শিব রাত্রি পালন করা নারী জাতির কলঙ্ক নয় কি?

সৌরাষ্ট্র দাশ


Nov. 27, 2024 | | views :1023 | like:11 | share: 6 | comments :1

নারীরা এতো ভক্তি সহকারে এতো নিষ্ঠা ও উন্মাদনার সাথে যে শিব-রাত্রি পালন করে, তার ইতিহাসটা কি তারা জানে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা যদি শাস্ত্রগ্রন্থগুলি পড়ত বা জানত তাহলে এতো অশ্লীল-অসভ্য-বর্বর কর্মটি তারা কিছুতেই করতে পারত না। যে সব নারীরা শিব পূজা বা শিবরাত্রি পালন করে তাদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য, আগে ধর্মশাস্ত্রগুলি পাঠ করুন, তারপর যদি রুচিতে বা সম্মানে না লাগে তবে শিবরাত্রি পালন করুন।

এবার জানুন শাস্ত্রগ্রন্থগুলিতে শিবের চরিত্র সম্পর্কে বা শিবরাত্রি পালন সম্পর্কে কি ইতিহাস আছে----- শিবের চরিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন পুরাণ গ্রন্থে বিভিন্ন রকম বর্ননা থাকলেও কাহিনী বা ঘটনা ধারা মোটামুটি প্রায় একই রকম।

শিব সম্পর্কে বর্ননা পাই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, মার্কন্ডেয় পুরাণ, গড়ুর পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, নারদ সংহিতা, শিব উপাখ্যান, শিবায়ন ---- মূলত এই কয়েকটি গ্রন্থে।

এই গ্রন্থগুলিতে যেরকম বর্ণনা পাই তা হল, শিব অত্যন্ত কামুক, দুশ্চরিত্র, ব্যভিচারি, নেশাগ্রস্থ, অপরিচ্ছন্ন, বিকৃতি রুচির। সর্বদা গাজায় আসক্ত থাকে।

দিনের বেলায় "কুচনি" নামক বেশ্যা পল্লীতে সে পড়ে থাকে। তার দশ সহস্রাধিক উপপত্নী রয়েছে।

এই নিয়ে তার সর্বক্ষনের গৃহবিবাদ। সন্ধ্যার পরে চিতার ছাই মাখিয়ে, গাজায় টান মেরে শ্মশানে পড়ে থাকে।

অধিকাংশ রাতেই বাড়ি ফেরে না। কখনো কখনো মৃতের পচাগলা মাংস ভক্ষন করে।

পোশাক বলতে দিনের বেলায় শুধু কোমরে বাঘের ছালটুকু,আর রাতে উন্মাদ -- বস্ত্রহীন।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে শিবলিঙ্গ পূজা বা শিবরাত্রি পালন সম্পর্কে যে কাহিনী পাই তা এতোটাই অশ্লীল-কদর্য, যা বর্ননারও অযোগ্য। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর "উপনিষদের ভাষ্য" গ্রন্থে এই বর্ণনা সম্পর্কে বলেছেন - "ইহা রতিশাস্ত্রকেও হার মানাইয়া দেয়, - এতটাই কুরুচিসম্পন্ন" (পাতা- ৯৬, পঞ্চম সংস্করন)।

অতি সংক্ষেপে কাহিনীটি হলো -"কামাতুর শিবের কামনার আগুন থেকে সতীত্ব-নারীত্ব বাঁচাতে সমস্ত নারীরা স্বর্গ ছেড়ে পালাতে থাকে। দিন-ক্ষণ নেই, নেই স্থান-কাল-পাত্রীর বিবেচনা। শিবের সম্মুখে পড়লেই তাদের রক্ষে নেই।

এমতাবস্থায় নিরুপায় হয়ে সমস্ত নারীরা ব্রহ্মার কাছে গেল। ব্রহ্মা তাদের কোনও পরামর্শ না দিতে পেরে বিষ্ণুর কাছে পাঠিয়ে দেয়।

অবশেষে বিষ্ণুর কাছে গেলে তিনি নারীদের পরামর্শ দিয়ে বলে, যখন শিব তাদের নারীত্ব হনন করবে তখন শিবের লিঙ্গ ছেদ করে দিতে হবে এবং ঐ ছেদ করা লিঙ্গকে বেলপাতা দিয়ে ঢেকে রেখে শান্ত করবে ----- তবেই শিবের কামনাকে দমন করা যাবে।

বিষ্ণুর কথামতো নারীরা একদিন অতি সুকৌশলে ও গোপনে শিবের লিঙ্গ (যৌনাঙ্গ) কেটে নেয়। কিন্তু কিছুতেই শিব লিঙ্গকে শান্ত করা যাচ্ছে না।

এমতাবস্থায় নারীরা পুনরায় বিষ্ণুর কাছে গেলে সে পরামর্শ দিয়ে বলে যে, এই কাটা লিঙ্গ শীল-নড়া দিয়ে থেঁতলে বেলপাতা দিয়ে চাপা দিতে হবে।

এভাবে অবশেষে শিবলিঙ্গ শান্ত হয় এবং শীল-নড়া দিয়ে থেঁতলে দেওয়ার ফলে শুধু বীর্য-দ্বার টুকু অক্ষত থাকে " (সূত্র -- ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, দেবদেবীর জন্মবৃত্তান্ত খন্ড, চতুর্থ সংস্করন, গীতা প্রেস, পাতা- ১৫৮ থেকে ১৬২, ১৬৬ থেকে ১৭২, ১৭৪)। পরবর্তীকালে শিবের এই বীর্য-দ্বারের পূজা করা হয়।

মার্কন্ডেয় পুরানের মৎস খন্ডে শিব সম্পর্কে আমরা জানতে পারি ---" পাঁচ-ছয় দিবস শঙ্কর বাড়িতে না ফিরলে উমা কুচনি পাড়ার পতিতালয় হইতে লোক দিয়া ধরিয়া আনিবার আজ্ঞা দিতেন "(ষষ্ঠ সংস্করন, সত্যম পাবলিকেশন্স, পাতা- ২১৮)। "শিবায়ন" গ্রন্থে মাতাল শিবের একটি চমৎকার বর্ণনা পাই - "গাজার নেশায় শিবের দু'চোখ ঢুলুঢুলু, দু'পা টলছে, সারা গায়ে ছাইভস্ম মাখানো, শ্মশান থেকে পথ চিনে আসতে পারছে না, পাড়া প্রতিবেশীর বাড়িতে ঢুকে পড়ছে।

অবশেষে প্রায় ভোর রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রী উমার পা ধরে মা মা বলে কাঁদতে শুরু করে "(বাংলায় অনুবাদ - দ্বিজ মাধব, দ্বিতীয় সংস্করন, পাতা- ৬১)। বিষ্ণুপুরাণের দক্ষযজ্ঞ পর্বে শিবের সঙ্গে সতীর বিয়ের সময়ের একটি মজার বর্ণনা পাওয়া যায়, তাহলো - শিব বিয়ে করতে গিয়েছে।

কোমরে শুধু বাঘের ছাল, আর বেল্ট হিসেবে জড়ানো রয়েছে সাপ। শিব বিয়ের পিড়িতে বসলে শালিকারা মজা করার জন্য সাপের মাথায় গাছড়া ধরলে সাপ শিবের কোমর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

সঙ্গে সঙ্গে শিবের কোমর থেকে বাঘের ছাল পড়ে যায়। আর কি, শাশুড়ির সামনে ল্যাংটো শিব।

শিব সম্পর্কে এই হলো ধর্মগ্রন্থগুলির বর্ণনা। যে সব নারীরা শিবরাত্রি পালন করেন বা শিবলিঙ্গ পূজা করেন এবার তাদের কাছে আমার প্রশ্ন - আপনারা কি শিবের মতো পুরুষ স্বামী হিসেবে পেতে চান? আসলে ব্রাহ্মন্যবাদী সিস্টেমে আপনারা ব্রাহ্মন্যবাদের ক্রীতদাসী হয়ে বেঁচে আছেন।

তাই ভালো মন্দকিছু বিচার না করে, ইতিহাস না জেনে, শুধু অন্ধভক্তিতে ডুবে আছেন - সেখানে যুক্তি-তর্ক, বিদ্যা-বুদ্ধি সব অচল।

তাইbতো অশিক্ষিতা থেকে শুরু করে B.A., M.A. পড়া মেয়েরা, স্কুল-কলেজের শিক্ষিকা, ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ মেয়েরাও এই অন্ধ কুসংস্কারে ও অন্ধ ভক্তি বিশ্বাসে মেতে আছেন। এর বাইরে কিছু ভাবতেই চায় না তারা।

শিবরাত্রি পালন করব, অথচ স্বামী মদ-গাঁজা খেলে দুশ্চরিত্র - লম্পট হলে এতো রাগ-অশান্তি করা হয় কেন? আর এই ইতিহাস জানার পরেও যদি কোনও মেয়ে শিবরাত্রি পালন করে, তবে আত্মমর্যাদাহীন, জ্ঞান-বুদ্ধিহীন, অন্ধ কুসংস্কারগ্রস্থ নারী বলা উচিৎ নয় কি? পাথরের শিবলিঙ্গে হাজার হাজার বালতি দুধ না ঢেলে ঐ দুধ ক্ষুধার্ত শিশুকে খাওয়ানো অনেক অনেক ভালো কাজ নয় কি? হে নারী জবাব দাও।

Akash Rana --Dec. 13, 2024, 6:03 a.m.

সোর্স এর লিঙ্ক গুলো দিলে ভালো হয়

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929