পৃথিবীর কোনও প্রতিষ্ঠানিক ধর্মের (Religion) কোনও শিশুই ধর্মবিশ্বাস, ধর্মানুভূতি, ভাবাবেগে ইত্যাদি নিয়ে জন্ম নেয় না। এই জাতীয় অন্ধবিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য দায়ী শিশুটির পরিবার, পড়িবেশ এবং সমাজের অতিবোদ্ধারা। একটা শিশু জানেই না জাতপাত কী, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ কী, হিন্দু-মুসলিমের লড়াই কেন ইত্যাদি অনেক কিছু। ক্রমশ একটি শিশু যত বড় হতে থাকে ততই শিশুর মস্তিষ্কে নানানরকম বিষয় জমা হতে থাকে। এভাবেই জন্ম নেয় তথাকথিত ধর্মবিশ্বাস। যা আজকাল যখন-তখন যার তার আঘাত লাগে এবং তারজন্যে খুন পর্যন্ত করতেও দুবার ভাবে না উগ্রধর্মান্ধ বা ধর্মমোহে আক্রান্তরা।
এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা উচিৎ, ১৮৫৬ সালের ২৬ শে জুলাই বিধবা-বিবাহ আইন পাশ হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিদ্যাসাগরের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছিল সমাজের উচ্চবর্ণের রক্ষণশীলরা। যদিও তারা সহজে নিজেরা কিছু করে না বরং অন্ধভক্তদের মগজধোলাই করে উগ্র-ধর্মান্ধ বানিয়ে তোলে। বিধবা-বিবাহের পক্ষে সই করেছিল ৯৮৭ জন এবং বিপক্ষে সই ছিল ৩৬,৭৬৩ জনের। তারপরেও বিধবা-বিবাহ আইন প্রণয়ণ হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত-ই যে শেষ কথা হতে পারে না এই ঘটনাটি একদিকে যেমন তার বড় উদাহরণ। তেমনই উদাহরণ বিশাল সংখ্যক মানুষের তথাকথিত ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হেনেই বিদ্যাসাগর সফল হয়েছিলেন। এভাবেই সফল হয়েছিলেন রামমোহন রায়ও সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে।
তাই নির্দিধায় বলা চলে মানবসভ্যতার অগ্রগমন যেহেতু অনিবার্য তাই তথাকথিত ধর্মবিশ্বাসে আঘাত না হানলে আমজনতা চিরকালই ভাববাদ ও ভোগবাদে ডুবে থাকবে। আর যারা সারাজীবন ভজন-পূজন নিয়েই থাকে তারা কোনোদিন শোষণমুক্তির কথা কল্পনাতেও আনবে না।