ইন্টারস্টেলার

Tushar Gorai


Jan. 12, 2025 | | views :187 | like:8 | share: 3 | comments :0

পদার্থবিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলি রূপোলি পর্দায় তুলে ধরা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। 'বিজ্ঞান' এই শব্দটা শুনলেই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার জটিল থিওরি এবং ভয়ংকর ক্যালকুলেশনের  কথা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সাধারণ দর্শক রোমান্টিক বা একশন সিনেমা বেশিই দেখতে পছন্দ করেন। বৈজ্ঞানিক জটিল তত্ত্ব এবং জাগতিক বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনার প্রতি মানুষের কৌতুহল যে একেবারে নেই তা নয়।

২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রডিউসার লিন্ডা অবস্ট কল্পবিজ্ঞান বিষয়ক একটি সিনেমা প্রস্তুত করার জন্য প্রস্তাব দিলেন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী কিপ স্টিফেন থর্নকে। এই বিজ্ঞানী জীবনের অনেকটা সময় জুড়ে গবেষণা করেছেন ব্ল্যাক হোল, ওয়ার্ম হোল, গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ ইত্যাদি বিষয়ে। এই ক্ষেত্রে তার জ্ঞান ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তিনি অবশ্য সিনেমা তৈরির সাথে যুক্ত হয়ে পড়বেন এ বিষয়ে তিনি কোনদিন কল্পনাও করেননি। 

পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান এবং তার ভাই স্ক্রিপ্ট রচয়িতা জোনাথান নোলানের সঙ্গে ভিসুয়াল এফেক্টসে কাজ করার জন্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি থর্ণকে। পরবর্তীকালে তিনি 'সাইন্স অফ ইন্টারস্টেলার' বলে একটি বই লেখেন যার মুখবন্ধ লিখেছিলেন স্বয়ং পরিচালক নোলান। ইন্টারস্টেলার ছবিতে 'গারগানটুয়া' ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে মহাকাশযান 'এনডিওরেন্স' যে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে সেগুলোকে শর্ট অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেন । ছবির একটা জায়গায় তিনি গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং বিষয়টিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। মহাকাশে কোন ভারি বস্তুর পাশ দিয়ে আলো যাওয়ার সময় সেই ভারী বস্তুর মহাকর্ষের টানে আলোর বেঁকে যাওয়াকে গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং বলা হয়। অবশ্য পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন ভারী বস্তুর কারণে উঁচু-নিচু স্থান কালের ক্ষেত্রে আলো রশ্মি চলতে গিয়ে বেঁকে যাওয়াকে গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং বলে। 'গারগানটুয়ার' স্পিনিং এর কারণে যে গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং হয় যার ফলে তার প্রতিবিম্বের অবস্থান ভিন্ন ধরনের বোঝানোর জন্য ছবি এঁকে তার সঞ্চার পথ নির্দেশ করেছেন থর্ন। ব্ল্যাক হোল ঘিরে যে আক্ক্রিশন ডিস্ক থাকে তার প্রকৃত তাপমাত্রা লক্ষ লক্ষ ডিগ্রিতে পৌঁছতে পারে তাছাড়া এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি, বেতার তরঙ্গ এবং দৃশ্যমান আলোর মত বিভিন্ন বিকিরণ ঘটে। ব্ল্যাক হোলের মধ্যে এই তাপমাত্রাকে বোঝানোর জন্য তাপমাত্রার সমানুপাতিক উজ্জ্বল্য কে ভিসুয়াল ইফেক্টসের সাহায্য নেওয়া হলো।  'গারগানটুয়ার ' থেকে প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান আলো বেরিয়ে এলেও এক্স রশ্মি বা গামা রশ্মি বেরোয় না তাই আপাতভাবে সেই বিকিরণের আবহে নিশ্চিহ্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না ছবির নায়ক কুপারের। গল্পে রসের মাধ্যমে বিজ্ঞান পরিবেশনায় বিস্ময়কর দক্ষতা দেখিয়েছেন বিজ্ঞানী থর্ন। সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক নীতিগুলো মেনে তিনি তৈরি করেছেন সমস্ত ভিসুয়াল ইফেক্টস্। 

ব্যবসায়িক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই এসব বৈজ্ঞানিক কঠিন তত্ত্বগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য এতটাও পরিশ্রম করেন না। তবে বিত্তশালী হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ক্রিস্টোফার নোলানের এর মত অনেক পরিচালকই এই ঝুঁকিটা নেন। জনসমক্ষে জ্যোতি:পদার্থবিদ্যার এই সব জটিল রহস্যজনক ঘটনা সর্বসমক্ষে আসার ফলে তাদের মধ্যে এক বিস্ময়কর কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। সিনেমাই পারে মানুষের মধ্যে এমন কৌতূহল সৃষ্টি করার জন্য। জনজীবনে সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929