সক্রেটিস এখনও জীবিত রয়েছেন
সাহাদাত হোসেন
May 20, 2025 | | views :3 | like:0 | share: 0 | comments :0
একটি দেশের সরকার কেমন হবে সেটা নির্ভর করে সেই দেশের জনগণ কেমন তার উপরে। এই দেশের রাজনৈতিক দলের চরিত্র কেমন হবে সেটা নির্ভর করে সেই দেশের জনগণের চরিত্র কেমন তার উপরে।
কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যখন উন্নত কোন দেশে সফরে যান তখন তার চরিত্র অবলোকন করে তারা বলে দিতে পারেন সেই দেশের মানুষের চরিত্র কেমন। তাই কেবলমাত্র একটি দেশের ক্ষমতাসীন দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের চরিত্র দেখেই সেই দেশের মানুষের চরিত্র নির্ণয় করা যায়।
একটি উদাহরণ দিচ্ছি, পূর্বে আমাদের গ্রামে প্রতি রবিবারে সালিশের দিন নির্ধারণ করা হতো। কারণ ওই দিন আব্বার ছুটি ছিল। জি. এম. হবার কারণে পুরো জুট মিলের দায়িত্ব ছিল তার উপর। কঠোর পরিশ্রমের পর একটা দিন তার আরাম করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটিও সম্ভব হতো না। শনিবার দিন বিকালেই গ্রাম থেকে লোকজন এসে হাজির হত। বলতো, ভাই আগামীকাল সালিশে আপনাকে যেতে হবে। উনি যেতে চাইতেন না কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা। বলতেন আপনি না গেলে আমরা ন্যায় বিচার পাব না। আপনাকে কষ্ট হলেও যেতে হবে। তাই তিনি যেতে বাধ্য হতেন।
চাকুরী থেকে পদত্যাগ করার কয়েক বছর পর গ্রামের কিছু লোক আব্বাকে বলল ভাই আমাদের গ্রামে চেয়ারম্যান নাই। আপনাকে আমরা চেয়ারম্যান বানাতে চাই। তিনি বললেন আমার অত টাকা পয়সা নাই এবং আমি টাকা পয়সা খরচও করতে পারবো না। তারা বললেন, আপনার কোন টাকা পয়সা খরচ করতে হবে না আমরা বিনা পারিশ্রমিকে আপনার জন্য কাজ করব। শুধু আপনি নমিনেশন এর টাকা জমা দিন।
তারপর যখন নির্বাচনী প্রচার শুরু হলো তখন আশেপাশের অঞ্চলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিভিন্ন মুরুব্বিদের পা ধরে সালাম করতে লাগলো। সিগারেটের প্যাকেট গুলো ডিল দিয়ে প্রত্যেককে দিতে লাগলো। চা- নাস্তার জন্য টাকা বিলি করতে লাগল। গ্রাম্য প্রভাবশালী ও দুর্নীতি বাজদের অর্থ দিয়ে দলভুক্ত করতে লাগল কিন্তু আব্বা এসবের কোনটাই করলেন না।
উনাকে এই ব্যাপারে বলা হলে তিনি রেগে যেতেন এবং বলতেন টাকা খরচ করে ও দুষ্কৃতিকারীদের তেল মেরে চেয়ারম্যান হবার কোন প্রয়োজন আমার নাই। আমি জনগনের অর্থ আত্মসাৎ করতে পারব না। জনগন যদি আমাকে যোগ্য মনে করে ও ভালবেসে ভোট দেয় তবে আমি চেয়ারম্যান হব। এই ইউনিয়নের মানুষ জানে আমি কেমন লোক এবং আমি তাদের কতটা উপকার করেছি। দুই চারজন বাটপারের কথায় তোমরা বিভ্রান্ত হইও না।
কিন্তু ইতিমধ্যেই এই সাধারণ মানুষ বলাবলি শুরু করে দিয়েছে, তোমারা দেখেছ রমিজ সাহেব কত অহংকারী। এখনই এই অবস্থা, না জানি চেয়ারম্যান হলে তার বাড়ির সীমানাতেও ঢোকা যাবে না। উনি এখনই আমাদের কাছে আসে না আর যদি একবার চেয়ারম্যান হয়ে যায় তাহলে তিনি ঢাকা শহরেই থাকবেন। আমাদের এইরকম যোগ্য লোকের দরকার নাই। ওই পাশের গ্রামের ফজলু চেয়ারম্যান অযোগ্য ও খারাপ হলেও আমাদের জন্য ভালো। যে যায় লংকায় সেই হয় হনুমান। আমরা ফজলুকেই ভোট দিব। নির্বাচনের দিন ফল ঘোষণা হলো। ইউনিয়নের অন্যান্য সেন্টারে উনার পাত্তাই নাই। উপরন্ত নিজ সেন্টারেই উনার অবস্থান তৃতীয়।
১৬ বৎসর পুর্বে আমাকে আমাদের থানার জাসাসের সভাপতি বানাতে চাইল। দাওয়াত পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিটিং-এ গেলাম। তারা নির্লজ্জভাবে তাদের এম. পি. সাহেবের চামচামি ও অন্য পক্ষের এম. পি.-কে গালিগালাজ করল। আমাকেও বক্তব্য দিতে বলল। আমি অপারগতা প্রকাশ করায় আরা বলল, আপনি এত জ্ঞান রাখেন অথচ কিছু বলতে পারলেন না। মূলত আমি এই ধরনের মানসিকতা অর্জন করি নাই। এদের সাথে তাল মিলিয়ে কোন ভাল মানুষ চলতে পারে না। যারা পারে তারা ভাল মানুষ হতে পারে না।
এই ধরনের অসচেতন জনগণকে নিয়ে রাজনৈতির দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইত্যাদি গঠন করা ও সঠিক পথে পরিচালনা করা অত সহজ কাজ নয়। সমাজে সর্বাপেক্ষা মহৎ কাজ তারাই করছেন যারা স্বপ্রণোদিত হয়ে ও বিনাস্বার্থে মানুষকে সচেতন করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমাজে কিছু লোক এখনও বিদ্যমান রয়েছে যারা রাস্তাঘাট, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, বাস ট্রেনসহ যেখানেই সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্ষমতা ও পদ লোভহীন এই সকল ব্যক্তিরাই হল এই যুগের সক্রেটিস।