আস্তিক-নাস্তিক

বুবাই মান্না


Nov. 27, 2024 | | views :824 | like:2 | share: 2 | comments :0

অনেকদিন আগের ঘটনা! একজন মুসলিম বাড়ির বউ আরেকজন হিন্দু বাড়ির বউ একই দিনে একই হসপিটালে বাচ্চা প্রসবের দিন ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন ইলেক্ট্রিক না থাকায়, অন্ধকারে ২ পরিবারের বাচ্চা অদলবদল হয়ে যায়। ২টো বাচ্চা পুত্র সন্তানই ছিলো। সেই থেকে মুসলিম বাড়ির ছেলে হিন্দু বাড়িতে আর হিন্দু বাড়ির ছেলে মুসলিম বাড়িতে রীতিমত বড়ো হয়। একটা সময় পর, তারা বিয়ে করে সংসার জীবন করে। ২ জনের পরিবার খুব খুশি এই ভেবেই যে ওরা যে যার নিজ নিজ ধর্মে একটুও আঘাত ঘটায়নি। ধর্মের প্রতি দুই পরিবার একদম অটুট। শিবের মাথায় জল ঢালা থেকে ঈদের আগে ১ মাস রোজা রাখা ইত্যাদি যে যার ধর্মী় কাজ খুশি মনে করে যাচ্ছেন আর এটাই ভাবছেন যে ভগবান কিংবা আল্লাহ  যে যার পরিবার কে বাঁচিয়ে রাখছে, পরিবারের মঙ্গল করছে ইত্যাদি। একদিকে মুসলিম ছেলের পরিবার (আসলে ওনারা হিন্দু) খুশিতে গরুর মাংস খাচ্ছে, আরেকদিকে হিন্দু ছেলের পরিবার (আসলে ওনারা মুসলিম) খুশিতে জবাই না করে চিকেন খাচ্ছে কিংবা শুকরমাংস খাচ্ছে। কিন্তু কারোর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। কারোর মনের মধ্যে কোনো ধর্মীয় ভয়ও নেই। কে আস্তিক আর কে নাস্তিক? মুসলিম ছেলেটা আস্তিক যে হিন্দুরীতি মেনে চলছে নাকি হিন্দু ছেলেটা যে মুসলিমরীতি মেনে চলছে? নাকি দুটো পরিবার নাস্তিক?


 সমস্যাটা ওখানেই। মানুষের মনের মধ্যে সমস্যা। মনের সমস্যা। মানুষ যদি ভেবে নেয় যে হিন্দু গরুর মাংস খেলেই বিপদ ঘটবে তাহলে নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু ঘটনা ঘটলে প্রথমে ওটাই মনের মধ্যে আসে যে সেদিন গরুর মাংস খেয়েছিলো বলেই আজকে এমন অঘটন ঘটল, কিন্তু শুধুমাত্র গরুর দুধ খেলে এমন ঘটনা হতনা। ঠিক মুসলিমদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার যে হালাল করে মাংস খায়নি তাই অঘটন ঘটল কিংবা রোজা রাখেনি তাই হয়েছে, কিংবা শুকরমাংস খেয়েছিল বলে ইত্যাদি ইত্যাদি।


পাকিস্তানে কত হিন্দু কে জোর করে মুসলিম ধর্মে রূপান্তর করা হয়েছে। সেই হিন্দুরা বুঝি আজ হিন্দুর ভগবানের থেকে অভিশাপ পেয়েছে? ১৯৭১ সালে দেশ ভাগের আগে বাংলাদেশে কত হিন্দুকে জোর করে মুসলিম করা হয়েছে, তাদের বুঝি এখন হিন্দুদের ভগবান থেকে অভিশাপ পেয়ে জীবন ধংস হয়ে গেছে?


পৃথিবী সৃষ্টির আগে প্রাণের অস্তিত্ব ছিলোনা। তারপর ধীরে ধীরে ৮.৭ মিলিয়ন প্রজাতি দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে মানুষ একটা প্রজাতি। পরিবর্তন হচ্ছে। কত প্রজাতি বিলীন হয়ে গেছে। আবার কত নতুন প্রজাতি এসেছে। ডাইনোসর পৃথিবী থেকে উধাও হওয়ার আগে মানুষের উৎপত্তি ছিলোনা। তখন বুঝি মানুষরূপী ভগবানের পরিবর্তে ডাইনোসররুপী ভগবান ছিলো? তারপর সেই ডাইনোসররুপী ভগবান ডাইনোসর প্রজাতিকে নিষ্পত্তি ঘটালো? তারপর মানুষের প্রজাতি এলো। সেটা ঠিক মানুষ না। বানর এলো। পরিবর্তনের ধারায় সেই বানর আজকে মানুষে পরিবর্তন হয়েছে। ধীরে ধীরে মানুষের ও পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষদের চেহারার পরিবর্তন আসছে। সব কিছুর পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনের মাঝে কিন্তু সবাই বসবাস করছে। কতদিন? কতদিন বসবাস থাকবে? একটা মানুষের ক্ষেত্রে সেটা প্রায় ১০০ বছর। অন্যপ্রাণীরা এটাও জানেনা যে তারা কতদিন বাঁচে! এটাও জানেনা যে একদিন মানে আসলে কি? "ওহ পৃথিবী তার নিজের চারদিকে একবার লাট্টুর মত ঘোরা?" আচ্ছা এই ব্যাপার! কিন্তু পৃথিবী কি জিনিষ? এটাও জানেনা। ওদের জানার দরকারও পড়েনা। ওদের যেটা দরকার সেটা হচ্ছে বাসস্থান, আর খাদ্য। আর কিছু দরকার পড়েনা। কিন্তু মানুষের বুদ্ধি বেশি। "ওরা যত বেশি জানে, তত কম মানে"। আর কম মানছে বলেই এত সমস্যা। তাই মানুষ আজ নিজ নিজ দেশ বানিয়েছে, নিজ নিজ বাসস্থান থেকে শুরু করে সব কিছু বানিয়েছে। মেডিক্যাল সাইন্স, টেকনোলজি ইত্যাদির ব্যাবহার শুরু করেছে। অনেক সময় লেগেছে ঠিকই। আরো লাগবে। কিন্তু যাই করুক না কেনো এই পৃথিবীর বুকেই হচ্ছে। সেই গোলাকার বস্তুটার ওপরেই হচ্ছে। আমরা কিন্তু সেই একটা প্রজাতি। "প্রজাতি"। ভগবান না। ভগবান - আল্লাহ আর বাকি সব ধর্মের ভগবান বলে কেউ নেই। ছিলো না। থাকতে পারেনা। মানুষের মধ্যে অলৌকিক শক্তি থাকতে পারেনা। মানুষ আরো ৫টা প্রাণীর মতোই, আরো ৫টা প্রজাতির মতোই। মানুষ ভগবান্ হলে মানুষের অস্তিত্ব সবার আগে হতো। পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সবার থেকে মানুষের শুধু বুদ্ধি বেশি। আর বুদ্ধির জোরেই এতো কিছু গড়ে উঠেছে আর তার সাথে সাথে আজ নানান ধরনের ধর্মের ভগবানের আবির্ভাব ঘটিয়েছে মানুষ। এটাও একটা ব্যবসা। এই বিশ্বে ধর্ম নিয়ে সব থেকে বেশি ব্যাবসা চলছে এখন। মানুষ না খেতে পেলেও, টাকার অভাবে ছেলে পুলেকে পড়াশুনা না করতে পারলেও ধর্মের নামে যে মানসিক আছে সেটা সেই টাকা খরচ করে শোধ করেন। আর সেই জন্যই, মানুষ জন্ম নিলেই তাকে ধর্মের ইনজেকশন দেওয়া হয়। আর তখন থেকেই সে নিজ নিজ ধর্মের প্রতি গোড়ামি শুরু করে, কিন্তু সেই ইনজেকশনটা অন্যকোনো ধর্মের হলে তখন অন্যধর্মের গোড়ামি করতো ঠিক যেমন হিন্দু মুসলিম বাড়ির বাচ্চা অদলবদল হওয়ার ঘটনা।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929