বিশ্বাসবাদ ও কর্পোরেটদের লালসার শিকার যোশীমঠ

পীযূষকান্তি বালা


Dec. 3, 2024 | | views :301 | like:0 | share: 0 | comments :0

দেশ বিদেশের খবরের শিরোনামে আজ 'যোশীমঠ'। উত্তরাখন্ডের চামোলি জেলার ধর্মনগরী যোশীমঠ। নিউজ ব্রেকিং নিউজ, টিভি চ্যানেল এ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সঙ্গে রাজনৈতিক দলের(সে শাসক বা বিরোধী দলের হোক) গম্ভীর আলোচনা। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের মতামত বা সমাধানের পরামর্শ চাপা পড়ে যায় রাজনৈতিক দলের বক্তাদের চিল চিৎকারে। কারণ বোঝা যায় উদ্দেশ্য সমাধানের পথ বাতলানো নয়। ঘটনা যখন হট কেক, টি আর পি বাড়িয়ে নাও আর কি। হঠাৎ খবরের শিরোনামে যোশীমঠে ধস নেমেছে।বিশেষজ্ঞরা যত সময় গড়াচ্ছে ততই শোচনীয় ও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে যোশীমঠ'। বিরাট বিরাট ফাটলের কবলে ঘর বাড়ি হোটেল রাস্তা ঘাট। প্রাচীন ধর্মস্থান যোশীমঠ' সেখানকার বাসিন্দারা হাড় কাঁপানো এই শীতে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। বেলাগাম ঘর বাড়ি নির্মাণ ও পর্যটকদের উত্তরোত্তর ভিড়ে এই তীর্থস্থানগুলির অস্তিত্বও আজ বিপদের মুখোমুখি। সারা বছর পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। সেই ভিড় সামাল দিতে বিগত দশকের তূলনায় অনেকটাই বেড়েছে হোটেল, লজ, হোম স্টে ও ধর্মশালার সংখ্যা। এই বেলাগাম  নির্মাণ যোশীমঠ' ধ্বংসের একটা বিরাট কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

        অন্য একটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে NTPC র তপোবন বিষ্ণগড় প্রোজেক্ট। সেখানে ১২ কি. মি. পাহাড়ি এলাকায় টানেল করা হচ্ছে যেখান দিয়ে গঙ্গার ধৌলী নদীর জল টানেলে এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। সেই সুড়ঙ্গের জন্যই যোশীমঠের মাটি আলগা হয়েছে। ইসরো জানিয়েছে গত ২০২২ র এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৮.৯ সেন্টিমিটার যোশীমঠ বসে গিয়েছে। এবং গত ২৭/১২/২০২২ থেকে ০৮/০১/২০২৩ উপগ্রহের নেওয়া উপগ্রহচিত্রে ধরা পডেছে গাড়োয়াল হিমালয়ের জনপদ মাটিতে তলিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। অর্থাৎ মাত্র ১২ দিনেদিনের ব্যবধানে তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে যোশীমঠের মাটি ধসে গিয়েছে ৫.৪ সেমি। ইসরো রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু যোশীমঠ' নয় আলির রাস্তাও ধ্সে যেতে পারে। এই মুহূর্তে যে হারে ভূমিধস হচ্ছে তাতে পুরো যোশীমঠ' তলিয়ে যেতে পারে। শুধু যোশীমঠ' নয়, তলিয়ে যেতে পারে নৈনিতাল, উত্তর কাশীর অস্তিত্বও বিপদের মুখে। অথচ ১৯৭৬ সালে মিশ্র কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল যে যোশীমঠ ধসপ্রবণ এলাকা। এখানে ভারি নির্মাণ নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকারি প্রকল্প বিকাশের নামে পরিবেশের বিনাশ হচ্ছে। বিকাশের নামে উন্নয়নের নামে প্রকৃতি নিধন চলছে বিগত দুই শতাব্দী ধরে। অথচ প্রকৃতি তার সবকিছু আমাদের সাজিয়ে দিয়েছিল। সেই সময়কার প্রকৃতির অপরূপের কাছে আজকের রূপ দেখলেই বোঝা যায় কেন যোশীমঠ মাটির তলে চলে যাবে। শিল্প কারখানার নামে অরণ্য সাফ। নদীনালা বুজিয়ে আধুনিক শহর নগর গড়ে তোলা হচ্ছে। বিশাল বিশাল অট্টালিকা, হোটেল মন্দির ধর্মশালা কর্পোরেটদের আকাশচুম্বী চাহিদার কাছে প্রকৃতির ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছে/হচ্ছে,ধ্বংস করা হচ্ছে। সে তো প্রতিশোধ নেবে। ভারতবর্ষের সহজ সরল পিছিয়ে পড়া মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে নিক্ষর্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংস করেছে। সে এবার বদলা নিচ্ছে। প্রকৃতি তো এতোদিন অন্যায়  সহ্য করে গেছে এবার তার পালা।  বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি  দেখিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসবাদকে সামনে রেখে উন্নয়নের তাড়নায়(পড়ুন ভোটের জন্য) কর্পোরেটদের আরও মুনাফার লালসার শিকার আজ যোশীমঠ। অতীতের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে কোনো শিক্ষাই নেয়নি। গত ২০১৪ লোকসভা ভোটের প্রচারে উত্তরখণ্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে ১০০ দিনের মধ্যে সব ঝা৺ চকচকে করে দেবেন অতীতে যা কোনো সরকার করতে পারেনি। কিন্তু যোশীমঠ ধসপ্রবণ ও কম্পনপ্রবণের কথা বিশেষজ্ঞরা সতর্কবার্তা দিলেও মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আড়ালে কর্পোরেটদের লালসা ও অবাধ মুনাফার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। এখন বিশ্বাসবাদের নাম নিয়ে সারা দেশে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তোলা হোক আর হনুমান চালিশা পড়া হোক যদি দৈবগুণে যোশীমঠ ধসের হাত থেকে রক্ষা পায়। আর কর্পোরেটদের আড়ালও করা যায়। কেননা আজ সারা ভারতবর্ষের মানুষ জেনে গেছে যে আজ "বিশ্বাসবাদ ও কর্পোরেটদের লালসার শিকার যোশীমঠ।"

কলকাতা-৫৫

২২-০৩-২০২৩। 

ছবিঋণ- Created by @nehaart10

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929