প্রবীরদার ভালো-মন্দ

মধুসূদন মাহাতো


May 19, 2025 | | views :3 | like:0 | share: 0 | comments :0

‘প্রসঙ্গ প্রবীর ঘোষ’  বইতে প্রবীর ঘোষ সম্পর্কে লিখেছি। এরপর তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সম্বন্ধে লিখছি। 

         বাল্য এবং কৈশোর কালে রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও ডারউইনের জীবন দর্শন আমাকে কিছুটা বিজ্ঞানমনস্ক করেছিল। স্বপ্ন দেখতাম রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মত মানুষ হওয়ার। প্রবীরদার বই সেই বৃত্তটাকে অনেকটাই সম্পূর্ণ করে দিল। একাদশ শ্রেনীতে পাঠের সময় পুরুলিয়া বইমেলা ঘুরতে ঘুরতে প্রবীর ঘোষের “অলৌকিক নয় লৌকিক” দ্বিতীয় খণ্ড বইটি প্রথম হাতে এল। পড়া শেষ করলাম কয়েক দিনের মধ্যেই। বইটি পড়ার সমস্ত অলৌকিক বিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। পুজোপাঠ সম্পূর্ণ বিসর্জন দিলাম।  যেকোন অলৌকিকতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এরপর তাঁর টানেই বারবার কলকাতা যাওয়া, স্টাডি ক্লাসেও যাওয়া। বই পড়েই চিঠি লিখে শাখা গঠনের আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠানো। নিয়মিত ল্যান্ডফোনে যোগাযোগ করে বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল কোলে ব্যারাক স্টাডি সেন্টারে। সেদিনের স্টাডি ক্লাসে হাজির ছিলেন সুমিত্রাদি, অরুনদা, বিপাশাদি প্রমুখ। তাঁর বই পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই দেখা করতে আসতেন, স্টাডি ক্লাসেও অংশগ্রহণ করতেন।  অলৌকিকতার বিরুদ্ধে কয়েক লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ ও তাঁর কালজয়ী বেস্টসেলার বইগুলি তাকে অনেকের কাছেই হি-ম্যান করে তুলেছিল। “আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না”, “সংস্কৃতি: সংঘর্ষ ও নির্মাণ” বইগুলি যেকোন পাঠকের মনে দাগ কেটে দেয়। প্রবীরদা বহু গডম্যানদের ভাণ্ডাফোঁড় করেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং নিখুঁত কৌশল অবলম্বন করে। তাঁর পথ অনুসরণ করে আমিও কিছু অলৌকিক ঘটনার ভাণ্ডাফোঁড় করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি। বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজা বন্ধ থেকে, বাল্যবিবাহ, ডাইনি সন্দেহে অত্যাচার, ধর্মের নামে বলি কুরবানি, চোখ বেঁধে পড়া,  বালি পাচার থেকে ডি জে সাউণ্ড বন্ধ প্রভৃতির বেশিরভাগ ঘটনায় ছিল প্রচণ্ড জীবনের ঝুঁকি। যেকোন রকম সাহায্যের জন্য প্রবীরদাকে ফোন করলেই পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন। মাঝে মধ্যেই প্রতিটি শাখার খবর ফোনে নিতেন। পণহীন বিয়ে করা থেকে অনেক ব্যক্তিগত সমস্যারও মুশকিল হাসান ছিলেন প্রবীরদা। স্টাডি ক্লাসে অনেককে বিভিন্ন ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পাঠও দিতেন তিনি।  সিরিয়াস আলোচনার সময় ছাড়া, বাকি সময়  হই হুল্লোড় করে থাকতে ভালো বাসতেন। তাঁর সঙ্গে পিকনিক করেও খুব মজা পেয়েছি। জ্যোতিষী সত্যানন্দ থেকে মোবাইল বাবার ভাণ্ডাফোঁড় আমার সময়ে উল্লেখযোগ্য অভিযান ছিল। অলৌকিক ঘটনার ভাণ্ডাফোঁড় থেকে সাম্যের সমাজ গঠনের রুপরেখা নিয়ে বই লেখা ও তার প্রয়োগ করার চেষ্টা তাকে জীবন্ত কিংবদন্তী করেছে। উনি আমার জীবনের সেরা “ ফ্রেণ্ড, ফিলোজফার এণ্ড গাইড”। 

             তবে ত্রুটিহীন মানুষ পাওয়া আসলে সোনার পাথর বাটি। প্রবীদারও কিছু ত্রুটি আমার চোখে ধরা পড়েছে।

১) প্রবীরদা দাবি করতেন “আমরা যুক্তিবাদী” পত্রিকাতে উন্নত মানের লেখা না হলে প্রকাশ করা হয় না। কিন্তু, আমি দেখেছি, সাংবাদিক লেখকদের লেখা নিম্নমানের হলেও তা প্রকাশ পেত।

২) শেষ বয়সে তাকে দেখা শোনার জন্য এবং রান্নার জন্য পরিচারক/পরিচারিকা হিসেবে পরপর তিনজনকে নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু , কাজ ছাড়ার পর তাদের নামে অপবাদ শুনেছি। এটা তাঁর বয়স্কজনিত মানসিক সমস্যাও হতে পারে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929