প্রশ্ন - ১
যদি আমাদের মহাবিশ্বের কোনো creator থেকেও থাকে তাহলে কি ধর্মগুলির লেখাসমুহ কি মানুষকে মেনে নিতে হবে? ধর্মগুলোতে যে creator এর বর্ণনা আছে সেটা যে কাল্পনিক creator এটা বিজ্ঞান কি এখনও প্রমান করেনি?
অরিজিৎ, বীরভূম
উত্তর: –
“এরকম যুক্তি মনস্ক প্রশ্ন তোলার জন্য আপনাকে প্রথমেই অভিনন্দন জানাই।
এটা সত্যি যে এই সুবিশাল বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডর সৃষ্টি, প্রসারণ, সংকোচন বা বিনাশের ইতিহাস আমরা হয়তো অতি সামান্যই জানতে পেরেছি।
কিন্তু বিবর্তনের পথ ধরে হোমো স্যপিয়েন্সের সৃষ্টির পরে এই কয়েক হাজার বছরে এতটা জানাও কোনভাবেই কম নয়। ফলে, আমরা সবটুকু এখনো জানিনা এই অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে একজন মহান সৃষ্টিকর্তা এই ব্রহ্মাণ্ডের নির্মাণ করেছেন এরকম অলীক, অলৌকিক তত্ত্ব মেনে নেওয়া একটা লজিক্যাল ফ্যালাসি ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা যত এগোচ্ছে তত ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে ব্রহ্মাণ্ড স্বয়ম্ভু এবং এর প্রতিটি গ্যালাক্সি থেকে শুরু করে সবকিছুর সৃষ্টি ও বিনাশ এক একটা অ্যাক্সিডেন্টের ফলাফল যা কোনভাবেই কোন ঈশ্বর বা ডিভাইন পাওয়ারের পূর্বনির্দিষ্ট নয়।
এটা সম্পূর্ণভাবে অনিয়ন্ত্রিত।
এরকম অনিয়ন্ত্রিত ঘটনা নিরন্তর ঘটেই চলেছে এবং চলতেই থাকবে। কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলেই একটা গ্যাসীয় পিন্ড ছিটকে গিয়ে ক্রমশ ঘনীভূত, শীতল হয়ে আমাদের পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। একইভাবে এটাও একটা Random vigorous reaction এরই ফল যে সেই আদিম পৃথিবীর hot dilute soup এর ভিতর কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেনের মত অজৈব পদার্থের বিক্রিয়ায় প্রোটিনের একক অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হয়েছিল। তারও পরে সাড়ে তিনশো কোটি বছর ধরে বিবর্তনের ফলে হোমো স্যপিয়েন্সের সৃষ্টি হয়েছে। জীব বিবর্তনের এই প্রতিটি ধাপই আসলে এক একটা অ্যাক্সিডেন্ট। সৃষ্টির পরে পাঁচবার এই পৃথিবীতে মহাবিনাশ ঘটেছে যার ফলে তৎকালীন পৃথিবীর নব্বই শতাংশের বেশি জীব মারা যায় এবং অবশিষ্টদের বিবর্তনের দিক ঘুরে গেছে। অনেকে দাবি করেন যে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টির জন্য বিবর্তন করিয়েছিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের যদি মানুষ সৃষ্টিই উদ্দেশ্য হত তাহলে এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কেন তা করতেন সরাসরি একমুহূর্তে তা করতে পারতেন। তাছাড়া এরকম ভাবার কোন কারণই নেই যে বিবর্তন শেষ হয়ে গেছে তা প্রতি মুহূর্তে চলছে। ভবিষ্যতে এরকম কোন মহাবিনাশের ফলে বর্তমান সিনোজোয়িক যুগের সকল জীবই হয়তো বিনষ্ট হতে পারে, পুরো পৃথিবীই ধ্বংস হতে পারে। সবকিছুই হতে পারে কারণ কোন কিছুই অলৌকিক সত্ত্বা দ্বারা নির্ধারিত নয়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বের অসারতা স্পষ্ট হয়ে গেছে।“
মনীশ রায়চৌধুরী
সাধারণ সম্পাদক
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
প্রশ্ন - ২
মহাবিশ্ব ও সকলকিছু সৃষ্টির পূর্বে অসীম আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই তো ছিল না। সেই অসীমতার মধ্যে শূন্যতা কোথায় ছিল? অসীম আর শূন্যতা একইসাথে অবস্থান করতে পারে না। কারণ একটি অপরটির অস্তিত্বকে ভুল প্রমাণ করে। এখানে অসীম ও শূন্যতা বলতে কী বোঝায়?
হোসেনুর রহমান
ভাঙড়, দক্ষিন চব্বিশ পরগণা
উত্তর: -
“মহাবিশ্ব ও সকলকিছু সৃষ্টির পূর্বে অসীম আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান ইত্যাদি ছাড়া আর কিছুই তো ছিল না" এই কথাটা ধর্ম বিশ্বাসী দের কথা এবং এর সাথে বিজ্ঞানের কোনো যোগ নেই অর্থাৎ পদার্থ বিদ্যার নিয়ম অনুযায়ী মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বর স্বীকার্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। অতএব আগে দেখা যাক এই বিষয়ে বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ কি বলেছে। কোরানে বলা হয়েছে পৃথিবী, আকাশ তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টির পূর্বে বা সহজ কথায় এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে জলের উপর আল্লাহর আরজ (সিংহাসন) অবস্থান করতো আর আল্লাহ সেই আরজে অবস্থান করতো (কোরান-হূদ ১১:৭)। বাইবেলের আদি পুস্তকে বলা হয়েছে ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর অন্ধকারে অবস্থান করতো (পবিত্র বাইবেল, আদি পুস্তক ১:২-৩)। তিনিই আলো হতে বলায় তবে সবার প্রথম আলোর উদয় হয়। বাইবেলের মতো এই একই রকম বর্ণনা ইহুদিদের ধর্ম গ্রন্থ তোরাহ (Torah) তে উল্লেখ পাওয়া। যদি হিন্দু পুরান (শিব পুরাণ-পর্ব ১, Aitareya Upanishad (3.4.1)) দেখা যায় তাহলে সৃষ্টির আদিতে যখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কিছুই ছিলনা, ঘোর অন্ধকারে ছিল শুধু ব্রহ্ম। চারিদিকে শুধু জল ছিল ও ভগবান বিষ্ণু জলের উপর ঘুমাচ্ছিলো এবং বিষ্ণুর নাভি থেকে ফোঁটা পদ্মে ভগবান ব্রহ্মার জন্ম যিনি পরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেন। এতক্ষনে আমরা দেখলাম সব ধর্মে আদিতে অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির পূর্বে জল ছিল আর জলের আশেপাশে আল্লাহ/ঈশ্বর/ব্রহ্মের আত্মা ঘুরঘুর করছিলো এবং কতদিন যে ওই অবস্থায় ছিল এই বিষয়ে কোথাও বিশেষ কিছু বলা নেই। আরো বড়ো কথা ওই জল এল কোথা থেকে? ওই জল কে সৃষ্টি করলো? ওই জল থেকে কি ঈশ্বরের আত্মার সৃষ্টি? তাছাড়া সব জায়গায় আল্লাহ/ঈশ্বর/ব্রহ্মের আত্মাকে নিরাকার বলা হয়েছে, আবার কোথাও নিরাকার আত্মার বসার জন্য সিংহাসন দরকার পড়েছে। জল এবং সিংহাসনের উপস্থিতি জানাচ্ছে “স্থানের, বা শূন্য স্থানের(space ওর vaccum)” অস্তিত্ব ছিল অর্থাৎ শূন্য বলতে যেটা প্রশ্নে বোঝানো হয়েছে সেই শূন্যের সঙ্গে ধর্ম গ্রন্থের শূন্যের আকাশ পাতাল তফাৎ। ঈশ্বর বা ব্রহ্মকে অসীম বলা হলেও কোন দিক থেকে অসীম ছিল তা নিয়ে বিশেষ কিছু বলা নেই। তবে এটা সহজেই অনুমান করাযায় আল্লাহ/ঈশ্বর/ব্রহ্ম শক্তি বা ক্ষমতা, জ্ঞান ইত্যাদির হিসাবে হয়তো অসীম কারণ তার আকার অসীম মানে বেশ মোটাসোঁটা, দৈত্যকার চেহারার কেউ এই বিষয়য়ে কেউ কিছু বলেনি। যাই হোক এবার আমরা বিজ্ঞানের দিক দিয়ে আলোচনা করি।
পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধমে। বিগব্যাং এর পূর্বে কোনো কিছুইর বা কারোর অস্তিত্ব ছিলোনা। ছিল না সময় ও স্থানের অস্তিত্ব। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে প্রথমে বৈজ্ঞানিক Alexander Friedmann (১৯২৪) ও Georges Lemaître (১৯২৭) সম্পসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দেন। পরবর্তী কালে Edwin Hubble পর্য্যবেক্ষনের মাধ্যমে এই ধারণাকে প্রতিষ্টিত করে। যদি সম্পসারণশীল মহাবিশ্বকে সময়ের উল্টোদিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের গণিতের মাধ্যমে দেখানো যায় এই সম্পসারণশীল মহাবিশ্ব শুরুতে খুবই ছোট একটা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল যা পরবর্তীকালে প্রসারিত হয়ে স্থান, কাল, ও সমস্ত ভরের সৃষ্টি করেছে (১৯৩০, Nature: Georges Lemaître)। এই ছোট সীমাবদ্ধ অঞ্চলের তাপমাত্রা ও ঘনত্ব অসীম ছিল।
আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে দেখানো যায় শক্তি থেকে ভরের উদ্ভব সম্ভব,যা একটি পরীক্ষিত সত্যি (উদাহরণ: Pair Production)। আবার হাইসেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি থেকে দেখানো যায় শূন্য থেকে স্বল্প সময়ের জন্য শক্তি ও প্রকান্তরে ভরের (বা পদার্থের) উদ্ভব সম্ভব (উদাহরণ: Virtual Pair Production)। অতএব সম্পূর্ণ পদার্থ বিদ্যার নিয়ম মেনে কোনো রূপ অলৌকিক শক্তির উপস্তিতি ভিন্ন মহাবিশ্বর উৎপত্তি ব্যাখ্যা সম্ভব। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা যতদূর বুঝতে পেরেছেন তাহলো কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে মহাবিশ্বর (অর্থাৎ স্থান, কাল, পদার্থের) উৎপত্তি। বিগব্যাংগের আগে কিছুই ছিলোনা না ছিল স্থান, না ছিল সময় আর না ছিল পদার্থ বা শক্তি অর্থাৎ প্রকৃত শূন্য ছিল। অতএব ঈশ্বরের ও অস্তিত্ব ছিলোনা। এখনো পর্যন্ত বিগব্যাং তত্ত্বের সাপেক্ষে পাওয়া প্রমান গুলির মধ্যে মুখ্য গুলি হলো হাবল এর সূত্র ও মহাবিশ্বের সম্পসারণ, কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন, হালকা মৌল যেমন ডিউটেরিয়াম (H - 2), হিলিয়াম -3 ও লিথিয়াম-7 ইত্যাদির প্রাচুর্য।
এবার আসা যাক জলের কথায়। বিগব্যাংগের প্রথম ১০০ সেকেন্ড থেকে ৩০ মিনিট এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রথম তিন মিনিটে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা ও ঘনত্ব হালকা মৌল সমূহ উৎপাদনের উপযুক্ত ছিল। এই সময় হাইড্রোজেন (~৭৫ %), হিলিয়াম (~২৫%) এবং খুব সামান্য ডিউটেরিয়াম (H - 2), হিলিয়াম -3 ও লিথিয়াম-7 উৎপন্ন হয়। এর থেকে ভারী মৌল সমূহ যেমন কার্বন, অক্সিজেন বা অন্যান ধাতু সমূহ উৎপন্ন করতে তারা (star) দের দরকার এবং এর জন্য বিগব্যাংগের পর আরও ২০০ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তার মানে বিগব্যাংগের ২০০ মিলিয়ন বছর পর জলের অনুর উৎপত্তি।
এবার আলোচনা টাকে শেষ করি অসীম ও শূন্যের একটা তুলনামূলক আলোচনা দিয়ে। পদার্থবিদের কাছে কোনো কিছু ক্ষুদ্র শূন্য আর কোনোকিছু খুব বড়ো হলো অসীম। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াস এর ব্যাসের (10-15 m) সঙ্গে এক আলোক বর্ষ দুরুত্বের (9.461x1015 m) তুলনা টানা হয় তাহলে, আলোক বর্ষ দুরুত্বের কাছে একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াস এর ব্যাস এর মান শূন্য। একটা নিউট্রন তারার কেন্দ্রের ঘনত্ব বা একটা সুপারনোভা তারার কেন্দ্রের তাপমাত্রার থেকে বিগব্যাংগের সময়কার ঘনত্ব বা তাপমাত্রা আরো বহু লক্ষ কোটি গুন্ বেশি ছিল তাই এদের অসীম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বিগব্যাংগের শুরুর সময়কার অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা এখনো চলছে। ভবিষ্যতে যায় এই বিষয়ে আরো তথ্য উঠে আসবে।”
সৌমেন মন্ডল
গবেষক
সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স
প্রশ্ন - ৩
ঘুমের মধ্যে অনেকে কথা বলে ও গোঙানির মত আওয়াজ করে। আমাদের গ্রামের দিকে সেটিকে বলে বোবা ধরেছে কিংবা ভুত ডাইনী ধরেছে। এইটি কি কোনো রোগ? এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই, এবং প্রতিকার বললে ভীষন ই উপকৃত হব।
সুজয় বিশ্বাস, বামন গোলা, মালদা
উত্তর:-
“কদিন ধরে রুপালি বেশ মানসিক চাপে আছে। রাতে নানান স্বপ্ন দেখে। বেশিরভাগ সময় তখন তার মনে হয় তার হাত পা পুরো অবশ হয়ে আছে।তাকে যেন কেউ চেপে ধরে আছে।অথচ তাকে যে ঠেলে উঠে পড়বে সে ক্ষমতাও নেই।পুরো হাত পা যেন অবশ হয়ে আছে। তার বোধহয় আর জীবনে ঘুম থেকে ওঠা হবে না!
ঘুমের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতা কে অনেকে বোবায় ধরা বা ভুত ডাইনী ধরা বলে।এমন বোবায় ধরার অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস (sleep paralysis)..।প্রকৃত ঘটনা জানতে পারলে বুঝতে পারবেন যে এখানে ভূত- প্রেত ডাইনীর কোন কাজ কারবার নেই। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা (Psychological disorder)। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।
মানুষের ঘুমের ৫টি পর্যায় যেগুলো চক্রাকারে চলতে থাকে। এই পর্যায়গুলো দুটি দশাকে কেন্দ্র করে হয়। এর একটি REM (Rapid Eye Movement) এবং অপরটি Non REM।ঘুমের REM দশার স্থায়িত্বকাল মাত্র দুই ঘন্টা। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের স্বপ্ন দেখার কাজটি সম্পন্ন হয়। REM কে বলা হয় ঘুমের সক্রিয় অবস্থা। এ সময় আমাদের মাংশপেশিতে শিথীলতা আসে (muscles relaxed) এবং দেহ অবশ হয়ে যায় আর আমরা হয়ে পড়ি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।Non REM দশার স্থায়িত্বকাল অপেক্ষাকৃত বেশি; প্রায় ৪-৫ ঘন্টা। ৫টি পর্যায়ের ৪টিই এই দশার দখলে।
কোন কারণে আমরা যদি REM দশা শেষ হওয়ার পূর্বেই জেগে উঠি তখনই বোবায় ধরার ঘটনা ঘটে। এ সময় আমরা ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী এক অবস্থায় অবস্থান করি। ফলে মস্তিষ্ক ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে, আমরা আসলে কোন অবস্থায় আছি। আর তখনই উদ্ভট সব অনুভূতি হতে থাকে।
বোবায় ধরার অনুভূতি ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। মনে হয় যেন আমি জেগে আছি, আশপাশের সবাই চলাফেরা করছে কিন্তু আমার হাত-পা নাড়াতে পারছি না বা কাউকে ডাকতে পারছি না; সমস্ত শরীর যেন প্যারালাইজড হয়ে গেছে। নিজেকে তখন অনেক বেশি অসহায় মনে হয়। আর ভাবনা আসে আর কখনও ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারবো না। একটা জোর প্রচেষ্টা থাকে ঘুম থেকে জেগে ওঠার। যারা ভূত প্রেতে বিশ্বাস রাখে অথবা যাদের হ্যালুসিনেশনের সমস্যা আছে তারা আরও একধাপ বেশি দেখে থাকে। এই যেমন কেউ বুকের উপর চেপে বসে আছে অথবা খাঁটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে বা তাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
দু:খজনক হলেও সত্যি যে, আমরা অধিকাংশ মানুষ এখনও বোবায় ধরাকে ভূত প্রেতের কীর্তি বলে বিশ্বাস করি। শুধু যে বিশ্বাস করি তা নয়; একই সাথে এ থেকে পরিত্রানের আশায় অনেকে আবার ওঝা / গুনিন দ্বারা ঝাড় ফুঁক দিয়ে ভুত তাড়ানোর চেষ্টা করি।। আশা করি এখন বুঝতে পারছেন যে এটা আমাদের শরীর বহির্ভূত কোন ঘটনা নয় বা অলৌকিক কোনো ঘটনা নয়।অলৌকিক বলে পৃথিবীতে কিছু হয় না। এটা একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। তাই এর সমস্যা মনোবিদরাই সমাধান করতে পারবেন, কোন ওঝা গুনিন নয়।”
পঞ্চানন মন্ডল
কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য, বিজ্ঞান মনস্ক, পশ্চিমবঙ্গ
সম্পাদক, বিজ্ঞান মনস্ক, সোনারপুর শাখা
প্রতিষ্ঠাতা – বিজ্ঞানকথা
প্রশ্ন - ৪
১৯৮০ থেকে ২০২২, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখা আছে, মানুষের চেতনার পরিধি বিস্তারলাভ করলেও, কোথাও যেন মানুষ ধর্মকে খড়কুটোর মত আশ্রয় করেই নিমজ্জিত হয়ে চলেছে। এ থেকে নিস্তার পাওয়ার কার্যকরী পথ কী? অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনিতা কি চেতনা বিকাশের সময় কেড়ে নিচ্ছে? যোগাযোগের সময় কি কমে গেছে? সচেতন করার কার্যকরী পথ কী?
মহম্মদ মহসীন
মানিকপুর, হুগলী
উত্তর: -
“সৌদি আরবের নাগরিকদেরতো অর্থের অভাব নেই৷ কথা বলার সুযোগটা দরকার৷ অনবরত বিতর্কের মধ্য দিয়েই সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে৷”
মুজিব রহমান
সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা।
এবং বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, মুন্সিগঞ্জ জেলা।
প্রশ্ন - ৫
একটা ঘটনা শুনছিলাম youtube এ যে একটা হোটেল রুমে ভৌতিক ঘটনা। উত্তরাখণ্ডে আলমড়া তে। দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে দেখা যাচ্ছেনা, বাথরুমে কল ঘুরে যাচ্ছে নিজে থেকে। এবার ধরুন এটা hallucination হতে পারে। যেমন ধরুন কেউ বৃন্দাবনে ঘর ভাড়া নিয়ে আছে দেখলো রাতে বারান্দায় কৃষ্ণ বাঁশি বাজাচ্ছে। এবার দুটো সম্ভাবনা। হয় মিথ্যে বলছে নয়ত সত্যি hallucinate করছে। কিন্তু ওর মন তো ওটা সত্যিই দেখছে। অনেকটা রামকৃষ্ণের কালী দেখার মত। ওর মন ওটা ক্রিয়েট করছে। এই ক্ষেত্রে কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে যদি নিয়ে থাকি যা তার অনুভূতি টা সত্যি।
অভিজিৎ ভট্টাচার্য, বৈদ্যবাটী
উত্তর: -
“প্রতি, অভিজিৎ ভট্টাচার্য
নমস্কার,
ভৌতিক ঘটনা নিয়ে সোসিয়াল নেটওয়ার্কে অনেক ভিডিও ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। এই ধরণের ভিডিওগুলি কোনও না কোনও ব্যক্তি রেকর্ড এবং এডিট করে ইউটিউব, ফেসবুকে আপলোড করে থাকেন। কিন্তু এই ধরনের ভিডিও থেকে এটা প্রমাণ হয় না ভৌতিক ঘটনা ঘটে। ভৌতিক বা অলৌকিক বলে বাস্তবে কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই। এর পরেও যদি আপনি দাবি করেন ভুতুড়ে ঘটনা কোনও ভুত, আত্মা ঘটিয়ে থাকে তাহলে সবার আগে এই প্রশ্ন উঠবে, ভূতের জন্মদাতা কে? ভূত আছে? প্রমাণ করতে পারবেন। উত্তরটা হবে কোনও দিন না। কারণ যার কোনও অস্তিত্ব নেই তাকে প্রমাণ করার অর্থ হলো রামকৃষ্ণের মত কালীকে দেখা। রাতের অন্ধকারে বিড়ালের শব্দকে ভৌতিক আওয়াজ ভেবে বসা। পাখির ডাকলে সেটা কৃষ্ণের বাঁশির সুর মনে হওয়া। আবার কোনও বৈজ্ঞানিক কারণে দরজায় জানলা খোলা বা বন্ধ হওয়ার পেছন কোনও অশরীরী হাত খুঁজে বেড়ানো। কোনও ঘটনার পেছন বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে না পেলে তাকে অলৌকিক বলে দেওয়া বোকামি। তাই সাতটি যদি আপনি সত্যি খুঁজতে চান তাহলে নিজে অনুসন্ধানে নামুন। নিজে যেদিন থেকে যুক্তিবাদী অনুসন্ধানে নামবেন, সেদিন নিজেই বুঝতে পারবেন, ভূত, ভুতুড়ে, ভৌতিক সবই একটা গুজব ও কল্পনা। আমারা যুক্তিবাদীদের চ্যালেঞ্জ, ভূত বা অলৌকিক বলে বাস্তবে কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই। এরপরেও যদি দাবি করেন, ভৌতিক ঘটনা ঘটে, তাহলে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির 50 লক্ষ টাকার খোলা চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ গ্রহন করুন।”
সন্তোষ শর্মা
সংযুক্ত সম্পাদক
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
প্রশ্ন - ৬
Robert Svoboda এর বই Aghora তে আছে একজন জ্যোতিষী একটি ছেলের জন্মের আগেই তার আয়ু এবং বৈচিত্র বলে দিয়েছিল। সেটা মিলে গেছিল এমনকি দিনক্ষণই মিলে গেছিল। এটা কি সম্ভব? সেই ছেলেটি স্বল্পায়ু ছিল।
অভিজিৎ ভট্টাচার্য
বৈদ্যবাটি
উত্তর: -
“কারোর হাত, পা, কপাল, মুখ ইত্যাদি দেখেই সেই ব্যক্তিটির অতীত, বর্তমান ভবিষ্যত নিয়ে ঝরঝরিয়ে বলে যাওয়া দেখে জ্যোতিষীদের ক্লায়েন্ট যতই অবাক হোক না কেন আসলে সবটাই সহজসরল ধাপ্পাবাজি বা প্রতারণার খেলা। এই খেলার রহস্য ভেদ আমজনতা করতে পারেন না বলেই জ্যোতিষী নামক প্রতারকের দল মনের সুখে করেকম্মে খাচ্ছে, আমজনতার মাথায় কাঁঠালভেঙ্গে।
আচ্ছা, আপনি কি জানেন শুধুমাত্র কলকাতা শহরেই এমন জনা পঞ্চাশেক জ্যোতিষী বা তান্ত্রিকের ভেকধারী জ্যোতিষীরা আছে যাদের রোজগার কমকরেও ১০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি প্রতিমাসে যা সৎভাবে খেটেখাওয়া মানুষেরা কল্পনাও করতে পারেন না?
একজন সফল জ্যোতিষী হতে গেলে চাই, শয়তানি বা ধুরন্ধর উপস্থিত বুদ্ধি, মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝবার ক্ষমতা এবং কয়েকজন ইনফর্মার যারা টাকার বিনিময়ে ক্লায়েন্টদের হাঁড়ির খবর আপনাকে থুড়ি জ্যোতিষীদের এনে দেবে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীদের সাথে সখ্যতা এবং কয়েকটি পোষা গুন্ডা যারা বেয়াড়া যুক্তিমনষ্ক দের ক্যেলিয়ে কাঁঠাল বানাবে। এরই সঙ্গে আপনাকে মোটা টাকা লগ্নি করতে হবে এই জ্যোতিষীগিরি বা তান্ত্রিকগিরি নামক প্রতারণা পেশায়। যে যতবেশি পুঁজি লগ্নি করতে পারবে এই পেশায় (পড়ুন বিজ্ঞাপনের পেছনে) তার তেমনই প্রচারও হবে, ক্লায়েন্টের ভিড়ও বাড়বে। আর ক্লায়েন্টের ভীড় মানেই অর্থপ্রাপ্তি।
প্রসঙ্গত জানাই, বৃত্তিকর চাপান হয় আইনসম্মত পেশার উপর। আইন সম্মত পেশার একটা তালিকা আছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্যাক্স অন প্রফেশন, টেডস, কলিংস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৭৯-এ। প্রফেশন ট্যাক্স বিষয়ক আইন ১৯৭৯ এর সেকশন ও (২) তে আইন-সম্মত পেশার পূর্ণ তালিকা দেওয়া আছে। তাতে কোথাও ‘জ্যোতিষ’ এর নাম নেই। কারন ‘জ্যোতিষ’ এর কোন আইনি স্বীকৃতি নেই। বরং এদেশের আইন অনুসারে জ্যোতিষ পেশা বে-আইনি, নিষিদ্ধ, অবাঞ্ছিত, অনৈতিক এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
এবারে আসি জ্যোতিষীরা কিভাবে প্রতারণা করে খায়।
একজন সাধারণ গৃহবধুকে আপনি যদি বলেন- আপনি সংসারের জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন, পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফোটাতে আপনি যে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছে বা শখ দমিয়ে রেখে এত কষ্ট করে চলেছেন, তার প্রাপ্য সম্মান কিন্তু আপনি পাননি। দেখবেন ক্লায়েন্ট কেমন ঢিঁশ। কোনো দুধেআলতা ফর্সা চেহারাযুক্ত মহিলাকে বলুন - এই যে আপনি এতো সুন্দরী, তা এখনও পর্যন্ত কতগুলো প্রেমপত্র পেয়েছেন? এই কথাগুলো সামান্য রদবদল করে বলেই দেখুন, সেই মহিলাও ঢিঁশ। মূহুর্তে মোনালিসা মার্কা হাসির সাথে আপনার ভক্ত। এরপরে আপনাকে আর বেশি কিছু বলতেই হবে না, আপনার ক্লায়েন্টই গড়গড়িয়ে তার অনেক কথা আপনাকে বলে যাবে। আসলে প্রসংশা শুনতে প্রায় সকলেই ভালোবাসেন। আপনি ক্লায়েন্টকে ১০০ টা কথা বললে ওরা সেসবই মনে রাখবে যেগুলো তাদের মনপসন্দ, না মেলা কথাগুলো ওরা ভুলেই যাবে, ধর্তব্যেই আনবেন না।
কোনো মা, তার মেয়েকে আপনার চেম্বারে নিয়ে এলে বুঝে নিতে হবে মা, তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে বেজায় চিন্তিত। সুপাত্রর খোঁজ চালাচ্ছেন। আপনিও ঝোপ বুঝে কোপ মারুন। ক্লায়েন্ট পয়সাওয়ালা হলে সোনার প্রজাপতি কবজ দিন, ক্লায়েন্টের আর্থিক অবস্থা ভালো না বুঝলে সোনার জলে চুবানো রুপোর কবজ বিক্রি করুন। কলকাতার বড়বাজারে এসব তাবিজকবজ, রত্নপাথর হোলসেল দরে পাওয়া যায়। কমদামী সেসব হিজিবিজি জিনিস কিনে এনে ক্লায়েন্ট বুঝে ১০ টাকার জিনিস ১০০০ টাকা বা তারও বেশিদামে ঝেঁপে দিন।
কোনো মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পুরুষকে বধ করতে চাইলে তাকে বলুন - আপনি অর্থোপার্জনের জন্য যেভাবে এতো পরিশ্রম করছেন, সেভাবে রোজগার হচ্ছে কি? কিংবা বলুন, আপনি কোনোদিন অর্থকষ্টে শেষ হবেন না, যেভাবে হোক ঠিকই টাকার ব্যবস্থা আপনি করে ফেলবেন কারন আপনি সৎ ও কর্মঠ। ব্যাস! এতেই অনেক। কথায় আছে, practice makes you perfect. আপনার অভিজ্ঞ চোখ এবং ক্লায়েন্টের মনস্তত্ত্ব বোঝবার ক্ষমতা সঙ্গে ইনফর্মার দের ইনফরমেশন আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি।
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগে সন্তানের পড়াশোনার উন্নতির জন্য অনেক বাবা, মায়েরা ভিড় জমান জ্যোতিষীদের চেম্বারে। পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষার্থিনীকে কয়েকটা ভালোভালো জ্ঞানের কথা শুনিয়ে সরস্বতী কবজ বিক্রি করুন। সারাবছর পড়াশোনা লাটে তুলে, সারাদিন ফোনে ডুবে থাকা পোলাপান দের পরীক্ষায় ১০০ তে প্রায় ১০০ নং পাওয়ার নিনজা টেকনিক সরস্বতী কবচম। জ্বি, এটাই সায়েন্স, জ্যোতিষ নামক প্রতারণা বিদ্যার সায়েন্স। যদিও জ্যোতিষ কখনওই বিজ্ঞান নয়।
পরিশেষে বলবো, জ্যোতিষ শাস্ত্রটাই যখন বে-আইনি, প্রতারণা এবং চিটিংবাজি। তখন আজ নয়তো কাল জ্যোতিষী, তান্ত্রিকদের জেলে যাওয়া আটকানোর সাধ্য কারোর নেই। তবে আমার ব্যাক্তিগত মতে শুধুমাত্র কঠোর আইন এনে এদের দমানো যাবেনা। কারন টাকা এবং রাজনীতিক পরিচিতির সুবাদে এরা আইন কে পকেট বন্দি করে ছাড় পেয়ে যাবে। এদের একটাই ওষুধ। সেটা হচ্ছে বয়কট করা।”
অভিষেক দে
প্যারানরমাল এক্সপোজার
সক্রিয় বিজ্ঞান কর্মী, যুক্তিবাদী,
সাংগঠনিক সদস্য, চেতনার অন্বেষণে
প্রশ্ন - ৭
আমি ফেসবুকে নিয়মিত অনুকুল ঠাকুর কে নিয়ে খিল্লি করি, মিম শেয়ার করি। আমার এই সব activities দেখে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে মেসেঞ্জারে সতর্ক করে জানায়-"You can also cheat people in this way but U can't disregard IPC 295A .
After all you r a govt. Employee.
In our country all dharma and dharma gurus are legal as per constitution."
আমি IPC 295A সম্পর্কে জানতে চাই।এই ধারার আমাকে কেউ অভিযুক্ত করলে ঝুঁকি কতখানি, আর এর থেকে বাঁচার উপায় কি?
রামাননন্দ ঘোষ
বাঁকুড়া
উত্তর: -
“দন্ডবিধি ১৮৬০, অনুচ্ছেদ ১৫র ২৯৫ ধারা থেকে ২৯৮ ধারা(IPC-295-298) পর্যন্ত সংশোধন করা প্রয়োজন এবং এর মধ্যে ২৯৫-ক(IPC-295A) ধারাটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা প্রয়োজন বলে মনে করি। সংবিধান প্রতিশ্রুত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী এই আইন।
আলোচনা,সমালোচনা,মতপ্রকাশ আর উস্কানি,বিদ্বেষ,ঘৃণাবাদ এক নয়। কিন্তু দন্ডবিধি-১৮৬০ এর পঞ্চদশ অধ্যায়ের ২৯৫-ক ধারাটিতে আলোচনা,সমালোচনা, বাক্ স্বাধীনতা তথা মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হয়েছে।
ধারা ২৯৫-ক। কোন ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকবৃন্দের কোন শ্রেণীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ও হিংসাত্মকভাবে লিখিত বা উচ্চারিত কথা কর্তৃক বা দৃশ্যমান কোন বস্তু কর্তৃক সে শ্রেণীর ধর্মকে বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমানিত করে বা অপমানিত করার চেষ্টা করে, তবে সে ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।"
এটা বলেছে। এখন যদি আমি বলি-
আমি পাঁঠা ছাগলকে ঈশ্বর বলিয়া এবং মানিয়া তাঁহার আরাধনা করি।
এখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি আমার পিতৃশ্বর পাঁঠা ছাগলের মাংস ভক্ষণ করে কিংবা ছাগলেশ্বরের কার্টুন আঁকিয়া আমার বিশ্বাস এবং *নুভূতিতে আঘাত দেয়, তাহলে আমি উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইনে মামলা করতে পারবো কি? হ্যাঁ, ছাগল হত্যাতেই কিংবা কচু গাছ কাটাতেই আমার অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, আমার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে। তাহলে কি সংবিধান মেনে নেবে আমার দাবি/যুক্তি?
যদি মানে তাহলে তা ক্লিয়ার করা প্রয়োজন। আর যদি না মানে তাহলে ৩৯৫-ক ধারাটি কোন যুক্তিতে অক্ষুন্ন আছে?
এটাও ক্লিয়ার করা প্রয়োজন, ধর্মানুভূতি কি শুধু বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ? যদি না হয় তাহলে কোনো এক টঠাগটর অনুভূতিতে যেমন লেগেছে, সেরকম আমারো লাগতে পারে ছাগলের অপমানে। হ্যাঁ আমি মুরগি, কুকুর, গোরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষকে ঈশ্বর মানিয়া তাহাদিগের পুঁজা করি কিংবা ইবাদত করি এবং আরাধনা করার দিন ৩৬৫ দিন।
একটি সেক্যুলার তথা ডেমোক্রেটিক,রিপাবলিক রাষ্ট্রে কিসের ব্লাসফেমি?
IPC- 295A(1860) ধারা বাতিল করা প্রয়োজন।”
অভিষেক দে
প্যারানরমাল এক্সপোজার
সক্রিয় বিজ্ঞান কর্মী, যুক্তিবাদী,
সাংগঠনিক সদস্য, চেতনার অন্বেষণে