বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা

কিনোক্ষ্যাপা


Nov. 26, 2024 | | views :2599 | like:0 | share: 0 | comments :0

আধুনিক ভারতে বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যেসমস্ত পথিকৃৎদের নাম শুরুতেই করতে হয় তাঁদেরই একজন ছিলেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ১৯২০-র দশকে দেশ পরাধীন থাকলেও পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর অবদান দেশ-কাল-সীমানার গন্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে সমাদর লাভ করেছিল। তখন থেকেই আরেক বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আইনস্টাইন-এর নামের সাথে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। তারপর থেকে “বোস-আইনস্টাইন তত্ত্ব”, “বোসন” কণা ইত্যাদি নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনমানসে আলোচনার কোনোদিনই কোনও অভাব হয়নি। খামতি যদি থেকে থাকে তাহলে সেটা এই মহান ব্যক্তির অন্যান্য বিভিন্ন গঠনমূলক চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনার খামতি। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তাঁর মূর্তি গড়া হয়েছে, তাঁর নামে প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়েছে, কিন্তু সবথেকে বেশী যেটার প্রয়োজন ছিল সেটাই কখনও করা হয়নি। সেটা হল তাঁর অমূল্য চিন্তাভাবনা গুলোকে যত্নের সাথে বাস্তবায়িত করা। বিশেষত, দেশবাসীদের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার মাধ্যম হিসাবে মাতৃভাষা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাকে যতটা গঠনমূলক ভাবে তিনি তুলে ধরেছিলেন ঠিক ততটাই অবজ্ঞার শিকার হয়েছে তাঁর এই চিন্তাভাবনা। ফলে বিজ্ঞানচর্চা তো বটেই, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই মাতৃভাষার ব্যবহার ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। এই বিলুপ্তিকে আটকানোর জন্য পদার্থবিদ্যায় তাঁর অবদানের পাশাপাশি যেটা নিয়ে আলোচনা আরও বেশী করে প্রয়োজন সেটা হল “মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা” নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা। সেরকমই একটা চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রবন্ধে।


এতবড় একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও সত্যেন্দ্রনাথ বসু যে নিদারুণ সারল্যের সাথে একজন প্রকৃত শিক্ষকের মত ছাত্রছাত্রীদের ভালোমন্দকে বুঝেছিলেন সেটা কম মানুষই পেরেছিলেন। বিদেশী ভাষা যে বিজ্ঞানচর্চার পথে আসলে প্রতিবন্ধকতা হিসাবেই কাজ করছে সেকথা তিনি অনুভব করেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু-ই প্রথম এই ব্যাপারটা নিয়ে সোচ্চার হন যে ছাত্ররা এই বিদেশী ভাষায় নিজেদের মনের ভাব ঠিকভাবে বোঝাতে পারে না। এমন কি এই বিদেশী ভাষায় পড়ানোর ফলে শিক্ষকও বুঝে উঠতে পারেন না যে ছাত্র কতটা শিখে উঠতে পারল। সত্যেন্দ্রনাথ বসু-র নিজের ভাষায় – “বিদেশী ভাষা ছাত্রদের পড়া মুখস্থ করাতে বাধ্য করে, স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ হতে দেয় না এবং সৃজনী শক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীতে কোন দেশেই বিদেশী ভাষার মাধ্যমে লেখাপড়া শেখানো হয় না, হওয়ার কোনও কারণও নেই” [২) ৯৪]। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেখিয়ে তিনি বলেছেন – “আমরা ইতিহাস পড়ি, রুশ, জাপান, মিশর ইত্যাদি দেশের নবজাগরণের খবর পড়ি। কিন্তু যদি বলা যায়, এসব দেশে দ্রুত প্রগতি সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞান শিক্ষা মাতৃভাষায় চালু করার ফলে এবং সেই ভাবে আমাদের দেশে শিক্ষা-নীতিতে পরিবর্তন আনলে, আমরাও তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলতে পারবো, তখনই তর্কের ধোঁয়ায় আসল কথা চাপা পড়ে যায়” [১) ২৭৭-২৭৮]। এমনকি আর সময় নষ্ট না করে স্নাতকোত্তর স্তরেও শিক্ষার মাধ্যম যাতে মাতৃভাষা করে দেওয়া হয় তার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি। ইংরাজী শিক্ষার মোহভঙ্গ ঘটিয়ে তিনি মজার ছলে একটা ভীষণ দামী কথা বলেছিলেন – “দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের মধ্যে যেমন অনেক গৌরবময় কথা আছে, তেমনি অনেক কলঙ্কের কথাও আছে। কিন্তু সেই সকলের মূল যদি অনুসন্ধান করা যায় তাহলে এই সমস্ত শোচনীয় ঘটনার মূলে অনেক সময় দেখা যাবে ইংরেজী শিক্ষিত গর্বিত ও স্বার্থপর লোকের কীর্তিকলাপ” [১) ১০৮]। কথাটা আজকের দিনেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

দেশ যে শুধুমাত্র একটা ভৌগোলিক সীমানা নয়, বরং তার থেকে অনেকটা বেশী কিছু সেটা বুঝতেন বলেই দেশের কিসে ভালো হবে সেটা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন – “এটা ঠিক যে দেশ বলতে যদি দেশের লোককে বুঝায়, শুধু শিক্ষিত বা নায়ক সম্প্রদায় না হয়, যদি মনে হয়, দেশের সাধারণ লোকই দেশ, তবে এরা শিক্ষিত হলেই তো দেশকে উন্নত বলা যাবে, এবং দেশকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবার জন্য সমূহ শক্তিই তাদের হাতের মধ্যে থাকবে” [১) ১০৭]। তাই দেশের সাধারণ জনগণকে শিক্ষিত করার জন্য উপযুক্ত মাধ্যম হিসাবে তিনি তুলে ধরেছিলেন মাতৃভাষাকে। শুধু বিজ্ঞান নয়, গোটা শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষার প্রয়োগ আর প্রচলন ঘটাতে না পারলে শিক্ষাক্ষেত্রেও তেমন কোনও পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না বলেই তিনি মনে করতেন। এই বিষয়েও তাঁর দূরদর্শীতার পরিচয় পাওয়া যায় যখন তিনি বলেন – “শিক্ষার্থী যদি তার পারিপার্শ্বিক জগতে নিয়ত দেখে ইংরেজীনবীশের বাজার দর বাঙলানবীশের তুলনায় অনেকগুণ বেশী, তাহলে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে, সে বা তার অভিভাবকরা ইংরেজীর দিকে ঝুঁকবেই, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। পারিপার্শ্বিকের এই প্রতিকূল ও বিভ্রান্তিকর প্রভাবকে দূর না করা অবধি মাতৃভাষায় সর্বাঙ্গীণ শিক্ষার উপযোগী ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে না” [১) ১১৫]। একথা আজ সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষা, বিশেষত শহুরে অঞ্চলে, আজ ঠিক এই সমস্যারই সম্মুখীন। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই যাতে মাতৃভাষার মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে তাঁর ধারণা ছিল – “... যে প্রথমেই আমরা সারা দেশের কথা না ভেবে যদি আমাদের নিজেদের ঘর তৈরী করি, অর্থাৎ আমরা যে প্রদেশে থাকি সেই প্রদেশের লোকের শিক্ষা এমন ভাবেই বন্দোবস্ত করি যাতে বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রত্যেক শিশুর কাছে পৌঁছায়, তাহলে আমাদের সামনে নতুন যে সমস্ত অসুবিধা দেখা যাচ্ছে সেটা সহজেই চলে যায়” [১) ১০৭]। বলাই বাহুল্য যে ভারতের শাসকশ্রেণী এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ গুলোকে বরাবরই উপেক্ষা করেছে।


মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানচর্চার ব্যাপারে যাঁরা বরাবরই নিজেদের নাক উঁচু করে এসেছেন তাঁরা নিজেদের স্বপক্ষে দুটো যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তাঁদের প্রথম যুক্তি ছিল মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানচর্চার ফলে নাকি বেকার সমস্যা বাড়বে। এটা এতটাই অবাস্তব একটা কথা যে এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনায় যাওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তাই নেই। বেকার সমস্যা বাড়া তো দূরের কথা বরং এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক জীবিকা সংস্থানের উপায় হতে পারে। যেমন – মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ফলে অনুবাদে বিশেষজ্ঞ ভাষাবিদ্‌দের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে বলেই মনে করেছিলেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ভারতের মত বহু ভাষাভাষীর দেশে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা তথা শিক্ষাদানের একটা পরিবেশের মধ্যে অনুবাদ করার রীতি ও পদ্ধতি শেখানো হলে সেটা নিঃসন্দেহে অনেক জীবিকা সংস্থান ঘটাতে পারত। এছাড়াও, উন্নাসিকদের দ্বিতীয় যুক্তি ছিল বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিভাষার অভাব মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার পথে একটা বড় বাধা। তবে এগুলো যে নিছক অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয় সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছিলেন – “পরিভাষার প্রয়োজন ক্ষেত্র বিশেষে আছে, ঠিকই, তবে পরিভাষাকে নিমিত্ত করে শিক্ষা পরিকল্পনাকে স্থগিত রাখাও অনুচিত। ... তাছাড়া পরিভাষার উপর যতটা গুরুত্ব আরোপ করা হয় তার আদৌ কোন যুক্তি আছে কিনা ভেবে দেখা দরকার। ... আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রয়োগবিদ্যা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের অনেকাংশ পাশ্চাত্য দেশ থেকে নেওয়া। তারা বৈজ্ঞানিক তথ্য, যন্ত্র বা ধারণাকে যে নামে চিহ্নিত করছে, সেই তথ্য, যন্ত্র বা ধারণাকে আমরা সেই নাম-সমেত গ্রহণ করেছি। সেই নামের প্রতিশব্দ সন্ধান করা অনেকটা টেলিফোনকে দূরভাষ যন্ত্র বলার মতই বাতুলতা। অপরের কাছ থেকে নেওয়া জিনিস অপরের দেওয়া নামেই ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়” [১) ১১৩-১১৪]। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইংরেজী শব্দ ব্যবহারে তাঁর যে কোনও আপত্তি নেই সেকথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন – “অনেক সময় বলা হয় যে, ভারতীয় ভাষাগুলিতে উপযুক্ত পরিভাষার অভাব বিজ্ঞানচর্চায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আমি বিশুদ্ধবাদী নই; তাই ইংরেজী টেকনিক্যাল ও বৈজ্ঞানিক শব্দের ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানাই। ... অনেক সময়েই বৈজ্ঞানিক শব্দের তর্জমা পন্ডশ্রমমাত্র হয়ে দাঁড়াবে – রেলওয়ে, রেস্তোরাঁ, কিলোগ্রাম, সেন্টিমিটার, হুইল, লেদ, থার্মোমিটার, বয়লার, কাটার, ইলেকট্রন, অ্যাটম, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ডিফারেনসিয়াল কোয়েফিসিয়েন্ট, ইন্টিগ্রেশান – এসব প্রায় সকলেই বোঝেন। পেপার, চেয়ার, টেবিল তো এখন প্রাত্যহিক ব্যবহার্য জিনিস। দৃষ্টান্ত বাড়ানোর দরকার নেই। আশা করি শিক্ষক-ছাত্ররা কোন বিষয় আলোচনার সময় এ ব্যাপারে অনায়াসেই একটা বোঝাপড়া করে নেবেন আর শিক্ষকের দায়িত্ব হবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারের কাজে ভাষা প্রয়োগের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে হালের অবস্থান্তর সম্পর্কে নিজেকে ওয়াকিবহাল রাখা” [১) ৯৬-৯৭] পরিভাষা প্রসঙ্গে তাঁর সাফ বক্তব্য ছিল – “জলে না নেমে সাঁতার শেখানোর দুরাশার মত, ভাষাকে শিক্ষার বাহন করবার চেষ্টা না করে শুধু পরিভাষা সৃষ্টির চেষ্টা আমার কাছে হাস্যকর বলে মনে হয়েছে” [১) ২৭৭]।


টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের স্থান বিষয়ক আলোচনায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু একবার জাপানে গিয়েছিলেন, এবং সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছিলেন। এমনিতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জাপান কিভাবে একটা আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়ালো এবং প্রযুক্তির অগ্রগতিতে সারা পৃথিবীকে বিস্মিত করে তুলল সে ব্যাপারে তাঁর কৌতূহল ছিল ভীষণ। জাপান থেকে দেশে ফেরার পর থেকেই বিভিন্ন ভাষণে ও লেখালেখিতে তিনি তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছিলেন, এবং দেখিয়েছিলেন যে কিভাবে মাতৃভাষা বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রসারে প্রতিবন্ধকতা তো হয়ইনা, বরং উল্টে এই কাজে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঐ আলোচনা সভায় জাপানী ছাড়াও দেশ বিদেশ থেকে আগত একাধিক গণিতবিদ, পদার্থবিদ, জীববিদ, দার্শনিক, এবং বিজ্ঞানীর সমাবেশ ঘটেছিল। কিন্তু সকলকেই বলা হয়েছিল যে ইংরেজী বা আরও কয়েকটা বিদেশী ভাষা বুঝতে পারলেও যেহেতু সারা দেশ জুড়ে শিক্ষা চলে জাপানী ভাষায় তাই আলোচনা সভায় সকলকে মূলত জাপানী ভাষা শোনার জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। অবশ্য অন্যদের বোঝার জন্য এবং উপস্থিত বিদেশী বিজ্ঞানীদের বক্তৃতা জাপানী ভাষায় সেই দেশের মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য দোভাষীর ব্যবস্থা ছিল। সত্যেন্দ্রনাথ বসু অবাক হয়ে দেখেছিলেন যে – “আধুনিক রাষ্ট্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ সম্পর্কে এক বিশেষ জটিল ও বিমূর্ত আলোচনা অনায়াসেই চালানো হল জাপানী ভাষায়” [১) ৮৫]। এছাড়া, তিনি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও গেছিলেন। সেখানেও তিনি দেখেছিলেন যে পদার্থবিদ্যার আধুনিকতম দিকগুলোও পড়ানো হচ্ছে জাপানী ভাষায়। অনেক ধার করা শব্দ ব্যবহার করলেও সে বিষয়ে জাপানীদের মধ্যে কোনও কুন্ঠাবোধ তাঁর নজরে আসেনি। কলকাতায় বক্তৃতা দিতে আসা এক জাপানী বিজ্ঞানীর সাথে কথা বলেও তিনি একই কথা উপলব্ধি করেন। সেই বিজ্ঞানীর কথায় – “আমরা বিজ্ঞান বিদেশীর কাছে শিখেছি এবং হয়তো এতে সত্যকারের মৌলিক অবদান আমাদের খুব বেশী কিছু নেই – তবে যা আমরা শিখেছি, সবই জাপানীর উপযুক্ত রূপ দিয়ে তাকে আপনার করে নিয়েছি।” [১) ২৭৮] অথচ আমরা যদি ভারতের যে কোনও প্রাদেশিক ভাষার সাথে তুলনা করি তাহলে নিঃসন্দেহে বলা চলে যে জাপানী ভাষা আয়ত্ত করা তুলনামূলক ভাবে কঠিন। জাপানী ভাষায় অক্ষরসংখ্যা কয়েক হাজার। ফলে, আমাদের দেশে মাতৃভাষা আয়ত্ত করতে যেখানে খুব বেশী হলেও বছর দুই সময় লাগে সেখানে জাপানী ভাষা শিখতে সময় লাগে প্রায় ছয় বছর। তা সত্ত্বেও এই ভাষা সেদেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রধান মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। সুতরাং, বোঝাই যায় যে প্রশ্নটা হল সদিচ্ছার। সমস্যা হওয়া তো দূরের কথা, বরং, জাপানে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা যখন চালু হয়েছিল তখন বিজ্ঞান, দর্শন, কলাবিদ্যা ইত্যাদি বিষয় পড়ানোর জন্য শিক্ষক খুঁজে পেতে একেবারেই অসুবিধা হয়নি। জাপানে গিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসু দেখেছিলেন যে সেখানে ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে স্কুলে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। কম করে নয় বৎসর তাদের শিক্ষালাভ স্কুলে গিয়ে শিক্ষালাভ করতে হয়। পড়াশোনার খরচ বহন করে সেখানকার মিউনিসিপালিটি কিংবা আমাদের দেশের মতই জেলা অথবা রাজ্যসরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এছাড়াও, শিল্পকলা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান এবং উপরের দিকের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও খরচার ভার বহন করে জাপান সরকার। স্বভাবতই তিনি এই ব্যবস্থা দেখে ভীষণভাবে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন এবং চেয়েছিলেন যাতে আমাদের দেশেও এমনটা বাস্তবায়িত হোক। যদিও আমাদের শাসকশ্রেণী কোনোদিনই সে পথে হাঁটেনি। বিনা খরচার শিক্ষাব্যবস্থা তো অনেক দূরের কথা, বরং বিপরীত পথে হাঁটতে হাঁটতে সাধারণ জনগণের আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়ে আজ শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ বেসরকারীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ভারত আর জাপান এই দুই দেশে মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান আলোচনার সমসাময়িক অবস্থার একটা তুলনা পাওয়া যায় তাঁর জাপান ভ্রমণের অভিজ্ঞতার একটা ঘটনায়। তিনি লিখেছেন – “খবর পেলাম যে, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলাফল সম্পর্কে দু-জন ভারতীয় বিজ্ঞানীর ইংরাজীতে লেখা একটি বইয়ের জাপানী তর্জমা হয়েছে। আমায় জানানো হল ঐ বইটি বেশ ভালোই বিক্রী হয়েছে ছয় মাসে, প্রায় তিন হাজারের মত। শুধু জাপানী ভাষাই পড়তে পারেন এমন সাধারণ জাপানীরা পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলাফল জানবার জন্য বিশেষ উদ্বিগ্ন এবং হয়ত তাঁরা এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ ভারতীয় মতামতকেই বেশী বিশ্বাস করেন অন্যদের চাইতে। তবু আমাদের দেশে ঐ বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা ইংরাজীতেই লিখে চলেছেন ও তার ফলে তাঁদের দেশবাসীরা শতকরা ৮০ ভাগকেই অজ্ঞ রেখেছেন পারমাণবিক ভস্মপাতের বিপদ সম্পর্কে” [১) ৮৫]। সুতরাং, বর্তমান ভারতে জাদুগুড়া বা জাদুগুড়ার মত অন্যান্য তেজস্ক্রীয় ইউরেনিয়াম খনিতে আদিবাসীরা যে উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই খননের কাজ করে চলেছে, তেজস্ক্রীয় নিশ্বাস-জল-খাবার  যে তাঁদের জীবনটাকে প্রতি মুহুর্তে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে – তাতে আর অবাক হওয়া কিসের। ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রীয়তা সম্পর্কে কিছু মানুষকে অজ্ঞ করে রেখে যদি তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে পোখরানের মত “জাতীয় গৌরব” অর্জন করা যায় তাহলে আর মন্দ কি। এই তো ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত বিজ্ঞানী এবং আমলাতন্ত্রের মনোভাব! যেখানে বিজ্ঞানচেতনা দূরে থাক, সামান্য মানবিকতা বোধটুকুও নেই। এর বিরুদ্ধেই তো লড়াই ছিল সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মত বিজ্ঞানীদের। খুব কম জনেই তাঁর মত করে উপলব্ধি করে বলেছিলেন যে – “কেবলমাত্র বিদ্যা অর্জন ও জ্ঞানের অগ্রগতিতে সহায়তা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ হতে পারে না। জাতি, ধর্ম, মতবাদ, ধনী, দরিদ্র এবং সামাজিক ও বংশমর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষ যে মূলত এক, এই শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রচার করতে হবে। শেষ পর্যন্ত মানুষই যে পরম সত্য আমাদের সেই জ্ঞান হোক” [১) ৮৬]।


একথা সত্য যে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলনের পিছনে ব্রিটিশ শাসকদের একটা বড় ভূমিকা ছিল। তবে সেটা ছিল সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশদের নিজেদেরই স্বার্থে। ভারতের নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তিটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে একদিকে ব্রিটিশরা নিজের দেশে পুঁজিবাদী উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি করার জন্য ভারত থেকে অবাধ কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল, আর ব্রিটেনে তৈরী সামগ্রী বিক্রীর একটা বাজার তৈরী করেছিল এই দেশে। তার জন্য যেটুকু গঠনমূলক কাজকর্ম করার দরকার ছিল ঠিক সেটুকুই ব্রিটিশরা করেছিল। কিন্তু অনেকেই তলিয়ে সে কথা ভাবতে চান না। ফলে ইংরেজদের বিভিন্ন ‘অবদান’ সম্বন্ধে সেকালে অনেকের অন্ধ মোহ ছিল। এগুলোর মধ্যে একটা ছিল ইংরেজী ভাষার প্রতি মোহ, যার একটা বিরাট প্রভাব পড়েছিল এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায়। এমনকি স্বাধীনতার পরেও শিক্ষাব্যবস্থাকে এই ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে নতুন শাসকশ্রেণী উদ্যোগী হয়নি। এই বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর চিন্তাভাবনা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট। এমনকি ইংরেজী শিক্ষা কিভাবে কেবল একটা নির্দ্দিষ্ট শ্রেণীরই স্বার্থ রক্ষা করে এসেছে সে কথাও তিনি বলেছেন। তাঁর ভাষায় – “[আমরা] মনে করি বিদেশী ইংরাজ যে ভাবে শাসন করে এসেছে – সেই বোধ হয় নিপুণতার শেষ কথা, তাই ইংরাজ চলে গেলেও ইংরাজী ভাষার মোহ আমাদের কাটে নি। ... অনেকের মনে ধারণা আছে যে, ভারতের ঐক্য – এটা আমরা ইংরাজীর কল্যাণে বুঝতে শিখেছি। কাজেই ইংরাজী শিক্ষা কায়েম করলেই হয়তো সেই ঐক্য জ্ঞান অটুট থাকবে। তাঁরা ভেবে নিয়েছেন, দেশের মধ্যে শিক্ষিত-অশিক্ষিতের স্তর বিভেদ থাকবেই এবং উপরের স্তরে ইংরাজী জানালা দিয়ে যে যে জ্ঞান ঐ জানালা সমীপবর্তীদের উদ্ভাসিত করে তুলবে, তারই কিছু বুদ্ধিমানের মত নিম্নভাগে পরিবেশন করে নিজেদের স্বার্থবৃত্তি অনুযায়ী রঙ্গিন করে নিয়ে বর্ত্তমানে যে ধরনের স্তর বিন্যাস সমাজে আছে তা চিরন্তনী করে রাখতে পারবেন” [১) ২৭৬]। অন্যত্রও বিভিন্ন স্থানে তাঁর বক্তব্যে এরূপ শ্রেণীচেতনার আভাস পাওয়া যায়, এবং তিনি স্পষ্টই এব্যাপারে তাঁর মত পোষণ করে বলেছিলেন যে – “এইভাবে দেশের উন্নতি করা কষ্টদায়ক। তাছাড়া সকলের দায়িত্ব অল্পসংখ্যক লোকের একটি শ্রেণীর উপর চিরকালের জন্য চাপানো উচিত নয়। দেশের লোকের উচিত নিজেদের বোঝা নিজেদের বওয়া। আমরা পনেরো বছরেও এ কাজে বিশেষ এগোতে পারিনি” [১) ১০৮-১০৯]। বর্তমানে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান প্রকল্প তথা স্বপ্নের ‘হিন্দুরাষ্ট্র’-কে বাস্তবায়িত করার জন্য যাঁরা হিন্দি ভাষাটাকে সকল দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন তাঁদের পুরোধা মোদী আবার ২০১৮ সালের ১-লা জানুয়ারীতেই ঘোষণা করেছেন যে এই মহান বিজ্ঞানীর জন্মের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে যেন বছর ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনি হয়তো জানেন না যে যাঁরা সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে নাম পরিবর্তনের রাজনীতি করেন তাঁদের উদ্দেশ্যে এই মহান বিজ্ঞানী বলেছিলেন – “আমাদের দাবী হল শিক্ষিতদের উপর। তাঁরা চেষ্টা করুন দেশে নতুন যুগ যাতে আসে। শিক্ষার নতুন বাহন তাঁরা স্থির করুন। প্রদেশে প্রদেশে এমন ধরণের ব্যবস্থা চালু করুন যাতে তাড়াতাড়ি আমাদের দেশ থেকে অশিক্ষা অজ্ঞানতা দূর হয়ে যায়। এই সূত্রে ভাবোন্মাদীদের একটু সাবধান করে দিচ্ছি যে, শুধু একটা নাম খারিজ করে, একটা নাম কেটে দিয়ে, আর একটা নাম চালালেই আমাদের নতুন যুগের আহ্বান সার্থক হয়ে উঠবে না” [১) ১০৯]। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর এই সাবধানবাণী কোনও কালেই শাসকশ্রেণীর কর্ণগোচর হয়নি। আর বর্তমান শাসকশ্রেণী সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িক উস্কানি সমেত নাম পরিবর্তনের যে জঘন্য খেলায় মত্ত তাতে বোঝাই যায় যে অশিক্ষা অজ্ঞানতা দূর করার কোনও সদিচ্ছাই তাঁদের নেই, বরং এই অশিক্ষা অজ্ঞানতার উপর ভর করেই দেশজুড়ে তাঁরা তাঁদের নির্বাচনী রথযাত্রা সম্পন্ন করবেন বলে ঠিক করেছেন।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার বিষয়ে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদানের আলোচনাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় যদি আমরা বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ-এর কথা না বলি। ব্রিটিশ ভারতে ১৮৯৬ সালে বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইন্ডিয়ান অ্যাসোশিয়েশান ফর দি কালটিভেশান অফ সায়েন্স। কিন্তু তার ষাট বছর পরেও সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং তাঁর মত চেতনাসম্পন্ন বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করেছিলেন যে আধুনিক বিজ্ঞানের শিকরকে আশানুরূপভাবে সাধারণ জনগণের ভিতর গেঁথে দেওয়া যায়নি, এবং এর একটা বড় কারণ হল বিদেশী ভাষা। দেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর কোনওরকম সরকারী উদ্যোগের আগেই ১৯৪৭ সালের ১৮-ই অক্টোবর কলকাতায় একটা মিটিঙে প্রস্তাব আনা হয় যে এমন একটা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে যার উদ্দেশ্য হবে মাতৃভাষার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাকে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা। এই মিটিঙে সভাপতিত্ব করেছিলেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। মিটিঙে প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিক হয়েছিল – বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, এবং এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন ধার্য হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ২৫-এ জানুয়ারী। এই উপলক্ষ্যে একটা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল – “বর্তমান জগতে জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই আমাদের বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে হচ্ছে, অথচ বৈজ্ঞানিক শিক্ষা-দীক্ষা এমনভাবে চালিত হচ্ছে না যাতে আমরা আমাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানসম্ভার জীবনের দৈনন্দিন কাজে সুচিন্তিতিভাবে ব্যবহার করতে পারি। এর প্রধান অন্তরায় ছিল বিদেশী ভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা।” এই অন্তরায়কে অতিক্রম করার জন্য পরিষদের তরফ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি-তে কিছু উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়েছিল যেখানে মাতৃভাষাকে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যম হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। যেমন – “স্কুল ও কলেজের পাঠ্যবস্তু সহজ ও সরল ভাষায় বৈজ্ঞানিক যথাযথতা অক্ষুণ্ণ রেখে বিভিন্ন পরিবেশে সুখপাঠ্য ও চিত্তাকর্ষক করে প্রকাশ করা”, “বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক শিক্ষা প্রচার ও প্রসারের জন্য ও তার পথের বাধা-বিপত্তি দূর করার জন্য বাৎসরিক সম্মেলন আহ্বান করা এবং বৎসরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা-মূলক অথচ জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর প্রদর্শনী ও তৎসংক্রান্ত বক্তৃতার ব্যবস্থা করা” [২) ৯৯] ইত্যাদি। এই পরিষদের তরফ থেকে বাংলায় ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা হয়। বিজ্ঞান সাহিত্য রচনায় বাংলাকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে সত্যেন্দ্রনাথ বসু-র এতটাই আগ্রহ ছিল যে হাইড্রোডায়নামিক্‌স-এর মত পদার্থবিজ্ঞানের কঠিন বিষয়গুলোও তিনি বাংলায় প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। বাংলায় তাঁর প্রথম বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ‘পরিচয়’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যায়, ১৯৩১ সালে। এমনকি ক্লাসেও মাঝেমাঝে তিনি বাংলাতে বক্তৃতা দিতেন। একবার সাহা স্মৃতি বক্তৃতাতে কসমোলজিতে সর্বাধুনিক ধারণার কথা তিনি বাংলাতেই আলোচনা করেছিলেন। সুতরাং, শুধু তত্ত্বে নয়, মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চাকে প্রয়োগের স্তরেও তিনি কার্যকরী করেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় তাঁর অধিকাংশ বক্তৃতাই হয় সংরক্ষণ করা হয়নি, বা হারিয়ে গেছে। কোনোদিন কোনও তৈরী বক্তৃতা থেকেও তিনি পড়েন নি, ফলে তার পান্ডুলিপি থাকারও কোনও সম্ভাবনা নেই। এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যে সামান্য কিছু উৎসের সন্ধান পাওয়া গেছে তার থেকেই “মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা”-র বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা গুলোকে তুলে ধরার একটা চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রবন্ধে। এই মহান ব্যক্তিত্বের ১২৫-তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে, আসুন সকলে মিলে তাঁকে স্মরণ করি তাঁর চিন্তাভাবনার মধ্যে দিয়ে, এবং আলোচনা করি কিভাবে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চাকে তত্ত্বের গন্ডি পেরিয়ে প্রয়োগের বাস্তব ক্ষেত্রে নিয়ে এসে জনগণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার সঞ্চার ঘটানো যায়। তবেই স্বার্থক হবে তাঁকে স্মরণ করাটা।

তথ্যসূত্র –

১) সত্যেন্দ্রনাথ বসু রচনা সঙ্কলন – বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ

২) সত্যেন্দ্রনাথ বোস – শান্তিময় চট্টোপাধ্যায় ও এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929