যুক্তিবাদ ও মানুষের মুক্তি

মহম্মদ মহসীন


Nov. 16, 2024 | | views :567 | like:2 | share: 2 | comments :0

মানুষের উত্তরণের সুচক হলো, পৃথিবীর দরিদ্রতম থেকে দরিদ্রতর দেশে বসবাসকারী সাধারণ থেকেও অতি সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সর্বাধিক সুবিধা লাভের সুযোগের ব্যবস্থা করা গেছে কি না, কতটা করা গেছে।

কিভাবে এই ব্যবস্থা উপলব্ধ করা যেতে পারে বলে মনে হয়? সকলেই বলবেন প্রকৃতির রিসোর্সের উন্নততর বণ্টন ব্যবস্থা রূপায়নের জন্য পুঁজিবাদের খলনলচে পাল্টিয়ে দিয়ে সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা।  উত্তরটিকে অনেকেই বস্তাপচা বলে অভিহিত করেন। আমরা মনে করি,

এটা তো হল বিপ্লব। বহু বছর কেটে গেছে, বহু বিপ্লব ঘটেছে, কিন্তু স্বপ্নের সেই ব্যবস্থা আজও প্রণীত হয় নি। যতদিন সেই সাম্য প্রতীষ্ঠা না হচ্ছে, ততদিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মাঝেই তাই আমাদের পথ খুঁজতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সেই পথ হলো সংগ্রামের পথ। আন্দোলনের পথ। রাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টির এটাই পথ।

পুঁজিবাদী কাঠামোয় রাষ্ট্র পুঁজিপতিদেরই স্বার্থে সব কিছু করবে। মেহনতি মানুষ সেখানে শ্রমের যোগানদার বই ভিন্ন কিছু নয়।

কিন্তু মেহনতি মানুষ তাদের শ্রম কেন পুঁজিবাদীর স্বার্থে যুগিয়েই যাবে যুগিয়েই যাবে অবিরাম?

কারণ তাদের ব্রেন এভাবেই প্রক্ষালিত।

যুক্তিবাদের প্রসারে এই মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধিতা দূরীভুত হতে পারে, তারা রাষ্ট্রের এই পুঁজিবাদ সেবার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারে। আন্দোলন জারি রাখতে পারে সার্বিক ক্ষেত্রে।

কুসংস্কারে আচ্ছন্ন লোকে মুক্তচিন্তায় আগ্রহী নয়। 

পুঁজিবাদ ছাড়াও ভিন্ন রাষ্ট্র কাঠামো গড়া যেতে পারে, অন্তত পুঁজিবাদের লাভ দু আনা লোক না পেয়ে বারো আনা পরিমাণ লোকের স্বার্থে আসবে,  এমন ব্যবস্থাও যে গড়া সম্ভব, তা তারা মানুষ স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।

আমাদের সমস্ত শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান,  দর্শনের ফোকাসে থাকে এক বদ্ধমনা চেতনাঃ পুঁজিবাদের বিকল্প কাঠামো  রাষ্ট্র কোনোদিন আয়ত্ত করতে পারবে না। তাই বিপ্লব তো দূরের কথা সংগ্রাম আন্দোলনেই 'শিক্ষিতজন' এর সমর্থন পাওয়া দুরূহ। তারা বরং তাতে বাধা দেয়। এমনকি তাদের ব্রেন এমনভাবে প্রক্ষালিত যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রেও রাষ্ট্রীকরণ অপেক্ষা বেসরকারীকরণেই তাদের উদ্দীপনা বেশি লক্ষিত হয়।

মানুষ ভিত্তিগতভাবে পশু। অনেক পশুর ন্যায় নিজ স্বার্থসিদ্ধিতেই বেশি আগ্রহী। আবার মানুষ শুধুই পশু নয়, র‍্যাশান্যাল পশু। তার মাঝে পশুত্ব যেমন থাকে,  তার মাঝে র‍্যশানালিটিও থাকে। কথা হচ্ছে কোন গুণটি কোন গুণটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের মাঝে যখন র‍্যাশানাল ভাব বেশি থাকে তাহলে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, স্বার্থপরতা, অন্ধ অনুসরণেচ্ছা, সামগ্রিক মানবসমাজে থেকেও শুধুমাত্র সম্প্রদায়গত ঋণাত্মক চিন্তা ভাবনাগুলিও সমহারে কমতে থাকে। এটিই প্রকৃত শিক্ষা। যে শিক্ষায় সাম্প্রদায়িক চেতনার ঊর্দ্ধে ওঠা যায়, সামুদায়িক স্বার্থের জন্য কাজ করাকেই প্রকৃত কাজ ভাবা যায়, তার মাধ্যমে মানবিকতার বিকাশ ঘটানো যায়,  সেটিই প্রকৃত শিক্ষা।

যে যত ডিগ্রীর অধিকারী হোন না কেন, তিনি যদি বাস্তব থেকে অলৌকিকে বিচরণ করেন, তাঁকে শিক্ষিত বলা যায় না। বিকশিত মনুষ্যত্ব আধিদৈবিকতা, আধিভৌতিকতার পথ থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির ত্বরণ জারি রাখে। মানুষকে বাস্তবিক মাটিতে বিচরণ করতে উদবুদ্ধ করে। 

যারা বাস্তব বোধের অধিকারী তারাই মানবমুক্তির পথনির্দেশ করতে পারেন। তার স্পষ্ট অর্থ হলো, ধর্মীয় দর্শণ কখনই মানুষের মুক্তির কথা বলতে পারে না। তারা প্রথমেই মানবমুক্তির ডেফিনিশন পাল্টে দেয়। তাদের মানব মুক্তির লক্ষ্যে থাকে বার বার জন্মগ্রহণ বা পাপ পূণ্য-জনিত উদ্ভট সমস্যার উদ্ভব করে তার মনগড়া সমাধান। মানবমুক্তির মূল অর্থ সকলের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক  সুযোগ লাভের আনুপাতিক বিকাশ।

র‍্যাশান্যাল মানুষ প্রতিনিয়ত মানবমুক্তির মাইক্রো আন্দোলনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেকে সাধ্যানুযায়ী নিয়োজিত রাখেন। 

মানুষের মুক্তির পথ সুগম করতে  যুক্তিবাদের প্রসার তাই অত্যন্ত জরুরী।

উত্তরণের পথে ধর্ম সদা সর্বদা প্রতিবন্ধক।

এই প্রতিবন্ধকতাকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে পারে কুসংস্কারমুক্ত মানুষ। ধর্মান্ধের দ্বারা তা আদৌ সম্ভব নয়।

যুক্তিবাদের সিঁড়ি বেয়েই মানব সমাজের প্রকৃত মুক্তি সম্ভব।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929