কর্পোরেট রাষ্ট্র ও শিক্ষাব্যবস্থা

তন্ময়


Nov. 21, 2024 | | views :286 | like:0 | share: 0 | comments :0

যে রাষ্ট্র কর্পোরেট পুঁজির নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে এবং কর্পোরেট পুঁজিকে নিরাপত্তা প্রদান করে সেই রাষ্ট্রের অপর নাম কর্পোরেট রাষ্ট্র। ফ্যাসিস্ট শক্তি বিজেপি কর্পোরেট রাষ্ট্রেরই সমর্থক তা তাদের দেশ চালনার অর্থনৈতিক নীতির অভিমুখ দেখলেই বোঝা যায়। সরকারি ক্ষেত্রগুলো সংকুচিত করার সাথে সাথে ঢালাও বেসরকারিকরণ সেই নীতিরই অংশ। অন্যান্য ক্ষেত্রের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় প্রাইভেট উদ্যোগের পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যেই প্রনয়ণ জাতীয় শিক্ষানীতির। 

জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের আগামী পরিকল্পনা হচ্ছে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় গুটিয়ে আনার জন্য ধীরে ধীরে সরকারি বিদ্যালয় থেকে হাত তুলে নেওয়া।

গত ১৬ ই এপ্রিল আসামের মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষকদের নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে ফাঁস করেছিলেন এই সত্যটা। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে আগামী এক দশক পর আর সরকারি বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব থাকবে না। অর্থাৎ ফেলো কড়ি, মাখো তেল। টাকা দাও, পন্য (শিক্ষা) নাও। যাদের যথেষ্ট পয়সা নেই তাদের শিক্ষার অধিকারও নেই।

“ইউনাইটেড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন” বিভাগ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোট ৫১০০০ সরকারি বিদ্যালয়(৪.৭৮ শতাংশ)। ওই বছরে বেসরকারি বিদ্যালয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৭৩৯ টি।

মৌলিক অধিকার “শিক্ষা” আজ বাজারের পণ্য। 

টাইমস অফ ইন্ডিয়া, রাইজিং কাশ্মীর, হিন্দুস্থান টাইমস, কাউন্টার ভিউ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী উত্তরাখণ্ডে মোট ১৫০০ কাশ্মীরে ১২০০ গুজরাটে ৫০০ ওড়িশায় ১২০০ হরিয়ানায় ২৫০০ ত্রিপুরায় ৯০০ উত্তরপ্রদেশে ২৬০৭৪ মধ্যপ্রদেশে ২২৯০৪ টি বিদ্যালয় একত্রীকরণ এবং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও কয়েক হাজার বিদ্যালয়। এর মধ্যে ওড়িশায় আরও ১৪০০০টি এবং মধ্যপ্রদেশে আরও১০০০টি বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য।

জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী রাজ্য সরকারগুলিকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের একত্রীকরনের মাধ্যমে স্কুলের সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। একই সঙ্গে খবরে প্রকাশ স্কুল একত্রীকরণ ও বন্ধ করে দেওয়ার পর অবশিষ্ট স্কুলের অর্ধেক পরিচালিত হবে "Mission School of Excellence" নামে একটি প্রকল্পের অধীনে। 'বিশ্ব ব্যাঙ্ক' এবং 'এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কের' যৌথ নিবেশের মাধ্যমে চলবে এই প্রকল্প।

এর থেকেই স্পষ্ট হয়, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধীরে ধীরে হাত তুলে নিচ্ছে সরকার। উৎসাহ পাচ্ছে বেসরকারী সংস্থাগুলো। 

২০২১ এর ৭ই সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলের শিক্ষকদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়া উন্নত করা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরকারী স্কুলগুলোকে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার জন্য পিপিপি মডেল অনুসরণ করার কথা বলেন।

ব্যাতিক্রম হতে পারল না কেরালার বামপন্থী সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের খসড়া পরিকল্পনা পেশ করেন পার্টির রাজ্য সম্মেলনে। এই বিষয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে পার্টির রাজ্য সম্পাদক বালাকৃষ্ণান জানান সিপিএম বেসরকারিকরণের বিরোধী নয়, যদি সেটা সরকারি নিয়ন্ত্রণে হয়। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, গেরুয়া সব রঙ আজ একাকার কর্পোরেটের নির্দেশিত পথে পা মেলাতে।

শিক্ষার চৌকাঠে পা আটকে শুধু অগণিত নিম্নবিত্ত মানুষদের।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929