একশো দিনের কাজের প্রয়োজনীয়তা
দিলীপ দাস মণ্ডল
May 19, 2025 | | views :5 | like:0 | share: 0 | comments :0
একশো দিনের কাজ সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অস্তিত্ব রক্ষার এবং গরীবদের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উত্তরণের সবচেয়ে সেরা হাতিয়ার। এই প্রকল্পকে বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে উপরের সব শ্রেণী এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যারা অপরের শ্রমের স্বত্বভোগ করে জীবন চালায় তারা। এই শ্রেণীগুলীর লোক কিন্তু মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের অনেক কম। অর্থাৎ যারা একশো দিনের কাজের সুফল লাভ করবে তারা সমাজের অর্ধেকের বেশি হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় এই প্রকল্প রক্ষার ব্যাপারে সতর্ক হয় না এবং কখনও কখনও যারা প্রকল্প বন্ধ করতে চায় তাদের সমর্থন করে ফেলে প্রকৃত কারণ না বুঝেই।
প্রকল্প বন্ধ করবার জন্য যে কারণগুলো দেখায় সেগুলোর মধ্যে (1) শ্রমিকরা কাজ করে না, বসে বসে টাকা নেয়। (2) জবসিটে ভুয়ো কর্মী নথিভুক্ত করে দুর্নীতি হয়। (3) পাটিবাজী হয় এবং ক্ষমতাধারীরা বিরোধীদের জব থেকে বঞ্চিত করে। (4) যে-কোন সরকারী কাজের মধ্যে থেকে যে সকল কাটমানি বের করার ফন্দি- ফিকির আছে সেগুলো কার্যকর হয়।
দুর্নীতি দুর করার জন্য যা করবার তার ব্যবস্থা নিতে হবে কিন্তু কয়েকজন দুর্নীতিকারীর জন্য তাদের বহুগুণ বেশি শ্রমিককে কাজের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ১০০ দিনের কাজে বর্তমানে (05/08/2022) দৈনিক মজুরি 200 টাকার মত। আর সরকারী পার্মানেন্ট চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা মাসে গড়ে কমপক্ষে 32000 টাকা আয় করে (P.F. বোনাস ইত্যাদি ধরে)।বছরের মধ্যে বিভিন্ন ছুটি বাদ ধরে সর্বোচ্চ 240 দিনের বেশি এরা কাজ করে না, অর্থাৎ মাসে 20 দিন কাজ করে। এদের দৈনিক মজুরি কমপক্ষে (32000÷20)= 1600 টাকা। অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজের মজুরির (1600 ÷200)= 8 (আট) গুণ। এরা ১০০ দিনের কর্মীদের আট গুণ কাজ করে কি?
আর এই শ্রেণীর লোকেরাই সবচেয়ে বেশি গসিপ করে সমাজের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া সবচেয়ে নিচু শ্রেণীর লোকের আয়ের রাস্তা বন্ধ করবার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারাও এদের সমর্থন করে প্রচার করছে যাতে ১০০ দিনের প্রকল্প ভালভাবে সমাজে কার্যকর না হয় তার লক্ষ্যে।
সমাজের শ্রমিক, কৃষক (বামুন চাষী ছাড়া), মজুর, ঝি, চাকর, কন্ট্রাক্টরের লেবার ইত্যাদি শ্রেণী যারা দৈনিক 200 টাকার থেকে কম বা অল্প কিছু বেশি পর্যন্ত আয় করতে পারছেন তারা সকলে মিলে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে একটি আন্দোলনে রূপান্তর করুন এবং যারই এই প্রকল্পে কাজ করার দরকার সেই যাতে এই কাজ পেতে পারেন তার চেষ্টা চালান এবং প্রশাসনকে এই কাজ দিতে বাধ্য করুন।
মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যারা তার চাষ বা ছোট ব্যবসার জন্য অল্প কিছু কর্মীকে কাজ দেয় তাদের প্রায় সকলেই ১০০ দিনের কাজের বিরোধী। কারণ (1) তারা ফাটকা কর্মীর অভাব অনুভব করে। (2) তারা নিজের মর্জি মত শ্রমিকের রোজ (দৈনিক মজুরি) চাপিয়ে দিতে পারে না। (3) তারা নিজের মত করে সবচেয়ে দক্ষ এবং সক্ষম মজুর পায় না। (4) শ্রমিকদের চাপ সৃষ্টি করে বেশি সময় ধরে কাজ আদায় করতে পারে না। এই সকল কারণ ছাড়া আরও অনেক কারণ থাকতে পারে ১০০ দিনের কাজের বিরোধী মানসিকতাধারীদের।
১০০ দিনের কাজের বিরোধীদের মানবিকতা এমন তলানিতে পৌছে গেছে যে, সেই সব মানুষরা যারা ১০০ দিনের কাজ করে (দৈনিক 200 টাকা মজুরিতে) যা হোক করে খাওয়া, পরা চালাচ্ছে, তাদের সেটুকুও বন্ধ করবার চেষ্টা করছে।
যারাই দৈনিক 200 টাকার উপরের আয়ের মত কাজ পাচ্ছেন না তারা সকলেই এককভাবে বা মিলিতভাবে রাজনৈতিক দলের সদস্যদের কাছে জানান যে আপনার ১০০ দিনের কাজ দরকার। ভোটের সময় যখন ভোট ভিক্ষা করতে আসে রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা তখন আপনাকে যাই সূযোগ করে দেবার কথা বলুক না কেন তখন আপনি অবশ্যই আপনাকে ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড করে দেবার এবং প্রকৃতই ১০০ দিন কাজ দেবার প্রতিশ্রুতি ক্যাডারের কাছে আদায় করে নেবেন। আপনি জানবেন আপনার মত ১০০ দিনের কাজ পেতে ইচ্ছুক সমাজের কোটি কোটি মানুষ, যে সংখ্যাটা যত লোক সরকারি চাকরি করে সেই সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
যখন সকল ১০০ দিনের কাজের কর্মী মিলিতভাবে রাজনৈতিক দলের কাছে আর্জি জানাবে আর রাজনৈতিক দল আপনাদের আন্দোলনের প্রকাশ অনুভব করবে তখন সত্যি সত্যিই আপনাদের জন্য ১০০ দিনের কাজ সক্রিয় রাখতে বাধ্য হবে। মনে রাখবেন যারা আপনার কাছে ভোট চাইতে যাচ্ছে তারা প্রায় সবাই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক। এদের বেশীভাগ লোকই কিন্তু মনে মনে চায় না ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু থাকুক। আপনার সোচ্চার চাওয়াটাই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু রাখতে বাধ্য করবে।