আমাদের পাড়ায় একদিন দুই সাধুবাবা এসেছিলেন। আমাদের ক্লাবের সামনে বড়ো মাঠ এবং মাঠের পাশে একটি বটগাছ রয়েছে। বট গাছটির চারিদিকে গোল করে বসার জায়গা করা রয়েছে। দুই সাধুবাবা সেখানে বসলেন এবং তাদের দেখার জন্য রীতিমতো জনগণের ভিড় বাড়তে লাগল। সাধু বাবাদের তুষ্ট করার জন্য অনেকেই অনেক রকম উপঢৌকন নিয়ে এলেন। কেউ দিলেন চাল, কেউ ডাল কেউ আলু তো কেউ আবার দুই দশ টাকা। অনেক রকম সবজি এবং ফলও দিয়েছেন। পাড়ার মোড়ল বড়ই ধার্মিক তিনি তো সবার ঊর্ধ্বে। তিনি নিয়ে এলেন একটা দামি গিনির আংটি। এবার এই আংটি নিয়ে দুই সাধুবাবার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিল। মোড়ল তো একটি মাত্র আংটি দিলেন কিন্তু ছিলেন দু'জন সাধু, কে নেবে এই আংটি? তারপর একে একে সমস্ত গ্রামবাসীরা বাড়ির ফিরে গেলেন। প্রত্যেকেই আশীর্বাদ পেয়েছেন, শান্তি জল পেয়েছেন। তাই তারা সাধু বাবাদের ধন্য ধন্য করতে লাগলেন।
এতক্ষণ নরেনদা সবকিছু চুপচাপ দেখছিলেন, সবাই চলে গেলেও নরেনদা কিন্তু শান্তভাবে সাধুবাবুদের মাঝে গেলেন এবং তাদের সাথে মিশে গেলেন। এটা সেটা বলতে বলতে নরেনদা একটা যুক্তি দিলেন দুই সাধুবাবাকে। যে সাধুবাবা প্রমাণ করতে পারবেন তিনি সব থেকে বড় ধার্মিক এবং ভগবানের কাছ থেকে দেখা পেয়েছেন তিনি এই আংটির অধিকারী হবেন।
নরেনদার এই প্রস্তাবে দুই সাধুবাবা রাজি হলেন এবং তারা বললেন যে আমরা পাঁচ মিনিট করে তপস্যা করব তারপরে আমরা আমাদের ভগবানের কে কতটা কাছে আসতে পেরেছি তার গল্প শোনাবো। তারপরে নরেনদা বিচার করবে কে সবচেয়ে বড় ধার্মিক। নরেনদা এক কথায় বললেন, “হ্যাঁ ঠিক আছে তাই হোক।”
এভাবে দুই সাধু বাবা যখন পাঁচ মিনিট ধরে ধ্যানে বসলেন সেই সুযোগে নরেনদা সোনার গিনি আংটিটা টুক করে সরিয়ে নিয়ে, কিছু ছাই ভস্ম ঐ স্থানে রেখে দিলেন।
প্রথম সাধু বললেন, “আমি ধ্যানের মধ্যে দিয়ে কৈলাসে গিয়েছিলাম সেখানে দেখলাম নন্দী ফিরিঙ্গি মহাদেবের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং আমি নন্দী ভিরিঙ্গীর সাথে কথা বলে সিদ্ধি খেয়ে তবেই এসেছি। ওরা বলল আমার মত ভক্ত যে ওখানে আসবে তা ওরা জানত।” প্রথম সাধু ভাবলেন মহাদেবের এত কাছ থেকে ঘুরে এসেছি আশা করি আমার থেকে বড় ধার্মিকের গুল গপ্পো দ্বিতীয় আর কেউ শোনাতে পারবে না।
এই গল্প শোনার পর দ্বিতীয় সাধু বলল, “আমিও তো কৈলাসে গিয়েছিলাম আমি গিয়ে মা পার্বতীর সাথে দেখা করে এসেছি, কথা বলে এসেছি, আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম উনি বললেন বাবা বাইরে একটু ঘুরতে বেরিয়েছেন। মা আমাকে যত্ন করেছেন, বলেছেন আমার মতো ভক্ত পেয়ে মহাদেব ধন্য।”
দ্বিতীয় সন্ন্যাসী ভাবলো আমি তো মহাদেবের স্ত্রী পার্বতীর সাথে দেখা করেছি তার মনে আমার গল্প হিসাবে আমি প্রথম সন্ন্যাসীর থেকেও বড় ধার্মিক।
এবার বিচারের জন্য তারা দুজনেই নরেনদার মুখের দিকে তাকালো। নরেনদা দুঃখ ভরা মুখ নিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা যে সময় কৈলাসে গিয়েছিলে, তখন তো মহাদেব এখানে এসেছিলেন। বললেন এরা দুজনেই আমার পরম ভক্ত। একটা আংটির জন্যে এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগুক তা আমি চাই না, তাই আমি এই আংটি ভস্ম করে দিলাম।” আর আমাকে বললেন, আমি যেন এই ছাই ভস্মটি তার দুই পরম ভক্তের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে যাই।
এই বলে নরেনদা ছাই-ভস্মটি দুই সাধুবাবাকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। আর দুই সাধু তার দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয়ে রইলেন!