সেকালের ভূত, এ কালের বিজ্ঞান, আর আমাদের ভবিষ্যত।
মহম্মদ মহসীন
Nov. 18, 2024 | | views :1589 | like:45 | share: 0 | comments :0
শিশুর মনে কিভাবে ভূতের অস্তিত্ব শিকড় বিস্তার করে, তা আমার নিজের শৈশব দিয়েই বিচার করি। অনেকের শৈশবের ঘটনাও একই প্রকার।
এক্কেবারে অজ পাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায়, তা হ'ল আমাদের সেকালের গ্রামটি। গ্রামে ঢুকতে হলে শীতে ধুলো আর বর্ষায় কাদা মাখতেই হবে। গাছপালা, বাঁশবাগান এত ছিল যে দিনের বেলা বাঁশতলায় সুর্যের আলো নিচে আসতে পারতো না। তাতে দিনেই ভূতুড়ে ভূতুড়ে আবহাওয়া গড়ে উঠতো, রাত্রে তো ভূতেদেরই বাজত্ব।
সেকালে ভূতের ভয়ে গাঁ-গ্রাম ছিল তটস্থ। সন্ধ্যে হলেই ভূতের ভয়ে রাস্তা ঘাটে লোকজনের বিশেষ দেখা মিলতো না।
শিশু প্রথমত প্রাথমিক শিক্ষা পায় তার মায়ের কাছে। আমিও পেয়েছিলাম। মা বলতো, সে এক সন্ধ্যার ঘটনা। তোর বাবা ইলিশ আনলো যখন, তখন ভর সন্ধ্যেবেলা। হাট থেকে ফিরতে দেরী হয়ে গিয়েছিল। তাই মাছের গন্ধে সঙ্গ নিয়েছিল "তেনারা"। বলতো এঁকটাঁ মাঁছ দেঁনা। এঁকটাঁ মাঁছ দেঁনা। দিদি গুটিসুটি মেরে কাছে এসে সন্দেহ প্রকাশ করতো,”সত্যি মা? “আমরা কিন্তু মায়ের কথা চোখ বুজে বিশ্বাস করতাম। কক্ষনো সন্দেহ করতাম না।
সেই মাছ বেছে যেই না পুকুর ঘাটে ধুতে যাবে, অমনি শাঁকচুন্নি একটা বাঁশ শুইয়ে ধরতো। সেটা পার হতে গেলেই সটাং করে তুলে ধরবে। মা তো ভীষণ রেগে বকা ঝকা দিত। সুরা ইয়াসিন পড়বো? বলে ভয় দেখাতো। শাঁকচুন্নিটা বিপদ বুঝে বাঁশবাজি বন্ধ করে পালাতো।
ঘুমাবার সময় বাবাও বলতো তার নিজের জীবনের ঘটনা। আমাদের লাঙল চালানোর নাঙলা ছিল মকর কাকা আর বুধন কাকা। বাবার ছিল ছোট্ট একটি বিড়ি কারখানা- কাম- বই- খাতা-মনিহারি-চাল-ডিম- তেলের পাঁচমিশেলি দোকান। সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে আসার সময় তিনজনে প্ল্যান করলো, পরের দিন ভোরে পুকুরের মোয়ানের খালে দু দিকে বাঁধ দিয়ে বালতি করে জল সেঁচে তুলে ফেলে দিয়ে জুলির পাঁকাল, ট্যাংরা, চ্যাঙ, ল্যাটা, মাগুর, সিঙি ধরবে।
রাত তখনও আছে, ভোর হয়তো হবে হবে করছে, বুধন কাকা এসে বাবাকে ডাকে, দাদা, ও দাদা, জল সেঁচতে যাবে না?
দুজনে গিয়ে প্রচুর মাছ পেল। বাবা হঠাৎ দেখল, বুধন কাকা বালতি থেকে তুলে তুলে কাঁচা মাছে খাচ্ছে। চোখের ভুল না কি? কিন্তু না, খানিক পরে একই কাণ্ড। বুধন কাকা আবার একটা কাঁচা মাছ খেল। বাবা বুঝতে পারল, এ তো বুধন নয়, নিশ্চয়ই বুধনের বেশে মেছো ভূত।
পড়ি মড়ি করে ছুটে এসে বাড়িতে দেখে বুধনকাকা আর মকরকাকা এসেছে জল সেঁচে মাছ ধরার জন্য। তাহলে আগে কে এসেছিল? বুধনকাকাকে সব ঘটনা খুলে বলতেই আর মাছ ধরার জন্য খালে যেতে তাদের সাহসে কুলালো না। এইসব ঘটনা খোদ বাবার মুখে শোনা। কাজেই অবিশ্বাসের প্রশ্নই ওঠেনা।
আমাদের ছিল শানের মেঝে, মাটির দেওয়াল, টালির ছাউনি দেওয়া লম্বা দুয়ার ওয়ালা ঘর। ঘরের পিছনে একটি বহু বয়স্ক উঁচু নারকেল গাছ। আর সামনে উঠানের পরেই পাঁচিলের বাইরে একটি তালগাছ। তাতে এক বিশাল জীন বাস করতো। নিরুপদ্রবে। তার একটা পা ছিল নারকেল গাছে, অন্য পা বাড়ানো ছিল তালগাছে। বাবা, মা দুজনেই গভীর রাতে উঠে স্বচক্ষে দেখেছে বেশ কয়েকবার। কাজেই স্বচক্ষে দেখা জীনেও অবিশ্বাস করার কিছুই নেই।
এই রকম হাজারো ঘটনা আছে। সব বললে লেখাটির প্রায় ওজন হয়ে যাবে তিনমণ। বাবা মায়ের স্বচক্ষে দেখা এতগুলি ভূত কখনো মিথ্যা হতে পারে কি?
পরে দুই একবার আমরা নিজেরাও ভূতের দেখা পেতাম। সেবারে বেদের দল এলো দিঘীর পাড়ে। তাদের কালো কালো রোগা-সোগা দুটি ছেলে মাদার গাছে উঠে মাদার পাড়ছিল। গ্রীষ্মের দুপুরে সব্বাই যখন ঘুমাচ্ছে, আমি দুটো করঞ্জা পাড়ার উদ্দেশ্যে বার হয়েছিলাম। এক লহমা ছেলেদুটিকে দেখলাম, পরক্ষণেই কোথায় যে উধাও হয়ে গেল, টেরই পেলাম না। কেন জানি না, একটা ভয় মনে জুড়ে বসলো। করঞ্জা না পেড়েই, দ্রুত ঘরে ফিরে এসে ঘুমন্ত মায়ের পাশটিতে আবার শুয়ে পড়তাম। মনটা উসখুস করতে লাগলো।
রাত্তিরে মা কে ঘটনাটি বললাম। দিদি তো হেসেই খুন। মা খুব বকাবকি করলো। বললে, সবেতেই হাসিস না, ঐ দুটো ভূতের ছানাকে আমিও ক' বার দেখেছি। ইখলাস, ফালাক আর নাস তিনবার পড়ে আমাদের প্রত্যেকের মাথায় ফুঁ দিতে যেন আমার ধড়ে প্রাণ ফিরে আসতো। সেই দুটো ভূতের ছানাকে আমরা স্কুলেও বকুলতলায় দেখেছি। সহপাঠীদের বলতেই অনেকে ভূত বলেই সাব্যস্ত করেছিল। অনেকে অবশ্য হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল। বলেছিল ওরা বেদেদের ছেলে, চুরিটুরি করে বলে, পালাই পালাই করে। আমাদের কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস, সে দুটো ভূতের বাচ্চাই ছিল। আমি তো নিজের চোখেই দেখেছিলাম। এই দেখছি মাদার গাছের ঝোপে। এক মুহূর্ত পরে দেখছি হাওয়া। চুরিই যদি করতে আসে, মায়ের বকুনিকে ভয় পায়, মা তো তখন ঘুমাচ্ছিলো। তাহলে বকবে কে? কাজেই বহু যুক্তি তর্কের পর বুঝেছিলাম ও দুটি বেদের ছেলে নয়, আদৌ নয়। বেদের ছেলের মতো দেখতেই নয়। কেমন যেন ভূতুড়ে ভূতুড়ে। কাজেই ওরা ভূতেরই ছানা। যে পারে ওদের মানুষ বলে বলুক, আমি অন্তত নাস্তিক হতে পারবো না, নিজের দুচোখকে অবিশ্বাস করতে পারবো না। ভূত না থাকতে পারে, ভূতের ছানা আছেই। ওদুটো ভূতেরই ছানা। আমার স্বচক্ষে দেখা।
এভাবেই বাবা মা'র দেখা ভূত, নিজের দেখা ভূত, পুকুরে নিজের চক্ষে দেখা জুজুবুড়ির চুল অবিশ্বাস করি কিভাবে?
সেবারে আমাদেরই পাড়ার নতুন এক বৌকে ভূতে না জিনে ধরলো। ভূত- জীন না থাকলে, ধরলো কে? যখন ওঝার সর্ষে পড়া, ঝাঁটা পড়ায় ছেড়ে যাচ্ছে, তখন জলের ঘড়া খিড়কি দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেল কে? ওসব মানুষের কম্ম?
স্কুলে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হল। কেউ কেউ নাস্তিকগিরি করে স্রেফ উড়িয়ে দিলে। এরা কোনো যুক্তিই মানে না। আমাদের দুক্লাস উঁচুর এক দাদা বললে, তার মামার বাড়িতেও এমন ভূত সে নিজের চোখে দেখেছে। ছেড়ে যাওয়ার সময় পুরো ভর্তি জল শুদ্ধু ঘড়া দাঁতে করে নিয়ে গেল। সাথে কাছের একটি উঁচু গাছের মগডালটিও কোত্থাও কিছু নেই, হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার জোরে ভেঙে দিয়ে তবে গেল। আর সেই ওঝার ঝোলার বোতলে এমন কত আত্মা প্রেতাত্মা বন্দি করে রাখা। এসব যুক্তি অনেকেই মানলো না। গোঁয়ার্তুমি করে সব উড়িয়ে দিলে। আমি অবশ্য মগডাল ভাঙা দেখিনি, কিন্তু স্বচক্ষে ভূতে ধরা - ছাড়া, কলসি বওয়া তো দেখেছি। তাই আমি তাদের দলে ছিলাম না। ভগবানের সাথে ভূতকেও সমান মর্যাদায় মান্য করে চলতাম।
এবার বলি, সুনীল গাঙ্গুলীর একটা কবিতা ।
এতগুলো শতাব্দী গড়িয়ে গেল, মানুষ তবু ছেলেমানুষ রয়ে গেল
কিছুতেই বড় হতে চায় না
এখনো বুঝলো না ‘আকাশ’ শব্দটার মানে
চট্টগ্রাম বা বাঁকুড়া জেলার আকাশ নয়
মানুষ শব্দটাতে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই
ঈশ্বর নামে কোন বড় বাবু এই বিশ্ব সংসার চালাচ্ছেন না
ধর্মগুলো সব রূপকথা
যারা এই রূপকথায় বিভোর হয়ে থাকে
তারা প্রতিবেশীর উঠোনের ধুলোমাখা শিশুটির কান্না শুনতে পায় না...
সুনীল গাঙ্গুলী বলেছেন, মানুষ পরিণত হয় না। আমি বলি পরিণত হলেও স্বার্থান্বেষী কিছু ধড়িবাজ অপরিপক্কদের খরিদ্দার বানিয়ে ভূতের সান্রাজ্য চালানোর জন্য ছোটবেলায় দেখা বেদেদের ছেলেকে ভূতের ছানা বলে শেখা পণ্ডিতেও বড় হয়ে ছাদে বেড়ানো ছিঁচকে চোর ছেলেকে অথবা ভূতে ভীত ভৌতিক ভাবালুকে ভয় দেখাতে আসা অকুতোভয় ছেলেকেই ভূত ভূত বলে চেঁচায়। টিভিতে এসে নিজের অপরিপক্কতার বিজ্ঞাপন দিয়ে বেড়ায়। এই সব কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সেলিব্রটিরাই কুসংস্কারের পালে হাওয়া দেয়। এরাই ভূতের কারবারিদের সমর্থন করে সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলে।
হায় ছেলেবেলার সেই ভূতগুলি আজ গেল কোথায়? ভূতেদের প্রধান শত্রু হ'ল ইলেক্ট্রিসিটি। দেশে ইলেক্ট্রিসিটি আসতেই বারো আনা পরিমান ভূত ম'রে হেজে গেল। যে সিকি ভাগ ভূত ছিল, তারাও গাছ কাটার ফলে মুলুক ছেড়ে কোথায় যে গেল!
সব যে গেল তাও বলতে পারি না। খোদ কলকাতার বুকে ভূত দিদি, ভূতে বিশ্বাসী ক্রিকেটারের রক্তে এখনও ঘোরাফেরা করে ছোটবেলার সেইসব ভূতেরা।
ইলেক্ট্রিক আলোর থেকেও ভূতের আরো বড় শত্রু হ'ল জ্ঞানের আলো, বিজ্ঞানের আলো। যে সব লোকের জ্ঞানের জগতে আলোর প্রবেশ ঘটেনি, ভূতেরা সেখানে দিব্যি রাজত্ব করে চলেছে, এখনও। জ্যোতিষের মতো, ভূত নিয়েও চলছে বুজরুকি, জোচ্চুরি, ধান্দাবাজি, এক বিশাল কারবার। ধড়িবাজ কিছু ভণ্ড-পণ্ডিত, ধড়িবাজ কিছু খ্যাতিমান, ধড়িবাজ কিছু স্বার্থান্বেষী ক্রিকেটার, ধড়িবাজ কিছু ভূত- বিজ্ঞানী, -ধড়িবাজ কিছু গ্যাজেটধারী, ধড়িবাজ কিছু "যুক্তিবাদী”(যিনি আসলেই যুক্তিবাদীদের কলঙ্ক), ধড়িবাজ কিছু ধর্মীয় নেতা হ' ল এই কারবারের সওদাগর। অ-বিজ্ঞানমনস্ক, ধর্মান্ধ, চিন্তারহিত বদ্ধমনা, কুযুক্তিবাদী অশিক্ষিত হ'ল এই কারবারের খরিদ্দার।।
পৃথিবীতে যারা মিথ্যা গল্প বলে তারাও কারুর না কারুর বাবা মা। সূতরাং, যেহেতু
আমার বাবা, আমার মা ভূত দেখার গল্প বলেছিল, কাজেই তা সত্যি, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। তা সেই বাবা, সেই মা যত বড় ডিগ্রীধারী হোন না কেন, যতবড় ক্রিকেটার হোন না কেন, যতবড় "যুক্তিবাদী”হোন না কেন, যতবড় গ্যাজেটধারী বিজ্ঞানী বা যত বড় সুপার ন্যাচারাল অনুসন্ধানী ডিটেক্টিভ হোন না কেন। যতবড় ফিজিক্স-পড়া পণ্ডিত হোন না কেন। যত বড় আবিষ্কার করা নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী হোন না কেন। যতবড় ডিটেক্টিভ অফ সুপারন্যচারাল হোন না কেন, মিথ্যেটা মিথ্যেই। নিজের চোখে দেখাটাও নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে দেখা নয়। প্রোথিত বিশ্বাসের আধারেই দেখা। যুক্তি গুলো আসলে কুযুক্তি। অন্ধবিশ্বাসের ভিতে গাঁথা সাবজেক্টিভ কাঠামোর কুযুক্তি।।
শৈশবের রিফ্লেক্স, শৈশবের অন্ধবিশ্বাস ছেড়ে মানুষ পরিণত হতে পারে না, বড় হতে পারে না। আজীবন শিশু, আমরণ অপরিণতই থেকে যায়। নিজে চিন্তা করতে পারে না। যুক্তিবোধ গড়ে ওঠে না। বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে ওঠার জন্য যে যুক্তিবাদী চেতনার প্রয়োজন তার অভাব থেকে যায় মননে। চিন্তন- অনুশীলণ-রগিত-জীবনশৈলী তাদের জীবনের পাথেয়। এরা চিন্তা করে সীমানার ভিতরে। সীমানার বাইরে যেতে পারে না। ধর্মের গণ্ডী পার হতে পারে না। মুক্তচিন্তার অভাবে অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি আসে না কোনোদিনই। বরং অচিন্তন তাকে গ্রাস করে। অন্ধবিশ্বাস আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তার মানবিকতাকেও। মুক্তির জন্য মানবিকতা মাথা কুটে মরে অন্ধবিশ্বাসের রুদ্ধ-পাষাণ-দ্বারে। অহরহ মানবিকতার বলী চড়ে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, মেকি-শিক্ষা, ধর্মান্ধতার যূপকাষ্ঠে।
সব শেষে, কবিগুরুর লিপিকা থেকে একটু কপি পেষ্ট করি।
"দেশসুদ্ধ লোক ভূতগ্রস্ত হয়ে চোখ বুজে চলে। দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন, 'এই চোখ বুজে চলাই হচ্ছে জগতের সবচেয়ে আদিম চলা। একেই বলে অদৃষ্টের চালে চলা। সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুরা এই চলা চলত; ঘাসের মধ্যে, গাছের মধ্যে, আজও এই চলার আভাস প্রচলিত।''
"শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে। তাতে অত্যন্ত আনন্দ পায়।"
"এই ভাবেই দিন চলত, ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে কারো মনে দ্বিধা জাগত না; চিরকালই গর্ব করতে পারত যে, এদের ভবিষ্যৎটা পোষা ভেড়ার মতো ভূতের খোঁটায় বাঁধা, সে ভবিষ্যৎ ভ্যা'ও করে না, ম্যা'ও করে না, চুপ করে পড়ে থাকে মাটিতে, যেন একেবারে চিরকালের মতো মাটি।"
"কেবল অতি সামান্য একটা কারণে একটু মুশকিল বাধল। সেটা হচ্ছে এই যে, পৃথিবীর অন্য দেশগুলোকে ভূতে পায় নি। তাই অন্য সব দেশে যত ঘানি ঘোরে তার থেকে তেল বেরোয় তাদের ভবিষ্যতের রথচক্রটাকে সচল করে রাখবার জন্যে, বুকের রক্ত পিষে ভূতের খর্পরে ঢেলে দেবার জন্যে নয়। কাজেই মানুষ সেখানে একেবারে জুড়িয়ে যায় নি। তারা ভয়ংকর সজাগ আছে।"
কিন্তু আমাদের সমাজে,
"খিড়কির আনাচে- কানাচে ঘোরে ভূতের পেয়াদা, আর সদরের রাস্তায়- ঘাটে ঘোরে অভূতের পেয়াদা; ঘরে গেরস্তর টেঁকা দায়, ঘর থেকে বেরোবারও পথ নেই। এক দিক থেকে এ হাঁকে, 'খাজনা দাও।' আর- এক দিক থেকে ও হাঁকে, 'খাজনা দাও।' "
“শিরোমণি- চূড়ামণির দল পুঁথি খুলে বলেন, 'বেহুঁশ যারা তারাই পবিত্র, হুঁশিয়ার যারা তারাই অশুচি, অতএব হুঁশিয়ারদের প্রতি উদাসীন থেকো, প্রবুদ্ধমিব সুপ্তঃ।' "শুনে সকলের অত্যন্ত আনন্দ হয়।"
কিন্তু ব্যাপারটা এতটাই সোজা নয়।
মানুষ পড়বে না, বুঝবে না, ভাববে না।
চিন্তনশীলতা তাদের ধাতে সয় না।
তাই ভূত থাকে চিরকাল। ভবিষ্যতের পথ আগলে।।