ধর্ম শাস্ত্র নামক সংবিধানের যাঁতাকলে পড়ে যেমন মানুষের একটা বিশেষ সম্প্রদায় শোষণ ও নির্যাতন হয়ে আসছে, তেমনি এই ধর্ম শাস্ত্র গুলির নিষ্ঠুর লেখনী নিরীহ পশু পাখিদের কাছেও অভিশাপ হয়ে এসেছে।
এই যেমন অবলা প্রাণী হাঁস- মুরগি, গরু- ছাগল, পাঠা, মহিষ, উট, কবুতর- এরা জনেই না এদের কি দোষ! কোনো দোষ না করেও শুধু মাত্র ধর্ম শাস্ত্রের সন্মান রক্ষার্থে এই সকল প্রাণীর বলি দেওয়া হয়।
ভেবে দেখবেন যারা এই সকল ধর্ম শাস্ত্র চালাকি করে লিখেছে তারা কতটা নিষ্ঠুর মানসিকতার হতে পারে!
সেই সাথে ধার্মিক দের প্রচলিত কুসংস্কার গুলি যেভাবে পশু পাখিদের মানব সমাজে ভয়ের আর অভিশাপের বিষয় করে তুলেছে সেটা আরো লজ্জাজনক।
এই যেমন একটি উদাহরণ দিচ্ছি।বেশি উদাহরণ দিলে বেশি লেখা হবে আপনাদের পড়তে ইচ্ছা হবে না জানি।
দেখবেন সব পশু রাস্তা কাটে। বিড়াল রাস্তা কাটলে হয় দোষ।
কেনো?
কারণ, জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে রাহুকে অশুভ গ্রহ বলে মনে করা হয়। রাহুর প্রভাবে জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। দুর্ঘটনার যোগ আসতে পারে রাহুর প্রভাবে। বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে বিড়াল হল রাহুর বাহন। এই কারণেই বিড়াল পথ কাটলে তা অশুভ বলে মনে করা হয়। কারণ বিড়াল পথ কাটছে মানে সেখানে রাহুর প্রভাব রয়েছে। রাহু যেমন দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, তেমনি বিড়াল রাস্তা কাটলে তার জন্য দুর্ঘটনা হতে পারে।
এদিকে বেচারা বিড়াল না জানে রাহু কে, না তাকে চেনে, না রাহু তাকে খেতে দেয়, না থাকতে দেয়। নেহাতই কোনো খাদ্যের লোভে, নয়তো বা জীবনের ভয়ে, জীবন বাঁচাতে কারো তারা খেয়ে সে তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হয়েছে। আর এটাই হয়েছে তার দোষ। একেবারেই মন গড়া একটা গল্প বানিয়ে এই পশুটাকে একটা মানব সম্প্রদায়ের চোখে বিষ বানিয়েছে এই ধর্ম শাস্ত্র রচনাকার।
একই ভাবে হিন্দু ধর্ম অনুসারে সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর বোন হলেন অলক্ষ্মী। এই অলক্ষ্মী দারিদ্রের দেবী। বিড়াল অলক্ষ্মীরও বাহন বলে মনে করা হয়। তাই বিড়াল হল অশুভ আর সংকটের প্রতীক।
এবার আপনারাই বলুন। এটা কোনো যুক্তি হলো? লক্ষ্মী অলক্ষ্মী যতসব সাজানো নাটক আর সেই নাটকে খলনায়কের ড্রাইভার নাকি বিড়াল!
আমি তো আজ একটি পশুর দুর্দশার কথা শোনালাম। আপনারা নিশ্চয়ই আরো অনেক পশু, পাখি ও প্রাণীর নাম জানেন। আর এও জানেন এই ধর্ম মানতে গিয়ে কিভাবে এই সকল নিরীহ প্রাণীদের সাথে অত্যাচার করা হয়।
তাই একটাই কথা বলবো, কিছু করার আগে যুক্তি দিয়ে বিচার করুন, প্রয়োজনে কারো সাহায্য নিন। মানুষ হয়ে জন্মেছেন, মানবিক হোন। নিষ্ঠুর হবেন না। আপনার কাটলে, আপনাকে মারলে, তাড়া করলে আপনার যেমন অনুভব হয়, সকল জীবের (পশু, পাখি ও প্রাণীর) একই রকম অনুভব হয়।
ফলতা, দ:২৪ পরগনা।