যুক্তিবাদী নবধারার অভিবর্তন
মহম্মদ মহসীন
Nov. 27, 2024 | | views :819 | like:0 | share: 0 | comments :0
অভিবর্তন অর্থাৎ উত্থান। যুক্তিবাদ, যুক্তিবাদভিত্তিক চেতনার উন্মেষ প্রকৃতির বিবর্তন নিয়ে কিছু পড়াশুনা করলে জানতে পারা যায়, বিভিন্ন যুগে তার পরিশীলন পরিসরের তাবৎ পরিবর্তন ঘটে গেছে, বিশেষত রেঁনেসাঁ পরবর্তী যুগে, সারা পৃথিবীজুড়ে যে শিল্পায়ণ ঘটে, তার ফলে মানবসমাজে এসে গেল নবধারার উত্থান। কয়েকটি ধাপে এই পর্যায়গুলির ক্রমান্বয়ী আগমন ঘটে। সেগুলি বলা যায়, the Age of Reason, the Scientific Revolution, the Age of Revolution, the Industrial Revolution, the Age of Imperialism ইত্যাদি। রাজনীতি-ধারার যে পরিবর্তন এল, তাতে আরো বেশি বেশি করে ধর্মকে হাতিয়ার করে গড়ে তোলার প্রয়োজন হতে থাকল। আর ধর্মকে যতই যুক্তিবাদের খোলস পরানোর চেষ্টা হতে থাকল, গোঁজামিলের পাহাড় জমা হতে থাকল ততই দ্রুততার সঙ্গে।
আশার কথা হল ধর্মের অন্ধতা মানুষের মনকে পুরোপুরি গ্রাস করতে পারে না। তাই ধর্মের গোঁজামিলগুলো একটু ভাবলেই আমাদের কাছে ধরা পড়ে।
ধর্মের যত বাড়বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সমতালে ধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধমতও কিন্তু শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
মানুষ যদি একটু প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ধর্মের দিকে তাকায়, তাহলে ধর্মের গোঁজামিলগুলি সহজেই ধরা যায়। যুগ যুগ ধরে ধর্মগুরুদের মিথ্যাচার সমাজে অসত্যকে সত্যের প্রতিষ্ঠা দেয়।
ধর্মোপজীবীরা ধর্মকে আশ্রয় করে কেরিয়ার তৈরি করে। রাজনীতির লোকেরা এদের স্পনসর করেন। মানুষে মানুষে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ ধর্মের এক 'মহান-অবদান' সমাজে।
ধর্ম হল, পরিবার, সমাজ ও দেশ হতে দেশান্তরে, ক্রমাগত মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে, ঈশ্বর, আত্মা, প্রেতাত্মা, পরমাত্মা জাতীয় অস্তিত্বহীন বিষয়কে বিশ্বাসনীয় করে তুলে সেই অন্ধবিশ্বাসের নেশায় প্রতিদিন যাপনের তন্ত্র গঠন করে, ধর্মান্ধকারে নিমজ্জিত মানুষকে ভক্তিরসে জারনের মাধ্যমে অন্ধকারতর পথের দিশায় বিভ্রান্ত করে মানুষের যুক্তিশীল চেতনাকে প্রতিনিয়ত প্রতিহত করার মাধ্যমে রাজনীতি ও ধর্মোপজীবিদের কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থ করার এক মোক্ষম হাতিয়ার।
ধর্ম হলো পরিশ্রম না করে জীবিকার্জনের সহজতম উপায়।
যেহেতু ধর্ম রাজনীতির এক মোক্ষম হাতিয়ার, ধর্মকে ব্যবহার করে সম্প্রদায়গত আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভোটবাক্সে সাফল্য পাওয়া যায়, যেহেতু ধর্ম নেশায় আচ্ছন্ন জনগনকে তাদের নেশার বস্তুটি সরবরাহ করতে পারলেই রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায়, তাই ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার সমস্যা হয় না। ধর্ম নেশাগ্রস্তদের ধর্মীয় আকাঙ্খা পূরণ করতে পারলেই অনেক দায় পূরণ না করলেও রাজনীতিগত কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না, তাই মানুষ ধর্মের অন্ধকারে বাস করুক, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই সেটি চায়। ধর্মনেশায় উৎসাহ যোগায়, ধর্মান্ধতা প্রসারে ইন্ধন যোগাতে চায়।
এবার সিদ্ধান্ত আপনার, বর্জ্যকে পূজ্য করবেন, না কি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সার্বিক বিকাশের পথে চলবেন।