আধুনিক যুগের পথিকৃৎ: কোপার্নিকাস

পঞ্চানন মন্ডল


Nov. 18, 2024 | | views :486 | like:45 | share: 0 | comments :0

সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের মডেলের কথা এলেই আমাদের প্রথমেই মনে আসে নিকোলাস কোপার্নিকাসের নাম । কিন্তু কোপার্নিকাসের অনেক আগেই গ্রিক দার্শনিক সামোসের অ্যারিস্টার্কাস সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ।খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২৭০ সালের দিকে তিনি প্রথমবার সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন।তার মতে পৃথিবী আর অন্যান্য গ্রহরা সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে।কিন্তু সেই সময় গ্রিসে অ্যারিস্টটল ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী এক দার্শনিক।তিনি এই তত্ত্ব নাকচ করেন বলে শোনা যায় । গ্রিসে তার তত্ত্বটি নাকি তেমন কারো সমর্থন পায়নি।এরপর প্রায় অনেক বছর সেই তত্ত্ব কেউ গ্রহণ করেন নি।

এদিকে আবার কোপার্নিকাসের প্রায় এক হাজার বছর আগে ভারতীয় দার্শনিক আর্যভট্ট সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের একটি গাণিতিক মডেল দাঁড় করিয়েছিলেন।তার মডেল অনুযায়ী, পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর ঘূর্ণনরত এবং গ্রহগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুর্ণনকাল ছিল সূর্যের অবস্থানের সাপেক্ষে।

এদিকে মধ্যযুগে টলেমির পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের তত্ত্বের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা লিখেছিলেন আরবের বিজ্ঞানী আল হাজেন (আল হাইসাম)।প্রায় ১০০০ সালের দিকে আবু রায়হান বিরুনি (আল বিরুনি) সৌরকেন্দ্রিক সৌরজগতের কথা বেশ জোড়ালো ভাবেই প্রচার করেছিলেন।তার প্রস্তাবনায় পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণনরত ছিল।সে সময় অন্যদের চরম বিরোধিতায় তিনি হঠাৎ করেই স্থির পৃথিবীর তত্ত্বে ফিরে আসেন।১৩০০ সালের দিকে নাজিদ আল দিন আল খাজইনি আল কাতিবিও সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের প্রস্তাব করেছিলেন।তবে তিনিও শিগগিরিই তার মত পরিবর্তন করেন।

তবে এ বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে ছিলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস ।১৫৪৩ সালে তিনি On the Revolutions of the Celestial Spheres নামের একটি বই প্রকাশ করেছিলেন।প্রমাণ আছে যে কোপার্নিকাস আরবের বিজ্ঞানী আল কাতিবির কাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।কারণ আল কাতিবির অনেক রেখাচিত্রের সাথে কোপার্নিকাসের রেখাচিত্রের মিল পাওয়া গেছে।এমনকি এসব রেখাচিত্র একই বর্ণ দিয়ে চিহ্নিত করেছিলেন কোপার্নিকাস।তবে অনেকেই মনে করে কোপার্নিকাস আল কাতিবির চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিলেন ।তিনি সুস্পষ্টভাবে সৌরকেন্দ্রিক ব্যবস্থা প্রস্তাব করেছিলেন।তার যুক্তি ছিল, টলেমির ভূকেন্দ্রিক ব্যবস্থার চেয়ে সৌরকেন্দ্রিক ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ আর যুক্তির সাথে একদম একদম খাপ খায়।আবার এর পাশাপাশি তিনি দার্শনিকগত কিছু ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন।এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল,পৃথিবী বা মানবজাতিই যে সবকিছুর কেন্দ্রে নয়, এ অভিনব ভাবনার প্রকাশ।অবশ্য এই অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করার জন্য তাকে ভুগতে হয়েছিল।খ্রিষ্টীয় গির্জা এই ধারণাকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীত হিসেবে দেখেছিল।সে কারণে এ ধারণাকে যতটা সম্ভব নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল তারা।কারণ তাদের দৃষ্টিতে সৌরকেন্দ্রিক ধারণা ছিল বিপথগামিতার নামান্তর।

কোপার্নিকাসের এই বইটি ১৫৪৩ সালে যখন প্রকাশিত হয়েছিল তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়।শোনা যায় যখন এই বইটি ছাপা অবস্থায় তার কাছে এসে পৌছালো তখন তিনি শুধুমাত্র বইটি দুইহাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলেন, তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তার মৃত্যু হয়।

কোপার্নিকাস এই বইয়ের মাধ্যমে যে সত্যের প্রতিষ্ঠা করলেন তার উপর ভিত্তি করে গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন, আইনস্টাইন জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।

কোপার্নিকাস যে শুধু একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছিলেন তাই নয়, তিনি ইউরোপের প্রথম বিজ্ঞানী যিনি মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের মূলে তীব্র আঘাত হেনেছিলেন।তাই বিংশ শতাব্দীতে আইনস্টাইন বলেছিলেন, "বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোপার্নিকাসই হচ্ছেন আধুনিক যুগের পথিকৃৎ"

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929