বুজরুকি, প্রতারণা ইত্যাদির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে প্রচারিত
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | | views :298 | like:2 | share: 2 | comments :0
"ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি" ১৯৮৫ সাল থেকেই প্রশাসনের কাছে প্রবল দাবী জানিয়ে আসছে আইনকে মলাট বন্দি না রেখে, সর্বত্র তার প্রয়োগ হোক। কিছু ভারতীয় আইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন, Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisements) Act 1954, Drug and Cosmetic Act 1940 (Amendment 2009), IPC 415, 420 (প্রতারণা), IPC 299 to 308 (অপরাধজনক নরহত্যা, অপরাধজনক নরহত্যা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ), IPC120 A&B (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), IPC 319 to 338 (আঘাত, গুরুতর আঘাত), IPC 339 to 358 (অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ), IPC 268 (গন-উপদ্রপ), IPC 375 (ধর্ষণ), IPC 503 to 507 (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন), IPC 508 (কোন ব্যক্তিকে সে দৈব আক্রোশ কবলিত হইবে বলিয়া বিশ্বাস করিবার জন্য প্ররোচিত করিয়া কোন কার্য সম্পাদন করা), IPC 447 (অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ), IPC 354, 509 (শ্লীলতাহানি) এবং IPC 367 (ধর্ষণের চেষ্টা), IPC 425(অনিষ্ট) ইত্যাদি।
আইন অনুযায়ী যেকোনো অলৌকিক(?) কর্মকাণ্ড এর নামে ধান্ধাবাজি, বুজরুকী, ঝাড়ফুঁকের নামে অত্যাচার, ব্যভিচার, প্রতারণা করে তার যেকোনো রকম প্রাসার, প্রচার এবং প্রয়োগ নিষিদ্ধ এবং নূন্যতম শাস্তি ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন বা ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে। জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বাবাজী, মাতাজী, ওঝা, গুণিন, জানগুরুদের বিভিন্ন বুজরুকী বা পরিকল্পিত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ বহুবার জানানো হয়েছে।
"ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি"ই ভারতের একমাত্র সংগঠন, যারা ১৯৮৫ সাল (দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে) থেকেই উক্ত ভারতীয় আইনের প্রচার এবং তার প্রয়োগ করে চলেছে "জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বাবাজী, মাতাজী, ওঝা, গুণিন, জানগুরুদের " বিরুদ্ধে যাদের অনেকেই আজ শ্রীঘরে। "জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বাবাজী, মাতাজী, ওঝা, গুণিন, জানগুরুদের" উদ্দেশ্যে রইলো ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির তরফে "৫০ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ", যে কেউ যেকোন রকম অলৌকিক (?) ঘটনা দেখাতে পারলেই উক্ত পুরস্কার সেই ব্যক্তির হাতে। এই চ্যালেঞ্জ এর সামনে আজপর্যন্ত ৭০০ ওপর অবতার, জ্যোতিষী, তান্ত্রিক বুজরুকরা পরাজিত।
"ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি" র হাতে পরাজিতদের তালিকাটি বিশাল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন - তারাপীঠের তান্ত্রিক নির্মলানন্দ, গৌতম ভারতী, ডাইনি সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতা, পুনের মিঠাইবাবা, সাইবাবা, সাইদাবাদী, আমেরিকার মরিস সেরুলো, ফকির এস পি আলি, সত্যানন্দ, বাবা রামদেব, অলৌকিক মাতা জয়া গাঙ্গুলি, ক্লাইভ হ্যারিস, ভ্যাটিকানের পোপ (মাদার টেরিজার অলৌকিকতা!) প্রমুখ।
বুজরুক, অলৌকিক বাবাজী, মতাজী, জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, ঠগবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন কি বলছে দেখা যাক:
"দ্যা ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিস (অবজেকশন্যাবল অ্যাডভারটাইজমেন্টস) অ্যাক্ট, ১৯৫৪"-সংসদে প্রবর্তিত এই আইন ৩০ এপ্রিল ১৯৫৪ তারিখে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় এবং ১মে ১৯৫৪ তারিখে ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি গেজেটের বিশেষ সংখ্যার দ্বিতীয় অংশের প্রথম অধ্যায়ের ২৪ নং ক্রমে প্রকাশিত।
ড্রাগ সম্পর্কিত কিছু বিজ্ঞাপন এবং যাদু বা মন্ত্রবলে রোগ প্রতিকার হিসেবে বর্ণিত বিজ্ঞাপন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এই আইন প্রবর্তিত। ১৯৬৩-তে আইনটি সংশোধন করা হয় এবং ৯(এ) ধারা সংযোজন করে বলা হল, এই আইন ভঙ্গকারীদের 'congnizable' অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হবে।
জ্যোতিষ,তান্ত্রিক,ম্যাগনেটোথেরাপি,ফেংশুই সহ সমস্ত রকম বাবাজী মাতাজীদের শায়েস্তা করতে "দ্যা ড্রাগস অ্যান্ড কস্মেটিকস অ্যাক্ট ১৯৪০" আইনটি আরও কড়া হল l 19 মার্চ 2009 ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দপ্তর একটি নোটিশ জারি করে GSR 884 (E) The Drugs and Cosmetics Act (1940) Amendment. নোটিশে জানাল প্রতিটি ওষুধের ওজন, আয়তন, উপাদান সমূহের পরিমাণ ওষুধের লেবেলের গায়ে না সাঁটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে l ওষুধ সেবনের ফলে রোগীর মৃত্যু বা আশঙ্কাজনক ক্ষতি হলে ওষুধ প্রস্তুতকারকের শাস্তি আজীবন কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে ও দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে l [উক্ত আইনে "cosmetics" দ্রব্যাদিও পড়ছে এবং যা "ISI Standard" এর মান দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার পর বাজারে বিক্রি করা যাবে। তাহলে দেখাই যাচ্ছে "ধনলক্ষী যন্ত্র বা সৌভাগ্য জেমস" এর নামে কিভাবে এক দুর্নীতির চক্র চলছে আমাদের আশেপাশে!]
ওষুধ বা 'ড্রাগ' বলতে শরীরে যাহা কাজ করে বলে দাবি করা হবে যেমন তাবিজ, মাদুলি, কবজ, যাগ-যজ্ঞ ইত্যাদি সমস্ত কিছুই কিন্তু ড্রাগের মধ্যেই পরে
সাধারণ মানুষের কী করণীয় এই ভন্ডামীর বিরুদ্ধে:
আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী হন, এবং কোনও তান্ত্রিক বা জ্যোতিষী যদি রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া আপনার কাছে কোনো তাবিজ,কবজ, মাদুলি বা ঐ ধরণের কিছু বিক্রয় করে থাকেন তবে আপনি আপনার অভিযোগ দায়ের করবেন এই ঠিকানায়--DIRECTORATE OF DRUGS CONTROL
P – 16, INDIA EXCHANGE PLACE EXTENSION, K.I.T. BUILDING – 5TH FLOOR, KOLKATA - 700 073, (+) 91 – (+) 33 – 2225 – 2214 / 9587 / 9610,TELE FAX: - 2225 – 2215, Email: psumana2021@gmail.com
অভিযোগ দায়ের করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, তান্ত্রিক-জ্যোতিষির রোগ সারাবার কোনো বিজ্ঞাপন পত্র- পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকলে তার জেরক্স কপি অভিযোগ পত্রের সাথে যুক্ত করে দেবেন। মূল কাগজটি যত্ন করে রেখে দেবেন, মামলা চলাকালীন কাজে লাগবে l আপনার অভিযোগ পাওয়ার পর ড্রাগস কন্ট্রোল থেকে অভিযুক্তের কাছে জানতে চাইবে এই ধরণের তাবিজ কবজ (যা আইনের সংঞ্জায় ওষুধ বা ড্রাগস) তৈরির বৈধ লাইসেন্স তার কাছে আছে কিনা l ড্রাগস কন্ট্রোলের দেওয়া লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বানানো বা বিক্রয়ের জন্য ওই জ্যোতিষী বা তান্ত্রিকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করবে ড্রাগস কন্ট্রোল l মামলাটি হবে অভিযুক্ত তান্ত্রিক-জ্যোতিষি বনাম সরকারের। আপনাকে বড়জোর সাক্ষী দেওয়া ছাড়া কিছুটি করতে হবে না। এবং সর্বোপরি আপনার নিকটবর্তী পুলিশ থানা, বিডিও, এসডিও বা ডিএম অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে রাখুন।
তাহলে, আসুন আপনি আমি সহ সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বেআইনি এইসব পেশার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলি এবং নিথর প্রশাসনকে সচল করি, নচেৎ আইন বইয়ের মলাটে বন্দিই থাকবে অনন্তকাল অবধি।
তথ্যসহায়তায়: প্রবীর ঘোষ,অনাবিল সেনগুপ্ত, সন্তোষ শর্মা।