প্রসঙ্গ: ড্রাগস ও ম্যাজিক রেমেডিজ আইন এবং...

অভিষেক দে


Nov. 26, 2024 | | views :888 | like:0 | share: 0 | comments :0

গত ১৯/১২/২০২২ -এ সন্ধে ০৭:০০ থেকে রাত ০৯:৩০ পর্যন্ত ছিলাম অনলাইন আড্ডায় যেখানে একটি বিজ্ঞান সংগঠনের কয়েকজন তরুণ-তরুণী, আইনি বিশেষজ্ঞ, ও অভিজ্ঞ বয়স্করা যুক্ত ছিলেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল, The Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisements) Act 1954, এবং The Drugs and Cosmetic Act 1940 (Amendment 2020)। আলোচনা হয়েছে তুমুল জমজমাট। সেসবই সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরলাম।


ভারতীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত আইন "The Drugs and Magic Remedies (objectionable advertisement) Act 1954" যা ৩০ এপ্রিল ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় এবং ১ মে ১৯৫৪ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি গেজেটের বিশেষ সংখ্যায় দ্বিতীয় অংশের প্রথম অধ্যায়ের ২৪ নং ক্রমে প্রকাশিত হয়। এই আইনটি ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে ভারত সরকারের Ministry of Health and Family Welfare দ্বারা Amendment হয়েছে। অন্যদিকে, "The Drugs and Cosmetics Act 1940" যার শেষ Amendment হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ তে। 


উক্ত দু’টি আইনানুসারে মন্ত্র-তন্ত্র, রেইকি, ম্যাগনেটোথেরাপি, জেমথেরাপি, তাবিজ-কবজ, রত্নপাথর, দৈব শক্তি, অলৌকিক ক্ষমতা বা জাদুশক্তি ইত্যাদির দ্বারা কোনও রোগ সারানোর দাবী আইনত অপরাধ। কোনও ওঝা, গুণিন, জানগুরু, সরকারি রেজিস্ট্রেশনবিহীন ভুয়ো ডাক্তার কিংবা প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক (MBBS), অলৌকিক ক্ষমতাধর, দৈব চিকিৎসক, জ্যোতিষী, তান্ত্রিক ইত্যাদিরা এই আইন ভাঙলে অর্থাৎ রোগমুক্তির দাবী বা রোগ সারানোর প্রচার করবার জন্য রয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আজীবন কারাদণ্ডের বিধান অথবা জেল ও জরিমানা দুটোই। 


এইখানে জানিয়ে রাখা ভালো, ২৮ নভেম্বর ২০০১ সালে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.সি.প্যাটেল এবং বিচারপতি এ.কে. সিকরি-র ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অলৌকিক ক্ষমতা বলে অসুখ বা কোনও সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখালে জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, বিজ্ঞাপনদাতা ও বিজ্ঞাপন প্রকাশক প্রচার মাধ্যমের বিরুদ্ধে যেন "The Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act 1954" অনুসারে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়। সে খবরের সংক্ষেপসার ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ২২ জুন ২০০৩ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে - রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসা যাঁরা করেন, তাঁরা নিজের নামের আগে 'ডাক্তার' শব্দটা কোনওভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ এই চিকিৎসা পদ্ধতির কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রক স্পষ্ট করে এটাও জানিয়েছে যে, রেইকি সহ জেম থেরাপি, কালার থেরাপি, ম্যাগনেটোথেরাপি, আরোমা থেরাপি, মিউজিক থেরাপি ইত্যাদি তথাকথিত প্রতিটি চিকিৎসা পদ্ধতিই বেআইনি এবং এইসব পদ্ধতি শেখানো কিংবা প্রয়োগকারী ব্যক্তি কোনও ভাবেই নিজের নামের আগে 'ডাক্তার' শব্দটাকে ব্যবহার করতে পারবেন না।


১৯ মার্চ ২০০৯ সালে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দপ্তর একটি নোটিশ জারি করে [GSR 884 (E)] The Drugs and Cosmetics Act (1940) Amendment করেছিল। সেই নোটিশে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ওষুধের ওজন, আয়তন, উপাদান সমূহের পরিমাণ ওষুধের লেবেলের গায়ে না সাঁটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। কোনও ওষুধ সেবনের ফলে রোগীর মৃত্যু বা আশঙ্কাজনক ক্ষতি হলে ওষুধ প্রস্তুতকারকের শাস্তি হিসেবে আজীবন কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে ও দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে। এই আইনে "cosmetics" দ্রব্যাদিও পড়ছে এবং যা "ISI Standard" এর মান দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার পর বাজারে বিক্রি করা যাবে। উক্ত দু’টি আইনে, ওষুধ বা 'ড্রাগ' বলতে বোঝানো হয়েছে, মানব শরীরে যা কাজ করে বলে দাবি করা হবে যেমন তাবিজ-কবজ, মাদুলি, যাগ-যজ্ঞ ইত্যাদি অনেক কিছুই যা কিন্তু ড্রাগের সংজ্ঞায় পড়ছে।


The Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act 1954 আইনের প্রথম সংশোধন হয় ১৯৬৩ তে। এই আইনে 9(A) ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, এই আইন ভঙ্গকারীদের 'Cognizable Offence' হিসেবে গন্য করা হবে। অর্থাৎ কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ কোনও ভাবে এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে প্রাথমিক জানার ভিত্তিতে কোনও অভিযুক্তকে Warrant ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে (Notwithstanding anything contained in The Code of Criminal Procedure 1898 an Offence Punishable under this Act shall be Cognizable)। 


আগে Drugs and Magic Remedies Act ভঙ্গকারীদের অপরাধ ছিলো 'Non-Cognizable' অর্থাৎ এক বা একাধিক ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে হত। পুলিশ সরকারের তরফ থেকে অভিযোগকারীর পক্ষে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতেন। আদালত অভিযুক্তর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা ওয়ারেন্ট দায়ের করলে তবেই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন।

এই উল্লিখিত আইন ভাঙ্গাটা যেহেতু Non-Cognizable অপরাধ বলে 1963 সালে আইন সংযোজনের আগে পর্যন্ত গণ্য করা হত, তাই আদালত অভিযুক্তের বাসস্থল কিংবা ব্যবসা কিংবা চাকরিস্থলে থানা মারফত অভিযুক্তকে সমন পাঠাতেন। সমন অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ। যাতে লেখা থাকে কবে, কখন, কোন আদালতে হাজিরা দিতে হবে। যেহেতু উল্লেখিত এই আইন ভাঙ্গাটা Criminal Offence বা ফৌজদারি অপরাধ তাই অভিযুক্তকে আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হত।


কোনও জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, ওঝা, জানগুরু ইত্যাদি বুজরুক প্রতারকের বিরুদ্ধে  Magic Remedies আইন ভেঙ্গেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরও কোনওও বিশেষ কারণে পুলিশ নিরব দর্শক থাকতেই পারেন। তখন আপনি অভিযোগকারী হলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করার প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে (যেমন ডাইরি নং অথবা লিখিত অভিযোগ গ্রহণের থানার সিলমোহর ও স্বাক্ষর করা অভিযোগপত্র) আদালতে মামলা করা যায়। একে 'Complain Case' বলে। এই মামলার ভিত্তিতে আদালত সামনস্ পাঠাবেন অভিযুক্তর কাছে। অভিযুক্ত আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেবেন। সমন অগ্রাহ্য করলে আদালত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশকে আদেশ দেবে। 


এত দূর পড়ে প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা সাময়িক বিভ্রান্ত হতে পারেন। তারা মনে করতে পারেন উক্ত ড্রাগ আইন শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মন্ত্রতন্ত্র, তাবিজ-কবজ ইত্যাদি কিংবা অলৌকিক উপায়ে রোগ সারানোর দাবী জানাবে অথবা যে ব্যক্তি রোগ মুক্ত করবার প্রতিশ্রুতি দেবে। যদিও বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। এখানে একটি বিশেষ খবর তুলে ধরছি যা ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে "এই সময়" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম - "বিজ্ঞাপনী-চমকে ঠকে লাইন ডাক্তারের চেম্বার, আদালতে"। -- "টিভির পর্দায় বীরেন্দ্র সহবাগ, হর্ষ ভোগলেদের দেখে আশা জেগেছিল মনে। টাকে চুল গজানোর বিজ্ঞাপনে মজে অনেক টাকা খরচ করেছিলেন কড়েয়ার যুবক। কিন্তু চুল গজানোর বদলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হন তিনি। সংশ্লিষ্ট সংস্থায় অভিযোগ জানাতে গেলে আমলই দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন ওই যুবক। আলাদত ওই সংস্থাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভুক্তভোগীকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।


ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন স্থূলতা কমানোর বিজ্ঞাপনে ভরসা করে বোকা বনে যাওয়া হুগলির মধ্যবয়সীও। ভুঁড়ি কমিয়ে রোগা হতে গিয়ে বিপত্তি বেধেছিল। বেহালার গৃহবধূ অবশ্য বিজ্ঞাপনী ওষুধে স্তন ক্যান্সার নিরাময়ের স্বপ্ন দেখে জীবনটাই হারিয়ে ফেলেন। আবার বেলঘরিয়ার এক তরুণ প্রাণে বাঁচলেও মুখমণ্ডলের পোড়া ত্বকের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অবসাদের শিকার হন। ফর্সা হওয়ার ক্রিম লাগিয়ে তাঁর শ্যামলা মুখ কালো হয়ে গিয়েছিল। এমন ভুক্তভোগী কম নয়। বিজ্ঞাপনী চমকে আস্থা রেখে পস্তানোর নজির অসংখ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনের দাবি বাস্তবে মেলে না। উল্টে বিজ্ঞাপনে মজে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বড়ি খেয়ে কিংবা তেল বা ক্রিম মেখে হরেক শারীরিক সমস্যার শিকার হন অনেকেই। সে সব সঙ্কট সামলাতে হয় চিকিৎসকদেরই। অনেক মামলাও হচ্ছে ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, মানুষের হুঁশ ফিরছে না। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, সে জন্যই চটকদার ও বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনী চমকে রাশ টানতে আইন সংশোধন করতে চলেছে কেন্দ্র। ১৯৫৪-র ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিজ (অবজেকশনেবল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট) আইন কড়া করতে সংশোধনী বিলের খসড়া তৈরি করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, চুল পড়া, চুল পাকা, ফর্সা হওয়া, ক্যান্সার নিরাময়, প্রেশার-সুগার কমানো, লম্বা হওয়া, রোগা হওয়া, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, স্তন ও লিঙ্গবর্ধনের দাবি বা অর্শ, ফিসচুলা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, যৌনসমস্যা, শীঘ্রপতন, বুড়িয়ে যাওয়া, দাঁত শিরশিরানি ইত্যাদি নিরসনের দাবি করে বিজ্ঞাপন চলবে না। আইন ভাঙলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার সংস্থানও রাখা হয়েছে সংশোধনী বিলে।" 


আরেকটি খবরের অংশ তুলে ধরলাম, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০-"এই সময়" পত্রিকা থেকে- 


"অমুক তেলে টাকে চুল গজায়! তমুক বড়িতে দূর হয় ক্লান্তি, বাড়ে যৌনশক্তি! এই তেলের ব্যবহারে লিঙ্গবর্ধন অনিবার্য! ওই হেলথ ড্রিঙ্কে লম্বা হওয়া অবশ্যম্ভাবী! অমুক টনিকে স্মৃতিশক্তি ক্ষুরধার হবে! তমুক ক্রিম ব্যবহারে ফর্সা হবে গায়ের রং! হরেক পণ্যের এ সব চটকদার প্রচার তো ছিলই। বিজ্ঞাপনী বাজারে এর সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে এমন সব দাওয়াই, যা নাকি ম্যাজিকের মতো নিরাময় ঘটায় ডায়াবিটিস, আর্থ্রাইটিস, এমনকী ক্যান্সারের। এই সব পণ্যের যাবতীয় বিজ্ঞাপনে এ বার কঠোর ভাবে রাশ টানতে উদ্যোগী হল কেন্দ্র। এমন অবাস্তব ও মনভোলানো বিজ্ঞাপনী চমকের রমরমা বন্ধে আইন সংশোধন করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পুরোনো আইনে শাস্তির সংস্থান ছিল নখদন্তহীন। তা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ১৯৫৪-র ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিজ (অবজেকশনেবল অ্যাডভারটাইজমেন্ট) আইনকে কড়া করতে সম্প্রতি সংশোধনী খসড়া বিল তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ২০২০-র সেই প্রস্তাবিত বিলের খসড়া নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেশবাসীর কাছে মন্ত্রক পরামর্শ বা আপত্তির কথা জানতে চেয়েছে আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে। খসড়ায় বলা হয়েছে --- ৭৮ রকমের অসুখ বা সমস্যা (আগে ছিল ৫৪টি) নিরাময়ে বিভ্রান্তিকর এই সব মনমোহিনী বিজ্ঞাপন কোনও গণমাধ্যমে দেওয়া যাবে না। বর্তমান সংস্থানে প্রথম দু’বার আইন লঙ্ঘনের শাস্তি যথাক্রমে ছ’ মাস ও এক বছরের জেল। জরিমানার কোনও অঙ্ক বলা নেই সেখানে। প্রস্তাবিত সংশোধনীর খসড়ায় আইন লঙ্ঘনের শাস্তি প্রথম বার দু’ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।... কেন্দ্রীয় এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘বর্তমান আইনে যে সব ওষুধের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তার অনেকগুলিই এখন অচল। আবার অনেক আয়ুর্বেদ-ইউনানি ওষুধ বর্তমান আইনের আওতায় নেই। এই সব ফাঁক গলে বহু পণ্যের বিজ্ঞাপনী চমক বেড়ে গিয়েছে। অথচ তার সঙ্গে বাস্তব সমস্যা সমাধানের সম্পর্ক কম।’ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, গত দেড় বছরে এমন বহু পণ্য ও ওষুধের অবাস্তব বিজ্ঞাপন এবং তার কুফল সংক্রান্ত হাজারখানেক অভিযোগ জমা পড়েছে সরকারের কাছে। এর মধ্যে কেরালা ও তামিলনাড়ুতে দু’টি মৃত্যুর নজিরও রয়েছে। বছর দেড়েক আগে রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় আয়ুষ প্রতিমন্ত্রী শ্রীপদ যেসোনায়েকও জানান, ‘গ্রিভান্স এগেনস্ট মিসলিডিং অ্যাডভারটাইজমেন্ট’ পোর্টালে ওই অভিযোগগুলি দায়ের হয়েছে এবং এ ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিতে কেন্দ্র বদ্ধপরিকর। এর পরেই কয়েকটি অ্যালোপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ-ইউনানি ওষুধের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়।


বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে সন্দিহান। ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী বলেন, ‘আইন কড়া করা হচ্ছে, খুব ভালো কথা। কিন্তু বর্তমান নিরীহ আইনটিও কি কখনও কড়া হাতে প্রয়োগ করা হয়েছে? ৫৪টি অসুখ বা সমস্যার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপনী প্রচারের জন্য কবে কে শাস্তি পেয়েছে যে নয়া আইন সম্পর্কে এত আশাবাদী হব?"


আশাকরি, প্রিয় পাঠক বন্ধুরা বুঝতে পেরেছেন, The Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisements) Act 1954 এবং The Drugs and Cosmetics Act 1940 আইনানুযায়ী, টাকে চুল গজানো কিংবা ফর্সা হওয়ার ক্রিম অথবা যৌন সমস্যা মেটানোর হিজিবিজি বিজ্ঞাপনও ড্রাগস আইনে নিষিদ্ধ এবং বে-আইনি। 


এই ড্রাগস ও ম্যাজিক রেমেডি আইন নিয়ে একজন স্বঘোষিত যুক্তিবাদী মানুষ নিজের অখণ্ড জ্ঞান জাহির করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটা ২০২০ সালের ঘটনা। কোটিপতি ও কুখ্যাত রাজজ্যোতিষী অনিমেষ শাস্ত্রীর "জ্যোতিষ শাস্ত্র বিজ্ঞান" এইধরনের কুযুক্তি ও তার লোকঠকানো জ্যোতিষ বিদ্যার প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই করবার সময় "ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি"র সহযোদ্ধা, অনির্বাণ পাল একটি পোস্টার বানায় যেখানে লেখা ছিল- "The Drugs & Magic Remedies (Objectionable Advertisements) Act 1954 এবং The Drugs & Cosmetics Act 1940 অনুসারে জ্যোতিষশাস্ত্রের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার দাবি বেআইনি।" 


এমতাবস্থায় সেই যুক্তিবাদী মশাই মাঠে নামলেন এটা প্রমাণ করতে যে এসকল আইনে রোগ সারাবার দাবি করা হলে তবেই তা আইনবিরুদ্ধ হবে কিন্তু পরীক্ষায় পাশ, মামলায় জেতা, শত্রু বিনাশ এসব তথাকথিত অলৌকিক দাবি করলে কিছুই করা সম্ভব নয়। আসল কথায় বলে, দারোগার চেয়ে চৌকিদারের হাঁক বেশি হয়। সেই যুক্তিবাদী মশাইয়ের এক স্যাঙাত বাবু আরও একধাপ এগিয়ে বললেন, এইসব আইনে সরাসরি কোথাও নেই যে জ্যোতিষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান আইনবিরোধী।


সত্যিই কী তাই? এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে, জ্যোতিষীদের বিজ্ঞাপন এবং আইনের দিকেই চোখ দেওয়া যাক। পত্রপত্রিকায় সাড়া ফেলে দেওয়া নামীদামী কিছু জ্যোতিষীরা (যারা আবার তান্ত্রিকও হয়ে গেছে) সকল সমস্যা সমাধানের গ্যারান্টি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয় যা দেখে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত জনগণ এদের কাছে ছোটেন। তারপরে এই প্রতারকেরা পাঁচশো থেকে পাঁচ লাখ যা খুশি নেয় হিজিবিজি তাবিজ-কবজ, রত্নপাথর ইত্যাদির বিনিময়ে। এদের প্রতারকদের সবার ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তাদের বহু দাবির মধ্যে রোগ নিরাময় এবং অন্যান্য অলৌকিক দাবি আছে। অর্থাৎ, প্রশাসন চাইলেই উপরোক্ত ড্রাগস আইনানুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সেই যুক্তিবাদী মশাইয়ের এসব জানা সত্ত্বেও কূটতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। 


এবার ড্রাগস আইন নিয়ে আর একটু আলোচনায় গিয়ে দেখা যাক কেউ যদি রোগ সারাবার দাবি ছাড়াও অন্যান্য অলৌকিক দাবি করে তাদের উপরোক্ত আইনানুসারে দোষী সাব্যস্ত করা যায় কিনা।


Drugs & Magic Remedies (Objectionable Advertisements) Act no.21, 1954 এর মূল সংজ্ঞা বা Long Title অংশে আছে "An act to control the advertisement of drugs in certain cases, to prohibit the advertisement for certain purposes of remedies alleged to possess magic qualities and to provide for matters connected therewith."


এখানে 'certain cases', 'to provide for matters connected therewith' শব্দবন্ধের দিকে প্রিয় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেই জানেন যখন কোনও আইনের প্রয়োগবিধি নিয়ে আলোচনা করা হয় তখন প্রতিটি শব্দ এবং তার ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়ে আইনবিদদের ভিতর চুলচেরা বিশ্লেষণ, বাদানুবাদ হয়ে থাকে। উপরোক্ত সংজ্ঞার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়, "অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ প্রয়োগে সমস্যা সমাধান এবং সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনকে প্রতিহত করার জন্য এই আইনের উপস্থাপনা করা হয়েছে"।


আইনে যদি শুধুমাত্র রোগ নিরাময়ের বিজ্ঞাপন প্রতিহত করার কথা থাকত তাহলে 'certain cases' না লিখে সরাসরি 'certain diseases' লেখা হত, আর 'connected therewith' অংশটা দিয়ে সামগ্রিক সবকিছুকেই জড়িয়ে নেওয়া হত না।


আইনটা আরও বিস্তারিত পড়লেই বোঝা যাবে এই আইনের প্রকৃতি হচ্ছে 'inclusive'। সরাসরি লেখা সম্ভব হয়নি এমন কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়েও আইনের প্রয়োগের জন্য সংজ্ঞার শুরুতে বিভিন্ন স্থানেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে, "In this Act, unless the context otherwise requires,-"

অর্থাৎ, "আইনানুসারে, যদি না অন্যভাবে প্রয়োজন হয়"। আইনে 'ড্রাগ' বা 'ওষুধে'এবং 'ম্যাজিক রেমেডিজে'র সংজ্ঞায় কিন্তু শুধুমাত্র পরিচিত ওষুধের নাম করা হয়নি। খুব স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে তাবিজ, কবচ, মাদুলি, তন্ত্রমন্ত্র, জড়িবুটি এবং অলৌকিক সমস্যা সমাধানের দাবি করা যে কোনও প্রকারের জৈব এবং অজৈব পদার্থকেই গণ্য করা হবে। 


তাহলে বোঝা যাচ্ছে, কোন ব্যক্তি যদি তন্ত্রমন্ত্র, তাবিজ-কবচ, রত্ন ইত্যাদির সাহায্যে রোগ সারাবার দাবি করে তবে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। যুক্তিবাদী মশাইয়ের স্যাঙাৎ বাবু অবশ্য বোঝাতে চেয়েছেন জ্যোতিষীর বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলা নেই। কিন্তু উনি বুঝলেনই না, জ্যোতিষী, তান্ত্রিক ইত্যাদিরাও আইনের চোখে 'ব্যক্তি' হিসাবেই গণ্য হয়।


আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সরাসরি রোগ সারাবার দাবি ছাড়া এরা আর যেসব দাবি করে তার অন্যতম হল বশীকরণ। বশীকরণ মানে হল তাবিজ-কবচ ইত্যাদির সাহায্যে অন্যের মস্তিষ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ। সোজা ভাষায়, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্নায়ুকোষের উপর নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তার। উপরোক্ত আইনের ২ (বি), (সি) ধারা অনুযায়ী কিন্তু মানুষ এবং অন্য প্রাণীর শরীরের আনবিক স্তরেও বা অন্য কোনভাবে প্রভাব বিস্তার পর্যন্ত আইনত নিষিদ্ধ। একইভাবে শত্রু দমনকে যদি খুন নাও ধরি, শত্রু বশীকরণ কিন্তু মনে করতেই পারি।


রত্ন ধারণ করিয়ে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করাবে বলেছে? জ্যোতিষীরা রত্নের সুফলের সাধারণত যে বৈজ্ঞানিক (!!) ব্যাখ্যা দেয় তা হল সূর্যের রশ্মির সাতটা রঙ যাকে নাকি কসমিক রে বলে, সেটা রত্নের মাধ্যমে শোষিত হয়ে শরীর তথা মস্তিষ্কের উন্নতি সাধন করে। এটা যে অবাস্তব সে ব্যাখ্যা নাহয় বাদ থাক। কিন্তু এটাও যে আইনের আওতায় পড়ছে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।


তারপর ধরুন, বিজ্ঞাপনে স্বামী বা স্ত্রী অন্যের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছেন, দাম্পত্যসুখ পাচ্ছেন না বলে থাকে। এই কথায় প্রছন্নভাবে বশীকরণ বা যৌনসুখ ফিরিয়ে আনার কথা কি বলা নেই? 


সোজা ভাষায়, যে সকল দাবি এসব মহাশয়েরা করে থাকেন সেগুলো কিন্তু আইনের আওতায়ই পড়ে। এদের কারণে কেউ মারা গেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এর জন্য সরাসরি জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, ওঝা, গুনীন, পীর, ফকির আইনে এসব আলাদাভাবে বলে দেওয়ার দরকার হয় না। 


আগেই উল্লেখ করেছি, ১৯৬৩ সালে বিজ্ঞাপন বিরোধী আইনকে 'cognizable' করা হয়েছে। অর্থাৎ পুলিশ প্রশাসন কোন অভিযোগ ছাড়াই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। তাছাড়া যখনই এসব কেসে পুলিশ গ্রেফতার করে তখন কিন্তু প্রতারণা, জালিয়াতির ধারাগুলোও (রত্ন, যন্ত্রম এসব দিয়ে মামলা জেতানো ঢুকে গেল) প্রয়োগ করে। অলৌকিক বিজ্ঞাপন বিরোধী আইনের ১৩ নম্বর ধারাতেও কিন্তু বলা আছে এর সাথে যদি অন্য কোনও ধারা উপযুক্ত হয় সেগুলোও একইসাথে প্রয়োগ করা হবে। 


আলোচনার সূত্রে এটাও জানিয়ে রাখি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ সংগঠনের তরফে সৌরভ চক্রবর্তী, জ্যোতিষ এবং বিভিন্ন ধরনের বশীকরণ সংক্রান্ত এবং যাদু চিকিৎসা বা ম্যাজিক রেমিডি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনগুলি সংবিধানের ৫১ এ(এইচ) ধারার পরিপন্থী হওয়ায় সেগুলিতে লাগাম টানার জন্য কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক রেগুলেশন আইন এবং কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মাবলীর অন্তর্ভুক্ত বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠান সূচক(code) অনুসারে বিজ্ঞাপনগুলির নিয়ন্ত্রণ সুনিশ্চিত করার জন্য বিজ্ঞান মনস্কতা ও যুক্তিবাদকে সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলবৎ করবার জন্য এ রাজ্যে কুসংস্কার বিরোধী আইনের অভাব থাকায় যতদিন না বিধানসভায় এই মর্মে আইন পাশ হয় ততদিন পর্যন্ত আদালত যাতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা (guideline) তৈরি করেন তা নিশ্চিত করার জন্য কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ে যে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছিলেন তার শুনানির দিন ছিল গত ৮ এপ্রিল ২০২২। 


এই শুনানিতে বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষে আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জী, মূল মামলার যুক্তিগুলি ব্যাখ্যা করেন। আদালত রাজ্যের ও কেন্দ্রের সরকার ছাড়াও এই মামলায় এ্যাডভার্টাইজমেন্ট স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়ার অনুপস্থিতিতে এই মামলাটির শুনানির একটি নির্দিষ্ট দিন ধার্য্য করেন। এর আগে এই মামলাটি চলাকালীণ অবস্থায় মহামান্য বিচারপতি শ্রী সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল যে দেশের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে এই মামলায় উপস্থিত থাকতে হবে। 


সেদিন, মহামান্য প্রধান বিচারপতি শ্রী প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও মহামান্য বিচারপতি শ্রী রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলাটিতে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ্যাডভার্টাইজমেন্ট স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়াকে নোটিশ জারি করবার নির্দেশ দিয়েছেন। ৪ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য হয়েছিল। সর্বশেষ তথ্য এখনও এই লেখকের অজানা বলে জানাতে পারলাম না।


প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী হন এবং আপনার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ থাকে কোনও বুজরুক, প্রতারকের বিরুদ্ধে তাহলে আপনি আপনার অভিযোগ জানাবেন এই ঠিকানায়- The Director, The Directorate of Drugs Control,  Government of West Bengal, P-16, India Exchange Place Extension, K.I.T. Building, 5th Floor, Kolkata-700073.


অভিযোগ দায়ের করার সময় স্মরণে রাখবেন, রোগ সারাবার কোনও বিজ্ঞাপন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকলে তার জেরক্স কপি অভিযোগপত্রের সাথে যুক্ত করে দেবেন এবং মূল পত্রিকাটি যত্ন করে রেখে দেবেন যা মামলা চলাকালীন কাজে লাগবে। আপনার অভিযোগ পাওয়ার পর ড্রাগস কন্ট্রোল থেকে অভিযুক্তের কাছে জানতে চাইবে এই ধরনের তাবিজ কবচ ইত্যাদি (যা আইনের সংজ্ঞায় ওষুধ বা ড্রাগ) তৈরির বৈধ লাইসেন্স তার কাছে আছে কিনা? ড্রাগস কন্ট্রোলের দেওয়া লাইসেন্সগ ছাড়া ওষুধ বানানো বা বিক্রির জন্য জ্যাোতিষী-তান্ত্রিক ইত্যাদিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করবে ড্রাগস কন্ট্রোল। মামলাটি হবে অভিযুক্ত ব্যক্তি বনাম সরকার। আপনাকে বড়জোর সাক্ষী দেওয়া ছাড়া কিচ্ছুটি করতে হবে না। এবারে দু’টি খবর জানিয়ে লেখাটির পরিসমাপ্তি ঘটাবো। 


উত্তরাখণ্ডে রামদেব বাবার পতঞ্জলির ওষুধের রমরমা ব্যবসা। দেরাদুনের দিব্যা ফার্মেসি পতঞ্জলির পক্ষে এই সব আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করে। এই রকম পাঁচটি ওষুধ হোল মধুগৃত, আইগৃত, থাইরোগৃত, বিপিগৃত ও লিপিডম। প্রস্তুতকারকদের পক্ষ থেকে এই সব ওষুধের উপাদান, ফর্মুলা ও গুনাগুন ব্যাখ্যা করে বিজ্ঞাপনের মাধমে প্রচার করা হোত যে এই ওষুধগুলি ডায়াবেটিস, গ্লুকোমা, গয়টার, উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরল রোগীর পক্ষে উপকারী। 


কেরালার জনৈক ডাঃ কে ভি বাবু এই বিজ্ঞাপনগুলির বিরুদ্ধে উত্তরাখন্ডের স্বাস্থ্য নিয়ামক সংস্থার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয় যে, এই বিজ্ঞাপন বিভ্রান্তিকর শুধু নয় এটা ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ১৯৪০ এবং ম্যাজিক রেমেডিস অ্যাক্ট, ১৯৫৪ এর বিরোধী। সাধারণ মানুষ এ জাতীয় বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হচ্ছেন। 


অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানের পর উত্তরাখন্ড আয়ুর্বেদ ও ইউনানি লাইসেন্স অথরিটি, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের দায়ে, দিব্যা ফার্মেসিকে এই সব ওষুধ বন্ধের নির্দেশ দেয় (সূত্র- দি টেলিগ্রাফ / ১০.১১.২০২২। লিংক -

https://www.telegraphindia.com/india/uttarakhand-bars-production-of-5-ramdev-medicines/cid/1897224)। 


এই খবরের আরেকটি বিশেষ খবর - রামদেবের দিব্য ফার্মেসির উৎপাদিত পাঁচটি ওষুধের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল উত্তরাখণ্ডের আয়ুর্বেদ ও ইউনানি লাইসেন্সিং অথরিটি। আগের নির্দেশিকাকে সংশোধন করে শনিবার নতুন নির্দেশিকা জারি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ওই ৫টি ওষুধ উৎপাদন জারি রাখতে পারবে রামদেবের সংস্থা (সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন, ১৩/১১/২০২২। লিংক- https://www.anandabazar.com/india/ban-on-ramdevs-5-products-revoked-by-uttarakhand-govt-dgtl/cid/1384018)। 


এতকিছুর পরেও কিন্তু বলব, এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী ও স্পষ্ট আইন দরকার। বিশেষত বিজ্ঞাপন বিরোধী আইনের তো ব্যাপক সংশোধন প্রয়োজন। কিন্তু আইন থাকলেই কিছু হয় না। ভারতে শাসকের স্বার্থে বহু উপযোগী আইন শুধুই মলাটবন্দি হয়ে পড়ে থেকে শুধুই ধুলোই জমে। তাছাড়া, প্রচুর সম্পদের চূড়ায় বসে থাকা প্রতারকেরা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি নিজেদের প্রতারণা চালিয়ে যায়। উদাহরণ, রামদেবের পতঞ্জলি ওষুধের ঘটনাটি। কিন্তু পুলিশ, প্রশাসন চাইলেও ড্রাগস ও ম্যাজিক রেমেডিস ভঙ্গকারীদের শুধুমাত্র আইনের অভাবে গ্রেফতার করতে পারবে না সেটি ডাহা মিথ্যে। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা, যা অনেকেরই নেই।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929