জ্যোতিষী, তান্ত্রিকগিরি প্রতারণা পেশা, হতে পারে জেলও।
সম্পাদক
Nov. 19, 2024 | | views :294 | like:2 | share: 1 | comments :0
জ্যোতিষী, তান্ত্রিক,ওঝা,জানগুরু,কাপালিক, অলৌকিক ক্ষমতাধর, অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাধর, ডাইনি সন্দেহে কোনো মহিলার ওপরে অত্বাচার করা কোনো ব্যাক্তি, ইত্যাদিদের জেলে ঢোকাবার জন্য আমাদের দেশে বেশ কয়েকটা ভালো আইন রয়েছে। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা এই দেশে টাকা এবং রাজনীতিক পরিচিতি থাকার সুবাদে অপরাধীরা অনেক বে-আইনি কাজ করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরায় শুধুমাত্র জনগণের আইন বিষয়ে অবজ্ঞার কারণে। সরকার চাইলেই আইন কে মলাটবন্দি অবস্থায় ফেলে না রেখে, জনগণ কে এই বিষয়ে সচেতন করতে পারে। কিন্তু তারা কানে তুলো গুঁজে বসে থাকে। আমজনতা এইসব আইনের ব্যাপার সঠিক ভবে জানলে নিজেরাই তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে সমস্ত, চোর, চিটিংবাজদের জেলে ঢোকাতে পারেন, অনায়াসেই।
নরেন্দ্র দাভোলকর, যিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন, অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির। উনি ২০০৩ সাল থেকেই একটা আইন কে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান। অবশেষে "The Maharashtra Prevention and Eradication of Human Sacrifice and other Inhuman, Evil and Aghori Practices and Black Magic Act, 2013 লাগু হয়। তাছাড়া Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act 1954, The Drugs and Cosmetics Act 1940, IPC 420, IPC 302, IPC 303 এর মতন বেশ কিছু কঠোর আইনও এই দেশে রয়েছে।
প্রসঙ্গত জানাই, সংসদ প্রবর্তিত এই আইন 30 th April 1954 সালে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় এবং 1st May 1954 এ ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি গেজেটের বিশেষ সংখ্যার দ্বিতীয় অংশের, প্রথম অধ্যায়ের ২৪ নং ক্রমে প্রকাশিত হয়। জম্মু ও কাশ্মীর বাদে ভারতের সর্বত্র এই আইন প্রযোজ্য।
The Drugs Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act 1954 আইনের সংশোধন হয় 1963 তে। এই আইনের 9(A) ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, এই আইন ভঙ্গকারীদের Cognizable Offence হিসেবে গন্য করা হবে। অর্থাৎ কেউ কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ কোনোও ভাবে এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে প্রাথমিক জানার ভিত্তিতে কোনো অভিযুক্তকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে (Notwithstanding anything contained in The Code of Criminal Procedure 1898 an Offence Punishable under this Act shall be Cognizable)..
আগে Drugs and Magic Remedies Act ভঙ্গকারীদের অপরাধ ছিলো Non-Cognizable অর্থাৎ এক বা একাধিক ব্যাক্তিকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে হত। পুলিশ সরকারের তরফ থেকে অভিযোগকারীর পক্ষে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতেন। আদালত অভিযুক্তর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা বা ওয়ারেন্ট দায়ের করলে তবেই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন।
এই উল্লিখিত আইন ভাঙ্গাটা যেহেতু Non-Cognizable অপরাধ বলে 1963 সালে আইন সংযোজনের আগে পর্যন্ত গণ্য করা হত, তাই আদালত অভিযুক্তর বাসস্থল কিংবা ব্যাবসা/চাকরিস্থলে থানা মারফত অভিযুক্তকে সামনস পাঠাতেন। সামনস অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ। যাতে লেখা থাকে কবে, কতটার সময়, কোনো আদালতে তাকে হাজিরা দিতে হবে। যেহেতু উল্লেখিত এই আইন ভাঙ্গাটা Criminal Offence বা ফৌজদারি অপরাধ তাই অভিযুক্তকে (পড়ুন জ্যোতিষী, তান্ত্রিককে) আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হত।
কোনো জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, ওঝা,জানগুরু ইত্যাদি বুজরুক প্রতারকের বিরুদ্ধে ' ম্যাজিক রেমেডিস 'আইন ভেঙ্গেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরও কোনোও বিশেষ কারণে পুলিশ নিরব দর্শক থাকতেই পারেন। তখন আপনি অভিযোগকারী হলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করার প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে (যেমন ডাইরি নং অথবা লিখিত অভিযোগ গ্রহণের থানার সিলমোহর ও স্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র) আদালতে মামলা করা যায়। একে ' Complain Case ' বলে। এই মামলার ভিত্তিতে আদালত সামনস পাঠাবেন অভিযুক্তর কাছে। অভিযুক্ত আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেবেন। সামনস অগ্রাহ্য করলে আদালত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ কে আদেশ দেবেন।
" The Drugs And Cosmetics Act 1940, Amendment GSR 884 (E)..বিভিন্ন সময়ে এই আইন সংশোধন হয়েছে। যেমন,1955,1957,1962,1963,1964..শেষ এমেন্ডমেন্ট হয় 2009 এ। 19th March 2009 তারিখে ভারতের প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় নোটিশ জারি করেছে কেন্দ্রের ' স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর '। এবার থেকে শাস্তির পরিমান আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা।
কয়েকজন মুক্তমনা, যুক্তিবাদী মানুষ এই রাজ্যে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে মহারাষ্ট্রের ধাঁচে একটা জোরালো বা কঠোর আইন প্রণয়ণের দাবীতে সরব। ইতিমধ্যে ওনারা আইনের খসড়া জমা দিয়েছেন State Law Commission এর দপ্তরে। এনারা যেই আইনটি আনতে চান তার নাম " The West Bengal Prevention of Superstition and Black Magic Practices Bill 2016 ".. আপাতত এই আইনটি লাল ফিঁতের ফাঁসে আটকে রয়েছে।
পরিশেষে জানাই, বৃত্তিকর চাপান হয় আইনসম্মত পেশার উপর। আইন সম্মত পেশার একটা তালিকা আছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্যাক্স অন প্রফেশন, টেডস, কলিংস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৭৯-এ। প্রফেশন ট্যাক্স বিষয়ক আইন ১৯৭৯ এর সেকশন ও (২) তে আইন-সম্মত পেশার পূর্ণ তালিকা দেওয়া আছে। তাতে কোথাও ‘জ্যোতিষ’ এর নাম নেই। কারন ‘জ্যোতিষ’ এর কোন আইনি স্বীকৃতি নেই। বরং এদেশের আইন অনুসারে জ্যোতিষ পেশা বে-আইনি, নিষিদ্ধ, অবাঞ্ছিত, অনৈতিক এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
জ্যোতিষ শাস্ত্রটাই যখন বে-আইনি, প্রতারণা এবং চিটিংবাজি। তখন আজ নয়তো কাল জ্যোতিষী, তান্ত্রিকদের জেলে যাওয়া আটকানোর সাধ্য কারোর নেই। তবে আমার ব্যাক্তিগত মতে শুধুমাত্র কঠোর আইন এনে এদের দমানো যাবেনা। কারন টাকা এবং রাজনীতিক পরিচিতির সুবাদে এরা আইন কে পকেট বন্দি করে ছাড় পেয়ে যাবে। এদের একটাই ওষুধ। সেটা হচ্ছে বয়কট করা।