পৃথিবীর বহু অলৌকিক ঘটনা আমাদের নজরের আড়ালেই রয়ে যায় হয়তো আমরা সেগুলি ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি। এইসব জাগতিক ঘটনা আমাদের মনে এতটা নাড়া দেই না বা আমরা এইসব ঘটনাগুলি উপভোগ করতে পারিনি। পৃথিবীতে আলোর অবিশ্বাস্যকর কান্ডকারখানার উদাহরণ প্রচুর রয়েছে।আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে রামধনু এমন একটি ঘটনা।
রামধনুর বিজ্ঞান এতটাও জটিল নয় একটু বিশ্লেষণ করলেই জলবৎ তরলং। পুরাণে রামধনুকে ভগবানের ধনুক হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে যা কিনা মর্ত্য ও স্বর্গের মধ্যে যোগাযোগের পথ। অতীতে অনেক বিদগ্ধ পন্ডিতগণ এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রেখে গেছেন।নিউটন প্রথম দেখালেন সাধারন সূর্যালককে কাঁচের প্রিজমের মাধ্যমে বিচ্ছুরিত করে 7 টি রঙে ভাঙ্গা যায়।সেই বিচ্ছুরিত আলোককে পুনরায় সাধারণ আলোতে ফিরিয়ে আনেন। এইসমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে আলোক সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্তে আসেন।
আকাশের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র জলকণার মধ্যে মেঘ - বাদলের বাধা ছাড়া পৌঁছতে পারলেই অনেকখানি কাজ হয়ে যায়।সূর্যালোক জলকনার মধ্যে প্রবেশ করে 7 টি রঙে ভেঙে যায়। যেখানে লাল রঙের রশ্মি বিচ্ছুরিত হয় সবচেয়ে কম আর বেগুনি রঙের রশ্মি বিচ্ছুরিত হয় সবচেয়ে বেশি। এই পদ্ধতিতে লক্ষ লক্ষ জলকণার মধ্যে বিচ্ছুরিত হয় সূর্যালোক ভিন্ন ভিন্ন কোন দৃষ্টি করে। এই কোন ০ থাকে ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত যেকোনো হতে পারে তবে ৪২ এর থেকে কখনও বেশি হয় না। প্রতিটি রঙের রশ্মির জন্য নির্দিষ্ট বিচ্ছুরণ কোন থাকে যেমন বেগুনি রঙের রশ্মির জন্য সর্বোচ্চ কোন ৪০ ডিগ্রি।
রামধনুকে দেখার জন্য বেশ মজার কায়দা আছে। বৃষ্টিস্নাত পরিষ্কার আকাশে সূর্য যেদিকে আছে ঠিক তার উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়াতে হবে প্রথমে। সূর্য থেকে আগত রশ্মিগুলিকে একটি নির্দিষ্ট লাইন ভেবে আমার মাথার ঠিক উপর দিয়ে ছায়ার শেষ পর্যন্ত কাল্পনিক রেখা ধরলাম। এই কাল্পনিক রেখা যেন জলবিন্দু গুলি থেকে আগত রশ্মি গুলির সাথে সমান্তরাল হয়। এ কাল্পনিক রেখা কিন্তু রামধনুকে দেখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই কাল্পনিক রেখার সঙ্গে ৪২ ডিগ্রি কোনের থেকে একটু বেশি কোনে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলে হয়তো আমরা রামধনুকে দেখতে পারব। যেখানে ৪০ ডিগ্রি থেকে একটু বেশি কোণে তাকিয়ে দেখলে আমরা বেগুনি রঙের প্রাধান্য দেখতে পাব যদিও বেগুনি রং রংধনুতে খুবই ম্লান ।
এখন তাহলে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই রংধনুটা বাঁকানো কেন হল? তার কারণ হলো ৪২ ডিগ্রির বেশি কোণে সমস্ত দিক থেকে বিভিন্ন রঙের বৃত্তাকার পরিধি আমরা দেখতে পাই। সমস্ত রংধনুই যে পূর্ণ বৃত্তাকার পরিধি গঠন করে তা নয়। অপর্যাপ্ত পরিমাণে জলবিন্দু এবং মেঘ-বাদলের বাধা তার কারণ।
তথ্যসূত্র: For The Love Of Physics - Walter Lewin