শ্রীমদ্ভাগবতে জাতিভেদের শাস্ত্রকথা
সৌরাষ্ট্র দাশ
Nov. 26, 2024 | | views :282 | like:2 | share: 2 | comments :0
আমরা সবাই এতোদিন জানতাম যে শূদ্রদের সনাতন ধর্মে অসম্মান তথা পিরিত করেছে, যেটা চোখ বন্ধ করেও হলে সত্য, কিন্তু আজ এক নতুন তথ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরবো যা সনাতনী ক্ষত্রিয় বলা ব্যক্তিগণদের একবার চিন্তা করা উচিত তারা কতটা সম্মান পেয়েছে এই সনাতন ব্রাহ্মণ্য ধর্ম থেকে? আপনারা সবাই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। পরশুরাম, সম্পর্কে অবগত [পরশুরাম একুশবার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়শূন্য করেন] এই কথা আমরা সবাই জানি পৌরাণিক গল্প মতে খুব বিখ্যাত কিন্ত এখান থেকেই যুক্তিবাদীদের প্রশ্ন উঠে? প্রথমবার যদি পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়শূন্য হয়ে থাকে! তাহলে আবার কীভাবে পরশুরাম আরও বিশবার ক্ষত্রিয়শূন্য করেছিলেন? এখন যদি বলেন সেই কালে বর্ণ ব্যবস্থা জন্ম থেকে নয় কর্ম থেকে তা হলে বলবো! বর্ণ ব্যবস্থা কোনওদিন কর্ম থেকে হতে পারে না। [ গীতা - 1:43, 18:41, 4:13, 18:42, 18:43, 18:44, 18:47, 18:48, 3:35 ] আপনার যদি সনাতন ধর্ম বিষয় একাডেমিক পড়াশোনা থাকে তাহলে এতোগুলি রেফারেন্স পর পর পাশে রেখে পড়েন তাহলে বুঝবেন আমি কী বলতে চাইছি। তবে ব্রাহ্মণ্যবাদের নোংরা চিন্তার জন্য ক্ষত্রিয়রা কোনও দিন ব্রাহ্মণ্যবাদকে মেনে না নেওয়ায় জন্য পরশুরামের সৃষ্টি এবং ক্ষত্রিয় বংশকে ধ্বংস, যেখানে পরশুরাম ক্ষত্রিয়দের হত্যা করেছে, সেখানে আরেক (রাম ) নিরপরাধ শূদ্র শম্বুক হত্যা এর পরেও সনাতন ধর্ম নাকি মহান যখন যখন ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে ক্ষত্রিয় শূদ্ররা প্রতিবাদ করেছে, ততবার বিষ্ণুর ভিন্ন অবতার নিয়ে দমন হত্যালীলা চালিয়ে গেছে, আর সেই শাস্ত্র ক্ষত্রিয়দের কুকুর বলে মনে করে।
আপনারা জানেন ক্ষত্রিয়রা খুব ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকে ধর্মের জন্য সংস্কৃতির জন্য। নিজেদের জীবন দিতে তৈরি থাকে। তার সঙ্গে ক্ষত্রিয়দের দ্বিজ শাস্ত্র পড়ার অধিকার জন্মগত আছে। কিন্ত সেই সনাতন শাস্ত্র পড়তে পড়তে, শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ পড়লাম, এবং পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে।
[শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ/ ১ম স্কন্ধ/ ১৮ অধ্যায় ৩২-৩৪ ]
“ব্রাহ্মণেরা ক্ষত্রিয়গণকে দ্বারপাল কুকুর বলিয়াই মনে করেন, তাহারা দ্বারদেশে অবস্থান করিবে, তাহারা কী রূপে আশ্রমে প্রবেশ করিয়া পাত্রস্থ অন্নভোজনের যোগ্য হয়?”
[ শ্রীমদ্ভাগবতের ৪ ম স্কন্ধের ৪ম অধ্যায় ৭ ]
ইশ্বর নিন্দাবাদীর জিহ্বাকে কেটে হত্যার জন্য আদেশ দিচ্ছে।
[শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১ম স্কন্ধ, ১৩ অধ্যায় ১৫-২৩ ]
শূদ্রের ধর্মোপদেশ দেওয়াকে বিরূপ দৃষ্টিতে দেখা হত। তাই বিদুরের ক্ষেত্রে জাস্টিফিকেশন দিতে হয়েছে।
[ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১ম স্কন্ধ, ৫ম অধ্যায় ১৭-১৮]
“যদি কোনও ভক্ত স্বীয় বর্ণ ও আশ্রমের অনুষ্ঠেয় ধর্ম পরিত্যাগ পূর্বক শ্রীহরির চরণাম্বুজের ভজনা করিত করিতে ভক্তির অপক্ব অবস্থাতেই তাহা হইতে বিচ্যুত হন, তথাপি তাহার নীচ যোনিতে জন্মাদির আশঙ্কা নাই।” প্রশ্নঃ নীচ যোনি কোনগুলো? শূদ্র কি নীচ যোনি?
[ শ্রীমদ্ভাগবতের ১ম স্কন্ধের ৫ম অধ্যায় ২৩ ]
দেখা যায়, নারদ একবার এক ব্রাহ্মণের দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করাকে নেগেটিভ ভাবে দেখা হয়েছে বলে মনে হল।
[ শ্রীমদ্ভাগবতের ১ম স্কন্ধের ৭ম অধ্যায় ১৬-১৮,৩৩-৪৮ ]
কৃষ্ণ বিষ্ণুর রূপ ধরে অর্জুনকে বলেন, “ ব্রাহ্মণ অধম হলেও অবধ্য”। এই অধ্যায়ে দেখা যায় অশ্বত্থামা অনেক অপরাধ করলেও তাকে শেষমেষ হত্যা করা হয় না। এই সময় যুক্তি দেওয়া হয়-সর্বস্ব গ্রহণ ও মস্তকমুণ্ডন করে দেশ থেকে নির্বাসিত করে দিলেই অধম ব্রাহ্মণের বধ তুল্য শাস্তি হইয়া থাকে। এইরূপ ব্রাহ্মণের প্রাণদণ্ড শাস্ত্রে বিহিত হয় নাই।
এর পরেও লোকে বলে যে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ নাকি একটি মহান পুরাণ কিন্ত এই পুরাণ কতটা মহান তা এই পুরাণ পড়লে পরে বোঝা যায়।