পরিবেশের জন্য এসি কতটা বিপদজ্জনক?
তাঞ্জন বোস
May 19, 2025 | | views :3 | like:0 | share: 0 | comments :0
এসি পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মূল কারণ ব্লা ব্লা নিয়ে ফেবুপাড়া সরগরম৷ যারা এসি ব্যবহার করে বা কেনার প্ল্যানিং করছে তাদের বলদা পাঁঠা বলেও অভিহিত করে ফেলছে কেউ কেউ৷ এসির বিরুদ্ধে মূলত দুটো অভিযোগ৷ ১) CFC ব্যবহার করা৷ যা পরিবেশের এবং ওজোন স্তরের পক্ষে ক্ষতিকর৷ ২) অত্যাধিক ইলেকট্রিসিটি খরচ৷
আগে ১ নম্বর নিয়ে কথা বলি৷ প্রথমত এখন আর CFC বা R 12 ব্যবহার হয়না৷ যেটা ব্যবহার হয়, সেটা হল R134A. যেটা HFC. এর গ্রিন হাউস এফেক্ট CFC র তুলনায় কম৷ দ্বিতীয়ত, আমরা যদি এসির কর্মপদ্ধতি দেখি, তাহলে দেখব যে এটি মূলত কাজ করে ইভ্যাপোরেশন পদ্ধতির উপর৷ কমপ্রেশরে হাই প্রেশারে তরলীকৃত রেফ্রিজারেন্ট বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে শুষ্ক এবং লো প্রেশারের হয়ে ইভ্যাপোরেটরে আসে৷ সেখানে লীনতাপ সংগ্রহ করে বাষ্পীভূত হয়৷ যেহেতু ইভ্যাপোরেটর বা লোকাল ভাষায় কুলিং কয়েল থেকে লীনতাপ সংগ্রহ করছে রেফ্রিজারেন্ট, এটি ঠান্ডা হয়ে যায়৷ এউ ঠান্ডা ইভ্যাপোরেটরে সংস্পর্শে এসে বাইরের হাওয়া ঠান্ডা হয় এবং ব্লোয়ার মোটর সেই হাওয়াকে ঠেলে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়৷ ঠান্ডা ভারী হাওয়া নিচে নেমে যায়৷ গরম হাল্কা হাওয়া উপরে উঠে আসে৷ সেটা আবার এসিতে রিসার্কুলেট হয়ে ঠান্ডা হয়৷ মোটামুটি সহজ ভাষায় এসির মূল কর্মপদ্ধতি এটাই৷
এখন দেখার জিনিস যেটা সেটা হল রেফ্রিজারেন্ট পুরো সময়টাতেই একটা ক্লোজ সিস্টেমের ভিতর থাকছে৷ কোনভাবেই ওপেন এয়ারের সংস্পর্শে আসছে না৷ ফলত ওজোন স্তরে ক্ষতি বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বৃদ্ধির চান্স নেই যতক্ষন না রেফ্রিজারেন্ট লিক হয়৷ এবার এই লিকেজের অনেক কারণ আছে৷ যার সিংহভাগ কারণই হল ঠিকঠাক মেনটেনেন্স না করা আর মিস হ্যান্ডেলিং৷ অর্থাৎ একটু নিজে সতর্ক থেকে রেগুলার সার্ভিসিং করালেই অন্তত লিকেজের চান্স ৯০ শতাংশ কমে যায়৷
দ্বিতীয়ত হল বিদ্যুৎ খরচ৷ একটা বড় সাইজের ঘর এই গরমে স্বস্তিদায়ক রাখতে দুটো থেকে তিনটে ফ্যানের দরকার পড়ে৷ এরকম অবস্থায়, বিদ্যুৎ খরচও বেড়ে যায়৷ এবার কেউ যদি এসি ২৪ এ চালায় তাহলে কিন্তু ইলেকট্রিক খরচ অনেক কমে যায়৷ কিন্তু সেটা না করে গরমে ১৭ য় চালিয়ে কম্বল গায়ে দিলে ইলেকট্রিক খরচ বাড়বেই৷ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে দুটো অভিযোগ আসে এসির বিরুদ্ধে, সামান্য কনসাসলি ব্যবহার করলেই দুটোই এড়ানো সম্ভব৷
এবার একটা মজার গল্প বলি৷ এই R134A ব্যবহার করে ইভ্যাপোরেশন সিস্টেমে ঠান্ডা আরও একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসও করে৷ সেম টু সেম প্রশেস৷ অনেকের ঘরেই এসি না থাকলেও এই যন্ত্রটি থাকেই৷ এর নাম রেফ্রিজারেটর৷ অর্থাৎ আমার আপনার আদরের ফ্রিজ৷ হপ্তার বাজার, জল, আগের রাতের বেচে যাওয়া খাবার রাখার এক এবং একমাত্র বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান৷ কিন্তু এর বিরুদ্ধে কেউ সরব হয়না৷ ফ্রিজের ঠান্ডা জল বা শরবত খেতে খেতে ফ্যানের তলায় বসে এসি ব্যবহারকারীর দ্বিচারিতা হল না কি?
এইসব ব্যক্তিগত এসি বন্ধ, বাড়ির ছাদে গার্ডেনিং, বৃক্ষরোপণ এগুলো কোনটাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র নয়৷ এইসব এসি বন্ধ, রুফ গার্ডেনিং আদতে বন্যার সময় মগ দিয়ে জল সেঁচার মতন৷ কাজের কাজ কিছুই হয়না৷ শুধু সেল্ফ ইগো বুস্টিং ছাড়া৷ আপনি হয়ত এসি ব্যবহার করবেন না৷ গরমে পচে আদর্শের পিঠ চাপড়ানি দেবেন নিজেকেই৷ অথচ সার্ভার ঠান্ডা রাখার উদ্দেশ্যে আপনার বাড়ির পাশের ফাঁকা এটিএমে ২৪ ঘন্টা এসি অন থাকবে৷ অথচ সেই ব্যাপারে আপনি স্পিকটি নট৷ জলার পর জলা বুজিয়ে ফ্ল্যাট হচ্ছে, কলকারখানায় ঝেড়ে এসি ব্যবহার হচ্ছে৷ তারমধ্যে অনেকগুলোই আদ্যিকালের CFC সমৃদ্ধ৷ ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমার কোন লক্ষন নেই৷ কিন্তু ব্যক্তিগত এসি বন্ধ আর রুফ গার্ডেনিং এর গল্প আপনার মাথায় ঢুকে যাচ্ছে৷ এই ঢোকাটা স্বাভাবিক না কৃত্রিম সেই নিয়ে ভাবনার সময় এসে গেছে৷ ইচ্ছা করে নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে এসব প্রোপাগাণ্ডার চাষ করে জনসাধারণকে গিল্ট ট্রিপ দেওয়া হচ্ছে না তো!