ধর্মক্ষেত্র সৃষ্টি

নৃপেন্দ্রনাথ ম‍ণ্ডল


May 20, 2025 | | views :7 | like:0 | share: 0 | comments :0

 আসাম রাজ‍্যের এক রাখাল ছ‍েলে গিয়েছিল  মাঠে ঘাস কাটতে। দেখল একটি আইলে খুব সুন্দর ভাবে ঘাস বেঁধে আছে। সেই আলের উপরের ঘাস দেখে খুব লোভ হল। রাখাল মাত্রেই ঘাসে লোভ স্বাভাবিক। আর দেরি করে লাভ কি? ঘাস কাটতে লাগল আইলের উপর দিয়ে পাছা ছ‍্যাচড়াতে ছ‍্যাচড়াতে। রাখালের পরণে ছিল এক টুকরো সাদা থান কাপড়। লুঙ্গির বিকল্প আর কি। এই  মাঠাটি ছাড়া  ভিতরে  আন্ডার প‍্যান্ট, শর্ট প‍্যান্ট, কিছুই ছিল না। স্বভাবতই পেড়ুটা ভ‍ালো  ভাবেই আইলে ছ‍্যাচড়‍া খেতেই ছিল। রাখাল ছেলেটির পেড়ুতে ছিল‍  ঘা। স‍েই কারনেই শর্ট প‍্যান্ট বা আন্ডার প‍্যান্ট পরলে খুব জ্বালা যন্ত্রণা  করত এবং  বিশেষ অ‍সুবিধা হত। সেই ছ‍্যাচড়া খেতে থাকা পেড়ুতে  কোন এক ধরনের ঘা নিরাময় ঘাস কাটার পর নির্গত র‍স  ঠেকে ছিল। কোন গাছ গাছড়াত‍ে কোন গুনাগুন থাকে বলা যায় না। বেশিরভাগ ঔষধের উৎস লতাপাতা গাছ গাছড়া। রাখাল ছেলেটি বাড়ি এসে দেখে পেড়ুর ঘা গুলি ভ‍ালো  হয়ে গেছে। আর স‍েই কথাটা গ্রামের পাঁচটা লোককে বলার জন‍্য পেট ফুলতে থাকে। ফলত গ্রামের পাঁচটি লোকের নিকট গল্প করে ফেলল। এত্ত বড় একটা অ‍বাক ক‍র‍া ঘ‍টনা কি করেই বা গ‍ল্প ন‍া করে থাকা যায়। এতো একেবারেই অ‍বাক ক‍র‍া চ‍াক্ষুস আজ‍ব ঘ‍টনা। এই স‍ংবাদ এক দুই পাঁচ কান হয়ে গোটা গ্রামে চ‍াউর হয়ে গেল‍। গ্রামের যত্ত ম‍ানুষের পেড়ুতে ঘা ছিল‍ ঐ আইলে গিয়ে  ল‍াগল‍ পেড়ু ছ‍্যাচড়াতে। প‍্রথ‍‍ম প‍্রথ‍ম দু এক জনের পেড়ুর ঘা সত‍্যি সত‍্যিই  ভ‍াল হল‍ যত দিন পর্যন্ত ঐ আইলে ঘা নিরাময় ঘাস ছিল‍। গ্রামের মানুষ যেনো  ঔষধের একটি ক্ষেত্র খুঁজে পেল। যতই এই স‍ংবাদ চাউর হতে ল‍াগল‍ গ্রামের প‍র গ্রাম ছাড়িয়ে দূর দূর  গ্রামে গ্রামান্তরে ততোই পেড়ুতে ঘা ওয়ালা ম‍ানুগুলি ঐ আইলে পেড়ু ছ‍্যাচড়‍ানোর ধুম লেগে গেল‍। বিরাম নেই যেনো। এতই ঘা ওয়ালা ম‍ানুষ পেড়ু ছ‍্যাচড়‍াতে থাকল য‍ে আইলের ঘাস গুলি ছিলে ছিলে ঘাস উঠে আইল একেবারেই পরিস্কার  হয়ে  চিক্ক‍ন ট‍লট‍লে হয়ে গেল‍। পেড়ুতে ঘা ওয়ালা ম‍ানুষের ভিড় দিনের পর দিন উত্তর উত্তর বাড়তেই  থাকল। ঘা আর ভ‍ালো ন‍া হলেও ত‍াও  ম‍ানুষ মনের খ‍ক্কনে ঘা ভালো হবে হবে করে পেড়ু কিন্তু ছ‍্যাচড়‍াতেই থাকল‍। ভ‍ালুই বা আর হবে কি করে  য‍ে ঘাসের  ঘা ভ‍ালো হয়েছিল স‍েই ঘাসতো আর ন‍েই। দিনের প‍র দিন পেড়ু ছ‍্যাচড়‍ানোর ঠেলায় এক সময়  ঐ আইলের জায়গাটার নাম হয়ে গেল‍ো পেড়ু  ছ‍্যাচড়ার মাঠ। এই পেড়ু ছ‍্যাচড়ার মাঠ এখানে থেমে থাকল না। এখানে কিছু কিছু পয়সা কড়ি পড়তে দেখে এই আইলের দুই মালিক এই মাঠের একটি ধর্মীয় নাম দিয়ে দিল। নাম দিল পেড়ু ছ‍্যাচড়া ধর্মীয় মাঠ। এবার শুরু হল‍ো ধ‍র্মীয় হুয‍ুগ। এই আইলে মানুষ কিছু পয়সা কড়িও আরও বেশি করে ফেলতে থাকল। দুই জ‍মির আইল বালা  প‍য়সা কড়ির গন্ধ ভালো ভাবেই পেয়ে গেল। আইলের দুই মালিক যুক্তি পরামর্শ করে রোগীর  স‍মাগ‍ম ব‍াড়ানোর জন‍্য আবারও নতুন নাম করণ করল পেড়ু ছ‍্যাচড়া রোগী তীর্থ। এই স্থানের আরও গুরুত্ব বাড়ানোর জন‍্য এখানে একটা  শিবলিঙ্গও স্থাপ‍ন ক‍রল। আবারও নাম পরিবর্তন। এবারে একেবারে চমক দেওয়া নাম দিল “পেড়ু ছ‍্যাচড়া লিঙ্গ ধাম” । প্র‍ণামী দিনের  প‍র দিন আরও  বাড়তে ল‍াগল‍। তীর্থ যাত্রী আরও  ব‍াড়নোর জন‍্য প্রণামীর পয়সা দিয়ে এবং  কিছু পুঁজি লাগিয়ে ব‍ড় আকাশ চুম্বি  শিবলিঙ্গ মন্দির ‍তৈরি করে ফেলল। এবার ধর্মক্ষেত্র, ধামে পরিনত হল। আসেপাশে দোকান প‍াসার গড়ে উঠার হিড়িক লেগে গেল এবং অনেক দোকান পাট গড়ে উঠল‍। আর ঘুরে তাকানোর সময় নেই। পেড়ুতে ঘা ওয়ালা রোগীগুলি এক দিকে ডাক্তারও দেখাত আর এক দিকে এখানে পেড়ুও ছ‍্যাচড়‍তো। ডাক্তার ক‍রতো ভ‍ালো আর নাম হত এই ধামের। ম‍ানুষের ধ‍ারনা হল যে এখানে পেড়ু ছ‍্যাচড়‍িয়েছে বলেই ডাক্তার ঘা ভ‍ালো ক‍রতে পার‍ছেন । এ আর কাকে বলে ধর্মীয় হ‍ুযুগ?  এই ধামের কার্যক‍লাপ এখানেও থেমে থাকল‍না। এই আইলের দেবতার আরও বেশি গুরুত্ব  বাড়ানোর  জন‍্য চ‍ৌদ্দ হাতের কালী ম‍ূর্তি স্থাপ‍‍ন করা হল‍। এই কালীর আকাশ  ছোঁয়া মন্দিরও স্থ‍াপ‍ন হয়ে গেল‍। এই কালীর থানে ধর্মান্ধ মানুষ  একটা বা জোড়া পাঁঠা মানত করতে ল‍াগল‍। কোনও এক কৌশলী  পুরোহিত একটা নিয়ম চালু করল যে, এই মানতের পাঁঠাকে বলি দিয়ে, বলি পাঁঠার রক্ত পেড়ু ছ‍্যাচড়ানোর পর পেড়ুতে ঠেকাতে হবে। তাহলে ফল আরও ভালো হবে। এবার পূরহীতের বানী বেদ বাক্য বলে কথা। ধর্মান্ধরা পেড়ু ছ‍্যাচড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বলি পাঁঠার রক্ত পেড়ুতে ঠেকাতে  ল‍াগল‍। এই ধামের ম‍হ‍ত্ব পুরোহিতদের উপদেশ বাণী মন্ত্রবলের কথার প্রচার এখানেও থেমে থাকল‍ না। পাঁচ সাত দশ জন ধর্মভীরু শিক্ষিত স্বার্থ চরিতার্থ  পূরণকারী ম‍ানুষ এই ধামের ন‍ামের পরিবর্তন করে একটা সুম‍ধুর নতুন নামক‍র‍ণ ক‍রল। এই নামে আরও চমক দেখা দিল। ধামের নতুন নাম ক‍র‍ণ হল‍ “পেড়ুঠেকা কামলিঙ্গ ধাম”। এ ধামের নাম চারিদিকে যতই ছড়াতে থাকল ততোই এক দিকে তীর্থ যাত্রী আর এক দিকে দেশ বিদেশের সুকৌশলী লোভী কাম চরিতার্থ পূরণ কারি ব্রাহ্মণ পুরোহিতের সমাগম ঘটতে থাকল। এই ধামের মন্দিরের মানতের বিষয় সর্বমনস্কামনা পূরণকারীতে পূর্ণ হল। ফলত বান্ধা, থুবড়া পড়া, বিভিন্ন ধরনের রমনীর সমাগম দিনের পর দিন বাড়তে থাকল। সেবাদাসীও জুটল প্রচুর। ফলত, এ ধাম কামুক কৌশলী পুরহীতদের স্বর্গ রাজ‍্যে পরিনত হল। এক প‍্রান্তে য‍েমন “কামাক্ষা ধাম” আর এক প্র‍ান্তে র‍মর‍মীয়  তড়তড়িয়ে “পেড়ু ঠেকা কামলিঙ্গ ধাম” ধর্মান্ধদের ধর্মান্ধতায় এবং বিশেষ কৌশলী পুরহীতদের  মহিমাতে আজও বিরাজমান।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929