বিশ্বের কোনও ধর্মীয় নেতা বিজ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত করেন না কারণ বিজ্ঞান প্রকৃতির চিরন্তন সত্য এবং যা ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা পরিচালিত ধর্মীয় ব্যবসাকে ধ্বংস করবে। ধর্ম মানুষ চাইলেই পরিবর্তন করতে পারে বা চাইলে নতুন ধর্ম প্রবর্তন করতে পারে এবং নতুন নাম দিয়ে নতুন ঈশ্বর তৈরি করতে পারে। কেউ তার ধর্মে দীক্ষিত হোক বা না হোক সেটা অন্য বিষয়। আপনার পরিবার যদি তা পালন করতে থাকে, তবুও হাজার বছর পর সেই ধর্ম পালনকারীর সংখ্যা হাজারের মধ্যে হতে পারে। ধর্ম এবং ঈশ্বর (ঈশ্বর) যেমন বিভিন্ন মানুষের জন্য আলাদা হতে পারে, তেমনি বিজ্ঞান শুধু পৃথিবীতে নয়, মহাবিশ্বের সর্বত্র একই, কারণ বিজ্ঞান চিরন্তন সত্য।
বিজ্ঞানের নিয়মসমূহ (Laws of Nature) ব্ৰহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে থেকেই ছিল। আসলে, প্রকৃতির নিয়মই হল বিজ্ঞান। প্ৰকৃতির নিয়ম অৰ্থাৎ আমাদের মহাবিশ্ব ১৩৭০ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং-এ গঠিত হয়েছিল বিজ্ঞানের নিয়মে। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ প্ৰবাহ, চুম্বকত্ব, মাধ্যকৰ্ষণিক বল ইত্যাদি হতে আরও অন্যান্য বহু নিয়ম (Laws of Nature) -এর ফলে কঠিন, তরল এবং বায়বীয় পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায়। এগুলো সবই প্রাকৃতিক ঘটনা। প্রকৃতির উপরোক্ত নিয়মের সাহায্যে, মানুষ আজ আরামে বসবাসের জন্য বিভিন্ন মেশিন, যানবাহন এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর তৈরি করতে সক্ষম। প্রকৃতি যদি ইচ্ছামত উপরোক্ত আইন পরিবর্তন করতে পারত, তাহলে আমরা অনেক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই, অর্থাৎ প্রকৃতি নিজেই উপরোক্ত আইন পরিবর্তন করতে পারবে না। যদি প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়ম পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে কোনও এক সময়ে আমাদের মহাবিশ্বের যে কোনও গ্রহে জ্বালানিচালিত যানবাহন যেখানে থাকবে সেখানেই থাকবে, যদি তারা গরম হয়ে গেলে পদার্থের আয়তন না বাড়ায়। একইভাবে বিদ্যুতের নিয়ম পরিবর্তন করা হলে মহাবিশ্বের যে কোনও স্থানে থাকা বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে প্রকৃতির নিয়ম এভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এমন কোনও প্রমাণ নেই। পদাৰ্থের ভর অনুযায়ী মাধ্যকৰ্ষণিক বল থাকে। পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির আগে থেকেই এগুলো আমাদের মহাবিশ্বে ছিল, আজও আছে এবং মানুষ হারিয়ে গেলেও ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই বিজ্ঞান চিরন্তন সত্য। কিন্তু ধর্মগুলো মানবসৃষ্ট। এই ধর্মগুলোর সত্যতার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। খ্রিস্টান সম্প্রদায় কোপার্নিকাস, ব্রুনো এবং গ্যালিলিওর বিবৃতিতে "পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসাবে" সম্পর্কে বাইবেলের ভুল বর্ণনাকে সংশোধন করে যে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়।
ধর্মের অসত্যটা যুক্তি দিয়ে তুলে ধরলেই কেউ ধর্ম বিদ্বেষী হয়ে যায় না। ঈশ্বর একটি কাল্পনিক শব্দ, ঈশ্বর নামে কিছু থাকলে এতদিনে প্রমাণিত হতে কি বাকি থাকত? না নিশ্চয় বাকি থাকত না। এককথায় স্ক্রিজোফোনিয়াতে আক্রান্ত মানুষরাই দৈববাণী শুনতে পারে আর তাদের কল্যাণেই পৃথিবীতে গড়ে উঠে ঈশ্বর ও ধর্ম।
ধর্ম বিশ্বাসী আবেগী ধার্মিকগণ সচরাচর মানবিক আচরণের সকল সংজ্ঞার সমীকরণ ধর্মের বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করে ছক্কা মেরে বসেন, কিন্তু ঘুণাক্ষরেও একটি বারের জন্যে চিন্তা করে দেখেন না যে পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্মের জন্ম হয়েছে আবার তা সময়ের গহ্বরে হারিয়েও গেছে। যে ধর্মগুলো আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় এখনও ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে, যেখানে সকল ধরনের মধ্যযুগীয় আচার, নিয়ম-কানুন দিয়ে সেই সব ধর্মগ্রন্থগুলো পরিপূর্ণ, হাস্যকর বিষয় হচ্ছে আবেগী ধার্মিকগণ সেই সব অমানবিক আচার, নিয়ম-কানুনগুলোকে বৈজ্ঞানিক আবরণ লাগাতে উঠে পড়ে লেগেছেন।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ, সৌরজগতের সূর্যকেন্দ্রিক মডেল, এবং বিগ ব্যাং। এইসব বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, যুক্তি প্রমাণ ও ব্যাখ্যা ধর্ম দ্বারা প্রতিরোধ করা চেষ্টা করা হয়েছে ও হচ্ছে। বিজ্ঞান এবং নাস্তিকতার উত্থানকে রেনেসাঁ নামে দ্রুত সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের সময়কে দায়ী করা যেতে পারে যা প্রায় পাঁচশত বছর আগে ইউরোপে শুরু হয়েছিল। এই রেনেসাঁ পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধগুলিকে বিশ্বে আধিপত্যের দিকে পরিচালিত করে। উদার, বুদ্ধিজীবী এবং নাস্তিক মনোভাবগুলিকে দিন দিন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। অনেক ধর্মীয় নেতা এই মূল্যবোধগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কেউ কেউ বিজ্ঞানের সাথে বৃহত্তর চুক্তির জন্য ধর্মগ্রন্থের পুনর্ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন বা এই ব্যাখ্যাগুলোকে নিজেদের মনের মাধুরী দিয়ে সাজাবার চেষ্টা করেছেন।
বিজ্ঞানের প্রমাণ ও যুক্তি বিশ্ব ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের অসামঞ্জস্যের দিক তুলে ধরেছিল, ফলে যেখানে যারা পরিবর্তন করতে অনিচ্ছুক তারা নিজেদেরকে সংস্কারকদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল। ফলস্বরূপ, পুরানো ধর্মগুলি নতুন সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে, প্রত্যেকেরই ঐতিহ্যগত বিশ্বাসের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিতে থাকে। উদাহরণসরূপ বলা যায় যে অনেক আবেগী ধার্মিকগণ ধর্মগ্রন্থের মাঝে বিগ ব্যাং খোঁজার চেষ্টা করছেন, চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করার লেখা হয়েছে কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে জোয়ার-ভাঁটার যে ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল সে বিষয়ে কেনই বা বিন্দুমাত্র কিছুই লেখা হলো না? এভাবে গোঁজামিল দিয়ে লেখার কারণটাই বা কি? বা আরও বলা যায়, যদি মহাবিশ্ব একটি বিস্ফোরণ দিয়ে শুরু হয় তবে কেউ দাবি করতেই পারেন যে ঈশ্বর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, যদিও ধর্মগ্রন্থে এসব কোথাও লেখা নেই। যদি ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া যায় তাহলে ঈশ্বর আমাদের বিশ্বাস পরীক্ষা করার জন্য সেগুলো সেখানে রেখেছেন বলে অনেকেই দাবি করতেই পারেন তবে ধর্মগ্রন্থে এসব কোথাও লেখা নেই বা থাকে না, কারণ যিনি ধর্মগ্রন্থগুলোকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে এনেছেন তিনি হয়তো গ্রন্থের কিছু পাতা ভুল করে ঈশ্বরের টেবিলে ফেলে এসেছেন। এসব প্রশ্ন মনের মাঝে উদয় হলে কি নরকের আগুনে পুড়তে হবে? যদি পৃথিবী কোটি কোটি বছর পুরানো হয়, তাহলে জেনেসিসের গল্পে একটি দিন শত কোটি বছরের সমান। এগুলি বাইবেলের প্রকৃত ব্যাখ্যা যা বিজ্ঞান দ্বারা জোরপূর্বক অস্তিত্বের জন্য বাধ্য করা হয়েছে। সক্রেটিস যেমন অনুমান করেছিলেন, এটি অনুসন্ধানী মনের শূন্যতা যা আমাদের সত্যের দিকে চালিত করে। এবং এমনকি যদি একটি ধর্ম নিরঙ্কুশ সত্যের উপর আঘাত করে, তবে এই সত্যটি জানে এমন গোঁড়া ধারণা সর্বদা একই দাবি করা অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করবে। এই কারণেই ধর্ম সংঘর্ষের জন্ম দেয় এবং যে কোনও ধরনের বিশ্বাসের ক্ষতি হয়।
।২।
প্রাতিষ্ঠানিক ঈশ্বর কি গণিতের উত্তর পরিবর্তন করতে পারেন? না, পারেন না। প্রকৃতির সব চিরন্তন সত্য গণিতের নিয়ম অনুসারেই ঘটছে। আমরা তাপ এবং আলো পাই কারণ হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি সূর্যের কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যাকর্ষণ চাপের অধীনে হিলিয়াম পরমাণুতে ফিউজ করে, শক্তিশালী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ তৈরি করে যা পুরো সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে। তারা হল চলমান বিদ্যুতের ভাণ্ডার। আমাদের সূর্য-আকারের নক্ষত্রগুলির একটি আলোক-দানকারী জীবনকাল সাধারণত ১ বিলিয়ন বছর থাকে, যার অর্থ হল যে যতক্ষণ পারমাণবিক ফিউশন চলতে থাকে ততক্ষণ আলো এবং তাপ বিকিরণ চলতে থাকে। মহাকর্ষ বল (Mass) বস্তুর ভর দ্বারা নির্ধারিত হয়। ভর যত বেশি, মহাকর্ষ বল তত বেশি। পদার্থ নিজেই গ্রাভিটন (Graviton) নামক একটি কণা নির্গত করে যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তৈরি করে। কোন ঈশ্বর ১ কেজি ভরের বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ২ কেজি ভরের বস্তুর চেয়ে বেশি করতে পারেন না। এটাই গণিতের সত্য। বৃহস্পতি গ্রহ পৃথিবীর তুলনায় ১১ গুণ প্রশস্ত এবং তিনশো গুণ বেশি বড় এবং এর মাধ্যাকর্ষণ ১০ গুণ বেশি। সমান উচ্চতা থেকে পতিত একটা নুড়ি ১ কেজি বলে (ত্বরণ ৯.৮১কেজি.মিটার / সেকেন্ড বর্গ) পৃথিবীতে আঘাত করলে তা ১০ কেজি (ত্বরণ ১০×৯.৮১ কেজি. মিটার/সেকেন্ড বর্গ) শক্তি নিয়ে বৃহস্পতি গ্রহে আঘাত করবে। সবচেয়ে বড় মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্ল্যাকহোলে ঘটে, যা পাশ দিয়ে যাওয়া আলোকে আকর্ষণ ও শোষণ করতে পারে।
আমাদের তারকামণ্ডল কেন্দ্রে একটি বিশাল Supermassive Black hole রয়েছে ৪ মিলিয়ন সূর্যের ভর যাকে বিজ্ঞানীরা Sagittarius A নাম দিয়েছেন। সৌরজগৎ সহ তারকামণ্ডল সমস্ত পদার্থ এটিকে ঘিরে ঘোরে। এই ঘটনাগুলিও গণিত দ্বারা নির্ধারিত হয়। মহাকর্ষের কারণে গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষও হয়। যখন তারার কেন্দ্রে হাইড্রোজেন ফিউজ হয়, হিলিয়াম পরমাণুগুলি কার্বন পরমাণুতে ফিউজ হয় এবং তারপরে কার্বন পরমাণুগুলি লোহার পরমাণুতে ফিউজ হয়। এইভাবে, একটি নক্ষত্রের কেন্দ্রে ভারী পরমাণু জমা হওয়ার ফলে একটি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় বল তৈরি হয় যা সূর্যের চেয়ে ৮/৯ গুণ বড় একটি নক্ষত্রকে একবারে বিস্ফোরিত করতে পারে এবং তীব্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ এবং খুব শক্তিশালী Gamma ray, X- ray সহ পদার্থ সৃষ্টি করতে পারে এবং Nebulae মেঘ তৈরি হয়। এই বিস্ফোরণকে Supernova বলা হয়।
Nebulae মেঘগুলিও ছোট তারা গঠন করতে পারে। এইভাবে তারার Supernova র জন্য গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু, গ্রহাণু এবং উল্কা ইত্যাদি উৎপত্তি হয়। সেইজন্য গ্ৰহ, উপগ্ৰহ, ধুমকেতু, Asteroid, উল্কা আদি উৎপত্তি হয়। অৰ্থাৎ আমরা সকলই মৃত তারার অংশ। তাই আমাদের ব্ৰহ্মাণ্ডের সকল শক্তিই মাধ্যকৰ্ষণ বল এবং পরমাণুতে থাকা বিদ্যুৎ চুম্বকত্বের থেকে বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়া কোনও ঈশ্বর, আল্লাহ বা গডের সৃষ্টি করা নয়। শক্তি রূপান্তরের এই প্ৰক্ৰিয়া কোনও কাল্পনিক ঈশ্বর, আল্লাহ, এমনকি গড এটি পরিবর্তন করতে পারে না। সবকিছুই গণিতীয় (Mathematical) সম্বন্ধমতে চলে। আমাদের পৃথিবীতে সৃষ্টি হওয়া বাতাস, ঝড়, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ, সাগরীয় স্রোতের মাধ্যকৰ্ষণ বল, তাপের প্ৰভাবে হয়। এগুলো প্রত্যেকটা একে অপরের সঙ্গে গাণিতিক মেলবন্ধনে যুক্ত। এই গণিত কোনও কাল্পনিক ঈশ্বর আল্লাহ বা গড এটা পরিবর্তন করতে পারবেন না।
।৩।
অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থ মতে, জীবের আত্মা থাকে বুকে। কিন্তু বিজ্ঞান মতে একটা জীব চালিত হয় মগজ দ্বারা। প্রথায় সকল জীবের দেহে কম বেশি বিদ্যুৎ থাকে। এর মধ্যে সবথেকে বেশি থাকে ইলেক্ট্রিক ফিসের (Electric Fish)। একটি পূর্ণবয়স্ক বৈদ্যুতিক ইল মাত্র ২ মিলি সেকেন্ড ৬০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, যা আমাদের বাসা বাড়িতে সংযুক্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। জানা যায় ৬০০ থেকে ৮৬০ ভোল্ট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করতে ৬ ফুট লম্বা ইল ৬০০০ পেশী কোষকে ব্যবহার করে।
আমাদের মগজ এবং কলিজার পাম্পটা বৈদ্যুতিক পালস (Pulse) র সহায়ত কাজ করে। জীবের মগজ Electric circuit একটা কম্পিউটার থেকেও বহু গুণ জটিল। মগজ দেহের বিভিন্ন অংশে নিৰ্দেশনা বৈদ্যুতিক পালসের দ্বারাই দিয়ে থাকে। তাই একটা জীব চালিত হয় তার মগজ দ্বারাই। আমাদের কলিজার পাম্পের কাৰ্যক্ষমতা যদি হ্ৰাস পায়, চিকিৎসক বেটারিযুক্ত Space maker লাগিয়ে দেন। সেই জন্য আত্মা বলে যে বস্তু সেটা বুকের মধ্যে থাকে না। জীবের আত্মা যদি বলতেই হয় তবে মগজকে ধরে নিতে হবে। ডলফিন মাছ আমাদের চিকিৎসা বিভাগে ব্যবহৃত Ultra sonography থেকে শক্তিশালী Sonography waves ব্যবহার করে গর্তের ভেতর লুকিয়ে থাকা শিকার খুঁজে ধরে খেয়ে থাকে।
বিজ্ঞানে কোনও সৰ্বজ্ঞ নেই। অৰ্থাৎ বিজ্ঞানে কোনও গুরু, মাসিমা বা নবী রসূল নেই। কোনও একজন যদি সূত্ৰ আবিষ্কার করে যাওয়া জ্ঞান নিয়ে আরও একধাপ অগ্রসর হোন, এইভাবে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন বিষয়ে আবিষ্কার করা ব্ৰহ্মাণ্ডের চিরসত্য কথাগুলো রিসার্চ করে করে বিজ্ঞান চৰ্চা আজকের এই অবস্থায় আসতে পেরেছে। বিজ্ঞানে কোনও হিন্দু বিজ্ঞান, মুসলমান বিজ্ঞান বলে শ্ৰেণীবিভাজন থাকে না কারণ ইহা চিরসত্য কথা। একটা গণিতের শুদ্ধ উত্তর এটাই আসবে কিন্তু সেই গণিতের অশুদ্ধ উত্তর যে কোনও অৰ্থাৎ লাখো হাজার সংখ্যা দেওয়া যাবে।
ধৰ্ম এবং বিজ্ঞানের এখানেই পাৰ্থক্য। প্ৰত্যেক ধৰ্মে নিজের ধর্মকেই শ্ৰেষ্ঠ বলে দাবি করেন সকল ধৰ্মগুরুরা। ধৰ্মগুরুকে যদি আপনি প্ৰশ্ন করেন কেন এভাবে হবে, তখনই গুরু রেগে অগ্নিশর্মা। কারণ ধৰ্মে গুরুর বাণীই হল চিরন্তন সত্য কথা। কিন্তু বিজ্ঞানে সব কিছু নিজে পরীক্ষা করে সত্য নিরূপণ হওয়া কথাগুলোই গ্ৰহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্ৰীধারী একজন লোক অবৈজ্ঞানিক চিন্তা ধারার হতে পারে অন্যদিকে যে ব্যক্তি কোনওদিন স্কুলে যায় না সেও বৈজ্ঞানিক মানসিকতার একজন ব্যক্তি হতে পারে। উল্লেখ্য যে মানুষ ছাড়া মহাবিশ্বের প্রায় সব প্রাণীই বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা নিয়ে বাস করে তারা তাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে যে কোনও পরিবেশ বা বস্তু অধ্যয়ন করে এবং পদক্ষেপ নেয়।
সমাজ সংস্কারক কাজ করতে হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিজের মত প্রকাশ করতে হবে, কেউ মানুক বা না মানুক। আমার মত মূলত নারীর সমানাধিকারের পক্ষে, মানবতার পক্ষে, যুক্তিবাদ এবং বিজ্ঞানমনস্কতার পক্ষে। পৃথিবীকে আমাদের সন্ত্রাসমুক্ত এবং বাসযোগ্য করা ছাড়া উপায় নেই। সবার মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা এবং সবার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া উপায় নেই। জীবনের শেষ শ্বাসটুকু পর্যন্ত অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে ডুবে মরতে দেখা কি আর সহ্য করা যায়! পৃথিবীতে যত সরকার আছে, সবারই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে। বিজ্ঞানমনস্কতা হওয়া ছাড়া উপায় নেই। ধর্মান্ধতা মানুষকে বাঁচায় না, বাঁচায় বিজ্ঞান, বাঁচায় যুক্তিবুদ্ধি।