সংগঠিত ধর্ম কোনোদিন ডারউইনকে পছন্দ করেনি
শম্ভুনাথ চার্বাক
Nov. 26, 2024 | | views :881 | like:2 | share: 2 | comments :0
প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করেছিল সত্তার নূতন আবির্ভাবে – কে তুমি, মেলেনি উত্তর দিবসের শেষ সূর্য শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিম সাগরতীরে,
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় –কে তুমি, পেল না উত্তর।
( শেষ লেখা -রবীন্দ্রনাথ )
জীব সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে? জীবকে সৃষ্টি করেছে কে? এই প্রশ্ন মানুষের মনে নিরন্তর ঝড় তুলেছে সভ্যতার বিকাশের শুরুর সময় থেকেই বড় বড় বিশ্বমানবরাও দ্বিধাগ্রস্ত এই ব্যাপারে। ছোটবেলা থেকেই উঠতে বসতে ঘরে বাইরে শুনে আসছি সব তার সৃষ্টি। প্রশ্ন এসেছে মনে, জিজ্ঞাসা করলেই বলতো ডেঁপো ছেলে। প্রমাণের কি আছে হাজার-হাজার বছর ধরে মানুষ এবং তোমার পূর্ব পুরুষেরা বিশ্বাস করে আসছে, তোমাকেও তাই বিশ্বাস করতে হবে বিনা প্রশ্নেই। এসব বলেই দাবিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেশী বললেই মার জুটতো কপালে। ধর্মের বিবর্তনের এবং ঈশ্বর-গড-আল্লাহদেরও বিবর্তন ঘটেছে এই পৃথিবীতে। ব্যাবিলন সুমের মিশর আরব নরওয়ে রোম গ্রীসের পেগান বা মূর্তিপূজকদের দেবদেবীদের ইহুদী খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা বিলুপ্ত করে দিয়েছে পৃথিবী থেকে। একমাত্র ভারতে উদ্ভুত পেগান বা মূর্তীপূজক ধর্মগুলি টিকে আছে। তাও আজও সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪২০০ ধর্ম টিকে আছে। এই প্রচলিত বৃহৎ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম হিন্দু খ্রিস্টান ইসলাম ইহুদী সবাই বলে তাদের নিজেদের ঈশ্বর-গড-আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ। ঈশ্বরদের কোন সার্বজনিনতা নেই। সব ধর্মের প্রধান পুরুষ, কোন মহিলা নেই। এদের ঈশ্বর – গড – আল্লাহ প্রত্যেকেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রত্যেকটি ধর্ম অপর ধর্মের ওপর আঘাত হেনেই বিকাশ লাভ করেছে এবং বারবার ধর্মের কারণে পৃথিবীকে রক্তাক্ত করেছে। ভারতে হিন্দু বনাম বৌদ্ধ বা জৈনের লড়াই, শৈব শাক্ত বৈষ্ণবের লড়াই বাংলা দেখেছে মধ্যযুগে এবং হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টানের লড়াইও দেখেছে, দেশভাগ দেখেছে ধর্মের কারণে, উদ্বাস্তু হওয়া দেখেছে ধর্মের কারণে। রক্তাক্ত ক্রুসেড দেখেছে এশিয়ার ভূখন্ড ।
চার্লস ডারউইন ইংল্যান্ডের অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন। নিজেও প্রচণ্ড ধর্মভীরু ছিলেন এবং ভবিষ্যতে ধর্মযাজক হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন । কারণ ইংল্যান্ডে সেই সময় ধর্মজাজক হওয়া যথেষ্ট সম্মানের । কিন্তু জীব বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার সময় জীব ও জীব সৃষ্টির জিজ্ঞাসা ডারউইনের কিশোর মনে ঝড় তুলেছিল প্রচন্ডভাবে। সেই ঝড়েই ডারউইনের জাহাজ বিগল গ্যালাপাগাস দ্বীপে অবতরণ করলো ১৮৩৫ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী। আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারী ডারউইনের জন্মদ্দিন। ডারউইনের চিন্তা ভাবনাকে যেন উসকে দিতেই এইদিন চিলির উপকূলে নোঙর করা অবস্থায় তাঁদের জাহাজ এইচ এম এস বিগল কেঁপে উঠলো প্রবল এক-ভূমিকম্পে! দুই মিনিটের সেই ভূমিকম্প শেষে ডারউইন এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন মহাবিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করলেন উপকূলের ভূমির উচ্চতা বেড়ে গেছে প্রায় আট ফুট! তাহলে কি লায়েলের Principle of Geology’র কথাই ঠিক? সব পরিবর্তনই কি প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা করা শক্তিগুলোর ফলাফল?
১৮৩১ সালে জাহাজে ওঠার আগে ডারউইনকে তাঁর শিক্ষক এবং একইসাথে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর হেনেস্লো অপর এক প্রখ্যাত ভূতাত্ত্বিক চার্লস লায়েলের লেখা Principle of Geology বইটি উপহার দেন। গভীরভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাসী হেনেস্লো কড়াভাবে ডারউইনকে বলে দেন যেন ভুলেও লায়েলের লেখাগুলোকে বিশ্বাস না করেন! কিন্তু ডারউইন জাহাজে যেতে যেতে প্রকৃতির খামখেয়ালীপনা দেখতে দেখতে গুরুর উপদেশ ভুলে গভীর সন্দেহে নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন একের পর এক। কি ছিল লায়েলের সেই বইয়ে! লায়েল তাঁর বইয়ে বলেছিলেন, “নূহের আমলের এক কথিত মহাপ্লাবন দিয়ে পৃথিবীর ভূ-ভাগ রূপান্তরিত হয়নি। ভূভাগ বিবর্তনের অন্যতম কারণ হল বাতাস, বৃষ্টি, ভূমিকম্পের মতন অসংখ্য ছোটবড় প্রাকৃতিক শক্তি। এগুলোই অতীত থেকে বর্তমান সময়ে ভূভাগের পরিবর্তন ঘটিয়ে এসেছে এবং আসছে।” গুরুর কথা ভুলে ডারউইন তাই মনোনিবেশ করলেন আশেপাশের ভূপ্রকৃতির উপর এবং আস্তে আস্তে দীক্ষিত হয়ে উঠলেন লায়েলের সেই যুক্তিপূর্ণ রূপান্তরের মতবাদে। আর তার চাক্ষুষ প্রমাণ আজ পেলেন।
এই ভূমিকম্প নিয়ে ভাবতে ভাবতেই যাত্রাপথে আবার জাহাজে করে ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়লেন ভার্ডে দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫ ফুট উঁচু একটি দ্বীপে। সেখানে দেখা গেল পাহাড়ের গায়ে এক রহস্যময় সাদা দাগ চলে গেছে মাইলের পর মাইল। পরীক্ষা করে জানা গেল রহস্যের তেমন কিছুই নেই, শামুক ঝিনুকের খোলের চুনাপাথরের ক্ষয়ই এই লম্বা দাগের রহস্য। কিন্তু শামুক ঝিনুক এতো উঁচুতে এক পাহাড়ের গায়ে এলো কিভাবে? তাহলে কি একসময় সেই পাহাড় লুকিয়ে ছিল সমুদ্রের জলের নিচে?
আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটি দেখা গেল গ্যালাপ্যাগাস দ্বীপপুঞ্জে নামার পর। এই দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপ দেখতে দেখতে তরুণ ডারউইন দেখতে পেলেন বিভিন্ন প্রজাতির একগাদা ফিঞ্চ পাখি, যেগুলোকে আমরা ফিঙে নামে ডাকি। ডারউইন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন সবগুলোই ফিঞ্চ পাখি হলেও অবাক করা জিনিস হলো এদের খাবারের প্রকৃতি অনুযায়ী বদলে গেছে এদের গঠন। যেমন যেগুলো গাছে থাকে তারা খায় একরকম খাবার, যেগুলো মাটিতে থাকে তারা খায় আরেকরকমের খাবার। খাবারের ধরন অনুযায়ী সেই পাখিগুলোর আকৃতিও বিশেষ করে চঞ্চু আলাদা! তিনি এই বৈচিত্র্য দেখতে দেখতেই এদের ১৩টি প্রজাতির বর্ণনা দেন, দেখান প্রজাতির বৈচিত্র্য। এই ১৩টির পর বর্তমানে আর একটিসহ মোট ১৪টি প্রজাতির ফিঞ্চ আমরা প্রকৃতিতে দেখতে পাই। এই পাখিদের দেখার পরেই তিনি প্রাথমিকভাবে সম্মত হলেন যে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই জীবের মাঝে একেকরকম বৈশিষ্টের পরিবর্তন ঘটে এবং তারা ক্রমেই অভিযোজিত হয়ে তৈরি করে এক বা একাধিক নতুন প্রজাতি! সুতরাং প্রজাতি হল এমন কিছু জীবের সমষ্টি যারা শুধু নিজেদের মধ্যে প্রজননে সক্ষম। যেমন- আধুনিক মানুষ Homo sapiens sapiens প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। অন্য কোন প্রজাতির সঙ্গে তারা কেউ প্রজনন করতে পারবে না!
ডারউইন আদতে এই তথ্যটি প্রকাশ করতে যথেষ্ট দ্বিধা করেছেন। কেননা তিনি নিজেও বুঝেছিলেন তাঁর দেওয়া মতবাদ কতটা বৈপ্লবিক। আরেক বিজ্ঞানী হুকারের কাছে লেখা চিঠিতে তাই তিনি লিখেছিলেন - নিজেকে তাঁর বড় একজন অপরাধী মনে হচ্ছে, তিনি যেন একজন নরঘাতক হিসেবে স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন! তাই তত্ত্বের সত্যতা জেনেও কেবলমাত্র সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হতে তিনি আরও ২০ বছর ধরে গবেষণা করে লিখলেন জীববিজ্ঞানের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত বই- The origin and Species by means of Natural Selection!!
ডারউইনের তত্ত্ব যে ভুল নয় তার প্রমান আমরা দেখতে পাই অন্যপ্রাণীদের মতন মানুষেরও অসংখ্য প্রজাতি আবিষ্কৃত হওয়ায়। এগুলোর মধ্যে হোমিনিড গণের অন্তর্ভুক্ত হোমো স্যাপিয়েন্স, হোমো ইরেক্টাস-সহ অসংখ্য প্রজাতির ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষের মতন আরও অন্য এক প্রজাতি নিয়ান্ডারথালদের ফসিল। অনেক গবেষণার পর দেখা গেছে একপ্রজাতির বনমানুষ বা এপদের সঙ্গে মিলে গেছে আমাদের ডিএনের প্রায় ৯৮.৬%! ডারউইনের সময় কার্বন ডেটিং-সহ অনেক পরীক্ষার সুব্যবস্থা না থাকলেও এটা এখন পরীক্ষিত গবেষণাধর্মী সত্য যে, ৪০-৮০ লক্ষ বছর আগে একধরণের জাতি দুইপায়ে ভর করে দাঁড়াতে শিখলেও তাদের থেকে বর্তমান আমাদের অর্থাৎ আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটেছে মাত্র দেড় থেকে দুইলক্ষ বছর আগে। এপর্যন্ত একটি ফসিলও পাওয়া যায়নি যেটি ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদকে সমর্থন করেনা। এমনকি মজার কথা হল ডারউইন পূর্ববর্তী সময়েও জর্জ বুফো, হাওয়ার, ওয়ালেস, উইঙ্গারসহ বেশকিছু বিজ্ঞানী ছিলেন যারা বুঝতে পেরেছিলেন প্রজাতি স্থির নয়, চলমান বিবর্তনের ফসল। কিন্তু এরা বিবর্তনকে মেনে নিলেও সেটি কিভাবে ঘটে তা কেউই ডারউইনের আগে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি। বিখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্সের বহুল পঠিত Ancestor’s Tale বা আশির দশকে ড. টিএম বেড়ার লেখা Evolution and Myth of Creationism কোনোটিই ডারউইনের বিবর্তনবাদ অতিক্রম করেনি, বরং সমর্থন যুগিয়েছে বহুগুনে। ডকিন্স তাঁর প্রতিটি লেখায় তুলে এনেছেন বিবর্তনবাদের মৌলিকত্বকে। তিনি বারবার বলেছেন- এখন পর্যন্ত একটি ফসিলও ভুল জায়গায় আবিষ্কৃত হয়নি যেটি বিবর্তনবাদকে ভুল প্রমাণ করতে পারে!
বিজ্ঞান গতিশীল, যে গতিশীলতা প্রজাতিগুলোর পারস্পারিক সম্পর্ক নির্দেশ করে। হাজার বছরের বিশ্বাসকে লালন করার নাম বিজ্ঞান নয়, বিশ্বাসকে যুক্তিপূর্ণভাবে ব্যবচ্ছেদ করা এবং তার সত্যতা বা মিথ্যাচারকে সত্যের আলোকে উন্মোচন করাই বিজ্ঞানের কাজ।ডারউইনবাদ আর বিবর্তন এতটাই প্রমাণিত যে সেটি ঘটেছে কি ঘটেনি তা নিয়ে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই।
হাজার হাজার বছর ধরে ঈশ্বর আশ্রিত ভাবনা ঝেড়ে ফেলতে পারেননি ডারউইন, বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা না করলে হয়তো যাজকই হতেন বা ধর্ম তত্ত্বের অধ্যাপক হতেন, আবার মন থেকে জীব সৃষ্টির সেই ঈশ্বরের তত্ত্ব মেনে নিতেও পারেননি ডারউইন। হাজার হাজার বছর ধরে যে ধর্ম ঘিরে রয়েছে পৃথিবীকে (থুড়ি পৃথিবী বললে ভুল হবে এশিয়া-আরব-ইউরোপকে। কারণ আমেরিকা ওসেনিয়া মহাদেশের কথা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগ্রন্থতে ছিলোনা। ১৫২৬ সালের আগে আমেরিকায় সভ্য মানুষের পদার্পন ঘটেনি। শেষ সংগঠিত ধর্ম ইসলামের জন্ম ৬০০ সাল নাগাদ। ডারউইন ধর্মের আলোকে জীবের সৃষ্টির উত্তর পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠ করলেন, কিন্তু অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারলেন না। পরবর্তী সময়ে বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক জন লকের বিখ্যাত উক্তি “বস্তু থেকে চেতনার উদ্ভব” আবার তাঁকে অশান্ত করে তুললো। সুযোগ পেলেন জীব বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার, চাপলেন বিগল নামের জাহাজে গ্যালাপাগাস দ্বীপে যাওয়ার জন্য। গ্যালাপাগাস দ্বীপে তিনি বিভিন্ন জীবজন্তুর সন্ধান পেলেন এবং হাজার হাজার জীবাশ্মের সন্ধান পেলেন, প্রায় ২৫০০০ জীবাশ্ম পাঠিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডে। দীর্ঘদিন সেগুলি পরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে এলেন জড় পদার্থ থেকেই জীবের উৎপত্তি এবং তার ক্রমবিকাশের শেষ পর্যায়ে মানুষের উৎপত্তি। তিনি লিখলেন “the origin of species by means of natural selection,of the preservation of favoured races in the struggle for life”। এই বইটা বেরোনোর সাথে সাথে সংগঠিত ধর্মের বিকৃত মানুষেরা প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করলো। কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, জিওনার্দো ব্রুনোর পর ডারউইনের এই আঘাতে প্রবল প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিতই ছিল। ইংল্যান্ডের ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা তাঁকে নানানভাবে অপদস্থ করা থেকে প্রাণে মারতেও চাইলেন । শুধু প্রাণে মারতে পারেনি কারণ ডারউইনের সমর্থনে ঈংল্যান্ডের কিছু বিখ্যাত অভিজাত পরিবারের মানুষ দাড়িয়েছিলেন। (আমাদের দেশের বিখ্যাত চিকিৎসক সুশ্রুতের শল্য চিকিৎসা যখন ব্রাহ্মণদের নেতা যাজ্ঞবল্ক বন্ধ করে দিলেন তখন কিন্তু তিনি কারো সমর্থন পাননি, নয়তো ভারত আজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক দূর এগিয়ে যেতো) এদের মধ্যে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় টমাস হাক্সলি, শল্য চিকিৎসক ডাঃ ওয়েনের কথা। টমাস হাক্সলিকে ডারউইনের ডালকুত্তা নামেও অভিহিত করা হয়।
দর্শনের যে মূল সঙ্ঘাত সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ডারউইন। ধর্মে জীব সৃষ্টিতে ঈশ্বর আছেন। কিন্তু ডারউইনের বইতে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে ঈশ্বর নেই আছে “প্রকৃতি ও পরিবেশ”। ঈশ্বরের ঠাঁই নেই সেখানে। সেসময় ডারউইনকে কি পরিমাণ আক্রমণ হজম করতে হয়েছিল নীলকন্ঠ হয়ে তা এখন ভাবা যায় না। এই ধর্মান্ধ কীটেরা কি ভয়ানক তা আজ ভারত পাকিস্তান বাঙলাদেশের আমাদের মত উদ্বাস্তুরা ও মুক্তমনারা জানে, জানে অভিজিত রায় রাজিব ওয়াশিকর নাজিমুদ্দিন নিলয় বা আমাদের দেশের দাভালকার-পানেসর-কালবুর্গী-খলিল-গৌরি লঙ্কেশ। সারা আরবের সিরিয়া,জর্ডন, ইরাক, তুরস্কের উদবাস্তুরা জানে, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের উদ্বাস্তুরা জানে ।
এই সব উদ্বাস্তুদের তথাকথিত কোন ঈশ্বর –আল্লাহ-গডেরা রক্ষা করেনা। আমেরিকাতে ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়ানোর জন্য শিক্ষকের শাস্তি হয়েছিল, যা মাঙ্কি ট্রায়াল নামে সারা পৃথিবীতে খ্যাত।
আমার মনে হয় পৃথিবীতে অনেক প্রখ্যাত পদার্থ বা রসায়ন বৈজ্ঞানিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন, সভ্যতাকে এগিয়ে দিয়েছেন অনেকদূর।কিন্তু বিজ্ঞানের কাজের প্রভাব বিজ্ঞান ছাড়িয়ে সমাজ, ধর্ম, শিল্প, সংস্কৃতি ও রাজনীতির জগতকে সব থেকে আলোড়িত করেছিল চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ।ডারউইনের উপর সারা পৃথিবী জুড়ে সংগঠিত ধর্মের একের পর এক আক্রমনই এর সব থেকে বড় প্রমাণ। একারণেই সংগঠিত ধর্ম কোনোদিনই ডারউইনকে পছন্দ করেনি বরং বিরোধীতা করে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামিক ধর্মগুরুরা বলেছেন বিজ্ঞান পড়ান, কিন্তু বিবর্তন পড়ানো চলবেনা। ওরা জানে বিবর্তন পড়ালে অন্য ধর্মের সাথে ইসলামের আল্লাহ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। আর কোরানেইতো বিবর্তন এর প্রমাণ আছে। আল্লাহর সৃষ্ট প্রথম মানব আদম 60 হাত থেকে বর্তমানের সর্বোচ্চ আট ফুট হয়ে যায়। এটাই তো বিবর্তন। এটা মাদ্রাসার হুজুরদের বোঝানো যাবেনা।