শরৎ সাহিত্যে ধর্ম ও সংস্কার
Tushar Gorai
Jan. 17, 2025 | | views :280 | like:3 | share: 6 | comments :0
স্বামী বিবেকানন্দের বেদান্ত দর্শন ভারতের জনমানসে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বরাবরই। তবে শরৎসাহিত্যে বেদান্ত দর্শনের প্রবল বিরোধিতা লক্ষ করা যায় এমনকি ঈশ্বরকেও তিনি বিদ্রুপ করেছেন। এমন কাজ তিনি করে দেখিয়েছেন যখন হিন্দু সমাজের বাঁধন বেশ শক্ত ছিল। তখন হিন্দু সমাজ পুরোপুরি ধর্মীয় প্রভাবে আচ্ছন্ন ছিল। এমতাবস্থায় তিনি লিখছেন ," কোনো ধর্মগ্রন্থই কখনও অভ্রান্ত সত্য হতে পারে না। বেদও ধর্মগ্রন্থ। সুতরাং, এতেও মিথ্যার অভাব নেই। যা বুদ্ধির বাইরে, তাকে বুদ্ধির বাইরে বলেই ত্যাগ করব। মুখে বলব, অব্যক্ত , অবোধ্য, অজ্ঞেয় , আর বাজে কথায় তাকেই ক্রমাগত বলবার চেষ্টা , জানবার চেষ্টা কিছুতেই করবো না। যিনি করবেন তাকেও কোনো মতে সহ্য করবো না "। ঠাট্টা করে তিনি বলছেন , " ... নির্গুণ নিরাকার, নির্লিপ্ত, নির্বিকার এসব কেবল কথার কথা। এর কোনো মানে নেই। যে মুখে বলছেন জানা যায় না, সেই মুখেই আবার এত কথা বলছেন যেন এইমাত্র সমস্ত স্বচক্ষে দেখে এলেন। যাকে কোন মতেই উপলব্ধি করা যায় না, তাকেই উপলব্ধি করবার জন্য পাতার পর পাতা, বইয়ের পর বই লিখে যাচ্ছেন। কেন? " ইতিহাসকে কেউ যদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘেটে দেখেন তবেই তার সামনে আসল সত্যটা উন্মোচন হবে। তার লেখা 'চরিত্রহীন' বইতে উপনিষদ সম্পর্কে খুব সুন্দর করে ছোট্ট কথার মধ্যে তীব্র বিদ্রুপ করেছেন। দিবাকর ও কিরণময়ীর আলোচনার মধ্যে দিয়ে উপনিষদ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার যুক্তি-তর্ক দেখা যায়। শরৎচন্দ্র এর মধ্যে দিয়ে বোঝাতে চাইছিলেন যা সত্য তাকে সকল সময় সকল অবস্থায় গ্রহণ করা প্রয়োজন ,এতে বেদই মিথ্যা হোক আর শাস্ত্রই মিথ্যা হয়ে যাক , সত্যের চেয়ে বড় কিছু নয়। বর্তমানে মানুষের তর্কের ঝোঁক এতটাই বেশি যে সহজ সরল যুক্তিগুলোকে মানুষ উপেক্ষা করে দেয়। তিনি এই বিষয়টিকে তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সেখানে ।
শরৎচন্দ্র তার সাহিত্যের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে জাতপাতের সমস্যা গুলিকে মুক্তির পথে অন্যতম বাধা হিসেবে প্রস্ফুটিত করতে চেয়েছিলেন। কোন একটি অভ্যাস সেটা সমষ্টির মেনে চলার মাধ্যমে তা সংস্কারে পরিণত হয়। সংস্কার যদি আমাদের গুণাবলী ,মহত্ব ,দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং মনুষ্যত্ববোধকে ক্ষুন্ন করে তাহলে তা কোনমতেই সংস্কার নয়, তা একটি কুসংস্কার। 'গৃহদাহ'- এ রাম বাবু চরিত্রের মধ্য দিয়ে এবং বহু জায়গায় বহু চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন যে হিন্দু সমাজে জাত পাতের সমস্যাটা সবসময় মোটা অর্থে নিচুতার সঙ্গে জড়িয়ে নেই। তা করুণা মহৎ গুণ, মমতা, ভালবাসার সঙ্গেও জড়িয়ে থাকে। মহিমের ভাষায়, " যে ধর্ম অত্যাচারের আঘাত থেকে নিজেকে এবং অপরকে রক্ষা করিতে পারেনা ,বরঞ্চ তাহাকে মৃত্যু হইতে বাঁচাইতে সমস্ত শক্তি অহরহ উদ্যত রাখিতে হয়, সে কিসের ধর্ম মানব জীবনে তার প্রয়োজনীয়তা কোনখানে ? " শরৎচন্দ্র মানুষের চিন্তা চেতনায় ব্যথা বেদনা জাগিয়ে ধর্ম এবং সংস্কারকে আঘাত করেছেন।