প্রেম, যৌনতা এবং..

অভিষেক দে


Nov. 16, 2024 | | views :291 | like:45 | share: 0 | comments :0

একজোড়া নারী- পুরুষের ভেতর প্রেম বা ভালোবাসা মোটেই অপরাধ,বে-আইনি  কিংবা নোংরামো নয়। বরং সুস্থ, স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রেমের কিছু পূর্ব-শর্ত আছে। যেমন বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা,মতাদর্শগত মিল এবং স্বনির্ভরতা।


দু-জন মানুষের ভেতর প্রেম, ভালোবাসা থাকলে যৌনতা কিংবা দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলা কিংবা সেই সম্পর্কে যাওয়া টা মোটেই অপরাধ কিংবা নোংরা মানসিকতার লক্ষণ নয়। কারণ,প্রেম থাকলে যৌনতাও থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সেটা অবশ্যই হবে দু-জনের সম্মতিতে। কখনই জোর করে নয়। জোর করে দৈহিক সম্পর্কে যাওয়া ধর্ষণের সামিল। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর শাস্তি আজীবন জেল কিংবা সোজা ফাঁসি। যৌনতাকে বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন নোংরা, অতি-গোপনীয় কিছু। এটা অবশ্যই শূচিবাতিকগ্রস্ততা,যা একটা মানসিক রোগ।


তন্ময় এবং মেঘনা দ-ুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনষ্ক তরুণ-তরুণী। দু-জনেই চাকুরীজীবী। দু-জনের ভেতর প্রেম এবং সেখান থেকে একসময় বিয়ে। দু-জনের যৌনজীবন টাও স্বাভাবিক ছন্দেই চলছিল। এরই মধ্যে জন্ম নেয় মেঘনা এবং তন্ময়ের কন্যা সন্তান। বর্তমানে কন্যার বয়স পাঁচ। কয়েকবছর সব ঠিকঠাক থাকার পর আচমকা দু-জনের সম্পর্কে চিঁড় ধরে। সামান্য ছোট খাটো বিষয়েও প্রায়শই মনোমালিন্য এবং শেষে ঝগড়া। সব তো প্রথম থেকে সুন্দর ছন্দেই চলেছিল, তাহলে হটাৎ কি এমন হলো যাতে দু-জনের ভেতর আজ মতের এবং  মনের অমিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে? আসুন মুক্তমনে উত্তর খুঁজি।


মেঘনার বক্তব্য : " তন্ময়ের কোনো চয়েস বা পছন্দ বলে কিছু নেই। কিসব যে হিজিবিজি,উল্টোপাল্টা রঙের শাড়ি,কসমেটিক্স কিনে আনে। বাধ্য হয়ে ফের দোকানে ওকে পাঠাতেই হয় পালটে আনতে। আমি কি ধরনের শাড়ি কিনি,কী জুয়েলারি, কসমেটিক্স ব্যবহার করি সেসবের খবরও রাখেনা। সে কথা বললেই আবার বাবুর রাগ হয়।যত্তসব,হুঁ। মেয়েটা যে বড় হচ্ছে সেদিকে বাবুর যেন ধ্যান নেই। আজকাল হটাৎ করেই তেনার খিদে জেগে ওঠে। এই তো সেদিনের ঘটনা, রান্না করছি আর উনি পেছন থেকে এসে কোমড় জরিয়ে গালে একটা চুমু। দিয়েছি খুন্তি দিয়ে সলিড একটা। বুড়ো বয়সে ভিমরতি "।  


মেঘনার উদ্দেশ্যে বলা যায় : আপনার বর না হয় একটা উল্টোপাল্টা শাড়ি কিংবা কসমেটিক্স, জুয়েলারি কিনে এনেছেন, এবং সেটা হয়তো আপনার অপছন্দই হলো। কিন্তু সেটার জন্য আপনি তন্ময় বাবুকে যে কয়েকটা কড়া কথা শোনালেন সেটা কি ঠিক হলো? উনি কিন্তু আপনার জন্য খুশি মনেই শাড়ি ইত্যাদি কিনেছেন। আপনি যদি হেসে বলতেন ' খুব সুন্দর হয়েছে ' তাহলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো? না হয় উনাকে পরে একটু রসিকতার ছলেই বোঝাতেন যে সেটা আপনার ঠিক পছন্দ হয়নি। আপনি উনাকে সঙ্গে করে দোকানে গিয়ে না হয় কিনেই আনতেন আপনার পছন্দসই জিনিষ। এতে আপনার বর ও খুশি হতেন। দেখতেন আগামীদিনে উনি আপনার পছন্দসই জিনিষ ই ঠিক কিনে এনে দিতেন। একটা ছোট্ট কথা যেখানে ঝগড়ার পরিবর্তে খুশি আনতে পারে, সেখানে কি খুবই প্রয়োজন ঝগড়া করে নিজের এবং অপরের রক্তচাপ বাড়ানোর। মেঘনা, আপনি নিজেকেই প্রশ্ন করে দেখুন তো সত্যি কি আপনি আগের চেয়ে বদলে যাননি? আপনি তন্ময় বাবুকে দুঃখ দিতে চান বলেই কি দুঃখ দিচ্ছেন? আর সেক্স। সেটা আপনিই ভালোই বুঝবেন। এই বিষয়ে কোনো সমস্যা হলে উনাকে ঠান্ডা মাথায় বোঝান যে এভাবে মেয়ের সামনে এইসব দুষ্টুমি না করে রাতে বিছানায় করলে বরং ভালা হয়। অবশ্যই সেটা আপনার সম্মতিতেই, জোর করে নয়। মেঘনা, আপনি কি জানেন একজন সুস্থসবল মানুষ ৬০ বছর বয়সের পরেও যৌনতা কে উপভোগ করতে পারেন? নিশ্চই জানেন না। তাই যৌনতাকে (সেক্স) নোংরামো না ভেবে স্বাভাবিক ভাবে সেটাকে গ্রহণ করার চেষ্টা করুন অথবা সরাসরি না বলে দিন বর কে। কিংবা আজ আপনার বরকে  পছন্দ না হলে সেটাও সরাসরি জানিয়ে দিন। মনে রাখবেন জোর করে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়না।


আচ্ছা, মেঘনা আপনি নিশ্চই রান্নার নতুন রেসিপি টা ভালো হয়েছে কিনা বরকে জিজ্ঞেসা করেছেন। বর নিশ্চই আপনার রান্নার তারিফও করেছেন। অপছন্দ হলেও আপনাকে হয়তো খুশি করার জন্য রান্নার প্রশংসা করেছেন। উনি আপনাকে দুঃখ দিতে চাননা তাই মিথ্যেটুকু বলেছেন আর আপনিও পরে খেতে গিয়ে দেখেছেন রান্না ভালো হয়নি।ঝাল বেশি কিংবা নুনের পরিমাণ কম। 


তন্ময়ের বক্তব্য : " সেইদিন টা ফিরে পেতে চাই বড্ড বেশি করে যখন আমাদের বিয়ে হয়নি। মানে দু-জনে প্রেম করতাম, সেই কলেজের দিন গুলোতে। কিন্তু কেন? আসলে সেসব দিনে আমাদের ভেতর মনের অমিল ছিলোনা। ছিলোনা মতের অমিলও। কিন্তু আজ সেসব অতীত। মেঘনা আজকাল বড্ড বেশি খিটখিটে হয়ে গেছে হয়ে গেছে। ভালো,খারাপ সবেতেই ঝগড়া করে। এই তো কয়েকদিন আগেকার ঘটনা, বউ কে বললাম অফিসের কয়েকজন কলিগ আসবে, একটা মিটিং করবো বাড়িতে বসে। কিছু স্ন্যাক্স বানিয়ে দাও। উনি মুখ ঝামটা দিলেন। অগত্যা একটা কফি শপে বসেই আলোচনা সারতে হলো। আজকাল উনাকে আদর টাদর করতে গেলেও যেন কোর্ট থেকে পারমিশন নিতে হবে, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে। আসলে সন্দেহ। বুঝলেন সন্দেহ। আমার অফিসের একজন মহিলা কলিগ একদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন একটা পেন ড্রাইভে লোড করা কিছু জরুরি ডকুমেন্ট দিতে। তা আমার বউ এর কিভাবে যেন মনে হয়েছে যে ঐ মহিলার সাথে আমি নাকি ফষ্টিনষ্টি করে বেরাচ্ছি। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ যে ওর ভুল ধারনা সেটা বোঝানোই মুশকিল। ইদানীং ওর ঝগড়ুটে স্বভাবের কারনে আমিও পালটা ঝগড়া করি। ওকে জ্বালাই, আনন্দ পাই। মনে মনে বলি, দেখ কেমন লাগে "। 


তন্ময়ের উদ্দেশ্যে জানাবো : চোখের বদলা চোখ এবং রক্তের বদলা রক্ত এই নীতি নিয়ে চললে পৃথিবী একদিন মানবশূন্য হবেই।ভাবছেন কেন এমন বলছি? তাহলে শুনুন মশাই, বউ না হয় আপনার কথামতো, কারণে অকারণে ঝগড়া করছেন মানলাম কিন্তু আপনিও তো পালটা ঝগড়ার পথেই যাচ্ছেন। সেটা কি ঠিক কাজ ? স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আজ আপনাদের ভেতর যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে তার পেছনে একটাই কারন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেটা হলো আপনার সেই মহিলা অফিস কলিগ। বিশ্বাস বড়ই বেয়াড়া শব্দ। যা গড়তে সময় নেয় কিন্তু ভাঙ্গতে সময় বেশি নেয়না। আপনি নিজেদের সম্পর্ক কে আবার আগের মতন অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আন্তরিক হলে কয়েকটা কাজ করুন। উইকএন্ডে সপরিবার বাইরে ঘুরতে বেরান। লাঞ্চ অথবা ডিনার টাও বাইরেই সেরে নিন। আরেকটা দারুণ  কাজও করতে পারেন। আপনার কন্যাকে প্রতিবেশী কিংবা কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে দু-জন মিঞা বিবি মিলে বেরিয়ে পড়ুন কেনাকাটা করতে, সিনেমা দেখতে এবং অবশ্যই বাইরে খেতে। রোমান্টিকতা আনতে ক্যান্ডল লাইট ডিনার ও করতে পারেন। কারণবারি চাখতে চাইলে বউ এর অনুমতি নিয়েই চাখবেন সেখানে। বউ মানা করলে ভুলেও জেদ দেখাবেন না। যেদিন আপনি বাড়িতে থাকবেন, অর্থাৎ অফিসের ছুটি সেদিন অবশ্যই চেষ্টা করুন বাড়ির কাজে বউকে সাহায্য করতে ( বউ এর কোমড় জরিয়ে ধরার চিন্তা ছেড়ে দিয়ে )। সাথে যে মহিলা কে নিয়ে আপনাদের ভেতর অশান্তির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে সেটা নিয়েও খোলামেলা আলোচনা করুন। বউকে সবটা জানান। সম্ভব হলে উনাকে সরাসরি বলুন যেন নিজেই গোয়েন্দাগিরি করে দেখে যে আপনি অন্য মহিলার সাথে কোনো রকমের গোপন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন কিনা।


মনে রাখবেন সুস্থ আলোচনার মাধ্যমেই কিন্ত অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব। চাইলে কোনো মনোবিদ কিংবা মনোরোগ চিকিৎসক এর পরামর্শও নিতে পারেন। আখেরে লাভ আপনার। আর দৈহিক সম্পর্ক। সেটা নিয়েও বউ এর সাথে খোলাখুলি আলোচনা করুন। উনার অপছন্দ হলে না হয় এড়িয়েই যান আপাতত। উনাকে ঠান্ডা মাথায় বোঝান সেক্স কোনো নোংরামো নয়, বরং দু-জন সুস্থ সবল মানুষের ভেতর সেক্স হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। দেখবেন সব সুন্দর ভাবে মিটে যাবে। একদিন আপনারাই একে অপরকে বলবেন " হ্যাপি ম্যারেড লাইফ "।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929