কোরানে আল্লাহকে কি নবি মুহাম্মদের থেকে পৃথক করা যায়?
শম্ভুনাথ চার্বাক
Nov. 27, 2024 | | views :822 | like:2 | share: 2 | comments :0
নবি ছিলেন মক্কার কুরাইশদের হাসমি গোষ্ঠীর লোক। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ভাবুক। বাবা মারা যাওয়ার পর মরুভূমির ঊষর প্রান্তরে অন্যের উট চরাতে চরাতে নিজের দুর্দশার কথা ভাবতেন। তার ধনী কাকারা তার দায়িত্ব নেননি। আবার এক চাচা আবু লাহাব মুহমুহাম্মদের উপর ছিলেন ভীষণ খাপ্পা ফলে নবির পয়লা নম্বর শত্রু। নবির পূর্বপুরুষেরা সবাই পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী। নবির পৌত্তলিক দেব দেবীদের উপর রাগ বিদ্বেষের কারণ তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার ধনী চাচারা নবিকে দেখেননি। আর এই চাচারা কাবা ঘরের দেবদেবীদেরকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। ফলে এই দেবদেবীদের প্রতি রাগ অবিশ্বাস আর মক্কার নির্জনে পারস্য ও গ্রীকদেশীয় উপকথা শুনতেন এবং ইহুদী ও খ্রিস্টান পুরোহিতদের সাথে একান্ত আলোচনায় একটা অবসেশান বা ঘোরের মধ্যে পড়েন। এর ফলে একেশ্বরবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নতুন আল্লাহর সৃষ্টি করেন, এবং নিজেকে মুশা বা ঈশার মত রসুল কল্পনা ভাবতে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নবি যদি কাবাঘরের পরিচর্যা করে তার চাচাদের মতো কাবা ঘরের আয়ের ভাগ পেতেন তবে কি তিনি নতুন ধর্মের প্রবর্তন করতেন? নবি অবশ্যই এক বিশাল কৃতিত্বের অধিকারী, একদম নিঃস্ব অবস্থা থেকে এক বিশাল আরবীয়ান সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তার সার্থক রূপদান করেছেন ধর্মের আশ্রয়ে। তার সৃষ্ট ইসলাম আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। এই ধর্মের প্রধান হচ্ছে আল্লাহর বাণী (ওহি) সংবলিত কোরান এবং যে ধর্মীয় আচরণগুলি কোরানে নেই কিন্তু নবি পালন করতেন সেগুলিকে সুন্নাহ বলে। এবং সেগুলোর লিখিত রূপ হাদিস। নবির মৃত্যুর পরে লক্ষ লক্ষ হাদিস লেখা হয়েছে। বর্তমান সৌদির রাজপুত্র প্রিন্স সলমন নবির মৃত্যুর পর লেখা সব হাদিস বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন। প্রায় প্রতিটি ডিগ্রীধারী অশিক্ষিত নিরক্ষর মুসলমান বিশ্বাস করে কোরানের প্রতিটি বাণী আল্লাহ প্রেরিত প্রত্যাদেশ বা ওহি, কোনও মানুষের রচিত নয়। যেমন বড় বড় ডিগ্রীধারী অশিক্ষিত হিন্দুরাও মনে করে বেদ অপৌরুষকার। আল্লাহর পাঠানো ওহি গুলিই আল্লাহর রসুল মুহাম্মদের মুখ দিয়ে বেরিয়েছে। যদিও সেই সময়েই আয়েশার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল আপনার আল্লাহ তো আপনার সুবিধার্থে ওহি পাঠাতে বিশেষ দেরী করেন না।
কোরানে আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট ও সদ গুণাবলীর উল্লেখ আছে। তিনি সমস্ত যুক্তিবুদ্ধির সীমাকে অতিক্রম করে গেছেন। তিনিই আকাশের তারকারাজির মালিক, তিনি ছয়দিনে সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মেঘ বৃষ্টিপাত বজ্র ঝড়ের স্রষ্টা। তিনি তার নিদর্শন দেখাতে নবিকে নিয়ে মেরাজে করে সপ্ত আকাশ ভ্রমণ করান এবং হাজার কিমি দূরবর্তী দুই মসজিদ ভ্রমণ করান এক রাত্রের মধ্যেই, এ যেন ধনী ব্যক্তি আল্লার তার দরিদ্র আত্মীয় মুহাম্মদকে ঐশর্য্য প্রদর্শন করাচ্ছেন। কোরান বেশ কিছু জায়গায় গ্রীক উপকথা ও বাইবেলের ৫০% জেরক্স কপি হলে ও নবির প্রতি আল্লাহ আরও বেশি স্নেহপরায়ণ। কিন্তু সমগ্র কোরান খুঁটিয়ে পড়লে দেখা যায় আল্লাহর পাঠানো প্রত্যাদেশ বা ওহিগুলি বেশ কিছু জায়গায় সাংঘর্ষিক এবং সব জায়গাতেই মুহাম্মদ এর সুবিধাভোগী এবং সব থেকে আশ্চর্যের যেটা এই ওহিগুলির বক্তা কে মুহাম্মদ না আল্লাহ তা পরিষ্কার বোঝা যায়। এই নাজিল করা ওহিতে এক কথা বলছেন এবং পরেক্ষণেই ঠিক এর বিপরীত ওহি নাজিল করছেন। আর বেশ কিছু সুরার এমন সব আয়াত আছে যেগুলি পড়লে মনে হয় মুহাম্মদের নিজের বক্তব্য, কিছুতেই আল্লাহর প্রত্যাদেশ হতে পারেনা তা বাক্যের গঠন দেখলেই বোঝা যায়। মুহাম্মদ এভাবেই সারা কোরান ধরে নিজের বক্তব্য আল্লাহর নামে চালিয়েছেন। একটা উদাহরণ দিচ্ছি ------- সুরা আ-বাসা থেকে, আয়াত ১৩- ১৬
পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে,
সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লারই,
যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়াময় বিচার দিনের মালিক,
আমরা একমাত্র তোমারই উপাসনা করি,
তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি,
তুমি আমাদেরকে সঠিকভাবে চালিত কর সঠিক পথে
তাদের পথে যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ,
যারা তোয়ার রোষে পতিত হয়নি,পথভ্রষ্টও হয়নি।
এইটা কি আল্লাহর ওহি বা প্রত্যাদেশ হতে পারে? আল্লাহ কি নিজেই নিজের গুণগান করছেন? আল্লাহ কি নিজে নিজের উপাসনা করছেন বা করবেন? মোহের দ্বারা যারা আচ্ছন্ন নয় তারা এর সত্য মিথ্যা বুঝতে পারেন। এখানে নবিই আল্লাহ আর আল্লাহই নবি। আর যারা ধর্ম মোহের দ্বারা আচ্ছন্ন তাদের কাছে কোরান ঐশী বাণী। ৯৯% মুসলমান কোরান পড়েন না, পড়লেও নিজেদের মস্তিষ্ককে বন্ধক দিয়ে আসেন মসজিদের ইমাম মুমিনদের কাছে।
সমগ্র কোরানের বেশকিছু আয়াত সাংঘর্ষিক। কোরানে আল্লাহ যুক্তিবুদ্ধির সীমা অতিক্রম করে গেছেন। সেখানে আল্লাহ ও বিভ্রান্ত, এই এক আয়াতে এক কথা আর কিছু পরেই তার বিপরীত কথা। কোরানের সব থেকে বেশী সুবিধাভোগী মুহাম্মদ। নবি ভাল মন্দ যা করেছেন তার সব কাজের শিলমোহর দিয়েছে কোরান। আল্লাহ মুহাম্মদের বিপরীত মতের লোকদের জন্য খড়্গহস্ত আর নবির জন্য পরম দয়ালু। নবীর অতিরিক্ত যৌন ক্ষিদে মেটানোর জন্য বিবিদের সাথে দ্বন্দ্ব হলেও আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন নবির পক্ষেই। সংসারের মেয়েলি ব্যাপারেও তিনি এত আয়াত নাজিল করেছেন (সুরা তাহরিম / আহজাব) তাতে আশ্চর্য হতে হয়। নবির লুঠতরাজ এবং বানু কারজাই গোষ্ঠীর ইহুদীদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিও সমর্থন জানিয়ে আল্লাহ নবির পক্ষেই আয়াত নাজিল করেন। গণিমতের মালের বন্টনেও আল্লাহ নবির পক্ষে, নবির অংশ ১/৫ ভাগ, বাকি মাল অন্যেরা ভাগ করে নেবে। সেখানেও নবিই সব থেকে বেশী সুবিধা প্রাপক।
আল্লাহর বক্তব্য কিভাবে সাংঘর্ষিক তার কিছু উদাহরণ কোরান থেকেই দেওয়ার চেষ্টা করছি। কোরানে আল্লাহ সর্বস্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী, সবজান্তা, সর্বশক্তিমান, সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, সব অভাব থেকে মুক্ত, করুণাময়, কর্তৃত্বব্যাঞ্জক, ক্রুদ্ধ, অভিশাপদাতা, হুমকি প্রদানকারী এবং ছলনাকারী (সুরা আনফাল ঃ আয়াত ৩০) ও প্রতিশোধ পরায়ণ (সুরা সাজদাহ্ আয়াত ২২, সুরা জুকরফের ৪১ ও ৫৫ নং আয়াত)। আবার আল্লাহ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু (১২ঃ ৯২)। আবার কেউ তার সাথে শরিক করলে তা হবে সম্পূর্ণ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ (৪ঃ১১৬)। তিনি তার বান্দাদের প্রতি অবিবেচক হবেন না (৫০ঃ২৮)। অথচ দোজখের আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেন। তিনি বলেন যখনই অবিশ্বাসীদের চামড়া দোজখের আগুনে পুড়ে যাবে তখনই আবার নতুন চামড়া জন্মাবে যাতে তারা অনন্তকাল কঠোর শাস্তি পেতে থাকে (১৮ঃ৫৫)। আল্লাহইতো সব বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসীদের স্রষ্টা, তাহলে উনিতো সবাইকে বিশ্বাসী করেই পাঠাতে পারতেন। তা না করে অবিশ্বাসীদের শাস্তি দেবেন কেন? মূল দোষী কে এখানে অবিশ্বাসী না আল্লাহ?
পরম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন আর যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন (১৮ঃ১৭)। আবার পরেরক্ষণেই যারা বিভ্রান্ত হবে তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। সুরা বাকারার ১০ ও ৯০ নম্বর আয়াত/ সুরা মায়িদার ৯৪ নং/সুরা তওবার আয়াত ৩৯। প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ নিজেই বিভ্রান্ত করবেন আবার নিজেই কঠোর শাস্তি প্রদান করবেন? বিভ্রান্ত হওয়ার দায় কার?
একদিকে আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আবার এক আয়াতে তার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। (সুরা সাফফ, আয়াত ১৪)। মরিয়মের সন্তান ঈশা ----- আমরা ঈশ্বরের সাহায্যকারী। বা আমি মানুষের জন্য লোহা নাজিল করেছি যাতে মানুষের জন্য মহাশক্তি ও উপকার রয়েছে যাতে অদৃশ্য আল্লাহ জানতে পারেন কে তাকে ও তাঁর রসুলকে সাহায্য করেছেন? (সুরা আল হাদিদ – আয়াত ২৫)। যিনি সর্বশক্তিমান তিনি কী করে নগণ্য মানুষের সাহায্য চান? সর্বশক্তিমান কী করে নগণ্য আবু লাহাবের (মুহাম্মদের চাচা) মাথায় বজ্রপাতের অভিশাপের আয়াত নাজিল করেন? অদ্ভুত লাগে শত্রু কাকা নগন্য আবু লাহাবের প্রতি এত বিদ্বেষ যে আল্লাহ আবু লাহাবের নামে আল্লাহ একটা সুরা নাজিল করে পাঠালেন? নগণ্য আবু লাহাবের নামে একটা সুরা পর্যন্ত নাজিল হয় কেন? আবু লাহাবের স্ত্রী পর্যন্ত এই অভিশাপ থেকে বাদ যায়নি। শক্তিমান লোকেরা কি নগণ্য লোকদের অভিশাপ দেন? পুটিন ইউক্রেন আক্রমণ করে সঠিক না বেঠিক করেছেন সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। উনি কি জেলেনেস্কিকে অভিসম্পাত করছেন? সুরা বালাদে ও সুরা হুমাজার (১০৪ নং আয়াতে) ওয়ালিদ আল মুগিরা এবং উমাইয়া বিন খালিদের প্রতি একই ধরণের হুমকিপূর্ণ অভিশাপ। কারণ মুহাম্মদের দুইপুত্র কাশেম ও তাহের মারা যাওয়ার পর ওয়ারেল মুহাম্মদকে লেজকাটা (উত্তরাধিকারহীন) বলে ঠাট্টা করেছিলেন। এছাড়া নবি আল্লাহর রসুল, আল্লাহ নবির ছেলে কাশেম তাহেরকে বাঁচাতে পারলেন না?
বদরের যুদ্ধের পর কাব বিন আশরাফ নামে ইহুদী কবি হেরে যাওয়া পৌত্তলিকদের প্রতি সমবেদনা দেখালে এবং তাদের মুহাম্মদের উপর তাদের স্থান দিলে আল্লাহ ক্রুদ্ধ হয়ে সুরা নিসার ৫১-৫৭ আয়াত নাজিল করলেন। আবার সুরা হাশরেনবি যখন বানু নাজির নামে ইহুদী গোষ্ঠীকে হত্যা করে নির্মূল করলেন তখনও আল্লাহ নবির কাজের প্রশংসা করে হত্যাকারী নবির পক্ষে সমর্থন করে আয়াত নাজিল করলেন সুরা বানু নাজিরে।
আল্লাহ সারা ব্রহ্মান্ডের মালিক, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতা নড়ে না। কিন্তু আল্লাহ সব সময়েই নবির পক্ষে। নবির উদ্দেশ্য বাস্তয়ায়নে বাধা দানকারীদের তিরস্কার করেছেন। যুদ্ধে জিতলে আল্লাহ জিতিয়েছেন আর যুদ্ধে নবি হারলে তিনি নিশ্চুপ। একদম সাধারণ কামুক মানুষের মতো কামুক নবি যৌনতা নিয়ে কুড়ি জন স্ত্রীদের সাথে সমস্যায় পড়লে মধ্যস্ততা করে নবিকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। নবি পালিত পুত্র জায়েদের সুন্দরী স্ত্রী জয়নাবের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন আয়াত নাজিল করে। সুরা আহজাব/ সুরা তাহরিম এর সাক্ষ্য বহন করে।
আল্লাহ এই মহাবিশ্বের মালিক হলেও তিনি হিজরি ১-১১ হিজরি (৬২২-৬৩২ খ্রী) আল্লাহ নবির সাথে আরবের হেজাজ ও নেজদ অঞ্চলে বসবাস করতেন। বিশ্বের অন্য অঞ্চলের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। কোরানে ইউরোপ আমেরিকা অষ্ট্রেলিয়া বা ভারতীয় উপমহাদেশ ও দঃপূর্ব এশিয়ার কথা নেই। কারণ নবির এই মহাদেশগুলির সম্পর্কে কোনও জ্ঞান ছিল না। আর আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার হয়েছে ১৫২৬ সালে।
নবি সবাইকে আল্লাহর পক্ষে যুদ্ধে যাওয়ার (জিহাদের) জন্য আরবীয়ানদের প্ররোচিত করেছেন। যা বর্তমানের মৌলবাদী মুসলিম সংগঠনগুলি করে। মুসলিমদের মধ্যে এইরকম ধর্মীয় শিক্ষার জন্যই টেরোরিস্ট বেশি। এটা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যই নবির শিক্ষা। যুদ্ধে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ বা শৈথিল্য দেখালে তাদের দোজখের লেলিহান শিখার ভয় দেখিয়েছেন। আর যারা জিহাদে গেছে তাদের জন্য জান্নাতের তলদেশে নহর প্রস্তুত করিয়েছেন। এগুলো যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে পাঠ করলে নবি মুহাম্মদের সাথে আল্লাহর ফারাক করতে পারবেন?
নবির প্রতি কেউ উপহাস করলেও সঙ্গে সঙ্গে সুরা হিজরের ৯৫ নং আয়াতে নবিকে স্বান্তনা দেওয়া হল --- যারা বিদ্রুপ করে তাদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য আমিই যথেষ্ট। সুরা আনফালের প্রায় পুরোটা জুড়ে বদরের যুদ্ধে মহান আল্লাহর গুণগান ও ভূমিকার কথা। আল্লাহ ফিকেল মাইন্ডেড, কারণ একটা আয়াত নাজিল করেই আবার পরেরক্ষণেই এর বিপরীত আয়াত নাজিল করেন। যেমন দেশের শত্রু নিপাত সম্পূর্ণভাবে না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোনও নবির পক্ষে সমীচীন নয় (আয়াত ৮ঃ৬৭)। কিছু পরেই আবার আয়াত (৮ঃ৭০) বলা হল, যুদ্ধবন্দীদের থেকে মুক্তিপণ আদায় করে মুক্ত করে দেওয়া হবে। মাত্র তিন আয়াতে পরিবর্তন, আল্লাহ বেশ খামখেয়ালী কিন্তু। যুদ্ধে জিতলে আল্লাহর অনুগ্রহে জিতেছেন। পরিখা বা খন্দকের যুদ্ধে বিজয়ের পর আল্লাহর গুণগান করে প্রচুর আয়াত নাজিল হয়। কিন্তু ওহুদের যুদ্ধে যখন মুসলমানদের শোচনীয় পরাজয় হয় এবং নবির প্রিয় চাচা হামজা বিন আব্দুল মোতালেব সহ সত্তর জন সাহাবি মৃত্যুবরণ করেন তার সম্পর্কে আল্লাহ নিশ্চুপ, এখানে আল্লাহর কোনও দায় নেই।
আল্লাহর মহাবিশ্ব যেন হেজাজে নেমে এসেছিল। কোরানের একাধিক আয়াতে হেজাজের সামাজিক অবস্থার বর্ণনা আছে। বিভিন্ন ঘটনা ও সংঘাত, বিতর্ক, রটনাকারীদের জবাব, ব্যক্তিগত ঝগড়ায় মধ্যস্ততা, মেয়েলি ব্যাপার, যুদ্ধের জন্য সনির্বন্ধ আহবান, মুনাফেকদের নিন্দা, যুদ্ধলব্ধ গণিমতের মাল, নারীর প্রতি নির্দেশ এবং অবিশ্বাসীদের দোজখের আগুনের হুমকি দিয়ে শত শত আয়াত আছে।
কোরানে স্রষ্টার মানবসুলভ গুণাবলী আছে। আল্লাহর রাগ, খুশী আনন্দ, ভালবাসা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, ষড়যন্ত্র করা, ছলনা, অভিসম্পাত করা, হুমকি দেওয়া সহ মানুষের সমস্ত গুণাবলী আছে। আসলে মানুষ নবি মানুষের আদলেই আল্লাহকে সৃষ্টি করেছেন। এটাই স্বাভাবিক মানুষ তার নিজের আদলেই ঈশ্বরকে সৃষ্টি করে। আমরা অতীব ক্ষুদ্র মানব, আমরা আশা করব মহাবিশ্বের স্রষ্টা নগণ্য মানুষের দোষগুণ থেকে মুক্ত থাকবেন। কিন্তু কোরান এর বিপরীত সাক্ষ্য দেয়। সেখানে নবিকে আর আল্লাহকে ফারাক করা যায় না।
গরীব নিরক্ষর অশিক্ষিত অল্প শিক্ষিত মানুষকে ধর্মের ওপরের অংশের লোকেরা নিজেদের সুবিধার্থে যা বোঝায় তাই বোঝে। কারণ অধিকাংশ লোক কোরান বা অন্য ধর্ম শাস্ত্র পাঠ করলেও তা যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে করে না, মোহ মুক্ত হয়ে করে না। আর এক ধরণের মানুষ আছে যারা ধর্মমোহের বিশ্বাসের ভাইরাসে আচ্ছন্ন, তার যুক্তিহীন বিশ্বাসের তাড়নায় আবেগতাড়িত হয়। তাদের যুক্তি প্রমাণ দিলে কোন কাজ হয় না। তবে একদম কিছু হয় না তা বলা যাবে না। বিশ্বে এখন সংশয়বাদী ও নাস্তিকের সংখ্যা ১৬% শতাংশে পৌঁছে গেছে। শুধু বাজে কথা নয় যুক্তি দিয়েই অবতারণা করতে হবে। ধর্মমোহ অন্ধবিশ্বাসের প্রাচীর ভাঙতে হবে তবেই এ বিশ্ব মানুষের বসবাসের উপযোগী হবে। নয় পাকিস্তান আফগানিস্তান হবে ...। আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, কিন্তু তা লেখাকে দীর্ঘায়িত করবে, পড়ার ইচ্ছা চলে যাবে। তাই বলি কোরান গীতা বেদ যাই পড়ুন যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে পড়ুন। সুরা ও আয়াতগুলি যুক্তির দ্বারা বিশ্লেষণ করুন।
(তথ্য : কোরান, সহি বুখারী, আলী দোস্তির মুহাম্মদের তেইশ বছর।)