জ্বিন বা ভুতে ধরা আসলে কী?

পার্থপ্রতিম পাল


Dec. 3, 2024 | | views :813 | like:0 | share: 0 | comments :0

আমাদের মত দেশে জ্বীনের আছর বা ভুতে ধরা ঘটনা দেখেননি এমন লোক বিরল। সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ হটাৎ অস্বাভাবিক কিছু কর্মকান্ড শুরু করে চারিদিকে হৈচৈ ফেলে দেয় তারপর ওঝা বা ফকিরের ভুত জ্বীন তাড়ানোর নাটকীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্বের সমাপ্তি হয়। 

কিন্তু এই জ্বিন বা ভুতের ভরের আসল কারন কী? 

কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান? কী কারনে জ্বিন ভুতে পাওয়া মানুষ এমন করে?

জ্বিন/ভুতে ধরা কেসের অধিকাংশ হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত। 

হিস্টেরিয়া ছাড়াও সিজোফ্রেনিয়া, স্কিটসোফ্রেনিয়া, ম্যানিয়াক ডিপ্রেসিভড বা পারকিনসিনিজম সহ আরো কিছু রোগে এই রকম আচরণ দেখা যাতে পারে। কিন্তু হিস্টেরিয়াই হল কমন কারন।

হিস্টেরিয়া কি?

হিস্টিরিয়া হচ্ছে ব্যক্তির মধ্যে দুর্দমনীয় ভয় ও অতিরিক্ত আবেগের প্রকাশ। এই অবস্থায় রোগীর অনিয়ন্ত্রিত এবং সহিংস আচরণ করে থাকে।

হিস্টেরিয়ার লক্ষণ -

১)শরীরের অংশ বা পুরো শরীরই অবশ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হওয়া।

২) কথা বলতে না পারা, ঢোক গিলতে না পারা, গলার কাছে কিছু একটা আটকে আছে বলে মনে হওয়া।

৩)কখনো চোখে না দেখা বা কানে শুনতে না পারা।

৪) খিঁচুনি। খিঁচুনি হয়ে তারা অজ্ঞান এর মত হয়ে যায়। যদিও সেটা প্রকৃত খিঁচুনি বা অজ্ঞান নয়। মৃগী রোগের প্রকৃত খিঁচুনির মতো এখানে জিব বা ঠোঁট কেটে যায় না।

৫)হাত-পায়ের অস্বাভাবিক নড়াচড়া, বারবার চোখের পলক পড়া, জোর করে চোখ বন্ধ করে রাখা, ঘাড় বাঁকা করে থাকা এবং বমি করা বা বারবার বমির চেষ্টা করা।

৬)সহিংস মনোভাব ও অস্থিতিশীল হৃৎস্পন্দন।

৭)কোনো কারণ ছাড়াই অট্টহাসি বা কান্না করা।

হিস্টেরিয়া কেন হয়?

যেকোন কারণে মানসিক ক্রিয়াশক্তি দুর্বল হয়ে গেলে সেই অবাঞ্ছিত অবদমিত কামনাগুলো সজ্ঞান চেতনায় উঠে আসতে চায়। 

শুরু হয় দ্বন্দ্ব, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নানা শারীরিক লক্ষণে।

• সামাজিক বা পারিবারিক অবহেলার শিকার হওয়া

• স্ট্রেস

• যৌন নিপীড়ন

• অলসতা

• কাছের কারো থেকে থাকলে

• নার্ভাসনেস

• আবেগের ত্রুটিপূর্ণ চর্চা

• মেন্টাল স্ট্রেস

• ভয়

• দুশ্চিন্তা

এগুলোই মূলত কারন।

হিস্টেরিয়া মেয়েদের কেন বেশি হয়?

নারীর ক্ষেত্রে সামাজিক বিধিনিষেধ বেশি থাকে। বিধিনিষেধের কারনে নারী তার কামনা-বাসনাগুলোকে অবদমিত করে রাখে। 

অবদমিত সহজাত কামনার সঙ্গে সামাজিক আচারের সংঘাত ঘটে। সৃষ্টি হয় সহ্যাতীত উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপ।

সহজে কিভাবে বুঝবেন এটা হিস্টেরিয়া নাকি প্রকৃত খিঁচুনি?

যেহেতু হিস্টেরিয়ায় কেউ প্রকৃত অজ্ঞান বা সেন্স হারায় না তাই এদের কখনো দাত লেগে জিভ কেটে যায় না। বরং দাতের পাটি খুলতে গেলে আরো জোরে আটকে রাখার চেষ্টা করে। একটা টর্চ নিয়ে চোখে ফেললে চোখের পিউপিল ছোট হয়ে যাবে আলোর জন্য যেটা অজ্ঞান হলে ছোট হয় না। ব্যাথা দিলে এরা ব্যাথা পায়।

ওঝা ফকিরে কিভাবে ভাল করে এদের?

হিস্টেরিয়ার ভুক্তভোগীরা মূলত আদর ভালবাসার কাঙ্গাল এবং অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। 

নিজের অবদমিত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর পর এদের ক্ষোভ প্রশমিত হয় এবং সেটা থেকে স্বাভাবিক হবার পরিচিত কোন পদ্ধতি খোঁজে এরা যেটা হল ওঝা ফকিরের ঝাড়ফুক।

হিস্টেরিয়াতে/ ভুতে/ জ্বিনে ধরলে কি করণীয়?

ফকির ওঝা দিয়ে অপচিকিৎসা না করিয়ে রোগীকে যথোপযুক্ত  চিকিৎসা করানো উচিৎ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এর মাধ্যমে। 

পারিবারিক মানসিক সাপোর্ট হল চিকিৎসার সবচেয়ে বড় পার্ট। প্রতিটা হিস্টেরিয়া রোগী যথোপযুক্ত চিকিৎসা এবং সহায়তা পেলে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929