(নভেম্বর সংখ্যার পর)
ঈশা বাস্যমিদংসর্বম্ য়ত্কিঞ্চ জগত্যাম্ জগত্।
ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্।।
এই মন্ত্রটির মধ্যে ঈশ্বরের সর্বব্যাপকতার বর্ণনা আছে যে সৃষ্টির সমস্ত চর আর অচর ঈশ্বর দ্বারা আচ্ছাদিত অর্থাৎ সে প্রত্যেক অণুর মধ্যে ব্যাপ্ত।
(য়জুর্বেদ অধ্যায় ৪০ এর প্রথম মন্ত্র)
বিশ্বাস হচ্ছে, সোজা কথায় যুক্তিহীন কোন ধারণা, অনুমান, প্রমাণ ছাড়াই কোন প্রস্তাব মেনে নেয়া। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্য-প্রমাণ, পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় মানুষের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত নয়। যখনই কোনো কিছু যুক্তিতর্ক, পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা লব্ধজ্ঞান হয়ে উঠবে, তা আর বিশ্বাস থাকবে না। যেমন ধরুন, পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রণে তৈরি। এটা মানুষের বিশ্বাস নয়, এটা পরীক্ষালব্ধ ফলাফল। আপনাকে এই কথাটিতে বিশ্বাসী হতে হবে না। কারণ কে এতে বিশ্বাস করলো কে করলো না, তাতে এই তথ্যের সত্যতার কিছুই যায় আসে না। এটা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্য। আমরা কেউ বলি না “পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রন, এই কথা আমি বিশ্বাস করি”; এটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নই নয়। বা ধরুন, পৃথিবী গোল, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মেনে নিই উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের আলোকে। এটা এখন আর অনুমান বা বিশ্বাস নেই, এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য। বা ধরুন বিবর্তনবাদ। এটা কোন অনুমান নয়। বর্তমানে এটি পরীক্ষানিরীক্ষা দ্বারা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্য।
বিশ্বাস সেটাই করতে হয়, যাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বা যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ধরুন কেউ ভূতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে এলিয়েন পৃথিবীতেই আছে, কেউ জ্বীন পরী, কেউ আল্লা, কেউ জিউস কালী ইত্যাদি। এগুলো বিশ্বাসের ব্যাপার, কিন্তু আমরা আলোতে বিশ্বাসী নই, আমরা সূর্যে বিশ্বাসী নই, আমরা চেয়ার টেবিলে বিশ্বাসী নই। কারণ এগুলো বিশ্বাস অবিশ্বাসের উর্ধ্বে। আমরা বলি না অমুক লোক সূর্যে বিশ্বাসী, তমুক লোক চেয়ার টেবিলে বিশ্বাস করে। আমরা বলি মুসলিমরা আল্লায় বিশ্বাসী, হিন্দুরা শিব বা দুর্গায়, কেউ শাকচুন্নীতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে আমাদের চারপাশে জ্বীন পরী ঘুরে বেড়ায়।
ধরুন, আগামীকাল একটি পত্রিকায় ছাপা হলো যে, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল একজন এলিয়েন। এই তথ্যটি জানার পরে আমি নিচের কাজগুলো করতে পারি।
১) আমি তথ্যটি জানলাম বা শুনলাম, এবং বিশ্বাস করলাম।
২) আমি আরও কয়েকটি নিরপেক্ষ পত্রিকা পড়লাম, এবং ইন্টারনেট বা অন্যান্য মাধ্যম থেকে এর সত্যতা যাচাই করতে চেষ্টা করলাম। দেখা গেল, আরও কিছু পত্রিকা কথাটি লিখেছে। আমি সেই অবস্থায় কথাটি বিশ্বাস করলাম।
৩) আমার এইসব পত্রিকার কথা বিশ্বাস হলো না। আমি সরাসরি অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সাথে দেখা করতে গেলাম, এবং সরাসরি দেখলাম যে, উনি একজন এলিয়েন। দেখার পরে আমি মেনে নিলাম। যেহেতু সরাসরিই দেখা, তাই আর বিশ্বাসের অবকাশ নেই। তবে কিছুটা সংশয় থাকতে পারে।
৪) আমি শুধু দেখেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছুক নই। পরীক্ষানিরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হতে চাই। তাই আমি পরীক্ষানিরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম। তখনও আমার আর কথাটি বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের অবকাশ নেই। আমি শতভাগ নিশ্চিত। আমি তথ্যটি মেনে নিলাম।
অন্যদিকে নাস্তিকতা হচ্ছে প্রমাণের অভাবে ঈশ্বরে অবিশ্বাস। অর্থাৎ ঈশ্বর প্রসঙ্গে শূন্য বিশ্বাস। ন্যুল বিশ্বাস। বিশ্বাসের অনুপস্থিতি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক প্রস্তাবকে বাতিল করা।
Atheism, in general, the critique and denial of metaphysical beliefs in God or spiritual beings. As such, it is usually distinguished from theism, which affirms the reality of the divine and often seeks to demonstrate its existence.
অর্থাৎ এটা “ঈশ্বর নেই”- তাতে বিশ্বাস করা নয়। বরঞ্চ “ঈশ্বর আছে”, সেই প্রস্তাবকে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে বাতিল করা এবং সেই বিশ্বাসের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরা। ঈশ্বর নেই, সেটা বিশ্বাস করা আর ঈশ্বর আছে, এই প্রস্তাবনাকে প্রমাণের অভাবে বাতিল করা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। নাস্তিকতা কোন বিশ্বাস বা ধর্ম নয়, বরঞ্চ নাস্তিকতা হচ্ছে অবিশ্বাস। সেই বিশ্বাসে আস্থাহীনতা।
যেমন ধরুন, স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা একজনের শখ। অন্য আরেকজনের নয়। যার নয়, তার ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি না যে, স্ট্যাম্প কালেকশন না করা হচ্ছে তার শখ। বা ধরুন কেউ টিভিতে কেউ কোন চ্যানেল দেখে। যখন কোন চ্যানেল আসছে না, কোন সিগান্যাল আসছে না, সেটাকে আমরা আরেকটি চ্যানেল বলতে পারি না। সেটা হচ্ছে সিগন্যালের অনুপস্থিতি। শূন্য সিগন্যাল। যেমন আলো হচ্ছে সাতটি রঙের মিশ্রণ। আলোর অনুপস্থিতিকে আমরা অন্ধকার বলি। সেটাকে আরেক রকমের আলো বলি না। বা আরেকটি রঙ বলি না।
বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্বাসীগণ কিছু অসৎ যুক্তি তুলে ধরেন। যেমন, প্রমাণ করুন, ঈশ্বর নেই! বা নাস্তিকরা কী প্রমাণ করতে পারবে যে, ঈশ্বর বলে কিছু নেই?
এই যুক্তিটি অসৎ এবং একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি বলে সারা পৃথিবীর কাছে পরিচিত। কারণ, যে দাবি উত্থাপন করবে, প্রমাণের দায়ও তার ওপরেই বর্তায়। অন্য কেউ বিষয়টি অপ্রমাণ করবে না।
(ফ্যালাসি দুই ধরনের, এই বিষয়ে পরবর্তীতে লিখবো।)
এটা নাস্তিকদের দায় নয়। যে ঈশ্বরের প্রস্তাব উত্থাপন করবে, তা প্রমাণের দায় তার ওপরই বর্তায়। সে সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির না করতে পারলে সেটা বাতিল করে দেয়াই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। সেটাই দর্শনের মৌলিক অবস্থান। সেই প্রস্তাব যত জোর গলাতেই উত্থাপন করা হোক না কেন, সেটা অপ্রমাণ করার দায় নাস্তিকদের নয়। যেমন কেউ যদি দাবি করে, বৃহস্পতি গ্রহে মানুষ রয়েছে, বা সে নিজেই ঈশ্বর, এই মহাবিশ্ব সে নিজেই সৃষ্টি করেছে, বা তার বাসার পুকুরের ব্যাঙটিই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে! তাহলে এরকম প্রস্তাবের প্রমাণ তাকেই করতে হবে। অন্যরা বৃহস্পতি গ্রহে গিয়ে তার প্রস্তাব অপ্রমাণ করবে না, বা সে যে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি, তা অপ্রমাণ করবে না। যতক্ষণ সে তার প্রস্তাবের সপক্ষে উপযুক্ত তথ্য এবং যুক্তি উপস্থাপন করতে না পারছে, শুধু “মৃত্যুর পরে” সব প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে দাবী করছে, তার বা তাদের দাবিকে আমলে নেয়ার প্রয়োজন নেই। আর তা প্রমাণ করতে পারলে, বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারলে, আগামীকাল পৃথিবীর সমস্ত যুক্তিবাদী নাস্তিকের দল বেঁধে আস্তিক হতে কোন বাধা নেই।
আমরা বলি, ধর্মবিশ্বাস এবং কুসংস্কার আসলে সমার্থক।
প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ নানা ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে। মানুষের স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসু মন, কৌতূহলী মনে নানা জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ধরুন, বৃষ্টি কেন হয়, ফসল কীভাবে জন্মায়, মানুষ জন্মে, পৃথিবী কোথা থেকে এলো, কিভাবে এলো, ইত্যাদি। কিছু বিষয় মানুষ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে জানতে পেরেছে, কিছু কিছু বিষয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে, উপযুক্ত তথ্যের অভাবে বুঝতে পারেনি। ধীরে ধীরে মানুষ আরও জ্ঞান অর্জন করেছে, আরও বেশি জেনেছে।
আর যেগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতে পারেনি, সেই সময়ের জ্ঞান যে পর্যন্ত পৌঁছায়নি, সেগুলো সম্পর্কে মানুষ ধারণা করেছে, কল্পনা করেছে। যেমন, যখন মানুষ জানতো না বিদ্যুৎ কীভাবে চমকায়, তাদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই এই সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য ছিল না, তাই যখন কেউ প্রস্তাব করে এটা ভয়ঙ্কর কোন দেবতার কাজ, সেই প্রস্তাবই অন্য কোন যৌক্তিক প্রস্তাবের অনুপস্থিতির কারণে, বা সেই সময়ের মানুষের জ্ঞানের অভাবের কারণে মানুষগুলোর মধ্যে টিকে গেছে। এর পেছনে কাজ করেছে অজানার প্রতি ভয়, এবং লোভ। সেই সময়ে হয়তো কেউ দাবি করেছে, সে নিজে হচ্ছে ভয়ঙ্কর দেবতাটির পুত্রও, বা প্রিয় বন্ধু, বা আত্মীয়স্বজন, এবং এইসব দাবির মাধ্যমে সে সমাজে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। ধীরে ধীরে সেটাই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে রূপ নিয়েছে। মানুষের মাঝে অজ্ঞানতা, জানতে না পারার হতাশা, অজ্ঞতা একধরনে হীনমন্যতায় রুপ নেয় এবং ধীরে ধীরে অজ্ঞানতার অন্ধকার একপর্যায়ে দেবতা, ঈশ্বর, ভূত নামক কল্পনা দিয়ে তারা ভরাট করে ফেলে। যেমন তারা ধরে নিয়েছে, বিদ্যুৎ চমকানো হচ্ছে দেবতা জিউসের ক্রোধ। পরবর্তীতে আধুনিক বিজ্ঞান উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সহকারে বের করেছে, বিদ্যুৎ কীভাবে চমকায়। তার পেছনে কোন দেবদেবী ঈশ্বর আল্লাহর হাত আছে কিনা। সেই সব অপ্রমাণিত বিশ্বাসের সমষ্টিই বা বিশ্বাসগুলোর বিবর্তিত রূপই হচ্ছে আজকের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো। আধুনিক ঈশ্বরগুলো। পুরনো ঈশ্বরদের বিবর্তন ঘটে গেছে। পুরনো অনেক প্রবল প্রতাপশালী দেবতা ঈশ্বর এবং ধর্মবিশ্বাসই সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আধুনিক ধর্মগুলোও একসময় বিলুপ্ত হবে।
নাস্তিকতা এই প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তারা তা অস্বীকার করে। প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাতিল করে। এটি কোনো ভাবেই আরেকটি বিশ্বাস বা ধর্ম নয়। বরঞ্চ ধর্ম বা বিশ্বাসের অনুপস্থিতি। একটি যৌক্তিক অবস্থান। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈশ্বর বা স্রষ্টার উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত। পাওয়া গেলে, তা মেনে নিতে এক মূহুর্ত দেরী হবে না। তখন আর তা বিশ্বাস করতেও হবে না। মেনে নেয়া হবে।
বস্তুত, ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে এবং আমার বাসার ডোবার ব্যাঙটিই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে, এই দুটো দাবীর সপক্ষেই ঠিক একই মানের প্রমাণ দেয়া সম্ভব। তাই তা বাতিল যোগ্য।
অজ্ঞেয়বাদ শব্দটি ইংরেজি যে শব্দটির পারিভাষিক শব্দ, অর্থাৎ “Agnostic” শব্দটিকে ভাঙলে আসে গ্রিক “a” এবং “gnostos”। gnostos অর্থ জ্ঞানী, আর তার আগে উপসর্গ “a” মিলে agnostic শব্দের আক্ষরিক অর্থ হয়েছে জ্ঞানহীন। সেই অর্থে একজন ব্যক্তি অনেক বিষয়ে agnostic হতে পারেন। কিন্তু এটার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার দেখা যায় ধর্মীয় বিশ্বাসের বেলায়। যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে, তখন দুটি মৌলিক অবস্থানের সূচনা ঘটে যাদের মধ্যে যেকোন একটিকে গ্রহণ করতে হয়। এটা অনুসারে, হয় আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারেন, অথবা অবিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু যদি অপশনগুলোকে আরও একটু নীরিক্ষণ করেন তাহলে আপনি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মোট চারটি অবস্থান দেখতে পারবেন:
১। জ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Gnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এবং এটা যে সত্য এই বিষয়ে আপনার জ্ঞান আছে (বা এটা যে সত্য তা আপনি জানেন)।
২। অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Agnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু জানেন না যে এটা সত্যি কিনা (অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন)।
৩। জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Gnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটা জেনে আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেন যে ঈশ্বর নেই এবং তাই আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না)।
৪। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Agnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এটা না জেনেই আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেন না যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই কিন্তু আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।)
তৃতীয় অবস্থানটিকে, অর্থাৎ জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Gnostic atheism অবস্থানটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, “আমি বিশ্বাস করি এবং “জানি” যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই”। অন্যদিকে চতুর্থ অবস্থানটিকে, অর্থাৎ অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Agnostic atheism বলা হয় যা বলে, “ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, এতে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি এটা জানি না যে ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সত্য কিনা”। এই দুই দাবীর পার্থক্য সূক্ষ্ম কিন্তু এটাকে বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
অবিশ্বাস করা আর অন্য কিছুতে বিশ্বাস করা এক নয়
একজন নাস্তিক্যবাদীকে ঈশ্বর নেই এটা প্রমাণ করতে বলা হলে এটা ধরেই নেয়া হয় যে সেই নাস্তিক্যবাদী লোকটি “ঈশ্বর নেই” এই কথাটিতে বিশ্বাস করেন। জ্ঞেয়বাদীই নাস্তিক্যবাদীগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু নাস্তিক্যবাদীদের মধ্যে অনেক অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকও আছেন যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটাও নিশ্চিতভাবে দাবি করেন না। দুটোই বৈধভাবে নাস্তিক্যবাদ বা atheism। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে atheism বা নাস্তিক্যবাদ এবং agnosticism বা অজ্ঞেয়বাদ সম্পূর্ণভাবে দুটি আলাদা বিষয় নয়।
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এটাই কাউকে নাস্তিক শ্রেণীভুক্ত করার জন্য যথেষ্ট। কোন কিছুতে বিশ্বাসহীনতা মানেই এই নয় যে এটাকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। এটার কেবল এই অর্থই থাকতে পারে যে এটা যে সত্য সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত নন। উদাহরণস্বরূপ আপনার একজন বন্ধু বিশ্বাস করতে পারে যে ফোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ভাল গাড়ির কোম্পানি। আপনার এই বিষয়ে কোন বিশেষ মতামত বা ভাবনা নেই। আপনি বিশ্বাস করেন না যে ফোর্ড অন্য কোন ব্র্যান্ডের গাড়ির চেয়ে ভাল, কিন্তু এটা যে বিশ্বের সবচেয়ে ভাল গাড়ির ব্র্যান্ড না আপনি এটাও জানেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনি আপনার বন্ধুটির দাবির বিষয়ে agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী।
দ্য বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায়
ধরুন, আমি আপনার কাছে একটি অসম্ভব দাবি নিয়ে এলাম। সেটা হলো, “আমার কাছে একটি দুই ফুট লম্বা লেপ্রিকন (Leprechaun – রূপকথায় বর্ণিত একধরণের অবাস্তব জীব) আছে। এটা আমার সিন্দুকে থাকে। কেবলমাত্র আমিই এই লেপ্রিকনকে দেখতে পারি আর এই লেপ্রিকনের অস্তিত্বের কোন ফিজিকাল এভিডেন্স নেই।” কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয় যে এই লেপ্রিকনটির কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আমি এটারও কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারছি না যে এই লেপ্রিকনের কোন অস্তিত্ব আছে। আর এই ধরণের দাবিকেই আনফলসিফায়াবল ক্লেইম (Unfalsifiable claim) বা প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বলা হয়।
যখন একটি প্রমাণ-অযোগ্য দাবিকে সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায় তার উপরের বর্তায় যে ব্যক্তি দাবিটি নিয়ে এসেছেন। অন্যথায় এবসার্ডিটি বা বিমূর্ততার সূচনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ প্রমাণ-অযোগ্য দাবি সংক্রান্ত চিন্তন পরীক্ষণগুলো বা থট এক্সপেরিমেন্টগুলোর (Thought Experiment) কথাই চিন্তা করুন, যেমন “ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার”, “ইনভিজিবল পিংক ইউনিকর্ন”, স্যাগানের “দ্য ড্রাগন ইন মাই গ্যারেজ” এবং “রাসেলস টিপট” এর অস্তিত্ব। এই প্রত্যেকটি থট এক্সপেরিমেন্টেই পূর্ববর্তী উদাহরণের লেপ্রিকনের মত কোন না কোন আশ্চর্যজনক এবং অসম্ভব প্রাণীর কথা বলা হয়েছে যাদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অপ্রমাণ করা যায় না।
আর এখানেই অজ্ঞেয়বাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকগণ স্বীকার করেন যে, তারা ঈশ্বরকে নির্দিষ্টভাবে অপ্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবকে চোখে আঙ্গুলে দেখিয়ে দিতে পারেন এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
পর্ব - ৩
পূর্বোক্ত পর্বে যুক্তিগুলো কেবল প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বা যে দাবিগুলোকে সত্য বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করা যায় না তারদের উপরেই প্রয়োগ করা যায়। যখন এই যুক্তিগুলো বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসে প্রযুক্ত হয় তখন অনেক ধর্মীয় দাবিগুলোই তুলনামূলক নিশ্চয়তার সাথে অপ্রমাণ করা সম্ভব। কারণ সেই দাবিগুলো নিজে থেকেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এগুলো যুক্তির মুখে এমনিতেই ভেঙ্গে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, আব্রাহামীয় ঈশ্বর ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের দ্বারা উপাসিত হন। ধরুন আব্রাহামীয় ঈশ্বর একই সাথে সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বমঙ্গলময়। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য আমরা যে জগৎকে দেখছি সেখানে একই সাথে থাকতে পারে না বা কোএক্সিস্ট করতে পারে না। যখন বড় বড় দূর্যোগ ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায় তখন ঈশ্বরের পক্ষে একই সাথে সর্বমঙ্গলময় এবং সর্বশক্তিমান হওয়াটা অসম্ভব হয়ে যায়।
হয় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এরকম দূর্যোগ আটকানোর কোন ক্ষমতা নেই অথবা এই সর্বমঙ্গলময় ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ দুর্দশা সম্পর্কে একেবারেই ভাবনাচিন্তা করেন না। সুতরাং ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব নাও হতে পারে তবে ঈশ্বরের কিছু কিছু স্ববিরোধী সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব।
স্পেক্ট্রাম অব থেইস্টিক প্রোবাবিলিটি অথবা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী
আমাদের জীবনের অনেক বিষয়ের মতই আস্তিক্যবাদ এবং নাস্তিক্যবাদকে সাদা বা কালো এর মত দৃঢ় চরম-দ্বিমুখিতায় না ফেলে একটি স্পেক্ট্রাম বা বর্ণালীতে ফেলতে হয় (অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে হয় আস্তিক নয় নাস্তিক এভাবে শ্রেণীবিভক্ত না করে তাকে আস্তিক্যবাস থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত বর্ণালীর কোন একটি অবস্থানে রাখার কথা বলা হচ্ছে)। রিচার্ড ডকিন্স তার বিখ্যাত বই “দ্য গড ডিল্যুশন”-এ এই স্পেক্ট্রাম অব থেইস্টিক প্রোবাবিলিটি বা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী এর ধারণাটি দেন। এখানে আস্তিক্যবাদ থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত মোট সাতটি অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। এমন নয় যে এই সাতটি অবস্থান নিয়েই বর্ণালীটি, বরং বর্ণালীর ধারণায় এই সাতটি অবস্থানের দুটো পাশাপাশি অবস্থানের মধ্যেও কোন অবস্থান থাকতে পারে। কিন্তু এই সাতটি অবস্থান হচ্ছে বর্ণালীটির মদ্যে থাকা সাতটি মাইলফলক যা দিয়ে বর্ণালীর ভিতরের বিভিন্ন অবস্থানকে সরলভাবে প্রকাশ করা যায়। নিচে এগুলোর সারমর্ম দেয়া হল:
১। সবল আস্তিক্যবাদ (Strong theism): ব্যক্তি সন্দেহমুক্ত হয়ে জানেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। সি. জি. ইয়াং এর ভাষায়, “আমি বিশ্বাস করি না, আমি জানি”।
২। কার্যত আস্তিক্যবাদ (De facto theism): ব্যক্তি একশভাগ নিশ্চিন্ত নন যে ঈশ্বর আছেন, কিন্তু মনে করেন তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে ভেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন।
৩। দুর্বল আস্তিক্যবাদ (Weak theism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর বেশি, কিন্তু খুব একটা বেশি নয়। ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত নন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে থাকেন।
৪। পরিপূর্ণ অজ্ঞেয়বাদ (Pure agnosticism) অথবা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা (Compleat impartiality): ঈশ্বর থাকার সম্ভাবনা ৫০%। ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা, তার সত্য হবার সম্ভাবনা ও মিথ্যা হবার সম্ভাবনা ব্যক্তির কাছে সমান।
৫। দুর্বল নাস্তিক্যবাদ (Weak atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর কম, কিন্তু খুব একটা কম নয়। ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নন কিন্তু সন্দেহবাদের (Skepticism) দিকে তিনি ঝুঁকে থাকেন।
৬। কার্যত নাস্তিক্যবাদ (De facto atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু ০% এর উপরে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এব্যাপারে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক নন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক কম বলে মনে করেন এবং ঈশ্বর বলে কিছু নেই ভেবেই জীবন অতিবাহিত করেন।
৭। সবল নাস্তিক্যবাদ (Strong atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা শূন্য। ব্যক্তি শতভাগ নিশ্চিন্ত যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।
ডকিন্স বলেন, বেশিরভাগ আস্তিক মানুষ তাদের সন্দেহের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকে শক্তভাবে আকড়ে থাকেন, এবং তাই নিজেদেরকে ১ নং অবস্থানেই ফেলেন। এদিকে বেশিরভাগ নাস্তিক নিজেদেরকে ৭ নং অবস্থানে ফেলেন না, কারণ প্রমাণের অভাবে নাস্তিক্যবাদের উদ্ভব হয় এবং প্রমাণের উপস্থিতি সবসময়ই চিন্তাশীল মানুষের চিন্তাকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। বিল মার এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স নিজেকে ৬ নং অবস্থানে ফেলেন বলে স্বীকার করেছিলেন। তবে পরবর্তিতে এনথোনি কেনি এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স প্রস্তাব করেন “৬.৯” নং অবস্থানই বেশি শুদ্ধ হবে।
যদি আপনাকে নিজের বিশ্বাসকে ডকিন্সের স্কেলে রেট করতে বলা হয় তাহলে আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে ফেলবেন?
স্যাম হ্যারিস তার বই লেটার টু অ্যা ক্রিশ্চিয়ান নেশনে লিখেন:
প্রকৃতপক্ষে, "নাস্তিকতাবাদ" হচ্ছে এমন একটি পদবাচ্য, যার অস্তিত্বই থাকা উচিত না। কেওই নিজেকে "আমি জ্যোতিষ নই" বা "আমি আলকেমিস্ট নই" এই মর্মে অভিহিত করেন না। যেসব ব্যক্তি সন্দেহ করে এলভিস [একজন আমেরিকান সংগীত শিল্পী] এখনো জীবিত থাকতে পারে অথবা এলিয়েনরা হাতের ছোয়ায় এই মহাবিশ্বকে তাদের গোয়ালের প্রাণী বানিয়ে রাখবে, তাদের জন্য শব্দ খরচ করার মত শব্দ আমাদের নেই। যে ধর্মের সত্যতা নির্ধারণ করা যায় না, এজাতীয় ধর্মের বিপরীতে যুক্তিবাদী ব্যক্তির যে কোনো শব্দই নাস্তিক্যবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বতন্ত্রভাবে নাস্তিক্যবাদ শব্দটির আমদানী অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার মাত্র।"(Harris 2006, পৃ. 51)
বর্তমানে পশ্চিমা সমাজে শুধুমাত্র "ঈশ্বরে অবিশ্বাস"কেই সাধারণত নাস্তিক্যবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
"প্রাণের জটিলতা দেখে এর সবকিছুর একজন স্রষ্টা আছেন ভাবতে সহজ হয় বলেই আমি ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু, আমি মনে করি, যখন আমি বুঝতে পারলাম, ডারউইনিজম এই জটিলতার আরো উন্নত ব্যাখ্যা দেয় তখন তা আমাকে সৃষ্টিতত্ত্বের জাল থেকে বেড়িয়ে আসতে সাহায্য করলো।" -রিচার্ড ডকিন্স
নাস্তিকতা মানে এখন কোনো সুনির্দিষ্ট বিশ্বাসের সমালোচনা নয়, বরং সমস্ত ধর্ম যা আধ্যাত্মিকতা বা অলৌকিকতা নিয়ে কাজ করে বা বিশ্বাস করে, তার বিরোধিতা করা।
পরিশেষে -
শক্তুমিব তিতউনা পুনন্তো য়ত্র ধীরা মনসা বাচমক্রত।
অত্রা সখায়ঃ সখ্যানি জানতে ভদ্রৈষাম্
লক্ষ্মীর্নিহিতাধি বাচি।। (ঋঃ ১০|৭১|২)
অগ্নে ব্রতপতে ব্রতম্ চরিষ্যামি তচ্ছকেয়ম্ তন্মে
রাধ্যতাম্। ইদমহমনৃতাত্ সত্যমুপৈমি।।
(য়জুঃ ১|৫)
দৃষ্ট্বা রূপে ব্যাকরোত্সত্যানৃতে প্রজাপতিঃ।
অশ্রদ্ধামনৃতেऽ দধাচ্ছ্রদ্ধাঁসত্যে প্রজাপতিঃ।।
(য়জুঃ ১৯|৭৭)
য়দর্বাচীনম্ ত্রৈহায়ণাদনৃতম্ কিম্ চোদিম।
আপো মা তস্মাত্সর্বস্মাদ্ দুরিতাত্পাত্বম্হসঃ।
(অথর্বঃ ১০|৫|২২)
সুবিজ্ঞানম্ চিকিতুষে জনায় সচ্চাসচ্চ বচসী
পস্পৃধাতে। তয়োর্য়ত্সত্যম্
য়তরদৃজীয়স্তদিত্সোমোऽবতি হন্ত্যাসত্।।
(ঋঃবে: ৭|১০৪|১২)
অর্থাৎ - যেভাবে চালনি দিয়ে ছাতু চালা হয় সেইভাবে যেখানে বিদ্বানগণ নিজের বাণীকে মন দ্বারা শুদ্ধ করে বলেন, সেখানেই লক্ষ্মী আর মিত্রতা বাস করে। হে পরমেশ্বর! আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি নিজের শক্তিভর সত্যের পালন করবো, তাই এই অসত্য থেকে বেরিয়ে সত্যতে আসছি। প্রজাপতি সত্য আর অসত্যকে ভেবেচিন্তে আলাদা করেছেন আর অসত্যতে অশ্রদ্ধা তথা সত্যতে শ্রদ্ধা উৎপন্ন করেছেন। তিন বর্ষের এইপারে যে মিথ্যা আমি বলেছি, হে পরমাত্মন্! সেসব দুষ্ফল পাপ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। মানুষের সুবিধার জন্য সত্য আর অসত্যের বিজ্ঞানকে একে-অপরের বিরুদ্ধ বলা হয়েছে। এই উভয়ের মধ্যে যা সত্য হবে সেটা সরল আর সোজা স্বভাবে বলা হয়ে থাকে তথা তাতে কোমলতা আসে, কিন্তু অসত্য হলো সেটা যা সর্বপ্রকারে বিনাশই করে থাকে।