মানবধর্ম বনাম ধর্মমানব

Sumon


April 22, 2025 | | views :13 | like:0 | share: 0 | comments :0

মানুষ কি সরাসরি বানর থেকে এসেছে?
প্রশ্নটি যতটা বিস্ময়কর, উত্তরটি তার চেয়েও গভীর এবং ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হলে বিপজ্জনক
বিজ্ঞানের চোখে, মানুষ ও আধুনিক বানর—চিম্পাঞ্জি, গরিলা বা ওরাংওটাং—একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে, যে আজ থেকে প্রায় ৬-৭ মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকার কোনও গহীন জঙ্গলে তার অস্তিত্ব রেখে গেছে। ডারউইন যখন বললেন “Survival of the fittest”, তখন তিনি কোনো ‘ধর্মবিশ্বাস’ টিকিয়ে রাখার কথা বলেননি, বরং জীবনের সেই আদিম কৌশলের কথা বলেছেন— "যে টিকতে জানে, সেই বেঁচে থাকে।"

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই প্রথম মানব যখন জ্ঞানচক্ষু মেলে চারদিকে তাকালো, সূর্যকে দেখল, বজ্রপাত শুনল, অন্ধকারে ভয় পেতে শুরু করল—তখন কি সে ঈশ্বরকে চিনেছিল?
তার ঈশ্বর কে ছিলেন? বজ্রপাত? অগ্নি? নদী? গাছ? নাকি নিজেই নিজের ঈশ্বর ছিল?

ধর্ম হয়তো তার পরে এসেছে, যখন মানুষ কিছু ব্যাখ্যা করতে পারেনি, কিন্তু অনুভব করেছে। ধর্ম তখন হয়ে উঠল তার প্রশ্নহীন আশ্রয়, তার ভয় আর বিস্ময়ের প্রতিক্রিয়া। ঈশ্বরের জন্ম হলো সেই মুহূর্তে, যখন মানুষ বলল—"আমি জানি না, তাই এটা নিশ্চয় কোনো অলৌকিক শক্তির কাজ।"

তবে ইতিহাস আমাদের দেখায়, ধর্ম স্থায়ী নয়
সুমের, ব্যাবিলন, গ্রিক, মিশর, ইনকা—সব সমাজেই ছিল ধর্ম, ছিল দেবতা, ছিল ধর্মগ্রন্থ, যজ্ঞ, উপাসনা। কিন্তু আজ? কোথায় তারা?
তাদের ঈশ্বর কোথায় গেলেন? তারা কি মারা গেলেন নাকি চাকরি থেকে অবসরে গেলেন?

ধর্ম এসেছে মানুষের অস্তিত্বকে প্রশ্নহীনভাবে অর্থ দিতে। কিন্তু প্রশ্নহীন অর্থ, অর্থহীন প্রশ্নে রূপ নেয় যখন যুক্তি চাপা পড়ে বিশ্বাসের চাদরে

আজ আমরা হাজারো ধর্মে বিভক্ত, অথচ দাবি করি আমাদের ঈশ্বর একজনই
এ যেন এক কাকতালীয় গানের কোরাস, যেখানে সবাই গাইছে এক সুরে, কিন্তু সবাই বিশ্বাস করছে তার সুরই সবচেয়ে সঠিক সুর

সকল ধর্মই দাবি করে, তাদের ধর্মগ্রন্থই ঈশ্বরপ্রদত্ত। কিন্তু যদি ঈশ্বর একজনই হন, তাহলে তিনি একাধিক ধর্মগ্রন্থ কেন পাঠালেন?
নাকি তিনি বারবার মানুষকে নতুন সংস্করণ দিতে বাধ্য হলেন, কারণ মানুষের সাথে সাথে বানীরও ‘আপডেট’ প্রয়োজন?

ধর্মগ্রন্থে লেখা থাকতেই পারে, “এই পুস্তক আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান প্রেরিত।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো— একটি বই নিজেই যদি বলে সে ঈশ্বরপ্রেরিত, সেটাই কি যথেষ্ট প্রমাণ?
তাহলে তো আমিও একটি বই লিখে বলতেই পারি, “এই বই স্বয়ং ঈশ্বর হতে ভেরিফায়েড।”
তাতে কি পাঠকের সন্দেহ ঘুচবে, না ঈশ্বর তার অফিসিয়াল সীল মারবেন?

আর যদি সেই প্রমাণ না থাকে, তাহলে আমরা আসলে বিশ্বাসের এক মরুভূমিতে হাঁটছি—যেখানে জল আছে বলেই মরীচিকা দেখি, কিন্তু জল নেই বলেই কেউ তৃষ্ণা মেটাতে পারে না

তবে ধর্ম একেবারেই অপ্রয়োজনীয়—এই কথাও বলা অন্যায়
ধর্ম আমাদের সভ্যতাকে গড়তে সাহায্য করেছে, নৈতিকতা শিখিয়েছে, সহানুভূতির বীজ বুনেছে
কিন্তু ধর্ম যখন হয়ে ওঠে অন্ধবিশ্বাসের আধিপত্য, তখন তা সত্যের নয়, বরং ক্ষমতার অস্ত্র

সুতরাং প্রশ্নটি আজও থেকে যায়—
প্রথম মানবের ধর্ম কী ছিল?
হয়তো “ধর্ম” নয়, তার ছিল “উত্তরণ”—
কীভাবে বাঁচা যায়, কীভাবে শিকার করা যায়, কীভাবে আগুন জ্বালানো যায়, কীভাবে ভালোবাসা যায়

তাকে হয়তো কোনো ধর্মগ্রন্থ শেখায়নি মানুষ হওয়া,
সে নিজেই মানুষ হয়েছিল

আর আজ, এত ধর্ম, এত গ্রন্থ, এত নিয়ম—
তারপরও আমরা মানুষ হয়ে উঠলাম কি?

---

ধর্ম যদি সত্যিই ঈশ্বরপ্রদত্ত হয়, তবে তার প্রথম পাঠ হওয়া উচিত ছিল—
মানুষ হও, তারপর আমাকে বিশ্বাস করো।”
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এখনও মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি, অথচ ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929