গল্পের ফাঁকফোঁকর

Guitar K Kanungo


Dec. 14, 2024 | | views :534 | like:6 | share: 2 | comments :0
ঈশপের একটি বিখ্যাত গল্প আছে —বাঘ এবং রাখাল বালকের গল্প। রাখাল বালক মাঝেমধ্যে মিথ্যে করে বাঘ এসেছে বলে চিৎকার করত, আর গ্রামবাসীরা লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে আসত। কিন্তু যখন তারা দেখত কোনো বাঘ নেই, তখন বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যেত। একদিন সত্যিই বাঘ এলো, কিন্তু এবার আর গ্রামবাসীরা তার চিৎকারে সাড়া দিল না। তাদের ধারণা ছিল, এটি আগের মতোই মিথ্যে। ফলে, বাঘ বিনা প্রতিরোধে রাখাল বালক এবং তার গরুগুলিকে মেরে ফেলে চলে গেল।
গল্পটি শিক্ষণীয় হলেও, এতে একটি ফাঁক রয়েছে। বাঘের উপস্থিতি কি সম্পূর্ণ নিঃশব্দে হয়? ঈশপের সেই বাঘটি কি একবারও গর্জন করেনি? যদি গর্জন করে থাকে, তবে গ্রামবাসীরা তা শুনল না কেন, অথচ রাখাল বালকের চিৎকার তারা শুনতে পেয়েছিল? নাকি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এগিয়ে আসেনি, কারণ তারা চাইছিল রাখাল বালককে তার মিথ্যাচারের জন্য শাস্তি দিতে?
এবার অন্য একটি গল্পের দিকে নজর দেওয়া যাক—হনুমানের। রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র হনুমানকে আমরা সারা ভারতবর্ষে শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হতে দেখি। লক্ষণের জীবন বাঁচানোর জন্য বিশল্যকরণী নিয়ে আসতে হনুমান গন্ধমাদন পর্বতে যান। কিন্তু ঔষধি খুঁজে না পেয়ে, পুরো পর্বতটি তুলে নিয়ে আসেন।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছিলেন, হনুমান শক্তির পরিচয় দিলেও বুদ্ধির পরিচয় দেননি। তার মতে, ঔষধিটি খুঁজে না পেয়ে গোটা পর্বত তুলে আনা বুদ্ধিমানের কাজ ছিল না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হনুমান কি সত্যিই নির্বোধ ছিলেন?
রাবণের মতো বিদ্বান এবং শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে দূত হিসাবে হনুমানকে পাঠানো হয়েছিল, কারণ তিনি ছিলেন সর্বশাস্ত্রবিদ। সংস্কৃত ভাষায় দক্ষ এবং বেদজ্ঞ হনুমান ব্রাহ্মণ বংশজাত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। যদি তা সত্যি হয়, তবে তাকে আর একজন 'আদিবাসী' বা 'দলিত' বলা চলে না। তাহলে হনুমান কে ছিলেন? একজন বোকা নাকি জ্ঞানী? আদিবাসী নাকি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ?
একইভাবে প্রশ্ন তোলা যায়—হনুমান বেদজ্ঞ হলেন কেন, যেমনটি বাল্মীকি বলছেন? নিষাদপুত্র একলব্যের একটি লক্ষ্য ছিল—তিনি শ্রেষ্ঠতম তীরন্দাজ হতে চেয়েছিলেন। নিষাদ জনগোষ্ঠী পেশাগতভাবে শিকারী ছিল, আর একজন নিষাদ হিসাবে একলব্য নিজের দক্ষতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই উচ্চাভিলাষ ছিল সহজাত।
কিন্তু হনুমান বেদজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য? তিনি তো এমনিতেই অত্যন্ত শক্তিমান ছিলেন। এই একটি গুণই তাঁকে অন্যদের তুলনায় বিশিষ্ট এবং অপরিহার্য করে তুলেছিল। তাঁর তো রাজর্ষি জনকের রাজসভায় শাস্ত্র নিয়ে বিতর্ক করতে যাবার কথা ছিল না। তাহলে কেন হনুমানের বেদজ্ঞ হওয়া প্রয়োজন হল ?
এক্ষেত্রে কি বাল্মীকি হনুমানের মধ্যে আধুনিক কালের একজন 'সুপারম্যান'কে দেখতে চেয়েছিলেন? হনুমান কি তাহলে এমন একজন মহানায়ক যাঁর অপরিমেয় শক্তি আছে, কিন্তু নিজস্ব কোনো উচ্চাভিলাষ নেই? এমন একজন যার কোনো ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই, কেবল অসহায় এবং পীড়িতদের সাহায্যে তিনি এগিয়ে আসেন, এবং আশা করেন যে যাঁদের তিনি সাহায্য করেছেন, তাঁরাও অন্য অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসবে?

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929