বিদুর কিন্তু মহাভারতের যুদ্ধে অংশ নেননি; চাইলে ভীষ্মও সেটা করতে পারতেন।

Guitar K Kanungo


March 16, 2025 | | views :49 | like:0 | share: 0 | comments :0

মহাভারতের যুদ্ধটা ধর্ম এবং অধর্মের মধ্যকার যুদ্ধ। এই রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধটাকে মোটা দাগে এইভাবেই দেখানোর চেষ্ঠা করা হয়। পান্ডবরা ধর্মের পক্ষে, অন্যদিকে কৌরবরা অধর্মের পক্ষে। আর এই যুদ্ধটা রক্তাক্ষয়ী হয়ে উঠেছিল এমন ভীষ্ম এবং দ্রোণাচার্যের মত অতিমহারথী যোদ্ধাদের অংশগ্রহণের কারণে। যেহেতু যুদ্ধটা ধর্ম-অধর্মের মধ্যে সেইজন্যে প্রধানত এই দুজন যোদ্ধা এক রকমের ধর্মসঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিলেন মহাভারতে যুদ্ধের ঠিক আগ মুহূর্তে।

কোন পক্ষে যুদ্ধ করবেন তারা? ধর্মের পক্ষে যুদ্ধ করতে হলে, যেটা সবার করা উচিত, পাণ্ডবদের পক্ষে যুদ্ধ করা উচিত। কিন্তু ভীষ্ম এবং দ্রোণ, দুজনই অধর্ম তথা কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ করার সিন্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল তারা যেহেতই কৌরবদের অন্নদাস, অর্থাৎ কৌরবদের অন্নে প্রতিপালিত সেহেতু অধর্ম হচ্ছে জেনেও কৌরবদের বিপক্ষে তাদের যুদ্ধ করার সুযোগ নেই।

এটা এক্য কুযুক্তি এবং এই কুযুক্তিটাকে আমাদের ছোটকাল থাকে শেখানো হয়েছে। অবশ্য এটাকে কুযুক্তি বললে পুরোপুরি ঠিক বলা হয় না, এই ধরনের যুক্তিগুলো গ্রাহ্য করার মত কিনা সেই ব্যাপারটা আমরা অনেক সময় ঠিকঠাক পরখ করে দেখি না। কেউ একজন কিছু একটা বলেছেন, আর সেটাকেই আমার কোন প্রকার প্রশ্ন না করেই নির্ধিধায় মেনে নিই। বিশেষ করে সেই নিদান যদি জোব্বা আর টুপি পরিহিত কারো কাছ থেকে এসে থাকে তাহলে তো কথাই নেই।

দ্রোণের একটা গ্রহণযোগ্য কারণ থাকলেও, ভীষ্মের কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ করার কোন কারন ছিল না। দ্রোণ হস্তিনাপুর রাজ্যের বেতনভুক কর্মচারী ছিলেন - সেই অর্থে তিনি কৌরবদের অন্নদাস; ওই কারণে অধর্ম হচ্ছে জেনেও আচার্য দ্রোণের কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ না করে উপায় ছিল না কিন্তু পিতামহ ভীষ্মের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক এরকম ছিল না। কুরু রাজবংশে ভীষ্ম কখনোই একজন আউটসাইডার ছিলেন না। তিনিই ছিলেন হস্তিনাপুরের সিংহাসনের বৈধ দাবীদার। তিনি দয়া করে (প্রতিজ্ঞার খাতিরে) হস্তিনাপুরের সিংহসনটা দখলে নেননি বলেই ধৃতরাষ্ট্র, চিত্রাঙ্গদ, বিচিত্রবীর্য, পান্ডু এবং ধৃতরাষ্ট্র হস্তিনাপুরের রাজা হতে পেরেছিলেন, দুর্যোধন হতে পেরেছিলেন যুবরাজ।

একথা ঠিক দুর্যোধন কখনো কখনো ভীষ্মকে কটু কথা বলেছেন। সেটা তার স্বভাবগত কারণেই - ছোটবেলা থেকে উচ্ছন্নে গেছেন বলেই কিন্তু এহেন দুর্যোধনও পিতামহ ভীষ্মকে অতিক্রম করার চেষ্ঠা করেননি। সযত্নে তিনি এই দুস্কর্ম করা থেকে বিরত থেকেছেন কারণ পিতামহ ভীষ্ম কে, এই বংশের সুরক্ষার জন্যে তাঁকে কতটা প্রয়োজন সেটা দুর্যোধন ভালো করেই জানতেন। সত্যি কথা বলতে দ্রোণ নয়, ভীষ্ম কৌরবদের পক্ষে ছিলেন বলেই দুর্যোধন পান্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধটা করতে সাহস দেখেয়েছিলেন।

অন্নদাস তথা মার্সেনারিদের ভরসায় যুদ্ধ করা যায় না যখন প্রতিপক্ষ হয় পান্ডবদের মত পরাক্রমশালী। দ্রোণ একজন অতিমহারথি যোদ্ধা ছিলেন বটে কিন্তু তাঁর আনুগত্য কৌরবদের পক্ষে কখনোই ছিল না। কথাটা হচ্ছে ভীষ্ম ইচ্ছে করলেই অধর্মের পক্ষে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকতে পারতেন। সেটা না করে তিনি যেটা করেছেন সেটা অন্যায়। পাণ্ডবদের ইচ্ছে করলেই তিনি হত্যা করতে পারতেন কিন্তু পান্ডবদের প্রতি স্নেহবিষ্ঠ ছিলেন বলেনা তিনি পান্ডবদের বদলে অসংখ্য সাধারণ সৈন্যকে হত্যা করেছেন। যুদ্ধটাকে অকারণ রক্তক্ষয়ী করে তুলেছিলেন।

আপনারা অনেকেই হয়ত ভাবছেন - বাপু ! তুমি তো দেখছি ব্যাসদেবের চাইতেও বেশি বুঝতে শুরু করেছ। একটু অপেক্ষা করুন আমি এতক্ষন ধরে যা বলার চেষ্টা করছি সেটাকে প্রমান করার জন্যে আমার গান্ডীব থেকে মোক্ষম তুনটা এখনো বের করিনি। বিদুরকে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। সম্পর্কে কৌরব এবং পান্ডবদের পিতৃব্য এবং পেশায় হস্তিনাপুরের প্রধানমন্ত্রী। সেই অর্থে তিনি বিদুর একজন আউটসাইডার এবং ইনসাইডার দুটোই ছিলেন। পেশাগত অবস্থানের দিক থেকে আউটসাইডার, আর পেশাগত অবস্থানের দিক থেকে দেখলে একজন ইনসাইডার।

এঁকে ধর্মের প্রতীক বিবেচনা করা হত কারণ তিনি ধর্মরাজ যমের অবতার হয়েই ওই সময় হস্তিনাপুরে অবতীর্ন হয়েছিলেন। একথা তাঁর পিতা স্বয়ং ব্যাসদেবই বলেছেন। হস্তিনাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইনি কৌরবদের অন্নদাস ছিলেন। কিন্তু আপনারা কেউ বিদুরকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেখেছেন? দেখেননি - কারণ একজন অন্নদাস হওয়া সত্বেও তিনি সিন্ধান্ত নিয়েছিলেন অধর্মের পক্ষে তিনি যুদ্ধ করবেন না।

আমি জানি আপনাদের মধ্যেও অনেক ঠ্যাঁটা লোক আছেন যারা বলবেন বিদুর যুদ্ধ-টুদ্ধ এসব কিছু তেমন জানত না - তাই বিদুরের বিশেষ একটা পক্ষ নেওয়া কোন গুরত্ব বহন করে না। ভুল! ভুল! সবই ভুল! যদি বিদুর যুদ্ধ-টুদ্ধ এসব একেবারে নাই জানতেন তাহলে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ, যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার হিসাবেই খ্যাত, তিনি বিদুরকে 'সরঙ্গ' নামের ধনুকটা উপহার দিয়েছিলেন কেন? কোন একটা পুঁথির পাশে সেই দিব্যাস্ত্রকে সাজিয়ে রাখার জন্যে?

দাসীপুত্র ছিলেন বলে পান্ডু এবং ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদুর অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করেননি এমন ভাবার ভাবার কোন কারণ নেই। অস্ত্রজ্ঞান তাঁর ভালোই ছিল কিন্তু সেটা তাঁর চর্চার বিষয় ছিল না। কিন্তু তাঁর পক্ষে নেয়া না নেওয়ার একটা গুরুত্ব অবশ্যই ছিল। যে যুক্তিতে ভীষ্ম কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ করাটাকে ন্যায়সঙ্গত মনে করেছিলেন, সে যুক্তিকে বিদুর গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। হস্তিনাপুরের বেতনভুক কর্মচারী হওয়া সত্বেও তিনি অধর্মের পক্ষে তথা কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ করেননি। এই খবর আমাদের স্বয়ং ব্যাসদেবই দিয়েছেন।

 

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929