সমস্ত লেখাগুলি

প্রশ্নোত্তর পর্ব -
সম্পাদক
Nov. 25, 2024 | প্রশ্ন | views:295 | likes:2 | share: 2 | comments:0

প্রশ্ন:

বামপন্থী ঘরানার ইতিহাসবিদ রা এখন একটু অন্যরকম বললেও চিরকাল ইসলামিক আগ্রাসন এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন এগুলোর সাথে ধর্মের যোগ নেই। কিন্তু ইসলামী ইতিহাসকার রাই বলেছেন যেমন তামীম আনসারী যে তুর্কী সুলতান নিজেদের বেশী মুসলিম প্রমান করার জন্য এত অত্যাচার করেছে। যেখানে আরব রা সেভাবে কোনো জাতির ওপর অকারণ আগ্রাসন চালায়নি। বামপন্থীরা এই ক্ষেত্রে সিলেক্টিভ কেন? আমি বলে রাখি আমি বামপন্থার অনেক বিষয়ের সাথে একমত কিন্তু ইসলামী আগ্রাসন নিয়ে নীরবতায় রাজি হতে পারিনা। আবার চীন যখন উইঘুর দের ওপর অত্যাচার করে সে নিয়েও চুপ(except CPIML Liberation). এই প্যারাডক্স বুঝতে পারিনা।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য

বৈদ্যবাটি, হুগলি



উত্তর:

“আপনার প্রশ্নের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রসঙ্গের দিকে আপনি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছেন। মার্কসবাদী চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তি করে এর উত্তর দেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করছি। প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে বামপন্থী ঘরানা একটা বেশ বড় স্পেকট্রাম। সেই কারণে এই ঘরানার ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিভঙ্গিও বিভিন্ন রকমের, সেটা ভারতের প্রসঙ্গেই হোক বা বিশ্ব প্রসঙ্গে। বামপন্থী ইতিহাসবিদরা কতটা সিলেকটিভ বা কতটা নয় সেই প্রশ্ন আপাতত মুলতুবি রেখে আসুন বরং ভাবা যাক ইসলামিক আগ্রাসনের সাথে ধর্মের কোনো যোগ আছে কিনা। ইসলামিক আগ্রাসন এক প্রকার ধর্মীয় মৌলবাদ। যে কারণে ধর্মীয় মৌলবাদ আর ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়, ঠিক সেই কারণেই ইসলামিক আগ্রাসন আর ইসলাম ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয় বলেই মনে হয়।  ধর্ম একটা অযৌক্তিক ধারণা বলে একজন নিপাট সাদামাটা ধার্মিক মানুষের সাথে হিংস্রতায় পরিপূর্ন রক্তপিপাসু মৌলবাদীদের একই পর্যায়ভুক্ত হিসাবে বিবেচনা করাটা মার্ক্সবাদ অনুযায়ী অনুচিত বলেই মনে হয়। 


মার্ক্সবাদ একটা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শন। প্রতিটা সমস্যার আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণ না করে সেটাকে হঠাৎ আবির্ভূত হিসাবে দেখাটা আর যাই হোক মার্ক্সবাদ সম্মত নয়। ধর্ম একটা ভাববাদী ধারণা। সমাজে শ্রেণীবিভাগের উৎপত্তির সাথে সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে, সেই শ্রেণী বিভাগকে টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে। নিতান্তই প্রতিক্রিয়াশীল একটা ধারণা। কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্ক্স স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে এ হলো সর্বহারা শ্রেণীর দীর্ঘশ্বাস, কারণ ধর্ম ছাড়া তার কাছে আকড়ে ধরার জন্য আর কিছু নেই। তাই মার্ক্সবাদ অনুযায়ী অর্থনীতি হলো ভিত্তি, আর ধর্ম হলো উপরিকাঠামো। শোষক শোষিতের ভিতরকার অর্থনীতিক সম্পর্কের বৈপ্লবিক বদল না ঘটিয়ে ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়, ক্ষেত্রবিশেষে কিছু সংস্কার ঘটতে পারে মাত্র। এখানে বিপরীতে তথাকথিত নাস্তিকদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো ধর্মের ভিত্তিটাকে অগ্রাহ্য করে ধর্ম ও ধার্মিক দুইয়ের বিরোধিতা করে যাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই এতে যে তারা আরো বেশি জন বিচ্ছিন্ন হন সেটা তারা বুঝতে চান না। নিজেদের ধর্মবিরোধী আধুনিক হিসাবে দেখিয়ে তারা কিছু সুখ অনুভব করতে পারেন মাত্র। সমাজ বদলের লড়াইতে সেই সুখ খুব একটা কাজে আসে না।


এবার আসা যাক মৌলবাদের কথায়। একটা নির্দিষ্ট আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে আধুনিক মৌলবাদের উদ্ভব। যে ইসলামিক আগ্রাসন দিয়ে কথা শুরু হয়েছিল সেখানে ফেরত আসা যাক। এই আগ্রাসন আসলে যত না ধর্মীয় তার থেকে বেশি বরং সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে কাজ করা একটা শক্তি, যার সাথে সাধারণ ছা-পোষা মানুষের রোজকার ধর্মচর্চার বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। যে সম্পর্কটা আছে সেটা হলো ক্রমাগত ধর্মীয় উসকানি মারফত একটা সাধারণ মানুষকে তার মৌলিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিভ্রান্ত করে দেওয়া, যাতে সে কোনোভাবেই সাম্রাজ্যবাদের বা পুঁজিবাদের বিরোধিতার জায়গায় না চলে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারকে প্রথম থেকে কারা তোষামোদ করেছিল? - আমেরিকান ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা। কোন উদ্দেশ্যে? - কমিউনিজম-এর "সংক্রমণ" যেন তাদের ভূখণ্ডে না চলে আসে! একইভাবে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা মধ্য এশিয়ায় ইসলামিক মৌলবাদী শক্তিকে তৈরি ও লালন করেছিল কোন উদ্দেশ্যে? - রাশিয়াকে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে। যদিও রাশিয়াও তখন আরেক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত। ইসলামি মৌলবাদ বলতে আজকে আমরা যা বুঝি সেটা আসলে এই দুই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বন্দ্বের একটা প্রোডাক্ট। পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ন্যারেটিভ অনুযায়ী লাদেন তখন গণতন্ত্রপ্রেমী জাতীয়তাবাদী, যে রাশিয়ান আগ্রাসনের মোকাবিলা করছে। কয়েক দশক পরে সেই ন্যারেটিভটাই আবার চেঞ্জ হয়ে গেল নতুন চাওয়া পাওয়ার হিসাবে। পৃথিবীতে তখন একটাই সুপার পাওয়ার। ইসলামি আগ্রাসন নিয়ে আমাদের প্রজন্মের বেশিরভাগ ধারণা আসলে এই পোস্ট-২০০১ ন্যারেটিভ থেকেই তৈরি হয়েছে, যেখানে "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ"-র নামে গোটা বিশ্ববাসীর চোখে ঠুলি পড়িয়ে একতরফা সন্ত্রাস চালিয়ে গেছে কিছু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। পাশাপাশি মৌলবাদী সন্ত্রাসকেও ইন্ধন যুগিয়ে গেছে। কারণ অস্ত্র বিক্রির জন্য চাই যুদ্ধ। শত্রু ছাড়া যুদ্ধ হয় না। আর শত্রু না থাকলে শত্রু তৈরি করে নিতে হয়!


আজকের দিনে চিন-ও একটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। সে তার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের স্বার্থে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে। যে মার্ক্সবাদী দর্শন সমস্ত জাতিসত্ত্বার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকার করে সেই দর্শন অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের প্রতি এই অত্যাচার নিন্দনীয়। কিন্তু মার্ক্সবাদকে ধর্মমতে পরিণত করে ফেলা অনেক বামপন্থীদের হ্যাংওভার এখনও কাটেনি। তাদের কেউ কেউ বর্তমান চিনকে সাম্যবাদী মনে করেন, তাই সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচারের বিষয়টা চেপে যান। অনেকে এমনকি বর্তমান রাশিয়াকেও সাম্যবাদী মনে করেন, এবং ফলত রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণকে সমর্থন করে ফেলেন অদ্ভুত কিছু অজুহাতে। প্রসঙ্গত বলতে ইচ্ছা করছে, একদা মার্ক্সকেও তিতিবিরক্ত হয়ে বলতে হয়েছিল যে - এই যদি মার্ক্সবাদ হয় তাহলে আমি মার্ক্সবাদী নই। আজ বেঁচে থাকলে উনি নিঃসন্দেহে আবার এই কথাই বলতেন।


সুতরাং, ইসলামি আগ্রাসন/মৌলবাদ বা অন্য যেকোনো ধর্মের মৌলবাদ, বা তুর্কি কর্তৃক আগ্রাসন, বা কোনো আরব জাতির নিরপেক্ষ অবস্থান - আজকের দিনে সবই আসলে সেই স্থানের ভৌগলিক-রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ, যায় সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে কোনো না কোনো সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ, সেটা পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদ-ও হতে পারে, আবার এক কালের সমাজতন্ত্রী, কিন্তু পরে পুঁজিবাদী প্রত্যাবর্তন হওয়া রাশিয়া চিনের সাম্রাজ্যবাদ-ও হতে পারে। একথা একেবারেই ঠিক যে বামপন্থীরা মাঝে মাঝে নিজেদের ক্যাম্প অনুযায়ী সিলেকটিভ হয়ে পড়েন, সেটা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয় এবং সেটা মার্ক্সবাদী বিশ্লেষণও নয়। তবে হ্যাঁ, এককথায় আমিও মনে করি যে ইসলামি আগ্রাসনের সাথে ধর্মের যোগ নেই, বরং সাম্রাজ্যবাদীদের ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। মার্ক্সবাদীদের উচিত আরও বেশি করে সেই যোগটাকে প্রকাশ্যে আনা এবং সেটার আলোকে ইসলামি আগ্রাসন বা যেকোনো রকম মৌলবাদী আগ্রাসনের বিরোধিতা করা।

ধন্যবাদ। উত্তর একটু বড় হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখিত। আপনার মতামত জানাবেন।”

উত্তরটি দিয়েছেন

কিনোক্ষ্যাপা

প্রশ্নোত্তর পর্ব -
সম্পাদক
Nov. 25, 2024 | প্রশ্ন | views:294 | likes:2 | share: 1 | comments:0

প্রশ্ন - ১

যদি আমাদের মহাবিশ্বের কোনো creator থেকেও থাকে তাহলে কি ধর্মগুলির লেখাসমুহ কি মানুষকে মেনে নিতে হবে? ধর্মগুলোতে যে creator এর বর্ণনা আছে সেটা যে কাল্পনিক creator এটা বিজ্ঞান কি এখনও প্রমান করেনি? 

অরিজিৎ, বীরভূম

উত্তর: – 

“এরকম যুক্তি মনস্ক প্রশ্ন তোলার জন্য আপনাকে প্রথমেই অভিনন্দন জানাই।

এটা সত্যি যে এই সুবিশাল বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডর সৃষ্টি, প্রসারণ, সংকোচন বা বিনাশের ইতিহাস আমরা হয়তো অতি সামান্যই জানতে পেরেছি। 

কিন্তু বিবর্তনের পথ ধরে হোমো স্যপিয়েন্সের সৃষ্টির পরে এই কয়েক হাজার বছরে এতটা জানাও কোনভাবেই কম নয়। ফলে, আমরা সবটুকু এখনো জানিনা এই অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে একজন মহান সৃষ্টিকর্তা এই ব্রহ্মাণ্ডের নির্মাণ করেছেন এরকম অলীক, অলৌকিক তত্ত্ব মেনে নেওয়া একটা লজিক্যাল ফ্যালাসি ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা যত এগোচ্ছে তত ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে ব্রহ্মাণ্ড স্বয়ম্ভু এবং এর প্রতিটি গ্যালাক্সি থেকে শুরু করে সবকিছুর সৃষ্টি ও বিনাশ এক একটা অ্যাক্সিডেন্টের ফলাফল যা কোনভাবেই কোন ঈশ্বর বা ডিভাইন পাওয়ারের পূর্বনির্দিষ্ট নয়।

এটা সম্পূর্ণভাবে অনিয়ন্ত্রিত। 


এরকম অনিয়ন্ত্রিত ঘটনা নিরন্তর ঘটেই চলেছে এবং চলতেই থাকবে। কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলেই একটা গ্যাসীয় পিন্ড ছিটকে গিয়ে ক্রমশ ঘনীভূত, শীতল হয়ে আমাদের পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। একইভাবে এটাও একটা Random vigorous reaction এরই ফল যে সেই আদিম পৃথিবীর hot dilute soup এর ভিতর কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেনের মত অজৈব পদার্থের বিক্রিয়ায় প্রোটিনের একক অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হয়েছিল। তারও পরে সাড়ে তিনশো কোটি বছর ধরে বিবর্তনের ফলে হোমো স্যপিয়েন্সের সৃষ্টি হয়েছে। জীব বিবর্তনের এই প্রতিটি ধাপই আসলে এক একটা অ্যাক্সিডেন্ট। সৃষ্টির পরে পাঁচবার এই পৃথিবীতে মহাবিনাশ ঘটেছে যার ফলে তৎকালীন পৃথিবীর নব্বই শতাংশের বেশি জীব মারা যায় এবং অবশিষ্টদের বিবর্তনের দিক ঘুরে গেছে। অনেকে দাবি করেন যে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টির জন্য বিবর্তন করিয়েছিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের যদি মানুষ সৃষ্টিই উদ্দেশ্য হত তাহলে এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কেন তা করতেন সরাসরি একমুহূর্তে তা করতে পারতেন। তাছাড়া এরকম ভাবার কোন কারণই নেই যে বিবর্তন শেষ হয়ে গেছে তা প্রতি মুহূর্তে চলছে। ভবিষ্যতে এরকম কোন মহাবিনাশের ফলে বর্তমান সিনোজোয়িক যুগের সকল জীবই হয়তো বিনষ্ট হতে পারে, পুরো পৃথিবীই ধ্বংস হতে পারে। সবকিছুই হতে পারে কারণ কোন কিছুই অলৌকিক সত্ত্বা দ্বারা নির্ধারিত নয়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বের অসারতা স্পষ্ট হয়ে গেছে।“


মনীশ রায়চৌধুরী

সাধারণ সম্পাদক

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি



প্রশ্ন - ২

মহাবিশ্ব ও সকলকিছু সৃষ্টির পূর্বে অসীম আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই তো ছিল না। সেই অসীমতার মধ্যে শূন্যতা কোথায় ছিল? অসীম আর শূন্যতা একইসাথে অবস্থান করতে পারে না। কারণ একটি অপরটির অস্তিত্বকে ভুল প্রমাণ করে। এখানে অসীম ও শূন্যতা বলতে কী বোঝায়?

হোসেনুর রহমান 

ভাঙড়, দক্ষিন চব্বিশ পরগণা


উত্তর: -

“মহাবিশ্ব ও সকলকিছু সৃষ্টির পূর্বে অসীম আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান  ইত্যাদি ছাড়া আর কিছুই তো ছিল না" এই কথাটা ধর্ম বিশ্বাসী দের কথা এবং এর সাথে বিজ্ঞানের কোনো যোগ নেই অর্থাৎ পদার্থ বিদ্যার নিয়ম অনুযায়ী মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বর স্বীকার্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। অতএব আগে দেখা যাক এই বিষয়ে বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ কি বলেছে। কোরানে বলা হয়েছে পৃথিবী, আকাশ তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টির পূর্বে বা সহজ কথায় এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে জলের উপর আল্লাহর আরজ (সিংহাসন) অবস্থান করতো আর আল্লাহ সেই আরজে অবস্থান করতো (কোরান-হূদ ১১:৭)। বাইবেলের আদি পুস্তকে বলা হয়েছে ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর অন্ধকারে অবস্থান করতো (পবিত্র বাইবেল, আদি পুস্তক ১:২-৩)। তিনিই আলো হতে বলায় তবে সবার প্রথম আলোর উদয় হয়। বাইবেলের মতো এই একই রকম বর্ণনা ইহুদিদের ধর্ম গ্রন্থ তোরাহ (Torah) তে উল্লেখ পাওয়া।  যদি হিন্দু পুরান (শিব পুরাণ-পর্ব ১, Aitareya Upanishad (3.4.1)) দেখা যায় তাহলে সৃষ্টির আদিতে যখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কিছুই ছিলনা, ঘোর অন্ধকারে ছিল শুধু ব্রহ্ম। চারিদিকে শুধু জল ছিল ও ভগবান বিষ্ণু জলের উপর ঘুমাচ্ছিলো এবং বিষ্ণুর নাভি থেকে ফোঁটা পদ্মে ভগবান ব্রহ্মার জন্ম যিনি পরে  বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেন। এতক্ষনে আমরা দেখলাম সব ধর্মে আদিতে অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির পূর্বে জল ছিল আর জলের আশেপাশে আল্লাহ/ঈশ্বর/ব্রহ্মের আত্মা ঘুরঘুর করছিলো এবং কতদিন যে ওই অবস্থায় ছিল এই বিষয়ে কোথাও বিশেষ কিছু বলা  নেই। আরো বড়ো কথা ওই জল এল কোথা  থেকে? ওই জল কে সৃষ্টি করলো? ওই জল থেকে কি  ঈশ্বরের আত্মার  সৃষ্টি? তাছাড়া সব জায়গায় আল্লাহ/ঈশ্বর/ব্রহ্মের আত্মাকে নিরাকার বলা হয়েছে, আবার কোথাও নিরাকার আত্মার বসার জন্য সিংহাসন দরকার পড়েছে। জল এবং সিংহাসনের উপস্থিতি জানাচ্ছে “স্থানের, বা শূন্য স্থানের(space ওর vaccum)” অস্তিত্ব ছিল অর্থাৎ শূন্য বলতে যেটা প্রশ্নে বোঝানো হয়েছে সেই শূন্যের সঙ্গে ধর্ম গ্রন্থের শূন্যের আকাশ পাতাল তফাৎ। ঈশ্বর বা ব্রহ্মকে অসীম বলা হলেও কোন দিক থেকে  অসীম ছিল তা নিয়ে বিশেষ কিছু বলা নেই। তবে এটা সহজেই অনুমান করাযায় আল্লাহ/ঈশ্বর/ব্রহ্ম শক্তি বা ক্ষমতা, জ্ঞান ইত্যাদির হিসাবে হয়তো অসীম কারণ তার আকার অসীম মানে বেশ মোটাসোঁটা, দৈত্যকার চেহারার কেউ এই বিষয়য়ে কেউ কিছু বলেনি। যাই হোক এবার আমরা বিজ্ঞানের দিক দিয়ে আলোচনা করি।


পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধমে। বিগব্যাং এর পূর্বে কোনো কিছুইর বা কারোর অস্তিত্ব ছিলোনা। ছিল না সময় ও স্থানের অস্তিত্ব। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে প্রথমে বৈজ্ঞানিক Alexander Friedmann (১৯২৪) ও Georges Lemaître (১৯২৭) সম্পসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দেন। পরবর্তী কালে Edwin Hubble পর্য্যবেক্ষনের মাধ্যমে এই ধারণাকে প্রতিষ্টিত করে। যদি সম্পসারণশীল মহাবিশ্বকে সময়ের উল্টোদিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে  সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের  গণিতের মাধ্যমে দেখানো যায় এই সম্পসারণশীল মহাবিশ্ব শুরুতে খুবই ছোট একটা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল যা পরবর্তীকালে প্রসারিত হয়ে স্থান, কাল, ও সমস্ত ভরের সৃষ্টি করেছে (১৯৩০, Nature: Georges Lemaître)। এই ছোট সীমাবদ্ধ অঞ্চলের তাপমাত্রা ও ঘনত্ব অসীম ছিল। 


আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে দেখানো যায় শক্তি থেকে ভরের উদ্ভব সম্ভব,যা একটি পরীক্ষিত সত্যি (উদাহরণ: Pair Production)। আবার হাইসেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি থেকে দেখানো যায় শূন্য থেকে স্বল্প সময়ের জন্য শক্তি ও প্রকান্তরে ভরের (বা পদার্থের) উদ্ভব সম্ভব (উদাহরণ: Virtual Pair Production)। অতএব সম্পূর্ণ পদার্থ বিদ্যার নিয়ম মেনে কোনো রূপ অলৌকিক শক্তির উপস্তিতি ভিন্ন মহাবিশ্বর উৎপত্তি ব্যাখ্যা সম্ভব। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা যতদূর বুঝতে পেরেছেন তাহলো কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে মহাবিশ্বর (অর্থাৎ স্থান, কাল, পদার্থের) উৎপত্তি। বিগব্যাংগের আগে কিছুই ছিলোনা না ছিল স্থান, না ছিল সময় আর না ছিল পদার্থ বা শক্তি অর্থাৎ প্রকৃত শূন্য ছিল। অতএব ঈশ্বরের ও অস্তিত্ব ছিলোনা। এখনো পর্যন্ত বিগব্যাং তত্ত্বের সাপেক্ষে পাওয়া প্রমান গুলির মধ্যে মুখ্য গুলি হলো হাবল এর সূত্র ও মহাবিশ্বের সম্পসারণ, কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন, হালকা মৌল যেমন ডিউটেরিয়াম (H - 2), হিলিয়াম -3 ও লিথিয়াম-7 ইত্যাদির প্রাচুর্য। 

 এবার আসা যাক জলের কথায়। বিগব্যাংগের প্রথম ১০০ সেকেন্ড থেকে ৩০ মিনিট এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রথম তিন মিনিটে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা ও ঘনত্ব হালকা মৌল সমূহ উৎপাদনের উপযুক্ত ছিল। এই সময় হাইড্রোজেন (~৭৫ %), হিলিয়াম (~২৫%)  এবং  খুব সামান্য ডিউটেরিয়াম (H - 2), হিলিয়াম -3 ও লিথিয়াম-7 উৎপন্ন হয়। এর থেকে ভারী মৌল সমূহ যেমন কার্বন, অক্সিজেন বা অন্যান ধাতু সমূহ উৎপন্ন করতে তারা (star) দের দরকার এবং এর জন্য বিগব্যাংগের পর  আরও ২০০ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তার মানে বিগব্যাংগের ২০০ মিলিয়ন বছর পর জলের অনুর উৎপত্তি। 

  এবার আলোচনা টাকে শেষ করি অসীম ও শূন্যের একটা তুলনামূলক আলোচনা দিয়ে। পদার্থবিদের কাছে কোনো কিছু ক্ষুদ্র শূন্য আর কোনোকিছু খুব বড়ো হলো অসীম। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াস এর ব্যাসের (10-15 m) সঙ্গে এক আলোক বর্ষ দুরুত্বের (9.461x1015 m) তুলনা টানা হয় তাহলে, আলোক বর্ষ দুরুত্বের কাছে একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াস এর ব্যাস এর মান শূন্য। একটা নিউট্রন তারার কেন্দ্রের ঘনত্ব বা একটা সুপারনোভা তারার কেন্দ্রের তাপমাত্রার থেকে বিগব্যাংগের সময়কার ঘনত্ব বা তাপমাত্রা আরো বহু লক্ষ কোটি গুন্ বেশি ছিল তাই এদের অসীম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বিগব্যাংগের শুরুর সময়কার অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা এখনো চলছে। ভবিষ্যতে যায় এই বিষয়ে আরো তথ্য উঠে আসবে।” 


সৌমেন মন্ডল 

গবেষক

সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স


প্রশ্ন - ৩

ঘুমের মধ্যে অনেকে কথা বলে ও গোঙানির মত আওয়াজ করে। আমাদের গ্রামের দিকে সেটিকে বলে বোবা ধরেছে কিংবা ভুত ডাইনী ধরেছে। এইটি কি কোনো রোগ? এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই, এবং প্রতিকার বললে ভীষন ই উপকৃত হব।

সুজয় বিশ্বাস, বামন গোলা, মালদা


উত্তর:- 

“কদিন ধরে রুপালি বেশ মানসিক চাপে আছে। রাতে নানান স্বপ্ন দেখে। বেশিরভাগ সময় তখন তার মনে হয় তার হাত পা পুরো অবশ হয়ে আছে।তাকে যেন কেউ চেপে ধরে আছে।অথচ তাকে যে ঠেলে উঠে পড়বে সে ক্ষমতাও নেই।পুরো হাত পা যেন অবশ হয়ে আছে।  তার বোধহয় আর জীবনে ঘুম থেকে ওঠা হবে না! 


ঘুমের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতা কে অনেকে বোবায় ধরা বা ভুত ডাইনী ধরা বলে।এমন বোবায় ধরার অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস (sleep paralysis)..।প্রকৃত ঘটনা জানতে পারলে বুঝতে পারবেন যে এখানে ভূত- প্রেত ডাইনীর  কোন কাজ কারবার নেই। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা (Psychological disorder)। এর  বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।

মানুষের ঘুমের ৫টি পর্যায়  যেগুলো চক্রাকারে চলতে থাকে। এই পর্যায়গুলো দুটি দশাকে কেন্দ্র করে হয়। এর একটি REM (Rapid Eye Movement) এবং অপরটি Non REM।ঘুমের REM দশার স্থায়িত্বকাল মাত্র দুই ঘন্টা। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের স্বপ্ন দেখার কাজটি সম্পন্ন হয়। REM কে বলা হয় ঘুমের সক্রিয় অবস্থা। এ সময় আমাদের মাংশপেশিতে শিথীলতা আসে (muscles relaxed)  এবং দেহ অবশ হয়ে যায় আর আমরা হয়ে পড়ি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।Non REM দশার স্থায়িত্বকাল অপেক্ষাকৃত বেশি; প্রায় ৪-৫ ঘন্টা। ৫টি পর্যায়ের ৪টিই এই দশার দখলে। 


কোন কারণে আমরা যদি REM দশা শেষ হওয়ার পূর্বেই জেগে উঠি তখনই বোবায় ধরার ঘটনা ঘটে। এ সময় আমরা ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী এক অবস্থায় অবস্থান করি। ফলে মস্তিষ্ক ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে, আমরা আসলে কোন অবস্থায় আছি। আর তখনই উদ্ভট সব অনুভূতি হতে থাকে।


বোবায় ধরার অনুভূতি ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। মনে হয় যেন আমি জেগে আছি, আশপাশের সবাই চলাফেরা করছে কিন্তু আমার হাত-পা নাড়াতে পারছি না বা কাউকে ডাকতে পারছি না; সমস্ত শরীর যেন প্যারালাইজড হয়ে গেছে। নিজেকে তখন অনেক বেশি অসহায় মনে হয়। আর ভাবনা আসে  আর কখনও ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারবো না। একটা জোর প্রচেষ্টা থাকে ঘুম থেকে জেগে ওঠার। যারা ভূত প্রেতে বিশ্বাস রাখে অথবা যাদের  হ্যালুসিনেশনের সমস্যা আছে তারা আরও একধাপ বেশি দেখে থাকে। এই যেমন কেউ বুকের উপর চেপে বসে আছে অথবা খাঁটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে বা তাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।


দু:খজনক হলেও সত্যি যে, আমরা অধিকাংশ মানুষ এখনও বোবায় ধরাকে ভূত প্রেতের কীর্তি বলে বিশ্বাস করি। শুধু যে  বিশ্বাস করি তা নয়; একই সাথে এ থেকে পরিত্রানের আশায় অনেকে আবার ওঝা / গুনিন দ্বারা ঝাড় ফুঁক দিয়ে ভুত তাড়ানোর চেষ্টা করি।। আশা করি এখন বুঝতে পারছেন যে এটা আমাদের শরীর বহির্ভূত কোন ঘটনা নয় বা অলৌকিক কোনো ঘটনা নয়।অলৌকিক বলে পৃথিবীতে কিছু হয় না। এটা একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। তাই এর সমস্যা মনোবিদরাই সমাধান করতে পারবেন, কোন ওঝা গুনিন নয়।”


পঞ্চানন মন্ডল

কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য,  বিজ্ঞান মনস্ক, পশ্চিমবঙ্গ

সম্পাদক, বিজ্ঞান মনস্ক,  সোনারপুর শাখা

প্রতিষ্ঠাতা – বিজ্ঞানকথা



প্রশ্ন - ৪

১৯৮০ থেকে ২০২২,  প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখা আছে,  মানুষের চেতনার পরিধি বিস্তারলাভ করলেও,  কোথাও যেন মানুষ ধর্মকে খড়কুটোর মত আশ্রয় করেই নিমজ্জিত হয়ে চলেছে। এ থেকে নিস্তার পাওয়ার কার্যকরী পথ কী? অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনিতা কি চেতনা বিকাশের সময় কেড়ে নিচ্ছে? যোগাযোগের সময় কি কমে গেছে? সচেতন করার কার্যকরী পথ কী?

মহম্মদ মহসীন

মানিকপুর, হুগলী

উত্তর: -

“সৌদি আরবের নাগরিকদেরতো অর্থের অভাব নেই৷ কথা বলার সুযোগটা দরকার৷ অনবরত বিতর্কের মধ্য দিয়েই সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে৷”


মুজিব রহমান

সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা।

এবং বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, মুন্সিগঞ্জ জেলা।



প্রশ্ন - ৫

একটা ঘটনা শুনছিলাম youtube এ যে একটা হোটেল রুমে ভৌতিক ঘটনা। উত্তরাখণ্ডে আলমড়া তে। দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে দেখা যাচ্ছেনা, বাথরুমে কল ঘুরে যাচ্ছে নিজে থেকে। এবার ধরুন এটা hallucination হতে পারে। যেমন ধরুন কেউ বৃন্দাবনে ঘর ভাড়া নিয়ে আছে দেখলো রাতে বারান্দায় কৃষ্ণ বাঁশি বাজাচ্ছে। এবার দুটো সম্ভাবনা। হয় মিথ্যে বলছে নয়ত সত্যি hallucinate করছে। কিন্তু ওর মন তো ওটা সত্যিই দেখছে। অনেকটা রামকৃষ্ণের কালী দেখার মত। ওর মন ওটা ক্রিয়েট করছে। এই ক্ষেত্রে কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে যদি নিয়ে থাকি যা তার অনুভূতি টা সত্যি।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য, বৈদ্যবাটী

উত্তর: -

“প্রতি, অভিজিৎ ভট্টাচার্য

নমস্কার,

ভৌতিক ঘটনা নিয়ে সোসিয়াল নেটওয়ার্কে অনেক ভিডিও ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। এই ধরণের ভিডিওগুলি কোনও না কোনও ব্যক্তি রেকর্ড এবং এডিট করে ইউটিউব, ফেসবুকে আপলোড করে থাকেন। কিন্তু এই ধরনের ভিডিও থেকে এটা প্রমাণ হয় না ভৌতিক ঘটনা ঘটে। ভৌতিক বা অলৌকিক বলে বাস্তবে কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই। এর পরেও যদি আপনি দাবি করেন ভুতুড়ে ঘটনা কোনও ভুত, আত্মা ঘটিয়ে থাকে তাহলে সবার আগে এই প্রশ্ন উঠবে, ভূতের জন্মদাতা কে? ভূত আছে? প্রমাণ করতে পারবেন। উত্তরটা হবে কোনও দিন না। কারণ যার কোনও অস্তিত্ব নেই তাকে প্রমাণ করার অর্থ হলো রামকৃষ্ণের মত কালীকে দেখা। রাতের অন্ধকারে বিড়ালের শব্দকে ভৌতিক আওয়াজ ভেবে বসা। পাখির ডাকলে সেটা কৃষ্ণের বাঁশির সুর মনে হওয়া। আবার কোনও বৈজ্ঞানিক কারণে দরজায় জানলা খোলা বা বন্ধ হওয়ার পেছন কোনও অশরীরী হাত খুঁজে বেড়ানো। কোনও ঘটনার পেছন বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে না পেলে তাকে অলৌকিক বলে দেওয়া বোকামি। তাই সাতটি যদি আপনি সত্যি খুঁজতে চান তাহলে নিজে অনুসন্ধানে নামুন। নিজে যেদিন থেকে যুক্তিবাদী অনুসন্ধানে নামবেন, সেদিন নিজেই বুঝতে পারবেন, ভূত, ভুতুড়ে, ভৌতিক সবই একটা গুজব ও কল্পনা। আমারা যুক্তিবাদীদের চ্যালেঞ্জ, ভূত বা অলৌকিক বলে বাস্তবে কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই। এরপরেও যদি দাবি করেন, ভৌতিক ঘটনা ঘটে, তাহলে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির 50 লক্ষ টাকার খোলা চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ গ্রহন করুন।”


সন্তোষ শর্মা

সংযুক্ত সম্পাদক

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি 



প্রশ্ন - ৬

Robert Svoboda এর বই Aghora তে আছে একজন জ্যোতিষী একটি ছেলের জন্মের আগেই তার আয়ু এবং বৈচিত্র বলে দিয়েছিল। সেটা মিলে গেছিল এমনকি দিনক্ষণই মিলে গেছিল। এটা কি সম্ভব? সেই ছেলেটি স্বল্পায়ু ছিল।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য

বৈদ্যবাটি

উত্তর: -

“কারোর হাত, পা, কপাল, মুখ ইত্যাদি দেখেই সেই ব্যক্তিটির অতীত, বর্তমান ভবিষ্যত নিয়ে ঝরঝরিয়ে বলে যাওয়া দেখে জ্যোতিষীদের ক্লায়েন্ট যতই অবাক হোক না কেন আসলে সবটাই সহজসরল ধাপ্পাবাজি বা প্রতারণার খেলা। এই খেলার রহস্য ভেদ আমজনতা করতে পারেন না বলেই জ্যোতিষী নামক প্রতারকের দল মনের সুখে করেকম্মে খাচ্ছে, আমজনতার মাথায় কাঁঠালভেঙ্গে। 


আচ্ছা, আপনি কি জানেন শুধুমাত্র কলকাতা শহরেই এমন জনা পঞ্চাশেক জ্যোতিষী বা তান্ত্রিকের ভেকধারী জ্যোতিষীরা আছে যাদের রোজগার কমকরেও ১০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি প্রতিমাসে যা সৎভাবে খেটেখাওয়া মানুষেরা কল্পনাও করতে পারেন না?


একজন সফল জ্যোতিষী হতে গেলে চাই, শয়তানি বা ধুরন্ধর উপস্থিত বুদ্ধি, মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝবার ক্ষমতা এবং কয়েকজন ইনফর্মার যারা টাকার বিনিময়ে ক্লায়েন্টদের হাঁড়ির খবর আপনাকে থুড়ি জ্যোতিষীদের এনে দেবে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীদের সাথে সখ্যতা এবং কয়েকটি পোষা গুন্ডা যারা বেয়াড়া যুক্তিমনষ্ক দের ক্যেলিয়ে কাঁঠাল বানাবে। এরই সঙ্গে আপনাকে মোটা টাকা লগ্নি করতে হবে এই জ্যোতিষীগিরি বা তান্ত্রিকগিরি নামক প্রতারণা পেশায়। যে যতবেশি পুঁজি লগ্নি করতে পারবে এই পেশায় (পড়ুন বিজ্ঞাপনের পেছনে) তার তেমনই প্রচারও হবে, ক্লায়েন্টের ভিড়ও বাড়বে। আর ক্লায়েন্টের ভীড় মানেই অর্থপ্রাপ্তি। 


প্রসঙ্গত জানাই, বৃত্তিকর চাপান হয় আইনসম্মত পেশার উপর। আইন সম্মত পেশার একটা তালিকা আছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্যাক্স অন প্রফেশন, টেডস, কলিংস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৭৯-এ। প্রফেশন ট্যাক্স বিষয়ক আইন ১৯৭৯ এর সেকশন ও (২) তে আইন-সম্মত পেশার পূর্ণ তালিকা দেওয়া আছে। তাতে কোথাও ‘জ্যোতিষ’ এর নাম নেই। কারন ‘জ্যোতিষ’ এর কোন আইনি স্বীকৃতি নেই। বরং এদেশের আইন অনুসারে জ্যোতিষ পেশা বে-আইনি, নিষিদ্ধ, অবাঞ্ছিত, অনৈতিক এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।


এবারে আসি জ্যোতিষীরা কিভাবে প্রতারণা করে খায়।


একজন সাধারণ গৃহবধুকে আপনি যদি বলেন- আপনি সংসারের জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন, পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফোটাতে আপনি যে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছে বা শখ দমিয়ে রেখে এত কষ্ট করে চলেছেন, তার প্রাপ্য সম্মান কিন্তু আপনি পাননি। দেখবেন ক্লায়েন্ট কেমন ঢিঁশ। কোনো দুধেআলতা ফর্সা চেহারাযুক্ত মহিলাকে বলুন - এই যে আপনি এতো সুন্দরী, তা এখনও পর্যন্ত কতগুলো প্রেমপত্র পেয়েছেন? এই কথাগুলো সামান্য রদবদল করে বলেই দেখুন, সেই মহিলাও ঢিঁশ। মূহুর্তে মোনালিসা মার্কা হাসির সাথে আপনার ভক্ত। এরপরে আপনাকে আর বেশি কিছু বলতেই হবে না, আপনার ক্লায়েন্টই গড়গড়িয়ে তার অনেক কথা আপনাকে বলে যাবে। আসলে প্রসংশা শুনতে প্রায় সকলেই ভালোবাসেন। আপনি ক্লায়েন্টকে ১০০ টা কথা বললে ওরা সেসবই মনে রাখবে যেগুলো তাদের মনপসন্দ, না মেলা কথাগুলো ওরা ভুলেই যাবে, ধর্তব্যেই আনবেন না। 


কোনো মা, তার মেয়েকে আপনার চেম্বারে নিয়ে এলে বুঝে নিতে হবে মা, তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে বেজায় চিন্তিত। সুপাত্রর খোঁজ চালাচ্ছেন। আপনিও ঝোপ বুঝে কোপ মারুন। ক্লায়েন্ট পয়সাওয়ালা হলে সোনার প্রজাপতি কবজ দিন, ক্লায়েন্টের আর্থিক অবস্থা ভালো না বুঝলে সোনার জলে চুবানো রুপোর কবজ বিক্রি করুন। কলকাতার বড়বাজারে এসব তাবিজকবজ, রত্নপাথর হোলসেল দরে পাওয়া যায়। কমদামী সেসব হিজিবিজি জিনিস কিনে এনে ক্লায়েন্ট বুঝে ১০ টাকার জিনিস ১০০০ টাকা বা তারও বেশিদামে ঝেঁপে দিন। 


কোনো মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পুরুষকে বধ করতে চাইলে তাকে বলুন - আপনি অর্থোপার্জনের জন্য যেভাবে এতো পরিশ্রম করছেন, সেভাবে রোজগার হচ্ছে কি? কিংবা বলুন, আপনি কোনোদিন অর্থকষ্টে শেষ হবেন না, যেভাবে হোক ঠিকই টাকার ব্যবস্থা আপনি করে ফেলবেন কারন আপনি সৎ ও কর্মঠ। ব্যাস! এতেই অনেক। কথায় আছে, practice makes you perfect. আপনার অভিজ্ঞ চোখ এবং ক্লায়েন্টের মনস্তত্ত্ব বোঝবার ক্ষমতা সঙ্গে ইনফর্মার দের ইনফরমেশন আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি। 


মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগে সন্তানের পড়াশোনার উন্নতির জন্য অনেক বাবা, মায়েরা ভিড় জমান জ্যোতিষীদের চেম্বারে। পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষার্থিনীকে কয়েকটা ভালোভালো জ্ঞানের কথা শুনিয়ে সরস্বতী কবজ বিক্রি করুন। সারাবছর পড়াশোনা লাটে তুলে, সারাদিন ফোনে ডুবে থাকা পোলাপান দের পরীক্ষায় ১০০ তে প্রায় ১০০ নং পাওয়ার নিনজা টেকনিক সরস্বতী কবচম। জ্বি, এটাই সায়েন্স, জ্যোতিষ নামক প্রতারণা বিদ্যার সায়েন্স। যদিও জ্যোতিষ কখনওই বিজ্ঞান নয়।


পরিশেষে বলবো, জ্যোতিষ শাস্ত্রটাই যখন বে-আইনি, প্রতারণা এবং চিটিংবাজি। তখন আজ নয়তো কাল জ্যোতিষী, তান্ত্রিকদের জেলে যাওয়া আটকানোর সাধ্য কারোর নেই। তবে আমার ব্যাক্তিগত মতে শুধুমাত্র কঠোর আইন এনে এদের দমানো যাবেনা। কারন টাকা এবং রাজনীতিক পরিচিতির সুবাদে এরা আইন কে পকেট বন্দি করে ছাড় পেয়ে যাবে। এদের একটাই ওষুধ। সেটা হচ্ছে বয়কট করা।”


অভিষেক দে

প্যারানরমাল এক্সপোজার

সক্রিয় বিজ্ঞান কর্মী, যুক্তিবাদী,

সাংগঠনিক সদস্য, চেতনার অন্বেষণে







প্রশ্ন - ৭


আমি ফেসবুকে নিয়মিত অনুকুল ঠাকুর কে নিয়ে খিল্লি করি, মিম শেয়ার করি। আমার এই সব activities দেখে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে মেসেঞ্জারে সতর্ক করে জানায়-"You can also cheat people in this way but U can't disregard IPC 295A .

After all you r a govt. Employee.

In our country all dharma and dharma gurus are legal as per constitution."

আমি IPC 295A সম্পর্কে জানতে চাই।এই ধারার আমাকে কেউ অভিযুক্ত করলে ঝুঁকি কতখানি, আর এর থেকে বাঁচার উপায় কি? 

রামাননন্দ ঘোষ

বাঁকুড়া

উত্তর: -

“দন্ডবিধি ১৮৬০, অনুচ্ছেদ ১৫র ২৯৫ ধারা থেকে ২৯৮ ধারা(IPC-295-298) পর্যন্ত সংশোধন করা প্রয়োজন এবং এর মধ্যে ২৯৫-ক(IPC-295A) ধারাটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা প্রয়োজন বলে মনে করি। সংবিধান প্রতিশ্রুত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী এই আইন।

আলোচনা,সমালোচনা,মতপ্রকাশ আর উস্কানি,বিদ্বেষ,ঘৃণাবাদ এক নয়। কিন্তু দন্ডবিধি-১৮৬০ এর পঞ্চদশ অধ্যায়ের ২৯৫-ক ধারাটিতে আলোচনা,সমালোচনা, বাক্ স্বাধীনতা তথা মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হয়েছে।


ধারা ২৯৫-ক। কোন ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকবৃন্দের কোন শ্রেণীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ও হিংসাত্মকভাবে লিখিত বা উচ্চারিত কথা কর্তৃক বা দৃশ্যমান কোন বস্তু কর্তৃক সে শ্রেণীর ধর্মকে বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমানিত করে বা অপমানিত করার চেষ্টা করে, তবে সে ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।"


এটা বলেছে। এখন যদি আমি বলি-

আমি পাঁঠা ছাগলকে ঈশ্বর বলিয়া এবং মানিয়া তাঁহার আরাধনা করি।

এখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি আমার পিতৃশ্বর পাঁঠা ছাগলের মাংস ভক্ষণ করে কিংবা ছাগলেশ্বরের কার্টুন আঁকিয়া আমার বিশ্বাস এবং *নুভূতিতে আঘাত দেয়, তাহলে আমি উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইনে মামলা করতে পারবো কি? হ্যাঁ, ছাগল হত্যাতেই কিংবা কচু গাছ কাটাতেই আমার অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, আমার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে। তাহলে কি সংবিধান মেনে নেবে আমার দাবি/যুক্তি?


যদি মানে তাহলে তা ক্লিয়ার করা প্রয়োজন। আর যদি না মানে তাহলে ৩৯৫-ক ধারাটি কোন যুক্তিতে অক্ষুন্ন আছে?

এটাও ক্লিয়ার করা প্রয়োজন, ধর্মানুভূতি কি শুধু বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ? যদি না হয় তাহলে কোনো এক টঠাগটর অনুভূতিতে যেমন লেগেছে, সেরকম আমারো লাগতে পারে ছাগলের অপমানে। হ্যাঁ আমি মুরগি, কুকুর, গোরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষকে ঈশ্বর মানিয়া তাহাদিগের পুঁজা করি কিংবা ইবাদত করি এবং আরাধনা করার দিন ৩৬৫ দিন। 

একটি সেক্যুলার তথা ডেমোক্রেটিক,রিপাবলিক রাষ্ট্রে কিসের ব্লাসফেমি?

IPC- 295A(1860) ধারা বাতিল করা প্রয়োজন।”


অভিষেক দে

প্যারানরমাল এক্সপোজার

সক্রিয় বিজ্ঞান কর্মী, যুক্তিবাদী,

সাংগঠনিক সদস্য, চেতনার অন্বেষণে

রিচার্ড ডকিন্সের একটি ইন্টারভিউ -
সম্পাদক
Nov. 20, 2024 | জীবনী | views:783 | likes:2 | share: 2 | comments:0

রেডিও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক: ঈশ্বর তো অপ্রমাণিত হননি। তাহলে কোন যুক্তিতে "ঈশ্বর নেই বলছেন"।

রিচার্ড ডকিন্স: সে তো পরী বা ইউনিকর্ন কিছুই অপ্রমাণিত হয়নি। কিন্তু বিশ্বাস করার স্বপক্ষে কোনও কারণও দেখছি না, তাই বিশ্বাস করি না।

['ইউনিকর্ন' পক্ষীরাজের মত এক কাল্পনিক এক শিংওয়ালা ঘোড়া] 

সঞ্চালক: সম্ভবনার কথা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাহলে আপনি নিজেকে অ্যাগনোস্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী বলেন না কেন?

ডকিন্স: ওরকম অদ্ভুত কথা বলতে যাব কেন? তাহলে তো বলতে হয় পক্ষীরাজ ঘোড়া বা হুরী-পরীও সত্যি আছে কিনা আমি জানি না। সম্ভবনার কথা যদি বলেন, তাহলে ঈশ্বর নামক কেউ (কোনও মহিলা, পুরুষ বা বস্তু) আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভবনা এতই কম, যে শতকরা হিসেবে একেরও নীচে, শূন্যই বলা যায়। তাই অজ্ঞেয়বাদ-টাদ না বলে, নিরীশ্বরবাদ-ই সঠিক বলে মনে করি।

টেলিফোনে এক দর্শক: ধর্ম সমাজের উপকার করে, একথা তো মানেন?

ডকিন্স: ধর্মবিশ্বাস সমাজ প্রচুর ক্ষতি, প্রচুর রক্তপাত ঘটিয়েছে। সমাজের উপকার করেছে কোনও সময়, একথা মানলে প্রমাণ হয় না যে ঈশ্বর বলে কিছু আছে। বরং ধর্মের নামে অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা তো দেখাই যাচ্ছে।

দর্শক: নাস্তিকরা সমাজের অনেক ক্ষতি করেছে। যেমন হিটলার, স্ট্যালিন। কত হত্যা করেছে।

ডকিন্স: স্ট্যালিন যা করেছেন, তা নাস্তিকতার নামে করেননি। তিনি এক রাজনৈতিক মতাদর্শের বশবর্তী হয়ে করেছিলেন। আর হিটলার তো রোমান ক্যাথলিক ছিলেন, নাস্তিক আবার কোথায়? তিনি 'এথেনিক ক্লেনজিং' বা জাতিগতভাবে হত্যা করে একটি জাতিকে নির্মূল করাতে বিশ্বাসী ছিলেন।

এরপর বেশ মজা হল। ডকিন্স যেই বলতে লাগলেন হিটলারের কথা, বিশদভাবে ওঁর ইহুদিদের প্রতি জাতিঘৃণা, একটি বিশেষ ধর্মগোষ্ঠীর প্রতি গোঁড়া মনোভাবের কথা, টেলিফোনের বক্তা বলে উঠলেন — "যাই হোক, একজন হিটলার তো কিছু প্রমাণ করে না। কত ধার্মিক মানুষ আছেন যারা সৎ...."

তখন ডকিন্স হাসতে হাসতে বললেন — 'হিটলারের কথা তো আপনিই তুলেছিলেন, আমি না। আমিও তো বলছি কোনও বিশেষ নাস্তিক মানুষ যদি অন্যায় কাজ করেও থাকেন, তাতে প্রমাণ হয় না, নাস্তিকতা ভ্রান্ত বিশ্বাস। বরং ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি বহু ধার্মিক বন্ধু আছেন, যাঁরা আদ্যোপান্ত ভালো মানুষ। এতেও ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ হয় না।

এরপর মধ্যপ্রাচ্যের একজন মহিলা ফোনে অনেকক্ষণ কথা বললেন। ডকিন্স সাহেবের বইকে এবং ওঁর নাস্তিকতা প্রচারকে আপত্তিজনক বললেন। তাতে ডকিন্সের প্রতিক্রিয়া —

ডকিন্স: আপনি কি মনে করেন কারোর ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই?

মহিলা: না, তা নয়।

ডকিন্স: আপনি যেমন আপনার মতে চলেন ও আপনার বিশ্বাস প্রচার করেন, আমিও আমার বিশ্বাস প্রচার করতে পারি তো?

মহিলা: হ্যাঁ, কিন্তু আপনার 'ঈশ্বর নেই' এসব বলাতে আমার ঘোর আপত্তি, আপনি এটা করতে পারেন না। আমি আপনার কথা মানি না (উত্তেজিত)

ডকিন্স: আপনি আমার বইটা পড়েছেন? (দ্য গড ডিল্যুশন)

মহিলা: না।

ডকিন্স: তাহলে আপনার কী করা উচিৎ? বইটা পড়ে আমাকে বলুন — 'এই জায়গাটা আমার ভালো লাগেনি', 'এটা আপনি ভুল লিখেছেন' ...ইত্যাদি। না পড়েই শুধু মানি না, মানি না বলে চেঁচালে হবে?

মহিলা: চুপ।

এরপর আরেকজন (সম্ভবত পাদ্রী) বললেন, 'আমি শুনেছি যে, আপনি নাকি বলেছেন শিশুদের ধর্মাচারণ করানো শিশুদের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার? এমনকি তা নাকি 'শিশু নির্যাতন' - এর পর্যায়ে পড়ে?

ডকিন্স: না, ভুল শুনেছেন। আমি বলেছি শিশুদের বোঝবার বয়স হবার আগেই ধর্মীয়-ছাপ্পা মেরে দেওয়া, তাদের কোনও বিশেষ ধর্মগোষ্ঠীর তকমা লাগিয়ে দেওয়া ভুল। অবশ্যই শিশুদের সমস্ত ধর্ম সম্পর্কে জানা উচিৎ। ধর্মের ইতিহাস তো মানব সভ্যতারই ইতিহাস। সমস্ত ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধে জেনে বুঝে বড় হয়ে ইচ্ছে হলে সে একটি বিশেষ ধর্মকে বেছে নেবে বা কোন ধর্মই নেবে না। আর একটা কথা, ধর্মের নামে ভয় দেখানোটা অবশ্যই 'শিশু নির্যাতনের' মধ্যে পড়ে। আমার অনুরোধ শিশুদের কখনোই পাপ, নরক, নরকের অগ্নিকুন্ড ইত্যাদির ভয় দেখাবেন না। এটা অন্যায়।

এরপর সঞ্চালক জিজ্ঞেস করলেন, ধর্ম ছাড়া পৃথিবী কেমন হবে? তা কি কখনও আসবে?

ডকিন্স: নিশ্চয়ই আসবে। ধীরে ধীরে মানুষ সত্যিটা বুঝতে পারলে ক্রমশ ধর্মের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে। সৎ হতে হলে, ভালো মানুষ হতে হলে ধার্মিক বা ধর্মবিশ্বাসী হতে হয় না। তবে ধর্ম সম্বন্ধে পড়াশোনা করা দরকার। মানব সভ্যতার ইতিহাস আর ধর্মগুলো অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। এগুলো না জানলে ইতিহাস, সাহিত্য ইত্যাদির রসগ্রহণ করা যাবে না শেক্সপিয়ার কি বোঝা সম্ভব, ধর্মের ইতিহাস না জেনে?

"তুলনামূলক ধর্মশিক্ষা তাই ইতিহাসের অংশ"।

শেষে একজন ফোনে জিজ্ঞেস করলেন — যদি কখনও ঈশ্বরের দেখা পান, তখন কি করবেন? 'সরি' বলবেন? বলবেন 'আমার ভুল হয়েছিল?'

ডকিন্স: কার কথা বলছেন? কোন ঈশ্বর? জিউস?  আল্লা? হিন্দুদের শিব? কার দেখা পাবো? হাসতে হাসতে বললেন 'ঐ যে বললাম, এরকম হওয়ার সম্ভবনা এতই কম যে হিসাবের মধ্যেই আসে না'।

প্রশ্নকর্তা: এই সৃষ্টি! এর তো একটা সৃষ্টিকর্তা আছে। সব কিছুরই একটা রূপকার বা স্রষ্টা থাকে।

ডকিন্স: 'সে প্রশ্ন এতদিন ছিল। এখন ডারউইন এর "ন্যাচারাল সিলেকশন" থিওরিতে তো পরিস্কার হয়ে গেছে সৃষ্টির আদি রহস্য। যদি স্রষ্টা থাকে, তাহলে তো স্রষ্টারও স্রষ্টা আছে। তিনি কে? এর তো কোনও শেষ নেই। তর্কের খাতিরে যদি 'ঈশ্বরের' দেখা পাই আপনার কথামত, তাঁর কাছে জানতে চাইব বিজ্ঞানের এখনও অজানা কিছু তত্ত্ব ও তথ্য। আশাকরি তিনি (সেই মহিলা বা পুরুষ বা বস্তু) বলতে পারবেন তার উত্তর।

এটি ছিল একটি রেডিও অনুষ্ঠানে রিচার্ড ডকিন্সের প্রশ্নোত্তর পর্ব।

রিচার্ড ডকিন্স হলেন পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত নিরীশ্বরবাদী এবং ডারউইনের যোগ্য উত্তরসূরি। ওঁর দলে আরও আছেন — ক্রিষ্টোফার হিচেন্স সাহেব, যিনি মাদার টেরিজাকে নিয়ে নির্মোহ আলোচনা করে বিখ্যাত হয়েছিলেন।

রিচার্ড ডকিন্স অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বিষয়: "জনমানসে বিজ্ঞানচেতনার সঞ্চার / Public Understanding of Science"। ধার্মিক রোমান ক্যাথলিক, মুসলিম সমাজ ও সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের বিরক্তি, ঠাট্টা ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনি। পশ্চিমী মিডিয়া তাঁকে 'ডারউইনের পোষা হিংস্র কুকুর' অবধি বলতে কসুর করেনি।

রিচার্ড ডকিন্স জন্মেছেন কেনিয়ায়। নয় বছর বয়সে খেয়াল করেন পৃথিবীর সবাই খ্রিস্টান নয়। আরও নানারকম ধর্মবিশ্বাস, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান আছে। প্রতেকে নিজের বিশ্বাসটাকেই সঠিক এবং চরম সত্য মনে করে। এটা বুঝতে বুঝতে বছর পনের যখন বয়স, তখন উপলব্ধি করেন যে, 'ব্যক্তিগত ধর্ম একটা অ্যাক্সিডেন্ট' বা কাকতালীয় ব্যাপার। উনি খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাই খ্রিস্টান। নয়ত অন্য কিছু হতেন। ঈশ্বরের চেহারা বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন রকম। অতএব তা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।


ভাষান্তর- সুমিত্রা পদ্মনাভন

পেরিয়ার ঈশ্বর নিয়ে এমন কিছু প্রশ্ন করেছেন -
সম্পাদক
Nov. 20, 2024 | নাস্তিকতা | views:39 | likes:2 | share: 2 | comments:0

স্বাধীনতার পরে এবং তার আগেও দক্ষিণ ভারতের রাজ্য বিশেষ করে তামিলনাডু তে পেরিয়ারের খুবই গভীর প্রভাব থাকতে দেখা যায়। 

দক্ষিণ ভারতের লোক ওনাকে খুবই সম্মান করেন পেরিয়ারের নামে চলচিত ই, বি, রামাস্বামির না শুধু সাংস্কৃতিক তবে তামিলনাড়ুর সামাজিক এবং রাজনীতি দিক থেকে ও প্রভাব এত গভীর যে কমিউনিস্ট হোক অথবা দলিত আন্দোলনের সাথে যুক্ত লোক সব ওনার থেকে প্রভাবিত হয়েছে। 


তামিল রাষ্ট্রভুক্ত থেকে ধরে নাস্তিক তর্কবাদী নারীবাদী দেখে আন্দোলন করা লোক সবাই উনার সম্মান করেন উনার বিচার এবং কাজের সাক্ষী দেন এবং ওনাকে একজন মার্গ দর্শক রূপে গণ্য করেন। তর্কবাদী নাস্তিক এবং পিছিয়ে পড়া দের পক্ষে কাজ করার কারণে উনার সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে অনেক উচ নিচ দেখা যায়

পেরিয়ার ই, বি, রামাস্বামী (১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৭৯-/ ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩) বিশ শতাব্দীর তামিলনাড়ুর একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং লোক প্রিয় রাজনেতা ছিলেন ওনাকে পেরিয়ার নামে ডাকা হয় আসলে তামিলে সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য এই শব্দ ব্যবহার করা হয়

উনি হিন্দুত্বের প্রবল বিরোধী ছিলেন জাস্টিস পার্টি গঠনের সময় হিন্দুত্বের বিরোধ ছিল উত্তর ভারতের হিন্দি পশ্চিম ভারতের বাংলা এলাকায় যদিও ওনার লোকপ্রিয়তা কম কিন্তু আস্তে আস্তে বাড়তেই চলেছে এখন 


ভারতীয় বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয় সমাজের পিছিয়ে পড়া শোষিত লোকেদের অবস্থা বদলানোর এবং একটি তর্কশীল সংস্কৃতিক আন্দোলন চালানোতে উনার নাম সবচেয়ে উপরে আছে

পেরিয়ারের মূর্তির নিচে লেখা ছিল - ঈশ্বর নেই এবং ঈশ্বর একদম নেই যে ঈশ্বরকে বানিয়েছে ও বোকা যে ঈশ্বরের প্রচার করে ও দুষ্ট আর জে ঈশ্বরের পূজা করে ও একজন বব্বর। 


এই ধরনের করা শব্দ ব্যবহার করে প্রশ্ন করার কারণে পেরিয়ার কে ভারতীয় হিন্দুত্ব সমাজ সব সময় দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু যখন আজকে ভারতে নাস্তিকতা এবং তর্কশীল আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সব জায়গায় ছড়াচ্ছে আর নাস্তিকদের সংখ্যা বাড়ছে লোক খুব বড় সংখ্যায় উনার যুক্তি সিদ্ধান্ত প্রশ্ন ইত্যাদি প্রচারিত করছেন। 


আসেন দেখি মহান তর্কশীল নাস্তিক এবং সমাজ কল্যাণী পেরিয়ার ঈশ্বরকে কি কি প্রশ্ন করেছেন তবে এ প্রশ্নগুলো বলতে গেলে তো সামাজিক কুসংস্কার গুলোকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে। 


১) তুমি কি ভীতু যে সবসময় লুকিয়ে থাকো কখনো কারো সামনে আসো না

2. আপনি কি একজন সুখী ব্যক্তি যিনি মানুষকে দিনরাত ইবাদত ও প্রার্থনা করতে বাধ্য করেন? 

৩) আপনি কি সবসময় ক্ষুধার্ত যারা মানুষের কাছ থেকে মিষ্টি, দুধ, ঘি ইত্যাদি নিয়ে থাকেন? 

৪) আপনি কি একজন আমিষভোজী যিনি মানুষকে দুর্বল পশু বলি দিতে বলেন? ৫) আপনি কি একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী যিনি লক্ষ লক্ষ টন সোনা পুঁতে রেখে মন্দিরে বসে আছেন?

৬)  তুমি কি ব্যভিচারিণী যে মন্দিরে দেবদাসী রাখে?  

৭)  আপনি কি দুর্বল যারা প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ধর্ষণ বন্ধ করতে পারে না?  

৮)  তুমি কি বোকা, যারা পৃথিবীর দেশে তেল না খেয়ে নদীতে দুধ-ঘি ফেলে দেয়?  

৯)  আপনি কি বধির যারা নিরপরাধ মানুষদের ধর্ষিত, অকারণে মারা যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পান না?  ১০)  আপনি কি অন্ধ যে প্রতিদিন অপরাধ ঘটছে তা দেখতে পাচ্ছেন না?  

১১) আপনি কি সেই সন্ত্রাসীদের সংস্পর্শে আছেন যারা প্রতিদিন ধর্মের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে? 

১২) আপনি কি একজন সন্ত্রাসী যিনি চান যে লোকেরা আপনাকে ভয় পায়? 

১৩) আপনি কি বোবা যিনি একটি শব্দও বলতে পারেন না কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ আপনাকে লক্ষ লক্ষ প্রশ্ন করে? 

১৪) আপনি কি সেই দুর্নীতিবাজ যারা গরীবকে কখনও কিছু দেন না যখন গরীবরা আপনার উপর পশুর মত কাজ করে অর্জিত সমস্ত অর্থ ত্যাগ করে? 

১৫) তুমি কি বোকা যে আমাদের মত নাস্তিক সৃষ্টি করেছ যারা তোমাকে মিথ্যা বলে এবং তোমার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে?


ভাষান্তর -অরিজিৎ।

জ্যোতিষী, তান্ত্রিকগিরি প্রতারণা পেশা, হতে পারে জেলও। -
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | আইন | views:294 | likes:2 | share: 1 | comments:0

জ্যোতিষী, তান্ত্রিক,ওঝা,জানগুরু,কাপালিক, অলৌকিক ক্ষমতাধর, অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাধর, ডাইনি সন্দেহে কোনো মহিলার ওপরে অত্বাচার করা কোনো ব্যাক্তি, ইত্যাদিদের জেলে ঢোকাবার জন্য আমাদের দেশে বেশ কয়েকটা ভালো আইন রয়েছে। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা এই দেশে  টাকা এবং রাজনীতিক পরিচিতি থাকার সুবাদে অপরাধীরা অনেক বে-আইনি কাজ করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরায় শুধুমাত্র জনগণের আইন বিষয়ে অবজ্ঞার কারণে। সরকার চাইলেই আইন কে মলাটবন্দি অবস্থায় ফেলে না রেখে, জনগণ কে এই বিষয়ে সচেতন করতে পারে। কিন্তু তারা কানে তুলো গুঁজে বসে থাকে। আমজনতা এইসব আইনের ব্যাপার সঠিক ভবে জানলে নিজেরাই তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে সমস্ত, চোর, চিটিংবাজদের জেলে ঢোকাতে পারেন, অনায়াসেই।


নরেন্দ্র দাভোলকর, যিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন, অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির। উনি ২০০৩ সাল থেকেই একটা আইন কে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান। অবশেষে "The Maharashtra Prevention and Eradication of Human Sacrifice and other Inhuman, Evil and Aghori Practices and Black Magic Act, 2013 লাগু হয়। তাছাড়া Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act 1954, The Drugs and Cosmetics Act 1940, IPC 420, IPC 302, IPC 303 এর মতন বেশ কিছু কঠোর আইনও এই দেশে রয়েছে।


প্রসঙ্গত জানাই, সংসদ প্রবর্তিত এই আইন 30 th April 1954 সালে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় এবং  1st May 1954 এ ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি গেজেটের বিশেষ সংখ্যার দ্বিতীয় অংশের, প্রথম অধ্যায়ের ২৪ নং ক্রমে প্রকাশিত হয়। জম্মু ও কাশ্মীর বাদে ভারতের সর্বত্র এই আইন প্রযোজ্য।


The Drugs Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act 1954 আইনের সংশোধন হয় 1963 তে। এই আইনের 9(A) ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, এই আইন ভঙ্গকারীদের Cognizable Offence হিসেবে গন্য করা হবে। অর্থাৎ কেউ কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ কোনোও ভাবে এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে প্রাথমিক জানার ভিত্তিতে কোনো অভিযুক্তকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে (Notwithstanding anything contained in The Code of Criminal Procedure 1898 an Offence Punishable under this Act shall be Cognizable)..


আগে Drugs and Magic Remedies Act ভঙ্গকারীদের অপরাধ ছিলো Non-Cognizable অর্থাৎ এক বা একাধিক ব্যাক্তিকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে হত। পুলিশ সরকারের তরফ থেকে অভিযোগকারীর পক্ষে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতেন। আদালত অভিযুক্তর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা বা ওয়ারেন্ট দায়ের করলে তবেই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন।

এই উল্লিখিত আইন ভাঙ্গাটা যেহেতু Non-Cognizable অপরাধ বলে 1963 সালে আইন সংযোজনের আগে পর্যন্ত গণ্য করা হত, তাই আদালত অভিযুক্তর বাসস্থল কিংবা ব্যাবসা/চাকরিস্থলে থানা মারফত অভিযুক্তকে সামনস পাঠাতেন। সামনস অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ। যাতে লেখা থাকে কবে, কতটার সময়, কোনো আদালতে তাকে হাজিরা দিতে হবে। যেহেতু উল্লেখিত এই আইন ভাঙ্গাটা Criminal Offence বা ফৌজদারি অপরাধ তাই অভিযুক্তকে (পড়ুন জ্যোতিষী, তান্ত্রিককে)  আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হত।


কোনো জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, ওঝা,জানগুরু ইত্যাদি বুজরুক প্রতারকের বিরুদ্ধে  ' ম্যাজিক রেমেডিস 'আইন ভেঙ্গেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরও কোনোও বিশেষ কারণে পুলিশ নিরব দর্শক থাকতেই পারেন। তখন আপনি অভিযোগকারী হলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করার প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে (যেমন ডাইরি নং অথবা লিখিত অভিযোগ গ্রহণের থানার সিলমোহর ও স্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র) আদালতে মামলা করা যায়। একে ' Complain Case ' বলে। এই মামলার ভিত্তিতে আদালত সামনস পাঠাবেন অভিযুক্তর কাছে। অভিযুক্ত আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেবেন।  সামনস অগ্রাহ্য করলে আদালত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ কে আদেশ দেবেন।


" The Drugs And Cosmetics Act 1940, Amendment GSR 884 (E)..বিভিন্ন সময়ে এই আইন সংশোধন হয়েছে। যেমন,1955,1957,1962,1963,1964..শেষ এমেন্ডমেন্ট হয় 2009 এ। 19th March 2009 তারিখে ভারতের প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় নোটিশ জারি করেছে কেন্দ্রের ' স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর '।  এবার থেকে শাস্তির পরিমান আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা।


কয়েকজন মুক্তমনা, যুক্তিবাদী মানুষ এই রাজ্যে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে মহারাষ্ট্রের ধাঁচে একটা জোরালো বা কঠোর আইন প্রণয়ণের দাবীতে সরব। ইতিমধ্যে ওনারা আইনের খসড়া জমা দিয়েছেন State Law Commission এর দপ্তরে। এনারা যেই আইনটি আনতে চান তার নাম " The West Bengal Prevention of Superstition and Black Magic Practices Bill 2016 "..  আপাতত এই আইনটি লাল ফিঁতের ফাঁসে আটকে রয়েছে।


পরিশেষে জানাই, বৃত্তিকর চাপান হয় আইনসম্মত পেশার উপর। আইন সম্মত পেশার একটা তালিকা আছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্যাক্স অন প্রফেশন, টেডস, কলিংস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৭৯-এ। প্রফেশন ট্যাক্স বিষয়ক আইন ১৯৭৯ এর সেকশন ও (২) তে আইন-সম্মত পেশার পূর্ণ তালিকা দেওয়া আছে। তাতে কোথাও ‘জ্যোতিষ’ এর নাম নেই। কারন ‘জ্যোতিষ’ এর কোন আইনি স্বীকৃতি নেই। বরং এদেশের আইন অনুসারে জ্যোতিষ পেশা বে-আইনি, নিষিদ্ধ, অবাঞ্ছিত, অনৈতিক এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।


জ্যোতিষ শাস্ত্রটাই যখন বে-আইনি, প্রতারণা এবং চিটিংবাজি। তখন আজ নয়তো কাল জ্যোতিষী, তান্ত্রিকদের জেলে যাওয়া আটকানোর সাধ্য কারোর নেই। তবে আমার ব্যাক্তিগত মতে শুধুমাত্র কঠোর আইন এনে এদের দমানো যাবেনা। কারন টাকা এবং রাজনীতিক পরিচিতির সুবাদে এরা আইন কে পকেট বন্দি করে ছাড় পেয়ে যাবে। এদের একটাই ওষুধ। সেটা হচ্ছে বয়কট করা।

বুজরুকি, প্রতারণা ইত্যাদির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে প্রচারিত -
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | আইন | views:298 | likes:2 | share: 2 | comments:0

"ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি" ১৯৮৫ সাল থেকেই প্রশাসনের কাছে প্রবল দাবী জানিয়ে আসছে আইনকে মলাট বন্দি না রেখে, সর্বত্র তার প্রয়োগ হোক। কিছু ভারতীয় আইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন, Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisements) Act 1954, Drug and Cosmetic Act 1940 (Amendment 2009), IPC 415, 420 (প্রতারণা), IPC 299 to 308 (অপরাধজনক নরহত্যা, অপরাধজনক নরহত্যা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ), IPC120 A&B (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), IPC 319 to 338 (আঘাত, গুরুতর আঘাত), IPC 339 to 358 (অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ), IPC 268 (গন-উপদ্রপ), IPC 375 (ধর্ষণ), IPC 503 to 507 (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন), IPC 508 (কোন ব্যক্তিকে সে দৈব আক্রোশ কবলিত হইবে বলিয়া বিশ্বাস করিবার জন্য প্ররোচিত করিয়া কোন কার্য সম্পাদন করা), IPC 447 (অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ), IPC 354, 509 (শ্লীলতাহানি) এবং IPC 367 (ধর্ষণের চেষ্টা), IPC 425(অনিষ্ট) ইত্যাদি।

আইন অনুযায়ী যেকোনো অলৌকিক(?) কর্মকাণ্ড এর নামে ধান্ধাবাজি, বুজরুকী, ঝাড়ফুঁকের নামে অত্যাচার, ব্যভিচার, প্রতারণা করে তার যেকোনো রকম প্রাসার, প্রচার এবং প্রয়োগ নিষিদ্ধ এবং নূন্যতম শাস্তি ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন বা ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে। জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বাবাজী, মাতাজী, ওঝা, গুণিন, জানগুরুদের  বিভিন্ন বুজরুকী বা পরিকল্পিত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ বহুবার জানানো হয়েছে।


"ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি"ই  ভারতের একমাত্র সংগঠন, যারা ১৯৮৫ সাল (দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে) থেকেই উক্ত ভারতীয় আইনের প্রচার এবং তার প্রয়োগ করে চলেছে "জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বাবাজী, মাতাজী, ওঝা, গুণিন, জানগুরুদের " বিরুদ্ধে যাদের অনেকেই আজ শ্রীঘরে। "জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বাবাজী, মাতাজী, ওঝা, গুণিন, জানগুরুদের" উদ্দেশ্যে রইলো ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির তরফে "৫০ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ", যে কেউ যেকোন রকম অলৌকিক (?) ঘটনা দেখাতে পারলেই উক্ত পুরস্কার সেই ব্যক্তির হাতে। এই চ্যালেঞ্জ এর সামনে আজপর্যন্ত ৭০০ ওপর অবতার, জ্যোতিষী, তান্ত্রিক বুজরুকরা পরাজিত।

"ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি" র হাতে পরাজিতদের তালিকাটি বিশাল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন - তারাপীঠের তান্ত্রিক নির্মলানন্দ, গৌতম ভারতী, ডাইনি সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতা, পুনের মিঠাইবাবা, সাইবাবা, সাইদাবাদী, আমেরিকার মরিস সেরুলো, ফকির এস পি আলি, সত্যানন্দ, বাবা রামদেব, অলৌকিক মাতা জয়া গাঙ্গুলি, ক্লাইভ হ্যারিস, ভ্যাটিকানের পোপ (মাদার টেরিজার অলৌকিকতা!) প্রমুখ।

বুজরুক, অলৌকিক বাবাজী, মতাজী, জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, ঠগবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন কি বলছে দেখা যাক:

"দ্যা ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিস (অবজেকশন্যাবল অ্যাডভারটাইজমেন্টস) অ্যাক্ট, ১৯৫৪"-সংসদে প্রবর্তিত এই আইন ৩০ এপ্রিল ১৯৫৪ তারিখে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় এবং ১মে ১৯৫৪ তারিখে ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি গেজেটের বিশেষ সংখ্যার দ্বিতীয় অংশের প্রথম অধ্যায়ের ২৪ নং ক্রমে প্রকাশিত।


  ড্রাগ সম্পর্কিত কিছু বিজ্ঞাপন এবং যাদু বা মন্ত্রবলে রোগ প্রতিকার হিসেবে বর্ণিত বিজ্ঞাপন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এই আইন প্রবর্তিত। ১৯৬৩-তে আইনটি সংশোধন করা হয় এবং ৯(এ) ধারা সংযোজন করে বলা হল, এই আইন ভঙ্গকারীদের 'congnizable' অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হবে।


জ্যোতিষ,তান্ত্রিক,ম্যাগনেটোথেরাপি,ফেংশুই সহ সমস্ত রকম বাবাজী মাতাজীদের শায়েস্তা করতে "দ্যা ড্রাগস অ্যান্ড কস্মেটিকস অ্যাক্ট ১৯৪০" আইনটি আরও কড়া হল l 19 মার্চ 2009 ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দপ্তর একটি নোটিশ জারি করে GSR 884 (E) The Drugs and Cosmetics Act (1940) Amendment. নোটিশে জানাল প্রতিটি ওষুধের ওজন, আয়তন, উপাদান সমূহের পরিমাণ ওষুধের লেবেলের গায়ে না সাঁটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে l ওষুধ সেবনের ফলে রোগীর মৃত্যু বা আশঙ্কাজনক ক্ষতি হলে ওষুধ প্রস্তুতকারকের শাস্তি আজীবন কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে ও দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে l [উক্ত আইনে "cosmetics" দ্রব্যাদিও পড়ছে এবং যা "ISI Standard" এর মান দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার পর বাজারে বিক্রি করা যাবে। তাহলে দেখাই যাচ্ছে "ধনলক্ষী যন্ত্র বা সৌভাগ্য জেমস" এর নামে কিভাবে এক দুর্নীতির চক্র চলছে আমাদের আশেপাশে!]


ওষুধ বা 'ড্রাগ' বলতে শরীরে যাহা কাজ করে বলে দাবি করা হবে যেমন তাবিজ, মাদুলি, কবজ, যাগ-যজ্ঞ ইত্যাদি সমস্ত কিছুই কিন্তু ড্রাগের মধ্যেই পরে 

সাধারণ মানুষের কী করণীয় এই ভন্ডামীর বিরুদ্ধে:

আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী হন, এবং কোনও তান্ত্রিক বা জ্যোতিষী যদি রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া আপনার কাছে কোনো তাবিজ,কবজ, মাদুলি বা ঐ ধরণের কিছু বিক্রয় করে থাকেন তবে আপনি আপনার অভিযোগ দায়ের করবেন এই ঠিকানায়--DIRECTORATE OF DRUGS CONTROL

P – 16, INDIA EXCHANGE PLACE EXTENSION, K.I.T. BUILDING – 5TH FLOOR, KOLKATA - 700 073, (+) 91 – (+) 33 – 2225 – 2214 / 9587 / 9610,TELE FAX: - 2225 – 2215, Email: psumana2021@gmail.com


অভিযোগ দায়ের করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, তান্ত্রিক-জ্যোতিষির রোগ সারাবার কোনো বিজ্ঞাপন পত্র- পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকলে তার জেরক্স কপি অভিযোগ পত্রের সাথে যুক্ত করে দেবেন। মূল কাগজটি যত্ন করে রেখে দেবেন, মামলা চলাকালীন কাজে লাগবে l আপনার অভিযোগ পাওয়ার পর ড্রাগস কন্ট্রোল থেকে অভিযুক্তের কাছে জানতে চাইবে এই ধরণের তাবিজ কবজ (যা আইনের সংঞ্জায় ওষুধ বা ড্রাগস) তৈরির বৈধ লাইসেন্স তার কাছে আছে কিনা l ড্রাগস কন্ট্রোলের দেওয়া লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বানানো বা বিক্রয়ের জন্য ওই জ্যোতিষী বা তান্ত্রিকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করবে ড্রাগস কন্ট্রোল l মামলাটি হবে অভিযুক্ত তান্ত্রিক-জ্যোতিষি বনাম সরকারের।  আপনাকে বড়জোর সাক্ষী দেওয়া ছাড়া কিছুটি করতে হবে না। এবং সর্বোপরি  আপনার নিকটবর্তী পুলিশ থানা, বিডিও, এসডিও বা ডিএম অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে রাখুন।

তাহলে, আসুন আপনি আমি সহ সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বেআইনি এইসব পেশার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলি এবং নিথর প্রশাসনকে সচল করি, নচেৎ আইন বইয়ের মলাটে বন্দিই থাকবে অনন্তকাল অবধি।

তথ্যসহায়তায়: প্রবীর ঘোষ,অনাবিল সেনগুপ্ত, সন্তোষ শর্মা।

বাংলায় কুসংস্কার বিরোধী আইনের প্রস্তাবনা -
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | আইন | views:63 | likes:1 | share: 1 | comments:0

প্রথমেই স্মরণ করা যাক পুনে- মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা, ডাক্তার নরেন্দ্র অচ্যুত দাভোলকরের (জন্ম ১৯৪৫ সালের ১ নভেম্বর)। ১৯৭০ সালে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি পান, তার পর থেকে ১৯৮২ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত একটি হাসপাতাল ও দু’টি ক্লিনিক চালাতেন। তার পর ১৯৮৩ সালে উনি হঠাৎই হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়ে গড়ে তোলেন "অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি"র। শুধু মহারাষ্ট্রেই ২৩০টি শাখা বর্তমানে। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।


মন্ত্রতন্ত্র, তুকতাক, কালাজাদু, কুসংস্কার, দৈব চিকিৎসা, অলৌকিক শক্তিধর, নিরিহ মহিলাদের ডাইনি বলে দেগে দেওয়া ইত্যাদি বুজরুকির বিরুদ্ধে দাভোলকর, একটি কঠোর আইন প্রণয়ণের জন্য কাজ করছিলেন। কিন্তু, ২০১৩ সালের ২০ অগস্ট ভোরবেলা পুনেতে তাঁর বাড়ির সামনেই প্রাতর্ভ্রমণের সময় দু’জন বন্দুকধারী আততায়ী পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চার রাউন্ড গুলি চালায় নরেন্দ্র দাভোলকরের উপর। দু’টি গুলি মাথায় লাগে। রক্তাক্ত অবস্থাতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।


দাভোলকর যে আইনের জন্য কাজ করছিলেন সেই বিলটি বিধানসভার অধিবেশনে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আলোচনার জন্য বিলটির কথা তোলাই হয়নি। দাভোলকর কিন্তু থামেননি। অধিবেশনে বিলটির প্রসঙ্গ এল সাত-সাত বার। এক বারও আলোচনার জন্য তোলা হল না। অবশেষে, জনগণের চাপে তাঁর হত্যার তিন দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৩ অগস্ট ২০১৩ বিলটি পাশ করানোর জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করেন মহারাষ্ট্র সরকার এবং শেষ পর্যন্ত ওই বছরই ১৮ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্র বিধানসভায় পাশ হয়, " মহারাষ্ট্র প্রিভেনশন অ্যান্ড ইর‌্যাডিকেশন অব হিউম্যান স্যাক্রিফাইস অ্যান্ড আদার ইনহিউম্যান ইভিল অ্যান্ড অঘোরী প্র্যাকটিসেস অ্যান্ড ব্ল্যাক ম্যাজিক বিল-২০১৩ (The Maharashtra Prevention and Eradication of Human Sacrifice and other Inhuman, Evil and Aghori Practices and Black Magic Act, 2013)।


দাভোলকরের মৃত্যুর পর "ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান র‌্যাশনালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন" এর সভাপতি নরেন্দ্র নায়ক বলেছিলেন -“প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি যদি মনে করে থাকে আমাদের এক জনকে গুলি চালিয়ে খুন করে আন্দোলনকে স্তব্ধ করবে, তবে তারা ভুল করছে। অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই কখনওই থামে না, ব্যাটনটা হাতবদল হয় শুধু।"


কয়েকজন মুক্তমনা, যুক্তিবাদী আন্দোলনকর্মীরা পশ্চিমবঙ্গে, মহারাষ্ট্রের ধাঁচে একটা জোরালো বা কঠোর আইন প্রণয়ণের দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে সরব। গত ৪ঠা এপ্রিল ২০১৭, কুসংস্কারবিরোধী আইন প্রস্তাবনা উদ্যোগ এর পক্ষে এই  রাজ্যে কুসংস্কারবিরোধী আইন লাগু করার জন্য একটা খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে, রাজ্য আইন কমিশন, রাজ্য বিধানসভার স্পিকারের দফতর এবং অন্যান্য জায়গায়। এনারা যে আইনটি আনতে চান তার নাম "The West Bengal Prevention of Superstition and Black Magic Practices Bill 2016"। আপাতত এই আইনটি লাল ফিঁতের ফাঁসে আটকে রয়েছে সরকারের উদাসিনতার কারনে।


সেই খসড়া প্রস্তাবটির  সিডিউল ৩টে তেরোটা  আইন মোতাবেক আদালত গ্রাহ্য অপরাধ হিসেবে  গণ্য করার জন্য কুসংস্কারচর্চার একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। যেমন-

১) ভূত  অশুভ  আত্মা  প্রেতাত্মা  বা  ওই  ধরনের  কিছু  তাড়ানোর  অজুহাতে  কোনো  ব্যক্তিকে  দড়ি  শেকল  ইত্যাদি  দিয়ে  বাঁধা  ঝুলিয়ে  রাখা, তাকে  লাঠি  জুতো  ঝাঁটা  চাবুক  বা  ওই  ধরনের  কোনো  বস্তু  দিয়ে  মারা  চুল  ছিড়ে  নেওয়া  বা  কেটে  দেওয়া, গরম  লোহার  শিক  বা  ওই  ধরনের  কিছু  দিয়ে ছেঁকা  দেওয়া, যে কোনোভাবে  শারীরিক  ও মানসিক  নির্যাতন  করা, শুকনো  লঙ্কা জাতীয়  জিনিস  পুড়িয়ে  তার  গন্ধ  শোকানো, অত্যাচারের  ভয়  দেখিয়ে  নোংরা  জল  প্রস্রাব  বিষ্ঠা  বা  ওই  জাতীয়  কোনো  অখাদ্য  কুখাদ্য  খেতে  বাধ্য  করা, জুতো  মুখে  নিয়ে  দৌড়ে  যাওয়া, ওই  জাতীয়  সামাজিক  মর্যাদা  হানিকর  কোনো  কাজ  করতে  বাধ্য  করা, প্রকাশ্যে বা  অপ্রকাশ্য  যৌন  হেনস্থা   হয়রানি  করা, অন্য  যে  কোনো  মানসিক  বা  দৈহিকভাবে  অস্বাস্থ্যকর  কাজ  করতে  বাধ্য  করা  আইনত  দণ্ডনীয়  অপরাধ  হিসেবে  গণ্য  করতে  হবে। 

কাউকে  ভূতে  ধরেছে  বা  অশুভ  আত্মা  বা  অশুভ  শক্তি  ভর  করেছে  বলে  প্রচার  করাটাও  এই  আইনের  আওতায়  আসবে।

২) তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়ে এবং / অথবা প্রচার করে জনসাধারণের কাছ থেকে  প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থ জমি বাড়ি অলংকার  সম্পত্তি  ইত্যাদি আদায় /উপার্জন  করা, ভয়  দেখানো সন্ত্রস্ত করা প্রতারিত করা, শারীরিক  /মানসিকভাবে  ক্ষতিকর  কোনো  ক্রিয়া কলাপ  করা এবং / অথবা অন্যকে প্ররোচিত  করা  অপরাধ  হিসেবে  গণ্য  করতে  হবে। 

৩) অলৌকিক  শক্তি  বা  ক্ষমতার  অধিকারী  হতে  গিয়ে  বা  ওই  ধরনের  অতিপ্রাকৃত  কোনো   শক্তির  আশীর্বাদধন্য  হওয়ার  / করার  বাসনায়  এমন  কিছু  করার  বা  অন্যকে  প্ররোচিত  করা  যাতে  ব্যক্তির   শারীরিক  /  মানসিক  ক্ষতি  বা  জীবনহানির  আশঙ্কা  থাকে, অপরাধ  হবে  এসব কাজ ও।


৪) জলের  গোপন  উৎস, গুপ্তধন, সোনাদানা, হীরে, খনিজ সম্পদ  ইত্যাদি  অনুসন্ধানের  নামে  কোনো  অমানবিক  এবং  / অথবা  বৈজ্ঞানিকভাবে  অপরীক্ষীত   এবং  / অথবা  অস্বীকৃত  কোনো  কাজ  / যাদু -  করা  বা কাউকে  সেই  ধরনের  কাজ  করতে  প্ররোচিত  / প্রলুব্ধ  করা  এবং  সেই  ধরনের  কাজের  প্রচার  করা, যাতে  কোনো   ব্যক্তির  শারীরিক  /মানসিক  ক্ষতি   কিংবা   অঙ্গ/ জীবনহানি  হয়  বা  তার  আশঙ্কা  থাকে।


৫) কোনো  ব্যক্তির  অলৌকিক  বা  দৈবশক্তি  আছে  বা  ওই  ধরনের  কোনো  শক্তি  ভর  করেছে  বলে  প্রচার  করে  জনসাধারণকে  ভীত - সন্ত্রস্ত  করে  তোলা, এমন  প্রচারের  দ্বারা  মানুষকে  আকৃষ্ট  করে  অর্থ, সম্পত্তি  ইত্যাদি  আদায়  করা  বা  তার  চেষ্টা  করা  এই তথাকথিত  দৈবশক্তির  প্রতি  আনুগত্য  না  দেখালে  বা ঘোষিত  বিধান  না  মানলে  সমূহ  ক্ষতি  হওয়া  বা  ক্ষতি  করার  ভয়  দেখানো  দণ্ডনীয়  অপরাধ  বলে  আইনের  আওতায়  আনতে  হবে।


৬) কোনো  ব্যক্তি  তথাকথিত  ভূত  নামানো  প্রেত চর্চা  ডাকিনিবিদ্যা  চর্চা  করে  বা  তার  মাধ্যমে  সে অশুভ  শক্তিকে  নিয়ন্ত্রণ  করতে  পারে, কুনজর  কুদৃষ্টি  দিয়ে  বান  মেরে  মন্ত্রতন্ত্র  বা  অন্য  কোনো  ক্রিযকলাপের  মাধ্যমে  গবাদিপশুর  মড়ক  লাগানো, দুগ্ধবতী  দুধ  নিঃসরণ  বন্ধ  করা, অসুখবিসুখ  ঘটনো  থেকে  শুরু  করে  নানাবিধ  দুর্ভাগ্য  ডেকে  আনা  এবং  যেকোনো  ক্ষতিসাধন  করার  অশুভ  ক্ষমতা  আছে  বলে  প্রচার  করা,  এবং  ওই  ব্যক্তিকে  ডাইন  বা  ডাইনি  শয়তানের  অনুচর  /দূত  ইত্যাদি  তকমা  দিয়ে  প্রচার  করা, তার  ওপর  শারীরিক /মানসিক   অত্যাচার  চালানো, তাকে  একঘরে  করা, অর্থ  জমি  ইত্যাদি  আদায়  করা  বা  দখল  করা,  তাকে  এলাকা  থেকে  বিতাড়িত  করা, তার  ওপর  হামলা  এবং  /অথবা  তাকে  হত্যার  চেষ্টা। 


৭) কোনো  ব্যক্তিকে  ডাইন  বা  ডাইনি  বলে  দেগে  দিয়ে  তাকে  প্রকাশ্যে  /অপ্রকাশ্যে  নগ্ন  করে  হাঁকানো  এবং  তার  ওপর  যে  কোনো  ধরনের  শারীরিক / মানসিক  নির্যাতন  চালানো। 


৮) নখদর্পণ, থালা - বাটি  চালা, কন্ছি  চালা, আটার  গুলি  ইত্যাদির  সাহায্যে  চোর  ধরা, অপরাধী  শনাক্ত  করা  বা  করার  চেষ্টা  বা ওই  ধরনের  দাবি  / বিজ্ঞাপন  দেওয়া  বা  সেই  সূত্রে  কোনো  ব্যক্তির  ওপর  শারীরিক  /মানসিক  নির্যাতন  করা  বা তার  প্ররোচনা  দেওয়া। 


৯) সাস, কুকুর, বিছে  বা  যে  কোনো  প্রাণীর  কামড়ের  চিকিৎসার  ক্ষেত্রে  বৈজ্ঞানিকভাবে  প্রমাণিত, প্রতিষ্ঠিত  ও  স্বীকৃত  পদ্ধতি  এড়িয়ে, রোগীকে  তা  নেওয়ার  ব্যাপারে  উৎসাহিত  / সাহায্য  না  করে  /নেওয়ার  ব্যাপারে বাধা  দিয়ে  ওঝাগুনিন, তান্ত্রিক  প্রমুখের  দ্বারস্থ  হওয়ার  প্ররোচনা  দেওয়া  এবং  / অথবা  ঝাড়ফুঁক, মন্ত্র তন্ত্র, বিষপাথর  দিয়ে  বিষ  তোলা, ক্ষতস্হানে  মুরগির  পায়ু  ঘষা, শেকড়  বাকর  ইত্যাদি  দিয়ে /খাইয়ে  বিষ  নামানোর  চেষ্টা  ইত্যাদি। 


১০) আঙুল  বা  অঙ্গপ্রত্যঙ্গ  দিয়ে  'রক্তপাতহীন'  অস্ত্রোপচার, গর্ভবতী  মহিলার  যৌনাঙ্গে  হাত  /  আঙ্গুল  ব্যবহার  করে  বা  অন্য  যে  কোনো  পদ্ধতিতে  গর্ভস্থ  ভ্রূণের  লিঙ্গ  নির্ধারণ  /পরিবর্তন  করার  দাবি  করা।


১১) সন্তানধারণে  ইচ্ছুক  মহিলাকে  ডিম, কলা  বা  অন্য  কোনো  বস্তু  খাইয়ে, তন্ত্রমন্ত্র- এর  সাহায্যে  বা  অন্য  কোনো  অবৈজ্ঞানিক  পদ্ধতি  অবলম্বন  করে  এবং  / অথবা  তথাকথিত  অলৌকিক  শক্তির  সাহায্য  নিয়ে  " সন্তানবতী"   করার  দাবি  করা  / চেষ্টা  করা। 

আলৌকিক  ক্ষমতার  সাহায্যে  কোনো  মহিলাকে  সন্তানবতী  করার  প্রতিশ্রুতি দিয়ে  এবং  বিশ্বাসের  সুযোগ  নিয়ে  তাকে  প্রতারণা  করা, যৌন সম্পর্ক স্থাপন  করা, যৌন নির্যাতন  চালানো।  তুকতাক  ঝাড়ফুঁক  মন্ত্রপূত  জলপড়া  তেলপড়া  তাবিজ  কবজ  মাদুলি  আংটি, তামা  বা  ওই  জাতীয়  ধাতু, পাথর, শিকড় বাকড়, মাটি  মন্ত্র  তন্ত্র,  বিশ্বাস, প্রার্থনা  ইত্যাদির  মাধ্যমে  শারীরিক  /মানসিক  চিকিৎসা  করা  /করার  চেষ্টা  করা  /  দাবি  করা। 


১২) কোনো  ব্যক্তির  শারীরিক  / মানসিক  বিকার, কোনো  ব্যক্তি, প্রাণী  বা  বস্তুর  ব্যতিক্রমী  জৈব  রূপ, সত্তা  বা  বাস্তবতার  বহিঃপ্রকাশকে  দৈব  ঘটনা, ঈশ্বরের  আবির্ভাব  ইত্যাদি  বলে  প্রচার  করা  কিংবা   সেই  ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে  " দৈবশক্তি  সম্পন্ন  বলে  প্রচার  করা  এবং  তার  মাধ্যমে  জনসাধারণকে  বিভ্রান্ত  করা, অর্থ  আদায়  করা, সেই  ব্যক্তি, বস্ত  বা প্রাণীর  প্রতি  আনুগত্য  আদায়  করা, তার  ঘোষিত  বা  তার  নামে  ঘোষিত  বিধিবিধান, আদেশ, উপদেশ  জনসাধারণকে  মেনে  চলতে  প্ররোচিত  করা  বা  বাধ্য  করা।


১৩) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, জমিজমা, চাকরি, ব্যবসা, প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য  কলহ, শত্রুদমন   জাতীয়  ব্যক্তিগত  /পারিবারিক   সমস্যার  নিষ্পত্তি  করতে  তন্ত্রমন্ত্র, বশীকরণ, মুঠিকরণ, বানমারা, তুকতাক  বা  ওই  ধরনের  যে কোনো  অবৈজ্ঞানিক  (অপরীক্ষিত  ও  অপ্রমাণিত)   পদ্ধতির  সাহায্য  দেওয়া, দাবি  ও  প্রচার  করা, বিজ্ঞাপন  দেওয়া।


অতিরিক্ত সংযোজন:-

(ক) ২৮ নভেম্বর ২০০১ সালে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.সি. প্যাটেল এবং বিচারপতি এ.কে. সিকরি র ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকার কে নোটিশ পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, অলৌকিক ক্ষমতা বলে অসুখ বা কোনো সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখালে জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বিজ্ঞাপনদাতা ও বিজ্ঞাপন প্রকাশক প্রচার মাধ্যমের বিরুদ্ধে যেন "The Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act 1954" অনুসারে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়। সে খবরের সংক্ষেপসার ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।


(খ) ২২ জুন ২০০৩ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে - রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসা যাঁরা করেন, তাঁরা নিজের নামের আগে ' ডাক্তার ' শব্দটা কোনো ভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ এই চিকিৎসা পদ্ধতির কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রক স্পষ্ট করে এটাও জানিয়েছে যে, রেইকি সহ জেম থেরাপি, কালার থেরাপি, ম্যাগনেটোথেরাপি,আরোমা থেরাপি, মিউজিক থেরাপি ইত্যাদি তথাকথিত প্রতিটি চিকিৎসা পদ্ধতিই বে-আইনি এবং এইসব পদ্ধতি শেখানো কিংবা প্রয়োগকারী ব্যাক্তি কোনো ভাবেই নিজের নামের আগে 'ডাক্তার' শব্দটাকে ব্যবহার করতে পারবেন না। রইলো একটি খবরও।


State anti-superstition laws not enough. India needs a central law, focus on victim not crime

Cases of witch-hunting and human-sacrifices are part of systems of oppression that have been culturally and religiously legitimised for centuries.

ASTHA MADAN GROVER and SUSHOVAN PATNAIK

9 December, 2020 03:38 pm IST

India’s multi-ethnic identity makes it a nation of many superstitions. On November 15, a newspaper story reported how police rescued four minor boys in Assam suspected to be sacrificed in a ritual. Further, the National Crime Record Bureau (NCRB) data for 2019 revealed an overall rise in witch-hunting cases, with Chhattisgarh witnessing 22-witch-hunt related deaths in the past year.


In yet another instance in Odisha, in August 2020, a woman was killed after being impaled with a Trisul or a trident, a divine symbol in Hindusim, during a medical treatment by a self-proclaimed supernatural doctor. As a result in this case – JituMurumu @ SukulMurmu&Anr. v. State of Odisha – the Odisha High Court observed that existing state laws were inadequate to address the issue and emphasised on the urgent need for a central law instead.


Witch-hunting and broader superstition related crimes violate basic fundamental rights guaranteed under Article 14, 15, and 21 of the Indian Constitution. Such acts also violate several provisions of various International legislations to which India is a signatory, such as the ‘Universal Declaration of Human Rights, 1948’, ‘International Covenant on Civil and Political Rights, 1966’, and ‘Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women, 1979’.


Yet, despite constitutionally guaranteed fundamental rights and provisions in international legislations, the reality on the ground remains starkly different. A primary reason for this is the lacunae that exist in the Indian Penal Code (IPC).


For instance, the IPC only takes cognisance of human sacrifice after a murder is committed, and the physical torture that alleged ‘witches’ are subjected to is categorised as merely ‘simple hurt’. The accompanying mental trauma is completely ignored. Victims, therefore, find it hard to get justice and often withdraw their complaints due to societal pressure – letting perpetrators off the hook.


Given this context, several Indian states have recognised the need for special anti-witch-hunt laws since 1999. Yet, only a few have enacted them and the ones that have are wanting in implementation. This blog analyses the existing state laws and builds the case for a central law that takes reasons for the failure of implementation of state laws into account. It argues that for a central legislation to be effective, it must be grounded in the larger socio-cultural context, with adequate restorative measures for victims.

News Link- https://theprint.in/opinion/state-anti-superstition-laws-not-enough-india-needs-a-central-law-focus-on-victim-not-crime/563439/

কর্নাটকে চালু হল কুসংস্কার বিরোধী আইন -
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | আইন | views:61 | likes:1 | share: 2 | comments:0

কর্নাটকে কুসংস্কার বিরোধী আইন চালু হল গত ৪ জানুয়ারি ২০২০ থেকে। ওইদিন রাজ্যপাল ভজুভাই ভালা আইনে সিলমোহর দেন। মজার ব্যাপার হল, বরাবর যে বিলের কট্টর বিরোধী ছিল বিজেপি তথা গেরুয়া শিবির, সেই তাদেরই জমানায় বিলটি কর্নাটকে পাস হল, দেশের দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে!

কুসংস্কারবিরোধী আইনের হয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্ন করেছে কর্নাটক। রাজ্যের মানবাধিকার ও বিজ্ঞানকর্মীদের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে একটি খসড়া পেশ করা হয়েছিল রাজ্য বিধানসভায়। আলাপ-আলোচনার পরে সেই বিলটি ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর বিধানসভায় পাস হয়। তখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার কংগ্রেস।


প্রত্যাশিতভাবে, এই বিলের বিরোধিতা করেছিল বিজেপি। চিকমাগালুরের বিজেপি বিধায়ক সিটি রবি বিধানসভায় বলেছিলেন, "এই আইন চালু হলে রাজ্যের হিন্দু জনসমাজের বহু প্রথা, আচরণবিধি আইন ও আচার-অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, যা কখনো সরকারের করা উচিত নয়।" তাঁর বক্তব্য ছিল, এই আইন চালু হলে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এইসব যুক্তি শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি। যুক্তি, তথ্য, বিজ্ঞান ও মানবিক আবেদনের কাছে হার হয়েছে ধর্মীয় কুসংস্কার ও গোঁড়ামির।


"কর্নাটক অমানবিক ও ক্ষতিকারক চর্চা ও কালা জাদু প্রতিরোধ আইন, ২০১৬"(The Karnataka Prevention and Eradication of Inhuman Evil Practices and Black Magic Bill 2016) শীর্ষক এই আইনে এখন থেকে কী কী নিষিদ্ধ একবার দেখে নেওয়া যাক।

মাডে স্নান বা উচ্চবর্ণের অভুক্ত উচ্ছিষ্টের ওপর নিম্নবর্ণের মানুষের গড়াগড়ি খাওয়ার মতো প্রথা ও এই সংক্রান্ত বিধিনিষেধ, কালো জাদু প্রদর্শনী বা চর্চা, অমানবিক ও ক্ষতিকর যেকোনো ধরনের চর্চা, আচার অনুষ্ঠান, ধনসম্পত্তি আহরণ বা প্রাপ্তির কথা বলে তন্ত্রচর্চা, শারীরিক মানসিক ও যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি, অংগপ্রত্যংগ কাটা বা বলি দেওয়া, আগুনে হাঁটা...এগুলো নিষিদ্ধ হয়েছে। এছাড়া ধর্মের কারণে বা ধর্মের অজুহাত দিয়ে এখন থেকে আর কোনো মানুষকে নগ্ন করে ঘোরানো যাবে না। রোগ সারানোর নামে কারোর উপর কোনওরকম ভুতুড়ে, অপরীক্ষিত ও নির্যাতনমূলক ক্রিয়াকলাপ চালানো যাবে না। ধর্মের নামে মানুষকে ভুল তথ্য দেওয়া, ভূত বা অলৌকিক শক্তির কথা বলে এমন বলা বা করা যাবে না বা কাউকে প্ররোচিত করা যাবে না, যা মানুষ বা সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক ও ক্ষতিকারক।

তবে এই আইনে পুজোপাঠ চর্চা, ধর্মানুষ্ঠান, পরিক্রমা, মিছিল, সমাবেশ, প্রাচীন ধর্মকথা, সাধুসন্ন্যাসীদের অলৌকিক গালগল্প, কান জিভ ফুটো করা, মাথা ন্যাড়া, জ্যোতিষ ও বাস্তুশাস্ত্রকে বর্জনীয় বলে মনে করা হয়নি। কেন করা হয়নি এটাই কোটিটাকার প্রশ্ন।


Karnataka's anti-superstition bill gets Governor's nod

The law came into effect on January 4, according to the government order.

NEWS POLICY WEDNESDAY, JANUARY 22, 2020 - 17:28

TNM Staff Follow @thenewsminute

Karnataka Governor Vajubhai Vala has given his assent to the Karnataka Prevention and Eradication of Inhuman Evil Practices and Black magic Act 2017.


Popularly known as the Anti-Superstition Act, the law was enacted in 2017 during the Siddaramaiah-led Congress government’s rule in Karnataka.

According to the government order issued earlier this month, the Act came into force from January 4, 2020. The Karnataka Prevention and Eradication of Inhuman Evil Practices and Black Magic Bill 2016 was passed in the state Assembly on November 17, 2017 amid opposition from BJP MLA from Chikkamagaluru, CT Ravi, who had argued that the state government could not curb certain practices of the Hindu community.


What is banned-

The act bans made snana, menstrual taboos, performing any black magic, inhumane act and evil practices in search of treasure or bounty, tantric acts which include physical and sexual assault.

Practices such as parading people naked, ostracising a person in the name of a ritual and encouraging inhumane acts during said rituals are also banned.


Rituals of exorcism, assaulting people under the pretext of exorcism, misinformation and creating a panic-like situation under the pretext of ghosts and black magic is also be banned. Other practices such as making claims of having healing power, propagating practices that involve self-mutilation and coercing people to perform fire-walking are banned.


The law also states that if any person is killed or injured due to superstitious practices, a case of murder or attempt to Murder can be registered by jurisdictional police. The law also mandates the appointment of one vigilance officer in every police station to keep tabs on such practices


What is not banned-

Any form of worship including pradakshine, yatra, parikrama at any religios shrine, harikatha, keerthana, pravachana, bhajans do not come under the purview of the act.

Providing knowledge of ancient arts and practices, speaking about miracles performed by deceased saints and literature on them offering prayers, upasana, religious rituals at places of worship or at people’s homes, religious celebrations, festivals, processions, piercing of ears and nose, shaving of head, astrology and vaastu are considered acceptable under the act.


link- https://www.thenewsminute.com/article/karnatakas-anti-superstition-bill-gets-governors-nod-116608

পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুভোজ নিবারণ আইন প্রণয়ণের দাবী -
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | আইন | views:39 | likes:2 | share: 2 | comments:0

গত ২৮ জুলাই ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গে "মৃত্যুভোজ (Death Feast) নিবারণ আইন" প্রণয়নের আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, আইন মন্ত্রী সহ সমস্ত বিধায়ক দের ইমেল করেছেন "ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি"র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এবং পুরুলিয়া শাখা সম্পাদক, মধুসূদন মাহাতো।

এখানে প্রশ্ন উঠবে কেন এই আইন প্রণয়ণের দাবী? মধুসূদন মাহাতো জানাচ্ছেন, কারও আত্মীয় মারা গেলে মৃত ব্যক্তির আত্মার উদ্দ্যেশ্যে আয়োজিত শ্রাদ্ধকে কেন্দ্র করে আমন্ত্রিত ব্যক্তি (বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী ইত্যাদি) এবং আত্মীয় এবং ব্রাহ্মণদের যে ভোজ (Feast) খাওয়ানো হয়, সেটাই মৃত্যুভোজ (Death Feast)। 


অভিধানে আধ্যাত্মবাদ শব্দের অর্থ, আত্মা সম্পর্কিত বা সম্বন্ধীয় মতবাদ। বিজ্ঞান কিন্তু গডেশ্বরাল্লহ, আত্মা, অলৌকিক ইত্যাদির অস্তিত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। কারন, বিজ্ঞানের দরবারে কোনো কিছু তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন সেটা বিজ্ঞানের- পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত এই তিন সহজ সরল ধাপে উপনিত হয় বা সাফল্য (পাশ) লাভ করে। এমনটা আগেও হয়েছে কল্পিত প্রস্তাবনা বা হাইপোথিসিস। অর্থাৎ কোনো ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখে যদি মনে হয় (সন্দেহ জনক কিছু রয়েছে) গবেষণা চালানো প্রয়োজন, তাকেই বলা হয় হাইপোথিসিস। এখান থেকেই বিজ্ঞানের ঘরে প্রবেশ করার পক্রিয়া শুরু হয়।


আত্মা নামক বিষয়টি এখনও পর্যন্ত হাইপোথিসিস এ নিজের পা টাই রাখতে পারেনি, বাকি তিন ধাপ তো অনেক দুরের কথা। এখনও পর্যন্ত এমন কিছু ঘটনা ঘটেনি যা ইঙ্গিত করে আত্মার অস্তিত্বকে। এখনও সেই রকম কিছু ঘটেনি যার জন্য বিজ্ঞান পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখবে,তারপর আসবে একটা সিদ্ধান্তে। আত্মার কোনো কার্যপ্রলাপ এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান কে প্রভাবিত করতেই পারেনি তাই বিজ্ঞান আজও মাথা ঘামায়নি যে আত্মার অস্তিত্ব আদৌ আছে, নাকি নেই। আত্মা শুধুমাত্র আমাদের মনোজগৎ এর কল্পনা ছাড়া অন্য কিছুই নয় যেখানে জ্ঞানের আলো জ্বালালেই তেঁনারা ভ্যানিশ। 


যুক্তিবাদী সাজবার ভণ্ডামো হতে পারে কিন্তু বিজ্ঞানের কোনো শাখায় কেউ পড়াশোনা করলে কিন্ত বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী হয়ে যায়না। এটা একটা হয়ে ওঠার ব্যাপার যেটা সবাই পারে না। এর জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা এবং জিজ্ঞাসু মন। তাই কোনো নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী অথবা কোনো ধর্মগুরুরা যতই প্রচার করুক, যতই তত্ত্বকথা শোনাক -"বিজ্ঞান, গডেশ্বরাল্লহ, অলৌকিক, আত্মার অস্তিত্ব কে স্বীকার করে নিয়েছে" তবুও কোনোদিনই এসব প্রমাণিত হবে না বিজ্ঞানের দরবারে। 


দেখা গেছে, অনেকসময় গ্রামবাসীদের একাংশের চাপে পরে মৃতের পরিবার এই ভোজের আয়োজন করতে গিয়ে নিজেদের জমানো সম্পদ খুইয়ে কিংবা ফসলি জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যায়।  এই অহেতুক খরচের ফলে পরিবারগুলি তাদের সদস্যদের সঠিক মতন চিকিৎসা ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারেন না এমনকি তাদের বাড়িঘরও তৈরি করতে ব্যর্থ হন। তাই এই কুরীতি বা কুপ্রথা বন্ধ হওয়া একান্তই প্রয়োজন  এবং এরজন্য সারাদেশে আইন আনা ভীষণ জরুরী।

ভারতে প্রথম মৃত্যুভোজ নিবারণে আইন এনেছে রাজস্থান রাজ্য। আইনটির নাম - "রাজস্থান প্রিভেনশন অফ মৃত্যুভোজ অ্যাক্ট -১৯৬০" { (Rajasthan Prevention of Mrityu Bhoj Act, 1960)। Notification No. F(25)/LJ/A/59 dated .8.2.1960 (Published in Rajasthan Gazette Extraordinary Part 4 A Dated 10.2.1960) [Received the assent of the President on the 3rd day of February 1960] An act to provide for the prevention of Mrityu Bhoj }


এই আইনে মৃত্যুভোজ নিবারণে জেলা প্রশাসনকে অত্যাবশ্যক কার্যকরী ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। এই অাইন অনুসারে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।


১) উক্ত আইনের ৩ নং ধারায় বলা হয়েছে - কেউ মৃত্যুভোজ আয়োজন করতে পারবে না এবং কেউ এই ভোজে যোগদানও করতে পারবে না। এই নিষেধ অমান্য করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। 

২) এই আইনের ৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি মৃত্যুভোজে উৎসাহ দিলে বা কোনরূপ সহযোগিতা করলে ১ বছর কারাদন্ড অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। 

৩) ধারা ৫ অনুসারে, এলাকার জনপ্রতিনিরা মৃত্যুভোজের খবর জানলে তা নিকটবর্তী প্রশাসক বা পুলিশ আধিকারিক জানাবে এবং সেই অনুযায়ী প্রশাসক ও পুলিশ মৃত্যুভোজের আয়োজন বন্ধ করবে এবং আয়োজনের সমস্ত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করবে। তারপরও যদি মৃত্যুভোজ করে থাকে, তবে ধারা ৬ অনুসারে ১ বছর কারাবাস অথবা ১০০০টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডই দিতে পারে। 

৪) ধারা ৭ অনুসারে, কোন জনপ্রতিনিধি যদি মৃত্যুভোজের খবর জেনেও তা নিকটবর্তী প্রশাসক বা পুলিশ আধিকারিককে না জানিয়ে গোপণ করার চেষ্টা করে, তবে তাদেরও তিনমাস কারাদন্ড অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডই হতে পারে। 

৫) ধারা ৮ অনুসারে, কোন ব্যবসায়ী বা দোকানদার, মহাজন বা কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুভোজ করতে টাকা বা জিনিসপত্র ঋণ বা ধার দেয়, তবে আইন অনুসারে তা ফেরতযোগ্য বা পরিশোধযোগ্য হবে না। এমনকি তাদেরও ১ বছর কারাদন্ড অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা হবে।

উক্ত আইনে কয়েকটি ফাঁকফোকর, স্ববিরোধীতা (যেমন জরিমানার অঙ্ক এবং শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা সহ কয়েকটি বিষয়) থাকলেও আইনটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে। মধুসূদন মাহাতো আরো জানিয়েছেন- আত্মা-পরমাত্মা যেহেতু সব অলীক কল্পনা তাই, মৃত ব্যাক্তির কাল্পনিক আত্মার উদ্দ্যেশ্যে শ্রাদ্ধ একটি কুসংস্কার মাত্র। শ্রাদ্ধ হচ্ছে ব্রাহ্মণদের দ্বারা তাঁদের যজমান দের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার দারুন কুবুদ্ধি। সম্ভব হলে অঙ্গদান করার অঙ্গিকার করুন। শ্রাদ্ধের নামে ভুরিভোজ এ অর্থের অপচয় বন্ধ করে সেই টাকায় কোনো গরিবের বাড়িতে সারা মাসের রেশন টা পাঠিয়ে দিন। এতে আপনার পুণ্য জাতীয় কিছু হবে কিনা জানা নেই, তবে মনে একটা অনাবিল শান্তি পাবেন। একটা ভালো কাজ করার শান্তি, যা টাকা দিয়ে কিন্তু কেনা যায় না।

কলেজে ফর্ম ফিলাপে Religion -
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | সচেতনতা | views:68 | likes:2 | share: 1 | comments:0

 কিছুসময় আগে একজন বন্ধু জানতে চেয়েছিলেন, কলেজে ফর্ম ফিলাপের সময় এখনো Religion এর জায়গায় আমার অভিভাবকের ধর্ম (Religion) লিখতে হয়েছিল।

আমি একজন উকিল মারফৎ এফিডেফিড করার আবেদন করেছিলাম No Religion, No Cast এর জন্যে। কিন্তু সেই সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে। তাছাড়া, এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত সরকারি কিংবা বে-সরকারি চাকরির ফর্ম বের হয় সেখানে কোথাও Humanity বা Humanism বলে আলাদা কিছুর উল্লেখই থাকেনা। আমার একজন বন্ধু এমনই একটি ফর্মে Humanism লেখায় সেটি বাতিল করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে আমাদের কি করণীয়?

উত্তর - আমি সন্তোষ শর্মা, উক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর জানতে যোগাযোগ করেছিলাম,কয়েকজন বিশিষ্ট আইনজীবীর সাথে। ওনারা জানিয়েছেন- “ভারতীয় নাগরিকদের জন্যে সংবিধানের তৃতীয় অংশে ১২-৩৫ নং ধারায় ৬ টি মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ রয়েছে যার একটি হলো ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার। সংবিধানের ২৫ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে, “প্রত‍্যেক ব‍্যক্তি নিজের বিবেক এবং বিশ্বাস অনুযায়ী যে কোন ধর্মমত গ্রহন, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন ও নিজধর্ম প্রচার করতে পারবেন।”

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে বোম্বে হাইকোর্ট তাদের একটি রায়ে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন যে, রাষ্ট্র কাওকে তার ধর্ম জানাতে বাধ্য করতে পারবে না। তিনি কোনও ধর্মের অন্তর্ভুক্ত নন বা কোনও ধর্ম পালন করেন না  এই দাবী করার সাংবিধানিক অধিকার আছে প্রত্যেক নাগরিকের। অন্যদিকে, এপ্রিল ২০২১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, বি আর গাভাই এবং ঋষিকেশ রায়কে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছেন, ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কোনো ভারতীয় নাগরিক তার ইচ্ছামতো ধর্ম গ্রহণ করতে পারবেন কারন সংবিধানে এই অধিকার দেওয়া হয়েছে।”

তাই জন্মসূত্রে পাওয়া Religion চিহ্ন ছেড়ে যেকেউ নোটারী পাবলিক ও ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা এফিডেফিট করিয়ে No Religion বা HUMANISM সার্টিফিকেট বানাতে পারেন। তামিলনাড়ুর বাসিন্দা স্নেহা পার্থিবরাজ ভারতের প্রথম সেই মহিলা যিনি এমন সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন। তাছাড়া ২০১৯ সালে হরিয়ানার বাসিন্দা রবি কুমার, No Casts, No, Religion, No God সার্টিফিকেট পেয়েছে যাতে সরকারি সীলমোহরও রয়েছে। কোনো নাগরিক সরকারি অথবা বে-সরকারি কোনোরকম ফর্মের Religion কলামে HUMANISM, ATHEISM অথবা No Religion ইত্যাদি লিখলে সেই ফর্ম বাতিল করা বে-আইনি। প্রয়োজনে আবেদনকারী এই সংক্রান্ত ব্যপারে আদালতের দারস্থও হতে পারেন নির্দিধায়।

কবিতাগুচ্ছ ২ -
সম্পাদক
Nov. 10, 2024 | কবিতা | views:626 | likes:27 | share: 2 | comments:0

রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

জামাল আনসারী


আমার ভাই-এর তাজা রক্তে রাঙানো

স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম --অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।

সেই অমৃত নাম, আমি কি জীবনে- মরণে কখনো  ভুলিতে পারি?

না। তা আমি কখনো ভুলিতে পারিব না।

'নক্সীকাথাঁ বোনা রাতে স্বপ্নের প্রভায়' রঙিন

নক্ষত্রের মতো জ্বলে ওঠে,অমর ভাষা শহীদ --

আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ, আব্দুস সালাম,

আব্দুল জাব্বার,এবং শফিউর রহমানের নাম।

বঙ্গ মাতার চির বীরসন্তানদের আত্ম বলিদানে

আমার মায়ের মুখের ভাষা, মাতৃভাষার

কৌস্তুভ মৃগসম সৌরভ পৌঁছে গেছে

বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে ত্রিপুরা, আসাম,

দক্ষিনের কর্ণাটক, সুদূর দীপপুঞ্জ আন্দামান।

বাংলার রামধনু বিকেলের আকাশ জুড়ে,

বর্নে- গন্ধে ছড়িয়ে আছে একুশে ফেব্রুয়ারির নাম।


একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু ক্যালেন্ডারের শুকনো পাতায় লেখা একটা দিন নয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি একটা বিপ্লবের নাম।

জোর করে চাপিয়ে দেওয়া পাকিস্তানি  উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে

আপোষ হীন সংগ্রমের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ।

একুশে ফেব্রুয়ারির  হাত ধরে একবিংশ শতাব্দীর

ঝড়-ঝঞ্জা অতিক্রম করে দুরন্ত বেগে ধাবমান ষ্টীমার,

বিশ্বের বাইশ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জয়গান।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো 'ফ্যাকাসে দেওয়ালের রাত্রিমাখা গন্ধে'

মর্মরিত সেকালের পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর

পৈশাচিক গোলা বারুদের উল্লাসী সন্ধ্যে।

রৌদ্রছায়া উল্কি আঁকা গ্রাম বাংলার নিকানো উঠানে,

কাঠের পিঁড়েতে বসে এখনো শোনা যায়....

ঐ দূর নীলচে আকাশে বেতারে ভেসে আসা,

সবুজ ধানের মাঠ,জ্যোৎস্না আলোকিত নদী বক্ষের

ভাটিয়াল, মুর্শিদি গানের চির পরিচিত সেই সুর।


আমার মায়ের সযত্নে লালিত যে ভাষা

সেই ভাষার অমৃতোপম নাম বাংলা ভাষা।

কি বৈচিত্র্যময় তার কথন শৈলী?

রাঢ়ী, বঙ্গালী, বরেন্দ্রী,ঝাড়খণ্ডী,রাজবংশী উপভাষা,

সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী মানুষের এই ভাষাতেই মিটে মনের আশা।

এই ভাষাতেই ধ্বনিত শিউলি ঝরা সকালে

"জনগনমন-অধিনায়ক জয় হে"

"আমার সোনার বাংলা-আমি তোমায় ভালোবাসি

"দুটি সার্বভৌম দেশের জাতীয় সংগীতের ঐক্যবোধে,

এপার বাংলা অপার বাংলা ভাই ভাই আজও পাশাপাশি।

আমি গর্বিত এই অমর বাংলা ভাষার তরে,

বাংলার বিজয় পতাকা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম,

পৌঁছে দিয়েছে প্রাচ্য -পাশ্চাত্যের দ্বারে দ্বারে।

ইউনেস্কো রেখেছে বাইশ কোটি বাংলা ভাষীর মান,

একুশে ফেব্রুয়ারি তাই পেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান।

আমার মায়ের মুখের ভাষা,আমার মাতৃভাষা,

যাদের আত্মবলিদানে গৌরবান্বিত বাংলানাম,

সেই অমর বাংলা ভাষা শহীদরা অন্তরে পেয়েছে ঠাঁই

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানায় শহীদদের শত কোটি প্রনাম।



মাতৃভাষা

সাহেব ইসলাম


সব কিছুর চেয়েও দামি

মোদের বাংলা ভাষা

সেই ভাষাতেই আছে

মোদের সুখের আশা।

সবার উপর মাতৃভাষার

হয়রে ভাই ঠাই

দিনরাত মনের মাঝে

তাকে খুঁজে পাই।

জড়িয়ে আছে এই ভাষা

মোদের প্রশ্বাসে

মিশে আছে আনন্দে

আর উচ্ছাসে।

এই ভাষাতে আপন মাটির

গাইবো মোরা গান

শপথ নিচ্ছি সারা জীবন

রাখব তার মান।



মুক্ত

প্রদীপ চক্রবর্তী


মানুষ যখন আদিম ছিল

ছিলনা কোনো বারণ,

সবকিছুই ঘটত নাকি

ভগবানের কারণ।


ভূমিকম্প,অতিমারী

আসত যখন বন্যা,

ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে

মানুষ ধরত  কান্না।


আমরা আজকে আধুনিক

মনটা তো নয় পরিস্কার,

আধুনিকতার মোড়ক ঢেকে

পালন করছি কুসংস্কার।


যুক্তি দিয়েই দুনিয়া শুরু

যুক্তি দিয়েই শেষ?

সংস্কার মুক্ত সমাজ হলে

এগিয়ে যাবেই দেশ।



গ্রহণে সবকিছু করুন

রাজা দেবরায়


যেকোনো গ্রহণে খাওয়া যায়,

প্রতিদিনের কাজ করা যায়।

যদি ভাবেন গ্রহণে আলো কম,

তাই ক্ষতিকর জীবাণু দেখাবে দম!

তবে জেনে রাখুন সেটা আসল ভ্রম!

কারণ একটু বোঝার চেষ্টা করুন,

সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে একটু ভাবুন।

গ্রহণের আলো কি আসলে

রাত্রিবেলা থেকেও কম ?

রাতে যদি জীবাণুরা দেখাতে না পারে শক্তি,

কুসংস্কার মন নিয়ে কেনো করবো ভক্তি?

তাই গ্রহণে বিন্দাস সবকিছু করবেন,

আর অন্যদেরও এই কথাটা বোঝাবেন




ইনফিনিটি ক্রুসেড

শ্রীকুমার মন্ডল


জন্মের পর ক্ষনিকের মধ্যেই আমি আমার মনুষ্যত্ব হারিয়েছি।

কখন?

যখন, সদ্যজাত অবচেতন মস্তিষ্কে তোমরা ধর্ম ও কুসংস্কারের অসহনীয় বিষ প্রয়োগ করেছ।

জ্বালায় ছটফট করতে করতে কতনা যন্ত্রণা পেরিয়েছি।


একটুও মায়া হয়নি তোমাদের।

হওয়ার কথাও নয়।

কারণ, সেই বিষের জ্বালায় একই ভাবে তোমরাও জ্বলেছ,

তোমাদের সেইসব পূর্ব পুরুষদের সৌজন্যে,

ক্রুসেডের তরোয়াল পুরুষত্ব কেটে নিয়েছিল যাদের।


ঠিক যেমন আমি জ্বলে পুড়ে মরেছি তোমাদের জন্য।

এটাও যথেষ্ট নয়।

থমকে থাকবে না এ-অবধি,

কারণ আমিও তো মারব আমাদের সন্তান দের।

ঠিক তোমাদের মত।

সমস্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মরবে একই ভাবে।

হয়তো বা এই জ্বালা সহ্য করেও বাঁচবে কিছু মানুষ,

তবে তা খুবই সামান্য।


ধ্বংস হয়েছে এই প্রজন্মের ক্রিয়েটিভিটি।

সেই জ্বালায় বিনষ্ট হয়েছে আমাদের ছোট্টো হৃদয়ের সেনসিটিভিটি।

শিরায়, ধমনীতে গিয়ে শরীরের সমস্ত রক্তকে বিষিয়ে দিয়েছে সেই বিষ।

সেই বিষেরই chemical reaction এ যখন আমি আমার বিচার, বিবেক, জ্ঞানের তৃষ্ণা, কৌতূহল, উপলব্ধি, সচেতনতা সমস্ত হারিয়েছি সমূলে,

তখনই আমার ভেতরে থাকা সেই ধর্মীয় দানব জন্ম নিয়েছে,

ধ্বংস করেছে এই জীবনের মোটিভিটি।


আমি এখন এক সেন্স হীন জম্বী, মানুষের মত দেখতে এক শয়তান।

যেই শয়তান এখন ঈশ্বর নামক এক অলীক কল্প বস্তুর দাস।

ওই ঈশ্বর নাকি উপাসনা চায়, সেবা চায়।

ভেদাভেদ চায়, রক্ত চায়, দাঙ্গা চায়, হিংসা চায়, মাথা চায়,

চোখ বেরকরে থাকা বিভৎস কাটা মাথা,

শুধু নিজেকে করতে প্রমান।


ওই ঈশ্বর নাকি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে পরীক্ষা নেয়।

আর যে ওই পরীক্ষায় ফেল করে, সে নাকি মৃত্যুর পর নরকে যায়,

যাতে আরো হিংসা, আরো যন্ত্রণা, আরো কষ্ট দেখে দেখে পরীক্ষার জন্য আরো উপযুক্ত হয়।

ঠিক যেমন জেলে ক্রিমিনালদের সাথে থাকলে, নিরীহ মানুষও ক্রিমিনাল হয়ে ওঠে,

আর প্রতিদানে সমাজে আরো বহুগুন হিংস্রতা ফিরিয়ে দেয়।


ঈশ্বরই শয়তানদের কেন্দ্রীভূত প্রাণ।

আর আমি আজ ওই পরমেশ্বরের পদসেবায় নিযুক্ত।

হ্যাঁ আমি অপরাধী, আমি শয়তানের প্রাণকেন্দ্রের পূজারী।

কিন্তু তোমদের ওই বিষ।

সেই বিষে, আমি আমার সচেতনতা হারিয়েছি।

হারিয়েছি অপরাধ বোধ।

জানিনা, যে আমি নিজেই এক মস্ত শয়তান।


কোথায় সেই গুটি কয় মানুষ, যারা বিষের জ্বালা সহ্য করেও বেঁচেগেছে?

এক্সপোনেন্সিয়াল হারে বিস্তৃত হচ্ছে ঈশ্বরের সাম্রাজ্য।

ওই সামান্য কি পারবে, আমাদের মত অসংখ শয়তানের মাঝে মনুষ্যত্বকে টিকিয়ে রাখতে?

ওই সামান্য কি পারবে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে আমাদের অপরাধ?

ওরা কি পারবে, সেই সচেতনতাকে ফিরিয়ে আনতে,

যা ধর্মের পদতলে হারিয়েগেছে?

ফিচার: আমি কেন নাস্তিক হলাম -
সম্পাদক
Nov. 10, 2024 | নাস্তিকতা | views:302 | likes:36 | share: 0 | comments:0

লিখেছেন- মোনালিসা

বাড়িতে নাস্তিকতা নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলে আমার সাথে মা বাবা সহ বাকিদের।

ছোটবেলায় বাড়ির সকলের ঠাকুর ভক্তি দেখে দেখে আমিও যন্ত্রের মত পুজো করতাম।কত কি চাইতাম।এখন সেইসব ভাবলে হাসি পায়।

আমার মতের পরিবর্তন হতে শুরু করে ২০১২ সাল নাগাদ। যে বছর পার্ক স্ট্রিট রেপ কেস টা ঘটে।এই ঘটনাটা আমার বিশ্বাসে প্রথম কুঠারাঘাত ঘটায়।তার পর দিল্লির ঘটনা ঘটলো। মেয়ে টাকে যখন সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হলো আমি মনে প্রাণে প্রার্থনা করেছিলাম পুজো করেছিলাম যে তোমরা ওকে বাঁচিয়ে দাও।

নাহ আমার কথা ঠাকুর শোনেনি। যার কান নেই যার প্রাণ নেই সে আর শুনবে কি করে।সেই দিন আমি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়েছিলাম।আমি আর কখনও কোনোদিন কোনো পাথর খন্ডকে মানবো না।এবং বাড়ির লোককেও বলেছিলাম। যথারীতি তারা আমার মুখ বন্ধ করেছে,আমায় বকাঝকা করেছে।আমি আমার বিশ্বাস থেকে সরে আসিনি আজও।

আর যেহেতু বাড়িতে সবাই পুজো করে আমি একা এসব মানিনা।তাই  বাড়ির লোকের সাথে প্রায় অশান্তি লাগে।

বাট লাগে লাগুক।যেটা ভুল সেটাকে মেনে নিয়ে নিজের কাছে ছোট হওয়া সম্ভব নয়।

আর একটা ব্যাপার সালটা ছিল ২০১২।তার পরের বছর আমার উচ্চমাধ্যমিক ছিল।যেহেতু বাড়িতে নাস্তিকের মত কথা বলছি,যুক্তি দেখাচ্ছি সরস্বতী পূজায় অঞ্জলী দেবনা,উপোস করবো না বলছি বাড়ির লোক আমায় বলেছিল তুই এরম করছিস তো Hs ভালো হবে না। গ্রাজুয়েশনে ভালো ফল হবে না।এই সবও শুনতে হতো,পরীক্ষা খারাপ হ‌ওয়ার ভয় দেখাতো।আমি ওদের শুধু একটা কথাই বলি।তোমাদের ভগবান মেয়েটার জীবন শেষ করে দিল কি করে।তোমরা তো বলো তোমাদের ভগবান সবার মঙ্গল করে।তবে ওর ক্ষেত্রে এটা কি হলো।এইসব প্রশ্নের উত্তর নেই তাদের কাছে জানি।যাই হোক তারপর

আমি নিজের চেষ্টায় দেখিয়ে দিয়েছি ওদের, ভগবানের পায়ে মাথা না ঠেকিয়ে ও নিজের ইচ্ছাশক্তি,আত্মবিশ্বাসের জোরে সব কিছু সম্ভব।পাথরে না বিশ্বাস করে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটা অনেক বেশি প্রয়োজন।


আমি কেন নাস্তিক হলাম

লিখেছেন- বিতান সানা

আমার নাস্তিক হওয়ায় পেছনে আমার বাবার অবদান আমি অস্বীকার করতে পারিনা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি বুঝিয়েছেন এই পৃথিবীর সবকিছুই একটা নির্দিষ্ট গতিতে ঘটছে। কিভাবে সেটি ঘটছে, সেটা বিজ্ঞান ব্যাখা করেছে। বানর থেকে আদিম মানুষ আর তারপর আজকের এই আমরা, এটা সবটাই ঘটেছে বিবর্তনের ওপর ভর করে, অলৌকিক কিছুর জন্য নয়। ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে নিরীশ্বরবাদের পরিবেশ ছিলো।

ছোটবেলায় আমার হাতে খড়ি হয়নি, এমন কি আমি সরস্বতী পুজোর আগেই কুল খাওয়া পছন্দ করতাম। বাড়িতে নিষেধ ছিলোনা, এমন কী সরস্বতী পুজোর দিন পড়াশুনাও করতাম। বাড়িতে কোনো ঠাকুরের ছবি ছিলো না, আজও নেই। বাবাকে মাকে কোনদিন বাড়িতে বা মন্দিরে গিয়ে পুজো করতেও দেখিনি। এই সবকিছুই আমার ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। একটু বড়ো হয়ে যখন মার্ক্সবাদ পড়েছি, গভীরে গেছি, জেনেছি ঈশ্বর, আল্লাহ সবই ক্ষমতাবান শ্রেণীর তৈরি, যা দিয়ে তারা দুর্বল শ্রেণীকে শোষণ করে। প্রতিটা ঘটনাই আমাকে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে ঈশ্বর, আল্লাহ বলে আসলেই কিছু নেই, সবটাই আসলে কিছু মানুষ ক্ষমতার সিংহাসনে বসে কাঠি নাড়ছে। আমরা তাদের অঙ্গুলিহিলনে চলছি মাত্র।

একদিন বাবার বুক সেল্ফের পুরোনো বই ঘাটতে ঘাটতে প্রবীর ঘোষের বই পেয়েছিলাম, " অলৌকিক নয় লৌকিক ২য় খন্ড"। ব্যাস, এরপর সবকটি খন্ড জোগাড় করে গোগ্রাসে গিলেছি। " যে কটি doubt ছিলো, তাও ধুয়ে সাফ হয়ে গেল প্রবীর ঘোষকে পড়ে। সমস্ত কিছু বিচার করে বুঝলাম স্বর্গ, নরক, আশীর্বাদ, অভিশাপ, আগের জন্ম, পরের জন্ম সবই মানুষের বানানো ভ্রান্ত ধারণা। আমরা চাইলেই আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারি, তাও আবার গ্রহ, রত্নের পাথরের আংটি না পরেই। দরকার উপযুক্ত বিজ্ঞানমূলক, যুক্তিমূলক শিক্ষা, বিপরীত মতের সম্মান করার মানসিকতা আর সমাজের প্রচলিত সমস্ত সত্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার সাহস।


আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929