বোঝা (cognition)
উল্লাসকর বন্দ্যোপাধ্যায়
May 20, 2025 | | views :3 | like:0 | share: 0 | comments :0
প্রতিদিনের কাজকর্ম করতে গিয়ে সবসময়ই আমাদের বিভিন্ন বিষয় জেনে, বুঝে নিতে হয়। এখন যদি বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখি আর এটা বুঝতে চেষ্টা করি যে আমরা কোনও বিষয় বুঝি কীকরে, তাহলে একটু গোড়ার বিষয় জেনে নিতে হবে।
প্রথমত: আমরা যা বুঝতে চাই সেগুলোর কোনও না কোনোভাবে বস্তুগত ভিত্তি আছে। অর্থাৎ সেটা হয় নিজে বস্তু না হলে বস্তুসহযোগে উৎপন্ন। যেমন গান, কবিতা, ছবি, অঙ্ক, ঘটনা, শক্তি, বল(force), মানুষ, সামাজিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক মান, দেশ, কাল ইত্যাদি। সবই আসলে বস্তু সম্পৃক্ত। তাই বোঝার প্রথম শর্ত হলো বোঝার বিষয়ের বস্তুগত ভিত্তি থাকতে হবে। অবস্তু কিছু আমাদের বোঝার পরিসরে আসবে না, থাকবে না। এর অপর একটি কারণ অবস্তুভিত্তিক অস্তিত্ব হয় না। বিপরীতে যে কথাটা আসে তা হল আমাদের এই বিশ্বে এমন কিছু নেই তার বস্তুগত ভিত্তি নেই। তাই সম্পূর্ণ বিশ্ব তত্ত্বগতভাবে মানুষের বোধগম্যতার পরিসরের মধ্যেই পড়ে। অর্থাৎ Universe is cognitive.
দ্বিতীয়ত: বিশ্বের সমস্তকিছুই আমাদের কাছে অস্তিত্ববান হয়ে ওঠে তার থেকে আসা স্পন্দনের মাধ্যমে। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যখন আমরা এই স্পন্দন ধরতে পারি এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা দিয়ে সেই স্পন্দন বিশ্লেষণ করতে পারি তখনই আমরা সেই বিষয়টাকে বুঝতে শুরু করি। তারপর সেই সম্পর্কে ততবেশি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারি তত আমাদের বোঝা (cognition) গভীর স্তরে প্রবেশ করে। এইভাবেই আমরা সমস্তকিছু বুঝি। আরও কিছু কথা বলার আছে। যন্ত্র তেমন টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ, স্টেথোস্কোপ এগুলো আসলে আমাদের ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রযুক্তি নির্ভর প্রচেষ্টা। এমনকি যে স্পন্দন আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রহণ করতে পারে না সেটা ধরবার জন্য আমরা যন্ত্র বানিয়ে আমাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়েছি। তেমন চৌম্বকত্ব,তড়িৎক্ষেত্র প্রভৃতি। একটা বিষয় আছে যেটা নিয়ে বলতে হবে সেটা হলো কল্পনা (imagination)। কল্পনায় আমাদের মনে অনেক কিছুই আস্তে পারে কিন্তু সেটা যতক্ষণ বস্তুভিত্তিক যুক্তিকাঠামো (objective logical structure) এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হচ্ছে ততক্ষণ তার মনে থাকলেও মগজ দিয়ে বোঝা যায় না। এ ছাড়াও বিমূর্ত গাণিতিক কাঠামো দিয়ে অনেক কিছুই আমরা ধরা বা বোঝার চেষ্টা করলেও সেই বিষয়টা অবস্তু কিছু নয়। তবে সেটাও সম্পূর্ণ রূপে বোঝা যায় পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ সিদ্ধান্তের পথ ধরে। মানুষের চিন্তা,কল্পনা সবকিছুই বস্তুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। সেই কল্পনা যুক্তিকাঠামোর সবগুলো শর্ত পূরণ করলে তবে বোঝার জায়গায় আসে। আশাকরি বোঝা গেল আমরা কোনোকিছু বুঝি কী করে।
দেশবন্ধুনগর, কলকাতা-৭০০০৫৯.