গল্পের ফাঁকফোঁকর: ছেলেমেয়েরা মা'কেই বেশি ভালোবাসে।

Guitar K Kanungo


Jan. 2, 2025 | | views :57 | like:2 | share: 2 | comments :0

অনেক অনেক বছর আগে ভাঙ্গাশ্বন নামের একজন রাজা ছিলেন।

আমি বুঝতে পারি না, আগেকার রাজাদের মধ্যে একশত সন্তান জন্ম দেবার কেন এতটা আকুতি। ভীষ্ম গান্ধার রাজ্যের রাজকন্যা গান্ধারীকে তুলে আনতে গিয়েছিলেন, কারণ গান্ধারীর একশ সন্তান জন্ম দেবেন কিংবা দিতে পারবেন—এরকম একটা কথা বাজারে প্রচলিত ছিল। কুন্তীর ক্ষেত্রেও একশ সন্তান না হলেও একাধিক সন্তান যে তিনি জন্ম দিতে পারবেন, সেই সব সন্তান দেবতার ঔরসে জন্মাবে—এরকম একটা কথা প্রচলিত ছিল এবং প্রকৃতপক্ষে সেটাই ঘটেছিল।

যাই হোক, মহারাজ ভাঙ্গাশ্বন একশ সন্তান লাভের আশায় খুব ধুমধামের সঙ্গে একটি যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞে দেবতারা বেশ সন্তুষ্ট হলেন। ফলত অচিরেই তিনি একশ সন্তানের পিতা হলেন। তাঁর স্ত্রী একশ সন্তানের জন্ম দিলেন। যজ্ঞ করার সময় মহারাজ ভাঙ্গাশ্বন একটা গুরুতর ভুল করে ফেলেছিলেন। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে আহুতি দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর যজ্ঞের যারা পুরোহিত ছিলেন তারাও ভুলে গিয়েছিলেন মহারাজকে এই ব্যাপারটা স্মরণ করিয়ে দিতে।

ফলত, ইন্দ্র ভীষণ কুপিত হলেন। তিনি ভাঙ্গাশ্বনকে নারীতে রূপান্তরিত করলেন। এই নারীতে রূপান্তরিত হওয়া 'রানী' ভাঙ্গাশ্বনও একসময় একশ সন্তানের জন্ম দিলেন। এর ফলে একটা ইউনিক অবস্থার সৃষ্টি হল। রাণীর গর্ভে জন্ম নেওয়া একশ সন্তান তাঁকে বাবা বলে সম্বোধন করছে, আবার তাঁর নিজের গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানেরা তাঁকে মা বলে সম্বোধন করছে।

ভাঙ্গাশ্বন দুইশ সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলেন, কিন্তু ইন্দ্রের সেটা সহ্য হল না। তিনি চেয়েছিলেন ভাঙ্গাশ্বন অশান্তিতে থাকুক। এই অবস্থায় ইন্দ্র আরো কুপিত হলেন। এবার তিনি দ্বিতীয় অভিশাপটি উচ্চারণ করলেন—এই দুইশ সন্তান নিজেদের মধ্যে মারামারি করে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এই অভিশাপের কথা জানতে পেরে ভাঙ্গাশ্বন খুবই মর্মাহত হলেন। তিনি রাজপুরোহিতদের ডেকে পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, দেবরাজ ইন্দ্র কেন তাঁর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন।

কারণ জানতে পেরে তিনি আবারো যজ্ঞের আয়োজন করলেন এবং এবার যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক দেবরাজ ইন্দ্রকে আহুতি দিলেন। ইন্দ্র সন্তুষ্ট হলেন, এদিকে দুইশ সন্তানের সবাই ততদিনে নিজেদের মধ্যে কাটাকাটি, মারামারি করে মারা গেছে। মহারাজ ভাঙ্গাশ্বন ইন্দ্রের কাছে আবেদন জানালেন তাঁর সন্তানদের বাঁচিয়ে দিতে।

ইন্দ্র সম্মত হলেন, কারণ তিনি ইতোমধ্যে যজ্ঞের আহুতিতে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু তিনি একটা শর্ত দিলেন। ইন্দ্র বললেন—"মহারাজ, আমি আপনার একশ জন সন্তানকে বাঁচিয়ে তুলব। আপনিই বলুন, আমি কাদের বাঁচিয়ে তুলব? যারা আপনাকে পিতা বলে সম্বোধন করে, তাদের বাঁচিয়ে তুলব, নাকি যারা আপনাকে মা বলে সম্বোধন করে, তাদের?"

মহারাজ ভাঙ্গাশ্বন কালবিলম্ব না করেই উত্তর দিলেন—"প্রভু, আপনি যে সন্তানরা আমাকে মা বলে ডাকে, তাদেরকেই বাঁচিয়ে তুলুন। ছেলে-মেয়েরা তাদের মা'কেই বাবার চাইতে বেশি ভালোবাসে।"

দেবরাজ ইন্দ্র বললেন—"তবে তাই হোক।"

কিন্তু ইন্দ্রের অভিশাপের আরো একটা অংশ তখনো কার্যকর রয়ে গেছিল। মহারাজ ভাঙ্গাশ্বনকে নারীতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, তিনি তখনো তাই ছিলেন। এবার দেবরাজ ইন্দ্র জানতে চাইলেন ভাঙ্গাশ্বন লিঙ্গ পরিবর্তন করে আবারো পুরুষ হয়ে উঠতে চান কিনা। দেবরাজ ইন্দ্রকে অবাক করে দিয়ে ভাঙ্গাশ্বন নারীই থেকে যেতে চান। নারী হিসাবেই তিনি যৌনতাকে অনেক বেশি উপভোগ করেছিলেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, মহারাজ ভাঙ্গাশ্বন পুরুষের তুলনায় নারী হিসাবেই যৌনতাকে বেশি মাত্রায় উপভোগ করলেন কিভাবে? তাঁর স্ত্রী তো পুরুষ হয়ে যাননি; তিনি তো নারীই ছিলেন। তাহলে কি তিনি অন্য পুরুষ সঙ্গীদের সঙ্গে মিলিত হতেন? মহারাজ ভাঙ্গাশ্বনের কি তাহলে কোন হারেম ছিল, যেখানে কামকলায় নিপুণ কিছু পুরুষের সমারোহ ছিল? রাজ্য শাসনটাই বা তিনি করছিলেন কোন পরিচয়ে? রাজা হিসাবে না রানী হিসাবে? মহাভারতে মহামতি ভীষ্ম এই গল্পটি বলেছিলেন। তাঁকে এই প্রশ্নগুলো কেউ করেনি, এবং তিনিও এসব প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি।

গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে এরকম একটি গল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়, কিছুটা ভিন্নভাবে। টাইরেসিয়াস নামের এক ব্যক্তি ঘটনাক্রমে একজোড়া সঙ্গমকারী সাপের স্ত্রী সাপটিকে হত্যা করে এবং অভিশপ্ত হয়ে নিজে একজন মহিলাতে পরিণত হন। বহু বছর পরে, একজন মহিলা হিসাবে জীবনযাপন করে, সে একজোড়া সঙ্গমকারী সাপের পুরুষ সঙ্গীটাকে হত্যা করে। এবার সে একজন পুরুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ টাইরেসিয়াস এমন একজন ব্যক্তি, যে কিনা নারী এবং পুরুষ দুইভাবেই জীবনযাপন করেছে।

এদিকে যৌন ক্রিয়ায় কে বেশি আনন্দ পায়—এই নিয়ে অলিম্পিয়ান দেবতাদের রাজা জিউস এবং রাণী হেরার মধ্যে একটি তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। জিউস এই বিতর্কের সমাধানের জন্য টাইরেসিয়াসকে সাক্ষী মানলেন। টাইরেসিয়াসকে জিজ্ঞাসা করা হল, যৌন ক্রিয়ায় কে বেশি আনন্দ পায়, পুরুষ না মহিলা? টাইরেসিয়াস উত্তর দিল—"মহিলা।" উত্তর শুনে জিউস হাসলেন, কিন্তু হেরা খুবই বিব্রত এবং ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি টাইরেসিয়াসকে অন্ধ হওয়ার জন্য অভিশাপ দেন।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929