ইতিহাসের ফাঁকফোঁকর: একজন কামুক রাজার গল্প ।

Guitar K Kanungo


Jan. 15, 2025 | | views :58 | like:5 | share: 2 | comments :0

শাহজাহান সত্যিই মুমতাজ মহলকে ভালোবাসতেন। আর্জুমান্দ বানু বেগমের (মুমতাজ মহল) সঙ্গে যখন শাহজাদা খুররমের (পরে তিনি সম্রাট শাহজাহান নামে পরিচিত হবেন) বিয়ে হয়, তখন আর্জুমান্দ বানু বেগমের বয়স ছিল উনিশ বছর এবং শাহজাদা খুররমের বয়স বিশ বছর। অর্থাৎ তাঁরা প্রায় সমবয়সী ছিলেন।

আটত্রিশ বছর বয়সে তাঁদের পঞ্চদশতম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মুমতাজ মহল মৃত্যুবরণ করেন। উনিশ বছরে পনেরো বার গর্ভধারণ! অর্থাৎ প্রতি ১.২৫ বছরে মুমতাজ মহল একবার করে গর্ভধারণ করেছেন। এই বিষয় থেকেই বোঝা যায়, এই দম্পতির মধ্যকার শারীরিক ভালোবাসা যথেষ্ট তীব্র ছিল।

মুমতাজ মহলের মৃত্যুতে শাহজাহান খুবই মুষড়ে পড়েছিলেন। বেশ কয়েক দিন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। মুঘল সাম্রাজ্যের একটি নিয়ম ছিল, সম্রাট প্রতিদিন সকালের দিকে একবার জনসাধারণকে দর্শন দেবেন। এর উদ্দেশ্য ছিল এই বার্তা দেওয়া যে সম্রাট বেঁচে আছেন এবং যা কিছু ঘটছে, তা সম্রাটের নির্দেশেই ঘটছে। স্ত্রী-বিয়োগের ফলে শাহজাহান অনেক দিন ধরে চলে আসা সেই প্রথাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকো তাঁর হয়ে সেই সময় রাজ্য পরিচালনা করছিলেন।

এক পর্যায়ে তাঁর মাথায় তাজমহল নির্মাণের ভাবনা এলো। তিনি নিজেই এই সমাধি সৌধের ডিজাইন করেন। ভেতরের কিছু নকশার কাজ করালেন ইতালীয় এক নকশাদারকে দিয়ে। এই নিয়ে কিছুদিন ব্যস্ত থাকলেন। একসময় তৈরি হলো শাহজাহানের আকাঙ্ক্ষিত রওজায়ে মুনাভারা, যা পরবর্তীতে তাজমহল নামে পরিচিতি পায়।

হিন্দু মন্দির ভেঙে তাজমহল তৈরি করা হয়েছে—এমন একটি কথা প্রচলিত আছে। পুরুষোত্তম নাগেশ ওক নামের এক স্বঘোষিত ঐতিহাসিক এই ধারণাটি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একথা ঠিক যে আকবর এবং জাহাঙ্গীরের সময় ছাড়া বাকী মুঘল সম্রাটদের রাজত্বকালে এখানে-ওখানে কিছু মন্দির ভাঙা হয়েছে। সেই সময় এমন আইনও প্রচলিত ছিল যে মুঘল সাম্রাজ্যের ভেতরে নতুন করে কোনো মন্দির নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু কোনো মন্দির ভেঙে তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছিল—এই ব্যাপারটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য নয়। পুরুষোত্তম নাগেশ ওক তাঁর দাবির সপক্ষে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ হাজির করতে পেরেছেন কিনা, তা আমার জানা নেই।

ব্যাপারটি স্রেফ এতটুকুই যে জায়গাটির ওপর তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছিল, সেখানে রাজা মানসিংহের একটি প্রাসাদ ছিল। সম্পর্কে রাজা মানসিং ছিলেন শাহজাহানের মামা। রাজপুত যোধাবাঈ ছিলেন শাহজাহানের জননী, আর মানসিং ছিলেন যোধাবাঈয়ের ভাই। (যোধাবাঈ আকবরের স্ত্রী ছিলেন—এই তথ্যটি সত্য নয়।) মাতুলের দেওয়া জমির ওপর তিনি প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। যেহেতু এই জায়গাতেই আগে থেকেই প্রাসাদ ছিল এবং সেই প্রাসাদে রাজপুতরা বসবাস করতেন, সেখানে কোনো একজন বা একাধিক হিন্দু দেবতার মন্দির হয়তো ছিল। তবে সেটি ছিল নিতান্তই পারিবারিক। সোমনাথ মন্দিরের মতো সর্বজনীন কোনো মন্দির সেখানে ছিল এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আমরা কিছুটা মূল আলোচনা থেকে দূরে সরে গেছি। আমরা শাহজাহান এবং মুমতাজের ভালোবাসার গল্প বলতে চাইছিলাম। শাহজাহানের শারীরিক ভালোবাসার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল, একথা আমি আগেই বলেছি। এই দিক থেকে দেখলে তাঁকে রাজা যযাতির সঙ্গে তুলনা করা চলে। তাঁর জীবনটাও—অন্তত জীবনের শেষ অংশটাও—এক অর্থে যযাতির মতোই এ টেল অফ লাস্ট

তিনিও যযাতির স্টাইলে জরা বিনিময় করতে না পারলেও দীর্ঘ সময় যৌবন ধরে রাখার জন্য নানাবিধ উত্তেজক ওষুধ গ্রহণ করতেন। এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তিনি মাঝে মাঝে অসুস্থও হয়েছেন। তবুও তাঁর অবাধ যৌনাচার থেমে থাকেনি। শুধু তাই নয়, রাজকন্যা জাহানারাও যে আলাদাভাবে এমন অবাধ যৌনাচারের আয়োজন করতেন, ঐতিহাসিকরা সেই ব্যাপারে একমত।

বড়সড় হারেমের জন্য মুঘলদের আগাগোড়াই খ্যাতি ছিল। সেখানে সুন্দরী, যৌবনবতী, আবেদনময়ী নারীর কমতি ছিল না। কিন্তু শাহজাহানের তাতেও মন ভরত না। তিনি প্রাসাদের ভেতরেই মীনাবাজার বসাতেন। রাজধানীর নানা বয়সী নারীরা সেখানে পসরা সাজিয়ে বসতেন। শাহজাহান সেইসব স্টলে ঘুরে ঘুরে দেখতেন। বিশেষ কোনো পসরা নয়, তিনি দেখতেন পসরা সাজিয়ে বসা নারীদের। কোনো নারীকে তাঁর পছন্দ হলেই দেহরক্ষীদের ইশারা করতেন। এরপর সম্রাটের ইচ্ছানুযায়ী তাঁদের সম্রাটের সেবায় নিযুক্ত করা হতো।

সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়টি ছিল, এই কাজটি দেখাশোনা করতেন তাঁরই কন্যা জাহানারা। তিনি কি এই সমস্ত নারীদের মধ্যে মুমতাজকেই খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন? হয়তো তাই। যদিও ঐতিহাসিকদের কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। তবে শাহজাহান যে একজন নিম্ফোম্যানিয়াক ছিলেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়। যে স্ত্রীকে তিনি এত ভালোবাসতেন, যাঁর জন্য তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম সমাধি সৌধ নির্মাণ করেছেন, তাঁর শারীরিক মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি আবার নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন।

ভালোবাসা বিষয়টি বড়ই অদ্ভুত—কখন, কোথায় গিয়ে পড়ে, কোথায়, কীভাবে প্রকাশ পায়, তা বলা মুশকিল।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929