কাকিনাড়াতে ১৯২৩ সালে এ কংগ্রেস অধিবেশন হয় তাতে মহম্মদ আলি জিন্না নিজের ভাষনে ভারতের দলিত সমাজকে হিন্দু আর মুসলিম মিশনারি সংস্থার মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার প্রস্তাব আনেন৷ এইভাবে দলিতদের বন্ধু সেজে সাহায্য করার নামে তাদের মধ্যে জাতিগত ভেদভাবনা জানানোর যে অপচেষ্টা শুরু হয় তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপি শোরগোল পড়ে যায়৷ সেই সামাজিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভগৎ সিং ১৯২৮ সালে কীর্তি পত্রিকায় অচ্ছুতের সমস্যা নামে একটা প্রবন্ধ লেখেন৷ বর্তমান সময়ে ভগৎ সিংকে নিজেদের দলে টানতে ডান থেকে বাম সমস্ত দলই ব্যতিব্যস্ত৷ এরফলে তাঁর নাম নিয়ে বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডা মূলক লেখা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে৷ এরই বিরুদ্ধে পড়তে গিয়ে উপরের লেখাটি চোখে পড়ে৷ এর হিন্দি আর ইংরেজি অনুবাদ চোখে পড়লেও বাংলা কোন অনুবাদ চোখে পড়েনি৷ কিন্তু ভারতের দলিত সমাজের মূল সমস্যা আর মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের মুক্তির উপায় নিয়ে এই লেখা বাংলায় অনূদিত না হলে বাংলারই ক্ষতি বলে এই অধমের মত৷ বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যখন ইউনিয়ন সরকার সরাসরি ব্রাহ্মণ্যবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম কারণে দলিত নিগ্রহের সংবাদ আমাদের কাছে আসছে, তখন ভগৎ সিং এর এই প্রবন্ধ শত বর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আজও কতটা প্রাসঙ্গিক তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বৃথা৷ তাই নিজ ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে নেমেছি এর বঙ্গানুবাদের অসাধ্য সাধনে৷ ভুলত্রুটি সত্বেও ভগৎ সিং এর চেতনা আপামর বাঙালির মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য৷ লেখাটি অনুবাদ করা হয়েছে marxist.org তে প্রকাশিত হিন্দি প্রবন্ধ থেকে৷
“আমাদের দেশের মতন দুরবস্থা অন্য কোন দেশের হয়নি৷ এখানে অদ্ভুত সব প্রশ্ন ওঠে মাঝেমধ্যেই৷ এরই মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন অচ্ছুৎ সমস্যা নিয়ে৷ সমস্যা হল, ত্রিশ কোটি জনসংখ্যার দেশে যে ছ কোটি লোক অচ্ছুৎ, তাদের স্পর্শেই নাকি বাকিরা ধর্মচ্যুত হয়ে যাবে৷ তারা যদি কুঁয়ো থেকে জল নিতে যায়, কুঁয়ো অপবিত্র হয়ে যায়৷ এই কথা বিংশ শতাব্দীতে হচ্ছে এটা ভাবতেই লজ্জা লাগে৷
আমাদের দেশ আধ্যাত্মিকতার দেশ৷ কিন্তু আমরা মানুষকে মানুষ হিসাবে মর্যাদা দিতেও ইতস্তত করি, যেখানে পুরোপুরি বস্তুবাদী হিসাবে পরিচিত ইউরোপ কয়েক শতক ধরেই ইনক্লাবের জিগির তুলছে৷ তারা আমেরিকা আর ফ্রান্সের বিপ্লবের সময়ই সমতার ঘোষনা করেছেন৷ আজ রুশ দেশও এইরকম বিচ্ছিন্নতা ভুলে বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ আমরা সবসময়েই আত্মা পরমাত্মার অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত থাকি এবং অচ্ছুৎদের পৈতেধারণের অধিকার আছে কিনা, তারা বেদ শাস্ত্র পাঠে অধিকারী কিনা সেই নিয়ে বিতর্কে মেতে থাকি৷ আমরা অভিযোগ করি যে আমাদের সাথে বিদেশীরা ভাল ব্যবহার করে না৷ ইংরেজ প্রশাসন আমাদের শ্বেতাঙ্গদের সমকক্ষ মনে করে না৷ কিন্তু এই অভিযোগ করার যোগ্যতা কি আদৌ আমাদের আছে?
শ্রী মহম্মদ নুর নামক সিন্ধের একজন মুসলমান ভদ্রলোক, যিনি বোম্বাই১ কাউন্সিলের সদস্য, এই বিষয়ে ১৯২৬ সালে বলেছেন,
"যদি হিন্দু সমাজ নিজ জনগোষ্ঠীর মানুষদের সর্বসাধারণের স্কুলে ভর্তির এবং আঞ্চলিক বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, যিনি কয়েক লক্ষ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন যখন নিজ ভাই বেরাদরদের জল খাওয়ার মতন প্রাথমিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, তাদের প্রশাসনের কাছে আরো অধিকার চাওয়ার কী অধিকার আছে? অন্য ভূখণ্ড থেকে আসা মানুষদের অভিযুক্ত করার আগে আমাদের দেখা উচিত আমরা নিজেদের লোকের সাথে কিভাবে ব্যবহার করি৷ আমরা কিভাবে উচ্চতর রাজনৈতিক অধিকারের দাবী জানাব যদি আমরাই নিজেদের ন্যুনতম অধিকার দিতে অস্বীকার করি? " হক কথা৷ কিন্তু যেহেতু একজন মুসলমান ব্যক্তি বলেছেন, হিন্দুরা বলবে যে দেখ, উনি ওই অচ্ছুতদের মুসলমান বানিয়ে নিজেদের দলভারী করতে চান৷
যখন তুমি ওদের জানোয়ারেরও অধম বলে মনে করবে তো ওরা অবশ্যই অন্য ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইবে, যেখানে ওদের বেশি অধিকার মিলবে, যেখানে ওদের সাথে মনুষ্যোচিত ব্যবহার করা হবে৷ তখন যদি বল যে এই দেখ খ্রীষ্টান আর মুসলিমরা হিন্দু ধর্মের ক্ষতি করছে, ভুল হবে৷
কথাগুলো সত্যি, কিন্তু এই শুনেই সবাই চিড়বিড় করে ওঠে৷ ঠিক এই ধরনের চিন্তা হিন্দুদেরও হয়েছিল৷ সনাতনী পণ্ডিতরাও এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন৷ মাঝেমাঝে "যুগান্তকারী " মানুষজনও এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন৷ লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে, যিনি অচ্ছ্যুতদের এক বড় সমর্থক, পাটনা শহরে হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে এই নিয়ে জোর বিতর্ক হয়েছিল৷ অনেক তর্ক বিতর্ক হয়৷ প্রশ্ন এই ছিল যে অচ্ছুতদের যজ্ঞোপবিত ধারণের অধিকার আছে কী না? এছাড়াও তাদের কি বেদশাস্ত্র অধ্যয়নের অধিকার আছে? বড় বড় সমাজ সংষ্কারক চুপ করে গেলেও, লালা লাজপত রায় সর্বসম্মতিক্রমে দুটো বিষয়েরই স্বীকৃতি আদায় করিয়ে হিন্দুধর্মের মর্যাদা রাখলেন৷ নইলে একটু ভেবে দেখুন কতটা লজ্জাজনক ঘটনা হত? একটা কুকুরও আমাদের কোলে বসতে পারে৷ আমাদের রান্নাঘরে নির্দ্বিধায় ঘুরতে পারে, কিন্তু একজন মানুষের স্পর্শে আমাদের জাত যায়৷ আজকের দিনেও মালব্য জির মতন বড় সমাজ সংষ্কারক, বিশাল অচ্ছুতপ্রেমী, না জানি আরো কত কী, একজন মেথরের হাতে মালা পরে নেন, কিন্তু কাপড় শুদ্ধ স্নান না করলে নিজেকে অশুদ্ধ মনে করেন৷ কী সুন্দর জিনিস৷ ভক্তপ্রিয় ভগবানের পূজা করার জন্য মন্দির বানানো হয়, কিন্তু তাতে অচ্ছুৎ প্রবেশ করলে মন্দির অশুদ্ধ হয়ে যায়! ভগবান নাকি রুষ্ট হন! যখন আমাদের ঘরেরই এই অবস্থা, তখন বাইরে সমানাধিকারের জন্য লড়াই কি আমাদের মানায়? তখন আমাদের এই ব্যবহারে কৃতঘ্নতাই প্রকাশ পায়৷ যারা নিচুস্তরের কাজ করে আমাদের স্বচ্ছন্দে বাস করতে সাহায্য করে তাদেরই আমরা দূরদূর করে তাড়াচ্ছি৷ আমরা পশুর পূজা করতে পারি, কিন্তু মানুষের পাশে বসতে পারিনা৷
আজকাল এই নিয়ে প্রচুর শোরগোল হচ্ছে৷ এই বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে৷ দেশের মুক্তি কামনার চিন্তা যে হারে বেড়েছে, তাতে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা অন্য কোন সুবিধা না দিলেও একটা সুবিধা এনেছে৷ প্রত্যেকেই বেশী অধিকারের দাবীর উদ্দেশ্যে নিজ জাতের সংখ্যা বাড়াতে উৎসুক৷ মুসলিমরা একটু বেশিই এই বিষয়ে জোর দিচ্ছে। ওঁরা অচ্ছুতদের মুসলমান বানিয়ে নিজেদের সমানাধিকার দেওয়া শুরু করে দিয়েছে৷ এতে হিন্দুদের অহং বোধ আহত হয়েছে৷ ঝামেলাও হয়েছে৷ শিখেরাও ভাবল যে আমরাও কেন পিছিয়ে থাকব? ওঁরাও অমৃত ছেটাতে শুরু করেছে৷ হিন্দু আর শিখদের মধ্যে যজ্ঞোপবিত ধারন বা চুল কাটা নিয়ে ঝগড়া হয়ে গেছে৷ এখন তিনটে দলই অচ্ছুতদের নিজের দিকে টানতে শুরু করেছে৷ এদিকে খ্রীষ্টানরা চুপচাপ নিজেদের দলভারী করে যাচ্ছে৷ অন্ততএইসব দোলাচলের মধ্যেই দেশের দূর্ভাগ্য কাটছে৷
এদিকে অচ্ছুতরা যখন দেখছে যে ওদের নিয়েই অন্যদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে আর ওদের নিয়ে সবাই টানাটানি করছে তখন ভাবল যে ওরাই আলাদা ভাবে সংগঠিত হবে৷ এতে ইংরেজ সরকারের কতটা হাত আছে জানা নেই, কিন্তু এই ধরনের প্রচারে সরকারী মেশিনারির প্রচুর প্রভাব আছে৷ "আদি ধর্ম মণ্ডল " এর মতন সংগঠনগুলি এই প্রচারেরই ফল৷
এখন আরেক প্রশ্ন উঠছে যে এই সমস্যার আদত সমাধান কোনটা? এর জবাব খুবই নির্দিষ্ট৷ প্রথমেই এটা বুঝতে হবে যে সব মানুষই সমান, জন্মসূত্রে বা কর্মসূত্রে কেউ ভিন্ন হয়ে যায়না৷ অর্থাৎ যেহেতু কেউ গরীব মেথরের ঘরে জন্ম নিয়েছেন, তারমানে সারা জীবন ময়লাই পরিষ্কার করে যাবেন, কোন রকম উচ্চতর কাজ করার অধিকার নেই, এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারবা৷ এইভাবেই আমাদের পূর্বপুরুষ আর্যরা এদের সাথে অন্যায় করেছিলেন এবং এদের নিচু বলে দূরে সরিয়ে নিম্নমানের কাজ করাতেন৷" এখন কী করবে? চুপচাপ দিন কাটাও!" এভাবেই ওদের ধৈর্য ধরার উপদেশ দিয়ে ওঁরা অচ্ছুতদের দীর্ঘসময় ধরে শান্ত করে রাখেন৷ কিন্তু এটা অত্যন্ত পাপ কাজ ছিল৷ মানুষের ভিতর থেকে মনুষ্যত্বই শেষ করে দিয়েছিল৷ আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরিতার চিন্তাকেই বিনষ্ট করে দিয়েছে৷ অনেক শোসন এবং অন্যায় হয়েছে এদের সাথে৷ এখন সবার প্রায়শ্চিত্ত করার সময়৷
এর সাথে আরেক সমস্যাও আছে৷ লোকেদের মনে আবশ্যক কাজের প্রতি ঘৃণা জন্মেছে৷ আমরা তাঁতিদেরও নিচু চোখে দেখেছি৷ আজ কাপড় বানায় যে তাকেও অচ্ছুৎ বলা হচ্ছে৷ ইউপিতে কাহারদেরও২ অচ্ছুৎ বলে মানা হয়৷ এতে খুবই সমস্যা হচ্ছে৷ এতে বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে৷
এই বিভাজনকে সামনে রেখে আমাদের আশু কর্তব্য এই যে আমরা নাতো এদের অচ্ছুৎ ভাবব, না বলব৷ সমস্যার সমাধান এই পথেই আসবে৷ নতুন ভারত সভা তথা নতুন কংগ্রেস যে পথ নিয়েছে তা যথেষ্ট ভাল৷ যাদের আজ পর্যন্ত অচ্ছুৎ বলে ডাকা হচ্ছে, তাদের কাছে এতদিনের পাপকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে, তাদের সমমানের মানুষ ভেবে, অমৃত ছেটানো, কলমা পড়া বা শুদ্ধিকরণ ব্যাতিত তাদের নিজেদের দলে সামিল করে তাদের হাতে জল খাওয়া এটাই উচিত পথ৷ নিজেদের মধ্যেই ভেদাভেদ করে কোন অধিকার না দেওয়া কখনই উচিত কাজ নয়৷
যখন গ্রামের দিকে মজুরদের মধ্যে প্রথম প্রথম প্রচার শুরু হয়, তখন সরকারি কর্মচারীদের কৃষকদের এই বলে উত্তেজিত করত যে দেখ এরা ভঙ্গী৩-চামারদের মাথায় চড়াচ্ছে যাতে এরা তোমাদের কাজ করা বন্ধ করে দেয়৷ এতে কৃষকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে৷ এদের বোঝা উচিত যে এদের অবস্থা ততদিন পর্যন্ত শুধরোবেনা যতদিন এরা এইসব গরীবদের নিচুজাত বলে নিজের পায়ের তলায় রাখতে চাইবে৷ সাধারণত বলা হয় যে এরা নোংরা৷ এর কারণ স্পষ্ট, এরা গরীব৷ গরিব রোগ সারাও৷ উঁচু জাতের গরীব লোকেরা কিছু কম নোংরা হয়না৷ নোংরা কাজ না করার অজুহাতও চলবেনা, কারণ মা সন্তানের ময়লা পরিষ্কার করলে মেথর তথা অচ্ছুৎ হয়ে যায়না৷
কিন্তু এই কাজ ততদিন পর্যন্ত সম্ভবপর হবেনা যতদিন না অচ্ছুতেরা নিজেরাই নিজেদের সংগঠিত করবেনা৷ আমি তো মনে করি তাদের নিজেদের সংগঠিত করে এবং গুনতিতে মুসলিমদের সমকক্ষ হওয়ার দরুন সমানাধিকারের দাবী যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক দিকনির্দেশ করছে৷ হয় জাতভেদের ঝামেলাই দূর করো,নইলে ওদের অধিকার ওদের দিয়ে দাও৷ অচ্ছুতদের স্কুল,কলেজ, কুঁয়া, এবং রাস্তা ব্যবহারের পূরো স্বাধীনতা দেওয়াই কাউন্সিল আর অ্যাসেম্বলির সদস্যদের মূল কর্তব্য। শুধুই মুখের কথা নয়, এদের গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে কুয়োতে চড়াক৷ ওদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাক৷ কিন্তু যে বিধানসভায় জাতের অজুহাতে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত বিল নিয়ে হা-হুতাশ শুরু হয়, সেখানে তারা অচ্ছুতদের নিজেদের সামিল করার স্পর্ধা করবে কী করে?
এইজন্য আমি মনে করি ওদের নিজস্ব জাতের প্রতিনিধি হোক৷ যে নিজেদের জন্য বেশি অধিকার চাইবে৷ আমি তো স্পষ্ট ভাষায় বলি, অচ্ছুৎ নামে অভিহিত আসল জনসেবক ভাইয়েরা, ওঠো! নিজেদের ইতিহাস দেখ৷ গুরু গোবিন্দ সিংহের ফৌজের আসল শক্তি ছিলে তোমরাই! তোমাদের ভরসাতে শিবাজী এমন কীর্তি স্থাপন করতে পেরেছেন যে আজও ওঁর নাম উজ্জ্বল৷ তোমাদের বলিদান স্বর্নাক্ষরে লেখা৷ তোমাদের প্রতিনিয়ত সেবার ফলে আমজনতাকে সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকতে দিয়ে যে পরম উপকার করছ, তা আমরা বুঝতে পারছিনা৷ ল্যান্ড - অ্যালিয়েনেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী তোমরা টাকা জোগাড় করেও জমি কিনতে পারবে না৷ তোমাদের উপর অত্যাচার এত বেশী হচ্ছে যে স্বয়ং মিস মেয়োও৪ তোমাদের জন্য বলে উঠেছেন, -" ওঠো, নিজেদের শক্তিকে জান৷ সংঘবদ্ধ হও!" আসলে স্বয়ং চেষ্টা না করলে কিছুই উপলব্ধ হয়না৷ (Those who would be free must themselves strike the blow)৫ স্বাধীনতার জন্য মুক্তিকামীদেরই চেষ্টা করতে হবে৷ মানুষের এমনই স্বভাব হয়ে গেছে যে ওরা নিজেদের জন্য বেশী করে অধিকার চায়, কিন্তু অধস্তনদের জুতোর নিচেই রাখতে পছন্দ করে৷ কথাতে আছে, "যেমন কুকুর তেমনই মুগুর"৷ অর্থাৎ সংঘবদ্ধভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দাও৷ তখন দেখবে, কেউই তোমাকে তোমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সাহস দেখাবে না৷ অন্যের খোরাক হওনা৷ অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া বন্ধ করো৷ কিন্তু আমলাতন্ত্রের ফাঁদে পড়োনা৷ এরা তোমার কোন সাহায্য করিতে চায়না, উলটে তোমাকেই দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করতে চায়৷ এই পুঁজিবাদী আমলাতন্ত্রই তোমাদের গরিব থাকার আসল কারণ৷ তাই ওদের সাথে কখনই মিশোনা৷ ওদের ফন্দি থেকে বেঁচে চলো৷ তাহলেই সব ঠিক হবে। তোমরাই আসল সর্বহারা, এককাট্টা হও৷ তোমাদের কিছু ক্ষতি হবে না৷ শুধু পরাধীনতার শিকল কেটে যাবে৷ ওঠো আর বর্তমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও৷ আস্তে আস্তে হওয়া সংস্কারে কিছুই হওয়ার নয়৷ সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লবের সূচনা করো, এবং এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত থাক৷ তোমরাই তো দেশের মূল আধার৷ আসল শক্তি৷ ঘুমন্ত দৈত্য৷ ওঠো আর বিপ্লব শুরু করো৷
১ ১৯২৮ সালে বোম্বাই বানানই ব্যবহার হত৷ তাই বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে৷
২ একপ্রকার নিচুজাত৷ মূলত জেলের কাজ করত৷
৩ এরা নিচুজাত হিসাবেই গন্য হয় মূলত৷ ঝাড়ুদারের কাজ করে মূলত৷
৪ আমেরিকান ঐতিহাসিক৷ পুরো নাম ক্যাথেরিন মেয়ো৷ এঁর লেখা বই মাদার ইন্ডিয়া ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন খারাপ দিক দিয়ে আলোচনা করেন৷ প্রচন্ড বিতর্কিত বই৷
৫ দাস বিদ্রোহের বিপ্লবী ফ্রেড্রিক ডগলাসের কোট৷ পুরো লাইনটা হল Those who would be free must themselves strike the blow. Better even to die free than to live slaves."
(অনুবাদে তাঞ্জন)