আশীর্বাদ ও অভিশাপ শব্দদুটির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, আশীর্বাদেও কারও হিতসাধন হয় না, অভিশাপেও কোনও ক্ষতিসাধন হয় না, তবুও শব্দদুটি মানবসমাজে বহুল প্রচলিত।
বস্তুনিষ্ঠ বা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যাহীন, তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদিহীন, অলীক কল্পনাজনিত ভাববাদী ধ্যানধারণা প্রসূত এই শব্দদ্বয় আমাদের পাঠ্যক্রমেরও অন্তর্ভুক্ত।
আমরা প্রায় প্রত্যেক্যেই বাংলা বা ইংরাজি ভাষায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ’ রচনাটি পড়েছি। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিতে এই বাক্যবন্ধটির বিশ্লেষণ করলে বাক্যবন্ধটিই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
অনেকে বলতেই পারেন, বাক্যবন্ধটিতে ‘হিতকর’ এবং ‘ক্ষতিকর’ অর্থে ‘আশীর্বাদ’ ও ‘অভিশাপ’ শব্দদুটি ব্যবহার করা হয়েছে, অন্যকোনও উদ্দেশ্য নেই।
আমি বলব, তাও যদি হয় সেটাও ভুল এবং অবশ্যই উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্য হল প্রকৃত সত্য থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া।
বিভিন্ন বস্তু ও ঘটনার কার্যকরী নিয়মগুলি জানার অভিযানই হল বিজ্ঞান। বিজ্ঞান কথার অর্থ পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ দ্বারা নির্নীত ও শৃঙ্খলিত বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞান সদা জিজ্ঞাসু, সত্যসন্ধানী এবং মূলত নৈর্ব্যক্তিক।
তাই বিজ্ঞান নয়, রাষ্ট্রের ভুমিকার পর্যালোচনা করতে হবে, বিজ্ঞানীদের ভুমিকা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন গরীব ও প্রান্তিক মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়াতে সদর্থক ভূমিকা পালন না করে যদি নানা রকম অসুবিধা ও দুর্ভোগের সৃষ্টি করে তবে তার দায় রাষ্ট্রের, বিজ্ঞানের নয়। বিজ্ঞানীরা যদি সামাজিক দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে কর্পোরেটদের হাতের পুতুল হয়ে সমাজের ক্ষতিসাধন করেন তবে তার দায় বিজ্ঞানীদের, বিজ্ঞানের নয়।
তাই, “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ” কথাটাই ভুল। বিজ্ঞান হল গবেষণালব্ধ _জ্ঞানভাণ্ডার। সেই জ্ঞানভাণ্ডারে ডুব দিয়ে কে কোন উদ্দেশ্য সাধন করবে তার দায়দায়িত্ব বিজ্ঞানের ওপর চাপানো হবে কেন?