রেড ভলান্টিয়ার্স

বিতান সানা


Nov. 16, 2024 | | views :496 | like:5 | share: 5 | comments :0

এই তো সেদিন। সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফিরে স্নান সেরে বই নিয়ে বসেছি। সারাদিন একটুও বইমুখো হইনি। হইনি বলাটা ভুল হবে। হওয়ার সুযোগ হয়নি।

পড়তে পড়তে কখন রাত সাড়ে ১১টা বেজে গেছে খেয়াল নেই। হুশ ফিরলো একটা ফোনে। অচেনা নম্বর। গত ১ মাসে এরম বহু অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছে। তাই বেশি না ভেবেই রিসিভ করলাম। 


রেড ভল্যান্টিয়ার্স?

হ্যাঁ বলছি।

আমি উৎপল সেনগুপ্ত। নবপল্লী ভদ্রবাড়ি থেকে বলছিলাম।

হ্যাঁ বলুন। আপনাকে কী সাহায্য করতে পারি?

দাদা, আমার মায়ের স্যাচুরেশন লেভেল অনেকটা নেমে গেছে। ৮০ চলছে। একটা Oxygen সিলিন্ডারের জোগাড় করে দিতে পারেন?

ঠিক আছে। আমরা ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছচ্ছি। আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।


ফোনটা রেখেই কোনরকমে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। বেরোনোর আগে ফোন করলাম আমাদেরই আরেক রেডভল্যান্টিয়ারকে। বাবু বিশ্বাস। আমাদের পাড়াতেই থাকে। বয়সে আমার চেয়ে বড়ো। আমি তাকে দাদা বলেই ডাকি। ও আমাকে নানান বিষয়ে গাইড করে। যাইহোক, অফিস থেকে সিলিন্ডারটা বের করেই দুজনে রওনা হলাম। উৎপলবাবু বাড়ির বাইরেই দাঁড়িয়েছিলেন, সম্ভবত পায়চারী করছিলেন। আমাদের আসতে দেখে মনে হলো একটু দুশ্চিন্তামুক্ত হলেন। অক্সিমিটারে যখন তার মায়ের স্যাচুরেশন লেভেলটা চেক করলাম, সেটা ৭৮-৭৯ এ আপডাউন করছে। তড়িঘড়ি সিলিন্ডার সেট করে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হলো। কিছুক্ষণ বাদে স্যাচুরেশন লেভেল বেড়ে দাঁড়ালো ৮৪-৮৫। উৎপলবাবুকে বললাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি পড়লে যেন নিঃসংকোচে জানান। মনে হলো উনি আমাদের ভরসা করলেন। আমাদের ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় জানালেন। সেদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১টা বেজে গেছিলো। পরেরদিন উৎপলবাবু নিজে থেকেই ফোন করে জানালেন ওনার মা এখন সুস্থ। শ্বাসকষ্ট আর হচ্ছেনা। অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৯০-৯১ দেখাচ্ছে। 

গত ১ মাসে শয়ে শয়ে এরম ফোন কল রিসিভ করেছি। তাদের প্রায় অধিকাংশই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চেষ্টা করলেও সবাইকে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারিনি আমরা। ফোনেই বলতে বাধ্য হয়েছি। সরি। কারণ চাহিদামতো অক্সিজেনের যোগান সেদিন ছিলোনা। তাই অকালে চোখের সামনে অক্সিজেন না পেয়ে মারাও যেতে দেখেছি বহু মানুষকে। এপ্রিলের শেষদিকে আমাদেরই এক রেডভল্যান্টিয়ারের বাবা অক্সিজেন না পেয়ে মারা গেছেন। আবার এরমও হয়েছে যে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার পরেও স্যাচুরেশন লেভেল বাড়েনি, কমতে কমতে দম কেড়ে নিয়েছে রোগীর। বর্তমানে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। বারাসাতে অক্সিজেনের যোগান এখন কমবেশি আছে। তবে রক্তের আকালটা এখনো মেটেনি। গত ১ মাসে অনেককেই রেডভল্যান্টিয়ার্স রক্তের ব্যবস্থা করে দিলেও রক্তের জন্য রোগীর পরিবারকে এখনও এদিক থেকে সেদিক ছুটতে হচ্ছে। বারাসাত হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে গিয়েও রোগীর আত্মীয় রক্ত পাচ্ছেন না। ফোন করছেন আমাদের। আমাদের রেডভল্যান্টিয়ার্সরাই ছুটে যাচ্ছে রক্ত দিতে। আজ যখন এই প্রবন্ধটি লিখছি সেই মুহূর্তেও রোগীর আত্মীয় কোথাও রক্ত না পেয়ে রেডভল্যান্টিয়ার্সের কাছে A নেগেটিভ দু ইউনিট রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করছেন।

খাবার পৌঁছে দেওয়া, ওষুধ কিনে দেওয়া বা কারও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা ; গত ১ মাসে সবকিছুই করার চেষ্টা করেছি আমরা। এখনও করছি। তবে সবটা পেরে উঠিনি। গত ১ মাসের হিসেব করলে মোট বারাসাতবাসীর নিরিখে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা বেশি। তাও আমরা চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করতে তো আর ক্ষতি নেই।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929