মন্ত্রপূত লটারির টিকিট

সন্তোষ শর্মা


Nov. 18, 2024 | | views :113 | like:2 | share: 2 | comments :0

লটারি! অনেকে লটারির টিকিট কেটে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। মাঝে-মঝেই খবর আসে অমুক ব্যাক্তি লটারিতে কোটি টাকা পেয়েছে। এই খবরে উৎসাহিত হয়ে আরও বেশি বেশি করে লোক লটারির টিকিট কেটে নিজের রক্ত জল করে উপার্জিত টাকা পয়সা ধ্বংস করতে থাকেন। এখানেই শেষ নয়, অনেকে আবার কোনও জ্যোতিষ বা  তান্ত্রিকের খপ্পড়ে পড়ে মন্ত্রপূত লটারির টিকিট কেটে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেনে। আমার মেজ মামা নির্মলের ছেলে রাজীব কোটিপতি হওয়ার জন্য এক তান্ত্রিকের খপ্পড়ে পড়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা গাচ্ছা দেয়। শেষে প্রতারণার শিকার হয়ে মামাত ভাই রাজীব ঐ তান্ত্রিকের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য আমরা হাত-পা ধরে। প্রতারক তান্ত্রিকের কাছ থেকে ভাইয়ের টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে সে কি ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলাম , তা এখানে লিখছি।

রাতে আমার পত্রিকা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখি মেজ মামা নির্মল, মামি এবং তাঁদের ছেলে রাজীব এসেছে। মামারা আমার মা মিথলেশ দেবীর সঙ্গে গল্প করতে মশগুল। এই মামাকে দেখেই মনের কোণে সন্দেহ দেখা দিলে, “আবার কোনও নতুন ফন্দি নিয়ে মামা, মামি ও ভাই এসেছে। এর আগেও যখনই মামার বাড়িতে পা রেখেছে, তখনই আমাদের কোনও ক্ষতি হয়েছে।  এই কারণেই আমি মামার বাড়ির কাউকে এক চোখেও দেখতে চাই না।”

আমাকে নিজের ঘরে ঢুকতেই মামা নির্মল বলে উঠলেন, “আমার সবথেকে প্রিয় ভাগ্না সন্তোষ। পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করছে। শুনেছি ভাগ্না নাকি এখন ভূত-প্রেত, জ্যোতিষ, ওঝা- তান্ত্রিক, বাবাজীদেরকে জব্দ করে।”

মামার মুখে এমন কথা শুনে একটু আবাক হলাম। আমি ওঝা- তান্ত্রিককে জব্দ করি, এই কথা কি করে জানল? ওহ ! আমার ফেরার আসেই মায়ের সঙ্গে গল্পের ছলে আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নিয়েছে। একবার কি মামা কোনও ওঝা বা তান্ত্রিকের খপ্পড়ে পড়েছে? এবং উদ্ধারের জন্য আমার কাছে ঘ্যান-ঘ্যান করবে?”

মামি মুখ ভার করে বললেন, “তোমার ভাই রাজীব খুব বোকা। এক তান্ত্রিকের চক্করে পড়ে বাড়িতে জমানো ২৫ হাজার টাকা খুইয়ে এসেছে। তুমি দেখো না, ঐ তান্ত্রিকের কাছ থেকে টাকাগুলি উদ্ধার করে দিয়ে পারো কি না।”

শুনেই আমার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠল। রেগে গিয়ে মামিকে মুখের উপর বলে ফেললাম, “রাজীব যখন অমুক তান্ত্রিককে কি কারণে অতো টাকা দিয়ে গিয়েছিল তা আমি জানি না। তান্ত্রিককে টাকা দেওয়ার আগে কি ভাই আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিল কি? এখন কেন আমাকে টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য বলছ।

আমার হাত ধের মাম বললেন, “অমন করে রাগ করো না।  তুমি আমাদের সব থেকে প্রিয় ভাগ্না। বিপদে পড়ে তোমার কাছে এসেছি। দেখো কিছু করতে পারো কি না?”

“আমি এই সবের মধ্যে নেই। যদি টাকা উদ্ধার করতে চাও তাহলে তোমার ঐ তান্ত্রিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করো।”আমি বললাম।

মামি বললেন, “আমার মুখ্য-সুখ্য মানুষ। এক অক্ষর লেখাপড়া করিনি। পুলিশের নাম শুনলেই ভয় করে। থানায় অভিযোগ করতে জানলে কি শিক্ষিত ভাগ্নের কাছে ছুটে আসতাম?”


বললাম, “যাই বল।  ভাই যে বকামি করেছে, তার ভাগিদার আমি কেন হব?”

ভাই রাজীব বললেন, “সন্তোষ দা, আমি বুঝতে পারিনি। ভুল করেছি। এবার তো সাহায্য করবে না?”

ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, “ঠিক আছে। বল কি হয়েছিল? কেন তুই তান্ত্রিককে এতো টাকা দিতে গেলি?”

রাজীব জানল, “আমি কোটিপতি হওয়ার জন্য অনেক টাকার লাটারির টিকিট কেটেছি। কিন্তু  লাটারিতে এক টাকাও জিততে পারিনি। এক দিন বাহাদুর নামে একজন লোকের সঙ্গে বান্ধুত হল। সে  তোমার বাবার সঙ্গে ঘুরে-বেড়ায়। তাঁর বয়স প্রায় ৩৫ –এর কাছাকাছি।”

আমি লটারি কেটে কোটিপতি হতে চাই। এই কথা জানারা পর বাহাদুর বললে, “ধুর বোকা। ঐ ভেবে টিকিট কাটলে কেউ কোটিপতি হয় না। আমি এমন একজন তান্ত্রিক বাবাজীকে জানি তিনি তোর কপাল পাল্টে দিতে পারনে। তাঁর কাছে যেই গেছে,ল লাভবান হয়েছে। তুইও চল। ফল হাতেনাতে পাবি।”

বাহাদুরের কথা বিশ্বাস করে ওঁর হাত ধরে এক তান্ত্রিকের বাবাজীর কাছে গেছিলাম। আমার কথা শুনে বাবাজী বলল, “লটারির টিকিট কেটে কোটিপতি হওয়া মুখের কথা নয়। এটা কপালের ব্যাপার।  তোর কপালেই কোটিপতি লেখা আছে। কিন্তু পাথে বিশাল বাঁধা। সেটাকে পার করতে পাড়লেই কেল্লাফতে। তুই কি লাখপতি-কোটিপতি হতে চাস? “

মাথা নেড়ে বললাম, “হ্যাঁ, বাবাজী। আমি অনেক টাকা চাই।”

“তুই যদি লটারি কেটে কোটিপতি হতে চাস তাহলে তোর নামে একটা যজ্ঞ করে করতে হবে। যজ্ঞে একটি লটারির নাম্বার উঠবে। সেই নাম্বারেই কোটি টাকা উঠে আসবে।”

বোকার মত জিগ্যেস করলাম, “মানে যজ্ঞ করে নাম্বার উঠবে এবং তাতেই কোটিপতি হয়ে যাবো?”

“হ্যাঁ রে টাকার লোভী। হাত বাড়ালেই কি টাকা পাওয়া নারে বোকা। এর জন্য অনেক সাধনা করতে হয়।”বাবাজী বললেন।

বাবাদুর বোঝাল, “দেখ রাজীব। তুই এতদিন লাটারির টিকিট কেটে কেটে অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করেছি। বাবাজী যখন বলছেন, তাহলে আর একটু টাকা খরচা করতে আসুবিধে তো নেই। তাই বলছি, বাবাজীর যা বলছেন মন দিয়ে শোন। যখন কোটি টাকা পাবি তখন এই বাহাদুর কাকার কথা মনে পড়বে না।”

তান্ত্রিকের কথা শুনে দিনের বেলায় চোখের সামনে টাকার বান্ডিল দেখতে লাগলাম। ভাবছি সত্যি যদি লাটারির টিকিট কেটে কোটি টাকা জিততে পারি তাহলে একটা চার চাকার গাড়ি কিনবো।

তান্ত্রিক বললেন, “কিরে খোকা কি ভাবতে শুরু করেছিস। তোর সব স্বপ্ন পূর্ণ হবে রে।”

“বাবাজী বলুন, আমাকে কি করতে হবে?”আমি জিগ্যেস করলাম।

তান্ত্রিক বললেন, “একটি যজ্ঞ করতে হবে। এর জন্য ২৫ হাজার টাকা লাগবে। পারবি কি এতো টাকা দিতে?”

মাথা চুলকিয়ে বললাম, “বাবাজী এতো টাকা এখন কোথা থেকে পাবো?”

“দেখ এটা তোর ব্যাপার। তুই যদি পারিস তাহলেই যজ্ঞ করা সম্ভব। তুই যখন আমার চ্যালা বাহাদুরের সঙ্গে এসেছিস। তাই তোকে একসঙ্গে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে না। তুই এখন শুধু যজ্ঞের সামগ্রি এবং আগিম ৫ হাজার টাকা দে। তার পার বাকি কাজের জন্য টাকা দিবি। এবার বল?”বাবাজী বললেন।

“ভালো উপায় কথা বলেছেন বাবাজী। দেখ রাজীব আমার জন্য তোকে অনেক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ভেবে দেখ এখন কি করবি? বাহাদুর বললেন।

বাহাদুরের উপর বিশ্বাস করে আমি তান্ত্রিককে যজ্ঞের সামগ্রী এবং অগ্রিম ৫ হাজার টাকা দিলাম।

এক অমবস্যার রাতে বাহাদুরে সঙ্গে ঐ তান্ত্রিকের আশ্রমে গেলাম। তান্ত্রিক যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞ বেদী থেকে ছাইভস্ম তুলে আমার কপালে ঘষে দিলেন। এবং তান্ত্রিক বললেন, “আসছে পূর্ণিমাতে তুই লটারির এক বান্ডিল টিকিট কিনবি। তার মধ্যেই একটি টিকিটে কোটি টাকার পুরষ্কার উঠবে।”

তান্ত্রিকের কথামত আমি পাড়ার ফুটপাতের দোকান থেকে কয়েকশো টাকার লটারির টিকিট কিনে আনলাম। আনন্দে দিশেহারা। উফ আর কিছু দিন। লটারি খেলার ফল বেরোলেই কোটি টাকা পাবো।


দুদিন পর।

আমার সব টাকা মাটি হয়ে গেল। লটারি খেলার ফল প্রাকশিত হল। কিন্তু আমি এক টাকাও পেলাম না। সব টিকিট বেকার হয়ে গেল। আমি নিরশ হয়ে বাহাদুর কাকার কাছে ছুটে গেলাম। সব কথা বলে কাকা বলল, “চল তান্ত্রিকের কাছে।”

সব শুনে তান্ত্রিক বললেন, “আমার যজ্ঞ বিফলে যায় না। মনে হচ্ছে তুই আমার কথা মতো কাজ করিস নি। তুমি অবশ্যই কোনও ভুল করেছিস। আরে খোকা এটা তো প্রথম ধাপ। একবারেই কি ফল পাওয়া যায়রে।”

বললাম, “আপনার কথা মত সব টিকিট কেটেছি।”

“পূর্ণিমার সকালে লটারির টিকিট কাটতে যাওয়ার আগে কি তুই স্নান করে, মন্দিরে পূজা দিয়েছিলিস?”বাবাজী জিগ্যেস করেন।

মাথা নেড়ে বললাম, “না বাবাজী।”

“লটারির টিকিট কাটার সময় তুই অসুদ্ধ ছিলিশ। তাহলে তুই বল। আমরা যজ্ঞ কি করে ফল দেবে?”বাবাজী বললেন।

আমি জিজ্ঞেস কারলাম, “তাহলে কি আমার টাকা জলে গেলো?”

“না না। তোমার ছোট্ট ভুলের জন্য লটারির টিকিট কিনে টাকা হল। কিন্তু একটা উপায় আছে।”তান্ত্রিক বললেন।

“কি উপায় বাবাজী? আমি জিগ্যেস করলাম

তান্ত্রিক বললেন, “নতুন করে যজ্ঞ করতে হবে।”

“এর জন্য কি আবার টাকা দিতে হবে?”আমি জিগ্যেস করলাম।

“হ্যাঁ, না দিয়ে যজ্ঞ কি করে করবো। বিনা পয়সায় কিছু হয় না খোকা। এবার যজ্ঞ করার পর তুমাকে কোটিপতি হওয়ার থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু এবার পুরো ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। যদি ফল না পাও তাহলে টাকা ফেরত করে দেবো।”তান্ত্রিক বললেন।

আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। এতো টাকা একসাথে কোথা থেকে পাবো।

বাবাজী জিগ্যেস করলেন, “এতো কিসের চিন্তা করছিস। তুই যখন লটারিতে কোটি টাকা পাবি, তখন সব চিন্তা ছুমন্তর হয়ে যাবে।”

বাবাজীর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তো কথায় নেই। এই ভেবে বললাম, “ঠিক আছে বাবাজী। আমি টাকা দিতে রাজি আছি।”

“বাহ। খোকা একটু সাবধান। টাকা আনর্থের কারণ। তাই আবার ভালো করে চিন্তা করে বলো। যজ্ঞের জন্য এতো টাকা দিতে পারবে তো?”তান্ত্রিক বললেন।

আমি জিগ্যেস , “বলুন যজ্ঞের জন্য কবে টাকা দিয়ে হবে?”

“যেদিন দিবি, সেদিনই যজ্ঞ হবে।”তান্ত্রিক হেঁসে বললেন।

এক সপ্তাহের পর ২০ হাজার টাকা নিয়ে বাহাদুর কাকার সঙ্গে আবার ঐ তান্ত্রিক বাবাজীর আশ্রমে গেলাম। লটারির টিকিটে কোটি টাকা পাবো, এর জন্য তান্ত্রিক অনেক ক্ষণ ধরে যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞ বেদী থেকে এক মুঠো ছাই নিয়ে আমার কপালে ঘষে দিয়ে তান্ত্রিক বললেন, “মন দিয়ে শোন। আসছে অমাবস্যার দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে চান করে। বাড়ির কাছে মন্দিরে পূজা দিবি। মায়ের কাছে মানত করবি, লটারিতে কোটি টাকা পেলে দু’জোড়া পাঠা বলি দেবো। আমি আগেও বলেছি, আমার যজ্ঞ বিফল যায় না। খেয়াল থাকে, এবার জেন কোনও ভুল না হয়। যা এবার। জয় মা কালী।”

তান্ত্রিকের কথা শুনে মনে হল এবার আমার নামে লটারি ফাসবেই। তাই তান্ত্রিকের কথা মত অমাবস্যার দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে চান করি। শ্যামনগর কালী মন্দিরে মায়ের  পূজা করি। সেখান থেকে বেড়িয়ে আবার সেই ফুটপাতের ঝুপড়ি মার্কা দোকান থেকে এবার বেশি সংখ্যক লটারির টিকিট কিনলাম। টিকিটের বান্ডিলগুলি মাথায় ঠেকিয়ে মা কালীর উদ্দ্যেশে মনে-মনে বললাম, “দে মা আমাকে কোটিপতি করে দে। আমার আমি তোর পুজাতে দু’জোড়া পাঠা দেবো।”


চারদিন পর।

কাগজে লটারির ফল প্রকাশ হল। কিন্তু একি ! আমার কাটা লটারির একটিও নাম্বারে এক টাকাও পেলাম না। এই দেখে আমি মনমরা হয়ে গেলাম। কোটিপতি হওয়ার জন্য ঐ তান্ত্রিকের পেছনে ২৫ হাজার থেকেও বেশি টাকা খরচ করে ফেলেছি। তবুও এক টাকাও পেলাম না। তান্ত্রিক বলেছিল, “যদি ফল না পাও তাহলে টাকা ফেরত করে দেবো।”এই কথা মনে পড়তেই ছুটে গেলাম বাহাদুর কাকার বাড়িতে। কাকাকে বললাম, “তান্ত্রিকের কথা বিফলে গেছে। আমার টাকা ফেরত চাই।”

“টাকা? কিসের টাকা?”অবাক হয়ে বাহাদুর বললেন। 

“ঐ যে তান্ত্রিক যা কাছে তুমি আমাকে নিয়ে গেছিলে। আমার থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে  লটারির জন্য যজ্ঞ করেছিল। কিন্তু লটারিতে এক টাকাও পেলাম না। সব টাকা জলে গেল। কোনও  লাভ হয়নি। এখন আমার টাকা ফেরত চাই।”বললাম।

বাহাদুর বলল, “তুই কি আমাকে টাকা দিয়েছিলিস। যাকে টাকা দিয়েছেস তার কাছে যা।”

“তুমিও তো আমাকে ঐ তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে গেছিলে। তোমার কথা শুনেই আমি ঐ তান্ত্রিককে টাকা দিয়েছি। এবার ঐ তান্ত্রিকের কাছে থেকে আমার টাকা আদায় করে দাও তুমি।”

বাহাদুর বললেন, “তুই লটারিরে কোটি টাকা পাবি বলে তান্ত্রিককে যজ্ঞের জন্য টাকা দিয়েছিল। তুই তান্ত্রিককে যে টাকা দিয়েছিলি  সেই টাকা যজ্ঞে স্বাহ হয়ে গেছে। তাই ঐ টাকা ফেরত হয় না।”

“তান্ত্রিক বলেছিল, যদি ফল না পাই তাহলে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। আমাকে ঐ তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে চল। আমি টাকা আদায় করে নেবো।”আমি বললাম।

এই শুনেই বাহাদুর ধমকের সুরে বললেন, “টাকা ফেরত পাওয়া এতো সোজা নয়। যজ্ঞে টাকা খরচ হয়ে গেলে। দেখ। সকাল সকাল ভ্যাট বকিস না। ভাগ এখান থেকে। আমার অনেক কাজ আছে।”

“এরপর আমি নিজে ঐ তান্ত্রিকের আশ্রম স্থলে ছুটে গেলাম। কিন্তু ওখানে কাউকে দেখতে পেলাম না। বুঝতে পারলাম। লটারিরে কোটি টাকা পাওয়ার লোভে পড়ে ঐ বাহাদুরের কথায় বিশ্বাস করে এক তান্ত্রিকের খপ্পড়ে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছি। শেষ পর্যন্ত যুক্তিবাদী কাজ কর্মের কথা শুনে তোমার কাছে ছুটে এসেছি সন্তোষ দা। তুমিই বল একবার আমি কি করবো?”এই বলে রাজীব কেঁদে উঠল।


আমি বললাম, “তোদের মত লোভী মানুষই তান্ত্রিকের মতো প্রতারকের মেন  টার্গেট। এই সুযোগ নিয়ে তান্ত্রিকেরা বাহাদুরের মত চ্যালা পুষে রাখে। এই চ্যালারাই বলির পাঠা নিয়ে গিয়ে তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যায়। এবং নিজের মত করে জবাই করে।”

“এই বাহাদুর কাকাকে ধরে টাকা আদায় করা যায় না?”ভাই বলল।

আমি বললাম, “ঐ তান্ত্রিকের কাছে যদি কোনও ধরণের অলৌকিক ক্ষমতা থাকত তাহলে সে নিজেই যজ্ঞ করে লাটার টিকিট কেটে কেন কোটিপতি হতে পারছে না? আসলে এই প্রতারক তান্ত্রিকরা ভালো করেই জানে অলৌকিক ক্ষমাটা বলে কিছু হয় না। যাজ্ঞ যজ্ঞ ইত্যাদি লোক ঠকানো ফন্দি মাত্র। আর এই বাহাদুরও একটা চিটিংবাজ। এক চক্করে তুই কি করে পড়লি?”

“বাহাদুর কাকা আমার পিসের সঙ্গে বাড়িতে প্রায় দিন আসত। সেই সূত্রে ওনার সঙ্গে পরিচয়।”রাজীব বলল।

আমি বললাম, “ঠিক আছে। দেখছি তান্ত্রিকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায় কি না। কিন্তু তার জন্য বাহাদুরের সঙ্গে কথা বলি।”


কয়েক দিন পর।

বাবার সঙ্গে বাহাদুর আমার বাড়িতে এলো। সামনে পেয়ে তাঁকে বললেন, “আমার একটি সমস্যা আছে। ভাবছি কোনও তান্ত্রিকের কাছে যাবো। তোমার সঙ্গে কোনও তান্ত্রিকের যোগাযোগ আছে কি?”

আমার কথা শুনেই ভূত দেখার মত করে বলল, “তুমি তো যুক্তিবাদী। এই সব তান্ত্রিক – ওঝাতে বিশ্বাস করো না। তাহলে আবার তান্ত্রিকের কি দারকার?”

“তুমি তো রাজীবকে এক তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে গেছিলে না? তার কাছে আমাকেও নিয়ে চলো।”আমি বললাম।

আমার কথা শুনেই বাহাদূরের বুঝতে অসুবিধা হল না রাজীবের সব কথা আমি জেনে ফেলছি। এবং এবার সে বড় সামস্যায় পড়তে চলেছে। বড়বড় চোখ করে বাহাদুর বলল, “ও এবার বুঝেছি কেন তুমি তান্ত্রিকের কাছে যেতে চাইছ।”

বললাম, “রাজীব লটারির টিকিট কিনে কোটিপতি হতে চায়। এই লোভে পড়ে সে তোমার চক্করে পড়ে এক তান্ত্রিকের কাছে গাঁটের ২৫ হাজার টাকা গেঁড়িয়ে এসেছে। কিন্তু ঐ তান্ত্রিক বলেছে, কাজ না হলে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ে হবে। তাই বলছি আমাকে ঐ তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে চলো। আমি টাকা আদায় করে নেবো।”

“তুমি কি বলতে চাইছো, রাজীবের টাকা আমি নিয়েছি?”বাহাদুর বলল।

আমি বললাম, “তুমি যদি রাজীবকে বুঝিয়ে বলতে লটারির টিকিট কাটিস না। তুমি যদি ভাইবে ঐ তান্ত্রিকের কাছে না নিয়ে যেতে তাহলে ও এভাবে এতো টাকা তান্ত্রিক, যজ্ঞের পেছেন খরচ করত না। সোজা কথায় তুমি ঐ তান্ত্রিকের চ্যালে হিসবে কাজ করে ভাইকে ঠকিয়েছ। তাই বলছি, হয় ভালো মানুষের মত ভাইয়ের টাকাগুলি ফেরত দিয়ে দাও। নাহলে তান্ত্রিক এবং তোমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করবো।”

“দেখছি কি করা যায়।”এই বলে বাহাদুর বাড়ি বেড়িয়ে গেলো।

রাতে পত্রিকা অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেই দেখি  মা বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখেই মা বললেন, “তুই ভালো আছিস তো। তোর কিছু হয়নি তো?”

“আমি ভালো আছি। হটাৎ এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছ?”আমি বললাম।

বড় বোন বাসন্তি বললেন, “সাকালে বাহাদুর দা কে তুমি বলেছিলে যদি তান্ত্রিক টাকা ফেরত না দাও তাহলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করবে। বিকেলে রাগে গজগজ করতে করতে বাহাদুর দা বাড়ির এসেছিল। তোমার নাম করে আমাকের হুমকি দিয়ে গেছে। বলেছে, তুমি যদি ওঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নালিশ করো তাহলে তোমাকে এই জগৎ থেকে গায়েব করে দেবে।”

মা বললেন, “বাহদুর এও বলেছে, তাঁর এক ভাগ্নে এখন জেলে বন্ধ আছে। ও একটি খুন করার অভিযোগে জেলে বন্ধ আছে। কিছুদিন পর ভাগ্নে জেল থেকে ছাড়া পাবে। তখন ভাগ্নে কে বলে তোকে  খুন করে দেবে। তুই রাতে যখন অফিস থেকে ট্রেনে করে ব্যারকপুর স্টেশনে নামবি। তখনই তোকে গুলি করে মেরে ফেলবে।”

বাহ বাহ। এখন বুঝতে পারছি ও বাবার হাত আমার ও মামার বাড়িতে আসা যাওয়া করছে। ভাইয়ের টাকা লুট করছে। এখন টাকা চাইতেই সে নিজের আসল রং দেখাছে। পুলিশের নাম শুনেই বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছে। দাড়াও বাহাদুর তোমার সব বাহাদুরির শায়েস্তা করছি।

মাকে আশ্বস্ত করে বললেন, “এবার বুঝতে পাড়লে তো মেজো মামা বাড়িতে এসে আমাদের সামস্যার মধ্যে ফেলে গেলো। এই জন্যই আমি এনাদের এড়িয়ে চলি। চিন্তার কোনও কারণ নেই। বাহাদুর আমার সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না। ও আমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু এবার ওঁকে শায়েস্তা করতেই হবে।”

পরের দিন দুপুরে অফিস যাওয়ার আগে বাহাদুরের বাড়িতে হাজরি হলাম। আমাকে দেখেই বাহাদুর চমকে উঠল। বললাম, “কাল বিকেলে তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে কি বলে এসেছ? তুমি আমাকে খুন করবে? আমি মারা গেলে তোমার কপালে ভোগান্তি আছে বুঝলে। বাড়িতে গিয়ে খুনের হুমকি দেওয়ার আগে ভেবেছ কি তুমি ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে। তুমি আমার মাকে আমাকে খুন করার জন্য যে হুমিক দিয়ে এসেছ তাঁর জন্য তোমার বিরুদ্ধে এক্ষণই থানায় অভিযোগ করে পুলিশের হাতে গ্রেফতার করিয়ে দেবো।”

কথার মাঝেই বাহাদুরের বউ আমরা হাতজোড় করে বললেন, “সন্তোষ এঁকে ক্ষমা করে দাও। এ কোনও কাজ করে না। আমার স্বামী জেলে গেলে আমরা বাচ্চা দুটির কি হবে।”

বললাম, “তোমার স্বামী রাজীবের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছে, সেটা ফিরিয়ে দিতে বল। না হলে সত্যিই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করবো।”

“আমি তোমাকে সহজ সরল ছেলে ভাবতাম। কিন্তু তুমি যে এতো চালাক চতুর বুঝতে পারিনি। তোমাকে চিনতে ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও। চেষ্টা করে দেখছি ঐ তান্ত্রিকের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাওয়া যায় কি না।”বাহাদুর বলল।

এক মাস পর।

রাজীব এসে বললে, “সন্তোষ দা তোমার জন্য ঐ তান্ত্রিকের কাছ থেকে টাকা ফেরত পেয়েছি।”

আমি বললাম, “এবার থেকে আর কোনও ওঝা, তান্ত্রিক, জ্যোতিষী, বাবাজী, মাতাজী-এর মতন বুজরুকদের চক্করে পরিস না। কারণ, এঁরা প্রত্যেকেই প্রতারক।”

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929