পাপীর কান্না
লি খে ছে ন – অ শো ক দা স চা র্বা ক
পাপীসব করে রব
রাতি পোহাইল,
নরকের ভয়ে মরি
দেবীকে ডাকিল।
মন্দিরে কাঁসর ঘন্টা
উঠিল বাজিয়া,
জোটে যত পাপীগণ
ছুটিয়া ছুটিয়া।
কীর্তন করিয়া ওরা
নাচিতে লাগিল,
দেবনামে ধরাধাম
বিষিয়া উঠিল।
যার পাপ বেশী যত,
বেশি যার লোভ পরিমাণ,
গলা ফাটে তার তত
তেজী নেচে যায় যে পরান।
নরকের ভয়ে মরে
যত ভক্তগণ,
করে তাই ইষ্টনাম
করিয়া যতন।
স্বরগের লালসায়
দেবে ফুল ছুঁড়ি,
দান ধ্যান করে তারা
পাপে ভরা ভুঁড়ি।
শত টাকা চুরি করি
দুই টাকা দান,
ভক্ত ভাবে হলো বুঝি
পাপ সমাধান।
কানদিতে লাগিল যত
ভীত সাধুগণ,
"নরকে নিও না মোরে
স্বর্গ দাও পণ। "
এটা দাও ওটা দাও
(এট্যাং দেহি ওটাং দেহি)
গাহি লোভীগন,
দেবতার চরণেতে
কান্দে অনুখন।
দেবতা বলেন,"ওরে
পাপী বাছাধন,
উৎকোচ পাইয়া পাপ
না করি খণ্ডন।"
আমি নেতা আমলা নই
ভাংগিব নিয়ম,
পূজা পেয়ে দিব বর
ত্যেজিয়া ধরম।
প্রকৃতির নিয়মেতে
পৃথিবীটা ঘোরে,
কোন ভগবান সেটা
থামাতে না পারে।
ঘুষ দিয়া দেবগনে
কেনা নাহি যায়,
বৃথা দাও অঞ্জলী
ভুলি নিজ দায়।
নিয়মের দাস আমি
বড় অসহায়,
স্বরগে আনিতে নারি
চাতুরী সহায়।
যে যার কর্মের ফল
সবে ভোগ কর,
বৃথা পূজা চাটুকারী
ঘুষদান ছাড়।
কর্মমত পাওনা সব
নিয়মেতে পাও,
প্রাপ্যবেশী লভিবেনা
যত পূজা দাও। "
গাহিল চার্বাক ঋষি
শুন মন দিয়া,
ধান্দা ধর্ম ছাড়ি দাও
মানবধর্ম নিয়া।
রচনা কাল ২০০১ বেলেঘাটা সুভাষ সরোবরে ভোরের নাচ কীর্তন দেখতে দেখতে।
সমালোচনা সম্পাদক / asokdas.godless@gmail.com
মিসাইল
লি খে ছে ন – সা ম্য
সন্ধ্যা নামার পরে,
কলকাতা শহরে,
পার্কস্ট্রিট উড়ালপুলের নীচে,
কাপড় বিছিয়ে,
ঘোড়ার গু আর মানুষের পেচ্ছাপের পাশে শুয়ে,
অন্ধকারে ভয় পেয়ে,
নাঙ্গা শিশু বড় রাস্তার দিকে ছুটে যায়।
তখনই হঠাৎ প্রায়,
আকাশেতে আলো জ্বেলে,
তুচ্ছ বিষয় দূরে ঠেলে,
ঔষধ চাইল ডাইল -
উড়ে যায় মিসাইল।
অবরোধ হবে আজ,
মানুষের নাই কাজ!
কোথায় এ শীতের বেলা -
নন্দন বইমেলা -
নতুন প্রেমিক আশ,
কবিতা লেখার প্রয়াস,
এর মাঝে যত সব,
"কাজ চাই" তোলে রব!
চাই নিরিবিলি ঘর,
নিয়ন আলোর স্বর।
আলো জ্বালে মহানীল,
নিউক্লিয়ার মিসাইল।
দুর্নীতি শিখরে,
পথ জুড়ে ভুখা রে,
তোদের জন্যে আজ
সেজেছি যুদ্ধ সাজ!
ভোট ভোট ভারী মজা,
মরে শুধু কিছু প্রজা।
বিধানসভার বিপরীতে,
জনগণকমিটিতে
জড়ো হয় এই বেলা,
বেস্পতি বারবেলা
কোন ভূতে মারে ঢিল?
কাহাদের মিসাইল?
দুঃসময়
লি খে ছে ন – স জ ল কা ন্তি টি কা দা র
মায়ের চোখে জল কেন আজ
জানিস কি কেউ তোরা?
চারদিকেতে গোলা বারুদ
চলছে ছুরি ছোরা!
স্বাধীনতার এই বকলমে
স্বেচ্ছাচারই চলছে
নেতারা সব কালো টাকায়
গাড়ী বাড়ী করছে!
ছোট্ট শিশু দুধের শিশু
ফুট পাতেতে ঘুরছে
দাদারা সব তাদের বাড়ী
টাইলস দিয়েই মুড়ছে।
ধর্ম নিয়ে চিৎকার শুধু
ধর্ম কোথায় আছে!
চারদিকেতে আঁধার দ্যাখো
ধর্ম পিশাচ নাচে--
উন্মত্ত আজ তোমার ছেলে
উদ্ধত পতাকা নিয়ে
মানুষ মেরে হাত যে রাঙায়
ধর্ম দোহাই দিয়ে!!
পুলিশকে আজ সততার কথা
বলতে মুখে বাধে
খেলার পুতুল তারা যে সব
দেশ নেতাদের হাতে।
মাকে আজ বোকা বানিয়ে
শিশু চুরি হচ্ছে
নেতারা সব মঞ্চে উঠে
মিথ্যে ভাষণ বলছে!
মনুষ্যত্ব আজ কোথায় গেলো
দ্যাখোতো কেউ খুঁজে
আইনও তো দেখছি আজ
আছে সে চোখ বুজে।
এদলকে ওদলেরা যদি
মাখায় কালি চুন
এদলও কম যায় না
বলে যে শতগুন
আসলে রাজনীতি হয়েছে
আজ সার্কাসেরই অঙ্গ
দেখে শুনে লাগছে ব্যথা
তাই কাঁদছে পশ্চিম বঙ্গ।
পৈতা টিকির ছদ্মবেশ
লি খে ছে ন - অ শো ক দা স চা র্বা ক
[ নাতির উপনয়ন উপলক্ষে কবিগুরুর "এস ব্রাহ্মণ শুচি করি মন" এবং বিদ্রোহী কবির "জাতের নাম বজ্জাতি সব। ..." ভাবনাদ্বয়কে আশ্রয় করে পাঠকগণকে একটি ছন্দহীন কবিতা নিবেদনের প্রচেষ্টা ]
নিজেকে তুঙ্গে তুলি
জনমের উৎস ভুলি
বামুন হইবে তুমি আজ,
পরিয়া পৈতা টিকি
জনচোখে দিবে ফাঁকি
ধরিবেক পুরুতের সাজ।
প্রতারনা করি তুমি
হইবে শূদ্রের স্বামী
শুষিবেক যত যজমান,
নরকের ভয়ে তারা
স্বরগের লোভে ওরা
করিবেক সিধা সোনা দান।
পরজীবী ব্রাহ্মণ
লুটিবে শূদ্রধন
ধর্মের ছুরিতে দিয়া সান,
মনুগপ্পো ফাঁদি তারা
করি সবে দিশাহারা
সাজিবেক যেন ভগবান।
হবে নাকি ব্রহ্মচারী,
শুনিয়া হাসিয়া মরি
ভিক্ষান্নে রাখিবেক দেহ!
দেখি তব মতিগতি
ছলনায় ভরা অতি,
সত্য বলি মানিবেনা কেহ।
পদধূলি চাটি তব
পূন্যি করে বৃদ্ধ নব
সৌভাগ্য হইবে তার অতি,
ছলনায় ভুলি সবে
তোমারে পুজিবে এবে
কৃতার্থ হইবে নিচু জাতি।
করিয়া পুতুল কেলি
মানুষেরে পায়ে ঠেলি
দেখাইবে পূজা অভিনয়,
শুনি নিজ বংশকথা
লাজে পাও বড় ব্যাথা
স্বীকার করিতে করো ভয়।
আফ্রিকার হনুমানী
সবারই ঠাকুমা জানি
ইহা তব জন্ম ইতিকথা,
সে 'লুসির'* সাথী শুনি
বলে ডারউইন জ্ঞানী
সবাকার আদি কুলপিতা।
বামুনের জন্ম হল
একই বীর্য্যে শূদ্র এল
জন্মিল হনুর ঔরসে,
হোমিনিড আদি পিতা
সাথী তার আদি মাতা
শুনিয়া বামুন কাঁপে রোষে।
অর্ধপশু ছিল তারা
নানা মাংসে পুষ্ট ওরা
পশুরক্ত বহে তার দেহে,
তাহারাই তব মাতা
হনুজাতি তব পিতা
ভুলে থাক গরবের মোহে।
তাদের শোনিত বহে
বামুনেরও অঙ্গ দেহে
লাখো লাখো যুগযুগ ধরিয়া,
চণ্ডাল শরীরে দেখি
একই রক্ত, জীন একই
গোপন করিতে হও মরীয়া
একই পিতার সন্তান
আদি গোত্র হনুমান
ম্লেচ্ছ চণ্ডাল তব ভাই,
জন্মসত্য গোপন করি
বামুনের ভেক ধরি
দেবতার পাশে মাগ ঠাঁই।
ইথিওপ আফ্রিকান
প্রকৃতির ফরমান,
বিবর্তন নিয়ম মেনে হনু হলো স্যাপিয়ন;
ইরানীরা তুতোভাই
বাঙালিনী তার বোন.
রক্ততুতো ভাই বোন হিন্দু মুসলমান।
একই বীর্য্যে সৃষ্টি সব বামুন কি চণ্ডাল
হনুবীর্য্যে জন্ম তব ইতিহাস আদিকাল।
ব্রহ্মার মুন্ড হতে বামুন জনম
শুনি সে কপট শাস্ত্র না হয় হজম।
ব্রহ্মপদ অংশে যদি শূদ্রদেহ হয়,
কেমনে সে দেবঅঙ্গ অচ্ছুৎ রয়??
যেমতি রক্ত তাঁর মাথাপানে ধায়
তেমতি চণ্ডালরক্ত বামুন মাথায়।
ব্রহ্মপদ পূজে যদি পূণ্যবৃদ্ধি হয়,
শুদ্রপদ চুমে কেন স্বর্গপ্রাপ্তি নয়?
এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন সবাকার হাত ধর,
জাতির নামে বজ্জাতি সব জাল জালিয়াতি ছাড়।
কেটে ফেল টিকি ছিঁড়ে ফেল সুতা,
কেউ উঁচু নয়, এক পিতামাতা।
ডোমের পরশে শুদ্ধ হইয়া অমৃত বরণ কর।
উপনয়ন শেষে নাতির প্রতি উপদেশ
নাতি হলো ব্রহ্মচারী
ভিক্ষা দিল যত বুড়ি,
নাটক দেখিয়া শেষে
করে ভোজ ভুরি ভুরি।
নাতী খেল কাঁচকলা
আতপ চালের ভাত,
অতিথিরা মুরগী পাঁঠা
চেটেপুটে সাফ পাত।
পৈতা দেখিয়া হাবা
নেয় তব পদধূল,
শূদ্রদিদা পূন্যলোভে
হইল ব্যাকুল।
ষাষ্টাঙ্গে শুয়ে পড়ে
মাথা তব পায়,
দেখিয়া জগৎবাসী
লাজে মরে যায়।
শূদ্র বলি দাদুমুখ
দেখিবেনা নাতি,
বামুনত্ব কেঁচে যাবে
হেরি নিচু জাতি।
বামুনের ভবিষ্যৎ
জানিবারে চাই,
কালে কালে বড় হয়ে
কি করিবে ভাই।
মানস চোখেতে দেখি
পশিছে সে গৃহীঘরে
করিয়া নানান ভঙ্গি
দেবপূজা নাট্য করে।
প্রণামী ট্যাঙ্কেতে পুরি
চালকলা ব্যাগে ভরি
পুরুত ফিরিছে গৃহে
মাথা তার নিচু করি।
দেখি সে লালসদৃশ্য
সবে দেয় গঞ্জনা,
দাদু কি সহিতে পারে
নাতির সে যন্ত্রনা?
পদধূলি চাটে বটে
দখিনাও ছুঁড়ে দেয়,
নরকের ভয়ে গৃহী
অভিনয় করে হায়।
পুরুতকে সম্মান
করে যত যজমান,
বেচারা আড়ালে গেলে
পিছে করে গালিদান।
উপরে দেখায় ভক্তি
অন্তরে ঘৃণা,
নাতির ভবিতব্য দেখি
হয় মনে যন্ত্রনা।
কানে কানে বলি তারে
পুরুত হয়োনা ভাই,
সৎ কোন পেশা ধরে
খেটে খুটে খাওয়া চাই।
পুরুতের হীন পেশা
ধরোনাকো তুমি,
বাঁচাও ক্ষত্রিয় হয়ে
নিজ জন্মভুমী।
অথবা বাণিজ্য করো
বৈশ্যের মতন।
চাকুরিও ধরিতে পার
শুভ্র যেমন।
ঘন্টা নাড়িয়া তুমি
আরতির ঢং করি
উঞ্ছবৃত্তি করোনাকো
পরধন নিয়া কাড়ি।
স্টেজ থেকে নেবে এস
নাটক হয়েছে শেষ,
অভিনয় আর নয়
ছেড়ে ফেল ছদ্মবেশ।
ছিঁড়ে ফেল পৈতা
কেটে ফেল টিকি,
বিশুদ্ধ মানুষ হও
হয়োনাকো মেকি।
ক্ষয়িষ্ণু চেতনা
লি খে ছে ন – বি প্ল ব সে ন
ভয়টা কোথায় প্রশ্ন করা সমাজের
চেতনার কাছে,
যদি বাস্তব দেখতে হয়
যদি কল্পনা হয় মিছে!
ধর্মের আবর্তে ঘুরে চলা
সামগ্রিকতায় দেখা
যেখানে চোখ ধাঁধানো মুক্ত বাজার
অথচ চেতনা ফাঁকা।
বাস্তবতার কাপড়ের তো নেই
চাকচিক্য
খোলা বাজার ঝকঝকে দোকান
পিছনের দৈন্যতার ভরা ঐক্য।
এই বাস্তবতা এড়িয়ে চলতে
ভয়ের আয়োজন
যাতে মানুষের চোখে থাকে
ধর্মের সন্মোহন।
সামগ্রিক ভাবে চেতনায় আসে
সম্পূরক পরিপূরকের ধারণা
কার্য কারণ মূল্যবোধে
শুধুই চেতনার তাৎক্ষণিক উন্মাদনা |
বিচ্ছিন্ন ভাবে নয় এটা
সামগ্রিক বিষয়
শোষণের এই পরাকাষ্ঠা
পুরোটাই অন্ধকার সময় |
মানুষের চেতনায় আঘাত করে
পঙ্গু করে দেওয়া
পিছনে লম্বা শক্তিশালী হাত
আছেই আছে ছোঁয়া!
বিজ্ঞান চেতনা প্রতিনিয়ত
করা চাই অনুশীলন
প্রগতির এই চলমান পক্রিয়া
সেটাই করা বর্ণন!
পরিবর্তনের এই পৃথিবীর বুকে
হচ্ছে বিকৃত বিকাশ
পরিপূর্ণতার বদলে ক্ষয়মান
অবকাশ।
তাই একবিংশ শতাব্দীর বুকে দাঁড়িয়েও
প্রচার মাধ্যমে সাধু মৌলবী আর ধর্মের রমরমা
বিজ্ঞানের প্রচার চাকচিক্য হীন
অদ্ভুত বিকৃতির মূর্ছনা।
সারা পৃথিবী আঁধারে ঢাকা
চেতনা অপসৃয়মান
আপেক্ষিকতায় চেয়ে দেখা
কেন মানুষের এমন অবস্থান।
ভীতি কাজ করে শাসন শোষণের
মধ্যে
ব্যাক্তি নয় ভয় তা দেখা সমাজের
ব্যবস্থার সান্নিধ্যে।