকো ব্যর্থ
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীরা,উত্তাল প্লাবন
বলছে সবাই, ফ্যাসিবাদী সরকার অপদার্থ।
কার সাথে যুদ্ধ?কৃষকরাই দেশের জনগন।
কৃষক আন্দোলনের পাশে ফেসবুক, টুইটার
কৃষকের সমর্থনে হাত তুলেছে গোটা দেশ ।
কান পেতে শুনে রাখো ফ্যাসিবাদী হিটলার,
বেশি দিন নেই তোমার জামানা হবেই শেষ।
কৃষক আন্দোলন লিখছে এক নতুন ইতিহাস
তুমি যদি কেড়ে নাও অন্ন দাতার ভাতের বাটি।
জেনে রেখো, অহঙ্কারই পতন। হবেই সর্বনাশ।
অন্নদাতার হাতেই আছে গণতন্ত্রের চাবিকাঠি।
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
-জামাল আনসারী
এক সময় যারা চোর ছিল, এখন তারা সাধু
সুযোগে কাক কোকিল হয়,যদি থাকে জাদু।
উভচরের স্বভাব যেমন জলে- স্থলে বসবাস।
বর্ণচোরা আমগুলি যেন সোনার রাজহাঁস―
মরসুমী বিহঙ্গম যত প্রতি শীত কালে আসে
এই সময়েই ভোটের গন্ধ গ্রাম গঞ্জে ভাসে।
কালো টাকা, সাদা টাকা ― টাকার ছড়াছড়ি,
ভোট ভিখারি বাবুরা সব করে দৌড়াদৌড়ি।
গণতন্ত্র আর ধনতন্ত্রে নেইকো বিশেষ ব্যবধান
মুখে গণতন্ত্র আর কাজে ধনতন্ত্রের জয়গান।
নীতি,আদর্শ, বলে রাজনীতিতে কিছুই নাই ঠাঁই
সবার উপরে ভোট সত্য, ভোট বড়োই বালাই ―
মারপিট, গোলাগুলি,দাঙ্গা,গণহত্যা― কিছুই নয়,
গণতন্ত্রের মহান উৎসব। তাই একটু আধটু হয় !
রাম,শ্যাম যদু মধু, রাজনীতিতে পার্থক্য নাই―
অদ্ভুত মিল। "চোরে চোরে মাসতুতো ভাই" ভাই।
শ্রাদ্ধে চুল ফেলা!
- রাজা দেবরায়
শ্রাদ্ধে ফেলতে হবে,
মাথার সব চুল!
চুল না ফেললে তবে,
সব শিক্ষা ভুল?
চুল ফেলে বোঝাতে হবে,
মনের অবস্থা!
না ফেললে সমাজ নেবে,
তোমার ব্যবস্থা!?
কেউ খোঁজ রাখেনি
-শুভায়ূ রুডান
এই পাড়ায় যখন মহাসমারোহে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে হরিনাম সংকীর্তন চলছে
ঠিক সেই সময়ে ও পাড়ার রহমত বই খাতাকে বিদায় জানিয়ে কাজ নিয়েছে সবজির আড়তে
মাধ্যমিকে অঙ্কে একশোতে একশো পেয়েছিল ছেলেটা।
প্রথম প্রথম অনেক সংবর্ধনা পেয়েছিল
তারপর কালের নিয়মে ভুলেছে সবাই
কেউ খোঁজ রাখেনি।
ও পাড়ায় যখন বিরাট আয়োজনে
চলছে বিশাল ঐতিহাসিক ইসলামীক জলসা
বিখ্যাত বক্তাদের বক্তব্যে ওয়াজ জমে উঠেছে।
ঠিক তখন এ পাড়ার অসীম হাতে তুলে নিয়েছে বেলচা,
একসময় হাতে থাকতো রংতুলি
এই এলাকার সেরা আঁকিয়ে,
নিজের দক্ষতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগও পেয়েছিল ছেলেটা।
তারপর যা হয়,পেটের টান তুলির টানকে হার মানাল,
কেউ খবর রাখেনি।
আগামী বছর ওরাও হয়তো বিশ পঞ্চাশ, যা পারবে চাঁদা দেবে,
কীর্তন হবে আরও জাঁকজমকপূর্ণ, জলসা হবে আরও বিশাল, ওয়াজ করতে আসবেন সেরা বক্তা।
এভাবেই চলবে,
যাদের অঙ্কের গবেষক হবার কথা ছিল, কথা ছিল যারা আর্টিস্ট হবে!
তারা সবাই অর্থের অভাবে আড়ালে রবে।
কেউ খোঁজ রাখেনি, কেউ খবর দেয়নি
কেউ খোঁজ নেবেনা, কেউ খবর দেবেনা।।
বিজ্ঞানের দিনরাত্রি
-প্রদীপ চক্রবর্তী।
বিজ্ঞানীসম্মত হলেও 'ধর্ম '
বিজ্ঞানসম্মত নয়,
ঈশ্বর বিশ্বাস এর মূলে আছে
অজ্ঞতা;লোভ;ভয়।
মঙ্গলেতে যান নেমেছে
তবু মুখ ভার,
দুর্দশার মূলে আছে
অন্ধ কুসংস্কার।
আঙুলেতে পলা-নীলা
মুখেতে ভাষণ,
সেই দেশে হবে নাকি
'আদিত্য মিশন' !
মানুষের জাত নাই
সবাই সমান,
মানুষই বানাতে পারে
দেশকে মহান।
বিজ্ঞানের দরবারে লহ তাই শরণ,
সব ফলের পিছনেতে বৈজ্ঞানিক কারণ।
জালিয়ানওয়ালাবাগ
-রীতা বসু
হে জালিয়ানওয়ালাবাগ!
এখনো তোমার দেহে তো দেখি কালো রক্ত ও বুলেটেরদাগ!
১০৮ বছর আগে, এই দিনে ই এক শান্তি পূর্ণ সমাবেশে,
যোগ দান করে ছিলে ওই মাঠে,
একটা ই ছিল প্রবেশের দ্বার,
কেউ কোথাও নেই আর,
হঠাৎ উপস্থিত হল দস্যু আয়ার,
ঢুকে ই সে আদেশ করল, "ফায়ার "!
বাস্।১৬০০ রাউন্ড গুলি চললো, শিশু থেকে নারী সবাই কে ওরা হত্যা করলো,
শতশত লোক কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিল।
পৃথিবীর জঘন্যতম গণহত্যা ঘটে গেল!
সারা বিশ্ব হল স্তম্ভিত,
এত ভয়াবহ, এত উন্মত্ত,
রবিঠাকুর ত্যাগ করলেন " নাইট উপাধি,
এন্ডরূজ বললেন, "a massacre, a butchery "......
এত পাশবিক, এত মর্মান্তিক,
বুক জ্বলে যায়, বৃটিশ কে ধিক্।অফিসার ডায়ার!আদেশ দিয়ে ছি লে যে ডায়ার,
কি শাস্তি তুমি পেলে,
এক পাঞ্জাবী বিদ্রোহী র এক গুলিতেই তো মাটিতে লুটিয়ে পড়লে!
এভাবে কি অন্যের দেশ দখল করে থাকা যায়?
তাই তো বাধ্য হলে এদেশের পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে,
মরি হায় হায়!!!
মা , তোমার জন্য
- মৌমিতা দে
মা মানে পরম আদরের
অন্তহীন স্নেহ ,
সুখ দুঃখের সঙ্গী সাথী
ভালোবাসার মোহ।
মা মানে ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে
দেখায় পথের দিশা,
সারাজীবন সকলকে
আগলে রাখার আশা।
মা মানে সব দুঃখ বুকে চেপে
সদাই হাসিমুখ,
সব কষ্ট মুছে দিয়ে
ভরিয়ে দেওয়া সুখ।
মা মানে সকল অন্যায় মেনে নিয়ে
বুকে দেয় স্হান
যার কোলেতে মাথা রেখে
স্বস্তি পাই প্রাণ।
অনাধুনিক
- উদয় নন্দী
সন্তানহারা অশ্রু শ্রাবণে ,
প্রস্তরীভূত মা।
অধরা, অন্ধ প্রেমে,
পাথুরে প্রতিধ্বনি ধনী ।
পৌরাণিক হলেও তবে
অনভিপ্রেত নয় ।
ফুল জমে জমে পাথর হওয়ার সুভাষিত ।
তেমনি সুন্দর-সত্য বুঝি , পাথরে যখন ফুল ফোটে ।
পাথরের বুক চিড়ে বেরিয়ে আসে জীবনানন্দ জল।
তবুও প্রশ্ন থেকে যায় ,
অজন্তা ইলোরায় কি মেলে
রক্তমাংসের উম ?
জুড়ায় বোশেক জ্বালা ?
যদি তাই হয় ,
তবে কেন বোবা হয়ে যায়
"অগ্নিবীণার”-এর কবি ?
কেন স্ফটিকজল ডাকতে ডাকতে
রাজকুমারের সামনে লুটিয়ে পরে স্কাইলার্কের মত ---
স্ব-সৃজন মাধুরীমূর্তির সামনে নিথর নিথর হয়তো কোনো রামকিঙ্কর ।