কলকাতার জলাভূমি এবং এক পরিবেশবিদ।

সৌরদীপ চ্যাটার্জী


Nov. 18, 2024 | | views :9716 | like:56 | share: 253 | comments :0

আপাতত টিভি আর খবরের কাগজ খুললেই দেখা যাচ্ছে, বন্যায় ভেসে যাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গ। দামোদর, অজয়, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ—রাঢ়বঙ্গের আপাত নিরীহ নদীগুলি রীতিমত ফুঁসছে! কলকাতায় কিছুদিন আগে অবধি বিভিন্ন জায়গায় জল জমে ছিল, সেই জল থেকে তড়িদাহত হয়ে দু’টি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটল। সবাই দেখছেন, হইহই করছেন, ফেসবুকে ‘দুয়ারে দীঘা’, ‘লন্ডন বানাতে গিয়ে ভেনিস’ ইত্যাদি ক্যাপশন জুড়ে দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে আনন্দবাজারের ভেতরের পাতায় একটা ছোট্ট খবর বেরিয়েছিল। “বেআইনি দখলদারির চোটে আন্তর্জাতিক মর্যাদা হারানোর আশঙ্কা পূর্ব কলকাতা জলাভূমির”। কেউ দেখেছিলেন এবং সেই নিয়ে হইচই করেছিলেন বলে মনে পড়ে না।

এইভাবেই সামনে আসে ফলাফল, পেছনে থেকে যায় কারণগুলো।

জলাভূমিতে ভৌতিক রহস্য বা আলেয়ার গল্প আমরা ছোটবেলায় অনেক শুনেছি! কিন্তু গোটা জলাভূমিটাই যদি হয়ে ওঠে এক রহস্য? এরকমই এক রহস্যময় জলাভূমি হল ‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি’। যারা নলবন বা নুনের ভেড়িতে শীতকালে সামান্য উষ্ণতার খোঁজে পিকনিক করতে যান, তারা হয়ত জানেনই না, জায়গাটা একটি আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত ‘সাইট’; শুধু তাই নয়—বাংলা বা ভারতে নয়, সারা পৃথিবীরই একটি বিরল বিস্ময়! খুব সামান্য কয়েকজন হয়ত নামটা জানেন—‘রামসার সাইট!’ জলাভূমি সংরক্ষণ নিয়ে পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ আন্তর্জাতিক চুক্তি। ইরানের একেবারে উত্তরে, কাস্পিয়ান সাগরের তীরে পাহাড়ে ঘেরা রুক্ষ ছোট্ট শহর রামসার, হাজার তিরিশ মত লোকের বসবাস। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে এখানেই বসেছিল জলাভূমি নিয়ে এক আন্তর্জাতিক বৈঠক। তখনও ইরান শাহের অধীনে। ইরান সরকার বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, প্রাথমিকভাবে ঠিক ছিল বৈঠক হবে কাস্পিয়ান সাগরের তীরে অন্য এক শহরে—নাম বাবোলসার। কিন্তু ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে সিদ্ধান্ত বদলে বৈঠক সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ১৭৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, রামসারে। মাত্র ১৮ টি দেশ প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল, আশ্চর্যজনকভাবে, তাতে ছিল ভারতও। তখন রামসারে এয়ারপোর্টও ছিল না। তেহরানে সবাই জমায়েত হলেন, তারপর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হল প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে। সম্মেলন শুরু করলেন খোদ ইরানের রাজপুত্র, আবদুল রেজা পহলভী। ৩ ফেব্রুয়ারি সেই সম্মেলনে একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার স্বাক্ষরিত হল—যে শহরের নামও কেউ জানত না, সেই শহরের নামে তার নাম হয়ে গেল ‘রামসার কনভেনশন অফ ওয়েটল্যান্ডস’। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১৭১, সদর দফতর সুইজারল্যান্ডে।

বর্তমান ভারতে রামসার সাইটের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। তালিকায় আছে চিলিকা হ্রদ, মণিপুরের লোকটাক হ্রদ, কোল্লেরু হ্রদ, লোনার ক্রেটার, ভিতরকণিকা, কাশ্মীরের উলার হ্রদ। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আছে দু’টি। দ্বিতীয়টি আয়তনে ভারতের বৃহত্তম রামসার সাইট—সুন্দরবন। সুন্দরবন বহুল আলোচিত, চর্চিত এবং দর্শিতও। সারা বছর দেদার লোক বেড়াতে যান, পাঠ্যবইতে বাচ্চারাও পড়ে সুন্দরবনের গুরুত্ব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রথম রামসার সাইটটি আমাদের চোখের সামনেই যেন অদৃশ্য হয়ে রয়েছে।

অদৃশ্যই বটে। কারণ আজ থেকে মাত্র তিরিশ বছর আগেও পুরোটাই ছিল রহস্যে ঘেরা। কীরকম রহস্য? প্রকৃতির এক বিচিত্র রহস্য! ভৌগলিকভাবে কলকাতা ভারতের অন্যতম নিচু শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাপলে চার-পাঁচ মিটারও হবে কিনা সন্দেহ! কলকাতার পশ্চিমে গঙ্গা, অথচ শহরের ঢাল পুবে। প্রতিদিন শহরে প্রায় সাতশো মিলিয়ন লিটার তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় শহরে এই পরিমাণ বর্জ্যকে সাফাই করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিকাশি প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়। কলকাতায় এমন একটিও ‘প্ল্যান্ট’ নেই। ছিলও না কোনোকালে। শহরও অত্যন্ত নিচু অববাহিকায়। তারপরেও, নোংরা জলে সেরকম বিশাল মাপের দূষণের কোনও খবর আসে না। তাহলে ওই অতখানি নোংরা জল যায় কোথায়?

ওপরের পুরো প্রশ্নটা আসলে বর্তমানকালের নয়, হবে অতীতের হিসেবে। সময়টা আশির দশক। প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল একজন সরকারি অফিসারের মাথায়। তিনি ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ। পেশায় রাজ্য সরকারের ইঞ্জিনিয়ার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র—ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পাশাপাশি রীতিমত ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যায় পিএইচডি। রাজ্যে তখন সদ্য এসেছে বামফ্রন্ট সরকার। তাদেরই নির্দেশে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমে পড়েছিলেন ধ্রুবজ্যোতিবাবু। চারিদিকে অনুসন্ধান চালালেন। নিকাশি প্ল্যান্টের কার্যপদ্ধতি বুঝতে মুম্বইয়ের ‘দাদার সিউয়েজ প্ল্যান্ট’ ঘুরে দেখে এলেন। কিন্তু কোথাও কিছুই জানা গেল না। কলকাতার বর্জ্য জলের নিকাশি কোথায়, কলকাতার কেউ জানে না। সেই জল কোথায় যায়—তাও কেউ জানে না। অন্যান্য শহরে যে জলের নিকাশিতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, কলকাতায় যেন সেই জল ম্যাজিকের মত ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যায়। শেষে একদিন তিনি নেহাতই ঘটনাচক্রে নিকাশি নালা আর খাল ধরে এগনো শুরু করলেন। দেখতে চান, নালাগুলো যায় কোথায়! এই উত্তর খুঁজতে গিয়েই ধ্রুবজ্যোতিবাবু হাজির হলেন কলকাতার পুবপ্রান্তের এই জলাভূমিতে। আপাতভাবে দেখলে মনে হয় জলাজমি—আমাদের ভাষায়, ‘নুনের ভেড়ি’—কোনো কাজে আসে না। তখন ওইসব এলাকা একেবারেই অনুন্নত, সামান্য রাস্তাঘাটও নেই। কিন্তু সেখানেই ধ্রুবজ্যোতিবাবু পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো শুরু করলেন। ফলাফল দেখে রীতিমত ‘চক্ষু চড়কগাছ’ অবস্থা। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধ্রুবজ্যোতিবাবু জলের মতই সহজ করে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। “বর্জ্যজল আসলে কিছুই না, ৯৫% জল এবং ৫% জীবাণু। এই বিশাল জলাভূমিতে ওই বর্জ্যজলের জীবাণু জলজ বাস্তুতন্ত্রে শৈবাল ও মাছের খাদ্যে পরিণত হয়। ফলে স্রেফ প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রেই সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে ও সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় পুরো জল পরিশুদ্ধ অবস্থায় চলে আসে, বিপুল মাছের ভাণ্ডার তৈরি করে—পুরোটাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে—বিন্দুমাত্রও শোধন করাতে হয় না!”

প্রায় একার চেষ্টায় ধ্রুবজ্যোতিবাবু কলম্বাসের মত নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন শহরের পুবপ্রান্তের এই বিশাল জলাভূমিকে। যদিও ব্যাপারটা বিশ্বাস করাতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তাঁকে। ততদিনে সেই অগভীর জলাভূমির বেশ খানিকটা ভরাট করে সল্টলেক তৈরি হয়ে গিয়েছে। তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। তবে জলাভূমির গুরুত্বটা তিনিও বুঝতে পারেননি। তবু গঙ্গা থেকে পলি তুলে সেই লবণ হ্রদের প্রায় অর্ধেকটা ভরাট হয়েছিল, বাকিটা ডাক্তার রায় ছেড়ে রেখে দেন। ডাচ সংস্থা নেডেকো ও একদল যুগোস্লাভ ইঞ্জিনিয়ার দুর্দান্ত পরিকল্পনা করে নগর ‘ডিজাইন’ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন বসেছিল সল্টলেকে, সভাপতি ছিলেন ভাবী রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর থাকার জন্য তৈরি হয়েছিল ছোট্ট একটি বাংলো, নাম দেওয়া হয় ‘ইন্দিরা ভবন’। কিন্তু সেই ইন্দিরা ভবনের পরবর্তী বাসিন্দা—মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু—ক্ষমতায় আসতেই গোলমাল শুরু হয়। ডাঃ রায় ইউরোপের ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে এলাকা পরীক্ষা করিয়েছিলেন, কিন্তু বিলেত-ফেরত জ্যোতিবাবুর অত ধৈর্য ছিল না। ফলে সল্টলেকের আকার বাড়তে শুরু করল, শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ। তখন জোর যার মুলুক তার। প্রোমোটারি শক্তি পাখনা মেলছে। ১৯৯০ সাল নাগাদ জ্যোতিবাবুর সরকার ঘোষণা করেন—ওই জলাভূমি বুজিয়ে একটা বিশাল বড় বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। রাজ্য সরকারের কর্মী ধ্রুবজ্যোতিবাবু চাইলেও তার বিরোধিতা করতে পারবেন না। অতএব তাঁর পরামর্শে হাইকোর্টে মামলা করল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'PUBLIC' (People United for Better Living in Calcutta)। ১৯৯২ সালে দেশের অন্যতম প্রথম পরিবেশবান্ধব রায়টি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট—বিচারপতিরা ঘোষণা করলেন, ওই জলাভূমি বোজানো চলবে না, তাকে সংরক্ষণ করতে হবে।

ততদিনে জলাভূমি সংরক্ষণেই মনপ্রাণ সঁপে দিয়েছেন ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ। সরকারকে বোঝানোর বহু চেষ্টা করেছিলেন। সটান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে দরবার শুরু করেন তিনি। একদিন মুখ্যমন্ত্রীকেই তিনি নিয়ে যান সেখানে। তারপর জলের গুরুত্ব ও প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই সেই তথাকথিত ভেড়ি বা নোংরা জলাভূমি থেকে এক গ্লাস জল তুলে ঢকঢক করে খেয়ে নেন। হাঁ হাঁ করে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। আশেপাশে যাওয়ার মত কোনও পায়খানাও নেই। পেটখারাপ অনিবার্য। কিন্তু কিছুই হল না। ধ্রুবজ্যোতিবাবু দেখিয়ে দেন, ওই জল খেলেও কিছুই হবে না। ওই জল প্রাকৃতিকভাবে পরিশুদ্ধ।

সম্ভবত—ওই জলাভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক জলশোধক! 

লেখালেখি করতে ভালবাসতেন ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ। শুরু করেন পূর্ব কলকাতার জলাভূমি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে লেখালেখি। তাঁরই প্রায় একক চেষ্টায় খবর পৌঁছয় সুইজারল্যান্ডে, আন্তর্জাতিক জলাভূমি সংরক্ষণ সংস্থার দফতরে। আসেন বিদেশী বিশেষজ্ঞরা। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সকলেই। কারণ এরকম প্রাকৃতিক শোধন ভারত কেন, গোটা দুনিয়াতেও দ্বিতীয়টি নেই। নিজেদের জ্ঞাতে বা অজান্তেই ইংরেজরা এমন একটি জায়গাকে নিজেদের উপনিবেশের রাজধানী বানাতে বেছে নিয়েছিল, যার একদিকে গঙ্গার প্রবাহ, অন্যদিকে প্রাকৃতিক জলাভূমি। কলকাতা ময়দান যদি কলকাতার ফুসফুস হয়, তাহলে এই জলাভূমিই হবে তার কিডনি। অবশেষে ২০০২ সালে এল সেই সুখবর। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ‘রামসার সাইট’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হল এই পূর্ব কলকাতা জলাভূমি।

স্বীকৃতি এলেও ধ্বংসলীলা থামেনি, চলেছে বছরের পর বছর ধরে। প্রায় তিরিশ হাজার মানুষের জীবিকা সরাসরিভাবে জড়িত এই জলাভূমির সঙ্গে। আজও আমরা জানিই না, রোজ গরম গরম ভাতের সঙ্গে পাতে যে মাছের ঝোল বা ঝাল খাই, তার বেশিরভাগটাই আসে আসলে এই ভেড়ি থেকে। পাশাপাশি, বিপুল পরিমাণ শাকসবজির জোগান দেয় এই এলাকা। স্রেফ এই কারণেই ভারতের সমস্ত মহানগরের মধ্যে বাজার খরচের ব্যাপারে সবচেয়ে সস্তা আমাদের কলকাতা। পাশাপাশি, বিপুল পরিমাণ অক্সিজেনের জোগানও দেয় এই জলাভূমি। কার্যত একটি পয়সাও খরচ না করে দূষিত জল নিয়ে সে ফেরত দেয় টাটকা জল, মাছ, শাকসবজি, অক্সিজেন। 

এবং এর সবচেয়ে রহস্যময় ভূমিকা হল বন্যা নিয়ন্ত্রণ। যে বিপুল পরিমাণ জলে প্রতিদিন ভেসে যেতে পারত কলকাতা, তার বেশিরভাগটাই টেনে নেয় এই জলাভূমি, তারপর অবশিষ্ট চলে যায় বিদ্যাধরী নদীতে। তাই অন্তত বছর দশেক আগে অবধি মুম্বই বা চেন্নাই নিয়মিত বন্যায় ভেসে গেলেও দিব্যি টিকে যেত কলকাতা। 

আজ ভেঙে পড়েছে পুরো ব্যবস্থাটাই। চলছে যথেচ্ছ প্রোমোটিং, জলাভূমি ভরাট, নগরায়ণ। চলছে দূষণ। ফলে নজিরবিহীন সংকটের মুখে পূর্ব কলকাতার এই জলাভূমি। প্রকৃতি সামান্য রুষ্ট হলেই আজ ভেসে যাচ্ছে কলকাতা। জমা জলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, জলবাহিত ও মশাবাহিত রোগ বাড়ছে। অজানা জ্বরে হাসপাতাল উপচে পড়ছে। ড্রেনগুলো অবরুদ্ধ। জলে তড়িদাহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রোজকার সান্ধ্য আড্ডায় উঠে আসে অনেক ভারি ভারি প্রসঙ্গ—লকগেট কখন খুলবে, কর্পোরেশন পাম্প চালাচ্ছে না কেন ইত্যাদি। অথচ এইগুলোর কোনোটাই যে স্থায়ী সমাধান নয়, তা আমজনতা বুঝতে চান না, রাজনীতিবিদরা বুঝতে দেন না। কারণ বুঝতে দিলে তাঁদের বিপদ। রাজনীতির নেতাদের ব্যবসাটাই দাঁড়িয়ে আছে এই জলাভূমি ভরাটের ওপর। পূর্বতন বাম জমানায় যা ছিল, বর্তমান ঘাসফুল জমানায় তা তেড়েফুঁড়ে বেড়েছে। সরকারের হেলদোল নেই। সম্ভবত সরকার যারা চালান, তাঁদের এতটা গভীরে গিয়ে ভাবার মতও বিদ্যে নেই। বা বলা ভাল, ভাবার দরকারও নেই। এই পাম্প করে জল বের করা বা রাস্তা খুঁড়ে বছরের পর বছর পাইপ বসিয়ে চলা বা লকগেটের ওপর নির্ভর করা—এগুলি সবই আসলে ‘ডায়ালিসিস’ পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে কৃত্রিমভাবে রক্ত পরিশোধন করে কিডনির কাজ চালানো হয়। সকলের অলক্ষ্যে ক্রমশ পাঁক জমে, দূষিত ও বিষাক্ত রাসায়নিক জমে ও ভরাট হয়ে বিকল হয়ে পড়ছে কলকাতার আসল সেই ‘কিডনি’—এই জলাভূমি। 

জলাভূমি নিয়ে আন্দোলন আমৃত্যু চালিয়ে গিয়েছেন ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ। একাধিক বই লিখেছেন, তার মধ্যে ‘ইকোলজি অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল ওয়েটল্যান্ড প্র্যাকটিস’ বইটি কার্যত এই বিষয়ের ‘ইউজার ম্যানুয়াল’ হতে পারে। বইটি সম্ভবত আজ আর পাওয়া যায় না। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে জলাভূমি বা ‘ওয়েটল্যান্ড’-এর সংজ্ঞা, ব্যবহার, বিস্তার, প্রায়োগিক দিক ইত্যাদি সবই ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে মুখবন্ধ লিখে দিয়েছিলেন ভারতের এক প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী। লিখেছিলেন—“...অমর্ত্য সেনের ‘ওয়েলফেয়ার ইকনমিক্স’-এর মতই ধ্রুবজ্যোতি ঘোষের এই আন্দোলনের নাম দেওয়া যেতে পারে ‘ওয়েলফেয়ার ইকোলজি’...”। লেখক—ভারতীয় সবুজ বিপ্লবের জনক প্রোফেসর এম এস স্বামীনাথন। 

দূর্ভাগ্য যে, তাঁর কথা অমান্য করার ফল কী হতে পারে, তা বহু আন্তর্জাতিক সম্মানে সম্মানিত ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ আর দেখে যেতে পারলেন না। ২০১৮ সালেই তিনি বিস্মৃতলোকে গমন করেন।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929